#প্রেমজাল
পর্ব ০২
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
-“লেটস ট্রাই সামথিং নিউ সুইটহার্ট! আর ইউ রেডি টু গেট পানিসমেন্ট ফোর বিটরে মি? (Let’s try something new, sweetheart! Are you ready to get punishment to betray me)”
একটু আগে সাওয়ার নেওয়ার সত্যেও ইতিমধ্যে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মনে মনে সাহস জুগিয়ে কিছু না শোনার ভান ধরলাম। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পাশ কাটাতেই আয়ান পিছনে থেকে খপ করে হাত ধরলে ফেললো। আমি ২/৩ বার হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম। যতই ছাড়াতে চাই ততই যেনো আকড়ে ধরে। বাধ্য হয়ে মৌনতা কাটিয়ে শান্ত গলায় বললাম,
-“ছাড়ুন”
-“হাতটুকু ধরার অধিকার আমার আছে এজ এ লিগ্যাল হাসবেন্ট (As a legal husband) অপপ্স এগ্রিমেন্ট হাসবেন্ট” ভরাট কন্ঠে বললো আয়ান।
আমি আরেকবার হাত ছাড়াতে চেষ্টা করাতেই আয়ান হ্যাচকা টান দিয়ে তার সাথে মিশিয়ে নিলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় উনার খুব কাছাকাছি চলে গেলাম। আমাদের মাঝে মাত্র চার ইঞ্চি দূরত্ব। রীতিমতো আমার হাত-কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। নিশ্বাস যেনো ক্রমশ প্রগাঢ় হচ্ছে। হার্টবিট খুব দ্রুত বেগে চলচ্ছে। এর আগে কোনো উনার এতো কাছাকাছি আসেনি। এমনকি কারোর এতো সংস্পর্শে যাওয়া হয়নি। আমি আলতো ভাবে উনার বুকে হাত রেখে সরাতে চাইলাম। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ থাকলে নিঃসন্দেহে সেন্সলেস হবো। মরার একটু তো সরলোই না, আরো যেনো কোমড় চেপে কাছে টেনে নিলো। কপালের চুল বেয়ে পানি গলা পর্যন্ত ভিজে চুপ চুপ।
আয়ান কপালের অবাধ্য ভিজে থাকা চুল গুলো কানে পিছনে গুজে দিলো। এখন যেনো উনার উষ্ণতা আমাকে গ্রাস করছে। উনার গরম নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পরছে। আমি আর সহ্য না করতে পেরে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। উনার উত্তপ্ত হাওয়ায় আমার কাধ ছেয়ে যাচ্ছে। উনি আমার কানের কাছে নিজের মুখ এনে তার থুতনি আমার কাধে রাখলো।
-“ইগনোর!! সেটাও আমাকে? কেনো রে? আমি কি তোর অই লাফাঙ্গা আশিক এর থেকে দেখতে খারাপ? যে আমার দিকে ফিরেও তাকাস না।….. (একটু থেমে) কে জানি এসেছিলো? কি জানি নাম অই ছেলেটার? অহ হ্যা আকাশ। দেখে আসিস কালকে কেমন। হয়তো সরকারি কোনো জেনারেল হাসপাতালের বেডে আধমরা পরে আছে কি না কে জানে?” বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাড়ালো।
আয়ানের বলা কথাটা কানের দুয়ারে কড়া নারতেই সারা শরীর যেনো শিউরে ওঠলো। আমি অবাক চাহনিতে উনার দিকে তাকালাম। এই বজ্জাত ব্যাটা নিশ্চিত সাইকো। কে না কে দেখতে এসেছে বলে হাসপাতালের বেড পর্যন্ত ঘটনা গড়াবে।
আচমকা উনি আমার মুখ ফুক মারলেন। সাথে সাথে উনার মুখ ও নাকের গরম হাওয়া আমার মুখমন্ডলে বিচরণ করতে লাগলো। উনার এমন বিব্রতকর কান্ডে চক্ষু আমার চড়কগাছ। অস্থিরতা চরম মাত্রায় উপছে পরছে। আয়ান আমার এই অবস্থা দেখে ঠোঁট চেপে ভিলেনি হাসি দিলেন। শার্টের প্রথম দুইটা বোতাম খুলতে খুলতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমার চোখ যেনো অটোমেটিক মার্বেলের আকার ধারণ করতে উপক্রম। আমার শরীর যেনো ক্রমশ অবশ হয়ে যাচ্ছে। পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে আছি। মানুষটার চোখ-মুখে রম্যতার ছাপ। সে আমার কাছে এসে ঝুকতেই দ্রুত কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেলাম। উনি এগিয়ে আসছেন আর আমি পিছনে যাচ্ছি। পিছিয়ে যেতে যেতে এক পর্যায় দরজার সাথে মিইয়ে গেলাম। হাত কচলিয়ে যাচ্ছি আনমনে। উনি আরো আমার সামনে এসে দাড়ালো। অস্বস্তিতে উশখুস করে সরে যেতে চেষ্টা করতেই উনি উনার বলিষ্ঠ দুই হাত খানা দরজার দুইপাশে ভর দিয়ে রাখলেন। উনার শীতল তুখর চোখ আমার চোখেতে আবদ্ধ। খুব আস্তে আস্তে হৃদ স্পন্দন রেসপন্স করছে। হয়তো অক্সিজেনের ঘাটতি হচ্ছে চারদিকের থমকা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রভাবে। উনাকে দেখলে হৃদয় কোণে এমন অজানা অনুভূতি সায় দেয় কেনো? কেনো পারি না তাকে প্রত্যাখ্যান করতে? কেনো অজানা মায়ার টান আমাকে আটকে রাখছে? তাহলে আমি কি উনার প্রতি অনুভূতি প্রবণ হয়ে পরলাম?
আয়ান আমার ভাবনার সুতো কেটে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-“জানেমান!! আমার জিনিসকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টার অপরাধে তোমার হবু বরের এক পা তো কবরে রেখে এসেছি। এখন তোমার সাথে কেমন ট্রিট করবো? দেবী চৌধুরানীর ডাকাত দলের মতো হিংস্র টাইপ নাকি…
আমি উনাকে থামিয়ে মাথা নিচু করে মিহি গলায় বললাম,
-“সরুন! আমার সামনে থেকে নাহলে কিন্তু…
এবার আয়ান আমার কথায় ব্যাঘাত ঘটালো। উনি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বললো,
-“কেনো আমাকে দিয়ে হয় না? আদ্র কে লাগবে নাকি? ডাকবো আদ্রকে? তুই ডাক আদ্রকে”
ইতিমধ্যে উনার চোখ আগ্নেয়গিরি লাভার মতো টগবগ করছে। এই বুঝি আমাকে তার চোখ দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করবে।
আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব দিয়ে হুংকার করে উঠলেন।
-“না সরলে কি করতে পারিস কর”
উনার তীক্ষ্ণ জোরালো কণ্ঠে আমার কানের পর্দা ফেটে যাবে মনে হচ্ছে।
আমি কটাক্ষ করে আনমনে হাত কচলাতে কচলাতে।বিড়বিড়িয়ে বললাম,
-“ব্যাটা পুরাই আস্ত বজ্জাত। তিল থেকে তাল হলেই খালি আদ্র ভাইকে টানে”
উনি আমার কথা শুনতে বা বলতে পারলো কি না কে জানে। আমাকে অবাক করে উনার দুই হাতে আমার দুই হাত আকড়ে ধরলো। আমি বোকা বনে উনার দিকে ফ্যাল ফ্যাল কতক্ষণ চেয়ে রইলাম।
-“ইটস টাইম টু ডু সামথিং ইন্টারেস্টিং, সুইটহার্ট ( It’s time to do something interesting, Sweetheart) ওয়ানা স্ট্রাট?” বলে চোখ টিপ মারলো।
আয়ানের কথা শুনে রীতিমতো আমার কান দিয়ে ধোয়া ছুটছে। নিশ্চিত গালেও রক্তিম আভা ফুটে ওঠেছে। আগের থেকে যেনো দ্বিগুণ কাপাকাপি বাড়তে লাগলো। কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। উনি একপ্রকার টেনে বিছানায় বসালেন। এখনো উনার হাতে আমার হাত আবদ্ধ। উনি একচেয়ালি কি করতে চাইছেন? আমার সাথে কি হতে চলেছে? আমার গবেট মার্কা মাথায় কিছুই যে ঢুকছে না। আমি উনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকালাম। আমি থমথমে গলায় কিছুটা অবাক চাহনি নিয়ে বললাম,
-“আপনার ইনটেশন কি? আপনি এখানে বসছেন কেনো?”
আয়ান আমার কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলো। মনে হচ্ছে আমার কথায় বেশ মজা পেলে। আমি ভ্রু কুচকে বিরক্তি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।
-“বাহ রে! বিয়ে করলাম আর বাসর করবো না”
আমি দাঁড়িয়ে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলাম। খুব দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ওঠা নামা করছে। আমি নিজেকে স্বাভাবিক করতে করতে বললাম,
-” আ…আ..আপনার মা..মাথা টাথা ঠিক নেই”
পিছন থেকে আয়ান হাত টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলেন। এমন আচরণ করবে ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। এখন তো মনে আজকেই ইন্না নিল্লাহ না হয়ে যাই। এই বুঝি প্রাণ পাখি উড়াল মারলো। উনি আমার মুখের অপর উবু হতেই আমার ছটফটানি বেড়ে গেলো। আমি চাতক পাখির মতো এদিক ওদিক ফাক ফোকড় খুজতে লাগলাম। সুযোগ পেলেই ফুড়ুথ করে উড়ে যাবো।
-“অনেক শখ না এই চেহারা সবাইকে দেখানো? তাই তো মনের ভেতর কোনো ভয়-ডর নেই। ঢেং ঢেং করে বসা হয়েছিলো না? আজ সারা রাত আমি তোকে দেখবো” ভাবলেশহীন ভাবে বললো আয়ান।
আমার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেলো৷ মনের মাঝে এক নাম না জানা অনুভূতি রাশিগুলো উথাল-পাতাল হয়ে গেলো। আনমনে বিছানার চাদর আকড়ে ধরলাম।
-“আই সওয়ার ( I swear), আরেকবার ঠোঁট কামড়াতে দেখলে তোর খবর আছে। এমন দাপাদাপি না করে চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থাকবি। জাস্ট কন্টাক মাই আই অনলি”
আয়ানের এমন রামধমক টাইপ হুমকি শুনে ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলাম। মনে মনে দোয়া-দুরূদ পরলাম। আস্তে আস্তে কখন যে ঘুমপরী তার রাজ্যে নিয়ে গেলো কে জানে!
___________________
কাচের জানালা ভেদ করে সূর্যি মামার আলোক রশ্মি উঁকি ঝুঁকি মারছে। নব্য প্রভাতের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। চারপাশে স্নিগ্ধ হাওয়া বইছে। ঘুমের রেশ কাটিয়ে উঠতেই বুঝতে পারলাম কেবল মাত্র সকাল হলো। ঘুম থেকে আড়মোড়া দিয়ে উঠতে অনুভব করলাম কেও তার বাহু দিয়ে কোমর জরিয়ে আছে। পাশে তাকাতেই নিশ্চুপে তপ্ত শ্বাস নিলাম। হুমায়ুন আহমেদ ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাসে সেই কথাটি মনে পরে গেলো। আসলেই হয়তো বিয়ের পর নতুন একজন যুবকের প্রান্ত ধারে এক বিছানায় ঘুমানোর মতো অস্বস্তিকর জিনিস আর দুটো নেই। আস্তে আস্তে হাতের বাধন ছাড়িয়ে নিলাম। আমি চাই না আবারো অতীতের বিষাক্ত ঘটনা পুনরাবৃত্তি হোক। আর তো মাত্র কয়েকটা মাস। যে যার নিজের রাস্তায় পাড়ি দিবে। কিংবা কয়েকদিন বাদেই লাল টুকটুকে বেনারসি পরে বউ সেজে রিয়া আ……..
#প্রেমজাল
পর্ব ০৩
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন
আস্তে আস্তে হাতের বাধন ছাড়িয়ে নিলাম। আমি চাই না আবারো অতীতের বিষাক্ত ঘটনা পুনরাবৃত্তি হোক। আর তো মাত্র কয়েকটা মাস। যে যার নিজের রাস্তায় পাড়ি দিবে। কিংবা কয়েকদিন বাদেই লাল টুকটুকে বেনারসি পরে বউ সেজে রিয়া আপুর আগমন হবে। ভাবতেই অজান্তে চোখের কোটর টলমল করতে লাগলো। অশ্রু কণা চোখের কিনারায় গড়িয়ে পরতেই মুছে ফেললাম। বড় বড় পা ফেলে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলাম ওয়াসরুমে।
_______________
“তোমার মতো লো ক্লাস মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? হাউ ফানি!! একচেয়ালি তোমার তো কোনো ক্লাসেই নেই। যে নাকি বিয়ের আগেই রুম ডেট করে পেট বাধিয়ে ফেলে শুধু মাত্র তার বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে, তাকে আর যাই হোক বিয়ে করা যায় না মিস রুহি। আমার কথা মতো কাজ করলে তোমারই ভালো হবে…(একটু থেমে) সমাজ তোমাকে পতিতা ও তোমার বাচ্চা কে জারজ সন্তান নামের কলঙ্ক দেওয়ার আগে এবোরশন করিয়ে নাও”
সামনে থাকা লোকটির কথা শুনে চোখ মুখ খিচে কান চেপে “না না না” চিৎকার করে কান্না করতে থাকে রুহি। কান্নারত এক অবস্থা থেকে চোখ খুলতেই সব যেনো ধমকা হাওয়ায় ভ্যানিশ হয়ে যায়। রুহি চোখ খুলে দেখে তার মাথার অপর সিলিং ফ্যান ঘুরছে। চারদিকে তাকাতে বুঝতে পারো কিছুক্ষণ আগেই সকাল হয়েছে। সে গভীর ভাবে কয়েকবার শ্বাস নেয়। রুহি বুঝতে পারে অই কথা গুলো তার দুঃস্বপ্ন এর কিছু বিষাক্ত অংশ। কিন্তু যদি সত্যি সত্যি বাস্তবেই এমন কিছু হয়। ইতিমধ্যে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা জমা হয়েছে।
রুহি তাড়াহুড়া করে বালিশের নিচ থেকে তার ফোন বের করে সেই চেনা পরিচিত নাম্বারটি ডায়েল করলো। বেশ কয়েকবার কল করার পরও কোনো রেসপন্স পেলো না সে। বিগত প্রতিবারের মতো “এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না” বার্তা টি ভেসে আসছে। ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই যেনো রুহি তার চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না। প্রত্যেক মেয়ের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তার সতৃত্ব। সে সবটুকু উজার তার মহা মূল্যবান জিনিস তারই ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রমাণ স্বরূপ তুলে দিয়েছিলো। যাকে সবচেয়ে আপন মানুষ ভেবেছিলো, তাহলে সেই কি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে প্রতারিত করলো?? রুহির তার পেটে হাত চেপে ডুকরে ডুকরে কান্না করতে লাগলো।
_______________
ছাদে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ পরিবেশের রৌদ্দুরের এক চিলতে রশ্মির মিষ্টি হাওয়া অনুভব করছে এক যুবক। প্রকৃতির এমন মনোরোম পরিবেশে সব গ্লানি কাতরতা যেনো মুছে যায়। হাতে তার ধোয়া উড়ন্ত কফি। মাঝে মাঝে আবার কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। চোখে তার প্রতিশোধের আগুন। সেই আগুনে অনায়সে অনেক জীবন নিমিষে ছার-খার হতে পারে।
_____________
বারান্দায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এখানে কাপড় শুকাতে দেওয়াও আরেক বিরক্তি। পায়ের পাতার উপর ভর করে উদ্যোগী হলেও সব চেষ্টা বিফলে গেলো। মনে এক চিলতে হতাশা নিয়ে আবার চেষ্টা করতেই কেও কোমড় জড়িয়ে ধরে শূন্যে তুলে ধরলো। মনে হচ্ছে হাওয়া তে ভেসে বেড়াচ্ছি।
আকস্মিক এমন হওয়ায় একহাতে ভেজা কাপড় আর অন্যহাতে দড়িটা আঁকড়ে ধরলাম। মনের কোণে বিশাল কৌতূহল নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই যেনো হৃদ স্পন্দন স্তব্ধ হয়ে গেলো। অটোমেটিক আমার ভ্রু কুচকে গেলো। পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।
-“তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর। আমার কাছে তোর জন্য সারাদিন নেই” কটাক্ষ করে বললো আয়ান।
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
-“আপ..আপনি!!”
-“আরেকটা টু টাং শব্দ করলে এর আছাড় মেরে বারান্দা থেকে ফেলে দিবো, ইডিয়েট” ধমকের স্বরে বললো আয়ান।
-“হুম করবেনই তো। আস্ত একটা বজ্জাত” মিনমিনিয়ে বললাম আমি। উনি শুনলেন কি না কে জানে!! তাড়াতাড়ি কাপড় ছড়িয়ে দিয়ে বিরক্ত একটা ভাব নিয়ে নামাতে বললাম। ও মা বলতে দেরি ফেলে দিতে দেরি হলো না।
-“আউউ!!” পা বুলাতে বুলাতে বললাম আমি।
হঠাৎ করে ফেলে দিবে আমি মোটেও বুঝতে পারি নি। হয়তো আমি নিজেই বেশি এক্সপেক্ট করেছিলাম। কোমরে ব্যথা না পেলেও পায়ে খানিকটা ব্যথা পেলাম। আমি আয়ানের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই উনি দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে দুই হাত গুজলো।
আয়ান বিদ্রুপ গলায় বললো,
-“অপপ্স!! পরে গেলি কীভাবে?”
উনার এমন হেয়ালি বানা কথায় মন চাইছে কয়েকটা কড়া করে গালি দিয়ে ইট মেরে ব্যাটার মাথা ফাটিয়ে দেই। অসভ্য পাজি লোক একটা!!
-“এমন মিউমিউ না করে, কিছু বলার থাকলে সোজাসাপটা ফোটাফট বল। আদ্র সামনে তো খই ফোটে” গম্ভীর কণ্ঠে বললো আয়ান।
এবার যেনো মেজাজ বিগড়ে গেলো। আমার কোনো কথা উনিশ থেকে বিশ হলেই আদ্র ভাইকে টানবে। খালি আদ্র আর আদ্র!! তাদের দেখে কেও বলবে না আয়ানের নিজের মামাতো ভাই আদ্রিয়ান আহমেদ ওরফে আদ্র। আদ্র ভাই কেও বলি হারি যাই কেমন বেঘুটে। যখন আয়ান থাকবে তখনি আমার সাথে আড্ডা দিবে। যতই হোক নিজের আপন চাচাতো ভাই বলে কথা। ইগনোর আর কতক্ষণ করা যায়। দু’জন যেমন দু’জনের দুই চোখের বিষ! কোনো কারণ ছাড়াই দুজন একে অপরকে সহ্য করতে পারে না। ঠিক কি কারণে তারা একে অপরকে এতো টা ঘৃণা করে শুধু তারা কেনো আল্লাহ মাবুদ ছাড়া এই পৃথিবীর কেও জানে না। তবে আমি কিছুটা উপলব্ধি করতে পারি। এমন একটা ভাব নেয় যে হয়তো একে অপরের প্রাণ ভোমরা নিয়ে নিতে চায়। উফ!! একদিকে আয়ান চৌধুরী আরেক দিকে আদ্রিয়ান আহমেদ!! আর আমি আহানা আহমেদ একজন অবলা নারী যে এদের চক্করে জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো।
আয়ান আমার ভাবনার সুতো কেটে চোখ সরু করে বললো,
-“আজ হঠাৎ সকাল সকাল গোসল করলি কেন? তোর ভাব সাব তো ঠিক লাগছে না। কালকে তো আমার সাথে ছিলি। আমার যতটুকু মনে আছে আমি তো তোর সাথে কোনো ইন্টিমেন্ট করি নি। তুই আমার ঘুমের ঘোরে ইজ্জত লুটে নেস নি তো?” ভ্রু নাচিয়ে বললো আয়ান।
আয়ানের মুখ স্পষ্ট রম্যতা ছাপ ফুটে ওঠছে। উনার কথা কর্ণপাত হতেই শরীর রাগে রিন রিন করতে লাগলো। এই লোকটা বেশ ঠোঁট কাটা স্বভাবের। মুখে যা আসে তাই বলে! শালা একদম লাগাম ছাড়া খবিশ!! রীতিমতো উনি আমাকে পচাচ্ছে। হায় আল্লাহ! না পারি কিছু বলতে আর না পারি সইতে। উনার প্রতি আমার ক্ষোভে নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে মন চায়। রাগে গিজ গিজ করতে করতে আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালাম।
উনি হঠাৎ আচমকা আমার দিকে ঝুকতেই মুখ কিছুটা পিছিয়ে নিলাম।
-“লিগ্যালি ৬ মাস আগে ছাড়াছাড়ি নিষেধ। সো অই সব এগ্রিমেন্ট ফেগ্রিমেন্ট বাদ দাও। যদিও হানিমুন করতে তো আর নিষেধ নেই। বউ হচ্ছে রোমান্স করার জিনিস, কাপ পিস না যে শো-কেসে সাজিয়ে রাখবো। ওয়ানা ইনজয় (Wanna Enjoy)” বলে উনি আমার কোমড় খুব শক্ত করে চেপে ধরে আমার বাম গালে শব্দ করে….
#চলবে…