প্রাপ্তি পর্ব ৪

#প্রাপ্তি
#পর্ব—৪
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________
-হাসপাতালের বেডে অচেতন এখনও দিল।জ্ঞান ফেরেনি এখনও। হিয়া দিলের মাথার পাশ টায় বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
সচারচর এই মূহুরত্বে হিয়ার কেঁদে কেঁদে ভাসানোর কথা।তবে না হিয়া মুটেও কাঁন্না করছে না।
আসলে মানুষের প্রতি টান কমে গেলে যা হয় আর কি।
আর হিয়া তো এক পাথরে পরিনত হয়েছে।
ডাক্তারের বলা কথায়ও হিয়ার চোখ ভেজাতে পারেনি।তবে কেন হিয়া নিজেই জানে না। কেন সে পারছে না হাউ মাউ করে কাঁদতে।
“ডাক্তার এসে এই মাএ দিলের কন্ডিশন জানালো।
এক্সিডেন্ট এর সময় দিল বেশ ভয় পায় আর সেই ভয়ে হার্ট এর্টাক করে। গাড়িটা গাছে ধাক্কা লেগে তেমন ক্ষতি না হলেও হার্ট এর্টাকে তা করেছে।
বা সাইড টা অচল হয়েছে।
হাত এবং পা দুই অক্ষম। দিল এখনও এই সত্যিটা থেকে অজানা।ওকে কি করে জানানো যায় সেই চিন্তায় দিলের মা।

———

-” বড্ড কঠিন হলেও সত্য টা মানতে হয়।বিধাতা যা ভাগ্যে লিখে তাই হবে এর চেয়ে বেশি কম হবার সোজগ নেই।

সপ্তাহ খানেক হল দিলকে বাড়িতে এনেছে।হিয়া দিলের সমস্ত খেয়াল রাখছে।
এক হাতে দিল অন্য হাতে ব্যাবসা দুই সামালতে হিমসিম হিয়া।তবে উপায় নেই স্বামীর দেখা শুনার আর নিজেদের রুজি রুটি না রাখতে পারলে কি করে চলবে??এখন তো আরো বহু টাকা চাই অনেক টাকা।দিলের চিকিৎসার জন্যে।

প্রতিদিন নিত্যনতুন গল্প পড়তে গল্পের ঠিকানা ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্টে ফলো দিয়ে রাখুন
একাউন্ট https://www.instagram.com/p/CWQQ7v4PH6g/?utm_medium=copy_linkলিংক—-)
প্লিজ ফলো দিয়ে রাখুন যাতে এখানে নতুন গল্প শেয়ার দিলে সরাসরি আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারে)
_________________

“দিনে দিনে পারি ১ বছর।
আয়াতকে একবারের জন্যেও হিয়া দেশে আসতে দেয়নি।তার বাবার বিষয় টা এক রকম চেপেই গেছে। আয়াতের মন খারাপ হলে সে চলে আসবে তখন আর যেতে চাইবে না।তখন আরো বিপদ।এক হাতে কতটা সামলাবে??
!-দিলের সেবায় তো কমতি রাখছে না নিয়া।এক জন স্ত্রী হিসাবে সে নিজ দায়িত্ব্য বেশ ভালো ভাবেই পালন করছে।

-তবে দিল এতে সন্তুষ্ট নয়। হিয়া দিলের সাথে তেমন কথা বলেনা। বলার মত কিছুই কি নেই ওর কাছে!!নাকি আমি আজ বিছানায় বলে আমায় আর ভালো লাগে না। দিল বেশ মন মরা ভিতর থেকে বড্ড ভেঙে পরেছে।একা ঘরে সারা দিন বন্দি জীবন তার।এর চাইতে মরন ও ভালো ছিলো।
দিলের সব পরান পাখিরা ওর পিছু ছেরেছে। টাকা ছেটানো কাক রা তার খুজও নেয়নি।পাশে রয়েছে তো শুধু তার মা আর স্ত্রী। আসল জীবন এদের মাঝেই ছিলো এত দিন তো ছলনার জীবনে বাস করেছিলাম।
–আগে হিম সিম খেলেও এখন হিয়া অফিসের কাজ বুঝে নিয়েছে। দিলের পিছনে বহু টাকা ব্যায় হচ্ছে আর অন্য দিকে দিল যে সব দেনা করেছে তা ধিরে ধিরে পরিশোধ করছে।

–বিকেলে ক্লান্ত হিয়া বাড়ি এসেছে।এসেই দিলের রুমে ওর পাশে বসেছে।
” কিছু চাই তোমার??
-দিল মুখটা অন্য দিক ঘুরিয়ে নিলো।হুম এসেছে ঢং করতে।এত কি কাজ সারা দিনে রাতে বাহিরে থাকা।আমার জন্যে সময় হয় না নাকি!!
-শত অভিজোগে দিলের মন ভরা।সব অভিজোগের বদলে একটা বাকা হাসি হিয়ার।কেন দিল তোমার তো বুঝার কথা অফিসে কত কাজ থাকে তা কি তুমি জানো না।কাজ সেরেই তো বাড়ি ছুটে আসি।
-তুমি যখন রাতের পর রাত বাহিরে কাটাতে তখনও এমন প্রশ্ন করিনি।যা একটু বাড়ি না থাকলে তুমি করছো।

“হিয়া তোমার আর আমার মাঝে বহু তফাত
-ঠিক বলেছো দিল।তোমার আর আমার মাঝে বহু তফাত।
” দিল অতিষ্ট তার এমন জীবনে।আর সইতে পারছে না। হিয়া বাহিরে আবার অন্য পুরুষের সাথে!!না না হিয়া এমন টা করবে না কিছুতেই না।
এমন প্রশ্ন দিলের মনে রুজ ভর করে।আজ তো মুখ ফুটে বলেই দিয়েছে দিল।

—,আমি তো অক্ষম তাই মনে ধরেনা ঘরে তাই না হিয়া!!!
“হিয়া দিলের প্রশ্নে স্বাভাবিক উওরই দিলো কারন এর সাথে রাগ টা করতে পারে না।
“-আমার যদি সেই রকম কিছুই হত তাহলে যখন মাসের মাসের আমার কাছে আসতে চাইতে না তখনই করতে পারতাম।কারন তোমার চাইতে আমার চেহারা খারাপ না দিল।
তোমার ঐ অবহেলায় একটা জীনিস শিখেছি।আর তা হল একাকিত্বতা।তখন নিজেকে সামলাতে পেরেছি মানে-এখনও পারি আর আগেও পারব।
—-
দিলের মুখ বন্ধ সে অন্য দিকে মাথাটা ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।বড্ড রাগ হয়েছে তাই আর না রাগানোই ভালো।
” সন্ধায় আরেকটা ফোনে হিয়ার জীবন আরো পাল্টে দিলো।
ফোন টা পেয়ে ডান বাম না দেখে গাড়ি না নিয়েই ওটো তে করে ছুটছে।

এই মূহুর্তে গাড়ি নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।


“দিলের মা আয়াতের সাথে কথা বলে ফোন টা দিলের সামনে রেখেছে।
“মামনি কেমন আছে আমার।
হ্যা ভালো আব্বু আম্মু কই!!
আর একটা কথাও বললো না আয়াত ফোন ধরেই মা চাই।এতটাই অধম পিতা আমি!!মেয়ে এক মিনিট কথা বলতে চায় না।এটা আমার পাপ তা ছারা আর নয়তো কি?
আগে মেয়ে পিছন পিছন ঘুর ঘুর করত একটু সময় পাবার জন্যে।আজ আমি বিছানায় পরে শুধু সময় আর সময়। তবে এখন এই সময় টা কারো চাই না।দুষ তো তাদের নয়। ওদের একা থাকতে আমি বাদ্ধ্য করেছিলাম।আর আজ ওরা একা থাকা শিখে গেছে।

হিয়া কেমন হয়ে গেছে।বড় অন্যায় করেছি স্ত্রী সন্তানের প্রতি। আজ বুঝতে পারছি। সবাই ছেরে গেলেও হিয়া গেলো না। এটাই সত্যিকারের ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসা রেখে আমি কোথায় কোথায় ভালোবাসা পেতে ছুটেছি।
হিয়াকে নিজের মনের কথা বলে নিজেকে হালকা করব।এতে হয়তো মাফ না করুন ওর মনের বিষ টা কিছুটা হলেও কমবে আমার প্রতি।
একবার সুস্থ হয়ে নেই।তার পর দেখাবো ভালো স্বামী আর ভালো বাবা কাকে বলে।
হিয়ার একটা সন্তান চেয়ে ছিলো তাই আগে দেবো ওকে। বাস আমরা দুই আমাদের দুই।
” বিষাদ জীবন আর ভালো লাগে না।হিয়া কেন এত দূরে থাকে জানিনা।তবে আর দেব না দূরে থাকতে। বাড়ি এলে ওর পা দুটো ধরে মাফ চেয়ে সব বলবো।আর প্রতিজ্ঞা করব জীবনে ওকে ছারা অন্য নাড়ির পানে তাকাবোও না।

-১২ টা ঘরির কাটায় টিক টিক করে উঠলো।ঝিমিয়ে আসা চোখের ঘুম টা কেটে গেলো ঘড়ির শব্দে।
হিয়া এখনও আসেনি।
দিলের মা দিলের পাশেই শুয়েছে।ছেলেকে একা রেখে আরামে ঘুম কোন মায়ের হয়।
”কলিং বেলটা বাজছে শুনে কাজের লোক দরজা টা খুলে দিলো।
শব্দ শুনে দিল আর ও মা দুজনেই ঘুম ছেরে উঠেছে।দিল শুয়ে শুয়ে দরজায় নজর রাখছে হিয়া রুমে আসছে না কেন????

“দিলের হাসি মাখা মুখ এবার কালো মেঘে ঢেকে গেছে।
কারন হিয়া একা আসেনি।
ওর কোলে -৩/৪ মাসের একটি বাচ্চা।
এটা কার বাচ্চা হিয়া ওটাকে এখানে আনল কেন?

প্রশ্ন টা দিলের মা করল না সে সোজা তার রুমে চলে গেছে।যাবার আগে ইশারায় দিল কে দেখিয়ে দিয়ে বললো সামলাও দিলকে।

-এই বাচ্চা কার?কোথা থেকে তুলে এনেছো হিয়া??/
“——–
_হিয়া চুুপ! বাচ্চাটাকে দিলের এক পাশে শুইয়ে দিয়ে সেও পাশে বসেছে।
” হিয়া আমি কিছু জানতে চাইছিলাম।
–ও আমাদের ছেলে দিল।
“দিলের রাগ আজ ঠেকাতে পারবে না হিয়া।
-বাজে বকোনা হিয়া, আমাদের ছেলে এলো কোথা থেকে?

” যেখানে তুমি ফেলে এসেছো দিল।
-দিল এবার ভরকি খেয়ে গেছে।ফেলে এসেছি মানে?
-“তৃপ্তি আর তোমার ছেলে ও।
“দিলের এবার মাথা ঘুরিয়ে পরে যাবার মত, তবে পরবে কেমন করে সে তো আগে থেকেই পরা।।তাহলে তৃপ্তি বাচ্চাটা নষ্ট করেনি!আর হিয়াকে সব বলেও দিয়েছে…
” দিল কি ভাবছো??
বাচ্চাটা কি করে বেঁচে আছে??
— না মানে না এটা আমার বাচ্চা নয় হিয়া।
“ঘেমে একাকার দিল।এখন কি ফেসে গেলো না তো??
– দিল আর কত মিথ্যা বলবে।আর কত।নিজের জন্মকে মিথ্যা বলতে লজ্জা করে না তোমার??
” দেখো হিয়া যা তা বলো না। কার না কার পাপ আমার মাথায় চাপাতে চায় ঐ মেয়ে।
এটা বেজন্মা হিয়া একে রাস্তায় ফেলে এসো।
— নাহহহহ।
হিয়ার এবার নরম নয় গরম গলা।কাকে বেজন্মা বলছো?? ও বেজন্মা নয়, যারা ওদের মত শিশুকে জন্ম দেয় তারা আসল বেজন্মা যেমন তুমি”
” ওহহ বুঝেছি আজ আমি অচল বলে যা সুখি তাই করবে বলবে এই তো??
-শাক দিয়ে মাছ ঢেকো না দিল।
তৃপ্তির সাথে তোমার অবৈধ সম্পর্ক আমাকে বিয়ে করার আগে থেকে।
“তৃপ্তির থেকে মন উঠেগেছে তাই আবার অফিসে আরেক জন ঠাই পেয়েছে।এভাবে আর কত মেয়ের জীবন নষ্ট করবে??
—হিয়া এসব মিথ্যা।
” আর বলে লাভ হবে না দিল।সত্য মিথ্যা বুঝার মত জ্ঞান আমার আছে।
তোমার অফিসের প্রতিটা খবর আমি রাখি।
“আর তৃপ্তিকে আমিই বারন করেছিলাম বাচ্চাটা নষ্ট করতে।কারন তোমার মত পাথর আমি নই।
—আচ্ছা মানলাম মানলাম আমি অন্যায় করেছিলাম।তখন তো কিছু বলোনি।আর আজ আমি বিছানায় বলে তুমি হুকুম ঝারছো??

“—হালকা একটা হাসি হিয়ার মুখে। দিল তখন বলেনি ভেবেছিলাম তুমি ভালো হয়ে যাবে, একটা নেশায় আটকেছো।
তবে দেখলাম তুমি অসুস্থ মানুষিকতা নিয়ে বাস কর।
,আর এই শিশুকে মারতেও তোমার হাত কাঁপেনি।তখন দেখলাম তুমি জালেম।

আর রইলো চুপ থাকা টা।ওটা শুধু আমার আয়াতের জন্যে।
পিতা হীন করতে চাইনি বলেই চুপ ছিলাম।তবে মেয়ে বড় হয়েছে।তোমার অবহেলা বুঝতে শিখেছে।তাই ওকেও দূরে পাঠিয়ে দিয়েছি।

-দিল মাথাটা নত করে চোখের নোনা জল ভাসাচ্ছে।
” হিয়া ঐ দিকে নজর না দিয়ে দিলকে তার সিদ্ধান্ত জানালো।
আমারা তোমার টাকা পয়সা চাইনি। শুধু তোমার নাম টা চেয়েছিলাম।
তবে এই বদনামি নাম আমাদের চাই না।

-থাকো তুমি তোমার টাকা পয়সা নিয়ে যত খুশি বিছানায় মেয়ে আনো। এখন গেস্ট রুমে না বেড রুমেও আনতে পারো। টাকার তো অভাব নেই। টাকা ছেটালেই দেখবে কত মেয়ে। আর এই বাচ্চাটার মা আমিই হবো তুমি বাবা হও বা না হও।
আর শুনে নাও তৃপ্তিকেও ভালো যায়গায় বিয়ে দিবো।
মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের আর ক্ষতি হতে দিব না।

“হিয়া আমার কথাটা তো শুনো।
-কি বলবে?? কি শুনবো?তৃপ্তি তো ওর মা কে বাঁচাতে এমন করেছে।তুমি করলে কেন?? এই উওর যদি দিতে পারো তাহলে আমি শুনবো।
তৃপ্তির মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মাঝে তুমি পাওনি। চেহারা??? সনতুষ্টি নাকি শরিল???
চোখের পানিটা মুখে শক্ত হয়ে নিলো হিয়া।দিল এখন চুপ আর শুনতে পারছে না হিয়ার অভিজোগ।

–চলে যাচ্ছি আমি, রইলো তোমার সব।এটাই তোমার প্রাপ্তি।
“,না হিয়া না না প্লিজ যাই করো ছেরে যেও না। আমি বড় খারাপ তবে সেই খারাপের ছোয়া তোমাদের লাগতে দেইনি।
যা শাস্তি দাও মাথা পেতে নিতে রাজি শুধু ছেরে যেও না।

–হিয়া ওর সিদ্ধান্তে অটল।আলমারি খুলে অল্প কিছু কাপর নিয়ে নিলো সাথে।
বাচ্চাটাকে কুলে নিয়ে সোজা বাহিরে…
‘হিয়া হিয়া করে চিৎকার করেও দিল হিয়াকে আটকাতে পারল না।শরিলের জোর খাটাতে গিয়ে আরো বিছানা থেকে হুমরি খেয়ে মাথা ফাটিয়েছে দিল….
মুখে শুধু একটি কথা-হিয়া যেও না তুমি প্লিজ যেও না।

-(চলবে)

–হিয়া কি ফিরবে???? এই কি দিলের প্রাপ্তি ছিলো? নাকি আরো বাকি? নাকি ইতি ঘটেছে তাদের সংসারের।

$★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here