প্রেমঘোর ২, পর্ব-৫+৬

প্রেমঘোর ২
পর্ব : পাঁচ
লেখক : নার্গিস সুলতানা রিপা

“কল কেটে দিলি কেনো?”
রাইসা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাই চুপ করে রইলো। কথা বললো অরূপ,
“রাউনাফকে বকেছিস?”
রাইসা এবার কথা বলার সুযোগ পেলো একটু। বললো,
“ও অন্যায় করেছে।”
“আহামরি কিছু করে নি।”
“লুকিয়ে ফোন করেছে তোমাকে। আর প্রশ্নের উত্তরটা জানার জন্য একরকম অসৎ উপায় অবলম্বন করেছে। যা একদম ঠিক হয় নি ওর।”
অরূপ শব্দ করে হাসলো। রাইসা রাউনাফের দিকে তাকালো। ঘুমে চোখ লেগে আসছে ছেলেটার। রাইসা হাত বাড়িয়ে কম্বলটা ভালো করে মুড়িয়ে দিলো ভাইয়ের উপর। টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে দিয়ে অরূপকে বললো,
“হাসছো যে?”
“তোর কথা শুনে। ক্লাস ফাইভে পড়ে একটা বাচ্চা ন্যায় আর অন্যায়ের কি বুঝে?”
“ফাইভে পড়ে ঠিক আছে। কিন্তু ওর বুঝা উচিত যে ও ভুল করেছে। তা না হলে ভবিষ্যতে একইরকমের কাজ করবে আর সেটাকে ঠিক হিসেবে ধরে নিবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। ভালোভাবে বুঝিয়ে দিস কিন্তু রাগারাগি করিস না।”
রাইসার গলায় একটু টান শোনা গেলো,
“আমি রাগারাগি করি কবে?”
“করিস না কবে সেটা বল…”
“দেখো ভাইয়া, এটা ঠিক না।”
“কোনটা ঠিক না?”
রাইসার মনে হলো কল ধরবে না করেও এখন অনেক কথা বলে ফেলছে। এতক্ষণ অস্বস্তি লাগে নি। এখন আবার শরীর কাঁপছে। রাইসাকে চুপ থাকতে দেখে অরূপ জানতে চাইলো,
“কথা বলছিস না যে?”
“নাহ্, তেমন কিছু না।”
রাইসার ইচ্ছা হচ্ছে কলটা কেটে দিক। কিন্তু ঠিক কি বলে কাটবে বুঝতে পারছে না। অরূপ কানাডা যাওয়ার পর কয়েকমাস বেশ ভালোই কথা হতো ওর সাথে। কিন্তু আস্তে আস্তে কথা কম হয় আর এখন তো কথা বলতে গেলেই কেমন একটা বোধ হয়।
অরূপ কাশলো। রাইসা বললো,
“তোমাদের ওখানে ঠান্ডা?”
“নাহ।”
“তাহলে কাশছো যে?”
“কাজ করছি তো, হঠাৎ গলা শুকিয়ে এলো।”
তারপর দুজনেই চুপ। নিরবতা ভাঙলো অরূপ,
“রাইসা?”
“হ্যাঁ?”
“তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস, তাই না?”
এই কথাটায় কি আছে রাইসা জানে না। কিন্তু কথাটা শুনে হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন খা খা করতে লাগলো। অরূপ বললো,
“মানুষ কেনো বড় হয় বল তো? আমরা ছোটো সময়েই তো ভালো ছিলাম। আমাদের হাসি-ঠাট্টা, খেলা-ধোলায় কোনো বাঁধা ছিলো না, আর না ছিলো আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব। বড় হয়েই যত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তোদের সবাইকে ছেড়ে এই ব্যস্ত জীবনে!…..”
অরূপ থেমে গেলো। গলাটা ভিজে আসছে ওর। রাইসারও এমনটাই হচ্ছে। কতদিন দেখা হয় না ভাইয়াকে! ঠিক কতদিন?

জড়তা কাটাতে কথা বললো রাইসা,
“ভাইয়া!”
অরূপের ভালো লাগলো খুব। রাইসাটা বড় হওয়ার পর থেকে ওর সাথে খুব একটা সখ্যতা দেখায় না। রাইসা অনেকটা ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলে তাই অরূপেরও তেমন কিছু মনে হয় না। আজ অনেকদিন পর রাইসার মুখে ভাইয়া ডাক শুনছে। ছোট বেলায় সারাক্ষণ ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ করে মেতে থাকতো।
অরূপের সাড়া না পেয়ে রাইসা আবার ডাকলো,
“ভাইয়া?”
“হ্যাঁ?”
“খেয়েছো?”
হাসলো অরূপ। বললো,
“হ্যাঁ, তুই খেয়েছিস?”
“হ্যাঁ। কি খেয়েছো?”
“আগে বল তুই কি খেয়েছিস?”
রাইসার বলতে ইচ্ছা করলো না। রাইসা আজ অরূপের পচ্ছন্দের খাবারগুলোই খেয়েছে। এমনিতেই সবার জন্য মন খারাপ করছে ওর। খাবারের কথা শুনে যদি আরো মন খারাপ হয়?
অরূপ আবার জানতে চাইলো, তাই বলতে হলো রাইসাকে।
“আমি তো বললাম এবার তুমি বলো?”
“নানাইমো বার…” [কানাডীয়ান বিখ্যাত চকলেট]
“শুধু চকলেট? আর কিছু খাও নি?”
“বাটার Tarts ও ছিলো।”
“ও আচ্ছা…”
তারপর আবার দুজনেই চুপ। কথা বললো অরূপ,
“রাইসা শোন।”
“হুম….”
“তোর গালের দাগটা কি এখনো আছে?”
রাইসার এবার খুব কান্না পেলো খুব। অরূপ যখন স্কলারশিপ পায় রাইসা তখন ক্লাস এইটে পড়ে। অরূপ কানাডায় যাওয়া নিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না। তাই ঐ সময়টায় বাসায় ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে রাগারাগি করতো অরূপ। এমন একদিনের ঘটনা;
অরূপ ভার্সিটিতে থেকে ফিরেছে। ঐদিন বাসার ঠিকানায় প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র এসেছে। অরূপের বন্ধুরা ওকে সবাই বুঝিয়েছে-কানাডা যাওয়ার ব্যাপারে। অরূপও কানাডায় যেতে চায়, ও এমন একটা স্কলারশিপ আশা করেছিলো৷ কিন্তু এখন মায়া, ভালোবাসা আর ক্যারিয়ার সব ভাবনায় এলোমেলো লাগছে ওর। কাগজপত্র গুলো রাইসা দিয়ে গিয়েছিলো অরূপকে। ঐ সময়টায় অরূপের খুব ভক্ত ছিলো রাইসা। অরূপ ভার্সিটি থেকে ফিরতে দেরি হতো রাইসার বায়না করা দেরী হতো না। প্রিয় চকলেট, পচ্ছন্দের রঙ পেন্সিল, অনলাইন ব্রাউজিং করে যা যা পচ্ছন্দ হতো সব বলতো অরূপকে। আর অরূপও আনন্দের সাথে সব পূরণ করার চেষ্টা করতো। বিজ্ঞান আর গণিতের কোনো সমস্যা হলেও ছুটে আসতো অরূপের কাছে। অরূপ বুঝালে মনোযোগ দিয়ে বুঝতো, বকলে গাল ফুলাতো ঘরে এসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতো…..আরো কত কত মুহূর্ত!
রাইসা কাগজপত্রগুলো দিয়ে যাওয়ার পর অরূপ দরজা বন্ধ করে দেয়। এলোমেলো লাগছে খুব। কানাডায় না গেলেও খারাপ লাগবে, আর গেলও খারাপ লাগবে৷ মাথা হ্যাং হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আর রাফসা সে তো হাসপাতালে ডিউটিটা দায়িত্ব থেকে করে বাকি কোনো কাজই তার দ্বারা হতো না। রাফসা এসেছে অরূপকে ডাকতে। খেতে গেলো অরূপ। সবার মুখই থমথমে। ঐদিন রান্না করেছিলো রাফসা। ভুনা খিচুরি, বেগুন ভাজা আর গোস্ত ভোনা। সবঠিক ছিলো। অরূপের খেতে ইচ্ছা করছিলো না। উঠে যেতে চাচ্ছিলো। তারপরও সবাই জোর করায় রেগে থালায় হাত ধুয়ে উঠে যায় সে। রাফসারও আর খাওয়া হয় না। রাইসা বুঝতে পারে নি, এ সময় ভাইয়াকে ঘাটানো উচিত না। তারপরও সে যায় অরূপের ঘরে। জোক বলছিলো অরূপের সামনে। যেনো অরূপের মন ভালো হয়। রাইসা ছোটো, ও ছোটো মানুষের মতোই ভাইয়ার মন ভালো করার চেষ্টা করে। রাগ আরো বেড়ে যায় অরূপের। ভালোভাবেই বলে রাইসাকে চলে যাওয়ার জন্য। রাইসাকে শুনে না। বরং তার প্রিয় চকলেট জোর করে অরূপের মুখে পুড়ে দিতে চায়। অরূপ ধমক দেয় রাইসাকে। রাইসা চলে যেতে নেয়। আর ঠিক তখনি অরূপ তার সামনে থাকা কাচের শপিচ ছুড়ে দেয় পেছনদিকে। রাইসার হাত থেকে একটা চকলেট নিচে পড়ে গিয়েছিলো। সেটাই তুলছিলো রাইসা, যা অরূপের নজরে পড়ে নি৷ আর আচমকা সে কাঁচের জিনিসটা গিয়ে পড়ে রাইসার ডান গালে। কাচের জিনিস ছুড়লো অথচ শব্দ হলো না। তাই পেছনে তাকালো অরূপ। চমকে গেলো সে। থরথর করে রক্ত ঝড়ছে রাইসার গাল থেকে। আর রাইসা ভয়ে কান্না করাও ভুলে গেছে। কাঁপছিলো শুধু………..

আজ এতো বছর পর অরূপ সেই দাগটার কথা জিজ্ঞেস করায় কান্না আসছে রাইসার। সব ঘটনা মনে থাকে আমাদের, কিছু মুহুর্তের দাগও রয়ে যায় শরীরজোড়ে। অথচ সময়ের সাথে সাথে প্রিয় মানুষগুলোই পাশে থাকে না। অরূপ বললো,
“কি রে? দাগটা এখনো আছে?”
রাইসা পানি খেলো। সময় নিয়ে বললো,
“এমনিতে দাগ বুঝা যায় না। একদম সরু হয়ে গেছে এখন। তবে লম্বালম্বি কানের দিকে সরে এসেছে কেউ ভালো করে খেয়াল করলে বুঝা যায়।”
“আর তুই যে ছোটো সময় কাকাইকে অনুসরণ করে সেভ করতে গিয়ে কেটে ফেলেছিলি মনে আছে তোর?”
এই কথায় হাসলো অরূপ। রাইসা লজ্জা পেলো। অরূপ আর কথা বাড়ালো না। বললো,
“আচ্ছা, ঠিক আছে ঘুমিয়ে পড়। আমি কাজ করি।”
রাইসার খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো আরেকটু কথা বলুক। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না। ফোন রেখে কাঁদলো কিছু সময়। আচ্ছা! জীবনটা এমন কেনো? কাছের, আপন আর ভালোবাসার মানুষগুলো কেনো সব সময় পাশে থাকে না? কেনো?
অপরপ্রান্তে অরূপ! সে অবশ্য কাঁদলো না। ছেলেদের বুকের ভেতর হয়তো ব্ল্যাক হোলের মতো কিছু একটা আছে নইলে বুকের ভেতর এতো কষ্ট এতো যত্ন করে কি করে শোষণ রাখে ওরা। একদম ব্ল্যাক হোলের মতো। গ্রহ, নক্ষত্রগুলো ব্ল্যাক হোলের মুখের সামনে যেমন বাচ্চার মুখের চকলেটের মতো গলে যায় তেমন কষ্টগুলোও ছেলেদের বুকের ভেতর কেমন জানি তলিয়ে যায়, কান্না হয়ে আর ঝড়ে পড়া হয় না৷
অরূপ গ্যালারিতে ঢুকে সবার ছবি দেখলো। আম্মু, বাবা, নতুন বউ, কাকাই, অলিক, দাদু, দাদুন, দাদা, দাদাভাই, রাউনাফ, আলিভা, পিউমনি, ফুপি আর ছোট্ট রাইসা। অরূপ মুচকি হাসলো – সবার বর্তমান ছবি তার কাছে আছে শুধু রাইসাটারই নেই। রাইসা ছবি তুলে না। বাড়ির প্রতিটা মানুষের সাথে ভিডও কলে কথা হয়, রাইসা অবশ্য কখনো ভিডিওতে আসে না। তারপরও ফোন স্ক্রিনে ওদের দেখে মন ভরে না। বরং আপনজনকে দেখার তৃষ্ণা বেড়ে যায় আরো বহুগুন।

প্রেমঘোর ২
পর্ব : ছয়
লেখক : নার্গিস সুলতানা রিপা

রাউনাফকে গতরাতের ঘটনার জন্য বকা শুনতে হয়েছে নৌশিনের কাছে। রাইসা সকালে খুব একটা কথা বলে নি। ভার্সিটি চলে গিয়েছে। বাসায় ফিরে চোখের সামনে রাউনাফকে দেখতে পেলো না। এতক্ষণ তো স্কুলে থাকার কথা না। সকালে মন খারাপ ছিলো৷ এখনো কি মন খারাপ ওর? ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হলো রাইসা। মায়ের ঘরে গিয়ে দেখলো রাউনাফ নেই সেখানে। নৌশিন কাপড় গুচ্ছাচ্ছে। রাইসাকে দেখে বললো,
“কখন আসলে?”
রাইসার এই এক স্বভাব নিজের ঘরে ডুকে শুক বা না শুক কিন্তু মায়ের ঘরে এলে যে কোনো অবস্থাতেই সে বিছানায় শুয়ে পড়ে। একই কাজ করে রাফসার কাছে গিয়েও৷ তবে সেখানে জেঠু থাকলে শুয় না। কিন্তু মায়ের ঘরে বাবাই থাকলে তো কথা নেই! আর বাবাইয়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ার মজা হাত ছাড়া করে না রাইসা। রাইসাকে বালিশে মাথা রেখে বললো,
“এইমাত্র আসলাম।”
“কফি দিতে বলবো?”
রাইসা চা পচ্ছন্দ করে না। সবার সাথে বসলে একটু-আধটু খায়। তাছাড়া একা খাওয়ার কথা উঠলে শুধু কফি। রাইসা না জানালো – কফি খাবে না। জানতে চাইলো,
“রাউনাফ কোথায়?”
“ওর জন্য নতুন স্যার রাখা হয়েছে একটা। অলিকের ঘরে পড়ছে।”
“ও, আজকেই এলো?”
“হ্যাঁ।”
“আমি ভাবলাম ওর আবার মন খারাপ নাকি।”
নৌশিন হাসলো। বললো,
“মুখ ভার করেই ছিলো৷ কাছে আসছিলো না।”
রাইসা চোখ বাঁকা করে তাকালো নৌশিনের দিকে। তারপর টানা গলায় বললো,
“তারপর তোমার ছেলেকে কাছে আনার জন্য কি করলে তুমি?”
রাইসার কথায় রাগে আভাস। নৌশিন হাসলো৷ উঠে বসলো রাইসা। বললো,
“আর হাসতে হবে না তোমাকে। তোমার তো খালি ছেলে আর ছেলে….”
বিছানা থেকে নেমে গেলো রাইসা৷ ওড়নাটা টান দিয়ে মাথা থেকে নামিয়ে হনহন করে হাটা শুরু করলো,
“আমি ভার্সিটিতে গেলেই ওনার ছেলেকে আদর করতে মন চায়….”
রাইসা দরজার বাইরে যেতে পারলো না। নৌশিন আটকে ফেললো। গাল টেনে দিয়ে বললো,
“ভার্সিটিতে পড়ে মেয়েটা এখনো কেমন বাচ্চামো করে! আল্লাহ্!”
রাইসা কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,
“তুমি ওকে আমার আড়ালে আদর করেছো!”
নৌশিন রাইসার কপালে চুমু খেলো,
“এই যে আমার মা- টাকেও আমার বাবার আড়ালে আদর করলাম।”
রাইসা ফিক করে হাসলো। বললো,
“একটাই দিয়েছো ওকে?”
“মাইর খাবি এবার। ছোটো ভাই না তোর?”
“আম্মু!”
রাইসা চোখ বেঁটে তাকালো মায়ের দিকে। রাইসাকে ওর ছোটো ভাই-বোনেরা তুই করে ডাকে এতে কিছুই বলে না সে। কিন্তু আম্মু-বাবাই, জেঠু-জেঠুমা মোদ্দাকথায় বড়রা তুই করে ডাকলে ভালো লাগে না ওর।
নৌশিন বললো,
“আদর করে তুই ডেকেছি একটু। কি হয়?”
“অনেক কিছু হয়।”
“কি হয়?”
“উফফ! আম্মু। আমার ভালো লাগে না।”
“আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে। আর ডাকবো না। ভাত খাবে তো?”
“না, আজকে ক্লাস শেষ করে গাড়িতে এসে দেখি আলিভা বসে আছে।”
“আলিভা আজও তোমার ক্যাম্পাসে গিয়েছিলো?”
“ওর সপ্তাহে তিন দিন আমার ক্যাম্পাসের পাশে প্রাইভেট থাকে। ঠিক ক্যাম্পাসের পাশে না, ঐ রাস্তা দিয়েই যেতে হয়।”
“ও, বাইরে খেয়েছো ওকে নিয়ে?”
“না, গাড়িতে উঠে দেখি – কাঁদছে সে।”
নৌশিন ভয় পেলো একটু। আলিভা একটু ছেলে-মানুষ। বুঝে কম আর খুব সহজ সরল। আর আজকাল যা অবস্থা চারপাশের। মেয়েদের নিয়ে বড্ড চিন্তা হয়।
নৌশিন ব্যতিব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলো,
“কেনো? কি হয়েছিলো?”
রাইসা বসলো খাটে। বললো,
“সিরিয়াস কিছু না।”
“তাহলে? স্যার বকেছে?”
“না, ওর একটা ক্লাসমেট কথার প্রসঙ্গে খাটো বলেছে ওকে। রীতিমতো ইনসাল্ট করেছে নাকি।”
“ও মা! এটা আবার কেমন কথা? খাটো নিয়ে ইনসাল্ট করার কি আছে! তারপর?”
“তারপর আর কি। ও কিছু বলতে পারে নি, কেঁদে চলে এসেছে।”
“বাসায় দিয়ে আসো নি ওকে?”
“হ্যাঁ, ওখানেই খেয়ে এসেছি।”
“আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে। মন ভালো হতো।”
“আমি বলেছি আসতে। চারটা সময় হাফিযা আসবেন বললো।”
“ও, তোমার রিদি আন্টি বলেছিলেন আমাকে সেদিন। আজকে আলিভা কোরআন খতম দিবে। তাই যে হাফিযা কোরআর শিখিয়েছিলো ওকে, ওনিই আসবেন।”
“এজন্যই এলো না।”
“আচ্ছা, সন্ধ্যায় রাউনাফ আর অলিককে নিয়ে একবার ঘুরে এসো ওদের বাসা থেকে। ভালো লাগবে ওর।”
নৌশিন রাইসাকে সন্ধ্যার পর কোথাও পাঠাতে চায় না। আজ চাইলো। তার কারণ হচ্ছে আলিভা। প্রত্যেকটা মানুষের একটা মন খারাপ করার জায়গা থাকে। আলিভা দেখতে মাশাল্লাহ। তবে তার উচ্চতাটা কম, চার ফিট দশ ইঞ্চি। এর চেয়ে আরো বহুগুণ খাটো মানুষ আছে দুনিয়ায়। তবে সাইকোজি বলে প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা কিছু বিষয় থাকে। আলিভার ক্ষেত্রেও আছে। বড্ড হাসি-খুশী প্রাণবন্ত এই মেয়েটার সমসস্ত হাসি একটা বাক্যেই শেষ হয়ে যায়, “মেয়েটা খাটো।” আলিভা জানে ও দেখতে খুব ভালো। আর পাঁচ-দশটা সুন্দরী লম্বা মেয়ের চেয়ে ওর চেহারা অনেক মায়াবী। কিন্তু তারপরও কি একটা অদ্ভুত ব্যাপারে “খাটো” ডাকটা শুনলে কষ্ট হয় ওর খুব। কান্নাকাটিও করে।

রাইসাদের দেখে আলিভা বেশ খুশি হয়েছে। অলিক আর রাউনাফ বাসা থেকে বের হতে পেয়ে আনন্দে আছে বেশ। চার-ভাইবোন আড্ডা দিলো বসে। রিদি সবার জন্য নাস্তা বানালো; পাস্তা, চকলেট, পুডিং। রাইসা চকলেট আর পুডিং অল্প খেলো। ঝালঝাল পাস্তার কাছে পুডিং আর চকলেটের কোনো দাম নেই রাইসার সামনে। আলিভা অবশ্য বিপরীত। সে ঝাল সহ্য করতে পারে না। রাইসার পাস্তা খাওয়া দেখে তাকিয়ে রইলো আলিভা। খাওয়া শেষ হলে বললো,
“তোর মুখে ঝাল লাগে না আপুনি?”
হাসলো রাইসা৷ বললো,
“লাগবে না কেনো?”
“এতো ঝাল সহ্য করিস কি রে! আল্লাহ্!”
আবারো হাসলো রাইসা। জবাব দিলো,
“তুই যেভাবে এতো মিষ্টু সহ্য করিস, ঠিক সেভাবে।”
মিষ্টির মতোই মিষ্টি করে হাসছে আলিভা। কি সুন্দর লাগছে! রাইসা তাকিয়ে রইলো। এই সৌন্দর্য কি আর পাঁচটা পাঁচ ফিট চার-পাঁচ ইঞ্চি কোনো মেয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম? রাইসার অবচেতন মন উত্তর দিলো;
“একবিন্দুও না। বরং হাজারগুণ বেশী।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here