#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_৪
#নন্দিনী_চৌধুরী
৪.
রোদেলারা খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছে। রাফসান রোদেলাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর রোদেলা ছোট বাচ্চার মতো ভাইয়ের হাত থেকে খাচ্ছে। পাশে বসে মুন, রুবা, রাত সেটা দেখছে আর হাঁসছে। রোদেলারা নাস্তা করছিলো তখন ওদের দরজায় কেউ বেল বাজায়। রাত উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে একটা মেয়ে দাঁড়ানো। রাত মেয়েটাকে দেখে বলে,
রাতঃ জ্বী কে আপনি?
আদ্রিতাঃ জ্বী আমি আদৃতা খান। এটা কি আদ্রিয়ান খানের বাসা?
রাতঃ জ্বী। কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
আদ্রিতাঃ আপনি আমাকে চিনবেননা। কিন্তু আদ্রিয়ান, রোদেলা আমাকে চিনবে।
রাতঃ আচ্ছা আসুন ভিতরে আসুন।
রাত আদৃতাকে নিয়ে ভিতরে গেলো। মুন আদৃতাকে দেখে চিনে ফেললো। মুন উঠে আদৃতার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
মুনঃ আরে আপনি?
আদৃতাঃ জ্বী, ভালো আছেন?
মুনঃ জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
আদৃতাঃ জ্বী ভালো।
মুনঃ রোদেলা দেখ কে এসেছে। ডাক্তার আদৃতা আসছে।
রোদেলা ওপর সাইডে মুখ করে খাচ্ছিলো। মুনের ডাকে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে আদৃতাকে দেখে অবাক হয়। রোদেলা উঠে যায় আসতে করে। তার হেঁটে আদৃতার কাছে আসে। আদৃতা রোদেলাকে দেখে বুঝে সে প্রেগন্যান্ট। আদৃতার এটার দেখে ভালোলাগে। রোদেলা আদৃতাকে জিজ্ঞেশ করলো,
রোদেলাঃ আরে আপু আপনি? এখানে কোনো দরকার নাকি?
আদৃতাঃ হ্যাঁ, আমার ভাবি। আমার তো তোমাকে আর আমার ভাইকে দরকার।
আদৃতার কথা উপস্থিত কেউ বুঝতে পারলোনা। রোদেলা আদৃতার দিকে প্রশ্নসুচোক দৃষ্টিতে তাকালো।
আদৃতাঃ হ্যাঁ, রোদেলা। আমার ভাই আমার নিজের আপন ভাই তোমার স্বামী আদ্রিয়ান খান আমান। যাকে আমি সেই ছোট বেলায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর তারপর থেকে তার খোঁজ করছিলাম। আজ অবশেষে আমি জানতে পেরেছি আমার ভাই আর কেউ না আমার ভাই আদ্রিয়ান।
আদৃতার কথা শুনে রোদেলাসহ সবাই চমকে যায়। রোদেলা অবাক কণ্ঠে বলে
রোদেলাঃ কি বলছেন আপু?
আদ্রিতাঃ হ্যাঁ, রোদেলা এটাই সত্যি। আমার ভাই তোমার স্বামী। ভাইয়া কোথায় রোদেলা?
আদৃতার কথা শুনে রোদেলা পরে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই মুন ওকে ধরে ফেলে। মুন রোদেলা ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। তারপর রাতকে বলে ওর জন্য পানি আনতে। রাত রোদেলার জন্য পানি আনলো আর ওকে খাওয়ালো। আদৃতা বুঝতে পারলোনা যে হঠাৎ করে কি হলো? আদৃতা তাই মুনকে জিজ্ঞেশ করলো,
আদৃতা: কি হলো ওর?
মুন: তুমি আমার সাথে এদিকে আসো। তোমাকে কিছু বলার আছে।
আদৃতা মুনের সাথে অন্য রুমে গেলো। আর রাত রোদেলার পাশে বসে রইলো।
_______________________
হাতে গরম কফি নিয়ে রুহি আরিয়ানের রুমে আসলো। এখানে আসার পর আরিয়ানের সাথে ওর এখনো দেখা হয়নি। কাল আরিয়ান রাত করে বাসায় আসছে নীলাদ্রের সাথে। তাই আর দেখা হইনি। রুহি কফি নিয়ে আরিয়ানের রুমে এসে দেখে আরিয়ান ঘুমিয়ে আছে। আরিয়ানকে দেখলেই রুহির সব এলোমেলো লাগে। ভালোবাসার মানুষটা কাছে আসলে মনে হয় এমনি হয়। রুহি কফি নিয়ে আরিয়ানের কাছে গেলো আর ওকে ডাক দিতে লাগলো,
রুহি: আরিয়ান এই আরিয়ান ওঠো।
আরিয়ান একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো। রুহি এবার জোরে ডাকতে লাগলো,
রুহি: আরিয়ান, আরিয়ান উঠো। সকাল ১১টা বাজে।
পরিচিত কারো কন্ঠ শুনে আরিয়ান চমকে তাকালো। তাকিয়ে দেখে রুহি কফি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান উঠে বসে রুহিকে দেখে বলে,
আরিয়ান: রুহি তুমি? তুমি কোথা থেকে আসলা?
রুহি: আকাশ থেকে টোপকে পরলাম।
আরিয়ান:😒
রুহি: আরে আমাকে আংকেল আসতে বলেছে। তাই আমি এসেছি। কেন আমার আসাতে তুমি খুশি হউনি।
আরিয়ান: না তা না। ভালো করেছো তুমি এসে। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
আরিয়ান উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
রুহি আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই ছেলেটা কি কোনোদিন ওর মনের অনুভূতিগুলো বুঝবেনা? কতটা ভালোবাসে রুহি ওকে সেটাকি ও বুঝেনা। রুহি কফিটা টেবিলে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আরিয়ানের বুকে একটা নাম লেখা আরিয়ান সেটা স্পর্শ করলো। আরিয়ানের মুখের কোণে তাচ্ছিল্যের হাঁসি আসলো। কেউ ওর জন্য পাগল আর ও অন্য কারো জন্য পাগল।
আরিয়ান রেডি হয়ে নিচে চলে আসলো। রুহির আনা কফি দেখেও খেলোনা সে।
~এদিকে~
আদৃতা মুনের রুমের সোফায় বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। এতো বছর পর নিজের ভাইয়কে পেয়েও হারিয়ে ফেললো সে। বড্ড দেড়ি হয়ে গেলো আসতে। সেই এলো তবে ভাইটাকে আল্লাহ নিয়ে যাওয়ার পর। আদৃতাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে মুন। কিন্তু আসলে কি আর সে শান্ত হতে পারে। এতো বছর পর নিজের ভাইয়ের খোঁজ পেয়েও যখন তাকে না পায়।
মুন: আর কেঁদোনা প্লিজ।
আদৃতা: কিভাবে মানবো আমি এটা। আমার ভাই আমার কাছ থেকে ছোট বেলায় হারিয়ে গেলো। আর আজ এতো বছর পর তার খোঁজ পেয়েও আমি তাকে হারিয়ে ফেলি। এটা কেনো হলো বলো আমার সাথে।
মুন: এটাই হয়তো ভাগ্যের লেখা।
মুন আদৃতাকে শান্ত করে রুমের বাহিরে নিয়ে আসে। আদৃতা গিয়ে রোদেলার পাশে বসে। রোদেলার আদৃতাকে জরিয়ে কান্না করে দেয় আর মনে মনে বলে,
রোদেলা: মাফ করে দিও আমাকে। আমার জন্য আজ তুমি তোমার ভাইকে পেলেনা। আমার জন্য আজ সব হয়েছে। আমার জন্য না আমি পাচ্ছি তাকে কাছে না আমার সন্তান তার বাবাকে কাছে পাবে। আর না তুমি তোমার ভাইকে পেলে।
আদৃতা রোদেলাকে শান্ত করে বেরিয়ে আসে। মুন অনেক করে বলেছিলো থাকতে কিন্তু আদৃতা থাকেনা। আদৃতা সোজা চলে যায় আদনানদের বাসায় চলে যায়। এখন আদনান তার এই কষ্টের সময়ের পরম আপন।
~অন্যদিকে~
আরিয়ান নীলাদ্রের সো তে আজকে আবার আসছে। আজকেও আরিয়ানের গান দিয়েই সো শুরু হচ্ছে। রোদেলা আজকেও সো শুনছে। আরিয়ান গিটার হাতে গান ধরলো,
“Chalte chalte Iye puch lena”
“Hamse Kitni mOhabad hein na”
“chalte chalte iye puch lena”
“Hamse kitni mOhabad hein na”
“Jana cahe par jan lena”
“HamkO teri Jarirat Hei ha’
“ki ghut ghut kar ke khudko pi rahe hei ham”
“tumko keya bataye kese ji rahe hein ham”
“ghum se hO cuke hei ab to saio me ham’
“Sach hein iye ha magar”
“Tumse MOhabat Hei ha ”
“tumse mOhabat hei ha”
“Bas tumse ha”
“Bas Tumei ha”
আরিয়ানের গান শুনে আজকে মনে হচ্ছে কাউকে মনের গভীর থেকে ভালোবেসে গানটা সে গাইছে।
আরিয়ানের গান শেষ করে নীলাদ্র আজকে তার লিসেনারদের মধ্য থেকে প্রথক কলারের কল নিলো।
নীলাদ্র: হ্যালো কে আছেন আমাদের সাথে?
রাজু: হ্যালো ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম।
নীলাদ্র: ওয়ালাইকুমুস সালাম।
রাজু: ভাইয়া আমি ঢাকা থেকে রাজু বলছি।
নীলাদ্র: ওকে রাজু বলুন আপনার কি প্রশ্ন আছে?
রাজু: ভাইয়া আমি গত ৩ বছর রিলেশনের পর এখন আমার ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করছি। কিন্তু কিছুদিন ধরে সে আমাকে অবিশ্বাস করা শুরু করছে। আমাকে কথায় কথায় অবিশ্বাস করে। এখন আমি কিভাবে তাকে এই অবিশ্বাস থেকে ফেরত আনবো?
নীলাদ্র উত্তর দিতে গেলে আরিয়ান ওকে ইশারা দিয়ে বলে উত্তর ও দেবে। আরিয়ান রাজুর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শুরু করলো,
আরিয়ান: মিস্টার রাজু ভালোবাসায় যখন পূর্নতা নামক জিনিশটা আসে তখন ভয়, অবিশ্বাস একটু বেড়ে যায়। যখন সে আশা করা জিনিশটা আমরা মানুষ পেতে চলি তখন একটা ভয় অবিশ্বাস জন্ম নেয়। তেমনি আপনার দীর্ঘ সময়ের প্রণয় আজ বিবাহতে পূর্নতা লাভ করবে। তাই আপনার প্রিয়তমার মনে একটা ভয় এসেছে। আপনাকে হারানোর ভয়। সেই ভয় থেকেই এই অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। তাই আপনার করোনীয় এটা তাকে বিশ্বাস করানো আপনি তার আছেন আর তারই থাকবেন। তাহলে দেখবেন আপনার প্রিয়তমার মনে আর এই অবিশ্বাস থাকবেনা।
রাজু: জ্বী অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরিয়ানের উত্তর শুনে রোদেলারও ভালোলাগল। বাকিটা সো শুনে রোদেলা ঘুমিয়ে গেলো।
_______________________
আরিয়ান আর নীলাদ্র সো শেষ করে বাসায় আসে। আরিয়ান রুহিকে যতটা পারে ইগনোর করতে চায়। সে চায়না রুহি অহেতুক কষ্ট পাক। আরিয়ানের ইগনোর রুহি বুঝতে পারে। কিন্তু রুহিতো পারবেনা আরিয়ানের থেকে দূরে থাকতে। তার মারাত্মক আসক্তি হয়ে গেছে আরিয়ান।
.#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_৫
#নন্দিনী_চৌধুরী
৫.
সবার প্লানিং মতো আরিয়ানরা আজকে বান্দরবন যাচ্ছে। ওখানে ওরা প্রায় অনেক দিন থাকবে। আরিয়ান, নীলাদ্র, নন্দিনী, রুহি যাচ্ছে। রুহি, নন্দিনীতো খুব এক্সসাইটেড যাওয়ার জন্য। সকাল ৮ টায় ওরা বেড়িয়ে পরলো। আরিয়ানরা এখান থেকে গিয়ে একটা হোটেলে উঠবে। নিলাদ্রের ফ্রেন্ডের হোটেল ওটা। আগে থেকেই ওরা কল করে জানিয়ে রেখেছে ওদের ৩টা রুম লাগবে। একটায় আরিয়ান একা থাকবে। আর একটায় নীলাদ্র থাকবে। রুহি আর নন্দিনী এক সাথেই থাকবে বলছে। তাই আর ওদের জন্য আলাদা রুম নেয়নি।
অনেকটা পথ অনেকটা ঘন্টা জার্নি করে আরিয়ানরা চলে আসে বান্দরবন। পাহাড়ের উপরে ওদের হোটেল। হেঁটে হেঁটে ওরা উঠলো পাহাড়ে। হোটেলে গিয়ে নিজেদের রুমের চাবি নিয়ে যে যার যার মতো রুমে চলে গেলো। আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের জানালায় এসে দাঁড়ালো।
আরিয়ান: খুব ভয়ংকর কিছু অতীত জরিয়ে আছে এখানে। খুব শীঘ্রই ইতি টানবো তার।
আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে বাকিরা আসার পর ওরা চারজন ক্যান্টিনে যায় খাওয়ার জন্য।
~এদিকে~
রাফসানরাও আগামীকাল বান্দরবন যাচ্ছে। সাথে যাচ্ছে মুন, রোদেলা, রাত, রুবা। কাশু এখনো ওর বাসা থেকে আসেনি। পরিক্ষার আগে আর আসবেনা জানিয়েছে। রুবা আজকাল খুব বিষন্ন থাকে। আরাভের কথা খুব মনে পরে ওর। সত্যি আরাভ সেদিনের পর আসেনি রুবার সামনে। রুবাও চেয়েও পারছিলোনা আরাভের কাছে যেতে। রুবার বাবা রুবাকে বাসায় আসতে বলেছে। সে রুবার বিয়ে দিতে চাচ্ছে তাড়াতাড়ি। রুবা বাবাকে জানিয়েছে বান্দরবন থেকে এসে বাসায় যাবে। রোদেলা আদৃতাকেও ডেকেছে বান্দরবন যাওয়ার জন্য। আদ্রিয়ান নেইতো কি তাই বলে সে আদৃতাকে দূরে ঠেলে দিতে পারেনা। আদৃতা প্রথমে রাজী না হলেও রোদেলা রাজী করায়। আদৃতার সাথে আদনানও যাবে। আদৃতা সব প্যাকিং করে এই বাসায় এসেছে। এখান থেকেই সবাই এক সাথে যাবে।
_________________________
আশরাফ বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। মাত্রই লিজার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে উঠলো। লিজা চাদর গায়ে জরিয়ে শুয়ে আছে। আশরাফুলের ফোনে কল আসলো। আশরাফুল কল রিসিভ করতেই ওর লোকেরা ওকে জানায় ওর ঢাকার গোডাউনের সব মাল আগুনে পুড়ে গেছে। ওগুলা সব ওর চোরা মাল। প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েগেছে ওর। কথাটা শুনে আশরাফের মাথায় বাজ ভেঙে পরলো। আশরাফ বুঝতে পারছেনা ও কি করবে। আশারাফ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পরলো গোডাউনের উদ্দেশ্যে।
~অন্যদিকে~
আরিয়ান বসে আছে রুমে তখন ওর ফোনে ফোন আসলো। আরিয়ান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বলে,
অচেনা: স্যার কাজ হয়ে গেছে।
আরিয়ান: গুড। কোনো কিছু বাঁচেনি তো?
অচেনা: না স্যার। একদম সব শেষ।
আরিয়ান: ওকে। আর হ্যাঁ, সাবধানে থেকো তোমরা।
আরিয়ান কল কেঁটে বাঁকা হাসলো।
“তোমার সব শেষ করে তোমাকে পথের ফকির বানাবো। তারপর নিজের হাতে মারবো।”
আরিয়ান আবার একজনকে কল দিলো।
আরিয়ান: হ্যাঁ, সব ঠিক আছে? ওর খেয়াল রাখছো ঠিক করে?
…………………………..
আরিয়ান: আচ্ছা। আর ওকে বেশি টেনশন নিতে দিওনা। বাচ্চার ক্ষতি হবে এতে। ডাক্তার আমাকে জানিয়েছে ও অনেক দূর্বল। তাই পেশার যেনো না নেয়।
………………………..
আরিয়ান: আচ্ছা তাহলে তো ভালোই হলো। বান্দরবন যেহুতু আসছে তাহলে এখন আমিই রাখবো খেয়াল। আচ্ছা রাখো তাহলে।
আরিয়ান ফোন রেখে বাহিরে চলে আসে।
সন্ধ্যায়~
রুহি একটা শাড়ি পরেছে কালো কালারের। কিন্তু শাড়িটা পাতলা সিল্কের বলে পেট দেখা যাচ্ছে অনেকটা। রুহি বেশ সেজেগুজে আরিয়ানের রুমে আসে। আরিয়ান ল্যাপ্টপে কাজ করছিলো। রুহি রুমে নক না করেই চলে আসে। দেখে আরিয়ান ল্যাপ্টপে কাজ করছে। রুহি গিয়ে ওর কাছে ঘেষে দাঁড়ালো। আরিয়ানের পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি দাঁড়ানো। রুহিকে দেখে আরিয়ান আবার কাজে মন দিলো। রুহি এবার বিরক্ত হচ্ছে। একটা সুন্দরী মেয়ে ওকে আকর্ষন করার চেষ্টা করছে কোথায় ও মেয়েটাকে কাছে টেনে নেবে তা না কি করছে! রুহি বিরক্ত হয়ে আরিয়ানের হাত থেকে ল্যাপ্টপটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়। আরিয়ান রেগে বলে,
আরিয়ান: রুহি কি করছো? পাগল হয়ে গেছো নাকি?
রুহি: হ্যাঁ, পাগল হয়ে গেছি। তুমি আমাকে পাগল করে দিয়েছো। আমি তোমাকে কত করে বোঝানোর চেষ্টা করি আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমিতো আমাকে পাত্তা দেওনা। কেন আমাকে পাত্তা দেওনা তুমি। আমি কি দেখতে খারাপ! আমার মধ্যে কি নেই যে তুমি আমাকে ইগনোর করো?
আরিয়ান: দেখো রুহি, ফালতু কথা বলা বন্ধ করো। তোমাকে আমি নিজের বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবিনা।
রুহি: কেনো? কেনো আমাকে অন্য কিছু ভাবতে পারবেনা? তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো আরিয়ান?
আরিয়ান একটু চুপ করে বললো,
আরিয়ান: হ্যাঁ।
রুহি: কিহ! কে সে?
আরিয়ান:সময় হলেই জানতে পারবে। কিন্তু নেক্সট কোনোদিন আর এমন করলে তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বটাও থাকবেনা।
বলেই আরিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরিয়ানের কথা শুনে থমকে গেছে রুহি। আরিয়ান অন্য কাউকে ভালোবাসে। অন্য কেউ আরিয়ানের ভালোবাসা!
রুহি যেনো কথা বলতেও ভুলে গেছে। রুহি কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে আসে। নন্দিনী রুমে না থাকায় রুহি বালিসে মুখ গুঁজে চিৎকার করে কাঁদছে।
আজকে যে তার সব স্বপ্ন আশা ভালোবাসা আরিয়ান শেষ করে দিলো।
_________________________
ঠিক সকালে রাফসানরা বেরিয়ে পরলো বান্দরবনের উদ্দেশ্যে। রাফসান ওখানে ওর এক বন্ধুর ঠিক করা বাসায় থাকবে। পাহাড়ের মাঝে বাসা। রাফসানরা দীর্ঘসময় জার্নি করে ওদের বাসায় আসলো। বাসাটা চার রুম, তিন ওয়াশরুম, দুই বারান্দা বিশিষ্ট। রোদেলাকে এটাচড ওয়াশরুম আর বেলকোনি যুক্ত রুমটা দেওয়া হয়েছে। রোদেলার সাথে রাত থাকবে। রুবা আর আদৃতা এক রুমে থাকবে। আদনান অন্য রুমে আর রাফসান মুন এক রুমে। রাফসান সব সবাইকে বুঝিয়ে বাসায় কাজের লোক আগেই ঠিক করে রেখেছে সব ঠিক করে রাফসান ওর কাজে চলে যায়। রোদেলা রেস্ট নিয়ে খেয়ে ব্যালকনিতে আসে। ব্যালকনি দিয়ে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। সামনে হোটেল আছে সেটাও দেখা যাচ্ছে। রোদেলা বসে ছিলো রাত হাতে করে ফুসকা নিয়ে আসে রোদেলার জন্য। রোদেলা ফুসকা দেখে অনেক খুশি হয়। রাত রোদেলাকে ফুসকা বেড়ে দেয় তারপর রোদেলা ফুসকা খেতে থাকে।
রোদেলাদের বাসাটা দোতালা পর্যন্ত তাই নিচ থেকে উপরে সব দেখা যায়। রোদেলা খুশি হয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর আড়ালে কেউ সেটা দেখে খুশি হচ্ছে।
~বিকালে~
আদৃতা অনেক গুলো বাচ্চাদের জামা কাপড় খেলনা কিনে নিয়ে আসছে বান্দরবনের মার্কেট থেকে। রোদেলা সহ সবাই তো তা দেখে অবাক। রোদেলাতো আদৃতার কান্ড দেখে হা। আদৃতা হেঁসে বলছে,,
আদৃতা: প্রথম ফুপি হচ্ছি। ভাতিজি /ভাতিজির জন্য এসব না করলে হয়!
আদৃতা সব জিনিশ রোদেলার রুমে রেখে ফ্রেশ হতে যায়। রোদেলা জিনিশ গুলো দেখছে আর ভাবছে।
“আজকে আপনি থাকলেও এসব করতেন তাইনা? বেবিদের জন্য জামা কাপড় খেলনা সব কিনে রাখতেন। এই সেই জায়গা আদ্রিয়ান! যেখানে আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। এখান থেকেই তো আপনাকে আমি আলাদা করে দিয়েছিলাম।”
রোদেলা নিজের পেটে হাত বুলাচ্ছে আর বাচ্চাগুলোকে অনুভব করছে।
রোদেলার এখন ৬মাসে পা দিয়েছে। পেটের ভেতরের পুচকুরা নড়েচড়ে জানান দিচ্ছে তারা বড় হচ্ছে আস্তে আস্তে।
~এদিকে~
রুহি কালকের পর আর আরিয়ানের সামনে আসেনি। আর আরিয়ানও রুহির খবর নেয়নি। আরিয়ানের একটা সো পরেছে এখানে। আজকে সন্ধ্যায় সো। আরিয়ান সো এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
আদৃতা, রুবা, মুন, রাত বসে গল্প করছে।
আদৃতা: হেই শুনেছি এখানে আজকে একটা সো হবে। একজন ফেমাস সিংগারের। রুবা, রাত যাবা তোমরা?
রুবা: আমিতো এখানের কিছু চিনিনা।
রাত: উম যাওয়া যেতে পারে।
আদৃতা: হ্যাঁ। আমি, রুবা, রাত আর আদনান যাই কি বলো?
মুন: আচ্ছা যাও ভালো কথা তবে সাবধানে যাবা।
আদৃতা: আচ্ছা।
~সন্ধ্যা ৭টা~
আদৃতা, রুবা, রাত, আদনান বেরিয়ে পরেছে শোতে যাওয়ার জন্য। এদিকে রোদেলার ঘরে বসে খুব অসস্তি হচ্ছে। কেন জানি ওর মনে হচ্ছে আজ আবার কিছু হতে চলেছে।
#চলবে
.
.
.
#চলবে