প্রেম সায়রের ছন্দপাত পর্ব ২৫

#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত
#সাদিয়া_নওরিন

পর্ব—- ২৫

দিল্লী সোনাইরহিলা স্টেশন,
মানুষের ভীড় এখানে নেহাৎ কম নয়। আর ঘড়ির কাটা দশটা ছুঁই ছুঁই। ট্রেনের হুইসেল শুনেই শাহরুখ খানের স্টাইলে দৌড় দেয় সবাই। মেয়েদের পায়ের গতি অনেকটা কম।কারণ আশেপাশের মানুষের বিষ্মিত নজর ইতস্তত করছে তাদের। কিন্তু ছেলেরা একদম জোরে টান দিয়ে একেকজনকে ট্রেনে তুলে দেয়। দুরন্ত এক্সপ্রেসে এসি ক্যাবিন বুক করেছিল তারা। দুইটি ক্যাবিন এবং প্রতিটিতে চারটি করে বেড। দুইটি ওপরে আর দুইটি নিচে। সাগর রশিকতা সুরে বেডের দিকে তাকিয়ে, ব্রু নাচিয়ে বলে উঠলো ,
—– তিতাস, তুই চায়লে মেয়েদের ক্যাবিনে থাকতে পারিস। অথবা না হয় তিশা আমাদের ক্যাবিনে চলে আয়। আর আমরা দুজন মেয়েদের ক্যাবিনে চলে যায়। কি বলিস??
——ক্যান তুই কি মেয়ে? দেখি খুলে দেখা৷ চেক না করে তো আর তোকে ভেতরে ডুকতে দিতে পারি না।
স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠলো বন্যা!আর সাথে সাথেই সাগর ছাড়া বাকিরা কেশে উঠলো খুকখুক করে। আর সাগর অসহায় দৃষ্টিতে মাথা নুইয়ে বলল,
—– আসতাগফিরুল্লাহ্!

এবার যে যার রুমের দিকে হাটা দিল। ঠিক কিছুসময় পর ইরহামকে দেখা গেল ক্যাবিনের বাইরে খালি জায়গায় কারো সাথে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে! খুব উত্তেজিত মনে হলো তাকে।আর তার পাশে দাড়িয়ে থাকা সাগরকেও দেখা গেল! সে ইতস্ততভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। যেন নজর রাখছে যাতে কেউ এদিকে আসলে সে বলতে পারে ইরহাম কে! ইরশাদ বিষ্মিত হয়ে পর্যবেক্ষণ করলো কিছুসময় তাদের। বড্ড অদ্ভুত ঠেকলো বিষয়টি তার কাছে। আর তাই ত ধিমিপায়ে একদম তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো সে! তারপর বলল,
—– কি সমস্যা?

সাথে সাথেই চমকে উঠলো ইরহাম আর সাগর।আচমকা একম এট্যাকে ধুপ করে ইরহামের ফোনটি ছিটকে পড়তে গেলো! আর তা মুহূর্তেই ধরে ফেলল ইরশাদ। তারপর চিলের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে ইরহাম আর সাগরের দিকে।
আঁড়চোখে ইরশাদের দিকে তাকালো সাগর। ইরশাদের সন্দেহের দৃষ্টি খুব বেশী চিন্তায় ফেলে দিল তাকে। সে তাড়াতাড়ি হাতের উল্টো পিঠে ঘাম মুছতে মুছতে বলল,
—– তুই না ঘুমিয়েছিলি। উঠলি কখন?
—- আমি কখন উঠলাম তা মুখ্য না। তোরা এখানে কি করছিস তা জানা প্রয়োজন আপাতত।
সন্দেহের দৃষ্টি দুজনের মুখের ওপর দৃষ্টি ফেলে, চোখ সরু করে বলল ইরশাদ।

সাগর ইতস্ততভাবে আমতা করতে লাগলো কিন্তু তাকে থামিয়ে ইরহাম একদম স্বাভাবিক গলায় বলল,
—– নতুন একটা মেয়ের সাথে ভাব হয়েছে আমার। তার সাথে কিছু বিষয় ডিসকাস করছিলাম। আর মেয়েটি সাগরের বোন!
সাগর বিস্ফোরিত দৃষ্টি ইরহামের দিকে তাকালো। তারপর মনে মনে বিরবিরালো,
” আর কোন এসকিউস পেলি না? গাধা। এখন ইরশাদ উল্টো লটকে দিবে তোকে!”

ইরশাদ এবার কপাল কুঁচকে দুজনের দিকে তাকালো তারপর গম্ভীর স্বরে বলল,
—– মেয়ে তো কেবল নাইনে পড়ে
—- তো কি? নাইনে পড়া মেয়ে কি কখনো টেনে উঠবে না। সে কি ইন্টার দিবে না। সে কি ভার্সিটি যাবে না তার ও কি বিয়ে হবে না।
এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বলে চলল ইরহাম৷ যেন তার পেছনে রকেট ছুঁড়েছে কেউ।
ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো ইরশাদ।তারপর সাগরের ঘাড়ে আলতো হাত বুলিয়ে আচমকা চেপে ধরলো তার ঘাড়! সাগর আতংকিত ভাবে চেঁচাতে গিয়ে থেমে গেল। কিন্তু ইরশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বসলো,
—– শালা ভাই নামের মিরজাফর তুই। বিসিএস ক্যাডার দেখলি আর বোনের দিগুণ বয়সী এক ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেললি! তোর মতো ভাইয়ের একগ্লাস পানিতে ডুবে জান দিয়ে দেওয়া দরকার। বদের হাড্ডি
—- দোস্ত একগ্লাস পানিতে কি আমি মরবো? আমার তো এক আঙ্গুলই ভিজবে না।
অসহায় ভাবে বলল সাগর

—- আমি কি গ্লাসের সাইজ বলেছি?সিমেন্ট দিয়ে দশফুট লম্বা গ্লাস বানালে কি কেউ আমাকে ধরে রাখবে?
সাথে সাথে হুংকার দিয়ে বলল ইরশাদ৷ ইরহাম ভীত দৃষ্টিতে তাকালো সাগরের দিকে। তার মনে প্রচন্ড ভয় হলো যে কোন সময় সত্যটা সাগর উগরে দিবে ইরশাদের সামনে। তাই সে একদম ঝাঁঝালো স্বরে ইরশাদের কলার চেপে বলে উঠলো,
—- তো তোর সমস্যা কি? তোর বোন তো আর বিয়ে করবো বলছি না।বিষয়টি আমাদের। আমরা ঠিক করি.
ইরশাদ বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো ইরহামের দিকে। এই ইরহামকে হয় তো সে চিনেই না! সে কন্ঠস্বরকে নরম করে কিছু বলার আগে আবার বলে উঠলো ইরহাম,
—– তুমি স্কুল লাইফেও অনেকবার হেনস্তা করেছো আমাকে। তারপর যেই একটা মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ের স্বপ্ন দেখলাম তাকেও নিয়ে নিলে। এখন অন্য একটি মেয়েকে আমার একটু ভালো লাগলো তাতেও তোমার সমস্যা। আসলে তুমি চাও টা কি?
—- ইরহাম, আমি এমনটা ভেবে করি নি আসলে,
—- প্লিজ।তোমার যুক্তি তোমার কাছে রাখ। আমি কারো যুক্তি শুনতে চায় না এখন৷ আর তাছাড়া সবসময় তোমার রায়টাই বা মানবো কেন আমরা?

ইরশাদের কলার ছেড়ে হনহনিয়ে সেই জায়গা ত্যাগ করলো ইরহাম।আর ইরশাদকে অবাক করে দিয়ে তার পিছুপিছু চলে গেল সাগরও! ইরশাদ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো তাদের যাওয়ার পানে।

ঝিরিঝিরি হাড় কাঁপানো বাতাসের ছোঁয়ায় শান্ত হচ্ছে না ইরশাদের মন। বড্ড মন খারাপ হচ্ছে আজ তার৷ দিশাহীন নৌকার মাঝি যেমন নৌ ভিড়বার অবকাশ পায় না তেমন ইরশাদও পারছে না তার অশান্ত মনে স্থিরতা আনতে। শেষে চোখ বুঝে নিজেকে শান্ত করলো সে। ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইলো দরজা দিয়ে বাইরে। বাইরের প্রতিটি জায়গাগুলো দৌড়ে চলেছে একের পর এক। ইরশাদ ভাবলো,
” ইশ জিবনটা কেন এমন হয় না। কেন জিবনের সমস্যাগুলো হুট করে দৌড়ে চলে যায় না। ”
ঠিক তখনি তার আবার মনে হলো। সমস্যাগুলো দৌড়ে গেলেতো সুখগুলোও এভাবে ধরার আগে ছুটে পালাতো! এ ও যে বড্ড কষ্টের হতো!

হঠাৎ কেউ পরম মমতায় হাত রাখলো ইরশাদের কাঁধে। আলতোভাবে কেঁপে উঠলো এতে ইরশাদ।তারপর পেছন ফিরে তাকালো। যা ভেবেছিল তাই। আরশী এসেছে। ইরশাদ আলতো নাক টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।তারপর মুচকি হেঁসে বলল,
—- ঘুমাও নি?
—– নাহ্, একটু পর তো খাবার দিবে। ঐটা খেয়ে ঘুমাবো।
—- ওহ!
হুট করে আরশী জড়িয়ে ধরলো ইরশাদকে।আর তারপর নাক গুঁজলো তার বুকে!ইরশাদ চমকে উঠে মুচকি হাসি দিল।তারপর গভীরভাবে চেপে ধরলো তাকে নিজের বুকের সাথে।

কেটে গেল কিছু সময়৷ বাতাসের তীব্রতা বাড়ায় নিজের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নিল ইরশাদ আরশীকে।তারপর চোখ বুঝে উপভোগ করলো দু’জনার হৃৎস্পন্দন। প্রেমের সায়রে আজ বৃষ্টিরুপি ছন্দপাত হচ্ছে উভয়ের অনুভূতি। তারা বারবার নিমজ্জিত হচ্ছে ভালোবাসার সেই অতল সাগরে! একটু পর, ওভাবে ধরা অবস্থায় প্রশ্ন ছুড়লো ইরশাদ,
—- শীত লাগছে?
—- ও হো..
—- চল ভেতরে যায়।
আরশীকে আলতো বুক থেকে সরিয়ে পা বাড়ালো ইরশাদ রুমের দিকে৷ ঠিক তখনি তার হাত ধরে বাঁধা দিল আরশী! ইরশাদ অবাক হয়ে ইশারায় প্রশ্ন ছুড়লো ” কিহ্!”
—— প্রিয়া কি বলেছিল আপনাকে?
—- বাদ দাও না সেসব কথা।
—– বলুন না, কি বলেছিল। আমার মনে হয় কিছু জিনিস এখনো বাকি যা আমাদের অজানা।

ইরশাদ নিশ্বাস ফেলে চুপটি করে রইলো কিছুসময়। তারপর শুরু করলো
——– তোমার সাথে যেদিন বিয়েটা হয়।বাসায় গিয়ে অনেক বেশী ভয়ে ছিলাম আমি। আমাকে কে কি বলবে তার ভয় মোটেও ছিল না। বরং তোমার কি অবস্থা হবে তা ভেবে ভেতরটা জ্বলছিল। বাসায় পৌঁছানোর পর সেদিন প্রথম আমার গায়ে হাত তুলে বাবা।এমনিতে তাকে প্রছন্ড ভয় পেতাম আমি আর তাই কখনো তার মতের বিরুদ্ধে কিছু করা হয় নি। এইকারনে মারও কখনো খেতে হয় নি আমার। কিন্তু সেদিনের দোষটা সত্যিই খুব বেশী ছিল।
কিন্তু আমার ভেতর হুট করে অনেক সাহস এসে যায় সেদিন! আমি জোর গলায় বলে ফেলি তাকে, “তোমাকে ভালোবাসি আমি আর তাই বিয়ে করছে।”

আলতোভাবে হাসে ইরশাদ। কিন্তু সেদিনের কষ্ট তার চোখে দৃশ্যমান! আরশী হাতের তালু দিয়ে ম্যাসেজ করে দেয় ইরশাদের পিঠে।তারপর আবার প্রশ্ন করে,
—- আমাকে তো তাহলে খুব বাজে ভেবেছিলো আন্কেল। তাই না?
—– নাহ! তিনি আমাকে মারতে মারতে বলছিল সেদিন, আমি একটা মেয়ের জিবনটা নষ্ট করে দিলাম৷ আমি চায়লে তারা তোমার বাবার সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ে দিত। আমি কেন বললাম না তাদের।কেন দুইটা ফ্যামিলির মান ইজ্জত নিয়ে জেদের খেলা খেললাম। আর তারপরের সমস্যাটা হলো আরো জটিল। বাবা চায়লো কথা পাঁচ কান হওয়ার আগে মেয়ের ফ্যামিলিতে গিয়ে বৌ নিয়ে আসতে। কিন্তু তা হলো না। মেয়ের ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছুই জানি না আমি। কোথায় থাকে তা ও না। বাবা তোমার বলা স্কুলে খবর নিল। ওখানে এই নামের কেউ নেই! ছবি চায়লো আমার কাছে, সেইটাও নেই। বোনের শশুড় বাড়ি, পাড়া প্রতিবেশী সবাই খুঁচিয়ে কথা বলা শুরু করলো আমাদের। বোনের শশুড়বাড়িতে হেঁসে মনের দুঃখ লুকালো।বাবার বিপির প্রবলেম শুরু হলো।আর আশেপাশের সবাই “দেওয়ানা মজনু ” নাম দিয়ে দিল আমার। বাবার তিলেতিলে গড়া সব সম্মান ধুলিস্যাত করে দিলাম আমি!

অন্যদিকে তোমার ফোনটাও অফ! হুট করে একদিন “এন্জেল প্রিয়া” নামের এক আইডি থেকে তোমার ছবি আর তার ছবি পাঠালো একটি মেয়ে! আমাকে জানালো সে আমাকে ভালোবাসে। কোন এক সময় শপিং মলে দেখে আমাকে ভালোবেসেছিল সে।আমি বললাম তাকে, তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না আমার। সে তোমার পাঠানো কিছু এসএমএসের স্কিন সট দিল আমায়। যেখানে তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো তা নিয়ে ওর সাথে দুষ্টুমি করছিলে, আর তুমি আমাকে গুন্ডা ভাবো এইসব লিখেছিলে!

টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো আরশীর চোখ বেয়ে। পা ভেঙ্গে আসতে শুরু করলো তার। আর তাই ধুপ করে বসে গেল সে! তারপর মাথা নুইয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো! ইরশাদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চোখ বুঝলো। তারপর আরশীর পাশে বসে বলল,
—- এমনটা কেন করলে আরশী!
কথা বলতে গিয়ে হিচকি উঠে যাচ্ছে আরশীর। কান্না যেন হিচকিতে রূপ নিচ্ছে! সে ফুফিয়ে কাঁদছে কাঁদতে বলল,
—— হুট করে আমার জীবনে এসেছিলে তুমি৷ আমার ফ্যামিলি অতিরিক্ত স্টিক্ট। আর সেখানে প্রেম করা মানেই মেয়ের চরিত্রে কলঙ্কের দাগ লাগা। প্রিয়া আমাকে আইডিটি খুলে দিয়েছিল।তারপর বলেছিল কাউকে সত্যিটা না বলতে। আমি বুঝতে পারি নি এক মিথ্যা হাজার মিথ্যের জন্ম দিবে। আমি কাউকে ভালোবাসাতে চায়নি। কিন্তু তোমার কাছে যেতে নিজেকে আটকাতে পারি নি৷ বড্ড ভালোবাসি তোমাকে আমি৷ প্রানের চেয়েও বেশী

হু হু করে কেঁদে চলেছে আরশী।আর তার পাশেই ইরশাদ নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। কিছু সময় পর বলে উঠলো ইরশাদ,
—– জানো আমি তারপরও বিশ্বাস করি নি। প্রিয়া বলল তোমাকে হলে দেখতে যেতে তাহলে আমি বুঝবো তোমার সব নাটক। আমি হলে গেলাম দূর থেকে দেখলাম তোমায়।তুমি কতোটা খুশিতে আছো! বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলে পরিক্ষা শেষ সেদিনতোমার। আর তারপর যখন আমাকে দেখলে,দৌড়ে বাসে উঠে গেলে!
এবার ইরশাদের প্রবল অভিমান হলো। ইচ্ছে হলো তার নিজের জানটায় দিয়ে দেয় সে। কিন্তু আরশীর অশ্রুসিক্ত চেহারা ভেতর থেকে দগ্ধ করতে শুরু করেছে তাকে। এ যেন এক অসহ্যনীয় যন্ত্রণা!

শেষে হেঁচকি টানতে টানতে বলল আরশী,
—- ভয় পেয়েছিলাম আমি ইরশাদ সেদিন। প্রচন্ড ভয়।
তারপর আরশীর সাথে হওয়া সম্পূর্ণ কাহিনী একের পর এক বর্ননা করতে লাগলো সে।তার বাবার তার প্রতি বিরূপ আচরণ।মায়ের কষ্ট। সবকিছু যেন তার ভেতরের অস্তিত্বকে গুড়িয়ে দিয়েছিল। কিশোরী বয়সের ছোট মনে এতো চাপ সইতে না পেরে সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করতে চেয়েছিল সে তখন। আর নিজের পিতার মস্তক সম্মানের সাথে উঁচু করতে চেয়েছিল।তাই সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধের প্রতিজ্ঞা নিয়ে বসেছিল!

—– জানো আরশী, প্রিয়া কিন্তু তারপরও আমাকে ওর সাথে প্রেম করতে বলেছিল। কিন্তু প্রেমের প্রতি ঘৃনা ধরে গিয়েছিল তখন আমার।
মুখ বাঁকিয়ে বলল ইরশাদ। আরশী সেদিকে তাকিয়ে করুণ স্বরে বলল,
—– আমার প্রতিও ঘৃনা অনুভব হচ্ছে?
—— তুমি হীনা জিবন ভাবাটাও তো অসম্ভব জান!
শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো ইরশাদ আরশীকে।আর আরশী তার বুকেই ফুফাতে লাগলো।হৃদয়ের জালা যেন এবার কমতে শুরু করলো তাদের।
তারা এতোসময় বুঝতেই পারলো না সেখানে ফোন হাতে আরো একজন ছিল যার মুখে ঝুলছে রহস্যময় হাসি!

ক্যাবিনে খাবার দেওয়া হলো। ভাত, রুটি মাটন ভূনা, সবজি ডিম, দই আর গোলাপজাম। সবাই খাবার দেখে অতিরিক্ত সন্তুষ্ট। উদরপূর্তির জন্য সব আইটেম ই আছে আর স্বাদেও সব অতুলনীয়। ক্যাবিনের ভাড়া, খাবার সব মিলিয়ে ২২০০ রুপি খারাপ মনে হলো না তাদের কাছে। সিঙ্গেল থেকে ডাবল নেওয়াটায় হয়তো বেস্ট।কারণ সিঙ্গেল নিলে তাদের তিনটা নিতে হতো আর একটা সিঙ্গেল ১৩০০ রুপি।

খাবার শেষ করে সবাই যারযার মতো ঘুমিয়ে পড়লো। সাগরের চোখে আজ ঘুম নেই। ইরশাদকে জীবনে প্রথম সে এতোটা কষ্ট দিল।মনটা বড্ড খচখচ করছে তাই তার। সে আঁড়চোখে তাকালো ইরশাদের দিকে। প্রবল শান্তিতে ঘুমুচ্ছে সে আজ। সাগর আর ডিস্টার্ব করলো না তাকে।বরং বেরিয়ে এলো সে ক্যাবিন ছেড়ে।

বাইরে বেরুতেই দরজার কাছে দাঁড়ানো একটি অবয়বের দেখা মিলল তার। কালো দিঘল চুলগুলো উড়ছে কন্যাটির! আর কন্যার দৃষ্টি বাইরে! সাগরের চিনতে বেগ পেতে হলো না৷ সে গুটিগুটি পায়ে মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়ালো! হঠাৎ কারো উপস্থিতিতে চলকে উঠলো মেয়েটি! তারাতারি মুছে ফেলতে চায়লো তার আঁখি ছুঁইয়ে ঝড়ে পরা অশ্রুগুলো! কিন্তু বাধ সাধলো সাগর! আলতো হাতে মুছে দিলো সে কন্যার অশ্রু! কন্যার দৃষ্টিতে বিষ্ময় কিন্তু সাগরের চোখে মুগ্ধতা!

বেপরোয়া বাতাসের স্রোত আজ তাকেও ডাকছে বেপরোয়া হতে! সে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে কন্যার দুগালে হাত চেপে বলে উঠলো,
—- তোমার অাঁখির মুক্তোদানাগুলো বড্ড দামী এই কাঙ্গালের কাছে! সে তোমার ভালোবাসার কাঙ্গাল।তার হৃদয়ের সায়রে টুপটুপ শব্দে ঝড়ে পরা ছন্দগুলোর নাম কেবল বন্যা! সাগরের গহ্বরের অতল ঠায় পায় বন্যার জল। তাহলে তুমি কেন ঠায় নাও না এই আমিতে?

সাগরের ফিসফিসানো স্বর কম্পনের সৃষ্টি করে বন্যার হৃদয়ে!আজ অদ্ভুত শিহরন হলো তার! এই শিহরণ বর্ননা অতীত৷ এই শিহরণে হৃদয় দুলে! লজ্জা ভর করে নারীর মাঝে! বন্যার চোখে আজ অদ্ভুত ভাবে ধরা দেয় সাগর। সাগরের হৃদয়ের গহীনে পৌঁছে যাওয়া কণ্ঠস্বর বন্যাকে আলোড়িত করে ভেতর থেকে! এই অসহ্য আলোড়নের বিপক্ষে কি করবে তার বোধ শক্তি লোপ পেয়েছে যেন বন্যার। সে ছুটে পালায় সেখান থেকে! আর তার যাওয়ার পানে বিস্মিতভাবে তাকিয়ে রয় সাগর। বড্ড মন খারাপ হয় তার এতে। সে মাথা নুইয়ে ভাবে,

” আমার ভালোবাসার পূর্নতা কি কখনোই পাবো না আমি! কেন বুঝ না আমায় তুমি? কেন পার না আমার কাছে ফিরতে?”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here