প্রিয় প্রহর পর্ব ১০+১১+১২

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১০
শুভ্র আরোহীর ভয় কমানোর জন্য নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। আজ একটা অঘটন ঘটতে ঘটতে আরোহী বেঁচে গেছে, এটা ভেবেই আরোহী কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় কিন্তু তারপরেও সে কেঁপে কেঁপে উঠছে। এখনো ভয়টা কাটে নি। মিনিট দুয়েক পর আরোহী শান্ত হয় কিছুটা। এখনো সে শুভ্রর বুকে লেপ্টে আছে। এবার আরোহী শুভ্র হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনছে। এতক্ষন তো ভয়ে সে ভরসা স্বরূপ শুভ্রর বাহুডোরে আবদ্ধ ছিল কিন্তু এখন তার অস্বস্তি ও অন্যরকম এক অচেনা অনুভূতি হচ্ছে।
এবার শুভ্র আরোহীকে বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে নরম স্বরে আরোহীর নমিত মুখের আদলে চেয়ে বলে,

–রিলেক্স। ওরা তোমার সাথে কিছু করতে পারেনি। তুমি একদম সেফ আছো। ভুলে যাও তোমার সাথে কি হয়েছে একটু আগে! দুঃস্বপ্ন ভেবে সেটা ভুলে যাও। এটা মনে করলেই, তুমি নিজেকে শান্ত রাখতে পারবে না।

আরোহী খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো শুভ্রর কথা। একটা ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। আরোহীর হঠাৎ আয়ানার কথা মনে পড়লে, শুভ্রকে হরবড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–আয়ু কোথায়?

শুভ্রর মনে পড়ে যায় সেই কন্দনরত ভীত মুখশ্রীর রমণীকে। এই দুই বোনের এক অপরের প্রতি ভালবাসাটা তার কাছে অসাধারণ লাগে। এক বোন আরেক জনকে ও নিজেকে বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বলে এবং কাউকে নিয়ে আসতে বলে আর আরেক বোন নিজের বোনকে একা ছেড়ে সেখান থেকে আসতে চায় না কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে পরে বাধ্য হয় বোনকে এবং নিজেকে বাঁচাতে আসতে।
শুভ্র আরোহীকে বলে,
–একদম ঠিক আছে তোমার বোন। আমি নীড় ও মেঘকে ফোন করে বলে দিয়েছি।

শুভ্র আরোহীকে নিয়ে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে কারণ নীড় ও মেঘকে বলে দিয়েছে আয়ানাকে নিয়ে যেন রিসোর্টে ফিরে যায়।

ঐদিন ওদের দুই বোনের জন্মদিনটা মলিনতার মাধ্যমেই কেটে যায়। কত বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে তাদের দুই মেয়ে। জন্মদিনের জন্য এত আয়োজন, এত আনন্দ-ফূর্তি করার সব প্ল্যান যেন বিষাদের রূপ নিয়েছে।

এদিকে দুইজনের মনে একপাক্ষিক ভালোবাসার কলি এসেছে। শুভ্রর এসেছে আয়ানার প্রতি আর আরোহীর এসেছে শুভ্রর প্রতি।

” যারা একপাক্ষিক ভালবাসে, তাদের সবারই এক আলাদা কল্পনার জগত থাকে। সেই জগত সে তার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে সাঁজায়। একপাক্ষিক ভালোবাসায় এক আলাদা আনন্দ আছে! আর আছে তার সাথে অধিক পরিমাণ কষ্ট। ”

সেন্টমার্টিন থেকে ওরা ফিরে এসেছে অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেছে। দুই দিকের দুইজনের মনে অনুভূতিরা ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে। কিন্তু আফসোস! এই অনুভূতিগুলো একে অপরের জন্য নয়।

সময় কাটে তার নিজস্ব গতিতে। আরো এক বছর পেরিয়ে গেছে। সময়ের চাকায় দুটি ভিন্ন হৃদয়ে প্রগাঢ় হয়েছে অনুভূতিরা, রূপ নিয়েছে তা ভালোবাসার। সবাই ভুলতে বসেছে এক বছর আগে হওয়া ওই দুর্ঘটনাটা। কিন্তু আয়ানা মাঝে মাঝেই ভয় পেয়ে উঠত। নিজের বাবা-ভাই বাদে অন্য কোন পুরুষের সংস্পর্শে গেলে সে শিউরে ওঠত ভয়ে। আরোহী সামলে নিয়েছে নিজেকে পুরোপুরি ভাবে কিন্তু আয়ানা পারেনি পুরোপুরিভাবে। কারন ওইদিন ওই লোকগুলো আয়ানার নরম মনে বেশি আঘাত দিয়েছিলো। আরোহীর সাথে বেশি খারাপ কিছু হতে চলেছিলো কিন্তু আরোহী শক্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করেছিল।

পনেরো বছরের দুই কিশোরী তাদের জন্মদিন উদযাপন করে পরিবারের সাথে। শুভ্রর পরিবারও সেখানে উপস্থিত ছিল। এই এক বছরে আরোহী শুভ্রর পছন্দ-অপছন্দ জেনে নিয়েছে। কিন্তু সে তো শুভ্রর মনের খবরটা জানতে পারল না! জানবেই বা কি করে? শুভ্রতো কখনো নিজের অনুভূতি কাউকে বুঝতে দেয়নি। সামনে এইচএসসি পরিক্ষা তাই নিজের মনের অনুভূতিকে সামলিয়ে পড়ালেখা নিয়ে ব্যাস্ত শুভ্র।

পরীক্ষা শেষ হয় শুভ্রর। শেষ পরীক্ষার দিন শিলার সাথে ওই ভালোবাসা নিয়ে ঝামেলা হবার পর শুভ্র নিজের বাসায় এসে তৎক্ষণাৎ নিজের রুমে যায়। আরোহী ও আয়ানা সেইদিন ওই শুভ্রদের বাড়িতে ছিল কিন্তু শুভ্র তা জানে না। আয়ানা শুভ্রর বড় বোন রিয়ানার সাথে কথা বলায় মশগুল। আর এদিকে আরোহী যখন কলিংবেলের শব্দে, “শুভ্র এসেছে” এই ভেবে আড্ডা ছেড়ে উঠে কিন্তু তার আগেই বাড়ির কাজের লোক দরজা খুলে দেয়। আর আরোহী রিয়ানার রুমের দরজা থেকেই দেখতে পায় শুভ্র গটগটিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে। আরোহী শুভ্রকে দেখেই বুঝতে পেরেছে শুভ্র প্রচন্ড রেগে আছে।
চঞ্চল কৌতুহলী কিশোরী শুভ্রর রুমের সামনে মৃদু পায়ে হেঁটে যায়, কি কারনে রেগে আছে সেটা জানতে। কিন্তু সে কি জানতো! আজকেই তার এই হৃদয়ে ভঙ্গ হবে!ক্ষতবিক্ষত হবে তার প্রগাঢ় অনুভূতিরা!

শুভ্র এতটাই রেগে ছিল যে, সে নিজের রুমে যেয়ে ঠাস করে দরজাটা ধাক্কা দেয়। কিন্তু দরজার লক হয় না। শুভ্র বিছানায় বসে মাথা নিচু করে নিজের চুলগুলো টেনে ধরে। দরজার আড়াল থেকে আরোহী সব দেখছে।
কিছুটা শব্দ করে শুভ্র বলে ওঠে,

–আমি তারা কে ভালোবাসি। আমার “শুভ্রতারা” সে। শুভ্রর মনের আকাশে একক এক “শুভ্রতারা” সে। আমার মনে তারার জায়গা কোনো শিলা নিতে পারবে না। ভয়ে ভীত মুখশ্রী, কাঁপাকাঁপা কন্ঠ, কন্দনরত রক্তিম তাকে দেখে আমি তার মোহামায়ায় পড়ে গেছি। যখন সে আমার বুকে ঢলে পড়লো, নিজের বোনকে বাঁচানোর আকুতি নিয়ে। ঠিক তখনি আমি অনুভব করেছি ওই কিশোরীর প্রতি এক সূক্ষ্ম অজানা অনুভূতির। আস্তে আস্তে সেই অনুভূতিগুলো উড়তে শিখেছে। এখন তা আমার ভালোবাসা। ভালোবাসি আয়ানা তোমায়! তোমার জন্য আমি শিলার সাথে বন্ধুত্ব ভেঙে দিয়েছি আজকে। বন্ধুত্ব ভাঙ্গাতে আমার কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু শিলা আমাদের বন্ধুত্বটাকে বন্ধুত্বর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারল না।

দরজার আড়ালে দাঁড়ানো আরোহীর প্রতিটা কথা বোধগম্য হয়েছে। হৃদয় ভাঙ্গার কষ্ট সে অনুভব করতে পারছে। শুভ্র আজ জান্তে ও অজান্তে দুটো রমণীর হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।

নিজের ভালবাসার মানুষটার মুখ থেকে নিজের বোনের প্রতি ভালোবাসার কথাগুলো শুনে আরোহী বাকরুদ্ধ। তার কিশোরী মনে তখন একটাই প্রশ্ন। একই রকম দেখতে হয়েও কেন শুভ্র তাকে ভালোনাবেসে তার বোনকে ভালোবাসলো?

ভগ্নহৃদয় নিয়ে আরোহী যায় রিয়ানার রুমে। আবার আড্ডায় শরীরকে হয়েও আরোহী তাকিয়ে থাকে তার বোনের দিকে পলকহীন। না! হিংসা হচ্ছে না। শুধু নিজের অনুভূতি গুলোকে এখন তুচ্ছ মনে হচ্ছে। নিজেরই আরেক আত্মার প্রতি তার হিংসা হয় না। আরোহী ঠিকভাবে নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না সবার সামনে ঠিক যতোটা আয়ানা পারে। আরোহী হয়েছে তার নীড় ভাইয়ের মতো অনুভূতি প্রকাশে আনাড়ি। আড়ালে তাদের প্রিয় অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে ভালোবাসে। আর মেঘ ও আয়ানা নিজেদের অনুভূতি নিজেদের ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ করে ফেলে।

আড্ডায় মশগুল রিয়ানা ও আয়ানার নজরে আসে আরোহী। তারা দুজনই ভ্রু নাঁচিয়ে আরোহীকে জিজ্ঞাসা করে, কি হয়েছে? আরোহী শত কষ্টের মাঝেও মুচকি হেসে তাদের জানান দেয়, তার কিছু হয়নি।
আয়ানার কাছে প্রথমে আরোহীর মুখশ্রী ভার দেখে কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু আরোহী নিজের অনুভূতিকে লুকিয়ে মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে তোলায় সেই সন্দেহ দূর হয়ে যায়।
বলাবাহুল্য, আরোহী আয়ানার থেকে অনেকটা ম্যাচিউর।

আরোহী, আয়ানা ও রিয়ানা দুপুরের খাবার শুভ্র বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ আগেই খেয়ে নিয়েছিল। শুভ্র যে সেই দুপুর আড়াইটার দিকে বাসায় ফিরেছে এতোবার খেতে ডাকার পরেও খেতে আসেনি। দরজা বন্ধ করে মনকে শান্ত রাখার জন্য সে এখন ঘুমাচ্ছে।
ঘড়ির কাঁটা যখন মধ্যাহ্ন ৩:৩০ ছুঁইছুঁই তখন আরোহী ও আয়ানা দুই বোন তাদের ফুফির বাসা থেকে প্রাইভেটে পড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। সেখান থেকেই বাড়ি ফিরবে দুই বোন।
#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১১
ভাগ্ন হৃদয়ের দুরন্ত কিশোরী হঠাৎ কয়েকদিন খুব চুপচাপ হয়ে যায়। খুব কম কথা বলে। দুষ্টামি করে না। বিষয়টা সবার চোখে লাগলে, আরোহীকে সবাই জিজ্ঞাসা করে। তখন আরোহী জবাব দেয়,
–তার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। তাই সে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত আছে।

সেদিনের এক সপ্তাহ কেটে গেছে। একদিন আরোহী আর আয়ানাকে জিজ্ঞাসা করে,
–আচ্ছা আয়ু! তোর কাছে শুভ্র ভাইকে কেমন লাগে?

আয়ানা ভুরু কুঁচকে সন্দিহান চোখে আরোহীর দিকে তাকায়। দুই বোন নিজেদের রুমে পড়ছিল। কালকে বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা। হঠাৎ পড়ার মাঝে আরোহীর এমন ধরনের প্রশ্নে কিছুটা সন্দিহান হয় আয়ানা। তারপর জিজ্ঞাসা করে,
–ঠিক বুঝলাম না।
আরোহী জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে গিলে বলে,
–না মানে ভাইয়া তো অনেক রাগী। সেদিন যে আমরা উনাদের বাসায় গেলাম, উনি কিন্তু একবারও আমাদের সাথে কোনরকম কুশল বিনিময় করলেন না। এমনকি আমাদের সাথে ভদ্রতার খাতিরে একবার দেখাও করতে এলেন না। তাই জিজ্ঞাসা করলাম তোকে, উনাকে তোর মানুষ হিসাবে বা সম্পর্কের খাতিরে কেমন লাগে?

আয়ানা এবার কথাটাকে সহজভাবে নিলো। তাই জবাবে বলে,
–কেমন লাগবে আর! বোনের কাছে ভাইকে যেমন লাগে ঠিক তেমনি লাগে। হ্যাঁ, ভাইয়া একটু রাগী। তুইতো দুরন্ত, চঞ্চল তাই তোর কাছে উনার ব্যবহারগুলো রুড মনে হয়েছে। সেদিনতো ভাইয়ার শেষ পরীক্ষা ছিল তাই হয়ত ঘরের মধ্যে রেস্ট নিচ্ছিল তাই আর আমাদেরকে দেখা করেনি।

আরোহী কথাটা আসলে জিজ্ঞাসা করেছে, আয়নার মনের ভাব জানার জন্য। তাই সে সিউর হবার জন্য আয়ানাকে জিজ্ঞাসা করে,

–তুই যে ভাই বলছিস! উনি কিন্তু আমাদের আপন ভাই না। নীড় ভাইয়া ও মেঘ ভাইয়ের মত না। কাজিন ব্রাদার হয়। তাই কথায় কথায় এরকম ভাইয়ের চোখে! বোনের চোখে! এগুলো বন্ধ কর। তুই এরকম সহজ সরল বলে কি, সবাই এরকম সহজ সরল নাকি বল?

আয়ানা বুঝতে পারে না আরোহীর কথার মানে তাই জিঙ্গাসা করে,
–মানে?
–মানে হচ্ছে, তুই ওনাকে ভাই ভাবলেও উনি তো তোকে বোন নাও ভাবতে পারে তাই না! অন্যকিছুও তো ভাবতে পারে। উনি কিন্তু তোকে অনেক কেয়ার করে এভাবে।
–তুই কি গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড বুঝাচ্ছিস?

আরোহী মনে তীব্র ব্যথা নিয়েও মুখে হাসি ফুঁটিয়ে জবাব দেয়,
–এইতো এতক্ষনে বুঝতে পেরেছিস।

আয়ানা এবার হেসে উঠে। এরপর হাসতে হাসতেই বলে,
–সিরিয়াসলি আরু! গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড উনি আর আমি!! নট এট অল। শুভ্র ভাইয়া আমার কাছে মেঘ ভাইয়া ও নীড় ভাইয়ার মতই ভাই।

আরোহী প্রোমোদ হাসে আপন মনে। এরই মাঝে আয়ানা আবার বলে,
–হ্যাঁ, তুই এটা ঠিক বলেছিস যে আমরা কাউকে ভাই ভাবলেও বিপরীত পাশের মানুষটা আমাদের বোন নাও ভাবতে পারে। আবার আমরা কাউকে মুখে ভাই বললেও মনে মনে কিন্তু তাকে ভাইয়া মনে করিনা অনেকসময়।

আরোহী বুঝে যায়, ভবিষ্যতে এটা লাভ ট্রায়াঙ্গেলের থেকেও ভয়ানক কষ্টের হবে। কে কার ভালোবাসা পাবে আর কে পাবে না তা এখন সুদূর ভবিষ্যতে বুঝা যাবে।
আরোহী আর এই বিষয়ে কথা না টেনে আয়ানাকে পড়তে বলে নিজেও পড়তে থাকে।

“আরোহী ভুলে যাবে না শুভ্রকে। ভালোবেসে যাবে নিজের মতো করে তবে সবটা লুকিয়ে। ভবিষ্যতের এক সুপ্ত আশা সে মনে রাখার জন্য নিজের বোনের অনুভূতি জানার ছিল। যা সে জেনে নিয়েছে। এখানে সবারটাই একতরফা। তাহলে আরোহী নিজে কেনো আগে আগেই নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিবে!! ভবিষ্যতে যা হবে সেটা সে মেনে নিবে। দেখা যাক ভবিষ্যৎ কি লিখে রেখেছে।”
এগুলো ভেবে আরোহী পড়াতে মনোনিবেশ করে।

______
এদিকে ভার্সিটি ও মেডিকেলের ভর্তি পরিক্ষা চলছে।শুভ্রর অনেক ইচ্ছে সে অনেক ভালো একজন হার্টসার্জন হবে। সাথে সে বিদেশ থেকে ডাক্তারি পড়তে চায়। কিন্তু তাকে তার বাবা বলেছে,
” বাংলাদেশে একটা ভালো মেডিকেলে চান্স পেলে বিদেশে স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়তে পারবে। ”

শুভ্র তাই খুব মনোযোগ দিয়ে মেডিকেলের প্রিপারেশন নিচ্ছে। অন্যদিকে এখন আর মাথা ঘামানোর সময় নেই। আর তার প্রেয়সী! সে তো তার বাবা-ভাই ছাড়া অচেনা পুরুষকে ভয় পায়। এজন্য শুভ্র নিশ্চিত যে আয়ানাকে সে হারাবে না। শুভ্র চায়, বিদেশ থেকে ভালো ডাক্তার হযে ফিরে এসে আয়ানাকে নিজের ভালোবাসাতে আবদ্ধ করবে।

____ডিসেম্বর মাস। শীতের প্রকোপ বাড়ছে। শুভ্রর ২১তম জন্মদিন। আর চারদিন পর জার্মানির ফ্লাইট শুভ্রর। বিদেশ বিভূয়ে পাড়ি জমাবে তার স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে। প্রতিবার জন্মদিন ঘোরোয়াভাবে করে কিন্তু এবার শুভ্র জার্মানিতে চলে যাচ্ছে বলে আত্নীয়-স্বজন ও কিছু বন্ধু-বান্ধবকে ইনবাইট করেছে। শুভ্রর ফুপির মেয়ে সামিরা, শুভ্রর পিছনে পিছনে ঘুরছে আর আরোহী তা দূর থেকে দেখে মিটমিট করে তাচ্ছিল্য হাসছে।

আয়ানা ও আরোহী নবম শ্রেণীর ফাইনার পরিক্ষা দিয়েছে। আর সামিরা অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি। জেএসসি পরিক্ষা শেষেই কয়েকদিন নিজের গ্রামের বাড়ি ঘুরে এসে যখন সামিরা শুনেছে শুভ্র বিদেশ চলে যাবে তখন সে তৎক্ষণাৎ শুভ্রদের বাসায় এসে পড়ে। সামিরা অনেকটা গায়ে পড়া স্বভাবের। শোঅফ করা তার স্বভাব। এইটুকুন মেয়ে রূপচর্চা করে, দামি ফোন নিয়ে ঘোরাফেরা করে, ফেসবুক চালায় মানে পুরোটাই ওভারস্মার্ট। আর শুভ্রর পিছে আঠার মতো লেগে থাকে যা শুভ্রর একদম পছন্দ না। শুভ্রর সামনে ন্যাকামি আর দিনে কয়টা প্রপোজ পায় ফেসবুকে, তার ছবি ফেসবুকে কতো লাভ রিয়াক্ট, কমেন্ট আসে তা বলে। সাথে এটাও যে সে ওসব পাত্তা দেয় না।

শুভ্রর কাছে এগুলো বিরক্ত লাগে। তাই সে দুই সপ্তাহ যাবত এই মেয়ের থেকে বাঁচতে বাড়িতে থাকলে নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে রাখে।

জন্মদিনে শুভ্র তার বন্ধুদের সাথে ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কুশল বিনিময় ও কথাবার্তা বরতে যেখানেই যাচ্ছে তার পেছনে পেছনে সামিরাও যাচ্ছে। আরোহী তো এগুলো দেখে হাসছে কারন শুভ্র যে খুব বিরক্ত হচ্ছে তা তার মুখ অবয়ব দেখে বুঝা যাচ্চে কিন্তু শুভ্র জোরপূর্বক হাসছে। আরোহীকে হাসতে দেখে আয়ানা ওর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে,

–কিরে তুই এমন পাগলের মতো একা একা হাসছিস কেনো?
আরোহী হাসতে হাসতেই বলে,
–শুভ্র ভাইয়ের কাজিনটা কিভাবে শুভ্রর ভাইয়ের পেছোনে ঘুরতেছে। কিন্তু এই বোকা মেয়ে জানেই না যে, শুভ্র ভাই তাকে কাশ্মিককালেও পাত্তা দিবে না। তার মনে যে অন্য কারো বাস!

আয়ানা অবাক হয়ে আরোহীকে জিঙ্গাসা করে,
–সত্যি! শুভ্র ভাইয়া কাউকে ভালোবাসে? এই এই বল না ভাবি কে? কি নাম? কোথায় সে?

শেষ কথাটা উৎফুল্ল চিত্তে বলে আয়ানা। আরোহী এরকম উৎফুল্ল স্বর শুনে তাচ্ছিল্য হাসে। এরপর কথা কাটানোর জন্য বলে,
–সেটা আমি কেমনে বলবো? তুই শুভ্র ভাইকেই জিঙ্গাসা করে নে।
এই বলে আরোহী সেখান থেকে চলে যায়। আর আয়ানা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে তার ভাবির নাম জানতে না পারায়।

_______
শুভ্র বিদেশে গেছে সাড়ে তিন বছর হতে চলল। আরোহী ও আয়ানা এইচএসসি পরিক্ষা দিয়ে এখন মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছে। ওদের দুই বোনকে নীড় ও মেঘ দুই ভাই মিলে কোচিংযের ওরিয়েন্টশন ক্লাসের জন্য দিয়ে গেছে। এই কোচিংয়ে ওরা দুই ভাইও সময় পেলে ক্লাস নেয়। উদ্ভাস-উন্মেষ কোচিং সেন্টার।
নীড় ও মেঘ দুজনেই এখন অনার্স ফোর্থ ইয়ারে। একজন সিএসসি ও আরেকজন ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টে পড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটির। দুই ভাইয়ের একজনের বুযেটের ও আরেকজনের মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায়, বুয়েটের ইচ্ছা থাকা নীড়ে সিএসসিতে ও মেডিকেলের ইচ্ছা থাকা মেঘের ফার্মেসীতে পড়ছে।

প্রথম দিন ওরিয়েন্টশন তো কোনো পড়ায় না তাই আরোহী ও আয়ানা বাসায ফিরে আসে। নীড় ও মেঘ গাড়ি নেয়নি। তারা ড্রাইভারকে বলে গেছে যেনো ছুটি হওযা পর্যন্ত ওদের দুইবোনের জন্য অপেক্ষা করে।

দ্বিতীয় দিনে মানে ক্লাসের প্রথম দিন ফোর্থ ইয়ার মেডিকেলের স্টুডেন্ট দিয়ে ক্লাস করায়। খুব সুন্দরভাবে ভাইয়া (শিক্ষক) নিজের পরিচয় ও সংক্ষেপে স্টুডেন্টদের পরিচয় নিয়ে ক্লাস করায়।

কিন্তু ক্লাসের দ্বিতীয় দিন একজন নতুন শিক্ষক আনে। যার এর আগে কোনো কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। হ্যাঁ, ধ্রুব। সরোযার্দি মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষে সে উঠবে এখন। ইয়ার প্রফের আর চারটা পরিক্ষা বাকি কিন্তু সেগুলার তারিখ পরেছে দেড় সপ্তাহ পরে একটা ও তার ঠিক দুইদিন পর পর বাকি গুলা। এক সপ্তাহে আটটা পরিক্ষার চারটা দিয়ে তার পরের দিনই কোচিংয়ে প্রথম ক্লাস করাতে এসেছে। আজ সকালেই তাকে জানানো হয় ক্লাসের কথা।
ধ্রুব প্রথমদিন অনেক নার্ভাস। মূলত শখের বশে ছাত্র-ছাত্রি পড়ানোর ইচ্ছা থেকেই পড়াতে আসা। ধ্রুবদের নিজস্ব গাড়ি নেই। একটা তিনতলা বাড়ি আছে নিজেদের। গাড়ি নেই বলে সবসময় বাসে আসা যাওয়া করতে হয়। ঘামে প্রায় ভিজে আছে ধ্রুবের পরনের খয়েরি চেক শার্টটা। দেখে মনে হচ্ছে মাত্র দৌড়ে এসেছে ক্লাস নিতে। ঘুম থেকে দেড়ি করে উঠেছে কারন এক সপ্তাহ রাত জেগে পড়াশোনা করার পর কাল রাতে আরামে ঘুমানোর ফুসরত পেয়েছে। তাই দেড়ি করে উঠেই মোবাইলে মেসেজ দেখে না খেয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছে।

ধ্রুবকে দেখে মেয়েরা মুখ চেপে হাসছে কারন ধ্রুব রিতিমতো হাপাচ্ছে। কিন্তু আয়ানা একমাত্র হাসছে না। আয়ানার পাশে বসে আরোহী সেও হাসছে।
#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১২
ধ্রুব ছাত্রিদের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়। সবাই তাকে দেখে হাসছে তা বুঝতে পারে। ধ্রুবর নিজেরো লজ্জা করছে কেনো এভাবে তাড়াহুড়ো করে আসলো! পুরো ক্লাসে একবার নজর বুলিয়ে দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে শুধু একটা মেয়ে বাদে। যে মেয়েটি হাসছে না সেই মেয়েটি গোলাপি-সাদা মিশেলে থ্রিপিস পড়েছে। ধ্রুব লক্ষ্য করে ওই মেয়েটার পাশে বসা একই চেহারার বেগুনী-সাদা মিশেলে থ্রিপিস পড়া আরেকটি মেয়ে। তবে অপর মেয়েটি হাসছে।
ধ্রুব বুঝতে পারে মেয়ে দুটি জমজ এবং স্বভাবত কিছুটা হলেও ভিন্ন। ধ্রুব যখন আয়ানার দিকে তাকিয়েছিল তখন আয়ানা একটা মিষ্টি হাসি দেয় আর ধ্রুবও সৌজন্য হাসি দেয়।

ধ্রুব শুধু নিজের নাম, কোথায় পড়াশোনা করে তা বলে বই খুলে পড়াতে শুরু করে। এভাবেই ক্লাস টাইম শেষ তো ধ্রুব চলে যায়।
কোচিং শেষে আরোহী আয়ানাকে বলে,
–বইন বিশ্বাস কর, এই পূর্ব(ধ্রুব) স্যারটা পুরাই একটা গর্দভ। প্রথম ক্লাসে কেউ এক ধারছে পড়ায় নাকি? শুধু নিজের নাম, পরিচয় বলে সে পড়ানো শুরু করে দিলো।

আয়ানা প্রতিবাদের স্বরে বলে,
–অথারিটি থেকে তো একজন এসে বলল, উনি আজকে প্রথম কোন কোচিংয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। আর প্রথম হিসাবে নার্ভাস তো হবেনই। আরে তোরা কি করলি? পুরো ক্লাস মিলে হাসলি!

আরোহী বাঁকা চোখে আয়ানার দিকে তাকায়। তারপর বলে,
–ব্যাপার কি ম্যাডাম? আপনার এতো গায়ে লাগছে কেন?স্যারের বোকামির কারণে আমরা হেসেছি। তাছাড়া আমরা কেউ উচ্চস্বরে হাসিনি। আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে হেসেছি। স্যার দেখে ফেললে তা আমাদের কিছু করার ছিলনা।

আয়ানা হতাশ হয়। তাই সে আর কিছু বলতে ইচ্ছুক না। হঠাৎ আরোহীর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। তাই সে দুষ্টুমি করে একটু পিঞ্চ করার মত করে আয়ানাকে জিজ্ঞাসা করে,

–তোর আবার ভাইয়াকে ভালোটালো লাগেনি তো! না মানে ভাইয়া কিন্তু যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। মেডিকেলের রেংকিংও ভালো। ঢামেক না হয়েছে তো কি হয়েছে! সরোয়ার্দি সেকেন্ডে আছে তাই না।

আয়ানা আরোহীর এমন প্রশ্নে নির্বাক হয়ে যায়। সে বুঝতে পারছে না এই প্রশ্নটা কি আদৌ যৌক্তিক! মানে প্রশ্নটা কেনো করলো? আয়ানা তাড়াহুড়ো করে বলে,

–কি বলছিস এসব? সে আমাদের শিক্ষক হয়। আমাদের পড়াতে এসেছে। আর আমি তাকে ভালোবাসো মানে কি আশ্চর্য! কি বলিস?

আরোহী ব্যঙ্গ করে বলে,
–এহ আসছে শিক্ষক! সে আমাদের থেকে এক ক্লাসের বড় মাত্র। সিনিয়র বলবি সিনিয়র। তোর কাছে কাজিন মানে ভাই! সিনিয়র মানে শিক্ষক! পুরাই আঁতেল তুমি। মানলাম সে আমাদের পড়াতে এসেছে তাই সে আমাদের শিক্ষক। এটাকে স্কুলের বাবার বয়সি স্যারদের সাথে তুলনা করিস না প্লিজ। এই পূর্ব ভাইয়া আমাদের থেকে মাত্র ১ বা ২ বছরের বড় হবে।

আয়ানা আর কোনো কথা বাড়াতে চাইলো না তাই গাড়ীতে উঠে বসে পরে। মুখে কিছু না বললেও তার মনের মধ্যেও ধ্রুবকে নিয়ে কিছু একটা হচ্ছে। যা সে মানতে চাইছে না ছাত্র-শিক্ষক বেঁড়াজালে বাইরে গিয়ে।

পরেরদিনও ধ্রুবরই ক্লাস পরল আর আয়ানাদের সাথে। আজকে ধ্রুব একদম পরিপাটি হয়ে এসেছে। ব্লাক শার্ট, হোয়াইট ডেনিম প্যান্ট, পায়ে মেইল কেইডস। শার্টের হাতা গুলো কনুইয়ের একটু নিচ পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে। উজ্জল শ্যামবর্ণ গায়ে ব্ল্যাক কালারটা খুব দারুন মানিয়েছে। হাতা গুলো গুটিয়ে রাখার দরুন অসাধারণ সুন্দর লাগছে। চুলগুলো মিডিয়াম সাইজ করে কাটা তবে সামনের গুলো সামান্য বড় তাই সেগুলো কপালের উপর এক সাইড করে রেখেছে। কোচিংয়ে কালকে যেই মেয়েগুলো ধ্রুবকে দেখে হাসছিল আজকে তারা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আর আরোহী একবার তার বোনকে দেখছে আরেকবার সামনে ধ্রুবকে দেখছে। মানে সে খেয়াল করেছে তার বোন কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে।

ধ্রুব আজকে সবার সাথে সুন্দর করে সবার নাম, পরিচয় জানতে চাইল। তারপর আস্তে ধীরে পড়াতে আগালো। এবং সে আজকে কনফিডেন্স নিয়ে এসেছে আজকে সে তার ইম্প্রেশন নষ্ট করবেনা। ফ্রাস্ট ইম্প্রেশন নষ্ট হয়ে গিয়েছে তো সেকেন্ডটা নষ্ট করবে না।
কোচিং শেষে সবাই বলা শুরু করেছে,পূর্ব স্যার কত সুন্দর, কত হ্যান্ডসাম দেখতে আর কালকে মনে হয় প্রথমদিন তাই নার্ভাস ছিল। আর আয়ানা এগুলো শুনছে আর মিটিমিটি করে হাসছে। আরোহী ডিটেকটিভের মতো বোনকে দেখছে।

কালকের মতো আজকেও আরোহী আয়ানাকে জিঙ্গাসা করে,
–আয়ু। আজকে পূর্ব ভাইয়াকে কতো সুন্দর লাগছিলো তাইনা? মানে কালকের সাথে তো আমি মিলাতেই পারছিলাম না। বাকি মেয়েগুলো কেমন হা করে তাকিয়েছিল দেখেছিস।

আয়ানা তো একটা কথাও শুনছে না। সে তো ক্লাসের প্রথমে ধ্রুবকে দেখে যখন সব মেযেরা হা করে ছিল তখন আয়ানা ধ্রুবকে কালকের মতো সালামের সাথে মিষ্টি হাসি দিয়েছিল। এরপর যখন পরিচয় পর্বে আয়ানা-আরোহী জমজ সেটা নিয়ে কথা বলে ধ্রুব তখন ধ্রব আয়ানার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়।
আয়ানা এগুলোই ভাবছিল আর আরোহীর হঠাৎ ধাক্কানোতে ভাবনা-চিন্তা থামায়।

–কিরে আয়ু! আমি যে তোকে কিছু বলছি সেটা কি তুি শুনছিস?
–হ্যাঁ, হ্যাঁ বল।
–না আমি বলবো না। তুই বল। তুই কি নিযে ভাবছিলি?

আয়ানা আমতা আমতা করে বলে,
–কি ভাববো। কিছু না। তুই বল কি বলছিলি।
আরোহী বাঁকা চোখে সন্দেহ নিয়ে আয়ানার দিকে তাকায়। আরোহীকে এভাবে তাকাতে দেখে আয়ানা থতমত খেয়ে যায়। সে কথা ঘোরানোর জন্য বলে,
–আরে বাদ দেতো এসব।

আরোহী বুঝেও চুপ করে যায়।
এভাবে প্রতিনিয়ত মাঝে মাঝে ধ্রুব ওদের ক্লাস পেতো। কিন্তু যখন ক্লাস নিতো তখন ধ্রুব ও আয়ানার মধ্যে যেন চোখে চোখে কিছু একটা হতো।

তিনমাস কোচিং শেষে যখন ভর্তি পরিক্ষার ফর্ম তোলার সময আসে সেদিন ধ্রুব নিজে এসে ওদের দুইবোনকে সাহায্য করে। আরোহী সবটা বুঝতে পারে। এখন আরোহীর মনে হচ্ছে তার বোনো ধ্রুবকে মন দিয়ে ফেলেছে। ধ্রুব সেদিন নিজের মোবাইল নাম্বার ওদের দিয়ে বলেছিলো, কোনো দরকার হলে যেনো তাকে জানায়। আয়ানা তো পুরোটা সময় লাজুক হয়ে চুপ করে ছিলো।

এতোকিছুর মধ্যে আরোহীর শুভ্রর কথা ঠিক মনে আছে। কিন্তু এখন তার শুভ্রর জন্য খারাপ লাগে। শুভ্র যখন ফিরে এসে জনতে পারবে তার মনের শুভ্রতারা অন্যের মনের আকাশের তারা হয়ে গেছে, তখন তার কেমন লাগবে? খুব কষ্ট হবে তাইনা! ঠিক যেমনটা আরোহীর নিজের হয়েছিল আর হয়েছিল ওই শিলা নামের মেয়েটির! শিলা মেয়েটির সাথে তো বন্ধুত্বটাও নষ্ট করে ফেলেছে।

আর বেশি ভাবতে চায় না আরোহী। বাকিটা সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছে।

______
মেডিকেলের ভর্তি পরিক্ষা শেষ। আরোহী ও আয়ানার পাবলিক মেডিকেলে মাত্র এক-দুই নাম্বারের জন্য হয়নি। জাহাঙ্গীরনগরের D ইউনিটে হয়েছে আরোহীর আর আয়ানারো। তবে সাবজেক্ট ভালো পায়নি। বোটানি ও জুলোজি পেয়েছে। বায়োকোমেস্ট্রি, জেনেটিকস ও বায়োটেকনোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মেসী এগুলোর মধ্যে কোনো একটা পেলে ভেবে দেখতো। আর মেঘ নিজে মেডিকেলের স্বপ্ন দেখে হারিয়েছে বলে তার দুই বোনকেও হারাতে দিবে না। মা-বাবা দুজনেই যেহেতু নামকরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আর এতো বছরে তাদের পদন্নোতি প্রফেসর। তাই মেঘ ও নীড় দুজনেই তাদের দুই বোনকে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়াবে। ওদের বাবা-মায়েরো কোনো আপত্তি নেই।

____আবারো প্রকৃতিতে ডিসেম্বর মাস। শুভ্র জার্মানি গেছে চার বছর হয়েছে। হঠাৎ সন্ধ্যে বেলায় আরোহী রুমে নেই। আয়ানা এই সময়ে ধ্রুবকে ফোন করবে বলে ভাবলো। জাহাঙ্গীরনগরের রেজাল্টের পর আরোহীর পিড়াপিড়িতে আয়ানা ধ্রুবকে ফোন করেছিল। সেদিন শুধু কুশল বিনিময় ও কোথায় চান্স পেয়েছে এটুকু বলে আর কথা হয়নি।

আয়ানা ফোন করলে কয়েকবার রিং হবার পর কেটে যাবার আগে অপরপাশ থেকে রিসিভ হয়।
আচমকা আয়ানা অনেকটা লজ্জা পেতে থাকে তাই সে ফোন কানে নিয়ে কোনো কথা না বলে চুপ করে আছে।

অপরপাশ থেকে ধ্রুব বুঝতে পারে এটা আয়ানা। তাছাড়া সে সেদিন নাম্বার সেভ করে রেখেছিলো কিন্তু জানতো না এটা ওদের দুইবোনের মধ্যে কার। আয়ানা চুপ করে আছে তাই ধ্রুব প্রথমে কথা বলে,

–আসসালামুআলাইকুম।
আয়ানা এবার সালামের জবাব দেয়।
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।
–কেমন আছো ‘তারা’?

ধ্রুবের মুখ থেকে নিজের “তারা” নামটা শুনে কেমন যেনো অন্যরকম ভালো লাগলো আয়ানার। কই শুভ্র ভাইও তাকে “তারা” বলে ডাকে। তখন তো এমন অনুভূতি হয় না!

চলবে ইনশাআল্লাহ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here