প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ৫১+৫২

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_51
#Writer_TanhaTonu

সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।আরশির শরীর কেঁপে উঠল।সিদ্রাত মাতাল করা কন্ঠে বলল…

—এই পিচ্ছিটা যে এতো ভয় পায় তা তো জানতাম না।কবে থেকে এতো ভয় পাও?”

আরশি মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পারছে না।একদম স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছে।সিদ্রাতের উষ্ণ ওষ্ঠদ্বয় আরশির ঘাড় ছেড়ে পিঠে নেমে এলো।আরশি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল….
—”কি,,কর,,ছেন?”
—”হুশশ,,চুপ!আদর করছি”

নেশাধরা কন্ঠেই সিদ্রাত জবাব দিলো।আরশি চোখ-মুখে খিচে বন্ধ রাখল।তখনই সিদ্রাতের ফোন বেজে উঠল।সিদ্রাত হুশে ফিরে আসল ফোনের আওয়াজে বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকালো।আরশিও ঠোঁট টিপে হেসে ফোনের দিকে তাকালো যেখানে একটা মেয়ের নাম জ্বলজ্বল করছে… “ইশা”
_____________________________________
আরশি সিদ্রাতের কাছ থেকে সরে এলো।সিদ্রাত ফোন রিসিভ করে বেডে গিয়ে বসল।পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে আরশির দিকে তাকালো।আরশি ভেঙচি কেটে চলে যেতে নিলে সিদ্রাত এসে খপ করে হাত ধরে ফেলল।আরশি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করল…

—”আবার কী?”

সিদ্রাত টেডি হেসে বলল….
—”আমার আদর তো শেষ হয়নি।কোথায় যাচ্ছো হুম?

আরশি লাজুক হাসল নিচের দিকে তাকিয়ে।লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল…

—”দুদিন আগেও না আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলেন?আজ হুট করে কি হলো?”

সিদ্রাত আরশিকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরল।আরশি মুখ উঁচু করে সিদ্রাতের মুখের দিকে তাকালো।একে-অপরের নিশ্বাস একে-অপরের মুখে পড়ছে।সিদ্রাত বলল….

—”এতোদিন তো তোমার উন্মুক্ত খোলা ভেজা পিঠ দেখিনি।আজ মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে”

আরশি জিহবায় কামড় দিলো।ও ভুলেই গিয়েছিলো এই জামার পেছনের গলাটা অনেক বড়।পুরো পিঠই খোলা..স্টাইলিশ হওয়ায় গলাটা বেশ বড় ছিলো।আরশি আমতা আমতা করে বলল…

—”হয়েছে,,ছাড়ুন এবার…ক্ষুধা পেয়েছে,,”

সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশির কপালে কিস করে ছেড়ে দিলো।আরশি লজ্জায় দৌড়ে ডায়নিং রুমে চলে গেলো।সিদ্রাতও আসল।দুজন একসাথে লাঞ্চ করে নিলো।সিদ্রাত বলল…

—”রায়তাটা অনেক সুস্বাদু হয়েছে।আগামীকালও আবার বানাবে…ওকে?”

আরশি মুচকি হাসল।খাওয়া-দাওয়া কমপ্লিট করে সিদ্রাত রুমে চলে যায়।আরশি কিচেনে গিয়ে সব প্লেট-গ্লাসগুলো ধুয়ে নিলো।তারপর রুমে গিয়ে দেখে সিদ্রাত শুয়ে শুয়ে মোবাইল পচালাচ্ছে।আরশি সিদ্রাতের পাশে গিয়ে শুয়।সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কার সাথে যেনো মেসেঞ্জারে চ্যাট করছে।আইডির নাম “রিফা আমরিন” আরশির চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো।ও খপ করে মোবাইলটা নিয়ে নিলো।সিদ্রাত ভ্রু কুচকে তাকালো।আরশি রাগী কন্ঠে বলল….

—”লজ্জা করে না ঘরে বউ রেখে পরনারীর সাথে প্রেম করতে?”

সিদ্রাত আরশির রাগী ফেইস দেখে হেসে উঠল।টান দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে…

—”এতোটা ইনসিকিউরড ফিল করার কিছুই নেই।ও হলো নিউ ক্লাইন্ট..অফিসিয়াল কিছু ব্যাপার নিয়েই কথা বলছিলাম”

আরশি মোবাইলটা পাশে রেখে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটে।সিদ্রাত আরশির কপালের সামনে থাকা চুলগুলো ফু দিয়ে সরিয়ে দিলো।আরশি হুহু করে কেঁদে উঠল।সিদ্রাত হকচকিয়ে গেলো।আরশির একগালে হাত ডুবিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে বলে…

—”কি হয়েছে হুম?এভাবে কাঁদছ কেন হঠাৎ?”

আরশি সিদ্রাতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে…
—”কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবেন না আপনি।আমার ভালো লাগেনা।আপনি শুধুই আমার..শুধু আমার”

সিদ্রাত মুচকি হেসে আরশিকে গভীরভাবে নিজের বাহুডোরে মিশিয়ে নেয়।নাকে নাক ঘেষে বলে…
—”বোকা মেয়ে…নিজেই তো বলছ আমি তোমার..আবার নিজেই ইনসিকিউরড ফিল করছ।দ্যাট’স নট ফেয়ার”

আরশি ফুঁপাতে ফুঁপাতে নিজেও সিদ্রাতের নাকে নাক ঘেষতে লাগে।ধরা গলায় বলতে লাগে…

—”আপনি তাও কোনো মেয়ের সা,,,,”

সিদ্রাত আরশিকে কথা শেষ করতে দেয় না।নিজের ঠোঁটের ভাজে প্রিয়তমার ঠোঁটজোরা নিয়ে নেয়।আরশি সিদ্রাতের চুলগুলো পেছন দিয়ে খামচে ধরে।সিদ্রাত আরশির পা জোরাও নিজের দু’পায়ের মাঝখানে নিয়ে নেয়…

————–
—”হেই আরশি?হেই…প্লিজ দাঁড়াও,…দাঁড়াও…”

আরশি ক্লাসের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলো।কারও ডাক শুনে থেমে গেলো।পেছনে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে…

—”সাইম ভাইয়া?কিছু বলবেন?”

সাইম দৌড়ে আরশির সামনে এসে হাঁপাতে থাকে।তারপর জোরে শ্বাস টেনে বলে…

—”হুম ইট’স আর্জেন্ট।শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”

আরশি বিরক্তি নিয়ে বলল…
—”এটা আপনার আর্জেন্ট কথা?এসব ফাউ আলাপ করার টাইম আমার নেই।বাই”

আরশি চলে যেতে নিলে সাইম এসে আরশির সামনে দাঁড়ায় আর বলে…

—”আরে রিলাক্স।এতো তাড়াহুড়ো করো কেন?জানো না তাড়াহুড়োর কাজ সবসময় খারাপ হয়?মনোযোগ দিয়ে আগে শোনো আমার কথা”

আরশি চোখ-মুখ কুচকে সাইমের দিকে তাকায়।তারপর বলে…

—”কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।আমার ক্লাস আছে”
—”ইয়াহ সিউর..ক্লাস তো আমারও আছে।হোয়াটেভার শোনো..বিজন্যাস ম্যান সিদ্রাত আজওয়াদ যে কিনা তোমার হাজবেন্ড তারসাথে তুমি সুখে থাকতে পারবে না।কারণ হি ইজ অ্যা চিটার।তার একটা ছোট মেয়ে আছে দেড় বছরের”

সাইমের কথা শোনে আরশির মাথায় রক্ত উঠে যায়।ও রেগে বলে উঠে….

—”দেখুন সাইম ভাইয়া সিনিয়র সিনিয়রের মতো থাকবেন।আমার পার্সোনাল লাইফে একদম ইন্টারফেয়ার করবেন না।সংসার ভাঙার মানুষের অভাব নেই।তাই আমি কাউকে বিলিভ করি না এন্ড স্টে এওয়ে ফ্রম মি”

আরশি রেগে চলে যেতে নেয়।তখনি সাইম পেছন থেকে বলে…

—”আমার খারাপ কোনো ইনটেনশন নেই অথবা তোমার প্রতি কোনো দুর্বলতাও নেই যে তোমায় আমি মিথ্যা বলে মিস্টার সিদ্রাতের কাছ থেকে দূরে সরাবো।মিস্টার সিদ্রাতের সাথে আমার আব্বুর একটা বিজন্যাস ডিল হয়েছিলো প্রায় দেড় বছর আগে।তখনি উনার ছোট্ট মেয়ের সাথে পরিচয়।তখন মে বি বাচ্চার বয়স দেড় অথবা দু’মাস ছিলো।এতোদিনে আমি সেসব কথা ভুলে গিয়েছিলাম।কিন্তু আজ এখানে আসার সময় যখন কার ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়ে তখন পাশের কারে মিস্টার সিদ্রাতের কোলে উনার মেয়েকে দেখেছি।তখনি আমার তোমার কথা মনে পড়ল।তাই সতর্ক করলাম।এখন তুমি কি করবে না করবে তা তোমার ব্যাপার”

আরশি বাকরুদ্ধ নয়নে সাইমের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে অশ্রুকণা ভর করেছে।যেকোনো সময় বেরিয়ে যেতে পারে।আরশি সাইমের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও ক্লাসের দিকে রওনা দেয়।পা যেনো চলছে না।কেমন যেনো শরীরটা স্থবির লাগছে।ক্লাসের দরজার সামনে যেতেই আরশির চোখ গড়িয়ে জল বেরিয়ে আসে।আরশি চোখটা মুছে ক্লাসে গিয়ে বসে।ক্লাস শুরু হবে আরও বিশ মিনিট পর।নুসাইফাও আসেনি।আরশির গলাটা বারবার ধরে আসছে।মাথাটা পাগলের মতো লাগছে।আরশি নিজেকে সামলাতে চেয়েও সামলাতে পারছে না।ভেঙে পড়ছে মনটা।অবশেষে আর না পেরে আরশি ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে।রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে….
#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_52
#Writer_TanhaTonu

আরশি বাকরুদ্ধ নয়নে সাইমের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে অশ্রুকণা ভর করেছে।যেকোনো সময় বেরিয়ে যেতে পারে।আরশি সাইমের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও ক্লাসের দিকে রওনা দেয়।পা যেনো চলছে না।কেমন যেনো শরীরটা স্থবির লাগছে।ক্লাসের দরজার সামনে যেতেই আরশির চোখ গড়িয়ে জল বেরিয়ে আসে।আরশি চোখটা মুছে ক্লাসে গিয়ে বসে।ক্লাস শুরু হবে আরও বিশ মিনিট পর।নুসাইফাও আসেনি।আরশির গলাটা বারবার ধরে আসছে।মাথাটা পাগলের মতো লাগছে।আরশি নিজেকে সামলাতে চেয়েও সামলাতে পারছে না।ভেঙে পড়ছে মনটা।অবশেষে আর না পেরে আরশি ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে।রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে….
______________________________________

ড্রাইভার কার বাড়ির দিকে ঘুরাতে গেলে আরশি বলে উঠে….
—”ড্রাইভার আঙ্কেল..অফিসে যান।উনার অফিসে যাবো।বাসায় যাবো না এখন”

—”আচ্ছা ম্যাডাম”

পনেরো মিনিটের মধ্যেই কার অফিসের সামনে এসে থামে।আরশি এপ্রোনটা খুলে কারের ভিতরে রেখে হিজাবটা ভালোভাবে সেট করে অফিসের ভিতরে প্রবেশ করল।নাইন্থ ফ্লোরে পৌঁছে দেখল সবাই নিজ নিজ ডেস্কে কাজ করছে।আরশি ধীর পায়ে সিদ্রাতের কেবিনের সামনে গিয়ে নক করে।ভেতর থেকে বলে….

—”ইয়েস কাম..”

আরশি মৃদু হেসে ভিতরে প্রবেশ করল।সিদ্রাত লেপ্টপ থেকে মাথা তুলে আরশির দিকে তাকিয়ে চমকে যায়।আরশি মৃদু হেসে সিদ্রাতের কোলের উপরে গিয়ে বসে সিদ্রাতের গলা জড়িয়ে ধরে।সিদ্রাতও আরশির কোমর জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলে….

—”কি ব্যাপার মিসেস আজওয়াদ?হুট করে কি মনে করে?ক্লাস কি করো নি?”

—”উহু.. ভালো লাগছিলো না।আজ কি কাজের চাপ?”

সিদ্রাত মুচকি হেসে বলল….
—”কাজ তো অলওয়েজই আছে।বাট মহারানী আদেশ করলে তার জন্য আমি সবসময় ফ্রি আছি”

আরশিও মৃদু হাসল।সিদ্রাত আরশির কোমর আরও চেপে ধরে নিজের মুখ আরশির মুখের দিকে এগিয়ে নিতে লাগল।দুজনের ঠোঁটজোরা প্রায় ছুঁই ছুঁই..সিদ্রাত আরশির ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে তখনই কিটকিটিয়ে হাসির শব্দ পেলো।দুজনই চমকে সরে গেলো।আরশি তাকিয়ে দেখল ওর পায়ের কাছে বাচ্চা একটা মেয়ে।আরশি সিদ্রাতের কোল থেকে সরে বাচ্চাটাকে কোলে নিতে যাবে তখনই বাচ্চাটা দৌড়ে সিদ্রাতের কাছে চলে যায়।সিদ্রাত মুচকি হেসে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দাঁড়ালো। অজানায় আশঙ্কায় আরশির বুক ভারী হয়ে এলো।অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরশি সিদ্রাত আর বাচ্চাটার দিকে।তখনি রুহান দৌড়ে সিদ্রাতের কেবিনে এসে ঢুকল আর কোনো দিকে না তাকিয়েই বলতে লাগল….

—”উফফ কি পাজি মেয়ে..দেখলেন তো স্যার বললাম না আপনার মেয়ে আপনাকে ছাড়া অন্য কারও কোলে বেশিক্ষণ থাকবে না,,,,”

কথাটা বলে রুহান পাশে তাকাতেই থমকে গেলো।আরশির চোখগুলো ছলছল আর ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি।সিদ্রাত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।আরশিকে বোঝানোর জন্য এগিয়ে যায়…

—”আরশি প্লিজ শোনো আমার কথা,,,”

আরশি এক হাত উঁচু করে থামিয়ে দিয়ে দু’পা পিছিয়ে যায়।চোখ-মুখ শক্ত করে বলে….

—”ইট’স ওকে মিস্টার সিদ্রাত।কৈফিয়ত দেয়াটা জরুরী না।প্রত্যেকেরই প্রাইভেসি আছে।আর তাদেরকে স্পেস দেয়াটাও জরুরী।ইউ ডোন্ট নিড টু এক্সপ্লেইন”

আরশি কথাটাগুলো বলে বড় বড় পা ফেলে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।রুহান করুণ চোখে সিদ্রাতের দিকে তাকালো।সিদ্রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল আর ওর কোলের বাবুটা ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত বাবুর গালে পাপ্পি দিয়ে বলল…

—”বাবার জন্য টেনশন হচ্ছে বুঝি মামনি?ডোন্ট ওয়ারি ওকে?তোমার বাবার উপর কেউ রাগ করে থাকতে পারবেই না”

বাচ্চাটা কি বুঝল কে জানে!খিলখিল করে হেসে উঠল।সিদ্রাতও মৃদু হেসে আরও একটা পাপ্পি দিলো বাচ্চাটার গালে।তারপর রুহানের উদ্দেশ্যে বলল….

—”রুহান এদিকটা তুমি সামলে নিও।আমাকে যেতে হবে”

—”ওকে স্যার।সিহরাতকে কি তাহলে ফার্ম হাউজে রেখে আসব?”
—”নো রুহান।আমি সিহুকে নিয়ে যাচ্ছি সাথে করে”

রুহান ভীতু চোখে তাকালো।সিদ্রাত চোখের মাধ্যমে আশ্বাস দিলো।তারপর সিহরাত অর্থাৎ বাবুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল…
সিদ্রাত বাসায় এসে প্রথমেই নিজেদের রুমে গেলো।আরশিকে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় গেলো।হ্যাঁ..আরশি বারান্দার গ্রিল ধরে স্থির দৃষ্টিতে মেঘাচ্ছন্ন দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।সিদ্রাত সিহরাতকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।তারপর আরশিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনী ছোঁয়ালো।আরশির চোখে জমাট বাঁধা অশ্রুগুলো গড়িয়ে পড়ল।নির্জীব কন্ঠে বলল….

—”কি চাই?”

সিদ্রাত আরশির ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল…
—”তোমাকে…আমার প্রিয়াকে”

আরশি ধরাগলায় বলল..
—”প্রিয়া বুঝি আপনার সন্তানের মায়ের নাম?”

সিদ্রাত হকচকিয়ে গেলো তার প্রিয়তমার কথা শুনে। তারপর মুচকি হেসে বলল…
—”হিসাব মতে তো আমার প্রিয়তমাই আমার সন্তানের মা।আর এখন আমি তাকেই কাছে পেতে চাচ্ছি”

আরশি এবার শব্দ করে কেঁদে দিলো।ঘুরে সিদ্রাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলল…
—”আমার সামনে থেকে যান বলছি।আমার মেজাজ আর খারাপ করবেন না।আগুন লাগিয়ে দিবো আমি”

আরশির চিৎকার শুনে সিহরাত ভয় পেয়ে কেঁদে দেয়।আরশি কান্নার আওয়াজ শোনে নিচে তাকিয়ে সিহরাতকে দেখে চোখ গরম করে ওর দিকে তাকায়।বাচ্চাটা ভয় পেয়ে সিদ্রাতের পা ঘেষে দাঁড়ায়।সিদ্রাত সিহরাতকে কোলে নিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে আরশির দিকে তাকায়।তারপর বলে….

—”আরশি আমার রাগ বাচ্চাটার উপর দেখাচ্ছ কেন?”

—”একশবার দেখাবো।ওকে আমার সামনে থেকে সরান বলছি।আমার সহ্য হচ্ছে না এই মেয়েটাকে”

সিদ্রাত স্বজোরে আরশির গালে চড় মারে।আরশি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।এতে সিহরাতও কেঁদে দেয় আর আরশির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দেয় কোলে যাওয়ার জন্য।আরশি বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে রাগ দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রুমের ভিতর চলে যায়।সিদ্রাত গভীর শ্বাস ফেলে।তারপর রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে আরশি বেডের এক সাইডে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছে।সিদ্রাত আরশির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপর ঠান্ডা কন্ঠে বলল….

—”ও আমার মেয়ে এটা ঠিক যদিও ওর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই।কিন্তু এটা এই মূহুর্ত থেকে তুমি, আমি আর রুহান ছাড়া কেউ জানে না।আর জানবেও না।হোয়াটেভার.. আমি চাইনা তুমি আমার রাগ নিষ্পাপ শিশুটার উপর ঝাড়ো..”

আরশি সিদ্রাতের কথায় চমকে গেলো।অবাক হয়ে বলল….
—”মানে?কি বলছেন?তাহলে এটা কার সন্তান?”

সিদ্রাত বলল…
—”ও আমার সন্তান আরশি।কখনো এই কথাটা বলবে না যে ও কার সন্তান?আমি ওর বাবা..
তবে তোমার কাছে আমি কিছুই লুকাবো না।সব ক্লিয়ার করব। নীরার রক্ত ওর শরীরে..নীরা আর হাবিবের রক্ত ওর শরীরে।কিন্তু সেসব আমি মানি না।জন্ম থেকে ও আমার সন্তান হয়েই বড় হচ্ছে…”

আরশি সিদ্রাতের কথায় চিল্লিয়ে বলে উঠল…

—”কিইইহহ??নীরা??”

চলবে….
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here