প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ২৭+২৮

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_27
#Writer_TanhaTonu

আরশি সোফায় বসে মোবাইল চালাচ্ছিলো।ওর পাশেই ওর আম্মু বসে টিভিতে নিউজ দেখছিলো।হঠাৎ টিভির দিকে তাকাতেই আরশির চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো।শরীর বেয়ে ঘাম ঝরতে লাগল।আরশির আম্মু চিৎকার দিয়ে ওর আব্বুকে ডাকল…

—”ওগো শুনছ..দেখে যাও টিভিতে কি দেখাচ্ছে?এটা না আমাদের আগের ড্রাইভার?”

ফ্রাইডে হওয়ায় আরশির আব্বু বাসায় ছিলো।আরশির আম্মুর চিৎকার শুনে লিভিং রুমে এসে টিভির দিকে তাকাতেই কিছুটা অবাক হলো…

নিউজে ক্লিয়ারলি দেখাচ্ছে তাদের বাড়ির আগের ড্রাইভারের মৃত দেহ পড়ে আছে একটা জঙ্গলের ঝোপে।রিপোর্টাররা ভিডিও করছে।একজন রিপোর্টার বলছে কীভাবে তারা এই লাশের সন্ধান পেলো…

—”আমরা এলাকার মানুষদের সূত্রে নিউজটা পেয়েছি।তবে যেহেতু এই জঙ্গল জন্তু-জানোয়ারে ভরপুর আর লোকটার শরীরের ক্ষতগুলোও অনেকটা জন্তুর আক্রমণের মতোই তাই আমরা ধরেই নিয়েছি সে হয়ত কোনো জন্তুর কবলে পড়েছিলো।তারপরও বডি তো পোস্ট মর্টার্মের জন্য পাঠানো হবেই।আর আপাতত এই জায়গাটা মানুষ প্রবেশের জন্য রিস্ক বলেই ঘোষণা করা হবে…”

এরকম আরও অনেক কিছু বলছে রিপোর্টাররা।আরশি দেখতে দেখতে সেন্সলেস হয়ে গেলো।আরশির আম্মু চিৎকার করে উঠল…
—”আরশিইই”

আরশির সেন্স ফিরল সন্ধ্যা দিকে।ও চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল রুমটা অন্ধকার।ব্লু শেডের ডিম লাইট জ্বলছে শুধু।বিকালের ওই নিউজের কথা মনে পড়তেই আরশির শরীর শিরশির করে উঠল।মাথা চক্কর দেয়া শুরু হয়েছে আবারও।আরশি দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরল।কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থেকে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস ফেলে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো।লাইট অন করে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে প্রায় দশ মিনিট পরে বের হলো।আরশি বের হতেই দেখে সিদ্রাত ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বেডের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে।আরশির চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো।আজও ওর শরীরে উড়না নেই।আরশি গুটিগুটি পা এগিয়ে গিয়ে কাবার্ড থেকে একটা উড়না নিয়ে শরীরে জড়িয়ে নিলো।তারপর সিদ্রাতের সামনে এসে বলল….

—”স্যার..কিছু বলবেন?”

সিদ্রাত আরশির দিকে তাকালো।তারপর ইশারায় বসতে বলল।আরশি সিদ্রাতের পাশে বসে হাত কচলাতে লাগল।সিদ্রাত হঠাৎ ওর রুমে কেন এটাই ভাবছে ও..
—”শরীরের কি অবস্থা?”
আরশি ইতস্তত করতে করতে জবাব দিলো
—”আলহামদুলিল্লাহ ভালো”
—”হুম গুড..তো হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে গেলে যে?সিম্পল ব্যাপারগুলো নিয়ে এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।বাট তুমি সেটাই করো।তার কপাল খারাপ ছিলো তাই জন্তু-জানোয়ার খুবলে খেয়েছে..এতে তুমি কেন স্ট্রেস নিলে?”

আরশি আমতা আমতা করতে করতে বলল…
—”ওই ফেইসটা দেখলেই আমার ভয় করে।ওইদিন রাতের কথা মনে পড়ে..”
সিদ্রাত ধমক দিয়ে বলল…

—”ওইদিন রাতের কথা মনে পড়ে!মনে পড়ার মতো কিছুই হয়নি ড্যামেড…ডিড হি রেইপ ইউ?এনসার মি..
ডিড হি রেইপ ইউ??করেনি তো তাইনা..তাহলে এতো ভয় কেন পাচ্ছো?নাকি তোমার ফেইমলি যা জানে না সেটা জানিয়ে তাদেরকে চিন্তায় ফেলতে চাও?”

আরশি সিদ্রাতের ধমকে কেঁদে দিলো।কেঁদে কেঁদে বলল…
—”কিছু হয়নি..হতে কতক্ষণ লাগত?আমার বাঁচার কোনো পথ ছিলো না সেদিন।আল্লাহ নিজ কুদরতে বাঁচিয়েছে আমায়..নাহলে বলুন অচেনা সেই শহরে রাতের আঁধারে অন্য একটা জঙ্গল থেকে কি আমার বেঁচে ফেরার কথা ছিলো?আজ এ বাড়িটা মরা বাড়িতে পরিণত হওয়ার কথা ছিলো..এই ট্রমা থেকে তো তাও আমি বের হওয়ার চেষ্টা করছি”

আরশি ডুকরে কাঁদতে লাগল।সিদ্রাত আরশিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আর বলল…
—”সরি..আ’ম ভেরি সরি আরশি..রাগে মাথাটা ঠিক ছিলো।ডোন্ট ক্রাই.. প্লিজ স্টপ ইউর ক্রায়িং..”

আরশি চোখ মুছে সিদ্রাতের বুকে ওভাবেই মাথা গুঁজে বসে রইল।সিদ্রাত হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল…

—”আগামীকাল স্কুলে যাবে না?”

আরশি হ্যাঁ সূচক মাথা ঝুঁকালো।তারপর নাক টানতেই বলল…
—”আমার জন্য তো আপনিও একয়দিন যান নি স্কুলে।আপনার তো স্যালারি কাটা যাবে”

সিদ্রাত ফিক করে হাসল আর বলল…
—”এ অবস্থায়ও আমার স্যালারির কথা ভাবছ?পাগলি মেয়ে!স্যালারি কাটা গেলে যাবে..মাত্র একদিনেরই তো যাবে।মঙ্গলবার শিক্ষা সফর শেষ করে বাসায় ফিরতে সবার রাত হয়েছে বলে বুধবার তো স্কুল এমনিই অফ ছিলো রেস্টের জন্য।শুধু বৃ্হস্পতিবার মিস গিয়েছে।আর আজ তো শুক্রবারই..আর সংসার কি আমার টাকায় চলে নাকি..চাকরীটা তো আমি করি অন্য কারণে”

আরশি মুখ তুলে সিদ্রাতের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।সিদ্রাত আরশির এই জিজ্ঞাসু চাহনীর মানে বুঝে আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল…

—”এখনি শুনতে হবে আমার চাকরী করার কারণ?
—”হুম”

সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…

—”আব্বুর বিজন্যাস শুধু এদেশেই না।আমেরিকাতেও এর ব্রাঞ্চ আছে।আব্বুর পর তো বিজন্যাস আমিই সামলাবো।বাট আব্বু প্রথমেই আমার কাছে তার বিজন্যাসের দায়িত্ব দিবে না।তার আগে আমার প্রুফ করতে হবে আমি কতটা যোগ্য।এজন্য নাকি টিচিং প্রফেশনটাই পার্ফেক্ট স্পেশালি স্কুলের টিচিং..কারণ স্কুল লাইফের স্টুডেন্টদেরকে পড়ানোটা হার্ড।অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন হয়।আর আব্বুও এটাই দেখতে চায় আমি কতটা ধৈর্যের সাথে সফল হই।কারণ আব্বুর ভাষ্যমতে অধৈর্যবান ছেলের হাতে নাকি তার বিজন্যাস তুলে দিলে বিজন্যাস ধ্বংস হয়ে যাবে”

সিদ্রাতের কথা শুনে আরশিও কান্নার মাঝেই হেসে দিলো।বলল…
—”আঙ্কেল ঠিকই করেছে।দাঁড়ান আজ আঙ্কেলকে গিয়ে বলব আপনি কতটা ধৈর্যবান।বলে দিবো আপনি এতোটাই ধৈর্যবান যে আমাকে শুধু শুধু কোনো কারণ ছাড়া বকেছেন।তখন আপনার বিজন্যাসের স্বপ্ন স্বপ্নই থাকবে”

আরশি ভেবেছিলো সিদ্রাতকে এটা বললে ভয় পাবে কিন্তু সিদ্রাত ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসছে।আরশি ভ্রু কুচকে সিদ্রাতের থেকে সরে এসে বসল।তারপর জিজ্ঞাসা করল…

—”আপনি হাসছেন কেন?”
সিদ্রাত বলল..
—”বিজন্যাসের প্রতি আমার অনেক ঝোঁক ছিলো। টিচিং প্রফেশনে আসার পরও সেই ঝোঁক কমেনি।বাট গতকাল শুনলাম তোমাদের স্কুলে পরী আপুর ননদ জয়েন করেছে ইংলিশের টিচার হয়ে।তাই ভাবছি সারা জীবন এই প্রফেশনে থাকলেও মে বি প্রবলেম হবে না”

আরশি সরু চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।নিচু স্বরে জিজ্ঞাসা করল…

—”পরী আপুর ননদ অনেক সুন্দর তাইনা?”
—”দাঁড়াও তোমায় পিক দেখাচ্ছি..আসলেই অনেক কিউট মেয়েটা..ওয়েট”

সিদ্রাত এটা বলেই মোবাইল থেকে একটা পিক ওপেন করে আরশির কাছে মোবাইলটা দিলো।মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর।আরশি অবাক হয়ে দেখছে।এই মেয়েটার সামনে কেন যেনো নিজেকে কিছুই মনে হচ্ছে না।হেয়ারগুলো ব্রাউন কালার,চোখ বিড়ালের চোখের মতো।হালকা স্বাস্থ্যবান তবে একদম ফর্সা।আরশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল…
—”স্যার উনার নাম কি?”

সিদ্রাত আরশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল…
—”ইতি..মৌসুমি জাহান ইতি”

আরশি ছোট্ট করে “ওহ” বলে সিদ্রাতের কাছে মোবাইল দিয়ে উঠে পড়ার টেবিলের সামনে চলে গেলো।ইংলিশ বই বের করে একটা কম্পোজিশন বের করে ওটার দিকে চেয়ে রইল।অস্থির লাগছে সবকিছু।কাঁদতে মন চাচ্ছে আবারও। কিন্তু সিদ্রাতের কারণে সেটাও পারছে না।আরশির রাগও লাগছে সিদ্রাত না যাওয়ায়…

আরশি শত চেষ্টা করেও পারল না।এক ফোঁটা জল গড়িয়ে বইয়ের উপর পড়লই।সিদ্রাত বেড থেকে উঠে আরশির সামনে গিয়ে ওর নাকটা টেনে চোখের পানিটা একটা আঙুল দিয়ে মুছে চলে গেলো।সিদ্রাত যেতেই আরশি রেগে ধরাম করে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো যেই আওয়াজ সিদ্রাতের কানেও পৌঁছেছে।সিদ্রাত মুচকি হেসে নিজদের বাসায় চলে গেলো।যাওয়ার সময় লিভিং রুমে আরশির আম্মুর সাথে দেখা হলো।আরশির আম্মু জিজ্ঞাসা করল…

—”সিদ্রাত বাবা ওকে জিজ্ঞাস করেছিস?কি বলল ও?কি নিয়ে এতো টেন্সড?ডক্টর তো বলল ও ভিতরে ভিতরে ট্রমায় আছে”
—”আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।আমি ওকে বুঝিয়েছি।কিছুদিন পর প্রিটেস্ট তাই একটু টেনশন করছিলো।আপনি আর ওর সাথে রাগারাগী করবেন না।”
—”হুম”

সিদ্রাত চলে গেলো।আরশির আম্মু কিছুটা নিশ্চিত হলো এটা ভেবে যে মেয়ে কোনো ছেলে-পেলের পাল্লায় পড়েনি

এদিকে আরশি রাগের চোটে কেঁদে দিয়েছে আর সিদ্রাতের গুষ্ঠি উদ্ধার করছে…
—”সব ছেলেই একই।এই সিদ্রাতের বাচ্চা আরও আপডেট..শালা তুই আমায় ঝুলাইয়া রাইখা আবার আমাকেই আরেক মেয়ের ছবি দেখাস..দেখতে চেয়েছি আমি তোর শাবনুর,মৌসুমিকে..এতোই ওই শাকচুন্নির প্রতি দরদ হলে আমাকে জড়িয়ে ধরস কেন?আমার চোখের পানি এতো রোমান্টিক স্টাইলে মুছে দেছ কেন?এটা কি আমেরিকা যে বলবি এসব সবার মাঝেই কমন..আমার নিষ্পাপ মনটাকে নিয়ে খেলা করছে খারাপ লোকটা..”

আরশি আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগল এবার।ওই মেয়েটার প্রতি অনেক বেশি হিংসা হচ্ছে।আরশি এবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখটা মুছে নিলো। নিজে নিজেই আয়নায় তাকিয়ে বলল…

—”কই আমি তো কালো বা শ্যামলা না।ওই মেয়েটার মতোই তো শরীরের রঙ..হলুদ ফর্সা..আমার চুল আর চোখের মনিটা শুধু কালো..আমার তো ব্রাউন কালার করতে মন চায়না..কেমন যেনো বিড়াল বিড়াল ফিলিংস আসে..আচ্ছা আমি যদি ওই মেয়েটার মতো হই..চুল,চোখের কালার চেইঞ্জ করি..ওই মেয়ের মতোই সেজে-গুঁজে থাকি তাহলে কি স্যার আমায় পছন্দ করবে?”

আরশি গভীর ভাবনায় ডুবে যায়।ওর মন সায় দিচ্ছে না সাধের কালো চুলগুলোকে ব্রাউন কালার করতে..কিন্তু ওই যে বলেনা উঠতি বয়স..কিছুটা দোষ এই উঠতি বয়সেরও..প্রেমের জন্য এই বয়সের মেয়েগুলোই সবচেয়ে বেশি অপরাধ করে..হোক তা সুইসাইড বা বয়ফ্রেন্ড নামক প্রাণীর কাছে নিজের সতীত্ব বিলিয়ে দেয়া!

আরশি প্রায় একঘন্টার মতো ভেবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল হয়।সাথে সাথে ফারহা আর বনিকে গ্রুপ কলে ভিডিও কনফারেন্সে ফোন দেয়…

—”ফারহা বনি কেমন আছিস?”
ফারহা আর বনি দুজনের চোখেই খুশি বেস্টফ্রেন্ড ফিরে এসেছে বলে কথা।ফারহা বলল…
—”তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি?আমরা প্রচুর ভয় পেয়েছি।ভাগ্যিস পরের দিন সিদ্রাত স্যার ফোন দিয়ে বলেছিলো তোকে পেয়েছে..নাহলে সত্যিই আমরাও হার্ট এট্যাক করতাম..”

—”হুম আরশি..অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে।লাভ ইউ রে বনু”
আরশি মুচকি হেসে বলল…
—”লাভ ইউ টু গাইস”

ফারহা আর বনি হাসল।আরশি আবারও বলল…
—”আচ্ছা শোন কাল একটা কাজ আছে।আমি আসার সময় একটু পার্লারে যাবো।তোরাও আমার সাথে যাবি.. ওকে?”

ফারহা আর বনি দুজনই ভ্রু কুচকে সরু চোখে তাকালো।আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”এভাবে তাকাস কেন?”
ফারহা বলল…

—”তুই নিজেই তো অনেক ভালো সাজাস।তো পার্লারে যাওয়ার কি প্রয়োজন পড়ল।আর আমার জানামতে তো তুই ফ্যাশিয়াল,ম্যানিকিওর প্যাডিকিওর,ভ্রু প্লাক,স্পা,স্কিন ট্রিটমেন্ট সব কিছু থেকে একশ হাত দূরে থাকিস”

আরশি চোখ-মুখ কুচকে ফারহার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল..
—”উফফ চুপ কর তুই..আমায় বলতে দে।।স্কুল থেকে আসার সময় আমরা তিনজন পার্সোনাতে যাবো ওকে?আমি হেয়ার কালার করব আর একদম নিচের দিকের চুলগুলো কার্লি করব”

ফারহার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই বনি উৎফুল্লের সাথে বলল..
—”ওহ মেরি সুইট বেবি..লাভ ইই সোনা..আমিও তোর সাথে যাবো।আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ফেইসে এলোভেরা ফ্যাসিয়ালটা দিবো..উফফ আমার আনন্দ লাগছে।এই ফারহা তুইও ট্যানিং রিমুভ করার ফ্যাসিয়ালটা দিস”

ফারহা এবার চাপা স্বরে চিৎকার দিলো..
—”থামবি তোরায়ায়া…আমার সামনে থাকলে তোদের দুটোকেই আমি এখন জুতাপিটা করতাম।এসব ভাবনা বাদ দে দুই গরু।তোদের সাথে কথা বলার মুডই শেষ আমার”

ফারহা ফোন কেটে দেয়।বনি আর আরশি করুণ চোখে একে-অপরের দিকে তাকায়।আরশি বনিকে সব খুলে বলে হেয়ার কালার করার কারণটা কি।বনি বলে…
—”দোস্ত ডোন্ট ওয়ারি। আমি আছি না..ওই ফারহা চুন্নি বাদ।আমি আর তুই যাবো আগামীকাল..ওকে?”

আরশিও বনির কথায় খুশি হয়ে যায়…
বনি আর আরশি দুজনই সাজগোজ প্রিয়।তবে ফারহা একটু কমই সাজা পছন্দ করে।বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া সাজে না।আর সাজলেও একদম সিম্পল।বাট আরশি আর বনি আবার এসব ব্যাপারে খুবই কেয়ারফুল।যদিও কেউই মাত্রাতিরিক্ত কিছুই করে না।জাস্ট নিজেকে পরিপাটি রাখে অলওয়েজ।কিন্তু পার্লারে যাওয়ার ব্যাপারটা এই ফার্স্ট উঠল ওদের মাঝে।এর আগে কেউই পার্লারে এসব ফ্যাসিয়াল,রিবোন্ডিং,হেয়ার এক্সটেনশন এসবের জন্য যায়নি…
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_28
#Writer_TanhaTonu

পরের দিন আরশি ওর কাবার্ড থেকে ডেবিট কার্ডটা ব্যাগে নিয়ে বই-খাতা গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয় স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।গেইটের সামনে আসতেই দেখে গ্যারেজের সাইড থেকে সিদ্রাত কার নিয়ে আসছে।আরশি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত আরশির সামনে এসে কার থামিয়ে আরশিকে ইশারায় কারে উঠতে বলে।আরশি লাজুক হেসে কারে উঠে বসে।সিদ্রাতও কার স্টার্ট দেয়।আরশি বেশ কয়েকবার আড়চোখে সিদ্রাতকে দেখে।সিদ্রাত বলে…

—”আজ একটু বেশিই খুশি মনে হচ্ছে?কি ব্যাপার?”

আরশি খুশি হয়ে বলে…
—”স্যার আপনার কি ইতি আপু..মানে রাহা আপুর ননদের চুলের কালার বেশ পছন্দ?”

সিদ্রাত আরশির কথায় হতভম্ব হয়ে গেলো।এই মেয়ে কিসের মাঝে কি বলছে!আরশি আবারও বলল…

—”স্যার প্লিজ বলুন না”
—”আমার কালো চুল পছন্দ”

সিদ্রাত শান্তভাবে জবাব দিলো।আরশির ভ্রু জোরা কুচকে গেলো।ও মনে মনে চিন্তায় পড়ে গেলো..

—”কালই তো ওই ডায়নীটার কত প্রশংসা করছিলো আর আজ বলছে কালো চুল পছন্দ!আচ্ছা স্যার কি বুঝে গিয়েছে যে আমি চুল কালার করব আর এজন্যই মিথ্যা বলছে?হুমম হবে হয়ত।খারুচটা হয়ত চায়না তার ওই ডায়নীর মতো যেনো আর কেউ সাজে..হুহ ঢং দেখলে আর বাঁচি না”

মুখের মধ্যে পানির ছিটায় আরশির হুশে আসলো। পানির ছিটা না..বরং একদম হাফ লিটার পানি পুরোটাই আরশির মুখে ঢেলে দেয়া হয়েছে।হঠাৎ এমন ঘটনায় বেচারী থতমত খেয়ে গিয়েছে।চোখ-মুখ মুছে পাশে তাকাতেই দেখে সিদ্রাতের হাতে বোতল আর চোখে হালকা বিরক্তিভাব।আরশি এবার বুঝতে পারল কাহিনী কী।ও কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল…

—”স্যায়ায়ার.. আপনি আমায় ভেজালেন কেন?এএএ”
—”আহ জাস্ট শাট আপ..কখন থেকে তোমায় ডেকে চলেছি।তোমার তো হুশই নেই।এভাবেও কেউ চোখ খুলে ঘুমায় আমার জানা ছিলো না..নামোও..”

আরশি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল…
—”নামব কেন?”
সিদ্রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
—”তোমার শ্বশুর বাড়ি এসেছি তাই নামবে”

আরশি এবার সামনে তাকিয়ে দেখল ওরা স্কুলের সামনে চলে এসেছে।নিজের বোকামোর জন্য হেসে দিলো।নামতে নামতে বলল…

—”স্যার এটাতো স্কুল।আমার শ্বশুর বাড়ি তো আপনাদের বাড়,,,,”

আরশি এটুকু বলেই মুখে হাত দিয়ে সিদ্রাতের দিকে বড় বড় করে তাকালো।সিদ্রাত দুষ্টু হেসে বলল…

—”এইটুকুনি মেয়ে আবার শ্বশুর বাড়ি নিয়েও ভাবছে!তা আমার আম্মু-আব্বু জানে যে তোমার শ্বশুর বাড়ি ওটা?”

সিদ্রাত ভ্রু নাচালো।আরশি লজ্জায় ব্যাগটা নিয়ে দৌড়ে স্কুলের ভিতর চলে গেলো।সিদ্রাত হেসে দিলো..

—”পাগলী বললেও কম হবে”

ক্লাসে এসেই আরশি দেখল বনি মুখ গোমড়া করে বসে আছে আর ফারহা ভাবলেশহীনভাবে বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছে।আরশি পাশে বসতে বসতে বলল…

—”কিরে শাকচুন্নিরা কি হয়েছে তোদের?”
বনি মুখ গোমড়া করে বলল…

—”আরশি আমি তোর সাথে পার্লারে যাবো না”
আরশি ভ্রু কুচকে তাকালো।ফারহা বলল…

—”আরশি তুই তো এতোটা বাচ্চাসুলভ তো ছিলি না।এতো বেশি ড্রামা কেন করছিস?চুল-টুল কালার করার কথা বাদ দে”
আরশি গলা উঁচিয়ে বলল…
—”তোর প্রবলেমটা কী?আমি চুল কালার করলে তোর কি?কেন এমন করছিস”
ফারহা শান্ত গলায় জবাব দিলো…

—”লিসেন আরশি..যে তোকে ভালোবাসার এমনিতেই বাসবে।তার জন্য নিজেকে চেইঞ্জ করাটা হলো বোকামি।তুই যদি স্যারের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তোর রূপ চেইঞ্জ করিস..আর তারপর সত্যি সত্যিই স্যার তোকে ভালোবাসে তাহলে বুঝতে হবে তুই হতভাগা কারণ স্যার আসলে তোর রূপকে ভালোবাসবে তখন।আর এখন যেমন আছিস সেভাবে থাকার পরও যদি কেউ তোকে ভালোবাসে তাহলে সে তোর মনকেই ভালোবাসে ৭০% সিউর…আমি ১০০% বলতে পারব না কারণ তুই এভাবেই অনেক সুন্দর।যে কেউ প্রেমে পড়বে।তুই এখন যেমন আছিস সেভাবেও হাজার ছেলে তোর রূপের প্রেমে পড়ে যাবে।তবে মনে রাখিস রূপের প্রেম যৌবন পর্যন্তই..আর মনের প্রেম..যদি পবিত্র হয় তাহলে জান্নাত পর্যন্ত..এখন ডিসিশন তোর”

আরশি এতোক্ষণ ফারহার কথাগুলো খুবই মনোযোগ সহকারে শুনেছে।প্রতিটি কথাই লজিক্যাল। আরশি ফারহাকে জড়িয়ে ধরে…
—”থ্যানক্স দোস্ত আমার ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য।আমি আসলেই একটু বেশিই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম…”

ফারহা আর বনি হাসল আরশির কথায়।একটু পর বেল বাজতেই ক্লাশ শুরু হলো।যথারীতি সিদ্রাত ক্লাস করালো।ক্লাশ শেষ হলে যাওয়ার আগে আরশিকে আস্তে করে বলে গেলো..
.—”টিফিন টাইমে ক্যান্টিনে চলে আসবে।আমি ওখানেই থাকবো”

সিদ্রাত এটা বলেই চলে যায়।আরশি হা হয়ে সিদ্রাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।ও যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।সিদ্রাতের কথা বলার ধরণটা আরশির কাছে প্রেমিক পুরুষের মতো লেগেছে।বুকের মধ্যে গিয়ে লেগেছে কথাটা।এখনো বুকটা ধুকপুক করছে।বনি আর ফারহা আরশির কাজ দেখে মুখ টিপে হেসে উঠল।বনি দুষ্টুমি করে বলল…

—”দোস্ত মুখটা অফ যা।মশা ঢুকে গেলে কিন্তু পরে সিদ্রাত স্যার আর কিস করবে না”

আরশি বনির কথা শুনে বনির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে নিজের জায়গায় ভালো করে বসল।ফারহা বলল…
—”এতো চোখ রাঙিয়ে লাভ নেই।তুমি আকাম-কুকাম করতে পারবা আর আমরা বলতে পারব না?হুহ..”

আরশি দাঁতে দাঁত চাপ বলল..
—”হোয়াট ডাজ ইট মিন বাই আকাম-কুকাম..শুধু একটু কিস করেছি..কুত্তিরায়া..তোদেরকে বলাই আমার ভুল হয়েছে।আগেই বুঝা উচিৎ ছিলো তোরা এটা নিয়েও আমায় পঁচাবি..”

ফারহা আর বনি হেসে দিলো।তখনি সিদ্রাত আর ইংলিশ টিচার ঢুকল ক্লাসে।সবার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গিয়েছে ইংলিশ টিচারকে দেখে।ফারহা ফিসফিস করে বলল…
—”বনি আমাদের জিসান স্যার কোথায়?এই মহিলাটা আবার কে?”

বনি দাঁত কটমট করে বলল…
—”ওই কানি এতো সুন্দর ম্যামটা কে তোর কাছে মহিলা মনে হয়?ব্লাইন্ড গার্ল”

তখনি ম্যাম বলল…
—”ডিয়ার স্টুডেন্টস প্লিজ হ্যাভ ইউর সিট”
ম্যামের কথায় সবাই বসে পড়ল।বনি আরশির দিকে তাকিয়ে দেখল আরশির চোখগুলো ছলছল করছে।বনি কিছু একটা আন্দাজ করতে পারল।সিদ্রাত সবার উদ্দেশ্যে বলল…

—”স্টূডেন্টস..তোমাদের সামনে যেই ম্যামটি দাঁড়িয়ে আছে উনি আজ থেকে তোমাদের ইংলিশ ক্লাস নিবে।যেহেতু আমি তোমাদের ক্লাস টিচার তাই তোমাদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।মিস ইতি..প্লিজ বাকি পরিচয়টা আপনি সেরে নিন”

ইতি ম্যাম মুচকি হেসে বলল…
—”অফকোর্স স্যার..থ্যানক্স”

সিদ্রাত সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে আড়চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে চলে যায়।ইতি সবার উদ্দেশ্যে বলে…

—”ডিয়ার স্টুডেন্টস..বুঝতেই তো পেরেছো আমি তোমাদের নিউ ম্যাম..আ’ম মৌসুমি জাহান ইতি।ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে কিছুদিন আগে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি।আর এখন তোমাদের স্কুলে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছি।আর কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন করতে পারো”

সব স্টুডেন্টসরা ইতির ম্যানার্সে সন্তুষ্ট।দেখতে যেমন সুন্দর ব্যবহারও তেমন মিষ্টি আর খুবই মিশুক।সবাই যেনো অল্প সময়েই ইতির ভক্ত হয়ে গিয়েছে।কিন্তু এতোকিছুর মাঝে আরশিরই শুধু অস্থির লাগছে।মনের মাঝে একটা ভয় দানা বেঁধেছে।হারিয়ে ফেলার ভয়..
অস্থিরতার কারণে পরবর্তী দুটো ক্লাসেও আরশি মন বসাতে পারল না।মনের ভিতর এতোটা অস্থিরতা কখনো কাজ করেনি।আর সাথে তো ফ্রি আছেই ফারহা আর বনির বকবকানি।ইতি ম্যাম ইতি ম্যাম জপ করছে তারা।আরশি দু’বার ধমকও দিয়েছে কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।তাদের কাছে ইতি ম্যামকে এতোই ভালো লেগেছে যে ইতি ম্যামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তারা…

টিফিন পিরিয়ডের বেল বাজতেই আরশি বনি আর ফারহার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো।ক্যান্টিনে এসে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।সিদ্রাত এখনো আসেনি।আরশি একদম কোণার একটা টেবিলে গিয়ে বসল।মাথাটা টেবিলে ভাজ করে ইতি আর সিদ্রাতের কথা ভেবেই যাচ্ছে।মনের ভিতর একটা ভয় কাজ করছে।ইতিকে মোবাইলে যেমন সুন্দর লেগেছে তেমনি বাস্তবে ওর ব্যবহারও সুন্দর।যেকোনো মা-ই তো চাইবে এমন একটা মেয়েকেই ছেলের বউ করতে।আর এটা নিয়েই আরশির যত চিন্তা এখন।সিদ্রাত ওকে ভালোবাসলে হয়ত এতোটা চিন্তা লাগত না…

মাথায় কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে আরশি মাথাটা তুলে দেখে সিদ্রাত বসে আছে।ও সোজা হয়ে বসে..
—”সরি স্যার..কখন আসলেন আপনি?”
—”এই তো মাত্র।কিছু অর্ডার দিয়েছো?”

আরশি না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে…
—”আমার কিছু খেতে মন চাচ্ছে না”

সিদ্রাত আরশির চোখে আর কন্ঠে বিষণ্ণতার ছাপ দেখতে পাচ্ছে।ও একজন ওয়েটারকে ডেকে চিকেন শর্মা আর কাস্টার্ড অর্ডার দিলো।আরশি বলল..

—”স্যার প্লিজ আপনি খান।আমি খাবো না”
—”বেশি কথা বলছ কেন আরশি?এমনিই মুখখানা শুকিয়ে আছে।না খেয়ে পরে সেন্সলেস হবে আর কি”

আরশি লম্বা একটা শ্বাস ফেলল।কেন জানি চোখদুটো ভরে আসছে।কিন্তু সিদ্রাতের সামনে কাঁদতে চাচ্ছে না।পরে কারণ জানতে চাইলে কি জবাব দিবে তা ভেবে।

—”আরশি জানো বোকা দু’ধরণের।এক ধরণের বোকা হলো যাদের মাথায় কিছুই নেই।একদম সরল..গ্রামীণ ভাষায় যাকে হাদারাম বলে।আরেক ধরণের বোকা আছে যারা আসলে বোকা না।কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষ বোকা।এই বোকারা অলওয়েজ চারলাইন বেশি বুঝে।উল্টা-পাল্টা ডিসিশন নেয় আর নিজে নিজে কষ্ট পায়।তাই ক্ষেত্রবিশেষ নিজেদের ব্রেইনকে কাজে লাগানো উচিত।অলওয়েজ কে কি বলল না বলল তা নিয়ে পড়ে থাকা না..নাহলে ওই যে..ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে হয় আর কি!”

আরশি অবাক হয়ে সিদ্রাতের কথাগুলো শুনছিলো।ওর মনটা বলছিলো সিদ্রাত যেনো কথাগুলো ওকে মিন করেই বলেছে।কিন্তু বিবেক বলছে তোকে মিন করে কেন বলবে?তোর মনের ভিতর কি আছে তা তো আর সিদ্রাত জানে না।এসব ভাবনা-কল্পনার মাঝেই খাবার চলে এলো।সিদ্রাত ইশারা করল খেতে..

আরশি ভাবনা থেকে বের হয়ে চিকেন শর্মাটা খেলো।আরশি শর্মা খেতে খেতে সিদ্রাতের কাস্টার্ড খাওয়া অর্ধেকের বেশি শেষ।আরশি খেতে খেতে বলল…

—”স্যার আপনিও এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে খান?আমাদের বাসার সবাই তাড়াতাড়ি খায়।কোনো অনুষ্ঠানে গেলে দেখা যায় আম্মু-আব্বু,সাজিদ সবার খাওয়া শেষ আর আমার অর্ধেকের বেশি বাকি আছে।তখন একা একা খেতে আমার এতো লজ্জা লাগে!মনে হয় মানুষ ভাববে আমি রাক্ষুসী..তিন চার প্লেট একসাথে খাচ্ছি..”

সিদ্রাত ফিক করে হেসে দিলো আরশির কথায়।আরশিও মুচকি হাসল সিদ্রাতের হাসি দেখে।সিদ্রাত বলল…
—”সবাই ঠিক মতোই খায়..তুমিই শুধু আস্তে আস্তে খাও।এতো আস্তে আস্তে খেলে অনুষ্ঠানের মেহমানরা তোমায় রাক্ষুসী ভাবুক আর না ভাবুক..শাশুড়ী কিন্তু ঠিকি ভাববে তুমি তাদের ছেলের সব টাকা খেয়েই শেষ করে ফেলছ”

সিদ্রাতের কথায় আরশিও হেসে দিলো আর বলল…
—”আমার স্বাস্থ্য দেখে আমাকে রাক্ষুসী ভাবার সুযোগ নেই”

সিদ্রাতের খাওয়া শেষ এর মধ্যেই।আরশি দুই চামচ কাস্টার্ড খেয়েছে মাত্র।সিদ্রাতের খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় আরশিও খাওয়া বন্ধ করে দিলো…
—”আমিও আর খাবো না।একা একা সবসময় খাওয়াটা বিরক্তিকর”

সিদ্রাত মুচকি হেসে নিজের সিট রেখে আরশির পাশে এসে বসে চামচে কাস্টার্ড নিয়ে আরশির মুখের সামনে ধরল।আরশি সিদ্রাতের এহেন কাজে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত মুচকি হেসে ইশারা করল খেতে।আরশি লাজুক হেসে খেলো।পুরো কাস্টার্ডটা সিদ্রাতই আরশিকে খাইয়ে দিলো।আরশি খাওয়ার সময় লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো যা সিদ্রাতের চোখ এড়ায়নি।সিদ্রাত আরশির লজ্জা রাঙা মুখটা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসছিলো।খাওয়া হলে দুজন বিল পে করে দুতলার দিকে রওনা দিলো।যেতে যেতে আরশি বলল…

—”স্যার আজ আমি ফারহা আর বনির সাথে বাসায় যাবো।আপনি আমার জন্য ওয়েট করবেন না”

সিদ্রাত ভ্রু কুচকে বলল…
—”আর ইউ শিউর?প্রবলেম হবে না তো?”
—ইনশা আল্লাহ কিছু হবে না।আর বনি ফারহা তো আছেই”
—”হুম তারপরও..আচ্ছা প্রবলেম হলে সাথে সাথে আমায় ফোন দিবে।আর শর্ট-কাট রাস্তা দিয়ে যেও না।ওই রাস্তাটা নীরব সুনশান.. ”
—”আচ্ছা”

আরশি ক্লাসে চলে যায় আর সিদ্রাত টিচার্স রুমে।
তারপর যথারীতি আবারও ক্লাস শুরু হয়।বাক তিনটা ক্লাসে আরশি আর বেশি কথা বলেনি বনি ফারহার সাথে।কারণটা ইতি ম্যাম।তখন এতো ইতি ম্যাম ইতি ম্যাম করার জন্য আরশির মেজাজ দুটোর উপরই চড়াও হয়ে আছে।বনি আর ফারহা বেশ কয়েকবার আরশির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে।এক পর্যায়ে তো লাস্ট ক্লাসে আরশি রেগে লাস্টের বেঞ্চেই চলে গিয়েছে।বনি আর ফারহা করুণ চোখে একে-অপরের দিকে তাকালো।ফারহা বলল…

—”বনির বাচ্চা তুই বেশি ইতি ম্যাম ইতি ম্যাম করেছিস।তোর জন্য গিয়েছে”
—”তুই বুঝি করিসনি?”
ফারহা মুখ ফুলিয়ে বলল..
—”আরশি শুধু শুধু রাগছে।ম্যামটা কত মিশুক দেখেছিস”
বনি দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
—”উষ্টা খেতে মন চাইলে আরও প্রশংসা কর”

এভাবেই কোনো রকম ক্লাস শেষ হলো।আরশি ওদেরকে পেরিয়ে চলে যেতে নিলে ফারহা আর বনি আরশিকে আটকালো।বনি বলল…
—”দোস্ত এমন করিস কেন?সরি তো”

আরশি মুখ ভেঙালো আর বলল..
—”হয়েছে তোদের সরি।সর এখন..আমি বাসায় যবো।লেইট হচ্ছে”

ফারহা আর বনি আরশিকে জড়িয়ে ধরল।আরশিরও রাগ পানি হয়ে গেলো।প্রিয় মানুষদের সাথে কি আর রাগ করে থাকা যায়।গলাগলি শেষ করে তিনজন একে-অপরের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।আরশি গেইট থেকে বের হওয়ার সময় দেখল সিদ্রাতের কার আছে কিনা।কার দেখতে না পেয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে পরিচিত একটা রিক্সায় উঠে গেলো আর বলল…
—”চাচা রিক্সা ঘুরান”
রিক্সাওয়ালা বলল…
—”আম্মাজান বাসায় যাইতেন না?”
আরশি রিক্সাওয়ালাকে যায়গার নাম বলল।রিক্সা সে দিকেই ছুটে গেলো…

চলবে…
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here