প্রাপ্তি পর্ব -০৩+৪

#প্রাপ্তি__(৩)
#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি (লেখনীতে)
🍂🍂

তপ্ত দুপুর! শীতের দিন হোক আর গরমের দিন হোক দুপুরের সময়টুকু উত্তপ্ত’ই থাকে। হুমায়রা ক্লাস শেষে কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেটের এক সাইডে দাড়িয়ে আছে। চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখছে কাঙ্খিত মানুষটার উপস্থিতি আছে কি না! বান্ধবী’দের ক্লাস থেকেই বিদায় করে এসেছে! বুকে ধুকপুক আওয়াজ হচ্ছে! প্রথমবার কারো সাথে মিট করবে, পুরো বিষয়টা অন‍্যরকম লাগছে। সাথে ভয় আর অস্বস্তিও কম নয়!

শুভ্র রঙা লং হিজাব সাথে মেরুন রঙের জিলবাব পরে অষ্টাদশী মেয়েটি হাতের ঘড়ির দিকে বারবার নজর বুলাচ্ছে, কখনও আশেপাশে তাকাচ্ছে! হেমন্ত বুঝতে পারে ওটাই তার পাখি! মুচকি হাসে সে। তারপর বাইক সাইডে রেখে এগিয়ে যায় হুমায়রার দিকে।

“এসে পড়েছি পাখি!”

কথার উৎস খুজতে হাত ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকায় হুমায়রা। খানিক পল সেদিক পানেই তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে! ফর্সা গায়ে শুভ্র শার্ট আর কালো প‍্যান্টে কতটা সুন্দর লাগছে হেমন্ত নামক যুবককে সেটা কি ওই বোকা ছেলে জানে? নাহ্! জানে না তো! জানলে কি এমন মোহনীয় রুপে ঘায়েল করতে আসতো নিষ্পাপ মেয়েগুলোকে। হুমায়রা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। আশেপাশে নজর বুলাই। সবগুলো মেয়ে কেমন করে তাকিয়ে আছে হেমন্তের দিকে! তারপর হেমন্তের দিকে চোখ পড়তেই দেখে হেমন্তের তার দিকে তাকিয়ে আছে। হুমায়রার এ মুহুর্তে খুব হাসি পাচ্ছে, আবার কান্নাও পাচ্ছে।

“দেখেছেন চারপাশে! সবগুলো কেমন দেখছে আপনাকে?”

“দেখুক গে!”__ হেমন্তের নির্বিকার উত্তর।

হুমায়রা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,__”ওরা আমার থেকে কত সুন্দর দেখেছেন? ওদের মধ্যে কাউকে বেছে নিলেও তো পারেন! একবার শুধু বলেই দেখুন ঝাপিয়ে পড়বে একেকটা!”

“তোমার থেকে জানতে হবে না, কে কেমন! আসতে বলেছো এসেছি, এবার বল কি করবে?__গমগমে কন্ঠস্বরে বলল হেমন্ত।

হুমায়রা বুঝলো সাহেব রাগ করেছে! থমথমে মুখশ্রী নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফর্সা মানুষকে বুঝি রাগলেও সুন্দর লাগে! হুমায়রা নেকাবের আড়ালে মুচকি হাসে! তারপর বলে,__”চলেন ওদিকটার রেস্টুরেন্টে!”

হেমন্ত বাধ্য ছেলের ন‍্যায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর বাইক আনতে পা বাড়ায়!

” আমি হেঁটে চলে যাচ্ছি, আপনি বাইকে আসেন!”

“কেন? বাইকে চলো, তোমার জন্য আমার বাইকের পেছনের সিট নির্ধারিত পাখি! আসো?”

“না! সেটা কখনও ভালো দেখাবে না! আমি হেঁটেই যাচ্ছি, আপনি আসেন!”__বলেই হুমায়রা রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে যায়!

হেমন্তও আর জোর করল না! এতগুলো দিনে সে অন্তত এতটুকু বুঝেছে, হুমায়রা যা বলে সেটাই করে দেখাই, হাজার বললেও সিদ্ধান্তে নড়চড় নেই।

রেস্টুরেন্টে জানালার কোন ঘেঁষে নির্ধারিত সোফায় হুমায়রা বসে আছে, বিপরীতে হেমন্ত। নিরাবতার সমাপ্তি ঘটিয়ে হুমায়রা প্রথমে মুখ খুলল,
“কেমন আছেন?”

“এইতো ভালো! তবে, আজ একটু বেশিই ভালো আছি। তুমি কেমন আছো পাখি?”

‘পাখি’ ডাকটা বরাবরই হুমায়রার বড্ড অপছন্দের, তবুও অস্তিত্ব, খারাপ লাগা আজকের জন্য একপাশে রেখে স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিল,__”আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছি আজ এখানে! এবং আমি খুব আশা করব আমার কথার গুরুত্ব আপনি রাখবেন!”

“অবশ‍্যই পাখি, তোমার কথা এবং তুমি দুটোই আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলো কি বলতে চাও?”

“এইযে রোজ নিয়ম করে আমার পিছনে সময় ব‍্যায় করেন এতে কি লাভ হয়? এটা কি ভালো দেখাই?”

“সময় নষ্ট কেন বলছো? তোমার জন্য যে সময়টা ব‍্যায় করা হয় ওটাই আমার সবচেয়ে সুন্দর সময়! তোমার জানা উচিত। ভালো বা খারাপ দেখাটা আমার কাছে প্রধান না, তোমাকে ভালোবাসি এটাই আসল এবং প্রধান বিষয়। তাতে কে কিভাবে বিষয়টা নেবে সেটা তার একান্ত ব‍্যাপার।”__কথার সমাপ্তি ঘটিয়ে অর্ডার করা ব্লাক কফিতে চুমুক দেয় হেমন্ত।

“সত‍্যিই ভালোবাসেন?”

“পাখি? তোমার কি মনে হয়? তোমাকে নিজ জীবন থেকে বেশি ভালোবাসি! এতদিনে এটুকু বুঝতে পারোনি?”

নেকাবের আড়ালে মুচকি হাসে হুমায়রা। তারপর তার জন্য আনা জুস থেকে একটু পান করে গলা ভিজিয়ে নেয়, অবশ্যই নেকাব সহ। বলে,___”যদি সত্যি ভালোবেসে থাকেন তবে আজ আমার কথা রাখবেন! কি রাখবেন তো?”

“তোমার সব কথা আমি রাখতে রাজী পাখি! একবার বলেই দেখো?”

“জীবনসঙ্গী হিসাবে ভালোবাসার মানুষকে বেছে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ, তবে অবশ্যই যোগ্য হতে হবে। সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ যেসব দিক লক্ষ্য রাখা হয়, রুপ, গুণ, ক্ষমতা, অর্থ! কিন্তু এসবের কোনটাই ঠিকভাবে নিজের মধ্যে কোনকালেও আমি খুজে পাই না। তবে যদি বলতে হয় আপনার কথা, আপনি সবদিক দিয়েই সেরা। কোন মেয়ে এবং তার পরিবার অপছন্দের কিছুই পাবে না আপনার মধ্যে। সেদিক থেকে আপনাকে অপছন্দ করার প্রশ্নই আসে না।”

“তবে কেন ফিরিয়ে দাও বারবার পাখি?”__কাতর কন্ঠে বলল হেমন্ত।

“প্রেমের সম্পর্কে কখনও জড়াতে চাই না যে। হালালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে চাই। আমি খুব চাইব আপনি আর আমার পেছনে এভাবে ঘুরবেন না।”

“পাখিইইই..! এভাবে বলো না! তোমায় না দেখে থাকতে পারব না একটুও!”

“আমার গন্তব্যস্থল কেন আপনার বাড়িতে সমাপ্ত হতে পারে না, সে ব‍্যবস্থা করার চেষ্টা করেন! নিজেকে প্রস্তুত করেন এবং আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন। নতুবা, আমার বিয়ের যে সমন্ধ এসেছে ওখানে হ‍্যাঁ বলে দিব।”

হেমন্তের মুখ চুপসে গিয়েছে, তা দেখে হুমায়রা মুচকি হাসে।

“পাখি! তোমাকে কথা দিলাম আমি হেমন্ত তোমার স্বামী রুপে তোমার সামনে আসব। যদি না পারি তবে এ জীবনে কখনও তোমাকে আমার এ মুখ দেখাব না। তুমি কথা দাও আমার হয়ে থাকবে?”

হেমন্তের ছলছল নয়নের দিকে চোখ পড়তেই হুমায়রার বুক কেঁপে ওঠে। তবুও আবেগকে বাক্স বন্দি করে জবাব দেয়,__”ইনশাআল্লাহ থাকব।”

বেদনা মিশ্রিত মুখশ্রীতে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে হেমন্তের।
_____________________________
রাতের খাবার কোনরকম একটু খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় হুমায়রা। আজ তার মনে বিষন্নতার কারো মেঘ জমা হয়েছে। কিন্তু সে বৃষ্টি নামক অশ্রু দ্বারা মেঘকে ঝরাতে পারছে না। জানালার কোন ঘেঁষে বসল সে। শূন্য অন্তরীক্ষে সুন্দর চাঁদের আলোই রাতের অন্ধকার কিছুটা দুর হয়েছে। হুমায়রা সে দিক পানে তাকায়। বিষন্ন মনে আরশের প্রভুর নিকট অব‍্যাক্ত কথাগুলো ব‍্যাক্ত করে।___”হে আমার মহান দয়াময় আল্লাহ্ আপনার বান্দার জন্য যা উত্তম হবে সেটাই করবেন। নিশ্চয়ই উত্তম পরিকল্পনাকারী স্রষ্টা আপনি।”
দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে চিবুকে! সন্তপর্নে মুছে নেই।

(ইনশাআল্লাহ..চলবে)#প্রাপ্তি___(০৪)
_____🍂________

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পুরোনো বছর শেষে নতুন বছরে পদার্পণ করেছে। হুমায়রার দিন এখন খুব একটা ভালো কাটে না। মন বিষণ্ণতায় ভরে থাকে। কি জন্য তার এতো মন খারাপ তার কারণ টাও খুজে পাই না। তবে মাঝেমধ্যে বুঝতে পারে কেন তার মনে মেঘের ন‍্যায় মন খারাপেরা ছেয়ে থাকে।

আজ এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে হেমন্ত হুমায়রার রাস্তা রোধ করে দাড়িয়ে থাকে না। বলে না ‘পাখি’ হুমায়রার পূর্বের কথা স্বরণে আসলেই দম আটকে আসে। হয়তো হেমন্ত নামক শুভ্র সুদর্শন পুরুষটার মায়ায় সেও পড়ে গিয়েছে। যদিও সে স্বীকার করতে নারাজ। কিন্তু সত‍্যটা তো মানতেই হবে। সে তো নিজেই হেমন্তের থেকে সরে এসেছে। এ সিদ্ধান্তে একটুও আফসোস হয় না হুমায়রার। ধর্ম ও সমাজ মেনে চলতে গেলে বহু আবেগ অনুভূতিকে পিছু হটিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।

নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বর্তমান জেনারেশনের মানুষগুলো কতগুলো অসুস্থ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নিজেদের আবেগ আনন্দ প্রকাশ করে। রাত বারোটা বাজে নিউ ইয়ার উপলক্ষ্যে ফানুস, বাজি, জোড়েসোড়ে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে জানান দেয় নতুন বছর এসেছে। তাদের এ বিকৃতমস্তিষ্কের হৈ হুল্লোড়ে অসুস্থ মানুষগুলো, ছোট বাচ্চারা, বোবা প্রাণীগুলো রাতে নিদ্রাযাপন করতে পারে না। কি এক অসহনীয় যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়।

হুমায়রার ভাই মিনহাজও বাজি পটকা ফাটাবে বলে সন্ধা পর্যন্ত লাফিয়েছে। কিন্তু বাবা আর বোনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওসব করতে পারেনি। তবে তারা আজ মোরগ পোলাও খাবে। ছোট করে হলেও পারিবারিকভাবে নতুন বছর উদযাপন করবে। যদিও হুমায়রার অন‍্যবারের মতো উদ্দিপনা, উৎসাহ নেই। কেমন যেন ঝিমিয়ে গিয়েছে।
____🍂_______

হেমন্তের ফর্সা সুন্দর চেহারাই মলিনতা জায়গা করে নিয়েছে। কতরাত ঠিকমতো ঘুম হয় না তার। বড়লোক বাপের সন্তান তবুও না পাওয়ার আশঙ্কা, হতাশা, আফসোসে জর্জরিত। দুই তিন জায়গাই চাকরির জন্য ছোটাছুটি করেছে। অনার্স কম্পিলিট হলেও মাস্টার্স শেষ না হওয়ায় কাঙ্খিত জব পাচ্ছে না। তবুও ইন্টারভিউ দেওেয়া জায়গা থেকে মেইল আসতে পারে। এ নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

নতুন বছরে দু প্রান্তের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। পরিশেষে দুজন মানুষ মিলিত হবে কিনা আল্লাহ্ ছাড়া আর কে জানেন!
__🍂__

মোয়াজ্জিনের মিষ্টি কন্ঠে আজানের সুমধুর বাক‍্যগুলো শুনেই ধর্মপ্রান মুসলমানদের নিদ্রাচুত হয়। হুমায়রাও বিপরীত নয়। ফজরের সালাত শেষে কোরআন তেলওয়াত, জিকির দোয়া-দুরুদ পাঠ করে একবারে জায়নামাজ থেকে উঠে। তারপর ভোরের স্নিগ্ধ শীতল বাতাস, সূর্যদ্বয়ের হৃদয় জোড়ানো দৃশ্য উপভোগ করে। মনে মনে হাজারবার সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে না।

সত্যি তো! সৃষ্টি কর্তার অমূল্য সব সুন্দর সৃষ্টি দেখে যেকোনো মানুষের হৃদয় শীতল হতে বাধ্য। তবুও কি করে আমরা সেই রবের সৃষ্টি দেখেও তাকে অবিশ্বাস, অবমাননা করতে পারি! বুক কে’পে ওঠে না! হুমায়রা তার সৃষ্টিকর্তার নিকট তার আকুল আবেদন গভীরভাবে পেশ করেছে। এখন মহান আল্লাহ্ তায়ালা চাইলে সবকিছু ভালোই হবে ইনশাআল্লাহ।

নতুন বছরে হুমায়রা নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। রান্নাবান্নার কাজ শিখবে। সেই কথা মনে পড়তেই, ভোরের সুন্দর দৃশ্য দেখার ইতি টেনে কিচেনে আসে চা বানাতে। আজ চা দিয়েই না হোক তার রান্না শেখার শুরুটা হোক। নিজের জন্য দুধ ও কড়া চিনি দিয়ে এক কাপ আর ভাই, মা-বাবার জন্য রঙ চা করে।

সকাল সকাল মেয়ের হাতের চা পেয়ে খুব খুশি হন বাড়ির কর্তা-কর্তি।

“আপা তো চা বানানো শিখেই গেছে, এবার বিয়ে দিয়ে দাও।”

“তারপর তুমি ইচ্ছেমতো রাজ করো তাই না!”

“তাতো বটেই।”

ভাইবোনের খুনশুটিতে মুচকি হাসে হালিমা খাতুন আর হামিদুর রহমান।

“বলছি, আম্মু সকালে খিচুড়ি রান্না করি? সাথে ডিম ভাজা আর শুকনো মরিচ পোড়া। মিনহাজের ফেবারিট।”

“আচ্ছা। আর কিছু…?”

“দুপুরে মুরগির রোস্ট করবে। এটা তো সবাই ভালো খাই। তারপর বিকালে সবাই মিলে ঘুরতে যাবো। ”

“বাবা…এতো আবদার!”

“তো?”

“আচ্ছা ঠিক আছে। যাওয়া হবে। রেডি থেকেও।”

হুমায়রা, মিনহাজ বাবার সম্মতি পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। আনন্দে চকচক করে ওঠে আখিদ্বয়। ওড়নার আড়ালে মুখ লুকিয়ে লাজুক হাসেন হালিমা খাতুন।
অর্থাৎ সেও খুশী।

“আম্মু তাহলে সকালের খিচুড়িটা আমি রান্না করব তুমি একটু দেখিয়ে দিও শুধু।”

“তুই পারবি?”

“অবশ্যই কি মনে হয়?”

“করিসনি তো তাহলে পারবি কি করে?”

“ইউটিউবে ভিডিও দেখেছি আর তোমার রান্না তো দেখেছিই। তাছাড়া খিচুড়ি রান্না আহামরি কোন কঠিন কাজ না। আমি পারবো।”

“তুই পারলে করবি আমার সমস্যা নাই। এখন বয়স হয়েছে মেয়ের হাতের রান্না খাবো এতো সৌভাগ্যের। কর তাহলে।”

মাঝখান থেকে মিনহাজের গা জ্বালানো প্রশ্ন!
“ও রান্না করলে খাওয়া যাবে তো?”

“আম্মু এই মিনহাজ্জেরে থামাও মে’রে ফেলবে একদম।”

“আহ্ ওর কথায় এতো চ‍্যতস কেন,? ছোট ভাই বলছে তো কি হয়েছে! তুই ভালো রান্না করে দেখিয়ে দে! তাহলেই হয়।”

“আব্বু থাকলে ঠিক আমার পক্ষ নিত। তোমরা একটাও ভালো না।”___হুমায়রা আর দাড়ায় না। গটগট শব্দ তুলে কিচেনে চলে যায়। উদ্দেশ্য চায়ের কা’পগুলো ধোয়া আর সকালের রান্নার আয়োজন করা।

খিচুড়ি সাথে ডিম ভাজি আর শুকনো মরিচ পোড়ানো। সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে ফেসবুকে স্টোরি’তে দিয়েছে। তার পূর্বে চায়ের ফটো তুলেও স্টোরিতে দেওেয়া শেষ। ক‍্যাপশনে দিয়েছে “এক কাপ চায়ে শুধু তোমাকে চাই, কিন্তু আমি তো তুমিহীনা মিশকিন।” হা হা রিয়াক্টই উঠেছে বেশি। একটা আইডি থেকে শুধু কমপক্ষে দশটা লাভ রিয়াক্ট এসেছে। হুমায়রার ফেসবুক ফ্রেন্ড বলতে চেনাজানা আত্মীয়, ফ্রেন্ডস এরাই। তবুও আইডিটা হুমায়রা চিনতে পারলো না। কোন খেয়ালে একসেপ্ট করেছে কে জানে!

হেমন্তের ফোনে মেইল এসেছে। একটা মাল্টি ন‍্যাশনাল কোম্পানিতে বেশ ভালো পদে চাকরি হয়ে গেছে। নিজ যোগ্যতাই চাকরি পাওয়া সুখ ও প্রাপ্তিটাই অন‍্যরকম মধুময়। হেমন্ত তা দারুণ ভাবে উপভোগ করছে। চাকরি না করলেও তার চলতো অথবা বাবা-মায়ের ক্ষমতাবলে বিনা ইন্টারভিউয়ে চাকরি হয়ে যেত। কিন্তু সে আল্লাহ্ ছাড়া কারো সাহায্য নিতে নারাজ। নিয়তিতে থাকলে এমনিতেই ধরা দিবে। হেমন্তের নিয়তি ভালো, তাই চাকরিটাও হয়ে গিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্। এখন মা-বাবাকে আসল বিষয় জানানো বাকি।

অনেকগুলো দিন হেমন্ত তার সখের প্রিয় মোটরবাইক নিয়ে বেড়োই না। ভেবেছে আজ বিকালে একটু ঘোরাঘুরি করবে।

হেমন্তের বাড়ির দোতলায় ছাদ বিহীন লনে দাড়িয়ে হেমন্ত। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বলে উঠে, “আরশের আজীমের প্রভু! তোমার কাছেই আমার আশা আকাঙ্খা ব‍্যক্ত করেছি। নিশ্চয়ই তুমি তাকে আমার ভাগ‍্যে রাখবে। তোমার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। আলহামদুলিল্লাহ্।

ইনশাআল্লাহ…চলবে,,

#সুমাইয়া_ইসলাম_জান্নাতি (লেখনীতে)
___🍂____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here