প্রেতপুরুষ পর্ব ৭

#প্রেত_পুরুষ
——————-(৭ম পর্ব)
এ আমি কী দেখছি!আলিফ তাহলে সত্যিই কোনো সাধারণ মানুষ না।
আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না আলিফ শূন্যে ভাসছে আর মুখ থেকে আগুনের গুলার মতো কিছু একটা বের করছে বার বার।
আমার চোখ থেকে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
আলিফ তবে কোনো মানুষ না, ভূত অথবা দানব ভাবতেই আমার সারা শরির কাঁটা দিচ্ছিল।
আমি ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লাম।আলিফ দ্রুত আমার দিকে তাকালো হিংস্র দৃষ্টিতে। আমাকে দেখতে পেয়েই মুহুর্তে নিচে নেমে এলো।ভোরের আলো ফুটছে মাত্র আবছা অন্ধকারে আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম আলিফের অচেনা এক চেহারা।কিন্তু আমাকে দেখতে পেয়েই আলিফের চোখ মুখ আবার শান্ত হয়ে গেল, দ্রুত পায়ে হেটে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।
আমি উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও পাচ্ছি না তবুও কোনো মতে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে চলে আসতে চাইলাম।আলিফ আমার হাত টেনে ধরে আটকে ফেললো আমাকে।আমি রাগে, ভয়ে কাঁদতে শুরু করলাম।কাঁদতে কাঁদতে আলিফের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,আপনি মানুষ নন আপনি দানব,আপনার জন্যই আজ আমার বোনের এই অবস্থা হয়েছে।আপনি চম্পাকে মেরে ফেলেছেন তাই না? কেন মেরেছেন আমার বোন কী ক্ষতি করেছিল আপনার? আপনার এই দানব চেহারা আমার বোনও দেখে ফেলেছিল তাই না? এবার আমিও যে দেখে ফেলেছি আমাকেও কেরে ফেলুন।
আমি চিৎকার করে কান্না শুরু করলাম।আলিফ বেশ অপ্রস্তুত হয়েই আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,আমি তোমাকে সব বলতাম সাইয়ারা বিশ্বাস করো সেই সুযোগটাও কাল থেকে পাইনি আমি।
আমি তোমাকে সব বলছি এভাবে চিৎকার না করে শান্ত হয়ে আমার কথাটা শুনো।
আমি গর্জন করে উঠলাম,কী শুনবো আপনার কথা?আপনার মতো খারাপ দানবের সাথে আমার কোনো কথা নেই।আমাকে মায়ায় ফেলে বিয়ে করেছেন তাই না?যাদু করেছেন আমাকে।
ছাড়ুন আমাকে নাহলে আমি চিৎকার করে সারা বাড়ির লোক ডেকে আনবো।
কথাটা শেষ করা মাত্রই আমার গলা থেকে আর কথা বেরোলো না।অনেক চেষ্টা করেও আমি আর কথা বলতে পারলাম না।অদৃশ্য বাধন আমার হাত পাও যেন বেধে ফেললো।আমি সোজা দাঁড়িয়ে রইলাম। নড়াচড়া বা কথা বলা কোনোটাই করতে পারছি না।আমার চোখ থেকে শুধু টপটপ করে জল পড়ছে।আমি রাজ্যের ঘৃণা নিয়ে আলিফের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আলিফের চোখদুটি লাল হয়ে আছে আর ছলছল করছে।আলিফ আমার দুই বাহুতে শক্ত করে ধরে কাঁপা গলায় বললো,এই শেষ বার তোমার উপর আমি নিয়ন্ত্রণ করলাম আর কখনও এমন করবো না। তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমার হয়।তুমি যতটা কষ্ট পাচ্ছো তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট আমার হচ্ছে সাইয়ারা।
আলিফের চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।
ও আমার হাতটা ওর বুকে লাগিয়ে বললো,বুকটা জলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে জানো? তোমার সাথে প্রতারণা করার শক্তি আমার নেই সাইয়ারা তবুও করতে হয়েছে।না পেরেই করেছি।কিন্তু এবার আমি তোমাকে সমস্ত সত্যিটা বলতে চাই।সবকিছু শুনে যদি তোমার আমাকে অপরাধী মনে হয় তবে তুমি যা শান্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেবো।
আলিফ আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করতে বললো আমি চোখ বন্ধ করতেই চোখের পলকে আমরা একটি ঘরে এসে হাজির হলাম।আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা চৌকিতে চম্পা অবচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।আমি দৌড়ে চম্পার কাছে গেলাম,গিয়ে ওর মাথাটা কোলে নিয়ে অস্থির হয়ে ডাকতে শুরু করলাম। আলিফ আমার পাশে এসে বসে শাস্তভাবে বললো চম্পা এখন উঠবে না সাইয়ারা ওর শরিরের অবস্থা এখনও পুরোপুরি ঠিক না।কিন্তু চম্পা সুস্থ হয়ে যাবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি।তুমি ওকে এখন শুইয়ে দাও।আলিফের কথা অনুযায়ী আমি চম্পাকে শুইয়ে দিলাম।
আমি থতমত করে বললাম,চচ্চচম্পা এখানে কেন?
আলিফ শান্তভাবে বললো,সব বলছি তুমি আমাকে সেই সময় টুকু যদি দাও।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।আলিফ বলা শুরু করলো,আমি আসলেই কোনো সাধারণ মানুষ না আমি প্রেতপুরুষ। অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক প্রেত।আমার জন্ম দাতা কোনো সাধারণ মানুষ না উনি একজন প্রেত, কিন্তু আমার জন্মদাত্রী একজন মানবী।আমার বাবা প্রেতপুরীর নিয়ম ভেঙে একজন সাধারণ মানবীকে বিয়ে করায় আমার প্রেত চাচারা বাবার উপর ক্ষেপে গেল।কিন্তু আমার দাদার জন্যই কেউ আমার বাবা-মায়ের উপর অত্যাচার করতে পারেনি বা প্রেতপুরী থেকে তাদের বের করে দিতে পারেনি।
আমার বাবা ছিলেন দাদার বড় ছেলে সেই হিসেবে বাবাই প্রেতপুরীর ভবিষ্যৎ রাজা হওয়ার কথা।তাই আমার দাদা অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হতেই বাবাকে প্রেতপুরীর রাজা বানিয়ে দিলেন।
আমার জন্ম হয়েছে প্রেতপুরীতেই আমি তখন দুই বছরের শিশু।আমার চাচারা তখন হিংসে জ্বলেপুড়ে গেল, এক মানবীর সন্তান যদি ওদের প্রেতপুরীর ভবিষ্যৎ রাজা হয় তবে ওদের থেকেও বেশি শক্তিশালী হয়ে যাবো আমি।ওরা কিছুতেই সেটা হতে দিবে না।
আমার দাদার মৃত্যুর পর দিনই বাবার সাথে প্রতারণা করে বাবাকে মেরে ফেললো তারা।আমার মা বাবার দেয়া যাদুর পাথরটি, যেটা আমি তোমাকে দিলাম সেটা নিয়ে পালিয়ে চলে এলো পৃথিবীতে।এর কিছুদিন পরই মাও মারা গেল আমাকে রেখে গেল আমার খালার কাছে মানে এখন পুরো পৃথিবী যাকে আমার মা বলে জানে।খালা-খালু নিঃসন্তান হওয়ায় আমাকে পরম আদরে আগলে রাখলো।কিন্তু আমি যে প্রেত পুরুষ সেটা আমি বুঝতে পারলাম কয়েক বছর আগে।আমি ইচ্ছে করলেই উড়তে পারতাম,যা ইচ্ছে করতে পারতাম।মুহুর্তে যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারতাম।যখন আমি এসব আমার মাকে, মানে খালাকে খুলে বলি তখন মা আমাকে আমার অতীত সম্পর্কে জানায়।
আর তোমার সম্পর্কে আমি জানলাম এই কিছুদিন আগে।
আর ধৈর্য ধরতে না পেরে এবার আমি উত্তেজিত হয়েই বললাম,কিন্তু আমি তো সাধারণ একজন মানবী আমার বাবা মাও সাধারণই মানুষ, এতো কিছুর সাথে আমার সম্পর্ক কোথায়?
আলিফ কিছুক্ষণ থেমে বললো বলছি কিন্তু এখন আমাদের ফিরে যেতে হবে।তোমার মা তোমাকে খুঁজে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছেন।
আমার হাতটা ধরো দ্রুত। আমি চম্পার দিকে তাকিয়ে বললাম,চম্পা!
আলিফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,সবটা বললে এমনিতেই বুঝবে আর চম্পা এখানে নিরাপদ।আর অপেক্ষা করা যাবে না চলো এবার।বাড়িতে বিপদ।
আলিফ কথা শেষ করে আমাকে শক্ত করে ধরে আগের মতোই চোখ বন্ধ করতে বললো..
বাড়িতে বিপদ শুনেই আমার ভিতরটা কেঁপে উঠলো,আমি দ্রুত চোখ বন্ধ করলাম..
চলবে..
লিখা : উম্মেহানি মিম
★ কমেন্টে পূর্বের এবং পরের পর্বের লিংক দেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here