প্রাণস্পন্দন পর্ব ১৫+১৬

#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ১৫
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

শান্ত ক্যান্টিনে মুখোমুখি বসে আছে আয়েন্দ্রি আর নিষ্প্রাণ।নিষ্প্রাণের গম্ভীর মুখ আর সরল চোখ ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে।তীক্ষ্ম নাকের উপর চশমার ফাঁক দিয়ে তার অক্ষিপল্লবের নড়াচড়া দেখছে আয়েন্দ্রি।গালে এক হাত ঠেসে ধরে একাগ্রচিত্তে পলকহীন তার দৃষ্টি নিষ্প্রাণের ভরাট পৌরষদীপ্ত চেহারায়।ঘন চুলগুলোর একপাশে অস্পষ্ট সিঁথি।দিবসের উজ্জ্বল আলোয় চিকচিক করছে তা।হুট করেই হাঁপাতে হাঁপাতে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে তৃণা।ঘামের নহর বইছে তার গোলগাল মুখের কপোল বেয়ে।অস্থিরতা চোখে,মুখে তার সাথে ভয়।পরপর কয়েকটা ঢোক গিলে টেবিল থেকে গ্লাসভর্তি পানি পান করে তৃণা।একটা লম্বা শ্বাস টেনে স্থির হয়।চকিত দৃষ্টিতে তৃণার ভাবধারা দেখে ভীত গলায় বললো আয়েন্দ্রি—

“কী হয়েছে তোর?এমন করছিস কেন?কুসুম কই?

তৃণা নিষ্প্রাণের দিকে তাকাতেই দেখে নিষ্প্রাণ ভাবুক নয়নে চেয়ে আছে।তৃণা ভয়কাতুরে গলায় বললো–

“একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে।সকালে কল করেছিলো আমার ছোট মামা।তাদের এলাকায় কাল রাতে একটা ছেলে খুন হয়েছে।কী নির্দয়ভাবে মেরেছে ছেলেটাকে!গলায় লোহা ঢুকিয়ে দিয়ে মুখে এসিড ঢেলে দিয়েছে।পুরো মুখ ঝলসে গিয়েছে।কী বিদঘুটে !ছেলেটা চিৎকারও করতে পারেনি।ক্লোরোফর্ম দিয়ে আগেই সেন্সলেচ করে ফেলেছিলো।”

আঁতকে উঠে আয়েন্দ্রি।আর্ত গলায় বললো–

“কী বলছিস!এমন মানুষ হয় নাকি?এগুলো তো পশু।”

“ঠিক বলেছিস।মানুষ কী করে মানুষকে এভাবে খুন করতে পারে?

“আসলে কথায় আছে না,’প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না।’এরা মানুষ নামের পিশাচ।ছিঃ!কী করে পারে এইভাবে কারো প্রাণ নিতে?

অপলক চেয়ে আয়েন্দ্রির কথা শ্রবণ করছিলো নিষ্প্রাণ।কথা শেষ হতেই অধর কোণে হাসে।আয়েন্দ্রি ক্ষুন্ন গলায় বললো–

“তুই কিছু বলছিস না যে?

নিষ্প্রাণ স্মিতহাস্য অধরে বললো–

“নো কমেন্ট।”

আয়েন্দ্রি ভ্রু নাচিয়ে বললো—

“হোয়াই?

নিষ্প্রাণ ফোঁস করে দম ফেললো।নিরুদ্বেগ গলায় বললো—

“একটা মানুষের দুটো রূপ থাকে।অভ্যন্তরীণ রূপ আর বাহ্যিক রূপ।আমরা সবসময় মানুষকে তার বাহ্যিক রূপে মূল্যায়ন করি যা অনুচিত।মানুষকে তার অভ্যন্তরীণ রূপে আবিষ্কার করে সেই রূপের মূল্যায়ন করতে হয়।যে ছেলেটা সম্পর্কে কথা হচ্ছে তার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।সো, নো কমেন্ট।”

ফ্যালফ্যাল চাহনিতে আপাদমস্তক দেখে নিষ্প্রাণকে আয়েন্দ্রি।নিষ্প্রাণ উঠে দাঁড়ায়।ব্যগ্র গলায় বলে উঠে আয়েন্দ্রি—

“কোথায় যাচ্ছিস?

নিষ্প্রাণের সরল উত্তর —

“ল্যাবে।”

“ওরা দুইজন কোথায়?

“শহীদ প্রাঙ্গনে।”
,
,
,
মসজিদের পাশের লাইব্রেরির সাথেই ছোট্ট ফাস্টফুডের দোকান।আয়েন্দ্রি আর কুসুম খাচ্ছে।কুসুমের ব্যস্ত আচরণ।আয়েন্দ্রি নাকের ডগায় বিরক্তি ঝুলিয়ে বললো–

“আস্তে খা।পড়ে যাবে তো!

ধৈর্য হারা গলায় প্রত্যুত্তর করে কুসুম—

“বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।স্টুডেন্টকে আজ টাইম বেশি দিতে হবে।এখান থেকে ডাইরেক্ট ওখানেই যাবো।”

আয়েন্দ্রি হতাশ গলায় বললো–

“এই প্রাবিশটা যে আজ কোথায় গেলো!

আয়েন্দ্রির দর্শনেন্দ্রিয় ঠেকে ফাস্টফুডের থাইয়ে।নিষ্প্রাণ যাচ্ছে।আয়েন্দ্রি তটস্থ হয়ে উঠে দাঁড়ায়।ব্যস্ত পায়ে বেরিয়ে এসে ডেকে উঠে—

“প্রাণ!

নিষ্প্রাণের কর্ণরন্ধ্রে আয়েন্দ্রির কন্ঠস্বর প্রতীত হতেই পেছন ফিরে সে।বিস্তৃত হাসে আয়েন্দ্রি।সমুৎসুক চোখে তাকিয়ে বললো—

“প্রাবিশ কোথায় রে?

নিষ্প্রাণের সাবলীল উত্তর—

“বৌদির সাথে দেখা করতে গিয়েছে।”

আয়েন্দ্রি ফুঁসলে উঠে বললো—

“শয়তান ছেলে!আমাকে না জানিয়েই চলে গেলো!ক্লাস শেষ করে গরু খোঁজা খুঁজেছি ওকে।কলও রিসিভ করছিলো না।আর ওই সীমান্ত কই?

নিষ্প্রাণ নির্বিঘ্নে বললো–

“সীমান্তের মামা হসপিটালে।ছোট্ট একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।তাই ও ব্রেক আওয়ারেই চলে গিয়েছে।”

ছোট্ট দম ফেললো আয়েন্দ্রি।আহত গলায় বললো—

“এখন আমাকে একাই যেতে হবে।”

“আমি আছি।চল,এগিয়ে দেই।”

আয়েন্দ্রি খুশি মনে হাঁটা ধরে।রৌদ্রজ্জ্বল বিকেলে শান্ত সমীরে পদধ্বনির কলরবে গমগমে সড়ক পথ।ফুটপাথে চলছে নীড়ে ফেরা পাখিদের পদযুগল।ব্যস্ত নগরী,ক্লান্ত পথিক।চলছে আপন ঠিকানায়।মৌনতায় ছন্দ তুলে আয়েন্দ্রি—

“বাড়িতে তোর কে কে আছে?

নিষ্প্রাণ মোলায়েম গলায় বললো–

“কেউ নেই।”

“মানে?

নিষ্প্রাণ স্মিত হাসে।সহজ ভঙিতে বললো–

“আমি অনাথ।এক আত্মীয়ের বাড়িতে বড় হয়েছি।আমার বাবার রেখে যাওয়া কিছু জমিজমা আছে।যার ভোগদখল করছে তারা।তাই আমার লেখাপড়ার খরচ তারা দেয়।”

আয়েন্দ্রি অতি উৎসুকতা নিয়ে বললো—

“তুই নাকি একাই মেসে থাকিস?

“হুম।”

“কেন?

“আমার একাকিত্ব পছন্দ।একাকিত্ব মানুষের সবচেয়ে কাছের সঙ্গী যা কখনো মানুষকে ছেড়ে যায় না।”

আয়েন্দ্রি ভরাট চোখে তাকায়।নিষ্প্রাণের মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।সব স্বাভাবিক।আয়েন্দ্রি চোখের পল্লব নাড়িয়ে বললো—

“আমার ভালো লাগে না।তাই উপর ওয়ালা আমাকে পরিপূর্ণ পরিবার দিয়েছেন।”

প্রসন্ন হাসে আয়েন্দ্রি।আল্লাহ্ এর প্রতি শুকরিয়া তার উজ্জল চোখে।একাধারে কথা বলতে থাকে আয়েন্দ্রি।নিষ্প্রাণ শুনে যাচ্ছে।চট করেই আয়েন্দ্রি বললো—

“আমিই প্রশ্ন করে যাচ্ছি।তুই কিছু বল।”

নিষ্প্রাণ অনায়তন গলায় রয়ে সয়ে প্রশ্ন করে—

“তোর ঠোঁটের লাল তিলটা কী জন্মগত?

আয়েন্দ্রি থমকে যায়।তার স্থবির পদযুগলের সহিত থেমে যায় নিষ্প্রাণ।কৌতূহলী চোখে তাকাতেই দেখে গম্ভীর হয়ে আছে আয়েন্দ্রি।নিষ্প্রাণ অপ্রস্তুত হয়ে বললো—

“একচুয়েলী….।”

নিষ্প্রাণের কথা মাঝেই ফিক করে হেসে ফেলে আয়েন্দ্রি।খিলখিলিয়ে বললো–

“এতোকিছু রেখে তোর আমার ঠোঁটেই নজর পড়লো!হুম।এইটা আমার জন্মগতই।কেন?

নিষ্প্রাণ অকস্মাৎ অবিশ্বাস্য কথা বললো—

“তোর মুখের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো তোর ওই লাল তিল ওয়ালা ঠোঁট।”

নিষ্প্রাণের বেফাঁস কথায় হতভম্ব হয়ে যায় আয়েন্দ্রি।
#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ১৬
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

গোলাপী রঙের বাগানবিন্যাস মৃদু পবনে উড়ছে।সবুজ রঙের পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় সাজিয়ে রয়েছে তা।পশ্চিমাদেশ তখন অস্তাভা সূর্যের রক্তিম রঙে রঞ্জিত।থমকে যায় নিষ্প্রাণ।আয়েন্দ্রি ভ্রু কুঁচকে বললো–

“দাঁড়ালি কেন?

নিষ্প্রাণ শান্ত গলায় বললো—

“তুই যা,আমি ফিরবো।”

আয়েন্দ্রি কপট রাগ দেখিয়ে বললো—

“ফিরবো কী রে?বাসার সামনে এসে চলে যাবি কেন?

একরকম টেনে হিঁচড়ে নিষ্প্রাণকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে আয়েন্দ্রি।রান্নাঘর থেকে তখন ক্লান্ত মুখে বেরচ্ছিলেন ঝুমা বেগম।তাকে দেখেই অস্থির হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ।প্রাণখোলা হেসে আয়েন্দ্রি বললো–

“মা,ও প্রাণ।আই মিন নিষ্প্রাণ।তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের ডিপার্টমেন্টের টপ।”

আলতো হাসলেন ঝুমা বেগম।নিষ্প্রাণ সাধারণ ভঙিতে তাকে সালাম প্রদর্শন করলো।আরিশা একটু দূরে দাঁড়িয়েই নিষ্প্রাণকে দেখছিলো।ফর্সা মুখের শান্তশিষ্ট নিষ্প্রাণকে আরিশার কাছে একটা রোবট মনে হলো।যেনো কেউ নাড়ালেই নড়বে,নাহয় চুপ করে থাকবে।আরিশাকে কাছে ডেকে নেয় আয়েন্দ্রি।নিষ্প্রাণের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই মিষ্টি হাসে।আরাজ তখন বাইরে।ঝুমা বেগমকে ফটাফট কিছু খেতে দিতে বলে ফ্রেশ হতে যায় আয়েন্দ্রি।চুপচাপ হয়ে বসে আছে নিষ্প্রাণ।তার পা দুটো সমানতালে কাঁপছে।প্রায় পনেরো মিনিট পর এসেও আয়েন্দ্রি দেখতে পায় নিষ্প্রাণকে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি।মুখটা তিরিক্ষি করে রান্নাঘরে যেতেই দেখে ঝুমা বেগম নীরব দাঁড়িয়ে আছেন।আয়েন্দ্রি খরখরে গলায় বললো—

“ওকে কিছু দাও নি কেন মা?

ঝুমা বেগম সরল গলায় বললেন—

“বাসায় কিছু নেই।আরিশাকে নুডলস আনতে পাঠিয়েছি।এলো বলে।”

সেই মুহূর্তে আরিশা রান্নাঘরের চৌকাঠ মাড়িয়ে ভেতরে ঢুকে।আয়েন্দ্রি ব্যস্ত গলায় বললো—

“থাক,তুমি যাও।আমি রান্না করছি।তুমি রেস্ট করো।”

ঝুমা বেগম অবিশ্বাস নিয়ে বললেন—

“তুই পারবি?

“আরে পারবো,পারবো।”

মুখ চিপে হেসে ফেলে আরিশা।টগবগে চোখে তাকায় আয়েন্দ্রি।তার চাহনিতে বিলীন হয়ে যায় আরিশার হাসি।

বাটিভর্তি নুডলস নিষ্প্রাণের সামনে রেখে তার পাশেই বসে আয়েন্দ্রি।চকচকে চোখে তাকিয়ে বললো—

“সরি,একটু লেট হয়ে গিয়েছে।খা।”

নিষ্প্রাণ বিনাবাক্য ব্যয়ে নুডলসের বাটি হাতে নিয়ে খেতে শুরু করে।আয়েন্দ্রি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।আজ অন্তত খাওয়ার মতো রান্না করেছে সে।রান্নাঘর থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই শশব্যস্ত হয়ে সেদিকেই ছুট লাগায় আয়েন্দ্রি।আরিশার সামনেই পড়ে আছে নুডলস সমেত বাটি।অরুণলোচনে চেয়ে রাগী গলায় শাসিয়ে উঠে আয়েন্দ্রি—

“এই,তুই কী বাচ্চা?একটা বাটি সামলাতে পারিস না?

আরিশা নাক ছিঁটকে বললো–

“ছিঃ!
কী রান্না করেছো এইসব?বমি আসতেছে আমার।ইয়াক!

আয়েন্দ্রির মুখটা ক্ষণপলেই পাংশুবর্ণ হয়ে যায়।বসার ঘরে এসে দেখে নিষ্প্রাণ প্রায় শেষ করে ফেলেছে নুডলস।অধৈর্য পায়ে এগিয়ে এসে ছোঁ মেরে তার হাত থেকে বাটি ছিনিয়ে নিয়ে এক চামচ মুখে দিতেই গা গুলিয়ে আসে আয়েন্দ্রির।নাক উঁচু করে বললো–

“পাগল হয়েছিস?কী খাচ্ছিস এগুলো?

নিষ্প্রাণ সতেজ হাসে।মিষ্টি গলায় বললো–

“এর চেয়ে ভালোবাসাপূর্ণ খাবার আমি অনেক দিন খাইনা।আসি।”

দম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে আয়েন্দ্রি।হয়তো নিজের পরিবারকে মিস করছে নিষ্প্রাণ!তাদের ভালোবাসাকে মিস করছে!মায়ের হাতের খাবারকে মিস করছে!আরিশার ফিচেল কন্ঠ—

“হিরোর মতো ছেলেটাকে জিরো বানিয়ে দিলা আপু।বাব্বাহ!নিষ্প্রাণ ভাইয়া গিললো কী করে এইসব!আমি শুনেছি কেউ কাউকে ভালোবাসলে নাকি তার সবকিছুই ভালোলাগে।”

আয়েন্দ্রির হাতটা ঝাঁকিয়ে তুলে আদুরে গলায় পূনরায় বললো আরিশা—

“আপু,তোমার যদি পছন্দ না হয় তাহলে আমাকে দিয়ে দিও নিষ্প্রাণ ভাইয়াকে।আম্মু বলেছে তোমার চেয়ে আমি ভালো রান্না করতে পারি।”

আয়েন্দ্রি খেঁকিয়ে উঠে বললো—-

“মারবো এক ঠাটিয়ে চড়।যা এখান থেকে।”
,
,
,
ক্লাস শুরুর আগেই এক দফা হয়ে যায় আয়েন্দ্রিদের।আজ পেছনের বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে আয়েন্দ্রি আর নিষ্প্রান।নিষ্প্রাণের বামদিকে লো বেঞ্চে পা রেখে হাই বেঞ্চে বসে আছে সীমান্ত।তাদের সামনের বেঞ্চ থেকে পেছন দিকে ফিরে বসেছে প্রাবিশ।কুসুম বসেছে পাশের সারির বেঞ্চের কোণায়।
প্রাবিশের গার্লফ্রেন্ড জাহ্নবীকে নিয়ে কথা হচ্ছে।প্রাবিশ থেকে দু’বছরের বড় জাহ্নবী।বর্তমানে একটা কিন্ডার গার্টেনে জব করে।প্রাবিশের বোনের মেয়ে সেই কিন্ডার গার্টেনে পড়ে আর ওকে বাসায় টিউশনও দেয়।সেই সুবাদে বোনের বাড়ির বেড়াতে গিয়ে পরিচয় জাহ্নবীর সাথে প্রাবিশের।সীমান্ত বক্রোক্তি করে বললো—

“মামা,বিয়ার সময় আবার না তোমার বাপ কয় মাইয়া আমার খালার বয়সি।তারে আমার পোলার লগে বিয়া দিমু না।তখন আশেপাশে আমারে খুঁজিস না।আমার আবার বয়স্ক মাইয়া দিয়া চলতো না।কচি,টসাটসা লাগবো।”

প্রাবিশ ধাম করে এক চাপড় বসিয়ে দেয় সীমান্তের কাঁধে।কুসুম খিকখিক করে হেসে বললো—

“আরে প্রাবিশ বুদ্ধিমানের কাজ করেছে।নিজের চেয়ে বয়সে বড় মেয়ে হলে আদরের সাথে শাষনও পাওয়া যায় বুঝলি।তুসসি গ্রেট হো মামা।”

সীমান্ত চরম অবাক হয়ে বললো–

“আরে প্রবেশপত্র এইসব ভাইবা এই কাম করছোস!কস কী?আমি চিন্তা করতাছি বাসর রাইতে তুই বিড়াল মারবি নাকি বৌদিরে দিয়া মারাবি।আই এম কনফিউসড!

প্রাবিশ অসহনীয় গলায় বললো—

“শালা তুই চুপ করবি।

“লাভ নাই মামা।আমার কোনো বোন নাই।তোর কপাল খারাপ।”

সকলের কথার মাঝখানেই অদ্ভুত কথা বলে ফেলে নিষ্প্রাণ।

“তোর বেলী ফুল পছন্দ?

আচমকা নিষ্প্রাণের এই প্রশ্ন দ্বিধান্বিত হয় আয়েন্দ্রি।সরস গলায় বললো—

“হ্যাঁ।তুই কী করে জানলি।”

নিষ্প্রাণ ভাবাবেগ ছাড়াই বললো—

“এমনি।”

সীমান্ত পেয়ে যায় আরেক চান্স।সন্দিহান গলায় বললো—

“নিষ্প্রাইন্নার তোর মতলব তো ভালা না।আন্দির উপর কালা জাদু করছোস?তুই জানোস কেমনে আন্দির বেলি ফুল পছন্দ?

সকলের কৌতূহলী দৃষ্টি।আয়েন্দ্রির উৎসুকতা তরতর করে বাড়ছে।সে তো কখনো তার পছন্দ,অপছন্দের কথা নিষ্প্রাণকে বলেনি।তাহলে?
নিষ্প্রাণ হালকা করে মাথাটা হেলিয়ে আয়েন্দ্রির কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো—

“তোর গায়ের ঘ্রাণ বেলি ফুলের মতো।”

নিষ্প্রাণের এই শান্ত,শীতল কথায় জমাট বেঁধে যায় আয়েন্দ্রি।অক্ষিপল্লব প্রশ্বস্ত করে নিষ্প্রাণের দিকে তাকাতেই রহস্য হাসে নিষ্প্রান।তখন ক্লাসে প্রবেশ করে কমলক্রান্তি।সবাই যার যার জায়গায় চলে যায়।আয়েন্দ্রি উঠতে নিলেই নিষ্প্রাণ মোলায়েম গলায় বললো—

“এখানেই বস।”

“উঁহু।পেছনে বসতে আমার ভালো লাগে না।”

চোখে হাসে নিষ্প্রাণ।আবেশিত গলায় বললো—

“তাহলে চল,আজ তোর সাথেই বসবো।”

নিষ্প্রাণ উঠে গিয়ে সামনের বেঞ্চে আয়েন্দ্রির পাশে বসে।স্যারের দিকে নয়,আয়েন্দ্রির পূর্ণ মনোযোগ নিষ্প্রাণের দিকে।কী বললো তখন সে?

আয়েন্দ্রির দিকে একটা স্কেচ এগিয়ে দেয় নিষ্প্রাণ।তারই স্কেচ।আয়েন্দ্রি অবাক হয় তার ঠোঁটের সেই লাল তিলকে হাইলাইট করা হয়েছে।পাশে সুন্দর করে লেখা ‘ধ্রুবতারা’।আয়েন্দ্রির নিষ্কম্প ব্যাকুল চাহনি।চোখটা স্যারেই দিকেই আবদ্ধ রেখে মাথা কিঞ্চিৎ হেলিয়ে দেয় আয়েন্দ্রির দিকে নিষ্প্রাণ।আলতো গলায় বললো—

“আমি যদি তোর প্রাণ হই তাহলে তুই আমার ধ্রুবতারা।যে তারা তার জায়গা পরিবর্তন করে না।স্থির থাকে।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য তুই।যার স্থান কখনো পরিবর্তন হবে না।তাই তুই আমার ধ্রুবতারা।”

অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে নিষ্প্রাণের প্রতিটি শব্দ শ্রবণ করে আয়েন্দ্রি।

চলবে,,,
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here