প্রেম_প্রাঙ্গণ পর্ব ৭+৮

‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-০৭|
~সুনেহরা শামস
.
.
পিটপিট করে চোখ মেলে প্রেম।চোখ মেলার সাথে সাথে নিজেকে বেডের উপর আবিষ্কার করে,শরীরের উপর পাতলা কম্বল।এত সুন্দর করে সে কখনো শুয়ে থাকে না।আজকে নিজেকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে একটু অস্বস্তিই হচ্ছে।ভালো করে সব জায়গায় চোখ বুলায় সে,ঘরটা তার সম্পূর্ণ অচেনা।ঘরটা দেখলেই বোঝা যায় যে অনেক আভিজাত্যপূর্ণ কেউ এই রুমে বসবাস করে।একদম ঝকঝক করছে সবকিছু,উপরে ঠান্ডা এয়ারকুলারের হাওয়া বইছে।বেড,আলমিরা,ড্রেসিং টেবিল,কেবিনেট আর সোফা ছাড়া আর কিছুই নেই।পাশে একটা দরজা রুমের ভেতরেই,সম্ভবত ওয়াশরুম।তেমনভাবে সাজানো না থাকলেও ঘরটা একদম ক্লাসি!ভালো লাগছে প্রেমের।কিন্তু এইঘর কার??যতটুকু মনে আছে প্রেমের,কাউকে প্রাঙ্গণ শুট করে আর তা দেখেই সে জ্ঞান হারায়।এরপরের কিছু মস্তিষ্ক ধারণ করতে পারছে না এখন।ঘুরে ঘুরে পুরো রুমটাকে পর্যবেক্ষন করা শেষ করে যেই বসতে নিবে ওই সময়ই ওয়াশরুমের দরজা খুলে কেউ ঘরে প্রবেশ করে।সামনে প্রাঙ্গণকে দেখে চোখ দ্বিগুন মাপে বড় হয়ে যায় প্রেমের,গোল গোল চোখে তাকিয়ে থাকে প্রাঙ্গণের দিকে।প্রাঙ্গণ আসে,ওয়াশরুমের দরজা লাগায়,হাটতে হাটতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়,গলায় ঝুলে থাকা টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে থাকে।প্রেম এই পুরো সময় গোল গোল চোখে প্রাঙ্গণকে দেখলেও যখন হুশ আসে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে পিছনে ঘুরে যায়।মনে মনে তিনবারের অধিক উচ্চারণ করে ফেলে,”আসতাগফিরুল্লাহ!আসতাগফিরুল্লাহ!আসতাগফিরুল্লাহ”

প্রাঙ্গণ পুরোটা সময় আয়নায় প্রেমের দিকে তাকিয়ে ছিল।আয়নায় নিজেকে একবার পর্যবেক্ষন করে চুল হাত দিয়ে ঠিক করে পিছনে যায়,একদম প্রেমের কাছে।প্রেমের কাধে দুবার হাত দিয়ে বাড়ি দেয়,প্রেম পেছনে ঘুরে।একদম চোখ বরাবর প্রাঙ্গণের লোমশ বুক।জিভ কেটে চোখ বন্ধ করে প্রেম।প্রাঙ্গণ বাঁকা হাসে,ঘাড় বাকা করে একবার হাত বুলায় আর প্রেমের দিকে এঁগোয়।প্রাঙ্গণ যতবার এগিয়ে আসে,প্রেম ততবার পিছিয়ে যায়।একদম দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়,প্রেম দেয়ালের সাথে বাড়ি খাওয়ার সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায়।ভীতদৃষ্টিতে প্রাঙ্গণের দিকে মুখ তুলে তাকায়।প্রাঙ্গণের মুখে বাকা হাসি বিদ্যমান,প্রেম নিজেকে অসহায়বোধ করে।নিজেকে কোনো কঠিন অপরাধের অপরাধী মনে হয়!যেন তার থেকে কঠিন অপরাধ কেউই করে নি।প্রেম নিজের কোমরে কারো স্পর্শ পাওয়ার সাথে সাথে প্রাঙ্গণের চোখের দিকে তাকায়।সে এখনো তার দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে,ভাবমূর্তির কোনো পরিবর্তন নেই।প্রেম মাথা নিচু করতে গিয়ে চোখ যায় প্রাঙ্গণের বাহুতে।সুন্দর কারুকার্য করে “PRANGON” লেখাটি ট্যাটু করা।বাহু থেকে চোখ বুকে যাওয়ার আগেই চোখ বুজে ফেলে প্রেম।কানে সেই চিরচেনা মনমাতানো নেশামাখানো কন্ঠ,,,

গান গেয়ে চলে যাবো,বদনাম হয়ে যাব
সুনাম তোমার হবে হোক না,,,

ঝটপট চোখ তুলে তাকায় প্রেম।কোমরে হাতের বাধনগুলো আরো শক্ত হয়,,কাছাকাছি আসে আরো,,প্রেমের কানের কাছে মুখ নেয় প্রাঙ্গণ,,মূহুর্তের মাঝে চোখ বন্ধ হয়ে যায় প্রেমের,,

আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না,,

তারপর??একরাশ নিস্তব্ধতা!চোখ মেলে ধীরে ধীরে প্রেম।রুমে সে ছাড়া কোনো মানুষের উপস্থিতি নেই।তার মানে প্রাঙ্গণ চলে গেছে। নিজের মনের অবস্থা নিজেই ধারণা করতে পারছে না প্রেম।ভালোলাগছে প্রাঙ্গণের চলে যাওয়াতে নাকি খারাপ লাগছে তার??জানেনা সে।তবে শব্দ গুলো এখনো বাড়ি খাচ্ছে কানে।কোন শব্দগুলো?প্রাঙ্গণের গাওয়া গানের চরণগুলো নাকি নিজের ভেতরের ভালোলাগার অনুভূতির সুরগুলো??

~~~
হাতে থাকা ছবিটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে প্রাঙ্গণ।তার জীবনেও ছিল এক বসন্ত,,প্রেমের বসন্ত।জীবন ছিল সুখময়,একদম রঙিন।ডানা মেলে উড়ার ক্ষমতা না থাকলেও মন খুলে বাঁচার অধিকার ছিল।অতীত এখন ধোঁয়াশা।মনে পড়ে না কিছু আর।তবে প্রেমের বসন্ত কি দ্বিতীয়বার আসে না??সেই প্রখর অনুভূতিগুলোর সাথে কি আরেকবার দেখা করা যায় না??ভাবনাগুলো সাজানো কিন্তু কোথায় জানি একটা বাধা কাজ করছে।বুঝতে পারছে না সঠিক কোনটি আর বেঠিক কোনটি।কিন্তু ভুল-ঠিক এর থেকেও তার ভালোথাকাটা অনেক মূল্যবান প্রাঙ্গণের কাছে।উঠে দাঁড়ায় সে,হাতে থাকা ছবিটির দিকে একবার তাকায়,হাসোজ্জ্বল মেয়েটি।ইশ!হাসিটা কি সুন্দর!তবুও এই হাসির মূল্যই অনেকেই দেয়নি।ছবিটার দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে মাঝ বরাবর ছবিটি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে প্রাঙ্গণ।এখন একটু ভালো থাকা দরকার।পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে সিগারেটটি জ্বালিয়ে রওনা দেয় ছাদের উদ্দেশ্যে।

~~~
প্রেম ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়িটা দেখছে।সে আজকে ভীষণ খুশি।একটু আগেই সাহিলের কাছে জানতে পেরেছে এখন থেকে আর একা ঘরে বন্দি থাকতে হবে না তার।এই পুরো বাড়িতে এখন চলাফেরা করতে পারবে যদিও এই বাড়ির বাইরে সে যেতে পারবে না।এই নিয়ে অবশ্য এখন কোনো আফসোস নেই তার।ওই ঘর থেকে যে মুক্তি পেয়েছে এই-ই অনেক বেশী।ডুপলেক্স বাড়ি!উপরে নিচে ৬টা ঘর।সবই বন্ধ শুধু সে যে রুম থেকে বের হয়েছে সেটাই খোলা।এই ব্যপারটা যদিও একটু আজব ঠেকল প্রেমের কাছে কিন্তু তা নিয়ে বেশী একটা মাথা ঘামাল না।খুব বেশী সুন্দর না হলেও থাকা যায় এমন বাড়ি!শুধু একটু অন্ধকার এই যা।ঘুরতে ঘুরতে ছাদে আসে প্রেম,জায়গাটা ভীষণ সুন্দর কিন্তু কোথায় হতে পারে প্রেমের অজানা।ছাদটাও ভীষণ সুন্দর,গোলাপ থেকে শুরু করে বাগান বিলাস,,সবই আছে।কিন্তু এমন একটা বাড়িতে এই গাছগুলোর কে যত্ন নেয়??প্রেমের মনে প্রশ্নের উদয় হয় কিন্তু আফসোস!তাকে এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।।অনেক দিন পর খোলা জায়গা,সূর্যের আলো দেখে নিজেকে বেশ হালকা লাগছে প্রেমের।সব জায়গা চোখ বুলাতে বুলাতে চোখ যায় ছাদের দক্ষিণ পাশে।চাঁদের আলোয় একটি ছায়া স্পষ্ট,প্রেম ঐপাশে যায়।পেছন থেকে বুঝার চেষ্টা করে,কে এটা?অনেকক্ষন যাবত লক্ষ্য করে বুঝতে পারে এ আর কেউ না,প্রাঙ্গণ!প্রেম এখন আর প্রাঙ্গণের মুখোমুখি হতে চাইছেনা তখনকার ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে।আস্তে আস্তে নিঃশব্দে পা ফেলে প্রেম,যেই পিছনে ঘুরতে যাবে তখন শুনতে পায়,,

–আজকের চাঁদটা সুন্দর না প্রেম??

প্রেম থমকায়!প্রাঙ্গণ তার নাম জানে??কিভাবে??তার কন্ঠে নিজের নামটা প্রথমবার শুনল প্রেম।আচ্ছা নিজের নামকে আজ তার কাছে এত মধুময় লাগছে কেন??প্রশ্নের উত্তরটা এখনো অজানা।প্রেম আর না ঘুরে দাঁড়িয়ে যায়,আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় প্রাঙ্গণের দিকে।প্রাঙ্গণ ততক্ষণে নয় নাম্বার সিগারেটটা জ্বালিয়ে ফেলেছে।সিগারেটের ধোঁয়া বা আঁসটে গন্ধ প্রেমের কোনোকালেই প্রিয় ছিল না।কিন্তু আজকে কেন যেন দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে তার,,প্রাঙ্গণের পাশে।

–আপনি আবার চাঁদও পর্যবেক্ষন করেন নাকি??

প্রেমের কৌতূহলী কন্ঠ শুনে প্রাঙ্গণ সিগারেটে আরেক টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে উত্তর দেয়,,”কেন চাঁদ কী তোমার একার সম্পত্তি নাকি??”

প্রেম চোখ ছোট করে প্রাঙ্গণের দিকে তাকায়।সে কখন বলল যে চাঁদ প্রেমের একার সম্পত্তি??প্রেম গলা ঝেড়ে জ্ঞানীস্বরে বলে উঠে,”চাঁদ পৃথিবীর সম্পত্তি,আমরা শুধু এই চাঁদকে দেখতে পারি আর তার আলোতে ভিজতে পারি”

— চাঁদের আলোতে ভেজা যায় নাকি??

প্রাঙ্গণের প্রশ্নে প্রেম একটা গর্বের সাথে বলে উঠে,,”ঐসবের আপনি কিছু বুঝবেন না,এগুলো যারা অনেক বেশী জ্ঞান আছে চাঁদ সম্পর্কে তারাই বলতে পারবে যেমন আমি”

প্রাঙ্গণ ঠোট উলটে হাসে।হাতের নিভু নিভু সিগারেটটা ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষে দেয়।হাটা দেয় দরজার দিকে।প্রেম মুখ ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,,”আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছেন আপনি??এতক্ষন আপনাকে আমি কোম্পানি দিয়েছি আর এখন আপনার সিগারেট খাওয়া শেষ দেখে আপনি চলে যাচ্ছেন??নট ফেয়ার।”

প্রাঙ্গণ পিছনে না ঘুরেই বলে উঠে,,”আমি যদি তোমার পাশে থাকি তাহলে হয়তো সিগারেটের মতো তুমিও পুড়ে যাবে।”

প্রেম হা করে করে প্রাঙ্গণের কথাটুকু গিলে কিন্তু কথার অর্থ তার মাথায় ঢুকে না।যেই প্রাঙ্গণকে জিজ্ঞেস করবে ভেবে তাকায় কিন্তু তাকিয়ে দেখে ছাদ খালি।প্রেম “যাহ বাবা” বলে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।আর ভাবে,,”তাকে কিভাবে পুড়াবে প্রাঙ্গণ?”

~~~
গভীর রাত।প্রায় তিনটা বাজে।সব অন্ধকার আর নিস্তব্ধ।পরিবেশ হালকা,বাতাস বইছে শো শো করে।শেষ এর ঘরটি আলোকিত।বেডের এককোণায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে প্রাঙ্গণ।পায়ের উপর দুই হাতের কনুই দিয়ে ভর দিয়ে মাথায় হাত গুজে বসে আছে প্রাঙ্গণ।চিন্তায় দুটি বিষয়,অতীত আর প্রেম!চোখ লাল হয়ে আসছে প্রাঙ্গণের।আজকের দিনটিকে জীবনের সেরা দিন ভাবলেও বর্তমানে শুধুই অতীতের কালো অধ্যায় এর সমাপ্তির দিন।কষ্টগুলো ভেতরে জমে বসে আছে।মুক্ত হওয়ার নামই নেই।ভালোলাগছে না তার,দুই বোতল অলরেডী খালি করে ফেলেছে কিন্তু মাথা থেকে বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা মুছতে পারছে না।বার বার মনে পড়ছে।মাথার চুলগুলো আকড়ে ধরে প্রাঙ্গণ।

প্রাঙ্গণের রুমের আলো জ্বলছিল,কৌতূহলবশত কি হয়েছে জানার জন্য সাহিল প্রাঙ্গণের রুমে ঢুকে।রুমে ঢোকার সাথে সাথেই চমকায় সাহিল,ভীষণভাবে অবাক হয়।ঘর এলোমেলো,খালি দুটো এক্সপেন্সিভ কাচের বোতল দুটি পড়ে আছে পাশে,সাথে বিদ্ধস্ত হয়ে বসে আছে প্রাঙ্গণ।সাহিল প্রাঙ্গণের দিকে এগিয়ে যায়,,প্রাঙ্গণ হয়তো বুঝতে পারে সাহিলের উপস্থিতি,,লাল হয়ে যাওয়া চোখজোড়া তুলে তাকায় সে আর অসহায়কন্ঠে বলে উঠে,,

” “আইজাকে ফেরত আনতে পারবি সাহিল??” ”
‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-০৮|
~সুনেহরা শামস
.
.
ভোর ৪টা।সব নিরিবিলি,,কৃত্রিম আলো ব্যতীত সূর্যের আলোয় পুরো বাড়ি আবছা হয়ে আছে।সোফার এককোণে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে প্রেম,গতকাল রাতে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।তাই হালকা বিশ্রামের জন্য সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে প্রেম আর সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রাঙ্গণ পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে প্রেমের সামনে।গতকাল রাত থেকে নির্ঘুম সে।সারারাত চিন্তাভাবনায় মশগুল ছিল তাই হয়তো ঘুমেরা ধরা দেয়নি।প্রাঙ্গণ প্রেমের গালে হাত রেখে।ঘুমন্ত প্রেমকে তার কাছে একদম নিষ্পাপ বাচ্চার মতো মনে হচ্ছে।অগোছালো চুলগুলো নিজ হাতে সযত্নে গুছিয়ে দেয় সে।প্রাঙ্গণ লক্ষ্য করে,প্রেমের ঠোটের নিচে ছোট্ট একটা তিল আছে কিন্তু দূর থেকে তা ভালোভাবে বুঝা যায় না।প্রাঙ্গণ হাসে,আইজার ঠোটের নিচেও এরকমই একটা তিল আছে কিন্তু দূর থেকে লক্ষ্য করলেও খুজে পাওয়া যেত না।এত মিল কারো কিভাবে থাকতে পারে??প্রাঙ্গণের জানান নেই,,কিন্তু মাঝে মাঝে তার খটকা লাগে যে এত মিল কারো কিভাবে থাকতে পারে।মনে পরে যায় সেদিনের কথা যেদিন সে প্রথম প্রেমকে দেখে,,,

জীবনের দ্বিতীরবার মার্ডার করেছিল সেদিন প্রাঙ্গণ।প্রথমবারে যেমন মার্ডার করার সময় হাত-পা কেপেছিল তেমন সেদিন হয়নি।ফাঁকা হাইওয়ে দিয়ে এগিয়ে চলছে তার গাড়ি,,কিছুক্ষন বাদেই জ্যাম লাগে রাস্তায়।তেজি সূর্যের আলোতে ভ্যাপসা গরম চারপাশে।প্রাঙ্গণ গরম সহ্য করতে পারে না।তাই গাড়ির উইন্ডো গ্লাস লাগাতে নেয়,,উদ্দেশ্য এসি অন করবে।যেই লাগাবে এমন সময় বাইরে লক্ষ্য করে সেই একই চেহারা,,একই চোখ,,একই ঠোঁটের গড়ন,,আর সেই নজরকাড়া তিল।প্রাঙ্গণ স্তব্ধ হয়ে যায় সেখানেই,,বিশ্বাস করতে সেদিন তার ভীষণ কষ্ট হয়েছিল।কখনো এক টুকরো আশার আলো ফুটেছিল আবার কখনো তা নিরাশার মেঘ হয়ে তার মনে জমে ছিল।জ্যাম ছুটে যাওয়ায় সেদিন আর খুজে পায়নি সেই মেয়েটিকে।অতঃপর?দীর্ঘ ৪ মাস খোজাখুজি শেষে খুজে পায় সে প্রেমকে।প্রেমের ব্যপারে সব তথ্য খুজে পাওয়ার পর যেন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায় সে।অবিকল দেখতে দুজন আসলেই কি হতে পারে এ পৃথিবীতে??প্রাঙ্গণের জানা নেই।তাই জন্যই তো প্রাঙ্গণ প্রেমকে এখানে তুলে নিয়ে আসে।সে যেই-ই হোক,,প্রেম হোক আর আইজা হোক,,সে তো অন্তত ভালো থাকবে।এই ভেবেই প্রাঙ্গণ প্রেমকে নিয়ে আসে।অনেকবার প্রেমের সামনাসামনি সে গিয়েছে কিন্তু কেন যেন বারবার দুর্বল হয়ে যায় প্রেমের সামনে,,কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হারিয়ে ফেলে,,মনে মনে ভয় হয় যদি আবার হারিয়ে যায় সে??

ভাবনাগুলো থেকে বিরতি নেয় প্রাঙ্গণ।প্রেমের দিকে তাকায়,,দেখে পিটপিট করে প্রেম চেয়ে আছে তার দিকে।প্রাঙ্গণ হালকা স্বরে বলে উঠে,,

“গুড মর্নিং”

জানালা দিয়ে বাইরে উকিঝুকি মারে প্রেম।প্রেমের কান্ড দেখে বুঝতে না পেরে প্রাঙ্গণ জিজ্ঞেস করেই ফেলে,,

“এনিথিং রং?এভাবে বাইরে উকিঝুকি মারছো কেন?”

প্রেম ঝটপট উত্তর দেয়,,

“বাইরে দেখছিলাম যে সূর্য কোনদিকে উঠেছে, এত মধুমাখা শুভ সকাল জানাচ্ছেন আমাকে??”

প্রাঙ্গণ প্রেমের কান্ড দেখে চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাকিয়ে হাসে।প্রেম একদৃষ্টে লক্ষ্য করে প্রাঙ্গণের হাসি।ভালোলাগে তার কাছে।কেন জানি মনে হয় চেয়েই থাকতে তার দিকে।নিজের অজান্তেই প্রাঙ্গণকে প্রশ্ন করে বসে সে,,

“আচ্ছা আপনার হাসিটা এত সুন্দর কেন??”

প্রাঙ্গণের হাসি সাথে সাথে মিলিয়ে যায়।তাকায় প্রেমের দিকে,,প্রেমের চোখও এখন সামনে থাকা প্রাঙ্গণের বাদামী চোখগুলোর গভীরে অবস্থিত।প্রাঙ্গণ প্রেমের দিকে এগিয়ে যায়,,তা দেখে প্রেম একেবারে সোফার সাথে মিশে যায়।প্রাঙ্গণ প্রেমের ভীত চোখগুলোর দিকে তাকায়।আরো এগিয়ে যায় প্রেমের দিকে,,উচু হয়ে ঝুকে।প্রাঙ্গণের বুক একদম প্রেমের চোখজোড়ার সামনে,,প্রেম এবার ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।প্রাঙ্গণের প্রেমের প্রতিক্রিয়া দেখে হালকা হাসে,,ঝুকে যায় প্রেমের কপাল বরাবর।শব্দ করে চুমু খায় প্রেমের কপালে।প্রেম ঝটপট চোখ খুলে তাকায়।দেখে কেউ নেই,,তার মানে প্রাঙ্গণ তাকে চুমু খেয়ে চলে গেল??ছি!ছি!

~~~
সন্ধ্যায় একসাথে হাসিতে ব্যস্ত সাহিল-প্রেম।প্রেম কিটকিটিয়ে হাসছে আর সাহিল তাতে তাল মেলাচ্ছে।বিশেষ কোনো কিছুই না।মনে পড়ে যায় আজকে বিকালের কথা,,,

এখানে তেমন কোনো কাজ নেই প্রেমের তাই বিকালে ছাদে বসে সাহিল আর প্রেম জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছিল।ঠিক তখনই শম্পা ছাদে আসে।পরিচয় দিতে গেলে,,শম্পা এ বাড়ির কেয়ারটেকার আর বাড়ির যাবতীয় কাজ সে নিজেই করে থাকে।তার ছাদে আসার মূল উদ্দেশ্য গাছে পানি দেওয়া।নিচে প্রাঙ্গণ তার পোষা শেপহার্ডকে নিয়ে হাটাহাটি করছে।প্রেম আড়চোখে বারবার তা দেখছে,,প্রেমের লুকিয়ে লুকিয়ে চোখ ঘুরানোর বিষয়টিও সাহিল লক্ষ্য করে মিটিমিটি হাসছে।সব মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল পরিবেশ!

শম্পা গাছে পানি দিতে দিতে লক্ষ্য করে নিচে অনেক কাঁদা পানি পড়ে আছে।প্রাঙ্গণ দেখলে অনেক রাগ করবে এই ভয়ে সে কাঁদা পানিগুলো বালতি উঠিয়ে না দেখেই দূরে ছুড়ে মারে।নিচে কোথায় পড়ল সেদিকে তার খেয়াল নেই।হুট করে নিচ থেকে প্রাঙ্গণের রাগীস্বরে চিৎকার শুনা যায়।শম্পা,সাহিল,প্রেম তিনজনই নিচে উকি মারে।দেখে প্রাঙ্গণের কাঁদা পানিতে মাখামাখি অবস্থা।শম্পা “ইন্না-লিল্লাহ” বলে সাথে সাথেই জিব কাটে।সাহিল চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে প্রাঙ্গণের দিকে,,কখনো প্রাঙ্গণের সাথে এমন হতে দেখেনি সে কারণ প্রাঙ্গণ অপরিচ্ছন্নতা বা ধুলা-ময়লা সহ্য করতে পারে না।তাই সবাই সাবধানে কাজ করত।কিন্তু আজকে সেই প্রাঙ্গণের উপরই ময়লা কাঁদাপানি??সাহিলের ভাবতে একটু কষ্টই হচ্ছে।এদিকে প্রেম এতক্ষন বড় বড় চোখ করে চেয়ে থাকলেও এবার কিটকিটিয়ে হেসে দেয়।নিচে প্রাঙ্গণ ঝাড়াঝাড়ি বন্ধ করে উপরে চোখ তুলে উপরে তাকায় হাসির শব্দের উৎস খুজতে।ভালোভাবে দেখে প্রেমের হাসি,,কেমন জানি আলাদা মুগ্ধতা ছড়িয়ে আছে।আচ্ছা সবার চোখেই কি এই মুগ্ধতা ধরা পড়ে নাকি শুধু তার চোখেই পড়ছে??প্রেমের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হুট করে নজর যায় পিছনে থাকা সাহিল আর শম্পার উপর।সাহিলও মুখ চেপে হাসছে আর শম্পা নিজেই কনফিউস সে হাসবে নাকি কাঁদবে??প্রাঙ্গণ শম্পার দিকে “চোখ দিয়ে গিলে খাবে” টাইপ লুক দেয়।শম্পা মনে মনে একবার বলে উঠে “ইন্না-লিল্লাহ”

~~~
এখনো হাসি থামছে না প্রেমের।”ড্যাসিং ম্যান থেকে সোজা জোকারম্যান??”প্রেমের হাসি দেখে সাহিলও চুপিচুপি হাসতে থাকে।এদিকে সেই ঘটনার পর প্রাঙ্গণ আর ঘর থেকে বের হয়নি।নিজের সাথে এরকম ঘটনা তাও আবার সবার সামনে।ইশ!কি লজ্জাজনক ব্যপার।তবে প্রাঙ্গণের লজ্জা নামক অনুভূতিটা হচ্ছে না।তার কথা হলো,তাকে কেন এইসব পানি দিয়ে গোসল করানো হলো??এই পর্যন্ত ৪ বার শাওয়ার নিয়েছে। তাও কেন জানি মনে হচ্ছে,,তার শরীরে কাঁদার গন্ধ লেগে আছে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় প্রাঙ্গণ,,উদ্দেশ্য পারফিউম লাগানো।তার ড্রেসিং টেবিল বরাবর লম্বা একটা থাই আছে যা দিয়ে বাইরের সবকিছু দেখা যায়।প্রাঙ্গণের নজর যায় বাইরে থাকা প্রেমের দিকে।প্রেম হাসতে হাসতে সাহিলের গায়ে ঢলে পড়ছে আর সাহিলও মাথা চুলকে হাসছে।প্রাঙ্গণের মনে হচ্ছে তার গায়ে কেউ আগুনের গোলা ঢেলে দিচ্ছে।প্রাঙ্গণ মনে মনে ভাবে,,”এদের একটা ব্যবস্থা করা লাগবে।ভাবনার সুতো ছিড়ে যায় ফোনের রিংটোন এর আওয়াজে।প্রাঙ্গণ এগিয়ে যায় ফোনের দিকে,,আননোন নাম্বার।প্রাঙ্গণ রিসিভ করে,,

“হ্যালো”

~~~
হাসা-হাসির এক পর্যায়ে প্রেম ঘুমিয়ে পড়েছিল।কিন্তু ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ড্রইং রুমের বদলে আবার সেই রুমে আবিষ্কার করে একটু না অনেক বেশী অবাক হয় প্রেম।বুঝতেও পারছে না সে এখানে কীভাবে এলো।সে কি আবার ঘুমা হাটে নাকি??ভাবনাগুলোকে বেশি বাড়ালো না,,তা না হলে মাথা ব্যথা করবে তার।বাইরে তাকিয়ে দেখে হালকা হালকা আলো,,সর্বনাশ!সে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে এই ভোরবেলা উঠল??বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলে চোখে পড়ে ঝলমলে দুটি শপিংব্যাগ।ব্যাগগুলো খুলে প্রেমের চোখ ছানাবড়া!!এরকম বিয়ের লেহেঙ্গা এখানে কি করছে?তার শাড়ি নিয়ে ভাবার আগেই প্রাঙ্গণ রুমে আসে,সাদা শেরওয়ানীতে প্রাঙ্গণকে দারুণ লাগছে কিন্তু এই শেরওয়ানী-লেহেঙ্গার কাহিনীটা প্রেমের মাথায় ঢুকছে না।সে আর না পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেলে,,

“আজকে কি কারো বিয়েতে যাচ্ছি আমরা??”

হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে প্রাঙ্গণ বলে উঠে,,

“আজকে আমাদের বিয়ে,গেট রেডি ফাস্ট ”

চলবে….

[সবাইকে বিয়ের দাওয়াত রইল।ওহ হ্যা,গিফটসহ আসবেন কিন্তু।ধন্যবাদ😴]
চলবে…

[আজকের পর্ব সম্পর্কে একলাইনের মন্তব্য ছেড়ে যাবেন। হ্যাভ আ সেফ এন্ড সাউন্ড স্লিপ❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here