প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব -০২

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___২

‘ বিয়ে?’- ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠ নিশাতের।
ঘামে পিছন দিক হতে স্কুল ড্রেসের নীল জামাটা ভিজে পিঠে চিপকে পড়েছে। পা চুলকাচ্ছে। কিন্তু আঙুলের সহায়তায় চুলকানোর সময় নেই। ললাটের বিন্দু বিন্দু ঘামের একটা ফোঁটা সোজা বেয়ে এসে নাকে ঠেকল।

প্রহর ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস মুক্ত করে নিশাতের পা থেকে একদম মাথার চুল পর্যন্ত পরখ করে তুখোড়, গভীর দৃষ্টে। চাহনি টা চক্ষে বিঁধে নিশাতের। অভ্যন্তরে শিরা উপশিরায় ছলকে ওঠে রক্ত। নিমেষে সমস্ত তনু মনে হিম হিম ভাব। এমন করে কেন তাকাচ্ছে লোকটা? এত বছর পর কেন এলো গ্রামে?আসলো তো আসলো। আগের চেয়েও কঠিন হয়ে এসেছে যেন৷ কি চাহনি!সাদা পাঞ্জাবি পড়া দেহে দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে বারংবার।

প্রহর হাতের ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে সময় দেখে নিল। অনেক বছর পর গ্রামে এসেছে। রাজনৈতিক শক্তির প্রভাব গ্রামেও রয়েছে। মেম্বার, চেয়ারম্যান মিলে ছোটোখাটো একটা মিটিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তবে প্রহর আগ্রহী না মিটিংয়ে যেতে। উজ্জ্বল সাহেব ফোনের ওপর ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। বাবার এমন কাজে প্রচন্ড বিরক্ত সে। তার গ্রামে ফিরে আসার লক্ষ্য মেম্বারের সাথে মিটিং না, এসবের জন্য উজ্জ্বল সাহেবই চলে। মোবাইলটা বন্ধ করে নিশাতের দিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলে উঠল,

” বিয়ে বুঝিস না?ছেলেগুলোর সাথে প্রেমের জন্যই পিছন পিছন আসাতে মিটমিট হাসছিলি। প্রেম মানে বুঝিস তো?”

নিশাত নিশ্চুপ। প্রহর দাঁতে দাঁত কিটে আশপাশ দৃষ্টি বুলালো।৷ নিশাত সেটা বুঝবার আগেই হুট করে এক ঝটকায় ওর চিকন হাতটা মুচড়ে ধরলো সে। ঠেকালো ওর পিঠের পেছন নিয়ে। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল মেয়েটা। মুখ দিয়ে আহ সূচক ধ্বনি বেরিয়ে আসার পূর্বেই চাপা ধমকে ওঠে প্রহর। কন্ঠে আক্রোশ, প্রবল উত্তপ্ত ভাব,

” তুই চিনিস না আমাকে? কি ভেবেছিস আগে মা/র/লেও এখন আর মা/র/ব না?বড় হয়ে গিয়েছিস তাই ছেড়ে দেবো?
প্রেম করবি,টইটই করে পাড়া ঘুরে বেড়াবি?এলাকা ছেড়েছি অভ্যাস নই। তোর ভাইকেও ভয় পাই না আমি। তোর ভাইকে মে//রে পুঁতে দিলেও কারো নিচু গলায়ও শব্দ করার সাহস নেই। মনে করে নে পুরোনো কথাগুলো। আমি সেই ঘাড়/ত্যাড়া,উগ্র মেজাজি প্রহর যাকে দেখলে তোর হাঁটু কাপে। প্রেম করবি,অন্যের আদর নিবি তাহলে আমি কি ছোট থেকে ঘাস কাটছি?গরুর না ঘোড়ার?”

ভূমিকম্পের ন্যায় পরিবেশে নিশাত এক অবাক কান্ড করে বসল। ব্যথা,ভয় সব উড়িয়ে দিয়ে এত এত গুরুতর মুহুর্তে প্রহরের শেষ বাক্যে হেঁসে ফেলল ও। বলে না স্বভাব সহজে যায় না?ওর বেলায়ও হয়েছে তা। খুব বাজে অভ্যাসে অভ্যস্ত ও,সিরিয়াস মুডেও হেসে ফেলা। প্রহরের মেজাজ বিগড়ে গেল। হাতটা ঢিল করে দিয়ে টেনে গাড়ির কাছে নিয়ে আসল। বলল,” ওঠ। ”

নিশাত হকচকিয়ে গেল। গাড়িতে ওঠবে মানে?বাড়ির কেউ দেখলে আস্ত রাখবে না। এমনিতেই ব্যথায় হলদেটে ফর্সা মুখাবয়বের অবস্থা নাজেহাল,ফ্যাকাসে হয়ে ওঠেছে। এখন আবার প্রহরের আদেশে ওর কলিজা চুপসে যাচ্ছে। পরিবারের ভয়ের চেয়ে প্রহরের স্বভাব মা///রাত্মক খারাপ। রাগ ওঠলেই ঠুসঠাস থা/প্পড়। এ কারণে স্মরণিকা নিবাসে যেতে চাইত না, বুকের ধুকপুকানি নিয়ে যেত। কারণ স্বয়ং হাজির। হেঁসে ফেঁসে গেল। ঢোক গিলে, মিনমিন করে বলল,

” বাসায় যেতে হবে প্রহর ভাই। নয়ত আব্বা বকবেন। ”

” আর আমি তোকে বড় বিলে ডুবিয়ে মা//রব। যতক্ষণ না দম যাবে নড়ব না। “– হিসহিসিয়ে উঠে প্রহর।

নিঃশ্বাস ফেলার আগে দৌড়ে গাড়ির ভিতরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল নিশাত। তাড়াহুড়ায় ধপ করে পাশের সিটের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ল। নাকে ব্যথা পেল কিঞ্চিৎ। বুকটা এত পরিমাণ ধুকপুক করছে যে তার আওয়াজ সে নিজেও শুনতে স্পষ্টত। নিজেকে সামলে ঠিক হয়ে বসল তাড়াতাড়ি করে। লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার উপক্রম। প্রহর পাশের সিটে বসে বলে উঠল,

” যাক ভয় পাচ্ছিস আমাকে। ”
পরক্ষণেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” কত বছর গোসল করিস না রে নিশু?এত বাজে গন্ধ আসছে তোর গা থেকে। এখনও কি না গোসল করে বাথরুমে ঘুমিয়ে চলে আসিস?”

মুখের রং এর বদল হলো নিশাতের। এই কাহিনী ওর পিছু ছাড়বে না,একদম না। প্রহর ভাইও ছাড় দিল না। এক আকাশসম লাজে জর্জরিত করল। আসলেই অতিরিক্ত ঘামে গা থেকে উদ্ভট গন্ধ আসছে। একটা মানুষের সঙ্গে এত বছর পর দেখা হয়ে এমন পরিস্থিতি মানা যায়?অন্যান্য মানুষের ফুপাতো ভাইগুলো এমন করে?কথায় কথায় মা/রে?শরম দেয়?এত নির্দয় প্রহর ভাই আর কারো না হোক ও মনে মনে দোয়া করে। ছোট থেকে করে আসছে। মাঝের তিন বছরে শান্তি ছিল তাও শেষ হয়ে গেল।

কোনো একসময় কার কথা। নিশাত তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। শরতকাল চলছিল। প্রহর ভাই এসেছিল গ্রামে ভার্সিটি বন্ধ থাকায়। এসেই ওকে শিমুলকে দিয়ে ডেকে এনে দুই তিন টা বসিয়ে দিল গালে সপাটে। তারপর কিছু না বলে প্রস্থান করে। শক্ত হাতের থাপ্পড়ে ও কেঁদে কেটে মাটিতে বসে পড়ে। শিমুল প্রচন্ড ভয় পায় ভাইকে। সেদিন মে//রে চলে গেল কিন্তু কারণ বলল না। সবাইকে আদর করে, শিমুলকেও আদর করে,পিংকি কেও কিন্তু ওর সাথে কেন অমন করে এটাও জানে না নিশাত। ও কি প্রহর ভাইয়ের চক্ষু বিষ?
হুট করে সৌষ্ঠবপূর্ণ দেহ কাছে আসাতে ঘোর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে ও। প্রহর ওর খুব কাছে,অত্যন্ত নিকটে। হাত এগিয়ে আনতেই ভয়ার্ত হয়ে ওঠে,” কি করছেন?”

প্রহর টেনেটুনে সাদা স্কার্ফ টা খুলে ফেলল। মুহুর্তে নিশাত সেঁটে যায়। চিৎকার করে ওঠবে সেই সময়ে চোখ রাঙালো সে,” চুপ। চিল্লাবি না। ছোট বেলায় শুধু হাফ পেন্ট পড়ে আমার সামনে আসতি। এখন তুই বড় হয়েছিস সেটাও আমি দেখতে পাচ্ছি। তোর ইজ্জত হরণ করার ইচ্ছে আমার নেই। কারণ তোর পেটুক বাপের প্যানপ্যান,ঘ্যানঘ্যানানি আমার সহ্য হবে না। ”

কথাটা বলে স্কার্ফ টা গলায় পেঁচিয়ে দিল। পুনরায় বলে,
” এখন একটু শান্তি পাবি। ”

সত্যিই ভালো লাগছে। চুলগুলো ঘেমে মাথাটা ধরেছিল খুব। প্রহর দু দিকে জানালার কাঁচ তুলে দিয়ে এসি অন করে দেয়৷ নিশাত আঁড়চোখে তাকালো উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারায়। কঠিন মুখোভঙ্গির প্রেমে পড়ে হয়তো প্রতিদিন অনেক রমণী। রাজনীতিবিদ প্রহরের ওপর প্রেমে পড়ার কতশত গল্প শুনে শিমুলের থেকে,ফেসবুকে কত পোস্টও তো দেখে। আচ্ছা প্রহর ভাইয়ের বউ কে হবে?এ নিয়ে অনেক চিন্তায় ও। কারণ বউকে খুলে বলতে হবে ছোট থেকে প্রহর ভাই দ্বারা কতটা অত্যা//চারিত সে। ভাবুক কন্ঠে প্রশ্ন করল,

” আমরা কোথায় যাবো?”
পাশ থেকে শক্ত জবাব আসে,” জানতে হবে না তোর। ”
নিশাত ভাঙা ভাঙা ভিজে কন্ঠে আওড়ালো,” আমি বিয়ে বসব না প্রহর ভাই। ”
” দেবো না। বিয়ের পর অনেক ঠ্যালা সামলাতে হয় তিলবতী। তুই পারবি না সেই ঠ্যালা সামলাতে। বেহুঁশ হয়ে পড়ে আমাকে খবরের হেডলাইন বানিয়ে দিবি। মুখে মুখে শুনব, ‘ রাজনীতিবিদ প্রহরের কারণে এক নিশু নামের চিকনচাকন ঘুমন্ত পরী বেহুঁশ। ‘ আরেকটু বড় হলে তোর বিয়ে পাক্কা। তোর পেটুক বাপও আঁটকে রাখতে পারবে না আমাকে। ”

হতভম্ব, হতবাক নিশাত। সবটা ওর মাথার ওপর দিয়ে গেল যেন। তবে অল্পস্বল্প লাজুক ভাব ঘিরে ধরল ওকে। সমস্ত কায়ায় শিহরণ। কারণটা হলো “তিলবতী ” নামটা। এই নামে মিশে আছে একরাশ লজ্জা ও অনেক গভীরত্ব।
—————————-
সৌরভ রুমের চেয়ারটা লা//থি মে/রে ফেলে দিল। রাগে কপালের রগ ছিঁড়ে যাবে যাবে অবস্থা। মোবাইলটা ছুঁড়ে মা/র/ল বিছানায়। শিমুল পেয়েছে কি?এই মেয়েটা এমন করছে কেন?কেন দিন রাত মেসেজ দেয়?পিচ্চি একটা মেয়ে আবেগে ঢুলুঢুলু অবস্থা, ভালোবাসার বুঝে কি?আর বুঝলেও কি পেয়ে যাবে ওর ভালোবাসা? এটা সম্ভব না। শেষ নিঃশ্বাস অবধিও সৌরভের দ্বারা এটা হবে না। যদি সেই বাড়িতে যেতে পারত তাহলে কষে দুইটা হাতের ছাপ ফেলে দিয়ে আসত দু গালে।

নিশাত সদ্য ফিরেছে। প্রহর নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে ওকে বাড়ি থেকে কিছু দূরে। কোনোদিকে নিয়ে যায় নি। ভাইয়ের রুম ক্রস করে যাওয়ার সময় দরজা খোলা থাকায় রাগ,মোবাইল ছুঁড়ে মা/রা টা চক্ষুদ্বয় এড়ালো না। ওকে প্রহরের সাথে দেখেছে কি?নয়তো হুট করে এত রাগ?সেখানে আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে রুমে আসল। দরজা বন্ধ করে কাঁপতে লাগল থরথর করে। পিংকি ওর দৌড়ে যাওয়া দেখে সৌরভের রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ল তড়িৎ গতিতে। শুকিয়ে যাওয়া কন্ঠে প্রশ্ন করে,

” কি হয়েছে সৌরভ ভাই?”
সৌরভ সচকিত হয়ে নিজেকে সামলে ফেলে। খুব ঠান্ডা গলায় বলে,” কিছু না৷ স্কুল থেকে এসে খেয়েছিস?”

পিংকির কখনও কষ্ট করে নিজের যত্ন নিতে হয় না। সৌরভ-ই ওর জন্য যথেষ্ট। নিয়ম করে খোঁজ রাখে লোকটা। প্রতি উত্তরে জানায়,

” হুম। নিশুকে দেখলাম দৌড়ে গেল তোমার রুমের সামনে থেকে। ভেবেছি ওকে বকেছো। কেমন কাঁপছিল। ”

সন্দিহান নজরে তাকালো সৌরভ। নিশু কাঁপছিল? তার মানে কারণ আছে। সে তো বকে নি তাহলে কারণ টা কি?

#চলবে,,,!

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আইডিতে রেস্ট্রিকশন থাকায় গল্পটা দিতে পারি নি। প্রথম পর্ব দেওয়ার এক ঘন্টা পরই রেস্ট্রিকশনে পড়ে যায় আইডিটা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here