#প্রেম__প্রিয়জন🌸
#Writer_Sumaiya_Karim
~দ্বিতীয় পর্ব~
–‘আই হেট ইউ বাবা! আই হেট ইউ মা! আই হেট ইউ এ লট। তোমরা দুজন খুব স্বার্থপর। আমার সাথে নিষ্ঠুর ভাবে বেঈমানি করেছো। বেঈমান তোমরা! আর বেঈমান রা কখনো কোনো সন্তানের বাবা মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না!’
কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ি। মাথা ব্যথায় যেনো ফেটে যাচ্ছে। এতো কষ্ট কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। পূর্ণ ভাই আমার গায়ে হাত তুলেছে বলে নাকি অন্য কারণ? হুট করে গগন কাঁপিয়ে একটা বজ্রপাতের শব্দ হলো। নিজেও যেনো কেঁপে উঠলাম কয়েকশো গুন বেগে। গুরি গুরি বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগলো। এই বুঝি আজ আকাশের ও মন খারাপ। আস্তে আস্তে নেমে এলো ঝুম বৃষ্টি। এক চুল পরিমাণ ও নড়লাম না আমি। ভালোই তো লাগছে। বসে বসে চোখের পানি ফেলছি। যা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে যেতে থাকলো অবিরাম। আচমকা কি হলো বুঝে উঠার আগেই কেউ ঝট করে আমার হাত টেনে ধরে আমাকে দাঁড় করিয়ে নিলো। আধখোলা চোখে তাকিয়ে দেখলাম পূর্ণ ভাই। রাগে দুঃখে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি।
–‘ছাড়ুন আমাকে!’
ঝুম বৃষ্টির মধ্যে আমার কথা উনার কান ওবধি পৌঁছালো কিনা জানিনা। তবে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি কিন্তু পেরে উঠছি না ওমনি ধাম করে উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। হা হয়ে আছি। ছাঁদ থেকে সিড়ির দিকে নিয়ে আসলে নামার জন্য হাত পা ছুটাছুটি করতে থাকি। এসব দেখে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না মনে হলো গম্ভীর মানুষ টা।
–‘ইঁদুরের মতো ছুটাছুটি করতে থাকলে এখনি এখানে দুম করে ফেলে দিবো!’
ইয়া লম্বা হাতি টার কোল থেকে নিচে সিড়িতে পড়লে নিজের হাড্ডি গুড্ডির হদিস পাবো কিনা সিউর হতে পারছি না। তাই বলে মুখে সুপারগ্লু লাগিয়ে রাখবো? ইম্পসিবল!
–‘আপনি আমায় কোলে তুললেন কেন? নামান বলছি!’
–‘যেভাবে বৃষ্টি তে ভিজছিস পরে অসুস্থ হলে তো আমাকেই অভিশাপ দিবি!’
একটু আগে চড় মেরে এখন ভালোবাসা দেখাতে আসছে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। পূর্ণ ভাইয়ের কোলে আমাকে দেখলে জেঠা জেঠি মা খারাপ ভাববে। কোল থেকে নামতেই হবে আমাকে। তাই নতজানু হয়ে বললাম,
–‘আমাকে নামিয়ে দিন। জেঠা জেঠি মা খারাপ ভাববে!’
আমার কথায় মানুষ টার কোনো রেসপন্স ই নেই। আজব!
–‘কি হলো শুনতে পারছেন না?’
আমার কথা কানে তো নিলোই না উল্টো ডোন্ট কেয়ার ভাব করে সিড় ভেঙ্গে নিচে নামতে থাকলো। ইচ্ছা তো করছে একটা বাড়ি মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতে! কিন্তু কি করে দিবো?
–‘নামান আমাকে। কি হলো? বয়রা হয়ে গেছেন নাকি?’
আশ্চর্য!
অনেক চেঁচামেচি করার পর রক্ষা পেলাম। কোল থেকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হলো আমাকে। পূর্ণ ভাই আমার দিকে রেগে তাকাতেই যাচ্ছিলো হঠাৎ করেই পেছন ফিরে নিজের দিক পরিবর্তন করে ফেললো। এটা কি হলো? নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম শাড়ি টা ভিজে একদম লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। ফলে আমার পেটের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে। শাড়ি টেনে তা ঢাকার চেষ্টা কতলাম। দেখতে বিশ্রি লাগছে। ছিঃ ছিঃ এই অবস্থায় উনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি? লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে যেই দৌড় লাগাতে লাগলাম ওমনি ঠাস করে পড়ে গেলাম নিচে। হায় আল্লাহ এটা কি হওয়ার ই ছিলো? পা টা মনে হয় মচকে গেছে। নাহ একদম নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করা যাবে না।
উঠতে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। ভেজা কাপড় তাই পিছলে আবার পড়ে যাচ্ছি। পূর্ণ ভাই না চাইতেও পেছন ফিরলেন। রাগি দৃষ্টি নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে এখানে?’
আমার মতো পূর্ণ ভাই ও ভেজা শার্ট প্যান্ট নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও ভিজে গেছেন। বুঝলাম না এতো আদিক্ষেতা দেখানোর কি দরকার টা ছিলো? ব্ল্যাক শার্ট পড়ে আছেন। বুকের উপরের দুটো বোতাম খোলা হওয়ায় বুক টা কিছুটা স্পষ্ট। চুল কয়েক গুচ্ছ ভিজে কপালের সাথে জাপটে ধরে আছে। বাকি গুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে পড়ে আছে। রেগে থাকায় নাকের ডগা হালকা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। শুনেছি মেয়েদের এমন হয় ছেলেদের ও হয় জানা ছিলো না। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর পাতলা ওষ্ঠযুগল অমায়িক চক্ষু দ্বয়ের মানুষ টা কে আজ ভালো করে দেখলাম। তাও প্রথম বারের মতো। আগে কখনো দেখা হয় নি। এমন ভাবে দেখছি যে নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। নিজেকেই বকা দিয়ে সংযত করে নিলাম।
–‘চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবি আমাকে?’
পূর্ণ ভাইয়ের কথায় হুস ফিরলো।
আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। এখন যদি জেঠি মা এসে যায় তাহলে? আবারো উঠতে গিয়ে পড়ে যেতে যেতে ও পড়লাম না। এক হাত বাড়িয়ে ধরে রাখলেন পূর্ণ ভাই। তাও খুব শক্ত করে। এবার উঠতে সুবিধা হলো। উঠে আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালাম না সতর্কতা অবলম্বন করে দৌড় দিই। তবে যাওয়ার আগে উনাকে বলে গেলাম,
–‘কাউকে মেরে তারপর ভালোবাসা দেখানোর কোনো দরকার নেই। আমি মানুষ টাই এমন। কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই!’
ওয়াশরুমে ঢুকে জলদি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। জ্বর আসলো না তো আবার? কেন ভিজতে গেলাম! জ্বরে মরে পড়ে থাকলেই বা কে দেখবে? আচ্ছা আমাকে না দেখতে আসার কথা ওরাই বা কোথায়? পূর্ণ ভাইয়ের সামনে আর যাবো না বলে ঠিক করলাম। ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম কেউ নাই। বাসা পুরো ফাঁকা গেলো কই সব? আচমকা কোথা থেকে জেঠি মা আর পুষ্পা হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঠুকলেন। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই জেঠি মা বললেন,
–‘ অলক্ষ্মী মেয়ে তোর জন্য সব হয়েছে! তুই যবে থেকে এখানে এসেছিস খারাপ ই হয়ে গেছে। প্রথমে ছেলে পক্ষ আসবে না বলে না করে দিলো আর এখন আমার মা অসুস্থ হয়ে গেল!’
পুষ্পা বললো,
–‘ঠিক বলেছো মা। একে এ বাসা থেকে তারানকোর ব্যবস্থা করো। নাহলে দেখবা কাল আমার ই ক্ষতি হবে!’
–‘তাড়াবো কিভাবে? তাড়াতেই তো বিয়ে দিবো ভাবছিলাম। আর দেখতে প্রথম বারই ছেলেপক্ষ না করে দিলো!’
–‘একজন না করেছে তো পৃথিবীতে কি ছেলের অভাব পড়েছে! ল্যাঙ্গরা কানা একটা ধরে এনে বিয়ে পড়িয়ে দাও!’
কিছু বলতে পারলাম না। নিচের দিকে তাকিয়ে ফ্লোর আঙ্গুল ঘষসি। কথা গুলো হজম করার চেষ্টা ও আছেই। তবে তাদের কথার পাল্টা উত্তর দেওয়ার সাহস পেলাম না। নাহলে আরো কয়েকটা চড় পড়বে আমার গালে।
–‘দাঁড়িয়ে কি দেখছিস রে? যা রান্নাঘরে! না খাইয়ে মারবি নাকি আমাদের?’
আর দাঁড়ালাম না রান্না ঘরে চলে আসি। কড়া কন্ঠে বলে গেলেন চা যেনো দু মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যায়। দু মিনিটের বেশি হওয়া যাবে না। তাই তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা থাকি। ঐ যে বলে না তাড়াহুড়োর কাজ আরো দেরি তে হয়। রেগে জেঠি মা রান্না ঘরে চলে আসেন। লাল করা চোখ জোড়া দেখে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো।
–‘এতোক্ষন লাগে চা বানাতে হ্যাঁ? কিছু ঠিক মতো করতে পারিস না? শুধু হয়েছিস রুপে সুন্দরী। কি মনে করিস রুপ দেখিয়ে সবাই কে পাগল করবি?’
দেরি হতেই পারে আমি ও তো মানুষ। উল্টা পাল্টা কথা বলতে শুরু করায় মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাই বলেই দিলাম,
–‘আমি তো আর রোবট না যে বলার সাথে সাথেই উড়বো!’
কথাটা শেষ হতেই হিংস্র চোখ জোড়া আমার দিকে তাক করে রাখলো। যেনো ধোঁয়া উঠা বন্দুকের গুলি সবে বেরিয়েছে!
–‘তোর সাহস কতো বড় রে আমার মুখে মুখে কথা বলিস। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা!’
গরম পাতিলের চা আমার হাতের উপর ঢেলে দিবে কল্পনা ও করিনি। ব্যথায় কুঁকড়ে দূরে সরে গেলাম। চোখের পানি কে যেনো আটকাতে পারলাম না। হাত জ্বলে পুড়ে ঝলসে গেলো। এতোটা অসহায় লাগছে যে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছেন ভেবে একটা চিৎকার করে উঠি,
–‘আল্লাহ..!’
(চলবে)