প্রিয় প্রহর পর্ব ১৬+১৭+১৮

#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৬
আরোহীর আর পড়া হলো না। ডিনারের সময়ও দুজনের কারো খাওয়ার ইচ্ছা নেই। সেদিন আর কোনো কথা হয় না দুজনের।
পরেরদিন শুভ্র আরোহীকে আরোহীর মেডিকেলে নামিয়ে দিয়ে নিজের কর্মক্ষেত্র মেডিকেলে চলে যায়। ক্যাম্পাসে যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে একা আরোহী। এই প্রথম একা একা ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে সে। আয়ানা এখনো আসেনি। একটু পর ওর বান্ধবী সারা ও তানু আসে।

–কিরে আরু। তুই একা কেন?
তানুর এমন বোকা বোকা প্রশ্নে সারা একটা গুতা দেয় হাতে তারপর বলে,
–বলদি! আরুর বিয়ে হইছে। তাহলে এখন তো শ্বশুর বাড়ি থেকেই মেডিকেলে আসবে তাই না! আয়ুর সাথে তো আসতে পারবে না।

তানু দ্বিগুন বেগে সারাকে গুতা দিয়ে বলে,
–তুই বলদি। আমি জিজুকে বুঝাইছি। আয়ুকে না।

আরোহীর ওদের অহেতুক কথা ভালোলাগছে না। তাই সে বলে,
–থাম বইনেরা। এবার বল ইশু কই?
–ইশু দেখ ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও আছে।
তানু ব্যঙ্গ করে বলে।

তখনি আয়ানা আসে ওদের কাছে। ওরা চারজন ক্যান্টিনে যায়। ক্যান্টিনে ইশু আর ওর বয়ফ্রেন্ড অভ্র বসে আছে। অভ্র ইন্টার্ন স্টুডেন্ট। ওরা চারজন গিয়ে ওই টেবিলে বসে।

–কিরে শাঁকচুন্নি। আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা করতি। সকাল আটটার ক্লাসের জন্য আমরাও না খেয়ে আসছি। আমাদের জন্য দাঁড়ালে কি হতো তোর?

তানুর কথায় ইশু বলে,
–তানু কি বাচ্চি! আমি এখনো খাই নি। তোদের জন্য বসে ছিলাম। আজকে অভ্র তোদের ব্রেকফাস্ট ট্রিট দিবে কারন নেক্সট মান্থ থেকে সে রেজিস্টার ডাক্তার হয়ে যাবে। কালকে এটা কনফার্ম হয়েছে।

সবাই মিলে অভ্রকে “শুভ কামনা” জানায়।
আরোহী বলে,
–ভাইয়া। আমাকে এনাটমির একটা টপিক বুঝায় দিতে পারবেন?

আরোহীর কথায় সবাই গোলগোল চোখে তাকায়। তাদের তাকানোর মানে হলো,
” আরোহী এনাটমি বুঝতে চাইছে! যেখানে ওরা আরোহীর থেকে এনাটমির প্রবলেম বুঝে। ”

–আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এই ক্লাস শেষ হলে ক্যান্টিনে বসো। আমি তখন বুঝিয়ে দিবো।

তানু অভ্রর কথা শুনে ইশুকে বারবার চোখ দিয়ে ইশারা করছে যাতে অভ্রকে মানা করতে বলে। সারাও মানা করতে বলছে। বেচারি ইশু এটা বুঝতে পারছে না যে সে কেনো মানা করতে বলবে!

নাস্তা শেষে সবাই ক্লাসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে তখন তানু ইশুকে টেনে একটু পেছোনে এনে বলে,
–ক্লাস শেষ হলে তুই অভ্র ভাইকে নিয়ে ডেটিংয়ে চলে যাবি।
ইশু অবাক হয়ে বলে,
–ছিহঃ। নাউজুবিল্লা মার্কা কথা বলবি না। আমি বিয়ের আগে এসব খারাপ কাজ করবো না আর না অভ্র এগুলোর পক্ষে।

তানু চোখ বন্ধ করে বিরক্তি লুকিয়ে বলে,
–তোমারে কি আমি রুমডেটের কথা বলছি? যে তুমি নাউজুবিল্লা, আসতাগফিরুল্লাহ পড়তেছো? ডেটিং মানে ঘুরতে যাবি বা ভাইয়াকে বিজি রাখবি যাতে সে আরুকে পড়া না বুঝাতে পারে।

ইশু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থেকে বলে,
–বুঝলাম। কিন্তু পড়া বুঝালে কি সমস্যা?

–তুই আসলেই বলদ। আরুর জামাই ডাক্তার। সেই তো আরুরে পড়া বুঝাইতে পারে! আর তাছাড়া আমরা তো সব কিছু জানি যে কি থেকে কি হইছে। তাই শুভ্র ভাইয়া যদি আরুরে পড়া বুঝায় তাহলে ওদের মধ্যে দূরত্ব কিছুটা কমবে।

তানুর বুঝানোতে ইশু বুঝে। এরপর সে সায় দিয়ে একসাথে ক্লাসে যায়।
এরপর যথারিতি ক্লাসের পর ইশু অভ্রকে বিজি রাখে যার দরুন অভ্র আরুকে পড়া বুঝাতে আসতে পারে না। আরু আধ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখে অভ্র আসে না তখন সে বলে,

–মনে হয় অভ্র ভাইয়া ফ্রি টাইম পায়নি। আমি বরং স্যারের কাছে যাই।

আরোহীর এমন কথায় তানু ও সারার কাশি উঠে যায়। আয়ানা ওদের দুইজনের মাথায় পিঠে হাত বুলাচ্ছে। ওরা দুজনে পানি খাচ্ছিল। সারা কাশি থামিয়ে বলে,

–আরু তুই তো শুভ্র ভাইয়ের কাছ থেকে পড়াটা বুঝে নিলে পারিস।
সারার কথায় আয়ু, তানু সায় দেয়।

আরোহীর মুখ কালো হয়ে যায়। শুভ্র ভাই কি তাকে পড়া বুঝিয়ে দিবে! এই নিয়ে এসে সন্ধিহান আছে। কালকে আবার শুভ জন্মদিন। ২৮ তম জন্মদিন। এখন যদি সে পড়া বুঝতে চায় আর শুভ্র রেগে যায় তাহলে কালকে জন্মদিন টাও শুভ্রর খারাপ কাটবে। তাই আরোহী গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,

–আরে না। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে উনাকে জড়ানোর দরকার আছে? আর তাছাড়া কালকে তো উনার জন্মদিন।

তানু ও সারা যেন একটা সুযোগ পেয়ে গেল। সারা বলে,
–ওয়াও! কালকে শুভ্র ভাইয়ের জন্মদিন। তাহলে তুই কি প্ল্যান করেছিস? মানে তাকে কিভাবে সারপ্রাইজ দিবি?

আরোহী বিরস মুখে বলে,
–আমি কোন প্ল্যান করিনি।
আরোহীর এমন কথা ওদের তিনজনের কারোই ভালো লাগেনা।
আয়ানা বলে,
–দেখ আরু। সামান্য পড়া বুঝানো নিয়ে ভাইয়া রাগ করবেন না। উনি নিজেও একজন ডাক্তার। কালকে ধ্রুব আমাকে বারোটা পরে ফোনে পড়া বুঝিয়ে দিছে। সারাদিন ফোন বন্ধ পেয়ে সে নাকি তোকেও ফোন করছিলো। শোন তুই শুভ্র ভাইয়ার কাছ থেকেই পড়া বুঝে নিস।

এরপর ওরা পরের ক্লাসে চলে যায়।
______
রাতের বেলা প্রায় সাড়ে দশটা বাজে শুভ্র এখনো বাসায় ফিরে নি। আরোহী শুভ্রর কাছ থেকে পড়া বুঝবে বলে বসে আছে। ঠিক পৌনে এগারোটার সময় শুভ্র বাড়িতে ফিরে। শুভ্র নিজের রুমে যেয়ে দেখে আরোহী বই বিছিয়ে বিছানায় বসে আছে। শুভ্র কালকের কারনে এখনো জড়তায় আছে। কালকে সব কিছু বলে ফেলেছে একদম।
শুভ্র ওয়াশরুম থেকে একবারে শাওয়ার নিয়ে ফিরে কারন আজকে দুইটা সার্জারি করেছে। আজকে শাওয়ার নেওয়ার সময় শুভ্রর টিশার্ট টা ওয়াশরুমের ফ্লোরে পড়ে গিয়েছিল। তাই সে ভেজা টিশার্ট টা হাতে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে বেরিয়ে আসে ট্রাউজার পড়ে।

আরোহী এতক্ষণ ধরে শুভ্র বের হয়ে আসার অপেক্ষা করছিল। শুভ্রকে তাহলে পড়া বুঝিয়ে দিতে বলবে তাই। হঠাৎ শুভ্রকে খালি গায়ে ট্রাউজার পরিহিত অবস্থায় শুধু তোয়ালে গলায় ঝুলানো অবস্থায় দেখে আরোহী লজ্জা পায়। ফর্সা লোমহীন ভেজা বুকে পানির কণাগুলো জমে আছে। চুল থেকে পানি পরছে। শুভ্র ভেজা টিশার্ট একহাতে ও আরেক হাতে গলায় ঝুলানো তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে।
আরোহী চোখ নামিয়ে নেয়। লজ্জায় তার গাল হালকা রক্তিম হচ্ছে। শুভ্র আরোহীকে চোখ নামিয়ে নিতে দেখে আগে কাভার্ড থেকে টিশার্ট বের করে পড়ে নেয় তারপর ব্যালকনিতে ভেজা টিশার্ট মেলে দিয়ে রুমে আসে। এখন ডিনার করবে তাই ডায়নিংয়ের উদ্দেশ্যে যেতে নিলে আরোহী তাকে হালকা স্বরে ডেকে বলে,

–আপনি যদি ডিনারের পর আমাকে এনাটমির টপিকটা বুঝিয়ে দিতেন!

শুভ্র ঘুরে তাকায়। তা দেখে আরোহী আবারো বলে,
–না মানে বেশি সময় লাগবে না। আধ ঘন্টার মতো লাগবে।

শুভ্র ঘড়ির দিকে তাকায় এখন ১১.১০ বাজে। শুভ্র রাজী হয়। তারপর আরোহীকেও ডিনারের জন্য আসতে বলে চলে যায়। আরোহী খুব খুশি হয়।

সাড়ে এগারোটায় ডিনারের পর রুমে এসে শুভ্র আরোহীকে পড়াতে বসে। শুভ্র খুব সুন্দর করে পড়াটা বুঝিয়ে দেয় একদম সহজ করে। আরোহী মনে মনো খুশি হয়। পড়া বুঝাতে বুঝাতে বারোটার ঘন্টা বেজে যায় তারমানে শুভ্রর জন্মদিনের দিন শুরু হয়ে গেছে। আরোহী মন হুট করে চাইলো সে শুভ্রকে মনের মাধুরী দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে। তাই আরোহী চট করে শুভ্রর হাত ধরে।

হুট করে হাত ধরায় শুভ্র চমকে যায়। আরোহী এতোক্ষন পড়ানোর মধ্যে শুভ্রর সাথে অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। ঘরির কাঁটায় এখন ১২.০৪ বাজে। আরোহী শুভ্রর হাত ধরে ব্যালকনির খোলা অংশ যেখান দিয়ে আকাশ দেখা যায় সেখানে নিয়ে যায়। শীতের রাত। বাহিরে হিম শিতল হাওয়া বইছে। শুভ্র ও আরোহী দুজনোর গায়ে হালকা শিতের পোশাক। শুভ্র ফুল স্লিভসের গেঞ্জির টিশার্ট আর আরোহী শাল গায়ে দেওয়া।

শুভ্র বুঝতে পারছে না আরোহী কেনো তাকে এই ঠাণ্ডার মধ্যে ব্যালকনিতে নিয়ে এসেছে। গ্রিলে এক হাত রেখে আরোহী শুভ্রর আরেক হাত ধরে রেখেই আকাশপানে দৃষ্টি রেখে বলে,

” কোনো এক শুভ্রদ্বীপে একক শান বজায় রেখে এসেছেন আপনি। ধরণী তার বুকে এক শুভ্র সূচনা করছে আপনার প্রথম কান্নার ধ্বনিতে। মাতৃহিয়া শান্ত করছে আপনার অশান্ত স্বরে। সেই ধরণীতে আজ আপনার আঠাশ তম বসন্ত! শুভ জন্মদিন শুভ্রদ্বীপ মাহতাব শান! আল্লাহ আপনার হায়াত বর্ধন করুক।”

আরোহীর এতো মাধুরী মিশিয়ে শুভেচ্ছা বাত্রা যেনো শুভ্রর মনের দোঁলাচলে এক মিস্টি আলোড়ন তোলে। সিক্ত হয় তার মন।
আরোহী মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে শুভ্রর মুখের দিকে তাকায়।
#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৭
শুভ্র আরোহীকে কি বলবে ভেবে পায় না। আরোহী বিষয়টা বুঝে মুচকি হেসে শুভ্রর হাত ছেড়ে রুমে চলে যায়। রুমে যেয়ে বিছানা গুছানো শেষে শুভ্র রুমে এসে বলে,
–ধন্যবাদ।

আরোহী শুভ্রর দিকে তাকায়। তারপর জবাবে হাসি দিয়ে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়ে। এরপর শুভ্রও খুশি মনে শুয়ে পড়ে।

পরেরদিন,,,
আরোহীকে সকাল সকাল মেডিকেলে নামিয়ে দিয়ে শুভ্র চলে যায়। আরোহী ক্যান্টিনে যায়। ক্লাসের আরো পনেরো মিনিট আছে। এই পনেরো মিনিটে স্যান্ডুইচ বা কেকে-পেস্ট্রি খাবে। সকাল ৭.৪৫ বাজে। বাসা থেকে বেরিয়েছে ৭ টায়। এতো সকালে শুধু চকলেট মিল্ক আর সেদ্ধ ডিম খেয়ে হাতে আপেল নিয়ে খেতে খেতে বেরিয়েছে। বিয়ের আগেও এটাই করতো। মেডিকেলের ক্যান্টিনে এসে কেক, স্যান্ডুইচ খেয়ে নাস্তা শেষ করতো দুইবোন। এতো সকালে রুটি বা ভাত খেতে কষ্ট হয় আর বমি আসে।

আরোহী টেবিলে চেয়ার টেনে বসা মাত্র তানু হামলে পরে আরোহীর উপর।
–উফ তানু! কি হইছে তোর? এমন করে জড়ায়ে ধরিস কেন!

তানু দাঁত বের করে বলে,
–কালকে কি করছো বান্ধবী? ভাইয়ার কাছে পড়া কেমন বুঝলা আর উইশ কেমনে করছো?

আরোহী চোখ ছোট ছোট করে তাকায় তানুর দিকে। তানু থতমত খেয়ে যায় এমন করে তাকানোতে। তানু সারার দিকে তাকায় কিছু বলার জন্য। সারা ইশারা বুঝে বলে,

–আরে তুই তো ভয় পাচ্ছিলি, শুভ্র ভাইয়া পড়া বুঝানোর কথা বললে বকবে বলে। তাই জিঙ্গাসা করেছে।

আরোহী ক্যান্টিনের ছোট ছেলেটাকে ডেকে চার পিস স্যান্ডুইচ অর্ডার করে তারপর বলে,
–না। বকে নি। ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে।

আয়ানা আসে তখন।
–স্যরিরে। আজকে ঘুম থেকে উঠতো লেট হয়ে গেছে।

আয়ানা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে। তানু আয়ানাকে ব্যাঙ্গ করে বলে,
–বিয়ে হয়েছে আরুর আর লেট করিস তুই! বিয়ের আগে তো আরুকে ঘুম থেকে তুলতে লেট হতো। এখন তো জলদি উঠার কথা তোর।

সারা তানুর সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
–আরে তানু বেবি, তুমি বুঝো না কেনো! আয়ুর সেও তো আয়ুকে রাত জেগে এনাটমি বুঝায় দেয়। আর সারারাত তাদের এই বোজানোতে চলে যায়!

আয়ানা ওদের ফাজলামি দেখে বলে,
–শোন! ওর এতো সময় নাই। সামনের মাসে ওর এমবিবিএস ফাইনাল। সেই সেপ্টেম্বর থেকে ডেট পিচাচ্ছে। ফাইনালি ধ্রুবের ইন্টার্ন শুরু হবে মার্চ থেকে। কালকে আমি অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করছি। আর মেঘ ভাইয়া মাত্র আমায় নামায় দিয়া গেলো।

তানু মেঘের নাম শুনে বলে,
–হাহ! তোর এক ভাই তো গম্ভীর হয়ে থাকে আর আরেকটা রেগে থাকে। তোর দুই ভাই আমারে চরম ছ্যাঁকা দিছে। ক্রাশ খাইছিলাম দুইটার উপর। আর দুইটাই সিক্রেটলি মিঙ্গেল।

আরোহী স্যান্ডুইচে কামড় দিয়ে খেতে খেতে বলে,
–ইফান ভাই কিন্তু এতদম সিঙ্গেল।

তানু বলে,
–তোর ওই খালাতো ভাইটা! যেটা রামগরুর ছানার মতো হাসে না। তাই না? কেমনে জানি তার মধ্য তোদের নীড় ভাই ও মেঘ ভাইয়ের বাতাস লেগে গেছে যে সে একদম কম কথা বলে আর রাগী।

আয়ানা কপাল কুঁচকে খেতে খেতে বলে,
–ইফান ভাই খুব ভালো। সে একদম খালুর মতো হয়েছে। খালু নাকি আগে এমন ছিলো। পড়াশোনা নিয়ে পরে থাকতো। এমনে এমনে কি এতো নামকরা নিউরোসার্জন সে! আর ইফান ভাইয়া, সেও যথেষ্ট হাসে। আমাদের সাথে তো দারুন মজা করে। ভাইয়ার ইন্টার্ন শেষ হবে। তারপর ঢাকা মেডিকেলে বা সরোয়ার্দি তে ট্রাই করবে। সেও খালুর মতো নিউরোসার্জন হতে চায়। তবে খালামুনি ভাইয়াকে বিয়ে না করে বিদেশ যেতে দিবে না। তাই ভাইয়া এখন আপাতোতো হায়ার ডিগ্রীর জন্য যেতে পারছে না।

তানু বলে,
–আমি ফেসবুকে নক করছিলাম। সে দুই মাস হলো মেসেজ সিন করলো না আর না রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলো। আমিও সুন্দর করে রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে দিছি।

চার জন হেসে উঠে। আরোহী তানুকে বলে,
–শোন তানু। ভাইয়া ফেসবুকে ঢুকে না আর ঢুকলেও মেসেজিং কম করে। কারন তার মেসেজিং করতে ভালো লাগে না।

সারা এসবের মাঝে বলে,
–উফ! তোদের বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড কাহিনী শুনতে শুনতে যে ক্লাস টাইম হয়ে এলো দেখেছিস? আমরা চারটা তো এখানে। তবে পাঁচ নাম্বার জন কই মরলো?

তানু পানি খেয়ে বলে,
–ইশু আছে কোথাও অভ্র ভাইয়ের সাথে। এক বিয়াত্তা আর দুই মিঙ্গেল প্রাণীর মধ্যে আমি আর তুই ফেঁসে গেলাম রে!

সারা ভ্রঁ কুঁচকে বলে,
–তুমি তো খালি ক্রাশ খাও। আমি তাও না। আমি আশা করি যে আমি নিজের মনকে পিউর রাখলে স্বামী হিসেবে যে আসবে সেও আমার মতো হবে।

সারার কথায় আরোহী ও আয়ানা মুচকি হাসে আর তানু মুখ ভেঙচি দিয়ে উঠে পরে।
_______

কেটে যায় এক মাসের কিছু বেশি সময়। আরোহীদের পরিক্ষা শেষ হয়েছে। কয়দিন বন্ধ পেয়েছে। আরোহী শেষ পরিক্ষার দিন ওদের বাসায় গিয়ে দুইদিন থেকে এসেছে। বন্ধ পেয়েছে মাত্র পনেরো দিন। দুইদিন শুভ্র যায়নি আর না আরোহীকে কোনো ফোন করে খবর নিয়েছে। আরোহীর বিষয়টা খারাপ লাগলেও আর পাত্তা দেয়নি।
আজ সকালে একা একাই শুভ্রদের বাড়িতে চলে এসেছে। ওর ফুপি মানা করেছিল একা না আসতে। শুভ্র যেয়ে নিয়ে আসবে বলেছিল। তবে আরোহী জোর করেই চলে এসেছে। শুভ্রকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইলো না।

বাসায় এসে আরোহী ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেছে কিছু বানাবে। শুভ্রর মা মানে আরোহীর ফুফি ওরে ঢুকতেই দিলো না এই বলে যে, ” এখন মাত্র এসছিস। এখন রান্না করার দরকার নাই।”

আরোহী বাধ্য হয়ে চলে এসেছে। ভাবলো কার্টুন দেখবে তাই ডোরেমন খুলে বসে গেলো।

দুপুরের পর আরোহী এক প্রকার জোর করে বিকেলের নাস্তা আর রাতের জন্য চিকেন উইংস দিয়ে একটা স্পাইসি রেসেপি বানাবে বলে রান্নাঘরে যায়। এই রেসেপিটা শুভ্রর পছন্দ হবে কারন শুভ্র ইন্সট্রাগ্রামের স্টোরিতে দেখেছিলো স্পাইসি চিকেন শুভ্রর পছন্দ। অন্য খাবারে বেশি ঝাল খেতে না পারলেও এই রেসেপিটাতে পারে। এই রেসেপিতে তেঁতুল ও চিনির ব্যাবহার আছে।

শুভ্র আজকেও সাড়ে দশটার পর বাসায় ফিরে। সে এখনো জানে না যে আরোহী চলে এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাস তাই শীতের তিব্রতা কমেছে। আরোহী ব্যালকনির ডিভানে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে পাতলা কম্বল গায়ে দিয়ে আরাম করে শুয়ে আছে। ডিভানের সাইডের থাই গ্লাস খুলে দিয়েছে আকাশ দেখার জন্য।

শুভ্র রুমে ঢুকে আগে পাখা চালিয়ে নিয়েছে। তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লো। দুইদিন ধরে এগারোটার পর বাসায় ফিরে। আজকে জলদি কাজ শেষ তাই এসে পড়েছে। এই মাসের শেষে ইংল্যান্ড যেতে হবে। একটা সার্জারি আছে। ওই সার্জারিটা ভালো ভাবে করতে পারলে সে হার্টসার্জনের ডিগ্রী পাবে। ওই রোগীকে তার হেলথ কন্ডিশনের কারনে লেট করে সার্জারি করতে হবে। রোগী অনেকটা বৃদ্ধ। ৬০ বছর বয়স। রোগীর ছেলেরা অনেক উচ্চ পর্যায়ে আছে। আর শুভ্র যেখানে এপ্লাই করেছে সেটাতে ওই রোগী একজন ডাক্তার। শুভ্র সেখানে পড়াশোনা করেছে।

ইংল্যান্ড যাবে তার প্রিপারেশন আবার রোগীর চাপ সব মিলিয়ে শুভ্র স্ট্রেসে আছে। শুভ্র পাঁচ মিনিট পর ওয়াশরুমে যায়। সে এখনো বুঝতে পারে নি যে আরোহী এসেছে। ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে রাখতে ব্যালকনিতে যেয়ে দেখে ডিভানে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। শুভ্র সেখানে যেয়ে দেখে আরোহী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হয়ে শুভ্র! যে আরোহী কখন আসলো? সে আরোহীকে ডাক দেয়,

–রুহি!

আরোহী কি এক ধ্যানে ছিলো যে খেয়াল নেই। আর কানে তো আরমান মালিকের গান,,
” ইতনি মোহাব্বত কারু না,
মে ডুব না যায়ু কাহি!
ওয়াপাস কিনারে পে আনা
মে ডুব না যায়ু কাহি।
দেখা যাবছে চেহরা তেরা,
মে তো হাফতোছে সোয়া নেহি।
বোল দো না জারা,
দিলমে যো হে ছুপা,
মে কিসি সে কাহুঙ্গা নেহি,
মে কিসি সে কাহুঙ্গা নেহি। ”
(নিজ দায়িত্বে বাকিটা শুনে নিবেন।)

শুভ্র আরোহীর কোনো হেলদোল না দেখে আরোহীর বাহুতে হাত দেয়। আরোহী হঠাৎ ধরফরিয়ে উঠে বসে। এরপর শুভ্রর দিকে তাকায়। তারপর বলে,

–ওহ আপনি! কখন এলেন?

–বিশ মিনিট হবে। তো তুমি কখন এলে? জানাওনি তো

–সকালে এসেছি। আপনি কি এই দুইদিন আমার কোনো খোঁজ নিয়েছেন যে জানাবো?

শুভ্রর কথার প্রেক্ষিতে আরোহী জবাব দেয়। শুভ্র এমনিতে প্রেশারে ছিল তাই মাথায় আসেনি। শুভ্র বলে,

–অনেক ব্যাস্ত ছিলাম আর এই মাসের শেষে ইংল্যান্ড যেতে হবে। একটা সার্জারি আছে। যেটা ভালো করে করতে পারলে হার্টসার্জন হয়ে যাবো অফিশিয়ালি।

–ওয়াও। ভালো। সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি। আর তাছাড়া আপনার সাথে আমার এখনো মনে করার মতো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। ডাইনিংয়ে আসুন ডিনার করবো।

আরোহী চলে যায়। শুভ্রর খারাপ লাগে তবে এখন আর ভেবে লাভ নেই। আর আরোহী তার খবর ঠিক নিয়েছে তার মায়ের কাছ থেকে তা শুভ্র জানে। কারন কালকে রাতে তার মা বলছিলো আরোহীর সাথে হওয়া কথাগুলো তবে আরোহী যে আজ আসবে তা বলেনি।

শুভ্রর কাছে আরোহীর বানানো রান্নাটা অনেক ভালো লেগেছে। প্রশংসা করেছে তবে জানতে চায়নি কে বানিয়েছে। শুভ্র বুঝেই গেছে এটা আরোহী বানিয়েছে কারন তার মা এভাবে রান্না করে না।
_______

ধ্রুব এক ধারছে পড়েই যাচ্ছে। রেজাল্ট ভালো হলে যদি ঢাকা মেডিকেলে ইন্টার্নের সুযোগ পায় তো তার আয়ানার সাথে দেখা করাটা সুযোগ হবে। আর তিনটা পরিক্ষা বাকি।

আয়ানা ধ্রুবকে ফোন করতে চাচ্ছে কিন্তু ভয় পাচ্ছে যে ধ্রুবর পড়াতে ডিস্টার্ব হবে নাকি এই নিয়ে। আয়ানার সময় কাটছে না। আরোহী চলে গেছে আর তার কোনো কাজ নেই।

এতো ভাবার মাঝে ফোন করেই বসলো হুট করে। ধ্রুব ফোন রিসিভ করে বলে,

–কি ম্যাম! এতোক্ষন লাগে একটা ফোন করতে? কতোক্ষন নাম্বার ডায়েল করে কেটেছেন বলেন তো?

–তুমি বুঝলা কিভাবে?

–আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনি। আর সকালে তো মেসেজে বলেছিলেন যে আরু চলে গেছে। তো ম্যাম! খেয়েছেন?

— হ্যাঁ। তুমি খাইছো? নাকি বই ছেড়ে উঠোনি?

–না গো এখনো খাওয়া হয়নি। আজকে বউ থাকলে খাইয়ে দিতো!

আয়ানাও মজা করে বলে,
–নিয়ে যাও বিয়ে করে। আমি তোমারে খাওয়ায় দিবো।

–এখন না। আমার ইন্টার্ন শুরু হবে। ইন্টার্ন শেষ হলে তারপর তোমায় নিয়ে আসবো বিয়ে করে।

আয়ানা লজ্জা পায় কিছুটা।
–আচ্ছা। তুমি আগে খেয়ে নাও তারপর পড়তে বসো। আর খাওয়ার পর আমাকে মেসেজ করে বলবা, খেয়েছো যে। কালকে পরিক্ষা ভালো হবে ইনশাল্লাহ।
#প্রিয়_প্রহর
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১৮
বিয়ের পর আজ আরোহীর প্রথম জন্মদিন। আজ সে তার শ্বশুর বাড়িতেই থাকবে। ভেবেছিলো রাত ১২ টায় শুভ্র তাকে উইশ করবে কিন্তু শুভ্র নিজের ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করে ঘুমিয়ে গেলো।
আয়ানা, নীড়, মেঘ ও ওদের বাবা-মা সকালেই শুভ্রদের বাড়িতে এসেছে। রিয়ানা ও তার মেয়েও এসেছে। সারাদিন আনন্দে কেটে গেলো। সন্ধ্যে হতেই আয়ানারা তাদের বাড়ি ফিরে গেলো। রিয়ানা সন্ধ্যের সময় কথায় কথায় আরোহীর থেকে জানতে পারে যে, শুভ্র এখনো উইশ করে নি।

রিয়ানা ফোন করে শুভ্রকে। শুভ্র রিসিভ করে জলদির মধ্য বলে,
–হ্যাঁ আপি বল।

–ওই বলদ! আজকে যে তোর বউয়ের জন্মদিন তা কি তুই ভুলে গেছিস?

শুভ্র রোগী দেখার মাঝে একটু ব্রেক নিয়ে ফোন রিসিভ করেছে।
–আপি। আমি পরে কথা বলি? রোগীটাকে দেখেই কলব্যাক করি।

শুভ্র কল কেটে রোগীকে দেখে পাঁচ মিনিট পর আবার কল করে।
–হ্যাঁ আপি, কি বলতেছিলি?

–আজ আরুর জন্মদিন। তুই কি ওরো উইশ করছিস?

–না। আমার তো মনেই ছিলো না!

–তাহলে এখন ভাব! কিভাবে উইশ করবি। আর শোন কিছু গিফট করতে পারিস। তবে দামি জিনিস দিয়ে শুধু বাহ্যিক খুশি কিনা যায় মনের খুশি না! এমন কিছু গিফট কর যাতে আরু মন থেকে খুশি হয়।

শুভ্রর মনে নাড়া দেয় কথাটা। আজকের দিনে আট বছর আগে সে কারো মোহে আটকা পড়েছিলো। কিভাবে আজকের তারিখটা ভুললো! আট বছর আগে কারো ভালোবাসার মোহতে পড়ার সাথে সাথে আরেকটা মেয়ের সম্মান বাঁচিয়েছিল। আর আজ সে তারই অর্ধাঙ্গিনী!

–ঠিক আছে আপি।
–শোন ভাই, পারলে জলদি আসিস। সময়ের আগে। সময় থাকতে সময়ের কাজ করে ফেলা ভালো নাহলে তুইতো তার জলজ্যান্ত প্রমাণ!

রিয়ানা ফোন রেখে দেয়। শুভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে মন দেয়।

রাত সাড়ে দশটার সময় শুভ্র বাড়ি ফেরে। রুমে যেয়ে দেখে রুম ফাঁকা তবে ব্যালকনির থেকে গুনগুন গানের সুর আসছে।
” আমার ক্লান্ত মন, ঘর খুঁজেছে যখন
আমি চাইতাম, পেতে চাইতাম
শুধু তোমার টেলিফোন।
ঘর ভরা দুপুর, আমার একলা থাকার সুর
রোদ গাইতো, আমি ভাবতাম
তুমি কোথায় কতো দূর! ”

শুভ্রর কাছে গলার স্বরটা বিষন্ন লাগে। সে ব্যাগ রেখে ব্যালকনিতে যায়। তারপর কোনো টু শব্দ না করে আরোহীর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে। এরপর আরোহীর বাম পায়ে হাত দিয়ে পা টা নিজের হাঁটুতে রাখে।

আরোহী এরকম আচমকা পায়ে হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে। দাঁড়ানো থেক পড়ে যেতে নিয়েও সামলে নেয় গ্রিলে ধরে।
শুভ্র আরোহীর বাম পায়ে একটা সাদা মুক্তা ও স্টোন খচিত পায়েল পড়িয়ে দেয়।
( কি ভাবছেন? শুভ্র প্রোপোজ করবে? এহ! এতো দ্রুত হলে তো পরে আপনারাই বলবেন খাঁপছারা।)

পায়ে পায়েল পড়িয়ে শুভ্র উঠে দাঁড়ায়। আরোহীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে,

” এক সূর্যস্নানিত তেজস্বিনী দিনে!
রোদ্দুরের হালকা উষ্ণতা নিয়ে
কুয়াশার আদ্রতাকে গ্রাস করে তুমি
রোদের আদ্রতা ছড়াও। ”
______তিথি

শুভ্রর মুখের দিকে ক্রমশ পলকহীন তাকিয়ে আছে আরোহী। আরোহী এতোটাও আশা করেনি। পায়েল নিজ হাতে পড়িয়ো আবার ছন্দ মিলানো!
শুভ্র আরোহীর অবাক মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। সেও বুঝতে পারছে যে আরোহী এগুলো আশা করেনি।
শুভ্র চলে যেতে নিলে আরোহী বলে,

–ধন্যবাদ আপনাকে। সবকিছুর জন্য। এতো সুন্দর ছন্দ আর পায়েলটা।

শুভ্র মুচকি হেসে চলে যায়। কালকে তার ইংল্যান্ডের ফ্লাইট। কয়দিন ধরে কাজ কমিয়ে রেখেছে সে।

আরোহী শুভ্র যাওয়ার পর মুচকি হেসে শুভ্র বলা ছন্দটা আউরায়।
সে ভাবে নিকষ কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে,

“একদিন আপনি এই রৌদ্রিতার মায়ায় পড়বেন। শুভ্র আকাশে রোদের আলোকে মানায়। আর রাতের আকাশে ধ্রুবতারা! রোদের আলো ছাড়া প্রকৃতি তার শুভ্রতা প্রকাশ করতে পারে না। ”

———এদিকে আজকে ধ্রুবের একটা পরিক্ষা আর সাথে প্র্যাকটিকেল। তাই পুরোটা সময় সে ব্যাস্ত। আয়ানার মন খারাপ তবে প্রকাশ করতে পারছে না। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে ভাবনা পাশে রেখে দরজা খুলতে যায়। ভিতরের রুম থেকে ওর মাও এসেছে দরজা খুলতে। মা-মেয়ে দুজন দরজা খুলে।
দরজা খুলে দেখে পার্সেল এসেছে এতটা বক্সে। ডেলিভারি বয়কে বিদায় করে আয়ানা বক্সটাতে নজর বুলায়। বক্সে লেখা, “ধ্রুবতারা”

মিসেস নূর মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে যায়। আয়ানা মায়ের সামনে লজ্জা পেয়ে গেছিলো তাই দৌড়ে বক্সটা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রাত দশটার পর যে পার্সেল আসে তার জানা ছিলো না। বক্স খুলে দেখতে পায়,
একটা কালো রঙের সোনালি পাড়ের শাড়ি, কালো চুড়ি, বেলি ফুলের মালা আর একটা চিরকুট।

চিরকুটে লেখা,
” আমার রাতের আকাশের এক তারা,
শত সহস্র তারার মাঝে খুঁজে পাওয়া
এক উজ্জ্বল ধ্রুবতারা! ”
_____তিথি

আয়ানা সাথে সাথে ধ্রুবকে ফোন করে। অপর পাশ থেকে ফোন রিসিভ করে ধ্রুব বলে,
–অভিমাস কি বেশি করেছেন?

আয়ানা চুপ করে আছে। তার মনের খুশি সে ভাষায় বুঝাতে পারছে না।
–কথা বলবেন না? এখনো অভিমান করে আছেন?

–না। ঠিক আছে। আমি জানি তোমার পরিক্ষা ছিলো।

–তা মেম। একবার কি শাড়িটা পড়তে পারবেন? আর সবগুলো জিনিস দিয়ে চোখে শুধু কাজল দিয়ে সাজবেন। আমি কিছুক্ষন পর ভিডিও কল দিবো।

আয়ানা সায় জানিয়ে কল কেটে দিয়ে সাঁজতে বসে। শাড়ির সাথে চুল খোলা রাখে আর খোলা চুলে বেলি ফুলের মালাটা ক্লিপ দিযে এক সাইড করে লাগায়। চোখে কাজল দিয়ে অপেক্ষা করে ধ্রুবের ভিডিও কলের।

ভিডিও কলে এসে ধ্রুবের মুখ থেকে প্রথমেই বের হয়, “মাশাআল্লাহ”

ওদের কিছুক্ষণ কথা বাত্রার পর যে যার মতো ঘুমিয়ে পরে।

______
কেটে যায় এক মাস। শুভ্র হার্টসার্জন হয়ে গেছে। সেদিনের সার্জারিটা সাকসেসফুল হয়েছে। আর ধ্রুব সরোয়ার্দিতেই ইন্টার্নশিপ করছে। ঢামেকে হয়নি। আরোহী ও আয়ানাদেরও ফোর্থ ইয়ারের ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে। পাঁচ বান্ধুবী খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।

আরুদের খালাতো ভাই ইফান ও তার বেস্টফ্রেন্ড আরাশ ঢামেকে রেজিস্টার ডাক্তার হিসেবে জব পেয়েছে। ইফানের জন্যই তার খালামুনিরা চট্টগ্রামে শিফট হয়েছিলো। সেখানে ফ্লাট কিনে থাকে আর ইফানের ছোট বোন এইচএসসি দিবে চচট্টগ্রাম থেকে তাই ইফানের ঢাকাতে আসার সময় পরিবার সহ আসতে পারেনি। দুইমাস পর তারা ঢাকাতে আসবে। আর ইফানের বাবা ঢাকাতে মেঘদের বাড়ির কাছেই বাড়ি করছে। সেটা পুরোপুরি কম্পিলিট হতে দেড়মাস লাগবে। তাই ইফানকে তার বড় খালার বাসায় মানে মেঘ-নীড়দের সাথে থাকতে বলেছে। ইফানের সাথে ইফানের বন্ধু আরাশও এসেছে। আরাশ চায়নি আসতে কিন্তু মিসেস নূরের জোরাজোরিতে এলো।

আরাশের বাড়ি রংপুর। এখন ঢাকা মেডিকেলে জবের সুযোগ তো হাত ছাড়া করা যায় না! আরাশ চেষ্টা করবে তার মা-বোনকে ঢাকা নিয়ে আসতে। তিন বছর আগে তার বাবা কিডনি ড্যামেজে মারা গেছে। রংপুরে তাদের একটা ধানি জমি আছে পাঁচ কাঠার মতো। আর যে বাড়িটা সেটা দুই কাঠার মধ্যে। বাবার চিকিৎসার জন্য আরেকটা তিন কাঠার জমি বিক্রি করেছে। ওর বাবা মারা যাবার পর ধানি জমিতে যা ফলন হয় তা দিয়ে ওর মা-বোন চলে। আর আরাশ চট্টগ্রামে এডমিশন কোচিং ও রেগুলার কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে নিজের খরচ চালিয়েছে। ইফানের পড়ালেখা জনিত সাহায্যে সে ভালো করে পড়তে পেরেছে।

আরাশ চায় ঢাকাতে নিজে সেটেল হয়ে মাকে এবং ক্লাস টেনে পড়ুয়া বোনকে ঢাকাতে এনে কলেজে ভর্তি করে দিবে। রংপুরের বসত বাড়িটা রেখে ধানি জমিটা বিক্রি করে দেবে।

আরাশ মিসেস নূরকে বলে দিয়েছে যাতে তাকে নিজের ছেলের মতো দেখে। কোনো দরকারে যেনো ডাকে। আরাশ যে এক মাস এখানে থাকবে আর তারপর মেস বা দুইরুমের ফ্লাট নিবে তাও জানিয়েছে।
মিসেস নূর আর দ্বিরুক্তি করে নি।

একমাস পর,,
আজ আরাশ চলে যাবে। সে একটা দুই রুমের ফ্লাট নিয়েছে। আরাশের সাথে ইফানও যাবে। অনেক জোর করে সে তার খালাকে রাজি করিয়েছে। তাছাড়া একমাস পর তো ইফানের পরিবার এখানে পাশেই শিফট হবে। ইফান এই একমাস আরাশের সাথে ফ্লাট শেয়ারে থাকবে। ঢামেকের পাশেই ফ্লাট নিয়েছে।

ওরা দুইজন চলে যাবে তাই মিসেস নূর আজকে ওদের জন্য ভালো-মন্দ রান্না করছে সাথে তার দুই মেয়ের বান্ধুবীদের, সাদিয়া, সাবিলাকে ও ধ্রুবকে আসতে বলে। শুভ্রর সার্জারি থাকায় সে আসতে পারে নি তবে আরোহী মেডিকেল কলেজ থেকেই চলে আসে। আজকে রাতে তারা পাঁচ বান্ধুবী, সাদিয়া ও সাবিলা একসাথে থাকবে। শুভ্র রাতে আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here