প্রেতপুরুষ পর্ব শেষ

#প্রেত_পুরুষ
——————–৮ম পর্ব(অন্তিম)
বাড়িতে বিপদ কথাটা শুনেই আমার ভিতরটা কেঁপে উঠলো,আমি দ্রুত চোখ বন্ধ করলাম।
চোখ বন্ধ করতেই আমাদের বাগানে এসে পৌঁছালাম আমরা।
তারপর দ্রুত পায়ে হেটে বাসায় ঢুকলাম।
অপূর্ব মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছে আর বাবা মা দুজনেই বিচলিত হয়ে ওর পাশে বসে আছে।
আমি দৌড়ে গিয়ে জানতে চাইলাম কী হয়েছে, আলিফ হাত ইশারায় আমাকে শান্ত থাকতে বলে অপূর্বকে উঠিয়ে বিছানায় বসালো।
অপূর্ব হাপাতে হাপাতে বলছে,সাইয়ারা, আলিফ তোমরা এখান থেকে পালাও, যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যাও। আমি কোনো রকমে সামলেছি এখন, এরপরে যখন ওদের বড় দল আসবে এতো জনের সাথে লড়াইয়ের শক্তি আমার নেই।
আমি অস্থির হয়ে চিৎকার করে উঠলাম,কী হচ্ছে এসব? কারা আসবে আর কেন আমরা চলে যাবো।আমি কোত্থাও যাবো না। আমাকে সব কিছু খুলে বলুন দয়া করে।
আলিফ আমার হাতটা আলতো করে ধরে রেখে বললো, বলছি তুমি একটু শান্ত হও।তখন জিজ্ঞেস করেছিলে তোমার সাথে আমার যোগসূত্র কোথায়!
যখন তুমি পৃথিবীতে আসো তখন তোমার জন্ম সাধারণ কোনো হসপিটালে হয়নি সাইয়ারা।আন্টি তখন অনেক অসুস্থ ছটফট করছেন ব্যথায় সেই মুহুর্তে ঝড়-বৃষ্টির জন্য হসপিটালে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।তবুও আংকেল আন্টিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।অর্ধেক রাস্তা গিয়ে ওনাদের সামনে গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল আর আন্টি যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন।তখন আমার বাবা আংকেলদের পাশেই একটা কাজে ছিলেন তিনি মানুষ রূপে ওনাদের সাহায্য করার জন্য প্রেতপুরীর যেখানে মহিলাদের সন্তান জন্মগ্রহণ হয় ধরা যায় হসপিটালই সেখানে নিয়ে যান।তোমার জন্ম হয় সেই রাতে।আমাদের প্রেতপুরীর একটা নিয়ম আছে জন্মের পরই বাচ্চাদের একটা জাত চিহ্ন দেয়া হয়।একই চিহ্ন কয়েকজনকে দেয়া হয় আর এই চিহ্ন মিলিয়েই আমাদের বিয়ে হয়।যেহেতু প্রেতপুরীর আশ্রমখানায় তোমার জন্ম তাই প্রেত শিশু মনে করে সেই চিহ্নটা তোমার ঘাড়েও দেয়া হয়।
সেই চিহ্নটার জন্যই তুমি আমার সূত্রে বাধা পড়েছো।এই চিহ্নটা যদি কোনো মানুষের শরিরে দেয়া হয় তবে সেটা প্রেতপুরীর জন্য একটা হুমকির সমান।কারণ যে মানবীর শরিরে এই চিহ্নটি আছে ঠিক একই চিহ্ন আছে এমন প্রেতের সাথে তার বিয়ে হলে এদের প্রথম সন্তান হবে প্রেতপুরীর সবার থেকে বেশি শক্তিশালী সে অনায়াসে প্রেতপুরীর রাজত্ব করতে পারবে চাইলে প্রেতপুরীকে ধ্বংসও করে দিতে পারবে।যখন খারাপ প্রেতেরা তোমার চিহ্নটা সম্পর্কে জানলো তখনই ওরা আহেমকে পাঠালো তোমাকে বস করে বিয়ে করার জন্য।আহেম হলো তোমাদের অপূর্ব। আলিফ এবার থামলো।
অপূর্বের আসল পরিচয় শুনে আমি এবং মামা-বাবা চমকে উঠলাম।আমি ইতস্তত করে বললাম, অপূর্বের আমাদের বাসায় আসাটা একটা প্ল্যান ছিল?
আমার কথার উত্তরে অপূর্ব ঢুক গিলে বলা শুরু করলো,হ্যাঁ আমি কোনো স্মৃতিহারা মানুষ নই, আমি একজন প্রেত।আমি আলিফের বংশেরই ছেলে।আলিফ আমার সম্পর্কে চাচাতো ভাই।আমার বাবা-ই আলিফের বাবাকে মারতে অনুমতি দিয়ে ছিলেন খারাপ প্রেতেদের।খারাপ প্রেতরা আমার বাবার মাথায় ঢুকিয়েছিল যে আলিফের বাবা প্রেতপুরীতে থাকলে আমাদের সবার ক্ষতি।
আর তোমার সম্পর্কে যখন আমরা জানতে পারি তখন আমাকে ওরা পাঠায় তোমাকে বিয়ে করে প্রথম সন্তান জন্ম নিলেই তোমাকে মেরে ওকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু তোমাদের সাথে থাকতে থাকতে আমি এই প্রতারণাটা কিছুতেই করতে পারছিলাম না।আর এদিকে প্রেতরা বার বার আমাকে চাপ দিচ্ছিল।
সেদিন তোমাকে ধরিয়ে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়াটাও আমার জন্যই। আমি ভাবছিলাম তোমাকে বিয়ে ঠিকই করবো কিন্তু প্রেতদের কথা অনুযায়ী কিছুই করবো না।আমি তোমাকে বস করে রেখে ছিলাম যাতে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও কিন্তু আলিফ এসে আমার প্ল্যান নষ্ট করে দেয়।তোমাকে আমার বসিকরণ থেকে মুক্ত করে আর তুমি ওকেই বিয়ে করতে চাও।চম্পার ব্যপারটা হলো সে আমার একটা কথা শুনে ফেলেছিল।তখন প্রেতদের সাথে আমি কথা বলছিলাম চম্পাকে খেয়াল করিনি। আমি বলেছিলাম সাইয়ারাকে আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না, এটাই চম্পা শুনে ফেলে।তখন চম্পাকে আমি নিজের আসল চেহারা দেখাই আর হুমকি দেই যদি কাউকে কিছু জানায় তবে সবাইকে মেরে ফেলবো।এদিকে আমি আলিফের উপর ক্ষেপে যাই কিন্তু তখনই বাবা আমাকে প্রেতপুরী থেকে খবর পাঠায়, আমি সেখানে যাই দ্রুত।

অপূর্ব কিছুক্ষণ থেমে আলিফকে উদ্দেশ্য করে বললো,বাবা মারা গেছে আলিফ।আর মারা যাওয়ার আগে নিজের ভুলটা স্বিকার করে আমাকে তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে আর তোমাদের বিপদে পাশে দাঁড়াতে বলে গেছে।তোমাদের বিপদ জেনে আমি তাড়াতাড়ি চলে আসি কিন্তু ততক্ষণে খারাপ প্রেতরা চম্পার উপর আক্রমণ করে কারণ চম্পা জেনে গেছিল আমি সাইয়ারার ক্ষতি করতে চাইছি। আমি এসে কোনোমতে চম্পাকে প্রাণে মারা যাওয়ার আগে রক্ষা করি কিন্তু তখনই সাইয়ারা চম্পার ঘরে যায় আর আমি দ্রুত বেরিয়ে আসি।ভাবছিলাম চম্পাকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার পথে প্রেতদের যাদু-মন্ত্রের থেকে ওকে মুক্ত করবো কিন্তু মাঝরাস্তায় আলিফ আমাদের থেকে চম্পাকে নিয়ে যায়।
এখন প্রেতরা আবার এসে আমার উপর আক্রমণ করেছিল কারণ ওরা বুঝে গেছে আমি ওদের কথামতো কাজ করছি না।ওরা এটাও জেনে গেছে আলিফ সেই শক্তিশালী প্রেত পুরুষ যার সাথে সাইয়ারার বিয়ে হয়েছে।ওরা যদি বেঁচে থাকে তবে প্রেতপুরীতে খারাপ প্রেতদের ধ্বংস নিশ্চিত তাই ওরা তোমাদের বাঁচতে দিবে না।
অপূর্ব হাপাতে হাপাতে কথাগুলো বলে শেষ করলো।
এবার আলিফ বলা শুরু করলো,আমি সাইয়ার সম্পর্কে জানতে পারি আমার দাদীর থেকে।খারাপ প্রেতেরা দাদীকেও আটকে রেখেছে দাদার মৃত্যুর পরে।দাদী স্বপ্নের মধ্যে এসে আমাকে জানায় সাইয়ার বিপদ আমি যেন ওকে বিয়ে করে প্রেতদের থেকে রক্ষা করি।ওকে নিরাপদ রাখি।
তখন আমি সাইয়ারার স্বপ্নে এসে বার বার সাবধান করতাম কিন্তু যখন দেখলাম আহেমের সাথে সাইয়ার বিয়ে হয়ে যেতে পারে তখনই দ্রুত ডাক্তার হয়ে চলে আসি এখানে।আমি এমনিতেই ডাক্তারি পড়াশোনাই করেছি কারণ আমি পৃথিবীতেই বড় হয়েছি।

সবটা শুনে আমার সারা শরিরে কাঁটা দিচ্ছিল।আমি চোখ বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করলাম আমি বাস্তবে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি তখনই আলিফ বললো,চম্পা এখন পুরোপুরি সুস্থ ওকে নিয়ে আসি আমি।চম্পার কথা শুনে একটু হলেও আনন্দে আমার মনটা ভরে উঠলো।
আলিফ চম্পাকে নিয়ে আসতেই মা আর আমি চম্পাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম।চম্পাও কাঁদছে।অপূর্ব আমাদের উদ্দেশ্য করে বললো,এভাবে সময় নষ্ট করলে হবে না সাইয়ারা। তোমাদের এখান থেকে নিরপদ আশ্রয়ে যেতেই হবে এদিকটা আমি দেখছি।ভাই আলিফ, তুমি সাইয়ারাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাও।দুটো সুরক্ষা কবজ দিচ্ছি এগুলো গলায় বেধে নাও।
অপূর্বের দেয়া সুরক্ষা কবজ আমার গলায় বেধে দিলো আলিফ।আমি কিছুতেই বাবা,মা এদের রেখে যেতে চাইছিলাম না কিন্তু বাবা,মাও এটাই চায় আর আলিফ জোর করেই আমাকে নিয়ে উড়তে শুরু করলো।উড়তে উড়তে আমরা একটা পাহাড়ে এসে থামলাম।
আলিফ অনেক হাপিয়ে গেছে আমরা পাহাড়ের উপরে বসেই একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম হঠাৎ চারিদিক থেকে কেমন হুরহুর শব্দ শুনতে পেলাম।আমি আলিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।আলিফ আমার দিকে তাকিয়ে বললো তোমার সুরক্ষা কবজটা কোথায়?
আমি তাকিয়ে দেখলাম গলায় সুরক্ষা কবজ নেই কখন বেখেয়ালে পড়ে গেছে খেয়ালই করিনি।
আলিফকে বেশ বিধ্বস্ত লাগলো।ও দ্রুত নিজের গলার সুরক্ষা কবজটা খুলে আমাকে পরিয়ে দিলো।
আমি বুঝতেই পারছিলাম না কী হচ্ছে আর আমার কী করা উচিৎ।হঠাৎ বিকট শব্দ করে চারিদিক থেকে কারা যেন আসা শুরু করলো আলিফ ধাক্কা দিয়ে আমাকে পাহাড়ের একপাশে ফেলে দিলো।আমার মাথায় খুব জোরে আঘাত লাগলো, আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
জ্ঞান ফিরতেই তাকিয়ে দেখলাম আমি পাহাড়ের খাদে পড়ে আছি, চারিদিকে শুনশান নীরবতা।
কোনোমতে উঠে বসলাম কিন্তু কোথাও আলিফকে দেখতে পেলাম না। আমার কেমন ভয় ভয় লাগতে শুরু হলো।আলিফকে আমি হারিয়ে ফেললাম না তো! তখন ও কেন আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো সেটাও তো বুঝতে পারছি না।আমি অস্থির হয়ে আলিফকে খোঁজা শুরু করলাম কিন্তু কোথাও আলিফ নেই।এক পর্যায়ে আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু করলাম।নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো আমার।কাঁদতে কাঁদতে আমি আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম তখনই মনে পড়লো আমার ওড়নায় বেধে রাখা আলিফের দেয়া সেই পাথরটি আছে।আমি পাথর বের করে কান্না শুরু করলাম।হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আমি মুখ তুলে তাকাতেই দেখলাম খুব সুন্দর একটি মেয়ে আমার দিকে হাসিহাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে।সাদা পোষাক, লম্বা চুল গা ভর্তি হিরার গয়না,মাথায় মুকট, হাতে কাঠি আর মেয়েটির পিছনে দুটি ডানা।আমার বুঝতে বাকি রইলো না এই মেয়েটা একজন পরী।
আমি আবারও কান্না শুরু করলাম,মেয়েটি আমার কান্নার কারণ জানতে চাইলো আর বললো কী সাহায্য করবে আমাকে।
আমি আলিফের কথা জিজ্ঞেস করলাম ওকে।
মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,তোমার স্বামী খুব ভালো, তিনি তোমাকে বাঁচাতে ওনার সুরক্ষা কবজ খুলে পরিয়ে দিয়ে তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন আড়ালে।আর নিজে খারাপ প্রেতের দলের সাথে যুদ্ধ করলেন আর সবাইকে পরাজিত করে মেরেও ফেললেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উনি নিজেকে আর রক্ষা করতে পারলেন না।
এতটুকু শুনেই আমি চিৎকার করে উঠলাম কী হয়েছে আলিফের?
মেয়েটি আমাকে শান্ত করে বললো,উনি বেঁচে আছেন কিন্তু ওনার মানব শরির হারিয়েছেন, একটি জন্তুই রুপান্তরিত হয়েছেন।উনি কিছুতেই এ রূপে আপনার সামনে আসবেন না তবে দূর থেকে আপনার খেয়াল রাখবেন।
পরীর কথা শুনে আমি আবারও হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম।এটা কিছুতেই হতে পারে না আলিফকে আমি হারিয়ে ফেলবো।
আমি ফুপাতে ফুপাতে বললাম,আলিফকে ঠিক করার আর কোনো উপায় নেই?
পরীটি একটু ইতস্তত করে বললো,আছে কিন্তু..
আমি দ্রুত বললাম,কোনো কিন্তু না আমাকে বলো কীভাবে আলিফ ঠিক হবে।
মেয়েটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,সেই উপায়টা অনেক কঠিন তুমি করতে পারবে না।
-যেমনই হোক আমি পারবো।
পরী এবার কিছুটা চিন্তিতভাবেই বললো,এই দুই পাহাড় পরে একটা অগ্নেগিড়ির পাহার আছে এই পাহাড়ের ঘাস জ্বলন্ত কয়লার মতো সেই পাহাড়ে উঠতে হলে হাত পা পুড়াতে হবে তোমাকে।পাঁচ পা উঠলেই পাবে একটি ছিনুক সেটা খুললেই এরকম আরেকটি পাথর পাবে দুটি পাথর একসাথে করলেই আলিফ আবার আগের রূপে তোমার কাছে ফিরে আসবে।পাহাড়টা খুবই ছোট কিন্তু তুমি তো দু-পাও ফেলতে পারবে না।তাই বলছি যেও না।
আমি গর্জন করে বললাম,তুমি আমাকে ওখানে নিয়ে চলো আমি পারবোই।
পরী আমাকে সেই পাহাড়ের নিচে নিয়ে এলো ওর কথা অনুযায়ী পাহাড়টির ঘাস আগুনের কয়লার মতো।ধোয়া উড়া কয়লার উপর আমি হাটতে লাগলাম, বুঝতে পারছিলাম আমার পায়ে ফুসকা পড়ছে, অসহ্য যন্ত্রনায় নিশ্বাস আটকে আসছে তবুও আমি থামলাম না।উপরে উঠে ঝিনুকটি খুলতেই পাহাড় স্বাভাবিক পাহাড়ের মতোই সবুজ ঘাসে ভরে উঠলো।আমার পায়ের যন্ত্রণাও যেন মিলিয়ে গেল অনেক খানি।আমি ঝিনুক থেকে পাথরটি বের করে দুটি পাথর মেলাতেই আলিফ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।আমি কাঁদতে কাঁততে ওকে জড়িয়ে ধরলাম আর চিৎকার করে বললাম কেন সব বিপদ নিজে একা মোকাবিলা করতে গেলে, কেন আমাকে এভাবে সরিয়ে দিয়েছিলে?
তোমাকে ছাড়া আমি কী নিয়ে থাকতাম বলো।
আলিফও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখে বললো, তুমি হলে আমার প্রাণপাখি আর প্রাণপাখির কিছু হলে আমি বাঁচতাম কীভাবে? আর তুমি যে এতোটা কষ্ট করলে তা বুঝি কিছু না?
আমি এবার আরও জোরে কাঁদতে কাঁদতে আলিফকে ছেড়ে দিয়ে বললাম তুমি খুব খারাপ একটা প্রেত পুরুষ।
আলিফ আমাকে নিজের কাছে নিয়ে হাসতে হাসতে বললো,উহু আর প্রেত পুরুষ না এবার থেকে আমি শুধুমাত্র তোমার পুরুষ।আমি আমার প্রেত শক্তি বিসর্জন দিয়েছি সেহজাদী সাইয়ারা।
প্রেত রাজ্যের খারাপ প্রেতরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছে আমি আহেমকে মানে অপূর্বকে প্রেত রাজ্যেের রাজা বানিয়ে দিয়েছি।খারাপ প্রেতদের সাথে লড়তে আর আমার বাবার খুনীদের শেষ করতে অপূর্ব আমাকে সাহায্য করেছে।
এবার থেকে আমি শুধু তোমার মনের সেহজাদা আর তুমি আমার মনের শেহজাদী।
আলিফের কথা শুনে আমি এতোটাই খুশি হলাম যে চোখে পানি নিয়েও হেসে দিলাম।
আলিফ আলতো করে আমার হাত ধরে বললো চলো ফিরে যাই এখন আমাদের পাথরের পরীর সাহায্য নিতে হবে আমার তো আর শক্তি নেই।আর বাসায় গিয়েই আমরা পাথর দুটি পুতে রাখবো এই সমস্ত শক্তির আর কোনো দরকার নেই আমাদের আমরা এবার মানুষের মতোই সুখে,শান্তিতে সংসার করবো।
আমি আর আলিফ একসাথে হাটা শুরু করলাম।
সেদিন বাসায় ফিরে আমরা পাথর দুটি সত্যি সত্যি পুতে রেখে ছিলাম।এতক্ষণ আমি আমার জীবনের কালো অধ্যায় নাকি সোনালী অধ্যায় বলবো বুঝতে পারছি না অবশ্যই সোনালী অধ্যায় হবে কারণ এই অধ্যায়ের জন্যই আমি আলিফকে পেয়েছি।আলিফের মতো একজন জীবন সঙ্গি পেয়েছি।আমি সেই সোনালী অধ্যায় ডায়রিতে লিখে রাখলাম।
ডায়রি লেখা শেষ করে আমি উঠে দাঁড়ালাম,আর কোথা থেকে দৌড়ে এসে আমার পাঁচ বছরের মেয়ে সানা আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। মেয়ের এমন আচমকা জড়িয়ে ধরায় আমি ফিক করে হেসে দিলাম।সানাকে বেশ উৎফুল্ল আর ক্লান্ত দেখাচ্ছে, মনে হচ্ছে অনেক জায়গা দৌড়ে এসেছে।সানা হাপাতে হাপাতে বললো,মা মা আমি না লাফিয়ে লাফিয়ে উড়তে পারি.. তুমি জানো আজকে আমি অনেক জায়গা লাফ দিয়ে উড়ে চলে গেছিলাম।
সানার কথা শুনে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো আমি সানাকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে নিয়ে গেলাম।
তবে কী আমার সানাও?..
——–
(সমাপ্ত)
#প্রেত_পুরুষ – অন্তিম পর্ব

লিখা: উম্মেহানি মিম
★এই গল্পটা এখানেই শেষ মানে প্রথম অধ্যায় শেষ।দ্বিতীয় অধ্যায় আপাতত লেখার ইচ্ছা নেই।যদি কখনও ইচ্ছে হয় লিখবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here