প্রেমজাল পর্ব ৪+৫

#প্রেমজাল
পর্ব ০৪+০৫
জান্নাতুল মাওয়া মাহিমুন

-“লিগ্যালি ৬ মাস আগে ছাড়াছাড়ি নিষেধ। সো অই সব এগ্রিমেন্ট ফেগ্রিমেন্ট বাদ দাও। যদিও হানিমুন করতে তো আর নিষেধ নেই। বউ হচ্ছে রোমান্স করার জিনিস, কাপ পিস না যে শো-কেসে সাজিয়ে রাখবো। ওয়ানা ইনজয় (Wanna Enjoy)” বলে উনি আমার কোমড় খুব শক্ত করে চেপে ধরে আমার বাম গালে শব্দ করে চুমু খেলো। গালে স্পর্শ পেতেই জামা খামচে ধরলাম। ইতিমধ্যে আমার তো নাক-কান দিয়ে ধোয়া ছুটছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার চোখ মার্বেল আকার ধারণ করলো। ছিঃ! কি অশ্লীল লোক! এখন তো আমার অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা! মনে হচ্ছে কানের কাছে বাজছে ~ আমি জ্ঞান হারাবো…মরেই যাবো…

আকস্মিক ভাবে উনি হো হো করে হেসে উঠলো। আমি বুঝতে পারলাম না উনার এমন পাগলের ন্যায় উন্মাদের মতো হাসার অর্থ কি। অদ্ভুত লোক!!

আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়ে পারলাম না। আমার কোমর এখনো উনার বাহুডোরে আবদ্ধ। আমি উনার দিকে চোখ পাকড়িয়ে তাকালাম। কিন্তু এই ব্যাটার ছাড়ার কোনো নাম নেই। উনার যেমন কোনো ভাবান্তর হলো না। মনে হচ্ছে উনি যা করেছে স্বাভাবিক জিনিস। কিছুই হয় নি এখনো। পরিশেষে মৌনতা কাটিয়ে ত্যাজী গলায় বললাম,

-“ছাড়বেন কি না? আমি কিন্তু ফুপিমণিকে বলে দিবো। তার ছেলের মতি গতি আমার একদম ঠিক লাগে না”

আয়ান আমার কথার প্রতিত্তোরে চোখ সরু করে তাচ্ছিল্য হাসি দিলো।

-“তোর দ্বারা এতো পরিশ্রমি কাজ হবে না। শুধু ফোস ফোস করতে পারবি। আর আমি তোর ফুপিমণিকে ভয় পাই বলে মনে হয়? তুই বললে মসজিদ থেকে মাইকের এরেঞ্জ করি? একবারে শুধু মাম্মাম কেনো? পুরো এলাকায় মাইকিং করে বলে দিতে পারবি…(একটু থেমে) উম কি বলিস?” ভ্রু নাচিয়ে বললো আয়ান।

-“আপনি ভারী অসভ্য লোক” চোখ মুখ শক্ত করে বললাম আমি।

-“বাহ! তুই দেখি না চাইতেই ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছিস! যেহেতু আমি অসভ্য তাহলে একটু তো অসভ্যতামি করতেই হয়, তাই নয় কি?”

হায় আল্লাহ! এই ছেলের কথা শুনে আমি নিশ্চয় হার্ট এটার্ক করবো। কেমন ঠোঁট কাটা স্বভাবের লোক রে বাবা! এমন লাগাম ছাড়া কথা বলে দিব্যি মিটমিটিয়ে হাসে।

আমার নিরবতা দেখে আয়ান আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো।

“কি হলো? এখন মুখে বুলি ফুটে না কেনো?” বলে উনি ঠিক আমার মুখ বরাবর মুখ আনলেন। এতোক্ষণ কিছুটা ডিস্টেন্স থাকলে তাও এখন নেই। আমি আনমনেই শুকনো একটা ঢোক নিলাম।

“কি? এখন মুখ খুলানোর জন্য কি আদ্র কে লাগবে?” ভরাট কণ্ঠে বললো আয়ান।

আমি না চাইতেও মুখ ফুসকিয়ে বললাম,

-“আপনি আদ্র ভাই কে নিয়ে এতো অভার পজেসিভ কেনো? কিছু বলেই উনাকে টানেন” বলে কোনো রকম নিজেই নিজের মুখ চেপে নিলাম। ইয়া মাবুদ! আমাকে বাচাও! কি বলে ফেললাম। গত বার শুধুমাত্র উনার সামনে ভূলবশত “আদ্র” নামটা মুখে নিয়েছিলাম বলে ছাদে কড়া রৌদ্দুরে এক পায়ে দাড় করিয়ে রেখেছিলো। গুণে গুণে ২ ঘন্টা সেটাও খালি পায়ে। আজ তো দুষ্কর জিনিস জিজ্ঞেস করে ফেলেছি।

-“একটা রিভয়েলবারে ৬টা গুলি থাকে। দুই-তিনটা তোর মাথায় ফায়ার করলে কিছু হবে না” দাত কটমট করতে করতে বললো আয়ান।

একবার উনার দিকে এক পলক দৃষ্টি দিলাম। উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। নাকের ঢগায় লাল রঙের আভা ফুটে ওঠেছে। আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেললাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আয়ান হুংকার দিয়ে বললো,

-“ছোটবেলা থেকেই তোর অই নাগর আদ্র কে আমার সহ্য হয় না। কারণ ওর বরাবরের মতো অভ্যাস সবসময় আমার জিনিসের দিকে হাত বাড়ানো। যা আমার একদমি পছন্দ হয় না। সবসময় আমার জিনিসের দিকে এক্সট্রা ইন্টারেস্ট (Extra Interest) থাকবে কেনো? ওয়াই?”

উনার কথা শুনে আমি চোখ মুখ বন্ধ করে ফেললাম। লাস্টের কথা এতোটাই জোরে বলেছে যে কানের পর্দা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম। শরীর যেনো থরথর করে কাপছে।

আয়ান আমাকে ছেড়ে দিতেই পিট পিট করে চোখ খুললাম। উনি চোখ বন্ধ করে নিজেই নিজের চুল আকড়ে ধরলো। মূলত সে তার রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আমি কিছু বলতে যাবো তখনি কেও দরজায় নক করলো। সাথে মালতির জোরালো কণ্ঠ ভেসে আসছে।

-“আফামণি… আফামণি… ও আফামণি। ঘুম থেইকা উঠসেন নাহি?”

আমি আর আয়ান কে বললাম না। উনার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে রুমে এসে দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলতেই মালতি হুমড়ি খেয়ে পরলো। আমি মালতির দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালাম।

-“আফামণি আফনের ফুফিমণি আফনারে ডাক ফারে। এক্ষুনি আমার লগে আহেন” বলে মালতি চলে যেতে লাগলো। আমি একবার বারান্দার দিকে এক পলক তাকালাম। পরক্ষনে আমি মালতির পিছন পিছন ফুপিমণির কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।

রান্নাঘরে যেতেই দেখলাম ফুপিমণি ব্রেডে জ্যাম লাগাচ্ছে। আমি পিছন থেকে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম।

-“তাহলে আমার আহুপাখীর ঘুম ভাঙ্গলো?” আহ্লাদী কণ্ঠে বললো ফুপিমণি।

-“হুম ঘুম তো ভেঙ্গেছে কিন্তু অনেক ক্ষুদাও লেগেছে গো ফুপিমণি” ঠোঁট উলটে বাচ্চাদের মতো করে বললাম আমি।

-“আহারে তাই নাকি? কালকে রাতে তোকে ডাকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুই তো দরজা লক করে ঘুমাচ্ছিলি, তাই ডিস্টার্ব করিনি। আমি হাতের কাজ টা শেষ করেই তোকে খেতে দিচ্ছি” মুচকি হাসি দিয়ে বললো ফুপিমণি।

আমার কাছে ফুপিমণি হলো ওয়াল্ডের বেস্ট মা। ফুপিমণির কাছে থাকলে কখনো পর পর ফিল আসে না। যেখানে নিজের বাড়ি থাকলে ওয়াক্ত ওয়াক্তে কটু কথা শুনতে হয়। মনে হয় এটাই হয়তো আমার নিজের মা। সবসময় আগলে আগলে রাখে। জন্মের সময় মা মারা গেলেও কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয় নি ফুপিমণি। সব কাজিন দের থেকে বরাবরের মতো এতোটাই আদর-স্নেহ দিয়ে মাথায় তুলে রেখেছে আমাকে। আমার কাছে তো বান্ধুবীর থেকে কম না। তাই তো এইচ. এস. সি তে ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে এই নতুন শহরে পাড়ি জমাতে হয়। যদিও আপুর কাছে শুনেছি ফুপিমণি নাকি ছোট কালেই তার কোনো মেয়ে না থাকায় আনতে চেয়েছিলো আমায়। কিন্তু বাধ সেধেছিলো দাদিমণি। ইড়িং বিড়িং কথা বুঝিয়ে থামিয়ে দেয়।

ভাবনার মাঝেই ফুপিমণি ডাক দিলো খাবার খেতে। হঠাৎ চোখ জোড়া থমথকে গেলো সিড়ি বেয়ে নামতে থাকা ব্রাউন মণিযুক্ত যুবক কে দেখে। গায়ে ব্লাক জিন্স, ব্লাক জ্যাকেট, পায়ে ব্লাক কেডস, হাতে বরাবরের মতো ব্রান্ডের কালো ডায়েল ঘড়ি পরিহিত যুবকটি। চুলগুলো বারবার বাতাসে দোল খেয়ে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। উনি বারবার হাত দিয়ে পিছনে নিয়ে ঠিক করছে।

-“কোথাও যাচ্ছিস নাকি আয়ন?”

ফুপিমণির কথায় আমার হুশ হলো। হন্তদন্ত হয়ে ফুপি মণির পাশের চেয়ারে বসে পরলাম।

আয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সাবলীল ভাবে চেয়ারে বসতে বসতে বললেন,

-“ডেটিং করতে যাচ্ছি। বাসায় বসে থাকলে তো আর কেও পাত্রী-পক্ষ নিয়ে যেচে হাজির হবে না তাই। আমার জিনিস আমাকে খুজে নিতে হবে”

ফুপিমণি উনার কথায় মুচকি হাসলেন। কি ছেলে রে বাবা! মায়ের সামনে ডেটিং এর কথা বলে। আচ্ছা এখানে তো রিয়া আপু নেই। তাহলে কার সাথে যাবেন? হুহ!! যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে যাক কার কি? ডেটিং এ যাবেন ভালো কথা আমাকে যে ইন্ডাইরেক্টলি (Indirectly) পাত্র পক্ষ দের নিয়ে খোচা মারলেন সেটা সহ্য হলো না। আজব তো!! আমি কি বলেছিলাম বিয়ে করবো? আমাকে তো জোর করে বিয়ে দিয়ে অন্যের ঘাড়ে গচিয়ে দিতে চেয়েছিলেন দাদিমণি। যদিও ফুপিমণি নারাজ ছিলেন। উফ!! বড়জোর বেচে গিয়েছি।

-“তুই যখন বাইরে যাচ্ছিস তাহলে যাওয়ার সময় আহানাকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিস কেমন”

আচমকা ফুপিমণির কথা শুনে খাবার নাক-মুখে উঠে গেলো। সাথে সাথে মালতি সামনে পানির গ্লাস ধরলো। আমি এক চুমুকে সব টুকু পানি খেয়ে ফেললাম। ব্যাপার টা কেমন হলো? ফুপি মণির কান্ডে মনে হচ্ছে শিয়ালের কাছে মুরগি দিয়ে বলা হচ্ছে শিয়াল ভাই মুরগিকে হেফাজতে রাইখেন। হায় মোর খোদা!!

-“আমাকে কি কারোর ড্রাইভার মনে হয়? রহিম চাচা কে বলো নিয়ে যেতে। আমি পারবো না”

-“আহ, আয়ান! অকে নিয়ে গেলে কি কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে শুনি? রহিম ভাইকে একটা কাজে পাঠিয়েছি আমাদের যে কাল পরশু ঐ বাড়ি যেতে হবে কোনো তোর তো কোনো হেল-দুল নেই। তোকে আর কি বলবো তুই তো আর ঐ বাড়ির চৌ-কাঠ পাড় হবি না বলেছিস মা কে। কিন্তু কেনো বলেছিস শুনি?”

আয়ান যেনো শেষের কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।

আমি মিহি গলায় ফিসফিস করে বললাম,

-“আমি উনার সাথে যাবো না”

আয়ান বিরক্ত একটা ভাব ফুটিয়ে তুলে কটাক্ষ করে বললো,

-“তোমার অতি আদরে গড়ে তোলা বাদর ভাগ্নি কে বলে দাও তার হাতে খাওয়ার জন্য ২ মিনিট, রেডি হওয়ার জন্য ২ মিনিট আর বাইরে আসার জন্য ১ মিনিট। অর্থাৎ গুণে গুণে ৫ মিনিট দিলাম। ১ মিনিট হেল ফেল হলে আমি নিতে পারবো না”

আমি ফুপিমণির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। ফুপিমণি আলতো হাসি দিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানালেন। আমি নাকে মুখে তাড়াতাড়ি কোনো রকম খেয়ে রুমে চলে আসলাম। কীভাবে এতো তাড়াতাড়ি রেডি ভাবতে ভাবতেই ১ মিনিট চলে গেলো। লেডিস হ্যান্ড ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে নিলাম। একটা অফ ওয়াইট টপ্স এর সাথে সোনালী কালার কোটি নিয়ে পরে নিলাম। চুল আছড়াতে আছড়াতে ঘড়ি দেখতেই বুঝতে পারলাম নির্ধারিত সময়ের থেকে অল্রেডি ১০ মিনিট লেট। ব্যাগ আর ফোনটা নিয়ে নিচে নেমে আসলাম।

রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে একদিক ওইদিক তাকালাম। এক সাইডে কালো বাইকে হেলান দিয়ে মনের সুখে ফোন স্ক্রলিং করছে। চোখে তার কালো সানগ্লাস। পুরাই ব্লাক কিং লাগসে। হুহ! আমি উনার সামনে ব্যস্ততার ভান নিয়ে বললাম,

-“তাড়াতাড়ি চলুন”

উনি ফোন থেকে আমার দিকে চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“ঠিক ১৩ মিনিট লেট। এখন যদি গুণে গুণে পর পর ১৩ টা থাপ্পড় মারি। কেমন হবে জানেমান!!”

-“আহারে! জিএফ এর সাথে ডেটিং এ মিস হয়ে গেলো নাকি? “দ্যা ফেমাস ইউথ আইকন আয়ান চৌধুরী প্রেমে ব্যর্থ” কালকে যখন টিভিতে হেডলাইন উঠবে তখন কেমন হবে ভাইয়ায়ায়া” মেকি হাসি দিয়ে বললাম আমি। যদিও মনে মনে দোয়া দুরূদ পরসিলাম। যেকোনো সময় গালে ঠাস করে থাপ্পড় পরতে পারতো। কিন্তু অবাক করে দিয়ে শুধু “উঠ” বললো। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বাইকে উঠে পরলাম। অনেক ডিস্টেন্স রেখে বসলাম। আস্তে আস্তে বাইকের স্প্রীড বাড়তে লাগলো। আমার অপর সব জেদ বাইকের স্টেয়ারিং দিয়ে মিটাচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না। না চাইতেও আরেকটু চেপে উনার কাধে হাত রাখতে হলো। যেভাবে চালাচ্ছে পরে গেলেও উনার কোনো হুশ থাকবে না। মিনিট কয়েক এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম ভার্সিটির গেটে।

ভার্সিটি গেইটে নামতেই আয়ান ভরাট কণ্ঠে বললো,

-“আমি নিতে আসবো”

আমি রির্টান উত্তর দিতে গিয়ে দেখি ওমা উনি হাওয়ার বেগে বিলীন হয়ে গেলেন। ধ্যাত!!

পিছন ফিরতেই বন্ধু নামক জাতি রা আমাকে ঘিরে ধরলো। আমাকে নিতে আসেনি, এসেছে তো অই ভাবের ডিব্বা কে চোখ দিয়ে গিলে খেতে তা ভালো করে আমার জানা আছে।

-“অই শুন আহানা, তোর ভাইকে বলবি প্রতিদিন তোকে নিয়ে আসতে”

-“আয়ান কি তোকে ভার্সিটি শেষে নিতে আসবে?”

-“শুন না দোস্ত!! তুই তো আমার জানের জিগার দোস্ত। একটু উনার নাম্বার টা দে না রে”

একেক জনের কথা ভিমড়ে খেলাম। আমি স্বয়ং দাড়িয়ে আছি আমাকে পাত্তা দেওয়ার কোনো নাম নেই। যে চলে গেলো, তাকে নিয়েই পরে আছে। আমি সবার দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে চলে আসলাম ক্লাস করতে।

______________

ভার্সিটি শেষ প্রায় ১৫ মিনিট হলো। বেশিরভাগ মানুষ বাসায় চলে গেছে। আমার বন্ধুবী নামক ভিনদেশী রোহিঙ্গারাও আয়ানের নাম্বার না দেওয়ায় অভিমান করে চলে গেছে। আমিও জেদ দেখিয়ে পাত্তা দেই নি। এমন কাঠ ফাটা রোদে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা করছে। দূরে কোথাও রিকশা দেখছি না। আমি সবসময় হয়তো বেশি এক্সপেক্ট করে ফেলি। আমিও কীভাবে ভাবলাম আয়ান আমাকে নিতে আসবে! যেখানে আমাদের সম্পূর্ণ সম্পর্ক টিকে আছে এক টুকরো কাগজে। কিছু বললেই সো কল্ড ড্রামার মতো বলবে এতো কেয়ার, ওভার পজেসিভ সবকিছুই শুধু রেস্পন্সিবেলিটি ছাড়া কিছুই না। মনের কোণে এক রাশ অভিমান নিয়ে একটু সামনে যেতেই একটা গাড়ি পথ আটকালো। গাড়িটা চেনা চেনা লাগলেও এই মুহুর্তে চিনতে পারলাম না। গাড়ির দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসলো ফরমাল ড্রেস পড়া এক যুবক।

আমি আলতো হেসে বললাম,

-“আরে আদ্র ভাই আপনি?”

-“হুম আমি। একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং এ এসেছি। তুই এই গমগমে দুপুরে একা মেয়ে করিস?”

-“ভার্সিটিতে এসেছিলাম”

-“অহ! কালকে বাড়ি আসবি তো?…(একটু থেমে) আয় তোকে ড্রপ করি দেই। বাকি কথা না হয় গাড়িতেই হবে। রোদে দাড়িয়ে থেকে মুখ লাল হয়ে গেসে”

আমি পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে রইলাম। কি করার উচিত বুঝতে পারলাম না।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্র ভাই আবার বলতে শুরু করলো,

-“কোথায় থাকিস? হোস্টেলে সিট নিয়েছিস নাকি আয়া..”

আমি কটাক্ষ করে উত্তর দিলাম,

-“চৌধুরী ম্যানসন”

-“অহ! তাহলে তো ভালোই হলো। ফুপিমণির সাথেও দেখা হবে” উৎফুল্ল স্বরে বললো আদ্র ভাই।

আমি এবারো আলতো হাসলাম।

“তাহলে চল। যাও যাক” বলে আদ্র ভাই গাড়ির গেইট খুলে দিলো। আমি যেই না পা বারাবো অমনি কেও খপ করে হাত ধরে থামিয়ে দিলো। ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরতেই হৃদ স্পন্দন ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে লাগলো। আমি ভয়ে ঠোঁট……

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here