প্রেমের হাতেখড়ি পর্ব -০৮+৯

#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:০৮
#ফাতেমা_জান্নাত(লেখনীতে)

আজকে প্রথম জান্নাত প্রণয় দের বাসায় এসেছে।আসার কারণ হলো শাহরিয়ার পাবেল মানে প্রণয়ের বাবা জুনায়েদ আজমীর ফ্যামিলি কে ইনবাইট করেছে।দুই বন্ধু একসাথে কব্জি ডুবিয়ে খায়না অনেক দিন হলো।তাই এই বন্দবস্ত করা।

রোকসানা কে রান্নার কাজে সাহায্য করছে রাহেলা আর আহ্লাদী মিলে।প্রণয়, পাবেল আর জুনায়েদ আজমী তিনজনে লিভিং রুমে বসে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।প্রান্তিক নিজের ঘরে।

জুরাইন আর জান্নাত মাত্র এসেছে প্রণয় দের বাসার ভিতরে। প্রণয় লিভিং রুম থেকে এক নজর তাকায় জান্নাতের দিকে।পরোক্ষণেই আবার নিজের নজর ঘুরিয়ে নেয়।জান্নাত চারদিকে চোখ ভুলিয়ে ভিতরের দিকে যেতে থাকে।

জুরাইন উপরে প্রান্তিক এর ঘরে চলে যায় জান্নাত রান্না ঘরের দিকে যেয়ে রোকসানা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।রোকসানা বুঝতে পেরে মুচকি হাসে।মেয়েটা কে তার খুব ভালো লাগে।নিজের তো মেয়ে নেই।জান্নাত কেই নিজের মেয়ে মনে করে তিনি।জান্নাত রোকসানা কে জড়িয়ে ধরে রেখেই বলে,

—কি করছো আন্টি?

—রান্না করছি মা।তুই কিছু খাবি?বানিয়ে দিই?

জান্নাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাহেলা রা’গ দেখিয়ে বলে,

—তোর কি কোনো দিন আক্কেল হবে না জান্নাত? দেখছিস আপা কাজ করছে।আর তুই কিনা জড়িয়ে ধরেছিস।তোর জন্য তো উনার হাত কে’টে যাবে পরে।

—থাক না রাহেলা। কিছু হবে না।কেনো বকছো মেয়েটা কে।

বলেই রোকসানা জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে।জান্নাত রোকসানা কে ছাড়িয়ে রাহেলার দিকে তাকিয়ে বলে,

—সত্যি করে বলো তুমি আমার আসল আম্মু কিনা? আমার তো এখন মনে সন্দেহ এর বীচ জন্মেছে।বার বার মনে হচ্ছে তুমি বাবার দ্বিতীয় বউ।নাহলে আমাকে সহ্য করতে পারছো কেন তুমি?শত মা বলে এতটা নিষ্ঠুর হবে তুমি?আমি ভাবতেই পারিনি।

বলেই জান্নাত ধুপধাপ পা ফেলে উপরে চলে যায়।রাহেলা মেয়ের কথা শুনে আহাম্মক হয়ে গেলো যেন।যে মেয়েকে নিজে পেটে ধরেছে সেই মেয়ে কিনা বলে সে নাকি শত মেয়ে।সেই জন্য তাকে বকে।

রোকসানা রাহেলার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। সব কিছুতে রাহেলার বারণ করা জান্নাতের পছন্দ না বলেই যে রাহেলা কে এসব বলে গেছে জান্নাত তা তিনি ভালো মতোই বুঝতে পারছে এবং রাহেলা নিজেও মেয়ের কথা বুঝতে পেরে গেছে এতক্ষণে।

🌸🌸

—প্রণয় নির্বাচন এর কাজ কতটুকু এগিয়েছে তোর?

পাবেলের কথায় প্রণয় হেসে বলে,

—আব্বু আল্লার রহমতে সব প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাকিটা কি হবে সব আল্লাহ ভালো জানে।

—এই পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি তো তোমায়?দেখো নির্বাচনে দাঁড়ালে যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আক্র’মণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।সব দিক নজরে রেখে চলাফেরা করো।সব সময় গার্ড রেখো সাথে।

জুনায়েদ আজমীর উপদেশ মূলক বাক্যে প্রণয় হেসে বলে,

—জি আংকেল দোয়া করবেন।

পাবেল কিছু একটা ভেবে বলে,

—রাফসান মির্জা এসে হুম’কি ধামকি দেয়নি তো?

—পার্টি অফিসে এসেছিলো। আমাকে টাকা অফার করেছিলো যাতে বিনিময়ে সরে দাঁড়ায়। আমি ও তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেছি আমি সরবো না।

—ওর থেকে সাবধানে থাকিস বাবা।ওর বাবা আর ও খুব মা’রাত্মক।কোন সময় কোন ঘুটি ছালে বুঝা দায়।

—চিন্তা করো না আব্বু।আল্লাহ ভরসা।

🌸🌸

প্রান্তিক ঘরে শুয়ে আছে।জুরাইন রাহেলার ফোন এনে প্রান্তিক এর খাটের একপাশে বসে গেমস খেলছে।প্রান্তিক মোবাইলে কিছু একটা দেখে মিটি মিটি হাসছে।জান্নাত প্রান্তিক এর ঘরে এসে প্রান্তিক কে মোবাইলে তাকিয়ে মুচকি হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। এই ছেলে মোবাইলে কি দেখে হাসে?প্রেমে ট্রেমে পড়লো নাকি?

প্রান্তিক এখনো বুঝতে পারেনি জান্নাত যে তার রুমে এসেছে।জান্নাত চুপিসারে হেটে গিয়ে ধুম করে প্রান্তিক এর পিঠে একটা বসিয়ে দেয়।প্রান্তিক ব্য’থা পেয়ে কুকিঁড়ে উঠে। জান্নাত কে দেখে তাড়াতাড়ি মোবাইলের আলো বন্ধ করে দেয়।জান্নাত প্রান্তিক এর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিতে গেলেই প্রান্তিক জান্নাতের চুল টেনে ধরে বলে,

—জান্নাতি আমারে মা’রলি ক্যান? শয়’তানে কি খোটায় তোকে?

—তুই শয়’তান।আমার যখন ইচ্ছা হয় তখন মা’রবো তোকে।তোর কি?

—আমার পিঠ টাকি মাগনা পাইচত তুই যে মা’রতে ইচ্ছে হলেই মা’রবি। আরেকবার আমার মা’রলে তোর খবর আছে দেখিছ।

জান্নাত চুল ছাড়িয়ে বলে,

–তোর খবরের চৌদ্দ গুষ্টি রে কি’লাই।একশো বার মা’রবো। কি করবি তুই?

—কি করবো?দাড়াঁ!!

বলেই প্রান্তিক জান্নাত কে মা’রতে গেলেই জান্নাত ছুট লাগায় বাইরের দিকে।ছুটতে ছুটতে হঠাৎ কারো প্রশস্ত বক্ষের সাথে ধা’ক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে সামনের মানুষ টা জান্নাত এর হাত ধরে আটকায়। জান্নাত মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে।

—মিস.জান্নাত! কোনো সমস্যা?এভাবে ছুটছেন কেন?

প্রান্তিক ও এসে দাঁড়িয়ে যায় জান্নাত আর প্রণয়ের সামনে।প্রণয় দুই জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে দুই জনে ঝ’গড়া করেই ছুটছে।এরা কি বড় হবে না কি?ভেবেই প্রণয় তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বলে,

—প্রান্তিক এভাবে ছুটছিস কেন?

—কিছুনা ভাইয়া। জগিং করছিলাম একটু।

প্রণয় প্রান্তিক কে আপাদমস্তক চোখ ভুলিয়ে নেয়।খালি পায়ে, শার্ট,প্যান্ট পরে তার ভাই ঘরের ভিতরে জগিং করছে দেখেই প্রণয় ভ্রুকুটি কুঁচকে বলে,

—এই ভর দুপুরে তুই ঘরের ভিতর জগিং করছিস?

প্রান্তিক কিছু বলার আগেই জান্নাত বলে উঠে,

—প্রেমে পড়ছে তো।তাই এখন দিশ হারাই ফেলছে আপনার ভাই।আমি তো জেনেই ছাড়বো তুই কার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।

বড় ভাইয়ের সামনে জান্নাত এভাবে সব বলে দেওয়াই প্রান্তিক পড়েছে বিপাকে।তাই প্রান্তিক তে’ড়ে গিয়ে বলে,

—তোরে তো আমি…

কথা শেষ করার আগেই জান্নাত ছুটতে ছুটতে বলে,

—কার্তিক এর বাচ্চা প্রান্তিক আজকে আমারে মা’রলে তোর খবর করে ছাড়বো আমি।তারপর সেটা সাদা কালো টিভি তে টেলিকাস্ট করবো।

“কার্তিক এর বাচ্চা প্রান্তিক “কথাটা শুনেই পাবেল কাশতে লাগলো। প্রান্তিক তো তার ছেলে।তাহলে কার্তিক এর বাচ্চা হলো কেমনে?

প্রণয় দুই জনের ছুটাছুটি দেখে হাসতে থাকে।একেবারে বাচ্ছা যেন জান্নাত। এখনো মা’রামা’রি করে।হঠাৎ প্রান্তিক এর ঘরের ভিতরে চোখ যেতেই দেখে বিছানায় বসা দশ বছরের একটা ছেলে খুব মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে গেমস খেলছে।চারপাশে কি হচ্ছে সেটা তার নজরে নেয়।এটা জান্নাতের ভাই বুঝতে পেরে গেছে প্রণয়। তাই ঘরের ভিতরে গিয়ে জুরাইন এর পাশে বসে।জুরাইন চোখ তুলে একবার প্রণয়ের দিকে তাকায়।আবার খেলায় মনোযোগ দেয়।এখন কোনো মতেই গেমস রেখে কোনো দিকে নজর দেওয়া যাবে না।এই রাউন্ড খেলতে পারলে পরের রাউন্ডে যেতে পারবে,তাই প্রণয়ের দিকে তার মনোযোগ নেই।

প্রণয় ও বিরক্ত হীন ভাবে বসে আছে।কিছুক্ষণ পরেই জুরাইন এর গেমস খেলা শেষ হলে মোবাইল টা বন্ধ করে প্রণয়ের দিকে তাকায়।বুকে হাত দুটো বাজ করে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

—বলুন কি বলবেন? আর আপনার নামটা ও বলবেন।

প্রণয় জুরাইন এর ভাব নিয়ে কথা বলা দেখে কিছুটা অ’বাক হয় মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,

—জি অবশ্যই। আমার নাম শাহরিয়ার প্রণয়। আপনার নামটা কি?আর আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?নাকি আপনি করেই বলবো?আপনি ও আমাকে তুমি করেই বলিয়েন।

—ঠিক আছে তুমি আমাকে তুমি করেই বলো।আর আমার নাম জুরাইন আজমী। জুনায়েদ আজমীর দুই মাত্র সন্তানের এর মধ্যে আমি তার ছোট ছেলে।উনার বড় সন্তানের নাম জান্নাত আজমী।রা..

—থাক। আমি বুঝতে পারছি তুমি অনেক পরিচয়ের অধিকারী। আর বলতে হবেনা।

—আজকাল লোকজন আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলো শুনতে চায় না কেন বুঝতে পারছি না।

জুরাইন এর কথা শুনে প্রণয় হাসে।ঠোঁটে হাসি রেখেই বলে,

—আচ্ছা জান্নাত আজমী মানে তোমার আপুর কি বয়ফ্রেন্ড আছে?

প্রণয়ের কথায় জুরাইন চোখ ছোট ছোট করে একবার প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে মুখটা ফ্যাকাসে করে সুধায়,

—আপুর মনে হয় কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।কিন্তু জুনায়েদ আজমী একজন কে মন দিয়ে বসে আছে।

প্রণয় অ’বাক হয়ে বলে,

—মানে?

—ভাইয়া তুমি কি পারবে আমার আর পাখির মধ্যে ভালোবাসা টা সেটিং করিয়ে দিতে?

জুরাইন এর আকুতি ভরা কথা শুনে প্রণয় অ’বাক হয়। বিচলিত নয়নে তাকায়। সাথে এই পিচ্ছি বাচ্চার প্রেম সংক্রান্ত কথা শুনে হয়ে যায় সে টাস্কিত।কি করলো সে এতবছরে।দশ বছরের বাচ্চা অন্যকে মন দিয়ে বসে আছে।আর সে কিনা?রাজনীতিবিদ রা কি আসলেই রসকষ হীন?লোকে যেমন বলে?

🌸🌸

ভার্সিটি থেকে একা একা বাড়ি ফিরছে জান্নাত। প্রান্তিক একটা কাজে গেছে।ইশির বাড়ি অন্য রাস্তায় তাই সে সেই দিকেই গেছে।রিক্সা গাড়ি কিছু পায়নি বিধায় পায়ে হাটা শুরু করেছে জান্নাত।এমন কড়া রোদের দুপুরে হাঁটতে বিরক্ত তে চেয়ে যাচ্ছে সবকিছু।

মাথার হিজাব এর ভিতরে জেনো পুরো মাথাটা উত্তপ্ত হয়ে গেছে সেই রকম অনুভব হচ্ছে জান্নাতের। একটা রিক্সা চোখে পড়তেই জান্নাত দাঁড়িয়ে যায়।রিক্সা টা বেশ দূরে।হাত দিয়ে ইশারা করেছে জান্নাত তার দিকে আসতে।

হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে জান্নাত পাশ ফিরে তাকায়।পাশে সেই দিনের সেই ছেলেটা।মানে রাফসান মির্জা।তারদিকে কেমন একটা লোভার্ত দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে।জান্নাতের অস্বস্তি লাগছে ওর তাকানো তে।

জান্নাত তাকায় রাফসান মির্জার দিকে কিন্তু কোনো ভাবাবেগ দেখা দিলো না রাফসান মির্জার। তাই জান্নাত ফের তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ব্যাগ হাতড়ে একশো টাকার একটা নোট নিয়ে রাফসান মির্জার দিকে বাড়িয়ে দিলো।আচমকা জান্নাতের এমন কাজে রাফসান মির্জা হকচকিয়ে যায়।চেহারায় ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে জান্নাতের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ফেলে বলে,

—টাকা কেন দিচ্ছো?

জান্নাত বিরক্ত হয়।তবুও বিরক্ত প্রকাশ না করে শান্ত স্বরে বলে,

—আগে টাকাটা ধরুন। তারপরে বলছি।

রাফসান মির্জা টাকাটা হাতে নিতেই জান্নাত বলে উঠে,

—পাশে এসে দাঁড়ালে একটু গলা খাঁকারি হলেও দিবেন।একটা ভিক্ষুক ও পাশে দাঁড়িয়ে এসে কথা বলে টাকা চেয়ে নেয়।আর যারা কথা না বলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।তাদের সহজ ভাষায় বাক প্রতিবন্ধী বলে।আপনাকে আমি বাক প্রতিবন্ধী হিসেবেই মনে করি। বাক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকরা কথা বলতে পারেনা বিধায় চুপ করে এসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ভিক্ষার আশায়।
টাকা বেশি না থাকায় একশো টাকায় দিলাম। সামনের দিন যদি কখনো দেখা হয় তখন না হয় আরো কিছু টাকা দিয়ে দিবো। তবুও কোনো মেয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বাক প্রতিবন্ধী সেজে ভিক্ষুকের মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।

রিক্সা আসতেই জান্নাত রিক্সায় উঠে বসে।রাফসান মির্জার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,

—আর হ্যাঁ আপনাকে আগেও আমি বলেছি আমাকে “তুমি “সম্বোধন করার রাইট আপনাকে আমি দিইনি।আর নিজের চোখ সামলে রাখবেন। কোনো মেয়ের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি ফেলার আগে ভাববেন। আমার দিকে তো একদম-ই ওভাবে তাকাবেন না।মেয়ে বলে দূর্বল ভাববেন না।আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলে আপনার পার্সোনাল লাইফ, রাজনীতি লাইফ দুইটাই হেল করে দিবো আমি।
ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।

বলেই জান্নাত রিক্সাওয়ালা কে তাড়া দেয় যাওয়ার জন্য।রাফসান মির্জা কে সে হাড়ে হাড়ে চিনে।তাইতো এমন করে কথা বলা।

জান্নাতের রিক্সার দিকে তাকিয়ে আছে রাফসান মির্জা।রা’গ যেন তড়তড় করে তার সারা শরীরে ভেয়ে যাচ্ছে।আজ পর্যন্ত শাহরিয়ার প্রণয় ছাড়া ও দ্বিতীয় বার এভাবে কারো কাছে সে এমন অপমানিত হয়েছে।জান্নাত আর প্রণয়ের কাছে সে অপমানিত হয়েছে।জান্নাত প্রণয় দুইজনেই শান্ত কথায় হেসে হেসে অপমান করে।

জান্নাতের দেওয়া একশো টাকার নোট টার দিকে তাকিয়ে বলে,

—অ্যাটিটিউড আছে বলতে হয়।আই লাইক ইট!

বলেই হাসতে হাসতে থাকে রাফসান মির্জা।যতই শান্ত থাকার চেষ্টা করুক জান্নাতের অপমানিত কথাগুলো মাথা থেকে ফেলতে পারছেনা রাফসান মির্জা।এক দিকে এই মেয়ের সাথে যে দুই দেখা হয়েছে দুই দিনের-ই ঠান্ডা অপমান আর অন্যদিকে নির্বাচনে কিভাবে প্রণয় কে টেক্কা দেওয়া যায় সেই প্ল্যান। সব মিলিয়ে মেজাজ এখন বিগড়ে আছে রাফসান মির্জার।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:৯
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)

—মা তোমার নাম কি?

—জি জান্নাত আজমী।

জান্নাত কে দেখতে এসেছে আজ।অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একটা কালো শাড়ি পড়ে সং হয়ে বসে আছে ছেলে পক্ষের সামনে।ছেলে,ছেলের মা আর ছেলের বোন এসেছে।ছেলে তো জান্নাতের দিকে তাকিয়েই আছে।দৃষ্টি সরানোর কোনো নাম নিচ্ছে না।

জান্নাত চুপ করে সোফায় বসে আছে।তার পাশে জুরাইন বসে আছে।রাহেলা নাস্তা এগিয়ে দিয়ে কথা বলছে ছেলের মায়ের সাথে।জুনায়েদ আজমী বাইরে থেকে এখনো আসেনি।তাকে খবর দেওয়া হয়েছে।হয়তো কিছুক্ষণ এর মধ্যে বাসায় এসে যাবে।

—মা তোমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পয়েন্ট কত?

এতক্ষণ এই কথাটার-ই অপেক্ষায় ছিলো জান্নাত। শুনার সাথে সাথে মেজাজ এখন ফোর টুইন্টি। এই মহিলা গুলোর আর কাজ কাম নাই।দেখতে আসলেই পয়েন্ট জিজ্ঞাসা করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

জান্নাত মুখ তুলে কিছু বলতে যাবে।এমন সময় জুনায়েদ আজমী এসে সবার মাঝে প্রবেশ করে।টুকটাক কথা বার্তা চলতে থাকে।হুট করে ছেলের বোন বলে উঠে,

—আচ্ছা ভাইয়া কে আর আপুকে আলাদা ভাবে কথা বলতে দেওয়া হোক।

মেয়েটার কথা শুনে জান্নাতের ইচ্ছে করছে মেয়েটার মাথা টা জাস্ট ফা’টিয়ে দিতে। এমনি এখানে এদের সামনে বসে থাকতে বিরক্ত হচ্ছে।এর মধ্যে আবার বলছে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য।

ছেলের বোনের কথার সাথে তাল মিলিয়ে ছেলের মা ও বলে আলাদা ভাবে কথা বলতে দেওয়ার জন্য।জুনায়েদ আজমী আর রাহেলা এদের কথা ফেলতে পারলো না।তাই জান্নাত কে উদ্দেশ্য করে জুনায়েদ আজমী বলে,

—যা,আম্মু। ছেলেটা কে তোর রুমে নিয়ে যা।কথা বল।সাথে জুরাইন কে ও রাখিস।

জান্নাতের জুনায়েদ আজমীর দিকে তাকায়।জুনায়েদ আজমী তাকে চোখের ইশারায় আশ্বাস দেয়।

জান্নাত ছেলেটা কে নিয়ে নিজের রুমের বেলকনিতে যায়।পাশের দোলনার মধ্যেই জুরাইন বসে মোবাইল দেখছে।জুনায়েদ আজমী সব সময় এই কাজটা করতে ভুলেনা।কোনো ছেলে দেখতে আসলে আলাদা কথা বলতে চাইলে। ছেলের সাথে জান্নাত কে কথা বলতে পাঠালে জুরাইন বা আহ্লাদী কে ও বলবে পাশে থাকতে।

—কালো শাড়িতে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

রাতুল নামের ছেলেটার কথায় জান্নাত ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে।এই ছেলেটাই আজকে তাকে দেখতে এসেছে।জান্নাত শান্ত সুরে বলে,

—সেটা আপনার থেকে জানতে চাইনি আমি।

—তুমি জানতে না চাইলেও আমার বলার অধিকার আছে।

—অধিকার? কিসের অধিকার? কেমন অধিকারের কথা বলছেন আপনি?

—তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে।আমি তোমার উডবি।

ছেলেটার কথা শুনে জান্নাত পুরো তাজ্জব বনে গেলো যেন।এই ছেলে পা’গল নাকি?দেখতে আসার সাথে সাথেই কি উডবি হয়ে যায়?এখনো না এংগেজ হয়েছে তো না বিয়ে?সেসব দূরের কথা।এখনো তো মতামত -ই জানানো হয়নি।অথচ ছেলে কিনা বলছে সে উডবি?স্ট্রেঞ্জ?

জান্নাতের রে’গে যায়।তবে শান্ত স্বরেই স্বগতোক্তি করল,

—লিসেন? আপনি আমার কেমন উডবি.?আপনি আজকে জাস্ট দেখতে এসেছেন। এখনো পর্যন্ত মতামত টাই দেওয়া হলো না।আর আপনি কিনা অধিকার বোধ টেনে আনছেন? আপনি আমার উডবি?নাইচ জোক্স!

বলেই জান্নাত কিছুটা হাসি টানে ঠোঁটের কোণে।রাতুল একবার জুরাইন এর তাকায়।জুরাইন এখনো গেমস খেলছে। রাতুল জুরাইন এর থেকে চোখ সরিয়ে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

—তুমি এতো রে’গে যাচ্চো কেন?আমি তো সেভাবে মিন করে বলেনি।

—আপনি কিভাবে বলেছেন সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝেছি।আর আপনি ভাবলেন কি করে আপনার ফ্যামিলি তে আমি বিয়ের জন্য রাজি হবো।যেই ফ্যামিলি মেয়ের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পয়েন্ট জানতে চায়।সেই ফ্যামিলি তে তো আমি কোনো মতেই বিয়ে করবো না।পরীক্ষার পয়েন্ট পর্যন্ত থাকলে ও হতো।কিন্তু আপনার মা আমার বাবার স্যালারি কত?নিজস্ব কোম্পানি নাকি অন্যের কোম্পানি এসব কেন জিজ্ঞেস করেছে?এসবের পর তো আমি কোনো মতেই আপনার ফ্যামিলির বউ হয়ে যাওয়ার কথা মুখে কেন মাথায় ও আনবো না।আমার বাড়ি থেকে যৌতুক নাকি আপনাকে ঘর জামাই করে বউয়ের বাড়ি রেখে দেওয়ার ইচ্ছে আছে আপনার মায়ের?

জান্নাতের কথায় রাতুল কিয়তক্ষণ চুপ থেকে আবার জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

—মা তো ওগুলো কথার কথা বলেছে।তুমি রে’গে যাচ্ছো কেন এসবে?

—ওহ্ রিয়েলি?ঠিক আছে তবে আপনি বলুন আপনার মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক,অনার্স,মাষ্টার্স সব পরীক্ষার পয়েন্ট কত?খবরদার একটু ও বানিয়ে বলবেন না।আপনার সম্পূর্ণ বায়োডাটা কালেক্ট করতে বেশি না এক ঘন্টা লাগবে আমার।তাই সত্যি কথাই বলবেন।

জান্নাতের স্ট্রিট কথায় রাতুল শুকনো ঢোক গেলে।যা জান্নাতের চোখ এড়ায় না।ছেলেটার মুখ চোখ এর অবস্থায় বলে দিচ্ছে ছেলেটা নিচে তার মা বাবার সামনে নিজের যেই পরিচয় উপস্থাপন করেছে।তা সম্পূর্ণ সত্যি নয়।আর এখন জান্নাতের কথা শুনে ভ’য় পেয়ে গেছে।যদি সত্যি প্রকাশ পেয়ে যায়।

—কি হলো বলুন। সত্যি টা আপনি বলবেন নাকি আমি লোক পাঠাবো আপনার আসল পরিচয় খুঁজতে?

বলেই জান্নাত রাতুল এর থেকে চোখ সরাতেই চোখ পড়ে পাশের বেলকনির দিকে।প্রণয় ফোনে কথা বলতে বলতে ল্যাপটপ নিয়ে বেলকনিতে রাখা চেয়ারে বসে ল্যাপটপ টা টেবিলের উপর রাখলো।
প্রণয় এখনো পাশের বেলকনিতে নজর দেয়নি।তাই জান্নাত আর রাতুল কে দেখেনি।সে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত।

জান্নাতের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে রাতুল কে উদ্দেশ্য করে বলে,

—দেখুন হয়তো সব সত্যি বলবেন নয়তো ওইযে পাশের বেলকনিতে যেই ছেলেটা কে ফোনে কথা বলতে দেখছেন। তাকে বলবো আপনাকে ধরে নিয়ে যেতে।সে কিন্তু পুলিশের লোক।

জান্নাতের কথা টা বলতে দেরি হলেও ছেলেটার সেখান থেকে প্রস্থান নিতে দেরি হয়নি। এক ছুটে ছেলে টা নিচে চলে গেছে।ছেলেটা চলে যেতেই জুরাইন উঠে এসে জান্নাতের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

—আপু আমি সব শুনেছি। আমি গিয়ে আব্বুকে বলি রাজি না হতে।ভাইয়া টাকে আমার কাছে ভালো লাগেনি।

জান্নাত জুরাইন এর কথা শুনে বলে,

—তোর বলতে হবে না।ছেলেটা নিজেই দেখবি একটু পর তার মা বোনকে নিয়ে চলে গেছে। জাস্ট ওয়েট কর।

বলতেই দুই ভাই বোন হাসতে থাকে।জুরাইন নিচের ক্লাইম্যাক্স সিন দেখার জন্য ছুটে যায়।জান্নাত সেখানে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে।প্রণয়ের দিকে আরেকবার তাকায়।প্রণয় এখনো ফোনে কথা বলছে।চোখের দৃষ্টি ল্যাপটপের মাঝে নিবদ্ধ।

🌸🌸

ফোনের কথা বলা শেষ করে প্রতিদিন এর অভ্যাস হিসেবে আজকে ও পাশের বেলকনির দিকে একবার চোখ ভুলায় প্রণয়। হঠাৎ কালো শাড়িতে কাউকে দোলনায় বসে থাকতে দেখেই প্রণয় সচকিত ভাবে আবার তাকায়।একটু ভালো করে নজর ভুলাতেই দেখে জান্নাত কালো শাড়ি পড়ে দোলনায় বসে মোবাইল ঘাটছে

প্রণয় চেয়ার ছেড়ে উঠে বেলকনির রেলিং এর কাছে এসে জান্নাত কে হাক ছেড়ে ঢেকে বলে,

—মিস. জান্নাত আজ হঠাৎ শাড়ি যে?

জান্নাত হকচকিয়ে তাকায়।প্রণয় তার দিকে উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।তবে সেই দৃষ্টির ভাষা জান্নাত বুঝতে পারেনা।কি আছে সেই দৃষ্টিতে। কিন্তু দৃষ্টিতে যে খারাপ কিছু নেই সেটা অন্তত জানে জান্নাত।

—ওহ্ মিঃ ভালোবাসা?আসলে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিলো তাই শাড়ি পরেছি।

জান্নাত কে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছে এটা প্রণয়ের কর্ণধারে যেতেই মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায় তার।হঠাৎ বাইরে কিছু মানুষের কথা শুনতেই দুইজনে দুই বেলকনি থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে রাতুল কে বকতে বকতে তারা মা নিয়ে যাচ্ছে।জান্নাত সেই দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।

প্রণয় জান্নাতের হাসি দেখে আর রাতুল কে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,

—এই ছেলেটা আপনাকে দেখতে এসেছে?এটা তো সামনের গার্লস কলেজের সিকিউরিটি।

জান্নাত হাসি থামিয়ে বলে,

—হ্যাঁ। আমি ওকে আগ থেকেই চিনি।কিন্তু ছেলেটা আমাকে চিনে না।তাই আমাদের কাছে ছেলে এবং তার ফ্যামিলি তাদের পরিচয় হাই স্ট্যাটাস এর দিয়েছে।আবার বাবার স্যালারি সম্পর্কে ও জিজ্ঞেস করেছে।কিন্তু ছেলেকে আর আমাকে আলাদা কথা বলতে দেওয়ার পর ছেলেকে আমি ইশারা ইঙ্গিতে কিছুটা বুঝিয়ে দিয়েছি আমি তার আসল পরিচয় জানি।আর আপনাকে দেখিয়ে দিয়ে বলেছি আপনি পুলিশের লোক।আসল পরিচয় না দিলে আপনাকে বলবো তাকে ধরে নিয়ে যেতে।এই কথা শুনেই ছেলেটা ভ’য়ে নিচে চলে গেছে।জুরাইন আছে নিচে।কিছুক্ষণ পরে এসে ও আপডেট দিবে আমায়।

বলেই জান্নাত হেসে দেয়।জান্নাতের সাথে সমসুরে প্রণয় ও হেসে উঠে।আসলেই কি শুধু দুই জনে হাসছে?জান্নাত প্রণয়ের সেই অমায়িক হাসি টার দিকে তাকিয়ে আছে।প্রণয় ও জান্নাতের সেই লালছে কালো তিলটার দিকে চেয়ে আছে।

—আপু তোকে আব্বু ডাকছে।

বলেই জুরাইন জান্নাত কে টেনে নিয়ে যায়।যাওয়ার সময় জুরাইন এর নজর যায় প্রণয়ের দিকে।প্রণয় জুরাইন এর দিকে তাকাতেই জুরাইন মুখ ভে’ঙছিয়ে চলে যায়।প্রণয় তব্দা খেয়ে থম মে’রে যায়।বুঝার চেষ্টা করে জুরাইন তাকে মুখ ভেঙছি কেন মা’র ছিলো।তখন মাথায় আসে জুরাইন বলেছিলো তার আর পাখির মধ্যে যাতে প্রেম টা সেটিং করে দেয় প্রণয়। আর তা না করে দেওয়ার ফলে ধরুন এখন জুরাইন এর মুখ ভেঙছি পেতে হচ্ছে প্রণয় কে।

জুরাইন জান্নাত কে নিয়ে যেতেই প্রণয় আরো একবার কল্পনা করে নেয় চোখ বন্ধ করে কালো শাড়ি তে জান্নাত কে।চোখ বন্ধ করেই আনমনে মুচকি হেসে বলে উঠে,

—“আপনাকে ও যে কল্পনায় আমার মনের জেল খানায় বন্দি করে ফেলেছি ‘‘ব্ল্যাক কুইন ’’।”

বলেই প্রণয় চোখ খুলে আবার ল্যাপটপ এ কাজ করা শুরু করে।

🌸🌸

বিকেলে জান্নাত মাত্র আছরের নামাজ পড়ে উঠেছে।এমন সময় প্রান্তিক ফোন করে।রিসিভ করতেই প্রান্তিক বলে উঠে,

—জান্নাতি চল ফুচকা খাবো।

—এখন এই সময়?

—হ্যাঁ সমস্যা কি?বাইকে করে যাবো। জুরাইন কে ও নিয়ে যাবো।আমি বলেছি ওকে।

—আম্মু বকবে না??

—আন্টি কে আমি বলে রেখেছি।কিছু বলবে না।

—আচ্ছা ঠিক আছে।

বলেই জান্নাত ফোন কে’টে দেয়।ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় হিজাব বাধবে বলে।

এমন সময় জুরাইন এসে হাত টান দিয়ে ধরে।জান্নাত হিজাব পিন আপ না করে জুরাইন এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—কি হয়েছে? টানছিস কেন?

—চলনা দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্রান্তিক ভাইয়া বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাড়াতাড়ি চল না।

—আমি হিজাব টা বেধে নিই না দাড়াঁ।

—লাগবে না।চল চল।

বলেই জুরাইন জান্নাত কে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।কুর্তি আর চুড়িদার পরে বেরিয়েছে।জামার সাথের বড় ওড়না গায়ে মাথায় সহ গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে।হিজাব পরার সময় দেয় নি জুরাইন।

গেইটের বাইরে প্রান্তিক বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গতকাল -ই নতুন বাইক নিয়েছে ও।জান্নাত আর জুরাইন গিয়ে দাড়াতেই প্রান্তিক জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

—এত দেরি করলি কেন?

—কিসের দেরি করেছি।ত্রিশ সেকেন্ড আগে ফোন দিয়েছিস। আর ত্রিশ সেকেন্ড হওয়ার মাথায় জুরাইন ডেকে নিয়ে আসছে।তাহলে দেরি হলো কখন??

—জান্নাতি আমার মনে হয় তুই আসলেই জন্মগত ঝ’গড়ি। সব সময় পায়ে পাড়া দিয়ে ঝ’গড়া করা তোর অভ্যাস হয়ে গেছে।

—কার্তিক এর বাচ্চা এখন কে ঝ’গড়া করছে??

—চুপ যা!আর ভেজাল করিছ না।তাড়াতাড়ি উঠ দেরি হয়ে যাইতাছে।

বলেই প্রান্তিক বাইকের স্টান উঠিয়ে বাইক সোজা করে উঠে বসলো। প্রান্তিক বসার পর জুরাইন গিয়ে উঠে বসলো। জান্নাত উঠে বসেই মাথায় ওড়না ভালো ভাবে চাপিয়ে দিলো।

প্রণয় বাইক স্টাট দিয়ে সোজা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের একটা ফুচকা স্টলে গিয়ে বাইক থামালো।জান্নাত বাইক থেকে নেমেই চারদিকে চোখ ভুলালো একবার।প্রান্তিক জুরাইন কে নিয়ে এসে জান্নাতের সাথে দাঁড়ালো।প্রান্তিক জুরাইন কে চিপস্ কিনে দিয়ে নিজেরা দুই প্লেট ফুচকা নিলো।

ফুচকা খাওয়া শেষে প্রান্তিক জান্নাতের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

—বাসায় যাবি না?

প্রান্তিক এর কথায় জান্নাত হাত ঘড়ি টার দিকে একবার তাকায়।ঘড়ির কা’টা সময় পাচঁ টা জানান দিচ্ছে।

—হ্যাঁ যাবো চল।দেরি হলে আবার আম্মু বকবে।

জান্নাতের সম্মতি পেয়ে প্রান্তিক গিয়ে বাইকে উঠে বসলো। জুরাইন বসার পর জান্নাত বসতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে কারো কথায় থেমে যায়।

—মিস. জান্নাত আপনি এখানে?

প্রণয়ের কথায় জান্নাত বাইকে না বসে দাঁড়িয়ে যায় আবার সোজা হয়ে।প্রান্তিক প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

—ভাইয়া ফুচকা খেতে এসেছি একটু।এই তো এখন বাড়ি যাচ্ছি।

প্রণয় কিছু টা সময় নিরব থাকলো। কিছু ভাবলো।পরোক্ষণেই প্রান্তিক এর উদ্দেশ্যে সুধায়,

—প্রান্তিক তুই জুরাইন কে নিয়ে যা।মিস.জান্নাতের সাথে আমার একটু কাজ আছে।

—কি কাজ ভাইয়া??

—অনেক কাজ!

—ভাইয়া….!

প্রান্তিক সুর তুলে ভাইয়া ডাকতেই প্রণয় চোখ রা’ঙানি দেয় প্রান্তিক কে।প্রান্তিক জান্নাত কে না নিয়েই শা শা করে বাইক চালিয়ে চলে গেলো।জান্নাত আহাম্মক এর ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।এই ছেলে ওকে এভাবে ফেলে চলে গেলো?

—মিস. জান্নাত চলুন হাটি।সামনেই আমার গাড়ি আছে।

প্রণয়ের কথায় জান্নাত সম্বিৎ ফিরে আসে।প্রণয়ের সাথে পা মিলিয়ে মিলিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।গ্রীষ্মের বাতাস এসে গা ছুঁয়ে দিচ্ছে।সূর্যটা পশ্চিমে হেলে পড়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে সূর্যের র’ক্তিম লালাভ আভা।যার কিছুটা যেন জান্নাতের মুখশ্রী তে পড়েছে।
প্রণয়ের সাথে পা মিলিয়া হাঁটতে হাঁটতে যেন সেই লালাভ আভা তার মুখশ্রী তে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাতাসের দাপটে মাথার ওড়না পড়ে যাচ্ছে।তা ধরে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে জান্নাত। প্রণয় সেই দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসে।কথা বিহীন দুই জনের হেটে যাওয়া গন্তব্য।

লোকালয় বিহীন জায়গায় আসতেই প্রণয় দাঁড়িয়ে যায়।প্রণয় কে দাঁড়াতে দেখে জান্নাত ও দাঁড়িয়ে পড়ে।জান্নাত কপালে প্রশ্নের ভাজ ফেলে।ভ্রুকুটি কুঁচকে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

—দাঁড়িয়ে পড়লেন যে মিঃ ভালোবাসা?

প্রণয় তাকায় জান্নাত এর দিকে।বাতাস এসে জান্নাতের মাথা থেকে ওড়না ফেলে দিয়েছে।কাধঁ পর্যন্ত কোঁকড়া চুল গুলো একটা ক্লিপ দিয়ে খোঁপা করে আ’টকে রেখেছে জান্নাত। প্রণয় নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকায় জান্নাতের দিকে।আরো একবার অগোছালো আনমনে আওড়ায়,

—‘‘ভালোবাসা বিক্রি করতে’’

—মানে?ঠিক বুঝলাম না।

জান্নাতের কথায় হুশ ফিরে প্রণয়ের। জান্নাতের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে উঠে,

—কিছু না।আপনি ওড়না টা ঠিক করে পড়ে নিন।আমি ওই দিকে দাঁড়াচ্ছি।

বলেই প্রণয় একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। জান্নাত ওড়না টাকে সুন্দর করে পুরো গা সহ মাথা ঢেকে গুঁজে নেয় গলার নিচে।প্রণয়ের দিকে গিয়ে বলে উঠে,

—আপনি হঠাৎ এখানে কি করছিলেন মিঃ ভালোবাসা?

—কাজে এসেছিলা…

প্রণয় পুরো কথা টা শেষ করতে পারলো না।সম্পূর্ণ করার আগেই একটা গু’লি এসে প্রণয় এর হাত ছুঁয়ে গেলো। মুহূর্তেই প্রণয়ের শুভ্র পাঞ্জাবী এর হাতা লাল র’ক্ত এর রঙে রঞ্জিত হলো।প্রণয় ব্য’থায় কুকিঁড়ে উঠেই ডান হাত দিয়ে বাম হাতটা চেপে ধরলো। প্রণয়ের হাতের ফাঁক গলিয়ে র’ক্ত পড়ছে।

জান্নাতের প্রণয়ের হাতে র’ক্ত দেখেই “মিঃ ভালোবাসা” বলে চি’ৎকার করে উঠে।প্রণয় চারদিকে চোখ ভুলিয়ে দেখে বিরোধী দলের বেশ লোক আছে তার উপর আক্র’মণ করার জন্য।প্রণয় এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে জান্নাত এর এক হাত নিজের ডান হাত দিয়ে ধরেই গাড়ি যেখানে রেখেছে সেই দিকে ছুটে গেলো। এই দিকে একের পর এক গু’লি ছুড়ছে।প্রণয় নিজের জন্য না যতটা ভাবছে তার থেকেও বেশি ভাবনা জান্নাত কে নিয়ে।আজ যদি মেয়েটার গায়ে একটু ও আছড় লাগে।কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না সে।

গাড়ির কাছে এসেই প্রণয় গাড়ির দরজাটা খুলে জান্নাত কে গাড়ি তে ঢুকিয়ে দিয়ে ঘুরে এসে নিজে গাড়িতে বসতে গেলেই আরেকটা গু’লি ছুটে আসে।প্রণয় বসে যায়।আর গু’লি টা গিয়ে লাগে একটা গাছের মধ্যে রাফসান মির্জার নিজের ছবি দিয়ে লাগানো ব্যানার এর মধ্যে।

প্রণয় দ্রুত গাড়ির ভিতরে বসে দরজা আ’টকে দেয়।জান্নাত এর মাথা থেকে উড়না টা আবার খুলে গেছে।চুলের ক্লিপ টা ও চুলে নেই।কোঁকড়া চুল গুলো খুলে কাঁধের একটু নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে।

প্রণয় আয়নায় একবার চোখ ভুলিয়ে দেখে পিছন থেকে দুই তিনটা বাইক আসছে।তবে দূরে আছে।জান্নাত ও দেখেছে।প্রণয় জান্নাতের দিকে একটু ঝুকে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিতে গেলেই জান্নাতের চুলের ঘ্রাণ এসে তার নাক লাগে। প্রণয় জান্নাতের সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে ঠিক করে বসে নিজের টা লাগিয়ে নেয়।

জান্নাতের দিকে তাকিয়ে প্রণয় বলে উঠে,

—“আপনি কি চুলে অ্যালকোহল ইউজ করেছেন?নেশা কেন লেগে গেলো ‘‘নেশাক্তময়ী’’?”

প্রণয়ের কথায় জান্নাত অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আ’ঘাত পেয়ে কি এই লোক পা’গল হয়ে গেলো নাকি?এরকম একটা সময়ে কি আজেবাজে বলছে মিঃ ভালোবাসা নামক বালক টি?

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here