প্রেম_প্রাঙ্গণ পর্ব ১০+১১

‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-১০|
~সুনেহরা শামস
.
.
প্রায় আধাঘণ্টা যাবত এই ঘরে বসে আছে সুহা।এখানে মূলত সাহিলই তাকে নিয়ে এসেছে কিন্তু আসার পরই সে উধাও!কেন এনেছে এখানে তাকে সে জানেনা।আসার পরই একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে,বাইরে দুটো লোক আর একজন কাজী টাইপের লোক বসে আছে।আচ্ছা এই সাহিল তাকে আবার পালিয়ে বিয়ে করার প্লেন করেনি তো?

সুহা সটান হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।কিসব ভুলভাল ভাবছে সে?সাহিল এমন করতেই পারে না।এই মেনি বিড়ালের মতো মেউ মেউ করা ছেলেটা নাকি তাকে বিয়ে করে বাঘের মতো একটা কাজ করবে।সুহা নিজেই মনে মনে হোহো করে হেসে উঠে।

“উহুম উহুম”

পিছনে ঘুরে তাকায় সুহা।দেখে সাহিল দাঁড়িয়ে।মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে এগিয়ে যায় সাহিলের দিকে।

“কোথায় ছিলে তুমি?জানো কতক্ষন তোমার জন্য ওয়েট করেছি আমি?”

সাহিল হালকা হাসে সুহার দিকে তাকিয়ে।সারাদিন ঝগড়া করলে দিনশেষে তারা দুজন আবার এক হবেই।মাঝে মাঝে সুহার এই আল্হাদী সুর তার কাছে অনেক ভালো লাগে।সাহিল জানে যে সুহা তাকে ভীষণ ভালোবাসে।সম্পর্কের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল আদেও বলতে পারবে না সাহিল।কিন্তু ওকে ছাড়া তার দিন শুরু?অসম্ভব!

“উমম,তোমার জন্য পাস্তা আনতে গিয়েছিলাম”

সুহা সাহিলের আগে পিছে ভালোভাবে লক্ষ্য করে কিন্তু কোনো প্লেট তো দূরের কথা একটা পাস্তারও নাম-গন্ধ নেই।উত্তর খুজতে চোখ তুলে তাকায় সাহিলের দিকে।সাহিল অসহায় দৃষ্টিতে একটা শুকনো হাসি দেয়।

“আসলে পাস্তাগুলো কীভাবে যেন জ্বলে গেছে।এখন বোধহয় আর খাওয়া যাবে না।”

বলেই মেকি হাসি দিল।সুহা ছোট ছোট করে একবার হাসি দিকে চেয়ে পরক্ষনেই একটা ছোট্ট হাসি মুখে ঝুলিয়ে সাহিলের চুলগুলো হাত দিয়ে নেড়ে দেয়।

“আচ্ছা সাহিল তুমি আমাকে এখনে নিয়ে এসেছ কেন?”

সাহিল সুহার প্রশ্নে থতমত খায়।এখন কি উত্তর দিবে জানা নেই তার।গতকালকের প্রাঙ্গণের বলা কথাও তার মাথায় ঢুকেনি।কে কার বান্ধবী??কিন্তু প্রাঙ্গণের কথা তার না শুনেও উপায় নেই তাই সুহাকে এখানে নিয়ে এসেছে।এখন সুহাকে কি জবাব দেবে??কিছু একটা মাথায় আসতেই বানিয়ে বলা শুরু করে,,

“ইশ,তোমার আমার প্রতি অভিযোগ আমি তোমাকে সময় দেই না।তাই ভাবলাম এখানে নিয়ে আসি তারপর আমরা একসাথে টাইম স্পেন্ড করব।”

“কিন্তু বাবা যদি জানে?”

সাহিল মনে মনে হাজারটা ভেংচি কেটে ফেলেছে এতক্ষনে সুহার বাবাকে।এই মানুষটাই তো যত নষ্টের গোড়া।সাহিল আবার আরেকটা ভেংচি কাটে। সুহার বাবা মিলন সাহেব মূলত একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।সারাদিন এতই হিসাবের মধ্যে ডুবে থাকে যে মেয়ের বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে তাতে তার কোনো খেয়াল নেই।এদিকে তিনি কোনো কারণ ব্যতীতই সাহিলকে দুচোখে সহ্য করতে পারেন না।তার প্রধান কারণ হলো সাহিল কোনো কিছুই করে।কিছু না করলে মেয়েকে খাওয়াবে কি?এই কারণে সাহিলকে তাদের বাড়ির সামনে দেখলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত।এদিকে সাহিল কিছু বলতেও পারত না,,ভবিষ্যৎ শশুড়কে তো আর কিছু বলা যায় না।

সাহিল গলায় তেজ মিশিয়ে বলতে নেয়,,”ওই টাক…”যেই সুহা তার দিকে চোখ বড় করে তাকায় ওমনি বিড়ালের মতো মিনমিন করে বলে উঠে,,”আঙ্কেলকে বলে দিও তুমি তোমার ফ্রেন্ডের বাড়িতে আছো,তাহলেই তো হবে”

সুহা পরক্ষনেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সাহিলের গাল টেনে বলে উঠে,,”মাই ব্রিলিয়ান্ট বেবি!”

~~~
লেহেঙা পড়ে পুরো ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রেম।টেনশনে তার হাত-পা কাপছে,,মাথা দিয়ে তিরতির করে ঘাম বেয়ে পড়ছে,,উশখুশ লাগছে ভীষণ।লেহেঙাটা ভীষণ ভারী,,সাদার উপর গোল্ডেন আর পার্লের কাজ কাজ করা এই লেহেঙ্গাটি অন্য সময় হলে ভীষণ পছন্দ হত তার কিন্তু এখন এই সময় এই লেহেঙ্গাটা মন চাচ্ছে জ্বালিয়ে দিতে।সে এই বিয়ে কিভাবে করবে??মা-বাবার মতামত যেখানে নেই সেখানে তার পক্ষে বিয়ে করা অসম্ভব!এদিকে সে এখনো রেডি হয়নি।প্রাঙ্গণ একটু পর পরই এসে রেডী হওয়ার জন্য বলছে।ভীষণ রকমের কান্না পাচ্ছে তার,,সে যাকে ভালোভাবে চিনে না জানে না তাকে কীভাবে বিয়ে করবে।তাও আবার এমন একজনকে যে নাকি মানুষ খুন করে,,আবার মানুষ অপহরণও করে।না জানি আরো কত বাজে কাজ করে সে।তাকে প্রেমের পক্ষে বিয়ে করা অসম্ভবের চেয়ে অসম্ভব!

হুট করে পিছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় প্রেম চমকে উঠে।পেছন থেকে অতি চেনাপরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে উঠে,,

“হেই উড-বি-ভাবি!!!”

প্রেম কন্ঠস্বরটি লক্ষ্য করে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।অন্যদিকে সুহাও প্রেমের দিকে চেয়ে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে গোল গোল চোখ করে চেয়ে আছে।প্রেমের মাথা এমনিতেই আউলিয়ে আছে তার উপর আবার সুহার এই জায়গায় আগমন।প্রেমের মন চাচ্ছে নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি দিতে।

“তুই এদিকে কি করছিস প্রেম?আন্টি-আংকেল কত টেনশনে আছে জানিস?আন্টির তো বিপিও লো হয়ে গেছে।আর তুই এদিকে আরামে বসে বসে বিয়ে খাচ্ছিস?এটা কিন্তু ঠিক না প্রেম”

প্রেমের নিজের বাবা-মায়ের কথা শুনে মন খারাপই হলো বটে।কতদিন যাবত তাদেরকে দেখে না প্রেম যেখানে তাদের না দেখে প্রেমের দিন শুরু হতো না।সব কথা শুনে একটু খারাপ লাগলেও শেষ এর বলা কথাটুকু শুনে প্রেম ফুসে উঠে।সুহার সামনের চুলের মুঠি ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে উঠে,,

“তোর কি মনে হয় বাবা-মাকে টেনশনে রেখে আমি এখানে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকব?এত স্বার্থপর আমি?আর তাছাড়া বিয়ে খাওয়ার হলে কি আমি বলে আসতাম না মা-বাবার কাছে?বল?”

একপর্যায়ে এসব এসব বলতে বলতেই কেদে দেয় প্রেম,,জড়িয়ে ধরে সুহাকে।এদিকে সুহা এতক্ষন ব্যথা পেলেও এখন তার প্রেমের জন্য খারাপ লাগছে।তাই আসতে করে প্রেমের পিঠে হাত রাখে।

“আচ্ছা সরি না বুঝেই এত কিছু বলার জন্য।কিন্তু তুই এদিকে কি করছিস একটু বলবি আমায়?আঙ্কেল জানতে পেরেছিল যে তোকে নাকি কিডনাপ করা হয়েছে।কিন্তু তোকে এরকম সাজ-পোশাকে তো মনে হচ্ছে না তোকে কিডনাপ করে আনা হয়েছে।”

নাক টানতে টানতে প্রেম জবাব দেয়,”আমাকে কিডনাপ করেই আনা হয়েছে এদিকে”

সুহা আগা-মাথা কিছু না বুঝায় জিজ্ঞেস করে,,”পুরো কাহিনিটা বলবি?”

প্রেম বেডে বসলে সুহা পানি এগিয়ে দেয় প্রেমকে।পানি খেয়ে শান্ত হয় একটু সে।তারপর সেদিন থেকে ঘটে যাওয়া সবকথা খুলে বলে সুহাকে।এদিকে যতই শুনছে ততই অবাকের সাথে সাথে চোখগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে তার।সে ভাবেওনি এরকম কিছু যা ঘটেছে।প্রাঙ্গণের সম্পর্কে এসব ধারণা একদমই ছিল না সুহার।হ্যা সে প্রাঙ্গণের কথা,তার কাজ সম্পর্কে সবই জানত তবে এরকমভাবে যে মানুষ খুন আর কিডন্যাপিং এর মতো কাজও করে থাকে তা সে কখনোই শুনেনি।এবারতো ভয়ে তারও হাত-পা কাপছে।আর এখন বিয়েটা কিভাবে আটকাবে তারা?সুহা কাপা হাতেই ঢকঢক করে একনাগাড়ে তিন গ্লাস পানি শেষ করে।প্রেমের দিকে তাকায় সে,,অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে,মাঝে মাঝে হিচকিও তুলছে,বুঝতে পারে যে কান্নার রেশ এখনো কাটেনি।সুহার একটু মায়াই হয়।মাথা চুলকাতে চুলকাতে কিছু বুদ্ধি খোজার চেষ্টা করে।আশে-পাশে চোখ বুলায়।চোখ যায় ওয়াশরুমের দরজায়।বাইরে মানুষজন আছে হয়তো কিন্তু এই ওয়াশরুম ছাড়া আপাতত কোনো রাস্তা চোখে পড়ছে না সুহার।ওয়াশরুমের দিকে আগাতে গেলে প্রেম হাত ধরে টান দেয় তার।সুহা পিছনে ঘুরে তাকায়।

“কোথায় যাচ্ছিস?”

“আরেহ,পালানোর রাস্তা খুজতে যাচ্ছি.”

প্রেম চট করে দাঁড়িয়ে যায়।আগের কথাগুলো এখনো ভুলেনি সে।কি শাস্তিই না দিয়েছিল তাকে প্রাঙ্গণ।আর আজকে যদি পালাতে যায় তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।কিছু বলতে নিবে তার আগেই বাইরে থেকে দরজায় কেউ টোকা মারে।

–তোমাদের কি হয়েছে?আর কতক্ষন লাগবে?

কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারে বাইরে সাহিল দাঁড়িয়ে।প্রেম নিজের বুকে ফু দেয়।এদিকে সুহা মনে মনে হাজারটা গালি দিয়ে দিয়েছে সাহিলকে।এই ছেলের ঘটে কি একটুও বুদ্ধি নেই নাকি?আগে জানলে সুহা তার নাক-মুখের নকশাই বানিয়ে দিত।কিন্তু এখন এই ভুল করলে তাদেরই বন্দি করে রেখে দিবে।সুহা মিষ্টি স্বরে বলে উঠে,,

“বেবি আর ২০ মিনিট ওয়েট করো প্লিজ,,ভাবীকে সাজানো এখনো কমপ্লিট হয়নি।”

ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে,,”আচ্ছা বেবি তাড়াতাড়ি করবে কিন্তু।কাজীকে আর কতক্ষন বন্দুকের ভয় দেখিয়ে বসে থাকবো?ফাস্ট করো”

আর কোনো শব্দ আসে না ওপাশ থেকে।তার মানে সাহিল চলে গেছে।সুহা হাফ ছেড়ে বাচে,পিছনে ঘুরে প্রেমকে কিছু বলতে নিবে তখনই দেখে প্রেম তার দিকে হা করে চেয়ে আছে।সুহা প্রেমের চেহারা দেখে বুঝতে পারে কিসের জন্য এমনভাবে চেয়ে আছে সে।জিহবা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নেয় সে।তখনই প্রেম প্রশ্ন করে,,

“এসব কি?কে কার বেবি?তোরা দুজন দুজনকে আগে থেকেই চিনিস?”

সুহা জানে প্রেম এখন সত্যি না শোনা পর্যন্ত তাকে ছাড়বে না।তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে সব সত্যি কথা বলে দেয় প্রেমকে।প্রেমের হা হয়ে যাওয়া মুখ এখন আরো হা হয়ে গেছে।ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে সুহার দিকে।তার বান্ধবী হওয়া সত্ত্বেও সে এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কিছুই জানে না।এটা কি আদেও সম্ভব ছিল?সুহার দিকে তাকিয়ে প্রেম অভিমানি সুরে বলে উঠে,,

“তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড না সুহা”

সুহা গিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রেমকে।প্রেম প্রথমে সরিয়ে দিতে চাইলেও পরে আর কিছু বলে না।সুহা সময় দেখে,,বিকেল ৪:১৫ বাজে।সাহিলের কথা অনুযায়ী বিয়ে আর ১৫মিনিট পর পড়ানো হবে।সুহা ওয়াশরুমে গিয়ে দরজাটা খুলে ভালোমতো লক্ষ্য করে ওয়াশরুমটা।চোখ যায় ওয়াশরুমের পাশের ভ্যান্টিলেটরে,,এটা অনেক বড় কিন্তু উপর দিয়ে পর্দা দেওয়া।যার কারণে ওয়াশরুমের ভেতরেরটুকু হয়তো দেখা যায় না।সুহার মাথায় অদ্ভুত বুদ্ধির উদয় হয়,,হ্যা তারা এদিক থেকে বের হবে আর বের হয়েই সোজা রওনা দিবে এহসান ভিলায়।প্রথম প্রেমকে ইশারায় ওয়াশরুমের দিকে আসতে বলে সুহা।প্রেমও কৌতূহল বশত কাছে আসে ওয়াশরুমের,,পুরো প্ল্যান তাকে বলে সুহা।প্রেম শুনে অবাক!সুহার দিকে অবাক চোখে চেয়ে বলে উঠে,,

“তোর মাথায় এত বুদ্ধি আছে?আগে তো জানতাম না”

সুহা চোখ ছোট করে বলে উঠে,,”কেন আমাকে দেখতে কি তোর বোকা-সোকা মনে হয় নাকি?”

প্রেম মিনমিনিয়ে বলে উঠে,,”তোর মতো শয়তান মেয়ে এই জীবনে আর দেখেছি নাকি?”

পর্দা খুলতে খুলতে সুহা প্রেমকে জিজ্ঞেস করে,,

“তুই কি কিছু বললি?”

প্রেম মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে,,

“আরেহ না না,তুই তো অনেক ট্যালেন্টেড!”

সুহা জ্ঞানীস্বরে বলে উঠে,,”একদম ঠিক বলেছিস,এমন ইউনিক প্ল্যান তো আমার মতো ব্রিলিয়ান্ট এর মাথাতেই আসে”

প্রেম মাথা চুলকে মনে মনে বলে উঠে,,

“যেমন বয়ফ্রেন্ড তার তেমন গার্লফ্রেন্ড!”

সুহা সব ঠিকঠাক করে ফেলে।এবার শুধু বের হওয়ার পালা!একদম নিচের তলায় রুমটি হওয়ায় এখন এখান দিয়ে বের হলেও তারা নিচে পড়বে কিন্তু তেমন একটা ব্যাথা পাবে না বলে সুহার ধারণা।কিন্তু সেখান পর্যন্ত উঠবে কিভাবে??চোখ যায় কমোডের উপর!
কমোডোর উপরের ঢাকনাটা লাগিয়ে দেয় সুহা।তার উপর আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে দাঁড়ায়,,প্রেমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,

“শুন,আমি এখান থেকে নিচে নামব,, তারপর তুই আমার মতো করেই বের হবি”

এদিকে প্রেম বারবার শুকনো ঢুক গিলছে।প্ল্যান ভালো!কিন্তু প্রাঙ্গণের কাছে ধরা পড়লে এবার কি করবে আল্লাহ মালুম!ভাবনার ঘোর ভাঙে ধপাস করে কিছু পড়ার আওয়াজ হওয়ায়।উপরে চোখ তুলে তাকায়,,সুহা নেই এখানে?তার মানে সেই এভাবে পড়েছে??প্রেম আর কিছু ভাবে না,,ভাবলে এখন অনেক ভুলভাল ভাবনা আসবে।আল্লাহর নাম নিয়ে সে-ও কমোডের উপর দাঁড়িয়ে নিচের দিকে না তাকিয়েই দেয় একলাফ!

সুহা এমনেই পায়ে হালকা চোট পেয়েছে তার উপর প্রেম তার পায়ের উপরই ধপাস করে পড়ে।সুহা ব্যথায় চিৎকার দিতে নিলে প্রেম মুখ চেপে ধরে।এত কষ্ট করে বের হয়ে আসার পর ধরা পড়ে গেলে অন্তত এত কষ্ট করা সার্থক হবে না।নিজে দাঁড়িয়ে সুহার হাত ধরে টান দেয় প্রেম।সুহার দিকে তাকায় প্রেম।দুজনেই তৃপ্তির হাসি দেয়।তারা সফল হতে পেরেছে অবশেষে।যেই না দুজনে পিছনে ঘুরে ওমনেই ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খায়!প্রাঙ্গণ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,আর তার পাশে সাহিল।সুহা ঘোরের মাঝে পড়ে যেতে নিলে প্রেম তাকে ধরে।সাহিক পানি নিয়ে আসে,,

“বেবি,একটু পানি খাও তো,অনেক পরিশ্রম করেছ,যদিও সাকসেসফুল হওনি।”

কথাটুকু বলেই সাহিল একটা গা জ্বালানো হাসি দেয়।সুহাও ভেতরে ভেতরে ফুসে উঠে,,কিন্তু আপাতত কিছু করার নেই।তারা এভাবেই ফেসে গেছে,এখন কিছু বললে হয়তো প্রাঙ্গণ কিছু করেই দিবে।সুহা এমনিতে প্রাঙ্গণ ভাই বলে সম্বোধন করলেও সে তাকে ভীষণ রকমের ভয় পায়,ভীষণ!

প্রাঙ্গণ এগিয়ে যায় প্রেমের দিকে।এদিকে প্রেম জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রেমের কানের কাছে মুখ নিতেই প্রেম চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।প্রাঙ্গণ শান্ত স্বরে বলে উঠে,,

“দুইবার শাস্তি পাওয়ার পর শিক্ষা হয় নি??”

প্রেম কাপাকাপা কন্ঠে বলে উঠে,,”এই প্ল্যান সু-সুহার ছিল”

প্রাঙ্গণ চোখ ঘুরিয়ে তাকায় সুহার দিকে যে এখন নাক মুখ ফুলিয়ে সাহিলের দিকে চেয়ে আছে।প্রাঙ্গণে গাড়ির কাছে গিয়ে সাহিলকে ডেকে নিয়ে যায়।এ সুযোগে প্রেমের কাছে যায় সুহা।

“এটাই শেষ সুযোগ প্রেম,চল পালাই।এক দৌড় দিবি আমার হাত ধরে,আগে-পিছে তাকাবি না”

প্রেম অসহায় ভঙ্গিতে সুহার দিকে চেয়ে বলে উঠে,,”আর পারব না সুহা,এবার কিন্তু উনি আমাদের জানে মেরে ফেলবে”

“আমার মাথা করবে।দৌড় দে,,,,,”

যেই সুহা প্রেমের হাত টেনে দৌড় দিতে নিবে ওমনি শক্ত কোনো বস্তুর সাথে ধড়াম করে বাড়ি খায়।চোখ তুলে উপরে তাকায়,,সাহিল দাঁড়িয়ে সামনে।সুহা আর প্রেম একে অপরের দিকে অসহায় চোখে তাকায়।পিছন থেকে শব্দ আসে,,

“আজ একসাথে দুটো বিয়ে হবে।সাহিল,,,,,”

সাহিল আর অপেক্ষা না করে সুহা আর প্রেমের মুখের সামনে কিছু একটা স্প্রে করে।তারপর?একসাথে দুজন গভীর ঘুমে লুটিয়ে পড়ে।একদম গভীর ঘুমে চলে যায়……
‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-১১|
~সুনেহরা শামস
.
.
ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরের ভেতরে দুটো চেয়ারে হাত-পা বেধে রাখা হয়েছে প্রেম আর সুহাকে।সুহা হাত-পা বাধা অবস্থায় অনেকক্ষন ছাড়া পাওয়ার ছোটাছুটি করে এখন ক্লান্ত হয়ে এখন চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।মনে মনে এই পর্যন্ত নাম না জানা হাজারো গালি দেওয়া হয়ে গেছে সাহিলকে।অন্যদিকে প্রেম এখনো অজ্ঞান!!তার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষাতেই আছে সবাই।সবাই বলতে প্রাঙ্গণ,সাহিল,কাজী সাহেব আর উকিল।উকিল আর কাজীকে এখনো বন্দুকের নিচেই দেবে রাখা হয়েছে।তা না হলে এতক্ষনে তারা এখানে থাকত নাকি?

এখানে নিয়ে আসার দুইঘন্টার বেশী হয়ে গেছে তাদেরকে।কিন্তু এখনো প্রেমের জ্ঞান না ফেরায় প্রাঙ্গণ উঠে দাঁড়ায়,সাইডের টেবিলের উপর থাকা পানির বোতল হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় প্রেমের দিকে।সোজা পানি ছুড়ে মারে প্রেমের মুখে,,ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সে।আশেপাশে কি হচ্ছে তা এখনো মস্তিষ্ক ধারণ করতে পারছে না।মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে তার!প্রাঙ্গণ প্রেমের সামনে হাটুগেড়ে বসে,,প্রেমের গালে হাত রাখে।কিছুবার বাড়ি মারে প্রেমের গালে,,সাথে সাথে গড়গড়িয়ে বমি করে দেয় সে,,একদম প্রাঙ্গণে উপর।সুহা হো হো করে হেসে উঠে,,প্রাঙ্গণ চোখ ঘুরিয়ে তাকানোর সাথে সাথে হাসি থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে কিন্তু কোনো লাভই হয় না।সেই হাসতেই থাকে সে।এদিকে সাহিল এগিয়ে আসে প্রাঙ্গণের দিকে,,

“ইশ,,কি করল এই মেয়েটা,,সেদিন কাদা দিয়ে গোসল করলি আর আজকে বমি দিয়ে,,ইয়াক!”(বলেই নাক ছিটকায় সাহিল)

” তোমার এই ড্রামাবাজী বন্ধ করে পানি নিয়ে আসো আগে”

সুহার গলার স্বর শুনে সাহিল তার দিকে ঘুরে কোমরে দুইহাত রেখে ভেঙচি কেটে বলে উঠে,,

“কেন তোমার কথা শুনতে হবে নাকি আমার?”

সুহা আদেশের সুরে বলে উঠে,,

“হুম হুম শুনতে হবে তো।মনে রাখবে আমি কিন্তু তোমার বউ”

সাহিল অবাক হওয়ার ভান করে বলে উঠে,,

“কবে থেকে?”

“তোদের এই ইঁদুর-বিড়ালের ঝগড়া বন্ধ করে আগে পানি নিয়ে আয় সাহিল”

প্রাঙ্গণের কথা শুনে সাহিল ভ্রু-কুচকে একবার ভেঙচি কেটে পানি নিয়ে আসে।প্রাঙ্গণ অতি যত্নের সাথে পানি খাওয়ায় প্রেমকে,,নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে প্রেমের চেহারার ঘামগুলো মুছে দেয় সে।প্রেমের অগোছালো চুলগুলো সযত্নে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে বেধে দেয়।

এতক্ষন এসবকিছুই লক্ষ্য করে সুহা।একমিনিট এর জন্য হলেও তার মাথা আউলিয়ে যায়।যেই প্রাঙ্গণ প্রেমকে এতকষ্ট দেয়,,সেই এখন এত যত্ন নিচ্ছে প্রেমের?সুহা একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে,,প্রাঙ্গণ যখন প্রেমের যত্নসহকারে কাজগুলো করছিল তখন তার চেহেরায় একটা ব্যথাতুর দাগ ফুটে উঠেছিল,,যেন প্রেমের থেকে তার কষ্ট বেশী হচ্ছে।এদিকে আবার প্রাঙ্গণ প্রেমকে বিয়েও করতে চায়।কারণ কি?ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু??

কানে সুরসুরি অনুভব করতেই সুহার ভাবনা সুতো গুলো ছিড়ে যায়।সুরসুরির উৎস খুজতে পিছনে ঘুরে সুহা,,লক্ষ্য করে সাহিল পাখনা নিয়ে তার কানে সুরসুরি দিচ্ছে।মুহূর্তের মাঝে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় তার।প্রাঙ্গণের কাছ থেকে শুনেছে যে আজ তার শাস্তিস্বরূপ সাহিলের সাথে তার বিয়ে দেওয়া হবে যদিও প্রাঙ্গণ সবই জানে।তখন বুঝাবে মজা এই ছেলেকে সে,,

“সুহাবেবি!”

চোখগুলো ছোট করে ফেলে সুহা।এত নাটক করে এখন “সুহাবেবি”ডাকা হচ্ছে?এখন শুধু অপেক্ষা বিয়েটার তারপর দেখাবে আসল মজা।সুহা কোনো কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে।আর সাহিল মনে মনে শয়তানী হাসি হাসে।
.
প্রেম ভালোভাবে এবার সবকিছু দিয়ে দেখতে পারছে,ঝাপসা ঝাপসা ভাবটা চলে গেছে।মাথাটা তবুও কেন জানি ভনভন করে চলেছে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,,একটুখানি পানি পেলে বোধহয় খারাপ হত না।মনের মাঝে কথাটুকু আওড়াতেই যেন নিজের সামনে পানির বোতল আবিষ্কার করে।প্রেম পানির বোতলদাতার দিকে চোখ তুলে তাকায়,,প্রাঙ্গণ!প্রাঙ্গণ প্রেমকে সাহায্য করে পানি খাওয়ার জন্য।এদিকে প্রেমেরও প্রচুর তৃষ্ণা পাওয়ায় সে-ও আর না করেনি।পানি খাওয়া হলে প্রাঙ্গণই শান্তসুরে বলে উঠে,,

“দুইবারে শিক্ষা হয়নি তোমার তাই না?যে আবার একই কাজ করলে?”

প্রেম সুহার দিকে আড়চোখে চেয়ে মিনমিনিয়ে বলে উঠে,,

“ওই তো এই প্ল্যান করেছে,,গাধার গার্লফ্রেন্ড একটা”

সাহিল প্রথমে খুশি হলেও “গাধার গার্লফ্রেন্ড” শুনে “আমার কি দোষ? ” টাইপের লুক দিয়ে তাকায় প্রেমের দিকে।প্রেম সাহিলের দিকে চেয়ে তার মতো করেই তাকে ভেঙচি কাটে।সাহিল হা করে প্রেমের দিকে তাকায়;তার স্টাইল তাকেই দেখিয়ে দিল?

“এভ্রিথিং ইজ ওকে,,সাহিল কাজী আর উকিলকে ডেকে নিয়ে আয়”

প্রেম-সুহা একে অপরের দিকে অসহায় চোখে তাকায়। এত প্ল্যান,এত বুদ্ধি কিছুই কাজে দিল না।প্রেমের মন চাচ্ছে এইসব বাধন খুলে দৌড়ে চলে যেতে,,এখনই জীবনের তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছে এই প্রাঙ্গণ,,বিয়ের পর কি হবে তার??

“সাহিল বেবি,,তুমি না গুড বয়,,এই কাজ কর না প্লিজ,,তুমি জানো এখন আমাকে এভাবে বিয়ে করলে বাবা তোমাকে কখনোই মেনে নিবে না…”

নিজের মতো করে এক এক বাহানা দিয়েই যাচ্ছে সুহা আর পা ঝুলাতে ঝুলাতে সবই ভাবলেশহীনভাবে শুনেই যাচ্ছে সাহিল,,কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।সুহার মন তো চাচ্ছে সেদিনের পোড়া পাস্তাগুলো সাহিলকে ঠেসে ঠেসে খাওয়াতে।এখন তাকে ভাব দেখানো হচ্ছে??এদিকে সুহার বলা শেষ হলে সাহিল বলে উঠে,,

” হয়েছে তোমার বলা?আরেহ কি করবে ঐ টাকলু,,হুম?ঐ টাকলুকে তো আমি দেখে নিব,,ব্যাটা অনেক জ্বালিয়েছে আমাকে।ওকে তো আমি দেখে নিব,,,,”

সুহা ভেতরে ভেতরে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।তার বাবাকে নিয়ে এতকিছু বলছে সাহিল?এখন কিছুই বলবে না সুহা।বিয়েটার অপেক্ষা শুধু এখন।শয়তানী হাসি দিয়ে চোখ তুলে তাকায় সাহিলের দিকে।

~~~
অবশেষে তিনবার “আলহামদুলিল্লাহ কবুল” বলে আর আইনিভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েই গেল প্রেম-প্রাঙ্গণের আর সুহা-সাহিলের!চেয়ারে বাধা অবস্থাতেই বিয়ে হয়েছে তাদের।কবুল বলানো তে একটু সময় লাগলেও বুড়ো আঙুলের ছাপ অর্থাৎ টিপসই নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তাদের।যদিও আইনি চোখে শিক্ষিতদের সিগনেচার আবশ্যক কিন্তু আজকার টাকা উড়ালে সবই সম্ভব!

প্রেম বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার সময় কান্না করলেও সুহার মনে আনন্দের বাতাস বইছিল,,এবার সে সাহিল হাড়ে হাড়ে বুঝাবে যে তার সাথে এই বদমাইশির ফলাফল কি।।

সাহিল টেবিলের উপর বসে মোবাইলে গেমস খেলছে,,উকিল আর কাজীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছে,,সুহা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে,,প্রেমের কান্নার রেশ এখনো কাটেনি।কিভাবে সে তার মা-বাবাকে না বলেই এভাবে বিয়ে করে নিল সে ভাবতে পারছে না।আচ্ছা তার মা আর বাবা জানলে কী কষ্ট পাবে?প্রশ্নগুলো বার বার ভাবাচ্ছে প্রেমকে।প্রাঙ্গণের সিগারেট খাওয়া শেষ হলে ঘরে ঢুকে।।তার ভেতরে যে ভালোলাগা কাজ করছে তাও না।সে যথেষ্ট শান্তভাবে এগিয়ে যায় প্রেমের দিকে,,হাটুগেড়ে বসে তার সামনে।হালকার উপর গালে হাত রাখে প্রেমের।প্রেম সাথেসাথে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে।প্রাঙ্গণ বুঝে প্রেমের গাঢ় অভিমান হয়েছে।প্রাঙ্গণে হালকা হেসে প্রেমের বাধনগুলো খুলতে থাকে,,,

“ইউ নো হোয়াট প্রেম,,জীবনে আমরা আই মিন প্রত্যেকটি মানুষ নানারকম সময় পাড় করে আসে।যেমন তোমার জীবন কিন্তু এইটা নয়,,তোমার জীবন সাধারণ,,বলা যায় আমরা দুজন দুই মেরুর প্রাণি!কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় কিন্তু বিপরীত মেরুর পদার্থ একে অপরের প্রতি আকর্ষিত হয়!আই হোপ,বুঝতে পেরেছ।”

প্রেম প্রাঙ্গণের কথা মানে বুঝেনি কিন্তু শেষের কথা শুনে কঠিনস্বরে বলে উঠে,,

“ওগুলো পদার্থর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য,,আর আমরা মানুষ”

“তাই??”

প্রেম থতমত খায়।আসলেই কি তাই??প্রেম জানেনা,,উত্তর খুজে পাওয়া মুশকিল।প্রেম একবার প্রাঙ্গণের দিকে আড়চোখে চেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।গলা ঝেড়ে বলে উঠে,,

“আচ্ছা আমাকে আপনি বিয়ে করলেন কেন?”

“উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই”

“আমার বাবা জানলে জানেন আপনাকে কি করবে?”

প্রাঙ্গন নিশব্দে একটা বাকা হাসি দিল।হয়তো প্রেমের অজানা কিন্তু তার বাবাতো জানে যে তার একমাত্র মেয়ে আজ দেশের সবচেয়ে বড় স্মাগলিং গ্যাং এর লিডারের একমাত্র বউ!

~~~
সুহা বসে আছে এখন সাহিল অগোছালো ঘরের মধ্যে।রুমটা দেখে এই পর্যন্ত হাজারবারের বেশী “ছিঃ!” শব্দটা তার মুখ থেকে বের হয়েছে।নিচে চকলেট,চিপস এর প্যাকেট পড়ে আছে,,আধ খাওয়া পিজ্জা পড়ে আছে,,কফিকাপ গুলো একেকটা ডেস্কের উপর পড়ে আছে যেন এখনো এগুলো নিচে পড়ে যাবে,,জামা-কাপড় সব অগোছালোভাবে পড়ে আছে,,এমনকি মোজাও!সুহার মাঝে মাঝে মনে হয় সাহিল আসলেই একটা গাধা!তার বাবা ঠিকই বলত,,সাহিল হলো বিচ্ছুর সেরা!আজকে সুহা বাবার কথা গভীর মর্মার্থ বুঝতে পারছে।

এতক্ষন বসে ঝুলাতে ঝুলাতে পা ধরে গেছে তার কিন্তু সাহিলের খবর নেই।কিছুক্ষন পর দুলতে দুলতে ঘরে ঢুকে সাহিল,,বোঝাই যাচ্ছে আজকে একটু বেশী চড়ে গেছে।সুহা আগে থেকেই রেডী ছিল,,জানত সাহিল এমন কিছু করবে।সাহিল এসেই টলতে টলতে বলে উঠে,,

“জানো মাহা,আমি তোমাকে এত্তু এত্তু লাভ করি”

বলেই হাত ছড়িয়ে বুঝিয়ে দেয় সাহিল।এদিকে সুহা রাগে ফায়ার!কোন মাহাকে এত্তু লাভ করর এই সাহিল।রাগে সামনে থাকা পানির বোতল দিয়ে ইচ্ছেমতো মারতে থাকে সুহা সাহিলকে।রাগে তার চোখে পানি এসে গেছে,,এভাবে ধোকা দিল সাহিল তাকে?

যখন বুঝতে পারে পরিস্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে তখনই সাহিল উলটো ঘুরে সুহাকে জড়িয়ে ধরে,,কাছে টেনে বলে উঠে,,

“ইশ!টাকলুর মেয়ের এত শক্তি আগে জানতাম না তো”

সাহিলের মুখে তেমন কোনো গন্ধ না পাওয়ায় বুঝতে পারে সে একদম স্বাভাবীক,,তার মানে এতক্ষন নাটক করেছে তার সাথে?অভিমানী গলায় সুহা বলে উঠে,,

“এমন করতে পারলে তুমি সাহিল?জানো না আমি তোমায় নিয়ে কত পজেসিভ!”

সাহিল সুহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ধীর গলায় বলে উঠে,,

“না দেখলাম তোমার কতটুকু শক্তি আছে,,বাসর রাতে তো প্রয়োজন তাই না?”

লজ্জায় লাল-নীল রুপ ধারণ করে সুহা,,উপায় না পেয়ে সাহিলের বুকে মুখ লুকায় সুহা।সাহিল হো হো করে হেসে দিয়ে অধর চুম্বনে লিপ্ত হয়!

~~~
প্রেম এখন প্রাঙ্গণের সেই আভিজাত্যপূর্ণ ঘরের মাঝে বসে আছে।সবকিছু আগেই দেখা প্রেমের তাই নতুন কিছু নেই আপাতত দেখার।কিন্তু আলামারীর খোলা পার্টগুলোর দিকে চেয়ে আছে প্রেম,,বড্ড টানছে আলমিরাটা তাকে।একটু আগে প্রাঙ্গণ এই ঘরে এসেছিল,,এসেই হন্তদন্ত হিয়ে আলমিরার থেকে কিছু একটা বের করে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেছে।

যেভাবেই হোক না কেন বিয়েটা তো হয়েছে,,অধিকার ও তো তাহলে রয়েছে।প্রেম আর কিছু না ভেবে আলমিরার দরজাগুলো খুলে।উপরে সব প্রাঙ্গণে স্যুট,প্যান্ট,টি-শার্ট রাখা আছে,,পাশের তাকে সব পারফিউম সাজানো।তার নিচেই দুটো ড্রয়ার আছে,,প্রেম ড্র‍য়ারগুলো ভালোভাবে তন্ন তন্ন করে খুজে কিন্তু কিছু পায় না।প্রেম নিজেও জানেনা কেন এগুলো করছে সে,,কিন্তু মন বলছে এদিকেই কিছু একটা পেয়ে যাবে।

খুজতে খুজতে চোখ যায় ড্রয়ারে থাকা এনিভেলাপের দিকে।প্রেম কৌতূহলবশত এনভেলাপটি খুলে।সাথে সাথে প্রেম অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়,,বিস্ময়কর দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে হাতের ছবিটার দিকে।একদম হুবুহু তার মতো দেখতে একটি মেয়ে,,সাজ-পোশাক তার থেকে একদম ভিন্ন।পাশেই টি-শার্ট,সানগ্লাসে হাসোজ্জল প্রাঙ্গণ দাঁড়িয়ে।ছবির মতো হাসিটা আজ পর্যন্ত কখনো প্রাঙ্গণের মুখে দেখেনি প্রেম।কে এই মেয়ে??প্রেম ছবিটি নিয়ে ধপাস করে বেডে বসে পড়ে।

চলবে….

[কেমন হয়েছে জানাবেন।আস্তে আস্তে রহস্যের জট খুলবে,,ততক্ষনে ধৈর্য্য সহকারে পড়তে থাকুন।ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
চলবে….

[আজকের পর্ব সম্পর্কে একলাইনের মন্তব্য ছেড়ে যাবেন।ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

আর বিয়ের আমন্ত্রণ রইল।ডাবল বিয়ে তাই ডাবল গিফট নিয়ে আসবেন।ধন্যবাদ।😴]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here