প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ২৯+৩০

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_29
#Writer_TanhaTonu

সিদ্রাত বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রুমে বসে একটা ইংলিশ বই পড়ছিলো।তখনই সিদ্রাতের আম্মু হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে।সিদ্রাত ওর আম্মুকে দেখে বইটা রেখে জিজ্ঞাসা করে…
—”আম্মু তোমায় এতো বিধ্বস্ত লাগছে কেন?কোনো প্রব,,,”
—”সিদ্রাত আরশি কোথায় গেলো?ও তো এই কয়দিন তোর সাথেই এসেছে।আজ তুই ওকে কোথায় রেখে চলে এলি?”

সিদ্রাত অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করল…
—”আরশি বাসায় ফিরেনি এখনো?”
সিদ্রাতের আম্মু না সূচক মাথা নাড়ায়।সিদ্রাত বসা থেকে উঠে পড়ে..
—”স্কুল ছুটি হয়েছে দেড়টায় আর এখন চারটা বিশ..তোমরা আমায় এখন জানাচ্ছো কেন??উফফ”

সিদ্রাত এটা বলেই আরশিদের রুমে চলে গেলো।গিয়ে দেখল ড্রয়িং রুমে আরশির আম্মু চিন্তিত হয়ে কাকে যেনো ফোন করে যাচ্ছে।সিদ্রাত আরশির আম্মু কাছে গিয়ে দাঁড়ালো…
—”আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না।আমি ওকে খুঁজে আনছি।ও মনে হয় ফারহা বা বনিদের বাসায়।আমাকে বলেছিলো ফারহা আর বনির সাথে আসবে”

আরশির আম্মু এবার কেঁদে দিলো।কেঁদেই বলল…
—”বাবা মেয়েটা আমার কোথাও নেই।সব জায়গায় খুঁজ নিয়ে ফেলেছি।ফারহা আর বনিও কিছু জানে না”

সিদ্রাতের বুকটা ধক করে উঠল ।তবুও তা প্রকাশ না করে আরশির আম্মুকে আশ্বাস দিয়ে বের হয়ে গেলো।সিদ্রাতের আম্মু আর মুন এসে আরশির আম্মুকে সামলাতে লাগল
সিদ্রাতের বুকের ভিতর যেনো কেউ ছুরি চালাচ্ছে।এতোটা টেনশন ও নিতেই পারছে না।একটার পর একটা বিপদ আসছে।মনে হচ্ছে মাথাটা ফেটে যাবে যন্ত্রণায়।সিদ্রাত বাসা থেকে বের হয়েই আগে বনিকে ফোন দিলো।বনি ফোন রিসিভ করেই বলল…

—”স্যার আরশির কি কোনো খোঁজ পেয়েছেন?”
সিদ্রাত শান্ত কন্ঠে বলল…

—”স্কুল ছুটির পর আরশি তোমাদের সাথে কোথাও গিয়েছিলো?”
—”স্যার না..ওতো আরও লেইট হচ্ছে বলে আমাদেরকে তাড়াতাড়ি বিদায় দিয়ে চলে গেলো”
—”তোমরা কী দেখেছো আরশি রিক্সা নিয়েছিলো নাকি সিএনজি বা কার?”
—”স্যার না…আমরা তো একসাথেই গেইট থেকে বের হয়েছি।পরে আমরা আমদের রাস্তা ধরে এসে পড়েছি বাসায় আর ও সম্ভবত রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো”
—”হুম..”

সিদ্রাত এটা বলেই ফোন কেটে দিলো।বাইক নিয়ে তন্ন তন্ন করে স্কুল ও এর আশেপাশে সব জায়গা খুঁজতে লাগল।এর মাঝেই সিদ্রাতের ফোন বেজে উঠল।বনি ফোন করেছে।সিদ্রাত ফোনটা রিসিভ করতেই বনি বলল….

—”স্যার একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি।জানি না কতটা কাজে আসবে..ও আজ পার্লারে যেতে চেয়েছিলো ছুটির পর।পরে ফারহা ওকে বুঝানোর পর ও বুঝেছিলো।আমার জানা মতে ওর ওখানে যাওয়ার কথা না।তারপরও আপনাকে বলে রাখলাম”

সিদ্রাত বনির কথায় কিছুটা অবাক হলো।জিজ্ঞাস করল…
—”ও পার্লারে গেলে তো ওর আম্মুকে বলে বা নিয়েই যেতো।গোপনে যাবে কেন?আসল ব্যাপারট আমায় খুলে বলো”

বনি বলতে চাচ্ছিলো না।ইতস্ততবোধ করছিলো।পরে সিদ্রাতের ধমকে সব গড়গড় করে বলে দিয়ে সাথে সাথে ফোন কেটে দেয়।এসব শুনে সিদ্রাতের মেজাজ হাই ভোল্টেজে চলে গিয়েছে…
—”চুল কালার করার শখ না?করাচ্ছি কালার..”

সিদ্রাত দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে পার্লারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।চোখগুলো একদম লাল হয়ে গিয়েছে ছেলেটার।কপালের রগ ফুলে উঠেছে।শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে।দশ মিনিটের মধ্যেই সিদ্রাত পার্লারের সামনে চলে এলো।ভিতরে ঢুকতে গেলেই বাঁধা এলো।দাড়োয়ান ঢুকতে দিচ্ছে না কারণ পুরুষ ঢোকা নিষিদ্ধ।তাই ও থাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভিতরে খবর পাঠালো যেনো আরশিকে ডেকে দেয়…

একটা মেয়ে বলে উঠল..
—”এক্সকিউজ মি তোমাদের মাঝে আরশি কে?বাইরে একজন ওয়েট করছে আরশির জন্য”

আরশি ওয়েটিং রুমে বসে ওয়েট করছিলো।আজ লম্বা সিরিয়াল।এখনো ওর সিরিয়ালই আসেনি।মেয়েটার কথা শুনে ভ্রু কুচকে ফেলল আরশি।ও যে এখানে এটা কে জানে?তাকে ডাকলই বা কেন?আরশি এসব ভাবতে ভাবতে থাই খুলে বাইরে পা রাখতেই ওর গালে পর পর দুটো চড় পড়ে গেলো।আরশি যেনো ওখানেই স্তব্দ হয়ে গেলো।ও কোনো রিয়েকশন করবে তার আগেই সামনে থাকা লোকটি ওর হাত ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যেতো লাগল…
—”স্যার কি করছেন ছাড়ুউউন…লাগছে আমার.. প্লিজ ছাড়ুন”

আরশি বলতে বলতে কেঁদেই দিলো।গালে চড়টা বেশ ভালোভাবেই পড়েছে।আর হাত এমনভাবে চেপে ধরেছে সিদ্রাত যে আরশির মনে হচ্ছে শিরাগুলো পাশ থেকে সরে যাচ্ছে।সিদ্রাত রাস্তায় এসে আরশিকে বাইকের কাছে ছুড়ে মারল।আরশি পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো।কিছু বলতে যাবে তার আগেই সিদ্রাত রাগী কন্ঠে বলল….
—”একটা আওয়াজও না।চুপচাপ বাইকে বস।আজ তোর কপালে যে কি আছে আমি নিজেও জানি না”

আরশি সিদ্রাতের এমন ব্যবহারের সাথে একদমই পরিচিত না।ও ভয়ে কুকড়ে গেলো।চুপচাপ বাইকে বসতেই সিদ্রাত বাইক স্টার্ট দিলো।আরশি ভয়ে সিদ্রাতকে চেপে ধরল।সিদ্রাত খুবই স্পিডে বাইক চালাচ্ছে আর আরশি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।ও ভালো করেই বুঝতে পারছে ওর কপালে আজ দুঃখ আছে।কিন্তু এতোটা রেগে যাওয়ার কারণই আরশি খুঁজে পাচ্ছে না…

কিছুদূর যেতেই দেখল বাইক বাড়ির পথে না গিয়ে অন্যদিকে যাচ্ছে।আরশি যেনো ভয়ে আরও গুটিয়ে গেলো।আজ যে কেউ বাঁচাতে পারবে না ওকে তা যেনো প্রতিটি সেকেন্ড বলে দিচ্ছে…

প্রায় এক ঘন্টা দশ বিশ মিনিটের মতো বাইক চালানোর পর সিদ্রার একটা বাড়ির সামনে কার থামালো।
আরশি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আরও ভয় পেয়ে গেলো
—”এটা তো উনাদের ধানমন্ডির সেই বাসা যেখানে কেউ থাকে না”
আরশি এটা ভেবেই জামা খামচে ধরল। সিদ্রাত বাইক থেকে নেমে আরশির হাত টেনে উপরে নিয়ে গেলো।আরশি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও সিদ্রাতের সাথে পেরে উঠছে না।সিদ্রাত নিজের রুমে এনে আরশিকে বেডের উপর ছুড়ে মারে।আরশি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠে। সিদ্রাত রুমের ডোর লক করে আরশির দিকে এগুতে লাগল।আরশি ভয়ে পিছাতে লাগে।ওর চোখ দিয়ে অবিরাম ধারায় পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল…

—”স্যার,,,কি,, করছেন?”

সিদ্রাত এগুতে এগুতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
—”রূপ দিয়ে পুরুষ মানুষকে ভুলাতে চাস তাইনা?এজন্যই তো হেয়ার কালার করতে গিয়েছিলি!আজ তোর আশা পূরণ করে দিচ্ছি।রূপ দেখানো লাগবে না… তোকে নিজের করে নিবো আজ এমনিতেই”

আরশির কান্নার গতি আরও বেড়ে গেলো।ও ভাবতেও পারেনি ওর এমন একটা স্টেপ আজ ওকে এ অবস্থায় দাঁড় করাবে।কান্নার কারণে ও কিছু বলতেও পারছে না।সিদ্রাতের চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে।আরশির একদম কাছে এগিয়ে এসে আরশিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।আরশি করুণ চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত একটান দিয়ে মাথার স্কার্ফটা খুলে ছুড়ে মারল।আরশির লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে।সিদ্রাত আরশির গলায় মুখ ডুবিয়ে চুমু খেতো লাগল।আরশি সিদ্রাতকে খামচে ধরল।ধীরে ধীরে সিদ্রাতের চুমুগুলো তীব্র থেকে তীব্র কামড়ে পরিণত হচ্ছে।যন্ত্রণায় আরশির মরে যেতে ইচ্ছে করছে।সহ্য করতে না পেরে আরশিও খুবই জোরে খামচে ধরল সিদ্রাতের পিঠ।সাদ শার্টটার কয়েক জায়গায় অলরেডি লাল বর্ণ ধারণ করেছে।আরশি চিৎকার করে বলতে লাগল…
—”মরে যাবো আমি..ছাড়ুউউনন..ছাড়ুউউ,,,”

সিদ্রাত আরশির ঠোঁট জোরায় কামড় বসাতে শুরু করল।এবার আরশির মনে হচ্ছে ওর উপর দিয়ে আজাব যাচ্ছে।সিদ্রাত আরশিকে এতো জোরে চেপে ধরেছে যে আরশি নড়তেও পারছে না।শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর মোচরা-মোচরি করছে।সিদ্রাতের রাগ যেনো এখনো কমেনি।ও আরশির শরীরের উপর রাগ ঝাড়তে ব্যস্ত।একসময় যখন সিদ্রাত আরশির গলা ছেড়ে আরও নিচে স্বজোরে কামড় দিলো আরশি একটা চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে গেলো।সিদ্রাতও শান্ত হলো।লম্বা লম্বা কয়েকটা শ্বাস ফেলে আরশিকে কোলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো..

তারপর ফোনট নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। আরশির আম্মুকে ফোন দিয়ে কি কি যেনো বলে বাঁকা হাসল।মনে মনে বলল…
—”বেঁচে থাকতে চুল কেনো শরীরে রঙ লাগানর কথাও আর ভাববে না এরপর..”

সিদ্রাত রুমে গিয়ে পড়নের সাদা শার্টটা খুলে ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিলো।তারপর রুমে এসে নিজের পিঠে,গলায়,ঘাড়ে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিলো।আরশির দিকে একপলক তাকিয়ে ওর ঠোঁট আর গলার আশেপাশের ক্ষতগুলো মুছে দিয়ে সেখানেও ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো।বুকের ক্ষতটায় ওয়েন্টমেন্ট লাগানোর সময় সিদ্রাতের হাত কাঁপছিলো।জেদের বসে ওখানেও কামড় দিলেও এখন বেশ রিগ্রেট ফিল করছে…

এর মাঝেই আবারও সিদ্রাতের ফোন বেজে উঠল।ও রিসিভ করে বলল…
—”হ্যাঁ আব্বু বলো”

সিদ্রাতের আব্বু হালকা ধমক দিয়ে বলল…
—”বাচ্চা মেয়েটা অন্যায় করে ফেলেছে। কিন্তু সেজন্য তুমি ওকে ও বাসায় নিয়ে গেলে কেন?”
সিদ্রাত ভাবলেশহীনভাবে বলল…
—”আন্টি তোমায় বলে দিয়েছে?”
—”শাট আপ সিদ্রাত..আরশির আম্মু কিছুই বলেনি।তোমার আম্মু আরশিদের বাসায় ছিলো।সে-ই আমায় বলেছে।তোমায় ওয়ার্নিং দিচ্ছি..এতোদিন যেভাবে নিজেকে সবার সামনে প্রেজেন্ট করেছো সেভাবেই থেকো।তোমার আগের রূপটা যেনো বেচারী বাচ্চা মেয়েটাকে দেখতে না হয়।তাহলে তুমিও আমার আগের রূপ দেখবে”

সিদ্রাত ফোন কেটে লম্বা একটা শ্বাস ফেলল।তারপর আরশির কপালে চুমু দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।এক মগ পানি এনে মুখে কয়েকবার ছিটা দিতেই আরশির চোখ পিটপিট করল।কিন্তু আরশি চোখ খুলতে পারছে না।শরীরটা অবশ অবশ লাগছে।মাথাও চক্কর দিচ্ছে।সিদ্রাত আরশি হাতে হাত রাখতেই চমকে গেলো।হাত-পা একদম বরফের মতো ঠান্ডা।সিদ্রাত দেরি না করে পায়ের তালুতে ম্যাসাজ করতে লাগল।টেম্পেরাচার কিছুটা ভালোর পথে আসলেই রুমের দরজা-জানাল বন্ধ করে এসি অফ করে দিলো।কাবার্ড থেকে মোটা একট কম্বল বের করে আরশির শরীর দিয়ে দিলো।তারপর নিজেও কম্বলের ভিতর ঢুকে আরশিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল…

এতে আধা ঘন্টার মধ্যেই আরশির শরীর ঘাম ছাড়ল।সিদ্রাত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ওভাবেই কিছুক্ষণ শুয়ে থাকল আরশিকে জড়িয়ে ধরে।আরশিও যেনো ঘুমের মাঝেই বেশ আরাম পাচ্ছে।আরও দশ মিনিট পর তাপমাত্রা একদম স্বাভাবিক হলে সিদ্রাত উঠে কম্বল সরিয়ে জানালাগুলো খুলে দিলো…

🍂🍂
রাত নয়টায় আরশির ঘুম ভাঙে।ও চোখ খুলে উঠে বসে পাশে সিদ্রাতকে বসে থাকতে দেখে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে।চোখগুলো ছলছল করছে মেয়েটার।সিদ্রাত উঠে চলে গেলো।আরশি ডুকরে কেঁদে উঠল।কিছুক্ষণ পর সিদ্রাত এক প্লেট ভাত এনে আরশির মুখের সামনে ধরল।আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল…
—”আমি খাবো না”

সিদ্রাত বেশ শান্ত গলায় বলল…
—”আমি কারও সামনে নিজের কঠোর রূপটা প্রেজেন্ট করতে চাচ্ছি না”

সিদ্রাতের এই কথাটি টনিকের মতো কাজ করল।আরশি ভয়ে খেয়ে নিলো।খাওয়া শেষ হলে আরশি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরে আবারও শুয়ে পড়ে।তবে এবার আর ঘুমায় না।সিদ্রাত প্লেটগুলো রেখে এসে আরশির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।মাথায় সিদ্রাতের হাতের স্পর্শ পেতেই আরশির চোখ থেকে পানি পড়তে লাগল।সিদ্রাত হালকা শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করল…

—”আ’ম সরি তখনকার জন্য।মাথা গরম হয়ে গেলে রাগটা আর কন্ট্রোল হয়না।এটা আজ নতুন না।হোয়াটেভার আমি আজ তোমাকে কিছু কথা বলব।আশা করি মন দিয়ে শুনবে ও বুঝার চেষ্টা করবে…”

সিদ্রাতের কথায় আরশি সিদ্রাতের দিকে ঘুরে শুয় আর ফ্যালফ্যাল চোখে তাকায়…
চলবে…
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_30
#Writer_TanhaTonu

আরশি সিদ্রাতের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়।সিদ্রার লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলে…
—”তোমার এইজ কত বলোতো?১৬/১৭…আর আমার?২৭ অলরেডি হয়ে গিয়েছে..মানে তোমার থেকে ১০/১১ বছরের বড় তাইনা?”

আরশি উঠে বসে নাক ফুলিয়ে বলে…
—”মাত্র ১০ বছর।আমার এইজ ১৭..”

সিদ্রাত মনে মনে লম্বা শ্বাস ফেলে।তারপর আবারও বলতে লাগল…
—”আচ্ছা সেটা ফ্যাক্ট না।দেখো এখন তোমার পড়াশুনা করার বয়স।কিছুদিন পর প্রিটেস্ট..তুমি এসএসসি ক্যান্ডিডেট। এই সময়টা লাইফের কতটা ইম্পোর্টেন্ট তুমি বুঝতে পারছো?তাছাড়া আল্লাহ কিন্তু অলরেডি তোমার জীবনসাথী লিখে রেখেছে।আজ তোমার অনেককেই ভালো লাগতে পারে।কিন্তু এই ভালোলাগা ক্ষণস্থায়ী..লাইফের এই সময়টায় অনেকেই আসে..অনেকেই যায়।আর এই সময়টায়ই মেয়েরা সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হয়।আমি জানি তুমি খুবই ভালো একটা মেয়ে। আমি চাইনা তোমার লাইফে এরকম কিছু ঘটুক।আমি চাই তুমি অনেক বড় হও..নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াও…প্লিজ আরশি একটু বুঝো”

আরশি সিদ্রাতের কথার অর্থ বুঝতে পেরে সিদ্রাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।কেঁদে কেঁদে বলে…
—”প্লিজ এরকম পাষাণের মতো কথা বলবেন না।আর অন্য ছেলেরা কেমন সেটা তো আমার জানার বিষয় না।আপনি তো আর অন্যদের মতো না।আমি জানি আপনি অনেক ভালো..অনেক ভালো..”

—”আমি ভালো?ভালো হলে কি তোমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করতে পারতাম?এটাই তো প্রুফ করে যে আমি শুধু খারাপই না..চরম খারাপ”

আরশি আরও জোরে সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে।কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলে।সে অবস্থায়ই বলে…
—”আমি এতোকিছু বুঝি না।আর আমার শরীরে তো আপনারই অধিকার।এতে বাজের কি আছে।প্লিজ উল্টা-পাল্টা আর বলবেন না”

আরশি ডুকরে কাঁদতেই থাকে।সিদ্রাত আরশির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে…
—”আরশি তুমি বুঝতে চাচ্ছো না কেন?আমি তো পরপুরুষ..প্লিজ ট্রাই টু বি আন্ডার্স্টেন্ড”

আরশি কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেয়…
—”আমি কিন্তু সুইসাইড করব আপনি উল্টা-পাল্টা কথা বললে”

সিদ্রাত হতবাক হয়ে যায় আরশির কথায়।ধমক দিয়ে বলে…
—”থাপ্পর চিনো?ফাজিল মেয়ে কোথাকার!মুখ দিয়ে যদি আর কখনো এই ওয়ার্ডটা আটার করো..তোমার জিহবা আমি ছিড়ে ফেলব”
আরশি সিদ্রাতের দিকে চোখ গরম করে তাকায় আর তড়িৎগতিতে সিদ্রাতের বুকে বাইট বসিয়ে দেয়
—”আউচচ..কি করলে এটা?”
—”আপনিও আমায় এভাবে বাইট দিয়েছেন..শোধ-বোধ।আর আমার সাহস নেই তাই আপনাকে বকলাম না”

এমন সিরিয়াস অবস্থায়ও যে আরশি এমন বাচ্চামো করবে সেটা সিদ্রাত ভাবতেই পারেনি।ও ভালো করেই বুঝতে পারল আরশিকে এখন বুঝিয়ে লাভ নেই।ও মনে মনে নিজেকে সামলে নিয়ে আরশির পিঠে হাত বুলিয়ে বলল…
—”আচ্ছা বাদ দাও..কিছু খাবে না?চলো খাইয়ে দেই”

আরশির চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।ও জিজ্ঞাসা করল…
—”আপনি খাইয়ে দিবেন আমায়?সত্যি?”
সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল…
—”হুম..”
আরশির খুশি যেনো ধরে না।ও বেড থেকে লাফিয়ে উঠে সোফায় বসে।সিদ্রাত আরশির পাগলামি দেখে মৃদু হেসে কিচেনে চলে যায়।আসার পরই ফোন দিয়ে কেয়ারটেকারকে খাবার আনিয়ে রাখতে বলেছিলো।সেগুলোই প্লেটে সাজিয়ে আবারও উপরে চলে আসে।আরশি সিদ্রাতকে দেখে লাজুক হাসে।সিদ্রাত আরশির পাশে বসে ওকে খাইয়ে দিতে লাগে।আরশির লজ্জা লাগছে।কিন্তু লজ্জার চেয়ে বেশি খুশি কাজ করছে।খাওয়াতে খাওয়াতে সিদ্রাত অত্যন্ত সাজিয়ে গুছিয়ে বলল…
—”আরশি তোমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ কী?”
—”আমার পছন্দের কাজ!আমার পছন্দের কাজ তো আপনাকে দেখা বা কথা বলা”

সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…
—”হাহা..জানো আমার পছন্দের কাজটার জন্য আমি আমার ফ্রেন্ডের কাছে যে কত হাসার পাত্র হয়েছি!আর প্রিয় কাজ ছিলো স্টাডি..শুধু এটুকুই না..মুন কিন্তু একদমই পড়তে চায় না।কিন্তু তুমিই বলো..আমার রেজাল্ট অলওয়েজ টপে ছিলো..ভার্সিটিতেও ফার্স্ট বয় ছিলাম আমি..সেই আমার বোন যদি পড়াশুনা না করে তাহলে আমার মান সম্মান কী থাকবে?ও এসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে কিন্তু যখন বৃত্তির রেজাল্ট দিলো তখন দেখি ওর নাম নেই।সেদিন প্রচুর মেরেছিলাম।সেটা ভাবলে আমার নিজেরই খারাপ লাগে।ওর পিঠে একদম বেতের দাগ বয়ে গিয়েছিলো”

মুনের কথা ভেবে আরশির খারাপ লাগল।ইশ কি ব্যথাটাই না পেয়েছে বেচারি!পরক্ষণেই ওর টনক নড়ল যে সিদ্রাত হাইস্ট স্কোর চায়..মানে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি।আরশি ভাবতে লাগল..
—”তার মানে তো আমায়ও পড়তে হবে অনেক”

সিদ্রাত আরশিকে দেখে মুচকি হাসল।ওর প্ল্যানটা কার্যকর হচ্ছে।সিদ্রাত আবারও বলল…
—”আর পাঁচদিন পর কিন্তু প্রিটেস্ট।পড়াশুনা করো তো?”
আরশি মনে মনে ভয় পেলো।পড়াশুনার অবস্থা যে খুব একটা ভালো না।তবুও মুখ ফুটে বলল..
—”জ্বি স্যার..আলহামদুলিল্লাহ”

সিদ্রাত মুচকি হাসল।আরশিকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট নিয়ে নিচে চলে আসল।নিজেও খেয়ে প্লেটগুলো ধুয়ে উপরে চলে আসে।আরশি তখন বেডে পা ঝুলিয়ে বসে কি যেনো ভাবতে ব্যস্ত।সিদ্রাত আরশির পাশে গিয়ে বসল আর বলল…
—”তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো।সকালে তো স্কুলে যেতে হবে”
—”হুম..কিন্তু এখান থেকেই যাবো?”
—”কেন কোনো প্রবলেম?বই-পত্র তো এখানেই আছে।আর তোমার স্কুল ড্রেসও।যদিও স্কার্ফটা অনেক্ষানি ছিড়ে গিয়েছে।বাট আমি আরেকটা আনিয়ে রেখেছি।ডোন্ট ওয়ারি”

আরশি লাজুক হেসে নিচের দিকে তাকালো।সিদ্রাত পুনরায় জিজ্ঞাস করল…
—”ঘুমাবে না?”
আরশি পরম মমতাময়ী কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল…
—”ঘুমাবো?”

সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…
—”তো ঘুম ছাড়া আর কিছু করতে চাও নাকি?কি করবে?”
আরশি বিড়বিড় করে বলল..
—”হুহ আপনি যদি আমার ভালোবাসা এক্সেপ্ট করতেন তাহলে আজ রাতটা কত গল্প করে কাটিয়ে দেয়া যেতো!খারাপ মানুষ আপনি।ভালোবাসি তো..তাই ভালো লাগে না।যেদিন হারিয়ে যাবো সেদিন বুঝবেন।তখন আরশি আরশি করে কাঁদবেন…যদি এমন না হয় আমার নামও চেইঞ্জ করে ফেলব”

সিদ্রাতের মুখটা কেমন যেনো থমকে গেলো হঠাৎ।আরশি সেটা খেয়াল করে মনে মনে বলল
—”আমার বিড়বিড় কথা কী আবার শুনতে পেলো নাকি?ধ্যাত কি যে ভাবছি?এটা শুনবে কি করে?”
আরশি বলল..
—”স্যার কোনো সমস্যা?”
—”হু?না..আচ্ছা আসো ছাদে যাই”

আরশির মনটা আরও ভালো হয়ে গেলো।ও মৃদু হেসে সিদ্রাতের সাথে ছাদে গেলো।দুজন ছাদে গিয়ে মাদুর বিছিয়ে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে বসল।ছাদটা বেশ অন্ধকার।আরশির অনেক ভয় লাগছে।আরশি সিদ্রাতের সাথে একদম ঘেষে বসল।সিদ্রাত বুঝতে পেরে জিজ্ঞাস করল…
—”ভয় পাচ্ছো?”
আরশি খুবই মিহি কন্ঠে ফিসফিস করে বলল…
—”স্যার ছাদে যদি কেউ থাকে?আমাদের যদি মেরে ফেলে..নায়ায়া”
সিদ্রাত হালকা হেসে আরশিকে নিজের সাথে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।অতঃপর আরশির মতোই ফিসফিস করে বলল…
—”এখনো ভয় লাগছে?”
আরশি সিদ্রাতের মুখের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বলল…
—”একটা লাইট থাকলে ভালো হতো।বুকের ভিতর ধুকপুক করছে আমার”

সিদ্রাত মুচকি হেসে পকেট থেকে কি যেনো বের করল আর সুইচ চাপল।সাথে সাথে মৃদু আলোর লাইট জ্বলে উঠল।লাইটের আলো খুবই ক্ষীণ।জাস্ট একে-অপরের মুখটা দেখা যাচ্ছে।আরশি এতেই খুশি…সিদ্রাত বলল
—”গান শুনবে?”
আরশি লাজুক হেসে মাথা নাড়ালো।সিদ্রাতও মুচকি হেসে শুরু করল…

চলনা আজ নতুন করে
হারিয়ে যাবো ,
যেথা আমি তুমি হীনা
কেউ থাকে না কো । – [ ২ বার ]

যেখানে তুমি , শুধুই আমারই
জগৎ জুড়ে মায়ায়, শুধু তোমারই । – [ ২ বার ]

আজ আবার , তোমাকে দেখে হারিয়ে যাই ,
চিরচেনা , স্বপ্নে হারিয়ে বেড়াই । – [ ২ বার ]

চলনা আজ নতুন করে
হারিয়ে যাবো ,
যেথা আমি তুমি হীনা
কেউ থাকে না কো । – [ ২ বার ]

যেখানে তুমি , শুধুই আমারই
জগৎ জুড়ে মায়ায়, শুধু তোমারই । – [ ২ বার ]

সিদ্রাত গানটা শেষ করে বিড়বিড় করে বলল…
—”সত্যিই কি তুমি হারিয়ে যাবে প্রিয়তমা?এতো অভিমান ভালো না।আমি তোমার ভালো চাই আমার প্রাণপ্রিয়া”

আরশি সিদ্রাতের গানটায় একদম ডুবে গিয়েছিলো।গানটা শেষ হতেই আরশি মুচকি হেসে বলল…
—”ছেলেদের সবকিছু এতো সুন্দর হওয়া ভালো না!শকুনের নজর লাগবে”
সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…
—”পছন্দ হয়েছে তোমার?”

আরশি থতমত খেয়ে গেলো সিদ্রাতের কথায়।কি পছন্দের কথা বলছে সিদ্রাত!আরশির ফেইস রিয়েকশন দেখে সিদ্রাত হেসে বলল..
—”গানের কথাই বলছিলাম”

আরশি লজ্জায় জিহবায় কামড় দিলো।তারপর লাজুক হেসে দুই হাত প্রসারিত করে বলল…
—”অনেএএকক..আপনার কন্ঠ পাগল করার মতো”

সিদ্রাত আরশির কথা শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসল।আরশি মুগ্ধ নয়নে আবছা আলোয় সিদ্রাতের সেই নজর কাড়া হাসি দেখল…

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here