প্রাণ_ভোমরা পর্ব ২৬+২৭

#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (২৬)

“আমার ফোন আর মানিব্যাগ কি তোমার কাছে?”

মীর খন্দকারের প্রশ্নে ভ্রমর তাড়াহুড়োয় নিজের ব্যাগের চেইন খুলতে শুরু করে। তিনি জ্ঞান হারিয়ে যেখানে পড়ে যাচ্ছিলেন সেখানেই মোবাইলটা পড়ে ছিল। ভ্রমর তুলে নিয়েছিল। অচেতন অবস্থায় কেবিনে ঢোকানোর পর এক নার্স এসে মানিব্যাগটা দিয়ে যায়। যদিও তখন ভ্রমর বুঝতে পারেনি ব্যাগটা কার। এখন বুঝতে পেরেছে। ভাগ্যিস উনি চাইলেন! ভ্রমরের তো মনেই ছিল না।

মীর খন্দকার ফোন আর মানিব্যাগ নেড়েচেড়ে বললেন,

“মা,আমার গায়ের রংটা একটু কালো। কিন্তু ভয় পাওয়ার মতো কি?”

ভ্রমর তাঁর কথা ধরতে পারল না। জিজ্ঞেসা চাহনি ফেললে,তিনি মৃদু হাসলেন। বললেন,

“তুমি এখনও ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছো। কেন বল তো? আমার কণ্ঠ কি খুব রুক্ষ?”

ভ্রমর উত্তর দিতে পারল না। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে শ্যামবর্ণের মানুষটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে মনে বলছে,’এমন সুন্দর মুখ আমি আর কখনও দেখিনি। এমন মধুর কণ্ঠ আমি কখনও শুনিনি। এত তৃপ্তিদায়ক!এত আনন্দদায়ক! মনে হচ্ছে জনম জনম ধরে এই মুখ আর এই কণ্ঠের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। হে আল্লাহ! এ কেমন টান অনুভব করছি? নাভির চারপাশে এ কেমন সুখকর যন্ত্রনা?

ভ্রমরের এমন অভিব্যক্তিতে মীর খন্দকার হেসে উঠলেন। সশব্দের হাসি! ভ্রমর চোখ সরিয়ে নিল। তিনি হাসি থামিয়ে বললেন,

“আমার মনে হয় এই ফোনটা তোমার।”

ভ্রমর তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকাল। লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসল। সে দ্রুত নিজের ফোন নিয়ে পুনরায় ব্যাগে হাত ঢুকাল। কাঙ্ক্ষিত ফোনটি তাঁর দিকে ধরে বলল,

“আমি দুঃখিত!”

মীর খন্দকার ভ্রমরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। মনে মনে চলছে অগোছাল ভাবনা। কিছু সেকেন্ডের ব্যবধানেই তার মুখ মলিন হয়ে আসে৷ একটু আগের সেই স্বচ্ছ হাসির বিন্দুমাত্র রেশ নেই ঠোঁট জোড়ায়। সহসা বললেন,

“একটা নাম্বার উঠাও তো।”

ভ্রমর হালকা ছিটকে ওঠে। বিনাবাক্যে নাম্বার তুলার জন্য প্রস্তুত হয়। মীর খন্দকারের এক এক করে বলে যাওয়া সংখ্যাগুলো সতর্কতাসহিত তুলে নিল ভ্রমর। তিনি আরেকবার দেখে নিয়ে বললেন,

“কল দেও। রিসিভ করলে বলবে,আমি অসুস্থ। জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অবস্থা খুবই খারাপ। মারা যাচ্ছি প্রায়।”

তাঁর এমন কথায় ভ্রমর বিস্ময় চোখে তাকিয়ে রইল। সংকোচ নিয়ে বলল,

“এগুলোই বলব?”
“হুম। উদ্বিগ্ন ও দৃঢ় গলায় বলবে। যেন সে বিশ্বাস করে এখনই ছুটে আসে। ভুলেও যেন বুঝতে না পারে আমি শিখিয়ে দিয়েছি। কথাগুলো বলেই কেটে দিবে। সে যদি কলব্যাক করে রিসিভ করবে না। হাসপাতালের ঠিকানাটা মেসেজ করে দিবে।”

ভ্রমর কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে আছে। তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে,মানুষটি কে! কার উপস্থিতি কামনার জন্য এতগুলো মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছেন। কিন্তু তাকে দিয়ে কেন? তার ফোন থেকে কেন? উনার নিজেরও তো ফোন আছে। ভ্রমরের মনে উদয় হওয়া প্রশ্নটা উনি বুঝি বুঝে ফেললেন। বললেন,

“আমার ফোন থেকে বললে বিশ্বাস করবে না।”
“কেন?”

ভ্রমর খেয়াল করল লোকটির মুখ বিষন্নতায় ছেয়ে আছে। তিনি বিষন্ন গলায় বললেন,

“কারণ এই মিথ্যে কথাগুলো আমার ফোন থেকে অসংখ্য বার বলা হয়েছে। শুরুর দিকে ধরতে না পারলেও এখন ধরে ফেলে। বড় হয়েছে। মাথায় বুদ্ধীও বেড়েছে। উপার্জনক্ষম হয়েছে। আমাকে তার আর প্রয়োজন নেই।”

ভ্রমরের হঠাৎই মনে হলো,এই লোকটি দুঃখী। ভীষণ রকমের দুঃখী। সে এটাও ধরে নিল,যার জন্য দুঃখ পাচ্ছে সে একজন ছেলে। যার বুকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি লালরঙা কঠোর মন!

সেই কঠোর মনের অধিকারী ছেলের নাম্বারে কল ঢুকাতে গিয়ে হৃদ্যের কল চলে আসল। ভ্রমর আঁতকে উঠল। শঙ্কার আভাস পুরো মুখজুড়ে। তার হাত কাঁপছে! কলটা রিসিভ করে কানে ধরবে সেই শক্তিটুকুও যেন নেই। স্থির ও ভীত দৃষ্টি হৃদ্যের নাম্বারটিতে। চোখের সামনে একটি পার্ক ভাসছে। যেখানে কয়েক ঘন্টা পূর্বে সে আর হৃদ্য উপস্থিত ছিল। গল্প করতে করতে আনমনে হাঁটছিল। একসময় ক্লান্ত হয়ে ভ্রমরের পানির তৃষ্ণা পায়। হৃদ্য তাকে একটি নিরাপদ জায়গায় বসিয়ে পানির খোঁজে যায়। ভ্রমর কিছুক্ষণ চুপচাপ হৃদ্যের অপেক্ষায় বসে থাকলেও এক সময় উঠে দাঁড়ায়। হৃদ্যের খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে পার্কের বাইরে চলে আসে। তখনই তার সামনে এক গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ভেতর থেকে এক অপরিচিত লোক নামে। যাকে দেখে খুব অস্বাভাবিক মনে হয় ভ্রমরের। দু কদম সামনে এগিয়েই তো এই বিপত্তিটা ঘটাল। হৃদ্যের কথা ভুলে সোজা হাসপাতালে! ভ্রমর আরেক দফা চমকে উঠল হৃদ্যের কলে। সে কোনো রকমে কলটা রিসিভ করে কানে ধরল। হৃদ্য কিছু বলার আগেই সে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,

“আমি হাসপাতালে।”

সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে চাপা আর্তনাদে ভেসে আসল অজস্র প্রশ্ন,

“হাসপাতাল? কী হয়েছে তোর? ওখানে পৌঁছালি কিভাবে? তুই ঠিক আছিস তো? ডাক্তার চেক করেছে? ওষুধ দিয়েছে? ভর্তি হতে হবে নাকি? কতদিন থাকতে হবে? স্যালাইন-টেলাইন কিছু লাগিয়েছে? শোন না,কেবিনে আছিস নাকি বারান্দায় ফেলে রেখেছে? এই, চুপ করে আছিস কেন? যন্ত্রণা হচ্ছে? ভয় পাচ্ছিস? কিছু হবে না। আমি আসছি। চোখের পলকেই চলে আসব। একবার চোখের পাতা ফেলে তো দেখ। ঠাস করে ফেলবি না। সুন্দর করে সাবধানে ফেলবি। যদি ব্যথা পাস!”

বুলেটের গতিতে প্রশ্ন ছুঁড়েই কল কেটে দিল হৃদ্য। উত্তর শোনারও যেন সময় নেই!

ভ্রমর কান থেকে ফোন নামিয়ে থম মেরে রইল। বিড়বিড়িয়ে বলল,’আমার পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও তো এত প্রশ্ন থাকে না!’ হৃদ্যের কথার সত্যতা প্রমাণ পেতে ভ্রমর বেশ ধীরে চোখের পাতা ফেলল। সাথে সাথে সে কেঁপে উঠল। না হৃদ্য আসেনি। তার কল এসেছে। স্ক্রিনে ভেসে উঠা নাম্বারটির দিকে তাকিয়ে ভ্রমর হেসে ফেলল। কল কেটে দিয়ে মেসেজ অপশনে গেল। হাসপাতালের নামটা লিখে হৃদ্যের নাম্বারে বার্তা পাঠিয়ে দিতে দিতে সে কেবিন ছাড়ল। চোখের পলকে না আসলেও হাওয়াবেগে যে হাজির হবে এটা নিশ্চিত।

ভ্রমর হাসপাতালের মূল ফটকে এসে দাঁড়াল। সেকেন্ড কয়েক পেরোতে তীরবেগে আগত একটি মোটরসাইকেল আচমকা ব্রেক কষল। ভ্রমর কিছু বুঝে উঠার আগেই কারো হাতের বাঁধনে বন্দী হয়ে গেল। যতক্ষণে বুঝতে পারল ততক্ষণে হৃদ্যের বুকে পিষে যাওয়ার অবস্থা। হৃদ্য সর্বশক্তি দিয়ে ভ্রমরকে বুকের সাথে চেপে ধরে অনর্গল বলছে,

“কিছু হবে না। আমি থাকতে কিছু হবে না। আমি কিছু হতে দিলে তো হবে!”

ভ্রমর কিছু বলার চেষ্টা করলেও পারল না। হৃদ্য আবার বলল,

“এখানে না হলে অন্য কোথাও নিয়ে যাব। বড় হাসপাতালে নিয়ে যাব। বড় ডাক্তার দেখাব। দেশে কাজ না হলে বিদেশি দেখাব। বাস ছেড়ে প্লেনে উঠব!”

ভ্রমর মুখ হাঁ করে ধপ করে নিশ্বাস ছাড়ল। বলল,

“আচ্ছা,আমরা প্লেনে উঠব। বিদেশ যাব। কিন্তু মিঃপ্রতিবেশি তার আগে তো আমার কিছু হতে হবে।”

হৃদ্যের উদ্বিগ্ন হঠাৎ থমকে গেল। অস্থিরতাকে স্থগিত করে হাতের বাঁধন হালকা করল। সেই সুযোগে ভ্রমর মাথা তুলে ইংরেজিতে বলল,

“I’m fine. Take a good look.”

হৃদ্য কপাল কুঁচকে ফেলল। ভ্রমরকে নিজ শরীর থেকে আলগা করল। এক হাত দূরে দাঁড় করিয়ে একবার ডানদিক তো আরেকবার বামদিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নীরিক্ষণ করল। সন্দেহি কণ্ঠে বলল,

“বাইরের সবকিছু ঠিকঠাকই দেখছি। ভেতরের কী অবস্থা?”

ভ্রমর কিছু বলতে চেয়ে থেমে গেল। গম্ভীর স্বরে বলল,

“মনে পড়ছে না।”
“কী মনে পড়ছে না?”
“নাড়িভুড়ির ইংলিশ ওয়ার্ডটা।”

হৃদ্য সরু চোখে তাকাল। ভ্রমরকে সাহায্য করতে গিয়ে বুঝতে পারল সে ও মনে করতে পারছে না। বাসায় গিয়ে একবার বাংলা টু ইংলিশ ডিকশনারিটা ঘাটতে হবে। মেয়েটা যেভাবে হুটহাট ইংলিশ বলছে,না জানি কোন লজ্জায় ফেলে দেয়!

“তুমি মোটরসাইকেল কিনছ?”
“না।”
“তাহলে ওটা কার?”
“কোনটা?”

ভ্রমর ফস করে তপ্ত নিশ্বাস ফেলল। রাস্তার একধারে অবহেলায় পড়ে থাকা মোটরসাইকেলটা দেখিয়ে বলল,

“যেটা দিয়ে তুমি চোখের পলকে চলে এলে।”

হৃদ্য মাথা চুলকাল। জিজ্ঞেস করল,

“আমি ওটাতে করে এসেছি?”

ভ্রমর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লে,হৃদ্য মোটরসাইকেলটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখল কতক্ষণ। তারপর অসহায় গলায় বলল,

“মনে করতে পারছি না।”
“কী?”
“এটা কোথা থেকে আনলাম।”

ভ্রমর কপাল চাপরে বলল,

“তোমার বাসায় নিয়ে চলো। আংকেলের সাথে জরুরী কথা বলতে হবে।”
“জরুরী কথা? কোন বিষয়ে?”
“তোমার বিয়ের বিষয়ে।”
“মানে?”
“বুড়ো হয়ে গেছ। স্মৃতিশক্তি পুরোপুরি লোপ পাওয়ার আগেই বিয়ের কাজ শেষ করতে হবে বুঝলে? নাহলে দেখা যাবে স্মৃতি হারানো পাগল ছেলেকে কেউ বিয়ে করতে চাচ্ছে না।”

হৃদ্য কটমট চোখে তাকাল। মোটরসাইকেলে উঠে শক্তস্বরে বলল,

“উঠে বস।”

ভ্রমর আর কথা বাড়াল না। হৃদ্যের পেছনে বসে কাঁধে হাত রাখল। হৃদ্য ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল,

“যার জন্য পাগল হচ্ছি সে করলেই চলবে!”
“আমরা কি এটা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি?”

হৃদ্য ঠোঁট টেনে হাসল। মনে মনে বলল,’যা চুরি করা আমার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে তাই চুরি করতে পারছি না। এটা চুরি করে কী হবে?’

__________________________
রিধি মাথায় তোয়ালে প্যাঁচিয়ে গোসলখানা থেকে বের হলো। সাথে সাথে ঠিক করল আজ বিদ্যুৎ খরচ করবে না। দুপুরের তপ্ত সূর্যের সাহায্যে চুল শুকাবে। ছাদে যাওয়ার পূর্বে টেবিল থেকে একটি বই উঠিয়ে নিল। ছাদের পাটাতনে পা রাখতে এক দলা হিম বাতাস উড়ে এলো । রিধির পুরো শরীর শিউরে উঠল! হাতের পশম টুক করে দাঁড়িয়ে গেল। রিধি রোদের তাপ অনুভব করতে করতে বলল,’শীত তবে এসেই পড়ল!”

রিধি তোয়ালে খুলল না। সে অবস্থায় বই খুলে কালো বর্ণে চোখ বুলাতে শুরু করল। পড়ার গভীরে ঢুকে পড়েছিল প্রায়। সেই সময় ক্ষীণ শব্দ এলো কানে। রিধির মনঃসংযোগে কাট পড়ল। মনে হলো কারো পায়ের শব্দ পাচ্ছে। শব্দটা এদিকেই আসছে। রিধির কাছে এসে শব্দটা হারিয়ে গেল। তার কর্ণদ্বয় নতুন শব্দ আবিষ্কার করল। কারো নিশ্বাসের শব্দ। রিধির রক্ত চলাচল বেড়ে গেল। হাতের লোমগুলো আগের চেয়েও শক্ত ভূমিকায় দাঁড়িয়ে পড়ল। হৃৎস্পন্দন দ্রুত হতে দ্রুততর হচ্ছে। দম বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করছে মানুষটি কে। কিন্তু তার আগেই একটি হাত তোয়ালে খুলে চুল আলগা করে দিল। রিধি বিস্ময়ে স্তব্ধ! চোখ দুটো বড় বড়! ঠিক তখনি অনুভব করল দুটো পুরুষ হাত তার পেট জড়িয়ে ধরেছে। রিধির হাত থেকে বই পড়ে গেল। পিঠে কারো উষ্ণ বুকের ছোঁয়া পেতে পুরোদমে জমে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে চোখের মনিতে শ্রাবণের মুখটা ভেসে উঠল। বৃষ্টিতে ভেজা সেই মুখ,সেই ঠোঁট। ভেজা ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শে এক অদ্ভুত কম্পিত অনুভূতির প্রথম সাক্ষাত! রিধি চোখ বুঁজে ফেলল। তখনি কাঁধে পরপর দুটো চুমু পড়ল। রিধি মানুষটার হাতদুটো খামচে ধরল। শরীরে বয়ে যাওয়া অসহণীয় শিহরণ সহ্য করতে দাঁত দিয়ে ঠোঁটের একপাশ কামড়ে ধরল।

“আপনি ঠিক আছেন তো?”

শ্রাবণের উদ্বিগ্ন কণ্ঠে রিধি চমকে যায়। এবার সত্যি সত্যি হাত থেকে বই পড়ে গিয়েছে। পেছন ঘুরতে দেখে শ্রাবণ সিঁড়িঘরের দরজার কাছে দাঁড়ানো। হাতে ছোট্ট শিশি। লাল কাগজের লেভেলে স্পষ্ট করে লেখা ‘খাঁটি মধু’। সে তাৎক্ষনিক মাথায় হাত দেয়। তোয়ালেতো এখনও তার চুল জড়িয়ে! তাহলে কি সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? জেগে জেগে। এই ভরদুপুরে? রিধি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। গাঁ ভরা অস্বস্থি নিয়ে পড়ে থাকা বই তুলে নেয়। নিচু দৃষ্টিতে চলে যেতে নিলে,শ্রাবণ বলল,

“আপনি ছাদে আছেন জানতাম না। আপনাকে বিরক্ত করার কোনো ইচ্ছেও ছিল না। আমি তো কথা না বলে ফিরেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু আপনাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলো না। ভাবলাম,কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি তাই…”

রিধি শ্রাবণের সামনে এসে দাঁড়াল। শ্রাবণের গলার স্বর হারিয়ে গেছে। কী বলবে বুঝতে পারছে না। সামান্য ভয়ও পাচ্ছে। তবুও কিছু সাহস সঞ্চয় করে বলল,

“শুনেছি মধু খেলে শরীর গরম হয়। তাই পরীক্ষা করতে এক শিশি কিনে আনলাম। শীত গাঢ় হলে কাজে লাগবে। আপনি কাঁপছেন! পুরো শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে। মাত্র তো শীতের শুরু। এর মধ্যেই এই অবস্থা? আমার মনে হয়,এই মধুটা আপনার কাজে দিবে। খাবেন একটু?”

রিধি শিশি নিল। ছুঁড়ে মেরে বলল,

“অসভ্য ছেলে। সুযোগ পেলেই চুমু খেয়ে নিচ্ছে!”
“আমি কখন চুমু খেলাম?”

রিধি দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

“খাননি,খাবেন না। খাওয়ার কথা ভাববেনও না। বাস্তবে তো নাইই,কল্পনাতেও না।”

রিধি বড় বড় পা ফেলে সিঁড়িঘরের ভেতরে হারিয়ে গেল। শ্রাবণ হতভম্ব চোখে সেই দিকেই তাকিয়ে রইল।

_____________________

কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল ভ্রমর আর হৃদ্য। কিছুদূর যেতে ভ্রমর চিৎকার করে বলল,

“আমি নামব।”

রিকশা থেমে গেল। হৃদ্য বলল,

“নামবি ভালো কথা। এত চিৎকার করার কী আছে?”

ভ্রমর হৃদ্যের কথার উত্তর দিল না। রিকশা থেকে লাফিয়ে নামল। হৃদ্য নামতে নিলে ভ্রমর আবারও চিৎকার করে বলল,

“তুমি নামবে না।”
“কেন?”
“তুমি বাসায় যাবে তাই।”
“আর তুই?”
“আমি এখানে কিছুক্ষণ থাকব। পরে বাসায় যাব।”

ভ্রমরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হৃদ্যও নামল। ভ্রমরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,

“এখানে তোর কী কাজ?”

ভ্রমর বিরক্ত নিয়ে বলল,

“উফ! বিরক্ত করো না তো। যাও।”
“আমি বিরক্ত করছি?”
“করছোই তো?”

হৃদ্য অপমানবোধ করল। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল,

“আমি তোকে বিরক্ত করছি?”

ভ্রমর চঞ্চল মনিদুটো অন্যদিকে ঘুরিয়ে ব্যস্ত গলায় বলল,

“হুম।”

হৃদ্য একই প্রশ্ন তৃতীয় বার করার জন্য উদ্যত হতে ভ্রমর দ্রুত বলল,

“দেখি,সরে দাঁড়াও। কী হলো সরো না।”

ভ্রমর প্রায় ধাক্কিয়ে হৃদ্যকে পাশে সরিয়ে আনল। ঠিক সেই সময় একটি ছেলে তার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল। ভ্রমর তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। গালে পড়ে থাকা এক গাছা চুল কানে গুঁজতে গুঁজতে দৃষ্টি মাটিতে স্থির করল। মাথাটা কিঞ্চিত ঝুঁকিয়ে ঠোঁটে মৃদু হাসি আনল। কয়েক সেকেন্ড এভাবে পার হলো। হৃদ্য পাশ থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভ্রমরের অঙ্গের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মকান্ড গুলো দেখছিল। প্রায় মিনিট দুয়েক পর হৃদ্য নীরব উপস্থিতি ভাঙল। বলল,

“এটা কী হলো?”

ভ্রমর মিষ্টি হেসে বলল,

“লজ্জা পাওয়া।”
“মানে কী?”
“তুমি বুঝবে না।”#প্রাণ_ভোমরা
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (২৭)

মায়ের গলা জড়িয়ে ধরতে ভ্রমরের মন কেমন করে উঠল। কী যেন ভুলে গেছে বোধ হচ্ছে। ভুলে যাওয়া ব্যাপারটি মনে তীব্র উচাটন সৃষ্টি করছে। কিছুতেই ঘুম আসছে না। এক দলা মন খারাপ আর অস্থিরতা নিয়ে মায়ের গলা ছেড়ে দিল ভ্রমর। ভারী কম্বলটা গলায় টেনে গুটিশুটি মেরে থাকল। বেশ কিছুক্ষণ থম মেরে থাকার পর আচমকা চিৎকার করে উঠল,
“মনে পড়েছে!”

মেয়ের চিৎকারে শরীফা বেগম চোখ মেললেন। ভারী গলায় বললেন,
“কী হচ্ছে,ভ্রমর? মাঝরাতে চিৎকার করছিস কেন?”

ভ্রমর নিভে গেল। কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে মৃদু স্বরে বলল,
“কিছু না,আম্মু। স্বপ্ন দেখছিলাম।”

শরীফা খন্দকার আর ঘাটালেন না। ওপাশ ফিরে চোখ বুজলেন। ভ্রমর কম্বলের নিচে জোর করে চোখ মেলে থাকল। বলা তো যায় না যদি ঘুমিয়ে পড়ে! এভাবে বেশ কয়েক মিনিট পর মুখ থেকে কম্বল সরাল। সতর্কতা সহিত পরখ করল মা ঘুমিয়েছে নাকি। খুব একটা নিশ্চিত হতে পারছে না। আবার অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য্যও হচ্ছে না। ফলে খানিকটা সন্দেহ নিয়ে বিছানা ছাড়ে। সাবধানে মোবাইল তুলে নেয় বালিশের নিচ থেকে। পিল পিল পায়ে রুম থেকে বের হয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিল। কিছুক্ষণ ডায়াল লিস্ট ঘাটাঘাটি করতে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি পেয়ে যায়। সাথে সাথে কল ঢুকিয়ে ফোন কানে চেপে ধরে। ঠিক সেই সময় প্রশ্ন উদয় হয় এত রাতে কি মোবাইলের মালিক জেগে আছে? থাকলেও কি তার কল ধরবে? না ধরলে সেদিনের সেই আংকেলের ভালোমন্দ খোঁজ নিবে কিভাবে? রিং হতে হতে কলটা কেটে যেতে ভ্রমরের মন খারাপ দ্বিগুন হলো। আপনমনে বিড়বিড় করল,’সত্যিই ধরল না?’

ভ্রমর আকাশ মাপের মন খারাপ নিয়ে রুমে ঢুকছিল। সেই সময় ফোনটা বেজে উঠল। তাড়াহুড়োয় কল ধরে আগে মায়ের দিকে তাকায়। না! মা ঘুমুচ্ছেন। শব্দটা বোধ হয় কানে যায়নি। ভ্রমর চট করে বাইরে এসে পুনরায় দরজা ভিড়িয়ে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কে বলছেন?”

ওপাশ থেকে গম্ভীর পুরুষ কণ্ঠে ভ্রমর চমকে ওঠে। প্রশ্নের উত্তরে কী বলবে বুঝতে পারে না। কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেকেন্ড কয়েক নীরবতার পর ওপাশ থেকে বিরক্ত ঝরে পড়ে,
“আপনি কি কিছু বলবেন না কেটে দেব?”

মানুষটি মনে হয় সত্যিই কল কেটে দিচ্ছিল। কেমন নাড়াচাড়া শব্দ হলো। ভ্রমর দ্রুত বলল,
“এই না,কাটবেন না। আমি কথা বলব।”
“কী কথা?”

ভ্রমর আবার গলার স্বর হারিয়ে ফেলল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো সেই আংকেলটা ঠিক বলেছিল। এই মানুষটার বুকের ভেতর নরম হৃদয় নয়,কঠিন পাথর বসানো। নাহলে মেয়েদের সাথে এভাবে কথা বলে? ভ্রমরের ভাবনায় আরও অনেক কিছু আসল। সে ভাবনা ছেড়ে হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
“আপনি আংকেলের কী হন?”
“কোন আংকেল?”
“কয়েক দিন আগে যে আংকেল অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিল সেই আংকেল।”

মানুষটি এতক্ষণ দ্রুত প্রশ্ন করে গেলেও এবার থমকাল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“আমি কারও কিছু হই না। আমার নাম নীরব। সবাই আমাকে এই নামেই চিনে।”

ভ্রমর ভারি আশ্চর্য হলো। কথাগুলোর মধ্যে দাম্ভিকতা ও একরোখা ছোঁয়া পেল। কিছুটা অভিমানও! সে কিছু বলার জন্য ঠোঁট মেলতে রুমের ভেতর থেকে মায়ের কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ভ্রমর? কোথায় গেলি মা?”

ভ্রমর আঁতকে উঠল। কল কেটে তাৎক্ষনিক ফোনটা পেছনে লুকিয়ে ফেলল। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“টয়লেটে গেছিলাম,আম্মু।”
“আমাকে ডাক দিলি না? লাইটটাও তো জ্বালাসনি।”

ভ্রমর খাটে উঠে চৌকসে মোবাইলটা বালিশের নিচে রেখে বলল,
“তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকিনি।”

শরীফা খন্দকার আর কথা বাড়ালেন না। মেয়ের গায়ে কম্বলটা তুলে দিলেন।

____________
রিধি গোসলখানা থেকে বের হলো হাতে,পায়ে কাঁপুনি নিয়ে। মাত্রই গোসল করেছে। প্রিলিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার জন্য পড়ছিল পুরোদমে। সেই পড়ার বুঝি সাময়িক বিরতি আসল। বই,খাতা ফেলে এবার পরীক্ষার হলে বসতে হবে। রিধি চটপটে তৈরী হয়ে নিল। ফাইলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছাতে গিয়ে চোখ পড়ল টেবিলের কোণে রাখা এক শিশির উপর। যার পেটে জড়ানো লাল কাগজে লেখা,’খাটি মধু।’ রিধির ভ্রূ কুঁচকে এলো। যত দূর মনে পড়ে এমন একটি শিশির বোতল সে ছাদে ছুড়ে মেরেছিল। কাঁচের শিশি আস্ত থাকার কথা না। তাহলে কি শ্রাবণ আরেকটি এনেছে? রিধি চোখে,মুখে রাগ নিয়ে শিশিটি মুঠোয় তুলে নিতে থমকে গেল। একটি কাগজ চাপা ছিল। কৌতুহলে তা তুলে নিতে দেখল কিছু লেখা আছে।

“মধু কিন্তু সত্যিই শরীর গরম করে। এক ফোঁটা খাবেন? আমার জন্য নয় নিজের নরম শরীরকে ঠকঠক কাঁপুনি থেকে রক্ষা করতে।”

রিধি চট করে পেছনে তাকাল। তার মনে হলো শ্রাবণ তাকে দেখছে। কিন্তু দরজার আশেপাশে তো নেই। তাহলে? এমন অনুভূতির কারণ কী? রিধি মনের সন্দেহ দূর করতে নিজের রুম ছেড়ে বসার রুম,রান্নাঘর দেখে এসে শ্রাবণের রুমের দিকেও উঁকি মারল। কোথাও তার উপস্থিত না পেয়ে নিজ রুমে ফিরে এসে ছোট্ট নিশ্বাস ছাড়ে। কী মনে করে কয়েক ফোঁটা মধুও খেল। তারপর তড়িঘড়িতে ফাইল নিয়ে বাবার রুমে যাওয়ার পূর্বে শ্রাবণের দরজার কাছে দাঁড়ায়। শিশিটি আছাড় মেরে মনে মনে বলল,’বাহ! এত জলদি কাঁপাকাঁপি থেমে গেল? এখন তো গরম কাপড়েরও প্রয়োজন নেই।’

___________
পরীক্ষার হল থেকে বের হতে রিধির মুখ কালো হয়ে আসে। বাবার হাত ধরে পরীক্ষায় বসলেও বাসায় ফিরতে হবে একা। তিনি ছুটির জন্য দরখাস্ত করলেও ছুটি মঞ্জুর হয়নি। তবে বার বার অনুরোধের ফলে হাফ বেলার ছুটি পেয়েছিলেন। তাই চাকরি বাঁচাতে পরীক্ষার সময়ের মাঝামাঝিতে অফিস চলে যেতে হয়।

রিধি গেইট পেরিয়ে বড় রোডে এসে দাঁড়াতে চারপাশ আচমকা অন্ধকারে ছেয়ে গেল। শুরু হলো গাছপালার দোলদুলুনি! মরা পাতা উড়োউড়ির খেলায় ধূলোর কণারাও অংশ নিয়েছে। রিধি বিপদ আশঙ্কায় ঘাবড়ে যাচ্ছে। হাড় কাঁপুনি শীতের মধ্যে বৃষ্টি মানে ভয়াবহ অবস্থা! শরীর জমে পুরো বরফ হয়ে যাবে। সে ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে রিক্সার খোঁজ চালায়। সঙ্গে করে ছাতা না আনায় ঠোঁটের আগায় বিরক্ত চেপে বসে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন রিক্সার দেখা পাচ্ছিল না তখন হৃদ্যকে কল লাগায়। রিং ঢুকেছে নাকি রিধি জানে না। জানার সুযোগ পেল না। তার আগেই আকাশ খন্ড হয়ে বৃষ্টিধারা বয়তে শুরু করল। এই বরফ শীতল বৃষ্টির কণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পাশের ছাউনিতে আশ্রয় নেয়। চোখে,মুখে তীব্র উদ্বিগ্ন দেখা দিতে একটি বাচ্চা মেয়ে বলল,
“স্যার,এইডা আপনারে দিতে কইছে।”

মেয়েটির হাতে কালো রঙের ছাতা। নিবে কী নিবে না দ্বিধায় পড়ে জিজ্ঞেস করল,
“কোন স্যার?”

মেয়েটি অদূরে একটি চায়ের দোকানে ইশারা করল। তার মতো সেখানেও বেশ কয়েক জন আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। এত জনের মধ্যেও শ্রাবণের মুখটিতেই রিধির চোখ আটকাল। সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল শক্ত হয়ে আসল। রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে কোমল স্বরে বলল,
“তুমি দেখি ভিজে গেছ। ফুলের মালাগুলোও ভিজে গেছে। এগুলো কি আর বিক্রি করতে পারবে?”

মেয়েটি ফুলের দিকে তাকাল। নিমিষেই চোখজোড়া ছলছল হয়ে আসে। রিধির দিকে করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দুঃখী কণ্ঠে বলল,
“স্যার কইছিল আপনারে ছাতা দিলে মালাগুলা উনি কিনবো।”

রিধি নাক ফুলিয়ে আরেকবার শ্রাবণের দিকে তাকাল। তারপর ব্যাগ থেকে একটা একশ টাকার নোট বের করে মেয়েটিকে দিয়ে বলল,
“মালাগুলো আমি কিনলাম। আর এই ছাতাটা খুশি হয়ে উপহার দিলাম। বাসায় যাও।”

মেয়েটি অবাক চোখে তাকাল। মুহুর্তেই শুকনো মুখ উজ্জ্বল হয়ে আসে। বিনা বাক্যে ছাতা মাথায় রাস্তায় নেমে গেল।

রিধি সেই ফাঁকে হাতঘড়িটা খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে বৃষ্টির মধ্যে নামল। কয়েক পা এগুতে মাথার উপর একজোড়া হাত এগিয়ে আসল। বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচানোর প্রবল চেষ্টা। রিধি আগুন দৃষ্টিতে তাকালে শ্রাবণ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
“আপনি চাইলে এই হাত দুটোও দান করে দিতে পারেন। কিন্তু হাত দুটো যে আমার শরীরের সাথে জোড়া লাগানো?”

রিধি কঠিন স্বরে বলল,
“শরীরসহ দান করব।”

শ্রাবণের দৃষ্টি রিধির মুখে ঘুরে আসল। চোখ দুটো অস্বাভাবিক রকম বড় হয়ে আছে। সেই চোখে চেয়ে রিধি বলল,
“দান হতে না চাইলে হাত সরান।”

শ্রাবণ মন খারাপের স্বর বলল,
“ভিজে যাবেন যে।”
“তাতে আপনার কী?”

শ্রাবণ মনে মনে বলল,
“আমারই তো সব।”

সামনাসামনি বলল,
“যে বাসায় থাকছি,খাচ্ছি। সে বাসার সদস্যদের ভালোমন্দ চিন্তা না করলে চলে? মানবিকতাটুকু রক্ষা করব না?”
“আপনি কি চাচ্ছেন আমি চিৎকার করি? লোক জড়ো করে আপনাকে গণধোলাই খাওয়াই?”

শ্রাবণ আঁতকে ওঠে। তাৎক্ষনিক রিধির মাথা থেকে হাত সরিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে বলল,
“একদম না। দেখুন আমি চলে যাচ্ছি।”

শ্রাবণ উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলে রিধি নিজের বাড়ির দিকে এগোয়। একটি বারের জন্যও পেছনে তাকায় না। তাকালে ঠিক বুঝত শ্রাবণ দূর থেকে তাকেই অনুসরণ করে হাঁটছে।

________________

হৃদ্য ঘরে ঢুকে থ! তার পুরো রুমে কাগজ উড়ে বেড়াচ্ছে। যেন সে রুমে নয় ভুলবশত কাগজের স্তুপে এসে পড়েছে। পায়ের সামনে থেকে গোটা কয়েক পাতা তুলে সামনে অগ্রসর হতে ভ্রমরের দেখা পেল। তার পড়ার টেবিল দখল করে কিছু একটা লিখছে। লেখালিখিতে এত গভীর মনোযোগ যে হৃদ্যের উপস্থিত টের পেল না। হৃদ্য নীঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়াতে ভ্রমর খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলল। রাজ্যের বিরক্ত নিয়ে পৃষ্ঠাটি দু’হাতে দুমড়েমুচড়ে ছুড়ে মারতে উদ্যত হতে হৃদ্য বলল,
“হায়! হায়! আমার সব খাতা,কলম শেষ করে ফেলছিস দেখি। কাগজ ছেঁড়ার যুদ্ধে নেমেছিস নাকি?”

হৃদ্যের কণ্ঠে ভ্রমর চমকে উঠে। পর মুহূর্তে হেসে ফেলে। অনুযোগ নিয়ে বলল,
“তুমি এসেছ? কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছি। এত দেরি করলে কেন?”
“আমার জন্য অপেক্ষা? হঠাৎ! কারণ কী?”

কথাটি বলতে বলতে হৃদ্য বিছানায় এক পা তুলে বসল। ভ্রমর খাতা,কলম হৃদ্যের হাতে দিয়ে বলল,
“চিঠি লিখে দেও।”
“চিঠি? কিসের চিঠি?”

ভ্রমর চোখ নামিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“ভালোবাসার চিঠি।”

হৃদ্য বিস্ময়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে বলল,
“ভালোবাসার চিঠি? কার জন্যে?”

ভ্রমর রেগে গেল। বলল,
“তা জেনে তোমার কী? তুমি যখন আমাকে দিয়ে প্রেমপত্র লেখাও তখন বলো কার জন্য লিখো?”

“আমি বলিনি বলে তুই বলবি না?”
“না,বলব না।”

হৃদ্য ভ্রমরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। হঠাৎ মনে পড়ল ইদানিং এই মেয়ে অস্বাভাবিক আচড়ণ করছে। তাহলে কি ভ্রমর প্রেমে পড়েছে? অন্য কাউকে ভালোবাসছে? মুহূর্তেই হৃদ্যের অন্তরে আগুল জ্বলে উঠল। সবকিছু পুড়ে যাওয়ার পূর্বে বলল,
“তাহলে আমিও লিখে দিব না।”

ভ্রমর চোখ জলে টইটুম্বুর! ব্যথিত স্বরে বলল,
“সত্যি দিবে না?”
“দিব। আগে নাম বল তারপর।”

ভ্রমর বলবে না বলবে না করেও বলে ফেলল,
“নয়নকে লিখব।”
“কে নয়ন?”
“আমাদের বাসার ডানপাশের মোড়ে যে কসমেটিকস এর দোকান আছে? তার মালিক।”

হৃদ্য কোনো কথা বলল না। আচমকা ভ্রমরের হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বেরিয়ে আসল। ভ্রমর চেঁচাল,ছোটার চেষ্টা করল,খামচি দিল। কাজ হলো না। বাসা ছেড়ে রোডে পা পড়তে ভ্রমর কেঁদে দিল। সেই কান্নার শব্দও হৃদ্যকে দমাতে পারল না। সে ভ্রমরকে নিয়ে ছুটছে তো ছুটছে। মোড় পেরিয়ে একটা অপরিচিত বাসায় ঢুকল। সিঁড়ির সাথের রুমটির কলিং বেল চাপল ঘন ঘন। সেকেন্ড কয়েকের মধ্যে দরজা খুলে এক বলিষ্ঠ পুরুষ বেরিয়ে আসল। তার উদ্দেশ্যে হৃদ্য বলল,
“নয়ন ভাই,ভ্রমর তোমাকে কিছু বলতে চায়।”

চলবে

[অনেক দিন পর দিলাম। কেমন হয়েছে জানিও প্লিজ! এখন থেকে ছোট করে হলেও রোজ দিব। শুধু শুক্রবারে দিব না।]

চলবে

[কাল দিতে পারিনি। তাই আজ একটু বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here