প্রাপ্তি পর্ব ৫

#প্রাপ্তি
#পর্ব–৫
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
__________________________
“- হিয়ার গেট অবদি তো জেতে বাধা পরেনি। তবে গেটের সামনে আসতেই দিলের মায়ের বারন।
-যাস নে মা।
” হিয়া পিছন ফিরে বৃ্দ্ধ মহিলার চোখের পানি দেখে ওর মায়ের কথা স্বরন করিয়ে দিলো।না জানিয়ে দিলকে বিয়ে করার পর তার মা এভাবেই গেট আটকে কাঁন্না করে বলেছিলো।যাস নে মা। তর বাবার রাগ আমায় দেখাস নে।
-আজও ঠিক তাই করছে হিয়া। দিলের বিচার করতে গিয়ে এই মহিলাটার প্রতি অবিচার করেছে।
তখন মায়ের ডাকে সারা দিইনি আর আজ তিনি।
প্রতিদিন নিত্যনতুন গল্প পড়তে গল্পের ঠিকানা ইন্সট্রাগ্রাম একাউন্টে ফলো দিয়ে রাখুন
একাউন্ট https://www.instagram.com/p/CWQQ7v4PH6g/?utm_medium=copy_linkলিংক—-)
প্লিজ ফলো দিয়ে রাখুন যাতে এখানে নতুন গল্প শেয়ার দিলে সরাসরি আপনাদের কাছে পৌঁছাতে পারে)
“আমায় বাধা দিবেন না মা।আমি আর পারব না।
– মা রে দুষ আমার ছেলেটা করেছে।তাই বলে তার শাস্তি আমায় দিস না । আমার কেও নেই রে মা কেও নেই।তুই চলে গেলে আমায়ও সাথে নিয়ে যা। থাকব না এই পাষানের ঘরে।
” কি সব বলছেন, আপনি বাড়ি ছারা হবেন কেন? এটা আপনার বাড়ি।
–হ্যা আমার বাড়ি তবু ও তো গর্ভে ধারন করা ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারছি না।
হতছারা টা সব শেষ না করে মরবেও না।
“মা!!!!
মা হয়ে ছেলের মৃত্যু কামনা করছেন? আর যাই হক মরন কামনা করে আমায় বিধবা করবেন না। যেখানেই থাকি সধবা হয়ে থাকতে দিন। মনে একটা শান্তি থাক আমার দিল বেঁচে আছে।

“– এমন ছেলের মরনই ভালো।একসিডেন্টে তো চেয়েছিলাম মরে যাক।ওর পাপ সবাইকে গিলে খাবার আগে।
” কি সব বলছেন মা।
-ঠিকই বলছি।এমন ছেলের মা হবার চেয়ে মা হীন থাকাই ভালো।তুই আমার মেয়ে আয়াত আমার নাতনি।আর তদের বাঁচাতে ওর মরাই ভালো ছিলো।
“হিয়ার চোখের পানি আর দিলের মায়ের চোখের পানি সমানে বইছে। না মা এমন টা করবেন না প্লিজ।
বিছানায় যে অবস্থ্যায় পরে আছে মৃত্যুও হার মানবে।শ্বাস টুকু থাকতে দিন।

— এই তর আকুতি মিনতি শুনে শুনেই দিলকে এত টা বারতে দিয়েছি।নিজের জন্ম কে মিথ্যা বলা।একটা অনাগত শিশুকে মারতেও তার হাত কাঁপেনি।
সে খুনি খুনি। একটা নয় চার জন কে সে খুন করেছে।
জানে মারলেই খুন হয় না।

স্ত্রীর মর্জাদা কে খুন করেছে।
পিতা হয়ে মেয়ের ভালোবাসার খুন করেছে।

“ছেলে হয়ে মায়ের মমতার খুন করেছে।
অনাগত এক বাচ্চাকেও মারতে পিছপা হয়নি।
ওর মত ছেলেকে কি করে বাঁচার দোয়া করি বল মা বল।

” হিয়া এখনও মাথা নত করে কাঁদছে।পারছে না আর শুনতে।
-গাড়ি ব্রেক ফেল করিয়েছিলাম ভেবেছিলাম আপদ টা বিদায় হবে, তবে না বেঁচে গেছে।বেঁচে গিয়ে সবাইকে তিলে তিলে মারছে ও।
“হিয়া আর দিলের মা দুজনে কাঁন্নায় কাতর।মানুষের মনে অনেক আঘাত লাগলে এমন হয়।
” হিয়া সব টা জানতে পেরেছিলো। তবে পরে, দিলের মা দিলের গাড়ির ব্রেকফেল করিয়েছে। টাকার বিনিময়ে অন্য লোক কাজ টা করে দিয়েছে।
হাসপাতালে হিয়া জানার পর বেশ চমকেও গিয়েছিলো।
এক দিকে স্বামী অন্য দিকে বাকি সব।

-হাতের ব্যাগ টা দিলের মা ছু মেরে নিয়ে নিয়েছে।
চল তুই এটা এখনও আমার বাড়ি।তুই আমার সাথে থাকবি আমার রুমে।
ঐ কুলাংগার টার কাছে জেতে হবে না। চল চল।
হিয়া আর বাধা দিলো না। সোজা তার শাশুরির রুমে চলে গেলো।
—-

“- হাত পা তো অচল ছিলোই এখন মাথাটা ফাটিয়ে বসে আছে।
রাতে কাজের লোক খবর না দিলেতো জানতেই পারত না।

– এত টা ব্যাথা পাবার পরেও দিলের মনে শান্তি হিয়া বাড়িতে তো আছে।
তবে মুখে কোন কথা নেই। সকাল সকাল আয়ুরবেদিক
তৈল মালিশ করতে হয় দিলের হাতে পায়ে।আজ দিল কাওকে দিচ্ছে না তৈল দিতে।আর না হিয়া কাছে আসছে, না বাধা পেরিয়েছে মালিশের জন্যে।।
এটাই ওর পাপের শাস্তি।
সংসার তো হবে শুধু নামের। সেখানে না থাকবে স্ত্রী না কন্যা।
সব থেকেও একা হবে দিল।এ তো মরনের চাইতে ভয়ানক হবে তাই না কি!!
-” দিল চুপ চাপ দুদিন ধরে খাওয়া বন্ধ না ঔষধ ঠিক মত খাচ্ছে।
তার ভিতরে কঠিন ঝর বয়ে বেরাচ্ছে।

“—৫ ম দিন আজ বাড়িতে এনেছে সেই শিশুটকে।
হিয়ার কড়া আদেশ এই বাচ্চার প্রতি কোন মায়া মমতা টান দেখাতে আসতে পারবে না ঐ তৃপ্তি।কারন যে মেয়ে নিজের গর্ভের সন্তান শেষ করতে পারে।নিজের সন্মান রক্ষাত্রে। তাকে মা বলা পাপ হবে। কারন দিলের মত পাপি সেও আর তা যে কারোনেই করুক না কেন…
মা তো মা হয় তার না কোন বিকল্প হয়।
তৃপ্তিও উয়াদা অনুযায়ি চলেছে।পাএ দেখা শেষ হলেই তৃপ্তির মা হিয়াকে খবর দেবে।তৃপ্তির বিয়ের সব খরচা হিয়া বহন করবে।

-দিল তিলে তিলে সত্যি শেষ হচ্ছে। আর যখনই ঐ বাচ্চার কাঁন্নার শব্দ শুনতে পায় তখনই সে পাগল পারা হয়।তার পাপ কর্ম তাকে নাড়া নিয়ে উঠে।
তার কুকর্ম চোখের সামনে ভাসে।

” রাত তো তেমন বহু হয় নি। সবে রাতের খাবার শেষ করেছে সবাই।হিয়া বাচ্চাটার নাম রেখেছে অভি.আয়াতের ভাই অভি।
নিজেকে অভির মায়ের রূপে পুরো পুরি ভাবে পরিনত করেছে হিয়া। ওর আরেক টা বাচ্চা চেয়েছিলো দিলের মত।তবে দিল তো তা দিলো না।যাই হক বাচ্চাতো এলো ঠিক দিলের মতই দেখতে হবে মনে হয়।

– কাজের ছেলে একজন আর একজন নার্স দিলের মাথার পাশে সারা রাত পাহারার জন্যে রয়েছে।
“আমার কেমন দম বন্ধ লাগছে একটু হুইল চেয়ারে বসাবে আমায়!!
দিলের এমন আকুতি কন্ঠে আবেদন দুজন মানুষের মন গলিয়েছে। কাজের ছেলেটার বড্ড দয়াও হল।স্যার ভালো থাকতে কত চৈ চৈ করতো আর আজ একটু উঠে বসার জন্য আমাদের কাছে ভিক্ষা চায়।
নার্স আর কাজের লোক টা দিলকে চেয়ার টায় বসিয়ে দিয়েছে।
” দিলের মিষ্টি হাসি, বসতে পেরে।এবার আরেকটা আবদার।
আমায় একটু ছাদে নিয়ে যাও না।কত দিন রাতের আকাশ আর ভোরের সূর্য দেখিনা।
-কথা মত নার্স তাকে ছাদে নিয়ে যেতে অনুমতি দিলো।দিলকে কোলে নিয়ে কাজের ছেলে সিরি টপকেছে।পিছন পিছন নার্স চেয়ার টা নিয়ে চলছে।
“সত্যি রাতের লক্ষ তারার মাঝে চাঁদ টা বেশ ভালো মানিয়েছে।
চাঁদ টা ঠিক হিয়ার মত।হিয়া পাশে থাকলে বলতাম।আচ্ছা হিয়াকি কোন দিন আমায় ক্ষমা করবে না!!
আমি তো ক্ষমার যোগ্যও নই।
রাতের পর রাত মেয়ে নিয়ে কাটাতাম।হিয়া জেনেও চুপ ছিলো।নিজের সন্তান তো দূর মায়ের দিকে তাকানোর সময় হত না।
মায়ের একটা ঔষধের নামও আমার জানা নেই।সে কোন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করায় জানিনা।
হিয়ার মনের খবর জানিনা।মেয়ের পছন্দ অপছন্দ জানিনা।ওর কি খেতে ভালো লাগে তাও জানিনা।আজ অবদি মেয়ের জন্য রাস্তা থেকেও একটা চকলেট আনিনি। আর লাখ লাখ টাকা নিয়ে বাহিরে ছিটিয়েছিলাম।এতে এখন এই ফল ভুগ।
দুই টাকার একটা চকলেট মেয়ের জন্যে।আর দশ টাকায় কেনা রাস্তার একটা ফুল যদি হিয়াকে এনে দিতাম ওরা আমায় কোটি টাকা দামির হাসি দিত।আর জীবন টাও এমন হত না।
সুন্দর সুখে ভর পুর হত।

আজ না পেলাম শান্তি না মরন।মাঝ পথে আটকা আমি।
ছাদের রেলিং এর পাশে বসে চাঁদ টা মন ভরে দেখে নিচ্ছে আর দেখা হয় বা না নয়।

-হিয়া অভিকে শুইয়ে দিয়ে আয়াতের সাথে গল্পে মগ্ন আজ সারা দিন আয়াত কি করল তা বারিকে বারিকে বলছে আয়াত।
আজ কি করে জানি আয়াতের তার বাবার কথা স্মরন হল।
আম্মু আব্বু কোথায়??
“আছে ওর রুমে।
তাহলে তুমি ওখানা কেন? তুমি কোথায়???
” আয়াতকে বুঝানো কোন ব্যাপারই না। দাদুর অসুখ তো তাই এখানে।আয়াত জানে অভি ওর ভাই আর ভাইয়ের জন্য স্কুল থেকে আসার পথে কত কত খেলনা জমিয়ে রাখছে।
আসার সময় সব নিয়ে আসবে।


-দিলকে শুবার ঘরে না দেখে দিলের মা হয়রান ছেলেটা কোথায়? হিয়াকে ডাকলো না মাএ ঘুমিয়েছে।সারাদিন কাঁন্না করতেই থাকে থাক একটু আরামে।
“ছাদ থেকে পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে আর কিছু শব্দ হুইল চেয়ার???
দিল ছাদে?
এত রাতে কোন আক্কেলে ওকে ছাদে নিয়ে গেছে ওরা..

হাটুর ব্যাথায় দুই কদম চলতে পারে না, তাও ছেলের জন্যে তিন তলা সিরি টপকেছে দিলের মা।শ্বাস আর চলছে না হাপিয়ে উঠেছে।
কোন রকম ছাদে গিয়ে দেখে দিল আকাশের পানে মগ্ন।

“-মায়ের পা পরেছে তার পাশে তা দিল বুঝতে পেরেছে।
উপরের দিকে তাকিয়েই দিল তার মাকে বলে উঠলো-
মা আমার জন্যে তোমার কষ্ট হয়?
অনেক জ্বালিয়েছি তাই না???
দিলের মা চুপ!!তার মানে দিল ঐ সব কথা শুনে নিয়েছে? তা কি করে???
” জানি মা তোমাদের এত কষ্ট দিয়েছি যে আমায় মরনে তোমরা খুশি হও।
অনেক কষ্ট না পেলে কি কোন মা নিজের সন্তানের মরন কামনা করে???

-দিল কথাটা বলেই ডান পায়ে জোর খাটিয়ে ডান হাত টা রেলিং চেপে ধরেছে।
তোমায় শান্তি দিলাম মা।বেঁচে থেকে তো পারলাম না মরনে যদি শান্তি পাও।
ডান পায়ে ভরে উঠে ছাদ থেকে লাফিয়ে পরেছে দিল……..

“দিলের মা দিল বলে চিৎকার করে উঠে দিললললল

ইতি ঘটলো কি?

—চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here