প্রেমালঘ্ন পর্ব -২৫+২৬

#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৫
,
,
,
,
নতুন ভোরের আলো এসে পড়লো আরিফার উপরে।চোখ মেলে তাকাতেই চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো আরহামের ঘুমন্ত ঘামমিশ্রিত মুখ খানি। বাচ্চাদের নেয় ঠোঁট দুইটা কিঞ্চিৎ ফাক করে ঘুমুচ্ছে।আরিফার বড্ড ইচ্ছা করলো সে লাল ঠোঁট জোড়ায় স্পর্শ করতে। পরক্ষণেই নিজের ভাবনা কে ধিক্কার জানালো।নিজেকে আরহামের বাহু ঢোর থেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলো।

ঘড়ির কাটা ছয়টা বেজে তিরিশ মিনিট দ্রুত বিছানা ত্যাগ করে গোসল করে নিলো প্রথম দিন তার শশুড় বাসায় এর আগে এই বাড়িতে পা রেখেছিলো ভাগ্নি হিসেবে কিন্তু কাল এই বাসায় তার পদাপর্ন পরেছে এই বাসার পুত্র বধূ হিসেবে। এখন এই সংসার তাকেই সামলাতে হবে৷ গোসল করে বেরিয়ে এসে পরণে হালকা গোলাপি আর সোনালী মিশ্রণের শাড়ি।কোন রকম চুলের পানি ঝেড়ে চোখে কাজল লেপ্টে বেরিয়ে এলো।সিড়ি বেয়ে নামতে নামতেই মনে মনে তৈরি করে নিলো সকালের রান্নার তালিকা।ভাবনা অনুযায়ী কোমড়ে আচল বেধে কাজ শুরু করে দিলো।

______

সকাল বেলা ঘুম ভাংগলো আসফি ভাইয়ার ব্যালকনিতে। ঘাড় টা তার ব্যাথা করছে হালকা।হবেই না কেনো সারারাত এই ব্যলকনির চেয়ারেই তো মাথা ঠেকিয়ে ঘুম দিয়েছে।

—সাত সকাল বেলা মহারানী কই গেলো।

চোখ ডোলে রুমে চলে আসি।রুমে থাকা কফি মেকার থেকে কফি বানিয়ে নিচে যায়।সিড়ি শেষ ধাপ দিতেই দেখতে পাই ঘামে লেপ্টে থাকা শ্যামাঙ্গিনীর দিকে।ভিজা চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে কানে স্বর্নের দুল গলায় সোনার মালা। হাতে চিকন স্বর্নের চুড়ি নাকে ছোট ডায়মন্ডের নাক ফুল পাক্কা গিন্নি লাগছে।কপালের এক সাইডে আটা লেগে আছে।বার বার চুল গুলা কপাল থেকে সরানোর চেষ্টার করতেই আটা গুলো আরো লেগে যায়।

আসফি মুচকি হেসে এগিয়ে যায় তার কাছে। কোমরে গুজে রাখা শাড়ির আচল টা আলতো হাতে খুলে ফেলে।রুটি করার জন্য আটার ডো তৈরি করছিলো।আসফির এহেন কাজে হাত দুইটা থেমে যায় আখি জোড়া ভারি হয়ে বন্ধ হয়ে।নিশ্বাস অব্দি বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করে।ইশ কি সুখকর দম বন্ধ কর অবস্থা।

—কাজ করছি আপনি উপরে যান প্লিজ

—এতো সুন্দরী বউকে এইভাবে একা রেখে কেমনে যায় বল তো কিন্তু তুই তোতলাছিস কেন

—ছাড়ুন না কেউ চলে আসবে তো

—একটা চুমু দে চলে যাবো। আর একদিন ও আমার আগে উঠার কথা মাথায় ও আনবি না

—আমি এখন আর এই বাড়ির মেয়ে না এই বাসার বড় পুত্রবধূ আমার ও তো কিছু দ্বায়িত্ব আছে নাকি।

—কালকেই আমরা ঢাকা ফিরছে খেয়াল আছে সামনের সপ্তাহ থেকে তোর এক্সাম। এদিকে রাজশাহী টূ ঢাকা রোজ জার্নি করা আমার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছেনা আর বউ ছেড়ে থাকার মতো ছেলে আমি আসফি নই

—লোকে বউ পাগল বলবে

—যার যা ইচ্ছা বলুক কিন্তু বউ ছাড়তে রাজি নাই ভাই৷ অনেক কষ্টে পায়েছি আর হাত ছাড়া করছিনা দরকার পড়লে আচলের সাথে শার্ট গিট্টু দিয়ে রাখবো তবুও নো ছাড়াছাড়ি

—ইশ মহাশয়ের শখ কম না এখন যদি মরে যায় তখন কি কবরের ভিতর থেকে আচল টেনে বের করে টি শার্টের সাথে গিট্টু দিবেন

আমার রসিকতা করে বলা কথার বিপরীতে একরাশ নিশ্চুপতা গম্ভিরমুখ ফিরিয়ে দিলেন আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই হনহন করে চলে গেলেন উপরে বুঝলাম ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছি।এখন এই মহাশয়ের পিছনে যেতেও পারলাম না কিছুক্ষন পরেই সবাই নাস্তার টেবিলে হাজির হবে হাতে সময় নেই বেশি তাইতো আসফি ভাইয়ের দিকে খেয়াল না করেই রান্নাই মননিবেশ করলাম।

কিন্তু ওইদিকে যে প্রেমিক পুরুষ টা অভিমানের চাদরে মুড়িয়ে রেখেছে সেটা এই রান্নাঘরের চার দেওয়ালে থাকা রমনীটা বুঝতেই পারলোনা।

____

মেহমান রা উঠার আগেই তৈরি হয়ে গেলো আরিফার রান্না সবার আগে হাজির হলো আরহাম চিল্লিয়ে কাজের মেয়েকে ডাকছে কফি করে দেওয়ার জন্য মাথাটা তার ভিষণ ধরেছে।কালকে প্রথন বারের মতো মদের নেশায় নিজেকে আসক্ত করেছিলো।তাই হয়তো মাথা ব্যাথাটা অস্বাভাবিক লাগছে। মাথা নিচু করে কপালে দুই আঙুল ঠেকিয়ে বসে রইলো হঠাৎ চোখের সামনে ফর্সা মোলায়েম হাতে থাকা কফির মগ দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে।চোখ তুলে তাকিয়ে আরিফার হাস্য উজ্জ্বল মুখ টা দেখে থমকে গেলো কিছু মহূর্তের জন্য আখিজোড়া মস্তিষ্ক কাজ করা যেনো বন্ধ করে দিলো। হঠাৎ চোখ বন্ধ করে জোড়ে নিশ্বাস নিতে শুরু করে মাথার রগ ফুলে উঠে শাড়ি টা কোমড়ে গুজে থাকায় পেট টা অনেক টাই দৃশ্যমান। আর আরিফার পিছনেই কামুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরহাম এর দূর সম্পর্কের ভাই চোখ খুলে মাথটা হালকা বেকা করে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো কপালের রগ গুলো ফুলে উঠে লাল বর্ণ ধারণ করেছে।ছেলেটা সেটা দেখেই ভয়ে পালায় কিন্তু রক্ষে হয়না আরিফার।

আরহাম এক টানে কফির মগ নিয়ে ছুড়ে ফেলে মেঝেতে।চমকে উঠে আরিফা।প্রচন্ড আওয়াযে তার ভিতি রয়েছে একটু জোড়ে আওয়াজ তার সহ্য হয়না।

—কি মনে করেছিস তুই তোর মতো মেয়ের শরীর দেখে এই আরহাম জামান গলে যাবে তাহলে তোর ভাবনা ভুল। আর না এউ শাড়ি অলংকার এই নাক ফুল পরে কফি হাতে নিয়ে লাজুক হাসি নিয়ে তাকালে আমি তোকে বউ হিসেবে মেনে নিবো সেটাও তোর ভুল ধারণা।তোকে আমার জীবনে ঠায় দিয়েছি তোকে রাজরানী করতে নই আমার ঘৃণা সহ্য করার জন্য প্রতিনিয়ত আমার কাছে আসার ভুল এর শাস্তি দেওয়ার জন্য এই আরহাম কে চাওয়ার শাস্তি তুই হারে হারে পাবি আর ভুলেও আমার সামনে আসার চেষ্টা করবিনা। তোর ঠায় আমার সামনে শুধু রাতে হবে। উহু তোকে ভালোবাসার জন্য না তোকে আমার হিংস্রতার নমুনা দেখানোর জন্য। *wellcome to my hell sweetheart* তুই ছটফট করবি মৃতুর জন্য আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য কিন্তু না হবে তোর মুক্তি না হবে তোর মৃত্যু তুই সেচ্ছায় এসেছিস আমার জীবনে কিন্তু যাবি আমার ইচ্ছাতে।

আরহাম চলে যেতে নিলেই আরিফা তার হাত ধরে ফেলে
—কই যাচ্ছেন আরহাম। আপনি আপনার টা বলে ফেললেন এবার আমার টা শুনুন

—তুই,,,

—উহু এতোক্ষন আপনি বলেছেন আমি শুনেছি এবার বলার পালা আমার শুনার পালা আপনার।

—বড্ড বার বেরেছিস। ভুলে যাস না আমি চাইলে এই মহূর্তে তোর ছাটাই করার মতো ক্ষমতা রাখি।

—আই লাইক ইট আরহাম বাবু।কিন্তু আপনি এটা কি করে ভুলে গেলেন আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী আপনার থেকে রাগ জেদ কোনটাই আমার কম নেই বরং আমার আপনার থেকে দ্বিগুন রয়েছে উহু রাগ না ভালোবাসা।আপনি্ আমাকে যতোটা ঘৃণা করেন তার থেকে অধিক মাত্রায় ভালো আমি আপনাকে বাসবো।যে বিয়েকে আপনি জাহান্নামে পরিবত করতে চাচ্ছেন একদিন এই বিয়েকে জান্নাতে পরিনত করার জন্য কাতরাবেন মিলিয়ে নিয়েন যে রাত গুলোকে আপনি নিজের হিংস্রতার পরিচয় দিতে চাচ্ছেন একদিন সেই রাত গুলোর জন্য আপনি কষ্টে নিজের মাঝেই গুমরে মরবেন।এই আমি টাকে নিজের সামনে রাখার জন্য হবে আপনার শত প্রচেষ্টা।মিলিয়ে নিয়েন আরহাম বাবু।

আরহাম কিছু না বলে রেগে সেখান থেকে চলে গেলো ফোস করে নিশ্বাস ছাড়লাম।হাত দিয়ে ইশারা করলাম কাজের মেয়েকে কাছে আসার জন্য আমার ইশারা পেয়ে ষোড়শীকন্যা এগিয়ে এলো

—এখানে যা হয়েছে তা আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে ঠিক আছে।

মেয়েটি ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো।আমি মুচকি হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে পুনরায় কফি বানিয়ে মেয়েটির হাতে দিয়ে মা কে৷ ডাকতে চলে গেলাম।

_______

সবাইকে খাবার খাওয়ানো পর্ব সমাপ্তি হলেও নিচে নামলেন না আসফি আমি মৃদু হাসলাম। তার প্রেমিক পুরুষ যে বড্ড অভিমানী সে এই মহূর্তে হারে হারে টের পাচ্ছে। এক গাল হেসে পা বারালো তার আর তার প্রেমিক পুরুষ তথা তার স্বামির কক্ষের দিকে কিন্তু মহূর্তে পা জোড়া থেমে গেলো পিছনে থেকে আসা মেহেলী কন্ঠে।

চলবে!#প্রেমালঘ্ন
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৬
,
,
,
,
—আমার ছেলেকে আমার থেকে আলাদা না করলে কি হতোনা তোর

বড় আম্মুর এহেন কথায় থমকে গেলাম আমি। সত্যি কি আমি তার থেকে আসফি ভাইয়াকে কেড়ে নিয়েছে।কই তার তো তা মনে হয়না সে কোন দিন ও চায়নি তাদের দুইজন কে আলাদা করতে এইজন্যই তো সে নিজে দূরে চলে যেতে চেয়েছিলো তবুও যাতে তার জন্য বা ভাংগুক কোন সম্পর্ক তবুও আজ এই অপবাস কিভাবে মেনে নেই আমি।উনি কি জানেন না এতোদিনে দেখেন উনার ছেলে আর নিজের হাতে মানুষ করা মেয়েটির কষ্ট একে অন্য থেকে আলাদা থেকে।

—আমি কোন দিনও চায়নি বড় ম,,,(গলা কেপে উঠলো আখি বেয়ে গরিয়ে পরলো অশ্রু দানা সে যে বড় মা ডাকার অধিকার রাখেনা সেটা মুখেনা বললেও মহিলাটি তার কর্মে বুঝিয়ে দিয়েছে) বড় কাকী আপনার থেকে আপনার ছেলেকে আলাদা করতে। মায়ের মূল্য আমি হারে হারে বুঝি।একজন মায়ের স্পর্শ মাথার উপর না থাকলে জীবন টা কতোটা দুর্বিষহ হয়ে যায় তা একটু হলেও জানি বড় কাকী। যে যন্ত্রণায় আমি ছোট বেলায় পার করেছি কি ভাবে সে যন্ত্রণা কে আসফি ভাইয়াকে ভোগ করতে দি।

—তাহলে কেনো আমার ছেলে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে বল আমাকে। কেনো সে আমাকে মা বলে ডাকেনা।কেনো্ আমার দিকে চোখ পড়তেই ক্ষভে চোখ ফিরিয়ে নেয় সে জবাব আছে তোর কাছে

—সব জবাব তো আপনি নিজেই বড় কাকী।আপনার কাছেই আছে সব উত্তর আছে।আপনি ভুল করে নিজের ছেলের সে জায়গায় আঘাত করেছেন যে জায়গা তে ভিষন দুর্বল।

বড় আম্মুর কথা শুনার জন্য আর দাড়ালাম না এই মহূর্তে এখানে উপস্থিত রইলে আমি নিজেকে হয়তো ধরে রাখতে অক্ষম হবো।আর বড় মা ও হয়তো নিজের ক্ষভ ঝারবেন আর তাতেই শুরু হবে আরেক দফা প্রলয়।ছেলে আর মায়ের মাঝে যা সে চায় না।

রুমে প্রবেশ করতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম হাসিও পেলো বড্ড।পাগল টা উলটো দিকে ফিরে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে মাথার উপরে ফ্যান চলছে অনায়াসে।রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাপড়।হেসে কাপড় গুলো সরিয়ে টি টেবিলে খাবারের ট্রে রাখলাম।এগিয়ে গেলাম ঘুমানোর অভিনয়ের অভিনেতার কাছে।তারা শরিরে মুড়িয়ে রাখা কাথার নিচে নিজেকেও ডুবিয়ে নিলাম। হাত রাখলাম অভিমানে পরিপূর্ণ হয়ে থাকা হৃদয় টির উপরে।এই জায়গায় যে আমার প্রশান্তি।

—হাত সরিয়ে দিয়ে দূরে সরে গেলাম এখন কেন এসেছে এই নির্দয় প্রিয়সী।সে কি জানতোনা তার ক্ষতির কোন কথায় এই প্রেমিকের বুকটা সহ্য করতে পারবেনা। তবুও কিভাবে ওই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো তার মৃত্যুর কথা।এটা কি অন্যায় নয় উহু শুধু অন্যায় নয় ঘোর অন্যায়।আর এই অন্যায়ের শাস্তি অবশ্যই সে পাবে।

—আসফি ভাই

———৷

—এতো রাগ নিজের প্রিয়সীর উপরে এটা কি ঠিক উম। এই এই দিকে ফিরে তাকান না আপনার রেগে যাওয়া রক্তিম মুখশ্রী দর্শন তো দেন

বুঝলাম মহাশয় মানবেনা এইভাবে বসিয়ে দিলাম ধারালো দাতের কামড়।কিন্তু তাতেও কি এই শক্ত গম্ভির ব্যাক্তিটির কোন ধ্যান আছে।উনার উপর দিয়েই উনার বুকের দিকে ঘুরে গেলাম।ডুবিয়ে দিলাম উনার অধর জোড়ায় নিজের অধর।মিটাতে লাগলাম নিজের শুধা। চোখ তুকে তাকালাম উনার দিকে।উনার গম্ভির আখিজোড়া ধীরে ধীরে শীতল হয়ে তাকিয়ে রইলো আমার আখি জোড়ার দিকে। কিন্তু আমার সাথে তাল মিলালো না। রেগে গেলাম বসিয়ে দিলাম কামড়।রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চোখ টিপলাম।

_______

শাড়ি পড়ে গয়না পরে নিজেকে সং সাজিয়ে বসে আছে সোফায় আরষ্ঠ হয়ে আরিফা। ঘুমটার আড়ালেই কপাল বেয়ে ঝড়ে পড়ছে ঘামের বিন্দু কণা।ঘোমটার আড়ালেও আখি জোড়া খুজছে প্রিয় মানুষের মুখটা। সে মুখ না দেখা অন্দি যে তার শান্তি নাই তা তার জানা কিন্তু সে মুকজ টা যে সে দেখতে পাবেনা সেটাও সে জানে।তবিও প্রচেষ্টা যদি একটাবার সামনে পড়ে মুখ খানা। হঠাৎ কানে আসে প্রতিবেশি মহিলাদের কথোপকথন।

—এই আপা বউয়ের মুখটা থেকে ঘোমটা সরান দেখি। কোন চাঁদ কন্যা নাকি বেদনী তুলে আনলেন ছেলের জন্য

—হ্যা হ্যা দেখতে তো হয়।

এবার শুনা যায় শাশুড়ী মার গলা তিনি হেসে উত্তর দিলেন

—চাদকন্যার থেকে কোন অংশে কম নয় আমার ছেলের বউ। রুপে গুনে সব দিক দিয়ে সে অতুলনীয়।এই যে সকাল সকাল সবার জন্য আহার তৈরি করেছে যা তৃপ্তি সহকারে পরিবারের সকল মানুষ গ্রহন করেছে।

শাশুড়ী মা উঠে এসে মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে দিলো আমার। মাথা নতুজাত করে নিলাম সাথে সাথে।

—বাহ বউমা তো সুন্দর আছে

প্রায় সবার মুখ ই প্রশংসাই পঞ্চমুখ।হঠাৎ তাদের মধ্যে একজন মহিলা বলে উঠলো

—কি আর হবে এই রুপ দিয়ে।সে তো বিয়ের দিনে বউকে রেখেই বের হয়ে গেলো।

—হ্যা তাইতো বিয়ে কি আরহাম কে জোড় করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।এখনো নিচে নামেনি।

—সেটাই তো

ধীরে ধীরে এই নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। সবার মাঝে চাপা উত্তেজনা শুরু হয়ে গেলো।আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। কি বলবো কি বলার আছে এখানে। এদের বলা কোন কথাই তো মিথ্যা নই। জোড় করেই তো বিয়েটা হয়েছে।হয়তো আরহামের মা করেছে নয়তো তার বাবা মা। জোড় করেই তো হয়েছে এই বিয়ে। আরহাম তো চায়নি তাকে বিয়ে করতে।চায়নি তাকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে জোড় করে বিয়ের এরচেয়ে বেশি কি বা পাওয়া যাবে।

—বিয়েটা প্রেমের বিয়ে হলে কেমনে জোড় করা হয় আন্টি বলুন তো আমাকে।

সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকায় কন্ঠের মালিকের দিকে।হ্যা কন্ঠ টা আরহামের।আরিফা যেমন কোন ঘোরে চলে যাচ্ছে।আরহাম তার হয়ে কথা বলছে।

—বাবা সেটা বলা হয়নি আসলে

—ছোট অবুজ শিশু নই আমি আন্টি। আমার বাসায় এসে আমার স্ত্রীকে নিয়ে কোন কথা সহ্য করবোনা আমি।হ্যা তাকে আমি তখন ছেড়ে গেছিলাম আমার বন্ধুর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তাকেই রক্ত দিতে গেছিলাম। বউ আমার ঘড়েই থাকবে দরকার পড়লে ২৪ ঘন্টা তাকে নিজের কোলে নিয়ে সদর দরজা থেকে বেরুবো সদর দরজা দিয়ে ঢুকবো আমার তাতে কোন সমস্যা নেই।আর আমাদের সম্পর্ক নিশ্চয় ওর ভিজা চুল দেখেই আন্দাজ করতে পেরেছেন নিশ্চয়।

সবার মুখ যেনো মহূর্তে তালা বদ্ধ হয়ে গেলো।আমি তখনো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম এ কোন আরহাম এ কোন নতুন রুপ তার। সে তো চেয়েছিলো সে অপমানিত হক কষ্ট পাক তাহলে কেনো তার হয়ে কথা বলছেন তিনি ব্যাপারটা বধ্যগম হলোনা আরিফার।

____

প্যাকিং শেষ করে দাঁড়িয়ে আছি।আজই নাকি বেরুবে আসফি ভাই জরুরি তলব পড়েছে নাকি কলেজে কালকে কলেজে উপস্থিত থাকতে কোন উচ্চ পদের গেস্ট নাকি আসবে কলেজে। সেজন্য ভার্সিটির প্রধান অধ্যাপক চান সকল ছাত্র ছাত্রী টিচার সবাই যেনো এই অনুষ্ঠানে সামিল থাকুক।

—তৈরি তুমি

আমি ছোট করে উত্তর দিলাম হুম।আমার আসতে করে কথা বলা তে ভ্রু কুচকে তাকালেন উনি।আমাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলেন

—কি হয়েছে শ্যামাঙ্গিনী যে চোখে থাকার কথা তার অজস্র মায়া সে চোখে এই অস্থিরতার ছোয়া যে এই মানব টাকে বড্ড ভাবাচ্ছে।কেবো এজ কাজল কালো চোখে বিষাদ এর কারন কি আমি বউ সোনা।

—বড় কাকীর সাথে এমন ব্যাবহারের কারন কি আসফি ভাই

—তাকে বড় মা থেকে বড় কাকী বলার উদ্দেশ্য যেটা এবার চলো।

বুঝলাম এই ভাবে মানবেন না আসফি ভাই কিন্তু এখন আর তাকে ঘাটলাম না আমি।এই লোকটার ঠিক নেই কখন বলে ঘটিয়ে ফেলবে প্রলয়।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here