প্রেম পিয়াসী পর্ব -১৩+১৪

#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_____১৪.

—-“ভ্ ভাবি!”

ভ/য়ার্ত গলায় ঢোক গেলে অনন্যা। চাতক পাখির মতো একবার ইলহামকে দেখে তো একবার প্রণয়কে। প্রণয়ও একই ভাবে ঢোক গিললো অনন্যার ন্যায়।

—-“ভাবি.. উনি.. উনি ভাইয়ার বন্ধু! প্ প্রণয় ভাই।”

নামটা শুনতেই ইলহামের কুঞ্চিত ভ্রু জুগল কুঁচকে পড়ে আরও খানিকটা। সে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহুর্ত। ভাবতে থাকে ভোরের কথা গুলো! তার স্পষ্ট মনে আছে.. অনন্যা ফোনে যার সাথে কান্না করে কথা বলছিলো, সেই ব্যাক্তিও প্রণয় ভাই নামেরই কেউ ছিলো। তবে কি উনিই সে?

—-“আস্সালামু আলাইকুম, ভাবি। আমি কিন্তু আপনাকে চিনি।”

প্রণয়ের কন্ঠে ভাবনার রেশ কাটে ইলহামের। তবু বিস্ময় কাটেনা যেন। এক প্রকার অবাক হওয়ার চেষ্টা করেই বলে,

—-“আমাকে চিনেন? কিভাবে?”

প্রণয় স্বভাব সুলভ হাসে। একবার অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলে,

—-“আপনার বরও কিন্তু আমার বন্ধু। এবং খুব কাছের।”

ইলহাম ভ্রু কুঞ্চিত করে। একটু বিরক্ত স্বরে বলে,

—-“আমাদের কিন্তু এখনও বিয়ে হয়নি।”

ইলহামের কথায় প্রণয়ের দৃষ্টি খানা কেমন যেন হয়ে ওঠে। বলে,

—-“মানে? কি বলছেন!”

—-“হ্যাঁ, প্রণয় ভাই! রাদ ভাই আর ভাবির বিয়ে হয়নি তো এখনও। হবে খুব শীঘ্রই।”

প্রণয়ের আকাশসম বিস্ময় কাটেনা এক ইঞ্চিও। কিন্তু সে এই বিষয়ে কথা বাড়ায় না বিশেষ। ভাবে, অজানা ব্যাপারে না জেনে বেশি ঘাটানো ঠিক হবেনা।

—-“ওহ্, ওকে। আজ আমি তবে আসি? ভাবি, আসলাম। ভালো থাকবেন।”

—-“সেকি ভাইয়া? ঘরের কাছে এসে ফেরত যাবেন কেন? একবার বাসায় চলুন? আপনার বন্ধু বাসাতেই আছে।”

ইলহামের প্রস্তাবে বিশেষ স্বস্তি পেলোনা প্রণয়। আঁড়চোখে একবার তাকালো অনন্যার পানে। অনন্যা ব্যকুল নয়নে তাকেই দেখছিলো। সে তাকাতেই চোখাচোখি হলো তাদের। তবে ইলহাম যেন কিছু না বুঝতে পারে, সেই খাতিরেই চটজলদি চোখ সরিয়ে নিলো অনন্যার থেকে। অতঃপর তার পানে চেয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল,

—-“না ভাবি। আজ একটু তাড়া আছে। বিয়ের তো এখনও বেশ কয়েকটা দিন বাকি। এর মধ্যে আশা যাওয়া হবে নিশ্চয়ই। তখন একদিন দেখা করে যাবো না হয়? আজ আসি।”

এই বলে প্রণয় আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলো। প্রণয়ের যাওয়ার পানে এক পলক দেখে অনন্যার পানে তাকালো ইলহাম। দেখলো, ব্যকুল দৃষ্টিতে তাকে পলকহীন দেখছে অনন্যা। তার ব্যকুল নয়নে কত আক্ষেপ জমে আছে জানা নেই কারো।

—-“অনন্যা? বাসায় ফিরবে নাকি ফুসকা খাবে?”

ইলহামের ডাকে অনন্যার ঘোর কাটে। চটজলদি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে ঠোঁটের কোনে জুড়ে দেয় মেকি হাসির রেখা। এক্ষনি এক গাদা মিথ্যে দিয়ে ভোলাবে ইলহামকে। যেন, সে এই বিষয়ে ওতো গভীরে গিয়ে না ভাবে।

—-“খাবোনা কি বলছো? আলবাত খাবো। আসলে কি হয়েছে বলোতো ভাবি? ফুসকা মামার কাছে যেতে যেতে হঠাৎ দেখি প্রণয় ভাই এখানটাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাই ভদ্রতার খাতিরে এসে নিজ থেকেই কথা বললাম।”

অনন্যার বানোয়াট কথাতে ইলহাম ঠিক কতটুক সন্দেহ দূর করতে পারলো জানেনা অনন্যা। তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করলো ইলহামের মনের সকল সন্দেহ দূর করতে।

অবশেষে ফুসচা খেয়ে বাসায় ফিরলো তারা। তখন গোধূলি লগ্ন পেরিয়ে সন্ধ্যার হাট বসেছে। পশ্চিমাকাশের অন্তরীক্ষ গাঢ় হলুদ বর্নে লেপ্টে উঠেছে ক্রমশ। ধীরে ধীরে অন্ধকারের মেলা জমছিলো। ইলহাম নিঝুমকে তার মায়ের হাতে দিয়ে চলে এলো নিজের ঘরে। ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেলো তার বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে রাদ। রাদকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে প্রথম দশায় একটু অবাক হলো। পরক্ষণেই আবার অস্থির হলো মন। ‘সব ঠিকাছে তো?’

—-“কি হয়েছে আপনার? শরীর ঠিকাছে?”

ইলহামের চিন্তান্বিত কন্ঠটি কানের পর্দা বারি খেতে চোখ মেলে তাকালো রাদ। ইলহামকে তার পানেই এগিয়ে আসতে দেখে উঠে বসলো সে। বলল,

—-“আমার ঘরে অন্তুর মামা ঘুমচ্ছেন। বেয়াদব লোক, নাক ডেকে কানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে রি-ভ-লবারের এক গু-লি-তে নাকটা ফাটিয়ে দেই।”

রাদের এহেম অদ্ভুত কিসিমের কথা শুনে হেসে ফেললো ইলহাম। বলল,

—-“তো কি হয়েছে? এ বয়সের মুরব্বিরা এমন একটু আধটু নাক ডাকে। তাতে এতো চটে যাওয়ার কিছু হয়নি।”

—-“চটবো না? বেটা এতো…”

—-“মামা!”

ইলহাম রাদকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো। রাদ থেমে গেলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,

—-“ঐ হবে একটা।”

—-“কেন ঐ একটা হবে? যার যার প্রাপ্য সম্মান তাকে দিতে হবে। না হলে চলবে না।”

ইলহামের বানীতে কয়েক মুহুর্তে স্থীর নয়নে তাকিয়ে রইলো রাদ। ইলহাম সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন। পূণরায় বলল,

—-“রেস্ট নেওয়ার হলে নিয়ে রাখুন। নয়তো দেখা যাবে রাতে মামার মিষ্টি অ/ত্যা/চা/রে আপনার ঘুমের ইতি।”

—-“মাথা ধরেছে। একটু কফি হবে?”

—-“আমি বানাবো?”

—-“না। সঙ্গে করে আরও পাঁচ-দশটা বউ ধারে এনেছি তো! তাদের বলো গিয়ে!”

—-“উফফ!”

—-“প্লিজ, সুইটহার্ট। মাথায় বড্ড পে;ই;ন হচ্ছে।”

—-“যাচ্ছি তো।”

ইলহাম চলে আসে নীচে রান্নাঘরে। নীচে আসতেই সামনাসামনি দেখা হয় রাজিয়া বেগমের সাথে। সঙ্গে নিহার শাশুড়ী মা-ও ছিলেন। ইলহামকে দেখতেই মুখ বাঁকান নিহার শাশুড়ী মা। তার ইলহামকে মোটেই পছন্দ নয়। কেবল রাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না তিনি। একই দশা রাজিয়া বেগমেরও। কিন্তু এই মুহুর্তে তারা তিনজন ব্যতীত আশেপাশে একটা মশা-মাছিও নেই। সুতরাং, এই সুযোগটা তিনি কোনো মতেই হাত ছাড়া করবেন না।

—-“কি গো বাছা? হঠাৎ রান্নাঘরে কেন কিছু দরকার?”

কড়াইয়ে খুন্তি নাড়তে নাড়তে বললেন রাজিয়া বেগম। নিহার শাশুড়ী মা নিঝুমের জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছিলেন। রাজিয়া বেগমের কথার রেশ টেনে তিনি ঠেস মা/রা কন্ঠে বলে উঠলেন,

—-“বুঝলেন বেয়ান, আজ-কালকার ছেলেমেয়েদের কি যে হয়েছে বাপু? বিয়ের আগেই কেমন ঢলাঢলি, মাখামাখি! শরমের কথা বাপু! আমাদের কালে বিয়ের পরেও তো এসব ভাবতে পারতুম না!”

ইলহাম রাজিয়া বেগমের প্রশ্নের পৃষ্ঠে কিছু বলার জন্য তৈরী হতেই তার মুখের কথা একরকম কেঁড়ে নিয়ে বলে ওঠেন নিহার শাশুড়ী। ইলহাম ঠিক বুঝতে পারে ভদ্রমহিলা কথাটা আসলে তাকেই উদ্দেশ্য করে ছুঁড়েছে।

—-“এসব হলো আজকালকার ফ্যাশন না কি জানি বলে বেয়ান। ওসব আমাদের বোঝার সাধ্যি নাই।”

—-“ফ্যাশান না ছাই! মন চায় তো জুতা পেটা করি! কি নির্লজ্জ বাপু? বলিহারি যাই এদের।”

—-“তা আর বলতে ভাই? আজকাল আমরা কি কিছু বুঝি? ছেলেমেয়েরা বলে আমরা নাকি ওল্ড ফ্যাশনে পড়ে আছি। স্মার্ট হতে বলে আমাদের। অথচ এক কালে কি সুন্দর জীবন ছিলো আমাদের।”

এমনই নানাবিধ কথা একেকটা তীরের মতো এসে বিধ্ব করে চলেছে ইলহামের মনকে। ইলহাম নিশ্চুপ, নিরুপায় হয়ে গিলে খাচ্ছে প্রতিটা তীর্যক বানী। এমন সময় হাজির হয় অন্তু। কোত্থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে সে। মায়ের উদ্দেশ্যে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,

—-“মা? জলদি এক কাপ কফি আমার রুমে পাঠিয়ে দাও। তাড়া আছে। বের হতে হবে।”

রাজিয়া বেগম বিরক্ত সূচক দৃষ্টিতে তাকায়। বলে,

—-“পারবো না এখন। হাতে অনেক কাজ।”

—-“মা প্লিজ! অনেক তাড়া আছে। লেট হলে সারে স-র্বনাশ ঘটে যাবে।”

নিহার শাশুড়ী কাজের চক্করে একবার তাকান ইলহামের পানে। ইলহামকে কফি বানাতে দেখে তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন,

—-“কি গো ইলহাম? তুমিও তো মনে হইতাছে কফি বানাও। একবারও কইতাছোনা মুখ ফুইটা! কি? কাম বাড়ার ভ/য়ে কইতাছো না?”

ইলহাম নিজের হাতে ধরে রাখা রাদের কফির মগ টা একবার দেখে, তো একবার নিহার শাশুড়ীকে। বিরস মুখে বলে,

—-“আসলে আন্টি রাদের ভীষণ মাথা ধরেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে দিচ্ছিলাম কফিটা। আমি উনাকে কফিটা দিয়ে এসে না হয়…”

—-“কফিটা নিয়া গেলে তোমার হবু বর তোমারে আর আসতে দিবো বইলা তো মনে হয়না মা। তার চেয়ে এইটা তুমি ওরে দিয়া দাও। আর রাদের জন্য না হয় আরেকটা বানায় নাও।”

ইলহাম অপ্রসন্ন মুখে তাকায় নিহার শাশুড়ীর দিকে। গুরুজন বলে মুখের উপর না-ও যে করতে পারছেনা। তাই বাধ্য হয়েই কফিটা দিয়ে দিলো অন্তুকে। রাদের জন্য বানানো জিনিস অন্তু এমন করে পেয়ে যাবে ভাবতে পারেনি একদম। মনের অজান্তেই পৈ/শা/চি/ক আনন্দে আত্মহারা হলো একরকম।

ইলহাম আর কিছু না বলে পূণরায় রাদের জন্য আরেক মগ কফি করে নিলো। এর মাঝে নিহার শাশুড়ী এবং রাজিয়া বেগমের আরও শ’খানেক ঠেস মা/রা কথা শুনতে হয়েছে তাকে। যা শুনে মনটা বারংবার অক্ষুণ্ণ হয়েছে বটে। তবে একটাবারের জন্য প্রতিবাদ করলো না।

—-“সামান্য একটা কফি করতে আধঘন্টা?”

রাদের কন্ঠে কিঞ্চিৎ রা/গের আভাস পেলো ইলহাম। রা/গবেই বা না কেন? বলেছিলো মাথা ব্যা/থা করছে। মাথা ব্যা/থা নিয়ে ছোট্ট একটা আবদার করেছে। তাতেও যদি এতোটা তালবাহানা থাকে তবে তো রাগার কথাই।

—-“সরি, আসলে…”

রাদ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ইলহাম ভ/য়া/র্ত দৃষ্টিতে দেখলো তাকে। রা/গ/টা কিঞ্চিৎ নয়, একটি বেশিই হয়েছে রাদের। তার দিকে তেড়ে আসতেই দ্রুত বেগে কফিটা নিয়ে পিছিয়ে পড়লে কফির মগ উপচে বেশ খানিকটা গরম কফি ঢেলে পড়ে তার হাতের উপর। সেদিকে রাদের চেতন নেই বললেই চলে। রা/গে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। দিনকে দিনকে একটা মানুষ আর কতকি সহ্য করবে?

—-“আহহহ!”

ইলহামের হাতটা পু/ড়ে গেলো। হাতটা জ্ব/লে ওঠাতে অস্পষ্ট স্বরে কাতরে উঠলো ইলহাম। রাদ কফির মগটা ছুঁড়ে ফেললো দূরে। রা/গে ফোঁস করে উঠে ইলহামকে ঠেসে ধরলো দেয়ালে। আকস্মিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-“আমার জন্য বানানো কফিটা তুমি এতো সহজে অন্তুকে দিয়ে দিতে পারলে? কিভাবে পারলে ইলহাম!”

ইলহামের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। তার বানানো কফি যে সে অন্তুকে দিয়েছে এ কথা সে কেমন করে জানলো?

—-“আমার জিনিসের এই এক চিমটি ভাগও আমি কাউকে শেয়ার করিনা! সেখানে তুমি…”

—-“আ্ আমি দিতে চায়নি!”

—-“বারনও তো করোনি!”

ইলহাম ঢোক গেলে। সত্যিই তো। সে দিতে না চাইলেও একবারের জন্যও তো বারন করলো না!

রাদ ইলহামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রা/গে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। ইলহাম অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। এক মুহুর্তের জন্য তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।

#চলবে

[ বিঃদ্রঃ মানলাম আমি ভালো লিখিনা। তাই বলে সামান্য, এই সামান্য টুকু রেসপন্সও করা যায়না?]#প্রেম_পিয়াসী 🌼🍁
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______৭.

উত্তরে মেঘেদের হাট বসেছে। পুনঃপুন, মেঘেদের সংঘর্ষে গর্জন করছে অন্তরীক্ষ। মনে হচ্ছে, আকাশ খানা মাঝখান থেকে ভে-ঙে পরবে এক্ষনি। ইলহাম বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে তা। গাড়ির সীটের সাথে পুরোপুরি লেপ্টে বসেছে সে। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা আজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ খানিকটা বাড়তি। জ্বর এসেছে বোধকরি। কিন্তু সে এ বিষয়ে উদাসীন।

রাদ গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে আঁড়চোখে একবার তাকালো ইলহামের মলিন মুখশ্রীতে। মেয়েটা আর ঠিক কতটা সহ্য করতে পারবে তা যে তার ধারণাতীত। নিজের ভেতরে কি নিদারুন য-ন্ত্র-ণা চেপে রেখে চুপটি করে বসে আছে। যেন কিছুই হয়নি। অথচ তার ভেতরটা ঠিক কতটা ছটফট করছে তা হয়তো তার বোঝার সাধ্যে নেই। মেয়েরা মায়ের জাত। লোকে ঠিকই বলে। মেয়েদের ন্যায় সহ্য শক্তি এই পৃথিবীর কারোর মাঝে নেই।

—-“খুব বেশি পেইন হচ্ছে, সুইটহার্ট?”

রাদের চিন্তান্বিত কন্ঠে ধ্যান ভা-ঙে ইলহামের। হঠাৎ নড়েচড়ে বসতে বসতে মুখের সামনে ঝুঁকে পড়া চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে নেয়। আমতা’আমতা করে বলে,

—-“ন..না।”

ইলহামের ইতস্তত গলায় আবারও আঁড়চোখে তাকায় রাদ। ইলহামকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে,

—-“শুনেছি এই সময় ডার্ক চকলেট খেলে অনেকটা রিলিফ হয়। ডেস্কের ভেতর রাখা আছে। খুললেই পাবে। খাবে?”

ইলহাম না সূচক মাথা নাড়ে। পূর্বের ন্যায় ইতস্তত গলায় বলে,

—-“খেতে ইচ্ছে করছেনা।”

—-“খেলে হয়তো রিলিফ হতো কিছু টা। একটু প্লিজ?”

রাদের অনুনয়ী কন্ঠস্বর মন কেঁড়ে নিলো ইলহামের। মনে মনে ভারী খুশিও হলো সে। তবে মুখে প্রকাশ করলো না। এগিয়ে গিয়ে ডেস্ক খুলতেই দৃশ্যমান হলো দুটো বড় আকারের চকলেট। ইলহাম চকলেট দুটো উঠিয়ে আনতে আনতে ভ্রু কুঁচকালো। বলল,

—-“কার জন্য এমন করে চকলেট নিয়ে ঘোরেন?”

ইলহামের প্রশ্নে অধিকার বোধটা ঠিকই ধরতে পারলো রাদ। মনেমনে খানিক হেঁসে ইলহামকে জেলাস করানোর উদ্দেশ্যে বলল,

—-“যখন যার প্রয়োজন। এই মনে করো এখন তোমার প্রয়োজন হলো!”

ইলহাম রোষপূর্ণ কন্ঠে বলে ওঠে,

—-“মানে? আপনি কি মেয়ে নিয়ে ঘোরেন নাকি?”

—-“হ্যাঁ! তো আর কি করবো বলো? সবাই তো আর তোমার মতো নয়। তোমার কোনো আইডিয়া আছে, মেয়েরা রাদ বলতে কতটা পাগল?”

ইলহাম ফুঁসে উঠলো। তেতে ওঠা গলায় বলল,

—-“তাই বলে নিজের পাশের সীটে মেয়েদের বসিয়ে রাখবেন!”

—-“হ্যাঁ! তাছাড়া আর কি করবো…”

—-“গাড়ি থামান। আমি যাবো না আপনার সাথে!”

রাদ কথাটা সম্পূর্ণ করার পূর্বেই হাতের চকলেট ফেলে দিয়ে রা-গান্বিত হয়ে বলে উঠলো ইলহাম। রাদ চোখ জোড়া গোলগোল পাকিয়ে তাকালো। অবাক হওয়ার তীব্র প্রচেষ্টা চালিয়ে বলল,

—-“কি হলো? তুমি হঠাৎ রাগছো কেন?”

—-“বললাম তো গাড়ি থামান। সোজা কথা বুঝেন না? নয়তো আমি এই ঝাপ দিলাম গাড়ি থেকে।”

রাদ আঁতকে উঠল ইলহামের কথায়।

—-“হোয়াট! ওয়েট আ সেকেন্ড!”

বলেই গাড়ি পার্ক করলো রাদ। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো ইলহাম। রাদ কিছু বলার সুযোগ অব্দি পেলোনা।

—-“কোথায় যাচ্ছো? আরে ওয়েট!”

বলতে বলতে রাদও নেমে এলো গাড়ি থেকে। ইলহাম সামনের দিকে হেঁটে গেলো অনেকটা। রা-গে তার শরীরে ফো-স্কা উঠতে লাগলো। কত্ত খারাপ লোকটা। তারই ভুল! সেই বারবার ভুল করে তাকে চিনতে। একজন মা-ফিয়া নাকি হবে, এক নারীতে আসক্ত! এসবও কি সম্ভব?

—-“সুইটহার্ট…”

রাদ দ্রুত পায়ে এসে ইলহামের হাত ধরে ফেললো। কেউ হাত ধরে নেওয়াতে ইলহামের পায়ের গতি থেমে গেলো। পেছন মুড়ে তাকিয়ে যখন দেখলো রাদ তখন যেন রাগটা আরও তরতর করে বাড়তে লাগলো।

—-“কি সমস্যা, হ্যাঁ! হাত ধরেছেন কেন? হাত ছাড়ুন!”

—-”কোথায় যাচ্ছো তুমি? আরে বাবা কি হয়েছে হঠাৎ! এতো রে-গে গেলে কেন?”

ইলহাম অবাক হওয়ার চেষ্টা করে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলে,

—-“ও রিয়েলি? আপনি জানেনই না কেন রা-গ করছি?”

রাদ ঠোঁট উল্টায়। কয়েক মুহুর্ত ভাবে। অতঃপর মাথা চুলকে বলে,

—-“আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা।”

ইলহাম ফুঁসে ওঠে রা-গে। রাদের থেকে টেনেটুনে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,

—-“ওকে ফাইন। কোনো প্রয়োজন নেই আপনার চিন্তা করার। এবার আমার হাত ছাড়ুন।”

—-“আচ্ছা ছাড়ো সব কথা। আমায় একটা কথা বলো, তুমি কি কোনো ভাবে হিং-সা করছো। ইফ আ’ইম নট মিস্টেকেন, ইউ আর বিয়িং জেলাস!”

ইলহাম সা-পে-র ন্যায় ফোঁ-স করে উঠলো। পূর্বের ন্যায় বেশ জোরাজোরি করলো নিজের হাতটা ছাড়িয়ে আনার। কিন্তু যেই না ব্যর্থ হলো ওমনি রা-গটা যেন আরও দিগুণ বেড়ে গেলো। তাই পূণরায় ক্ষে-পা স্বরে বলে উঠলো,

—-“আমার খুব সময় তো আপনার এসব ফালতু বিষয় নিয়ে জে-লাস ফিল করার। অসহ্যকর লোক একটা।”

রাদ আচমকা হেঁচকা টানে কাছে নিয়ে এলো ইলহামকে। তার হাত দুটো নামিয়ে দিলো ইলহামের কোমরে। দু-হাতে ইলহামের কোমর জড়িয়ে তাকে মিশিয়ে ধরলো নিজের সাথে। ইলহাম জড়োসড়ো হয়ে পরলো রাদের ছোঁয়ায়। মুখের কথা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভূতিরাও স্তব্ধ হয়ে পরলো যেন। রাদ মোহিত হাসলো। ফিসফিসিয়ে বলল,

—-“প্রেমে পরেছো তাই না? কেন মানছো না বলোতো?”

—-“ফালতু কথা একদম। আমার প্রেমে পরার মতো এতো অঢেল সময় নেই।”

ইলহাম তটস্থ গলায় জবাব দিলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে রাদ আরও শক্ত করে হাতের বাঁধন। ইলহাম শ্বাসরুদ্ধ করে ন্যায়। ঢোক গিলে কিছু বলতে যায় তার পূর্বেই অদ্ভুত মোহনীয় স্বরে গেয়ে ওঠে রাদ,

—-“ভালোবাসি বলে দাও আমায়,
বলে দাও,হ্যাঁ সব কবুল।
তুমি শুধু আমারি হবে,
যদি করো মিষ্টি এই ভুল।
হাতে হাত রাখতে পারো~
সন্ধি আঙ্গুলে-আঙ্গুল।
ভালোবাসা বাড়াতে আরওও
হৃদয় ভীষণ ব্যাকুল।”

ইলহাম পলকহীন চেয়ে রইলো রাদের পানে। লোকটা এমন কেন? কত অল্পতেই ভীষণ মায়ায় জড়িয়ে নেয়। কি অদ্ভুত ক্ষমতা তার।

—-“তোমার চোখ বলে, ‘ভালোবাসো তুমি আমায়। মন বলে পা-গলের ন্যায় ভালোবাসো আমায়। অথচ মুখ কি নিদারুন ভাবে অস্বীকার করে যায়। তুমি টের পাওনা আমার ব্যাকুল হৃদয়ের আ-র্ত-নাদ? একদম বুঝতে পারোনা।”

—-“না। আ..আমি বিশ্বাস করিনা আপনার মতো একজন পা/ষা/ণ মানুষ কাউকে ভালোবাসতে জানে।”

রাদ কপাল কুঞ্চিত করে।

—-“আজও তোমার মনে হয়, আমি কাউকে ভালোবাসতে পারিনা?”

—-“হ্যাঁ। আর কেবল আজই নয়। আমি সারাজীবন জানবো,আপনার মতো পা/ষা/ণ ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসতে জানেনা।”

—-“আমার অপরাধ?”

ব্যাকুল কন্ঠে প্রশ্ন করে রাদ। ইলহাম জবাব দেয়না। মুহুর্তেই কুলুপ এঁটে ন্যায় মুখে। রাদ ইলহামের নিশ্চলতায় ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কথা বাড়ায় না আর। ইলহামের হাত ধরে নিয়ে যায় গাড়িতে। অতঃপর যাত্রা শুরু করে মালিহার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

_______________

ছোট্ট এক আঙ্গুলের সমান ধারালো ছুরিটায় কা/টা পড়ে মিশা সরকারের একটা আঙ্গুল। আঙ্গুল টা নীচে পড়তেই র//ক্ত ভেসে ওঠে পুরো ফ্লোর। লোকটা বাঁচার আশায় আ/র্ত/নাদ করে চেঁচাতে থাকে। রাদ র’/ক্তা/’ক্ত ছুরিটা রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বসে পরে রকিং চেয়ারটায়। গা এলিয়ে টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকায় একটা ছেলের পানে। রাদের তাকানোতে ছেলেটা বুঝে যায় রাদের আদেশ। তাই দ্রুত পায়ে তেড়ে গিয়ে ঠেসে ধরে মিশা সরকারের মুখ। অমনি বন্ধ হয় ঝনঝন করে বাজতে থাকা তার গলাস্বর।

—-“বড্ড বেশি চেঁচায়!”

বিরক্ত গলায় বলে ওঠে রাদ।

—-“একটা আঙ্গুলই তো কা/’টা পড়েছে। তাতে কি এমন অসুবিধা হলো বুঝিনা। হ্যাঁ, অসুবিধা তো একটা হয়েছে। সেটাও তো বেশি বড় নয়। ছোট্ট। কিরে সামির? বল?”

—-“হ বস। ঠিক কথা।”

সামির মিশা সরকারের মুখটা আরও জোর দিয়ে চেপে ধরে বলে উঠলো। রাদ বাঁকা হাসলো। বলল,

—-“কি অসুবিধা বলতো?”

—-“এই যে, আপনারে কথা দিয়া আর যেন কারোর সাথে ডিল সাইন করতে না পারে। বস? এডি সব হইলো নেমকহা’রা’মের দল। বুঝেন না।”

—-“ইয়েস। এটা তো স্রেফ ডেমো মিস্টার মিশা সরকার। সামনে আরও কতকি অপেক্ষায় আছে তোমার! ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া। যাহ! নিয়া যা শা/লা/রে। ডেইলি মনে করে থার্ড ডি/গ্রি ট/র্চা/র করবি। আর যদি না পারিস।..”

—-“এ-একশ বার পারুম বস। আপনি এতো চিন্তা নিয়েন না। এই সামির থাকতে আপনার কোনো টেনশন নাই।”

রাদ মৃদু হেসে মাথা নাড়ে। যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে বলে,

—-“আপডেট জানাতে থাকবি। ম/রা/র আগ পর্যন্ত ঠিক এমন করেই যেন আ/র্ত/না/দ করতে থাকে।”

—-“ওকে বস।”

#চলবে#প্রেম_পিয়াসী ❤️
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব_______৮

মোট তিন ঘন্টা সম্পূর্ণ করে শেষ হলো দ্বিতীয় ক্লাসটা। সেদিন এতো রাগারাগি করার পর ইলহাম মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো রাদ হয়তো সত্যি তাকে আর আসতে দিবেনা ভার্সিটিতে। কিন্তু আজ সকালে উঠে নিজেই সঙ্গে করে নিয়ে এলো তাকে। ইলহাম অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো তার পানে। অবশ্য তাতে তার বিন্দু মাত্র গ্রাহ্যকরন ছিলোনা বললেই চলে। তার মন কখন কি বলে, সে হয়তো নিজেও জানেনা। পুরো দস্তুর পা/গ/ল লোক একদম।

—-“কিরে ইলহাম? আজকাল দেখি, চিনেও চিনিস না। ব্যপার কি রে?”

দূর থেকে এক মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসতেই আগ্রহ মন্ডিত দৃষ্টিতে তাকায় ইলহাম। নুরী দাঁড়িয়ে আছে। তার এবং নুরীর ডিপার্টমেন্ট একই। কিন্তু সখ্যতা একদম নেই বললেই চলে। কেবল নুরী নয়, মিশমিশের মৃ//ত্যু//র পর থেকে ইলহামের আর কারোর সাথেই সেই সখ্যতাটা গড়ে ওঠেনি কোনোদিন।

ইলহাম মলিন হাসে। বলে,

—-“তেমন কিছু না রে। ক্লাসে আসি, ক্লাস করি আবার চলে যাই। তাড়া থাকে।”

নুরী বসে তার পাশের চেয়ারটায়। মাত্র কয়েক মিনিট গড়ালো ইলহাম একটা কফির অর্ডার চেয়ে বসেছে ক্যান্টিনে। নুরী তার পাশে বসাতে সে ক্যান্টিনের ছেলেটাকে ডেকে আরেক কাপ কফি দিতে বলবে কি, তার পূর্বেই বেশ রসালো কন্ঠে বলে উঠলো নুরী,

—-“শুনলাম আজকাল গু/ন্ডা/পা/ন্ডা/র বাড়িতে উঠেছিস? কিছু চলছে নাকি তলে তলে!”

—-“কি বলছিস আবোলতাবোল।”

—-“আবোলতাবোল বলছি, নাকি সত্যিটা স্বীকার করতে চাস না।”

—-” অস্বীকার করার কি আছে? আমি রাদের সঙ্গে থাকি। আর সে অবশ্যই কোনো গু/ন্ডা/পা/ন্ডা নয়। নাম করা বিজনেস ম্যানদের মধ্যে বিশেষ একজন।”

ইলহামের প্রতিবাদী গলায় উত্তরটা পেয়ে মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো নুরীর। পূর্বের ন্যায় একই স্বরে বলে উঠলো,

—-“বাবাহ! এতো দেখি এখনই টান। তা হ্যাঁ রে? বিয়ে করবে তো? নাকি এভাবেই খেয়ে দেয়ে…”

ইলহামের রা/গে কপালের রগ ফুলে উঠলো। রাগান্বিত দৃষ্টিতে নুরীর পানে তাকাতেই নুরী খিটখিট করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে ঢলে পড়ার মতো অবস্থা। ইলহাম ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নিজের ক্রো-ধটা পি-ষে নিলো নিজের ভেতরেই। নুরী সবসময়ই লাগামহীন মেয়ে। ওর কথা এবং কাজের কোনোটিরই ঠিক নেই। তাই মুখ লাগতে যাওয়াটাও হবে বোকামি।।

—-“শোন ইলহাম, তোকে একটা ফ্রী এডভাইস দিবো। এইসব খাওয়া-পরা লোকদের থেকে যত পারবি দূরত্ব তৈরি করে রাখবি। বুঝি তো, তোদের আসল সমস্যা হলো টাকা! টাকা দেখেছিস ওমনি ঝাঁপিয়ে পরেছিস! আরে বাবা, ভালো-মন্দ বিচার করে নে। কয়দিন পর কি খবরের কাগজের হেডলাইন হওয়ার সখ আছে নাকি?”

ইলহাম জ্ব/লে উঠলো অপমান বোধে। তীব্র
আ/ক্রো/শে ফেটে পরে কিছু বলতে নিলেই কারোর আগমন ঘটে ঠিক তার পাশের চেয়ারটায়। ইলহাম থম মে//রে যায় তাকে দেখে। তার মুখের কথাও ফুরিয়ে আসে এক প্রকারে।

—-“ইশশ! তোমার বড্ড আক্ষেপ হবে তাই না নুরী?”

রাদের গম্ভীর কন্ঠটি কানে বাজতেই আঁ/ত/কে ওঠে নুরী। ও কোনো ভাবেই এই মুহুর্তে আশা করেনি রাদকে। ভ-য়ে ওর গলা শুঁকিয়ে এলো। মনে হলো যেন, যমের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে সে। ম/র/ন তো পাক্কা সার্টিফিকেট একদম।

—-“ম..মিহাদ আবরিশাম..”

—-“রাদ।”

মুচকি হেসে নিজের নাম উচ্চারণ করে রাদ। নুরী ঢোক গেলে। চেয়ার ছেড়ে উঠে পালানোর সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে ইলহামের উদ্দেশ্যে বলে,

—-“ই..ইলহাম! ত..তোরা কথা বল। আ..আমি ব..বরং উঠি!”

—-“সেকি? তোমার কথা এতো জলদি শেষ? না না, এটা কেমন একটা হয়ে গেলো না? এই যে এক্ষনি বলছিলে আমরা খাওয়া-পরার লোক! এন্ড ইলহামের টাকা পয়সা দেখে লোভ হওয়া এট অল!”

নুরীর মুখটা চুপসে যায় পানসিটের ন্যায়। রাদ যে তাকে তার কথাতেই শা/সা/চ্ছে সে কথা বুঝতে বাকি নেই তার। এখন ভ/য় হলো, এই মা/ফিয়া লোকটা আবার ক্ষে/পে উঠে না তার কপালেই ব/ন্দু/ক ঠেকায়।

—-“ও..ওতো আমি ম..মজা করছিলাম, স্যার। আ..আপনি প্লিজ সিরিয়াসলি নিবেন না। ইলহাম কিন্তু আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড। আস্ক করুন ওকে?”

নুরী জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল কথাগুলো। রাদ আঁড়চোখে চোখে তাকালো ইলহামের পানে। ইলহাম নিশ্চল ভঙ্গিতে বসে আছে। নুরীর শেষোক্ত কথাটা শুনতে অবশ্য একটু নড়েচড়ে বসলো। রাদ তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না। বরং পূনরায় নুরীকে বলল,

—-“আই থিংক দেয়ার ইজ নো নিড টু আস্ক হার, নুরী। বিকজ, আই নো বেটার দ্যান হার! কে ওর রিয়েল ফ্রেন্ড এন্ড কে ওর ফেইক ফ্রেন্ড।”

নুরী বিষম লেগে কেশে উঠে। এখানে তার আর কিছুই বলার নেই। কেবল সুযোগ খুঁজছে ছুটে পালানোর।

—-“সুইটহার্ট? ক্যান উই গো..”

রাদ চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বেশ আরাম করে বসলো। পরনে মেরুন রঙের শার্টের হাতাটা ফোল্ড করতে করতে ডান হাতে মাথার চুল গুলো ঠিক করলো। অতঃপর ইলহামের দিকে তাকিয়ে যাওয়ার কথা বলে উঠলো।

ইলহাম সামনে বসে থাকা নুরীর দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। কিন্তু তাকে আর কিছু বলতে গেলো না। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাদের উদ্দেশ্যে বলল,

—-“চলুন।”

—-“বাই দ্য ওয়ে, কিছু অর্ডার করেছিলে এখানে?”

—-“হু,কফি।”

—-“ওকে দ্যেন, তুমি গাড়িতে গিয়ে অপেক্ষা করো। আমি কফিটা নিয়ে আসছি।”

ইলহাম মৃদুভাবে মাথা নাড়লো। অতঃপর আর বসে না থেকে চলে গেলো গাড়ির কাছে। এদিকে রাদ গেলো তার জন্য কফি নিতে। ইলহাম গাড়ির দরজা খুলে প্রবেশ করবে কি, তার পূর্বেই কেউ এসে ক্ষ/প করে তার হাতটা ধরে ফেললো। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো ইলহাম। ইলহাম এই মুহুর্তে এখানে রাদ ব্যতীত কাউকে এক্সপেক্টই করেনি। কিন্তু যাকে দেখলো, তাকে দেখতেই মাথা ঘুরে গেলো তার। এ যে অন্তু!

—-“আর কত ছেলের জীবন ন/ষ্ট করবে তুমি? আমাকে ভালোবাসার মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে এখন.. এখন না জানি আবার কোন বড়লোক ছেলেকে ফাঁদে ফেলেছো তুমি। তোমার উদ্দেশ্য টা কি বলো তো ইলহাম? কি চাও তুমি?”

ইলহামের আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে অন্তুর এমন তীর্যক বানীতে। ভীষণ রা-গে ফোঁস করে ওঠে ভেতরটা। সে ছেলেদের জীবন ন/ষ্ট করে? সে? আর এসব কথা কে বলছে? এই লোকটা! যে কি না দিনের পর দিন নারী নেশায় আসক্ত হওয়া ছাড়া এবং মানসিক অশান্তি দেওয়া ছাড়া তাকে কোনোদিন কিছু দিতেই পারেনি!

ইলহাম ঝাটকা মে//রে সরিয়ে নেয় নিজের হাত।
রা/গে ক্ষো/ভে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,

—-“যা করেছি এবং যা করছি সত্যি বলতে কোনোকিছুতেই আমার কোনো আক্ষেপ নেই অন্তু! ফ্যাক্ট, আমি ভালো আছি! অন্তত তোমার মতো এপজন চিপ মানুষের থেকে আলাদা হয়ে তো অনেক বেশি ভালো আছি।”

অন্তু ঝাঁঝ মিশ্রিত গলায় বলে ওঠে,

—-“তোমার মতো থার্ডক্লাস মেয়েদের কাজই তো এটা। এতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। তা এবার কি দান মা/র/লে? এই তো, ক’দিন আগেই শুনলাম চেতন নামে একটা ছেলের সাথে এনগেজমেন্ট করতে যাচ্ছিলে। কিন্তু হয়নি। তোমার সব আশা,ভরসা,লোভ-লালসা সব ভঙ্গ করে দিয়ে চেতন এই এনগেজমেন্টটা ভে/ঙে দেয়। তো বলো? কি লাভ হলো বড়লোক ছেলে খুঁজে?”

ইলহাম অবাক হয়।

—-“প্রথমত, এই এনগেজমেন্ট আমি বা চেতন আমরা কেউই ভা/ঙিনি। এবং দ্বিতীয়ত, আমার কোনোদিনও টাকা-পয়সা, লোভ-লালসা এসব ছিলো না অন্তু। এমন কি আমি এটা অব্দি জানতাম না, চেতন ধনী নাকি গরীব! চেতনের বিশাল বড় বাংলো আছে নাকি ছোট্ট কুঁড়েঘর আছে!”

অন্তু শব্দ করে হেঁসে ওঠে। ইলহাম আন্দাজ করে নেয় এই হাসি তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে হাসছে অন্তু। গত দুই বছর পূর্বে অন্তু এবং তার মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। এবং সেখান থেকেই দু’জন দু’জনের প্রেমে পড়ে। প্রথমে তো বেশ ভালোই যাচ্ছিলো তাদের সম্পর্কটা। কিন্তু হঠাৎ একদিন সব তছনছ হতে শুরু করে। কেননা, অন্তু তার আড়ালে আরও একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে। এমনকি ব্যাপারগুলো এতোটাই জঘন্যতম ছিলো যে,ইলহাম এক রকম মানসিক রোগীতে পরিনত হয়ে পরেছিলো। ক্রমাগত তাকে বেড শেয়ারের জন্য অন্তুর ফোর্স করা,দিনের পর দিন তার শারীরিক গঠন নিয়ে মন্তব্য করা এর কোনোটাই মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিলোনা ইলহামের জন্য। তাই সে বাধ্য হয়, এই সম্পর্ক ভে/ঙে ফেলতে। এবং সে সেটাই করেছিলো। কিন্তু তাতে যেন ইলহামের অশান্তি বাড়লো বৈ কমলো না এক বিন্দুও। সম্পর্ক ভাঙার পর থেকে অন্তু তাকে অন্য ছেলেদের দিয়ে অপমান করাতে, হ্যারা-স-মে-ন্ট করাতে উঠেপড়ে লাগে। গত দুই বছর যাবত অন্তুর এসব মানসিক ট-র্চা-র মুখ বুঁজে সহ্য করে আসলেও এখন আর একদম করেনা। এমনকি আর কোনো কিছুতেই সে ছাড় দেয়না অন্তুকে।

—-“কি বলো তো অন্তু, যে মানুষটা সত্যি সত্যি ভালোবাসতে জানে সেই পারে তার ভালোবাসার মানুষটাকে সম্মান করতে এবং অবশ্যই তার সম্মান রক্ষা করতে। সে নিশ্চয়ই তোমার মতো এতোটা জ-ঘ-ন্য হয়না। যে নিজে পারছেনা বলে, তার মতোই আরও দশটা কুকুর ভাড়া করে! কেন? তার একসময়ের ভালোবাসার মানুষকে ছোট করতে! সত্যি বলতে আমি আর এখন এসব নিয়ে ভাবিনা। কষ্ট পাওয়া তো অনেক দূরে থাক। আমার এখন তোমার এসব কান্ডতে স্রেফ হাসি পায়।”

অন্তু তেতে ওঠে। রাগে ফোঁস করে ওঠে পূর্বের ন্যায় পূণরায় ইলহামের হাতটা চেপে ধরে। জোর করে নিজের দিকে টেনে এনে দাঁত কামড়ে রাগের বহিঃপ্রকাশে বলল,

—-“খুব বড় বড় কথা বলতে শিখেছো দেখছি! যখন আমার সাথে বেড শেয়ার করতে রাজি হয়েছিলো তখন কোথায় ছিলো এসব বুলি?”

—-“অন্তু!”

ঝাঁঝালো কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো ইলহাম। অতিরিক্ত রাগ এবং ঘৃনায় র-ক্তি-ম আভায় ঘিরে উঠেছে তার মুখ খানা। ভেতরটা জ্ব/লেপু/ড়ে যাচ্ছে অন্তুর কুৎসিত রুচিসম্পন্ন কথায়।

অন্তু পৈশাচিক আনন্দে হেসে উঠলো। ইলহামের চোখ জোড়া সিক্ত হলো অপমানের আঁচে। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই! যে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব সেই মানুষই পশুর চেয়েও নি/কৃ/ষ্ট! আর সেটারই জলজ্যা/ন্ত উদাহরণ এই লোকটা।

—-“বলবো আরও কি কি করতে চেয়েছো আমার সাথে? লোক জড়ো করে বলি তোমার কিচ্ছা কাহিনি? লোকেরও ঠিক তোমার মতোই আনন্দ হবে। ট্রাস্ট মি!”

ইলহাম লজ্জায়, অপমানে নিচু করে নিয়েছিলো তার মস্তিষ্ক। কিন্তু যেই না অন্তুর শেষোক্ত কথাটা তার কানের পর্দা ভেদ করে গেলো অমনি বিকট শব্দে কেঁপে উঠল চারিপাশ। না; অন্য কেউ নয়। ইলহাম নিজেই নিজের ঢাল হয়েছে এবার। ডান হাতটা অন্তু চেপে রাখায় তার সমস্ত জোর এবার জমা হয়েছিলো বাঁ হাতে। আর বাঁ হাতেই সশব্দে কসিয়ে এক চড় বসিয়ে দিলো অন্তুর বাঁ গালে। চড় খেয়ে অন্তু পিছিয়ে পরতে বাধ্য হলো। চারপাশের উপস্থিত জনতা আকস্মিক থমকে তাকালো। অন্তু গালে হাত দিয়ে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো ইলহামের পানে। যেন এক্ষনি চোখ দিয়ে গিলে খাবে ইলহামকে। ইলহামও ঠিক তারই মতো অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পানে। অন্তু দাঁতে দাঁত চেপে ইলহামের দিকে তেড়েফুঁড়ে যেতেই আকস্মিক তাদের সামনে এসে দাঁড়াল রাদ। তার দৃষ্টি স্বাভাবিক। মুখের ভাবভঙ্গিও স্থীর। এর মানে পূর্বে যা যা ঘটলো তার কিছুরই সাক্ষী হয়নি সে। হলে হয়তো এক্ষনি লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যেতো এখানে।

—-“অন্তু! তুই এখানে?”

রাদের একহাতে ইলহামের জন্য কফি এবং অন্য হাতে বার্গার। রাদ অন্তুকে প্রশ্ন করতে করতে পায়ের সাহায্যে গাড়ির দরজা খুলে খাবার গুলো রেখে দিলো। অতঃপর আবারও সোজা হয়ে দাঁড়ালো ঠিক অন্তুর সামনে। রাদকে দেখতেই অন্তুর দৃষ্টি কেঁপে উঠল আকস্মিক। মনটা কেমন কামড়ে উঠলো, “রাদ এখানে কেন?”

রাদ পাশ ফিরে একবার তাকালো ইলহামের পানে। ফের তাকালো অন্তুর দিকে। কিছু একটা আন্দাজ করতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। তাই ইলহামের উদ্দেশ্যে বলল,

—-“কি ব্যাপার সুইটহার্ট? তুমি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে! তোমায় সেই কখন বললাম, গাড়িতে বসতে?”

ইলহাম ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে একবার তাকালো অন্তুর পানে। অন্তু কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে তাদের পানে। অর্থাৎ সে হতবিহ্বল হলো রাদের মুখে “সুইটহার্ট” শব্দটা শুনে। রাদ ইলহামকে সুইটহার্ট বলে কেন ডাকলো?

—-“হ..হ্যাঁ বসেছিলাম। হঠাৎ উনাকে এখানটায় পরে যেতে দেখে আবার বের হয়ে আসলাম। (অন্তুর দিকে তাকিয়ে) আর ইউ ওকে, ভাইয়া? হঠাৎ পরে গেলেন কিভাবে!”

অন্তুর দিকে তাকিয়ে ইলহামের শেষোক্ত বাণীতে যেমন রাদ চমকায় তার চেয়েও অধিক চমকায় অন্তু। ইলহাম তাকে ভাইয়া বলছে? কত্ত বড় দুঃসাহস!

—-“মানে? কি রে! পরে গেলি কিভাবে?”

রাদ অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে ওঠে। অন্তু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকায় ক্রমশ। সে জানেনা তার উত্তর কি হতে পারে। তবে এই টুকু ঠিকই আন্দাজ করতে পেরেছে, “রাদ ইলহামকে সুইটহার্ট বলছে কারন, মায়ের মুখে শোনা ‘রাদের হবু বউ’ আর কেউ নয়! ইলহাম!

অন্তুর মাথায় বাজ পরলো যেন। এটা অসম্ভব! রাদ কিছুতেই ইলহামকে বিয়ে করতে পারেনা। সে থাকতে তো অবশ্যই না।

#চলব______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here