প্রেয়ন পৃথুর প্রেমসুতা পর্ব -২২+২৩+২৪

#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো💖
#পর্ব_২২
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
,
–পৃথু তুই আমাকে ছেড়ে যেতে পারিস না আমি ভালোবাসি তোকে আমি বাঁচবো না তোকে ছাড়া।
প্রচুর ভালোবাসি তোকে তুই যদি আমাকে রেখে কোথাও হারিয়ে যাস বাঁচবো না।
বাঁচবো না পৃথু।
হসপিটালের একটি বেঞ্চে বসে মাথায় হাত দিয়ে কথা গুলো বলছে প্রেয়ন।
–বাবা তুই শান্ত হ আমার বিশ্বাস মেয়েটার কিছু হবে না।
–বাবা মা কই?
–জানি না সকলে বেরোলো কোথাও এখনো আসে নি ফোনেও পাচ্ছি না ওকে।
–কে বলেছে আমি নেই।
প্রেয়নের বাবার কথায় ছেদ ঘটিয়ে চলে এলো আয়লা।
–প্রেয়ন বাবা আমার পৃথুলা কেমন আছে আল্লাহ আমি যখনি শুনতে পেয়েছি ওর এই অবস্থা তখনি আমি দৌড়ে চলে এসেছি। (কান্নার ভান ধরে)
–কিন্তু নয়লা তোমায় তো আমি কিছু বলি নি তুমি আমার ফোন ধরো নি।
কিছুটা বিশম খেয়ে গেল আয়লা কথাটা শুনে।
–আরে তুমি বলো নি বাসায় গিয়ে মেড দের কাছে শুনলাম।
–ওহ তুমি গেছিলা কই?
–এখন এতো প্রশ্ন কেন করছো আমার পৃথুলা মা অসুস্থ তুমি সে খেয়াল করছো না কেন?
–হ্যাঁ তাই তো।



–আপু আমাকে ক্ষমা করে দে আপু আজ আমার জন্য তোর এই অবস্থা।
আল্লাহ আমার আপুকে সুস্থ করে দেও তুমি তো জানো আম্মু চলে যাবার পর আপুই আমার সব ছিলো।
আমাকে দ্বিতীয় বার অনাথ করে দিও না তুমি।
হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলছে রাইমা।
নীল বাইরে থেকে সবটা শুনছে।
–কি করে বুঝাবো আমি রাইমাকে আমি আপুকে গুলি করি নি।
নাহ এভাবে চুপ থাকলে হবে না ওকে বুঝতে হবে আমার কথা।
নীল ভেতরে প্রবেশ করলো।
নীলের উপস্থিতি রাইমা বুঝতে পারলো,
–দয়া করে আমার কাছে আসবেন না প্লিজ আমি ভিক্ষা চাইছি আমার থেকে দুরে থাকুন আমার কাছে আসবেন না এক দম সহ্য হচ্ছে না আমার নিজেকে পুড়িয়ে দিবো সত্যি বলছি আপনি আমাকে স্পর্শ করলে।
মুখ তুলে কথা গুলো বললো রাইমা।
–রাইমা আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো আমি,
–আমি শুনবো না কিছু দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না আপনার মুখ আমার প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
চিল্লিয়ে কথা গুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো রাইমা।
–ঠিক আছে নিজেকে নির্দোষী প্রামনিত করেই তোমার সামনে আসবো সেদিন তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেও আমি ফিরে যাবো না।
কথাটা মাথায় গেথে নেও।

নির্ঘুম কাটছে প্রেয়ন,নীল আর রাইমার রাত।
এটাই হয়তো ভালোবাসা।
কারোর চোখে এক বিন্দু ঘুম নেই।
রাইমা সারাটা রাত কেঁদেছে।
নীল রাইমার রুমের দরজার পাশে বসে ছিলো।
আর প্রেয়ন সেও পৃথুলার দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।
মাঝ রাতে অনেক ইবাদত করেছে পৃথুলার জন্য।
কারন তার পৃথুলা তাকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করানো শিখিয়েছে।

ভোরের সূর্য উদয় হলো,
–রাইমা দরজা খুলো খাবারটা অন্তত খেয়ে নেও।
–রেখে যান ওখানে।
–ঠিক আছে আমার মুখ দেখতে চাও না বুঝতে পরছি রেখে গেলাম এখানে।
নীল চলে গেল খাবারটা রেখে।
রাইমা দরজা খুলে খাবারটা নিয়ে ঘরের ময়লার বালতির মধ্যে ফেলে দিলো।
–হে আল্লাহ আমাকে মাফ করো এ খাবার আমাকে না অন্য কোন প্রানির পেটে দিও।



হসপিটালে,
–মি.খান।
–জি। ডক্টর আমার স্ত্রী।
–অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি কথাটা আপনার স্ত্রী এর হার্ট এর কিছুটা দুরে গিয়ে গুলিটা থেমে গেছে গুলিটা কাল বার করেছি ঠিক কিন্তু একটা অংশ ওনার শরীরের ভেতরে রয়ে গেছে।
এটার জন্য অপারেশন করতে হবে কিন্তু যেহেতু এটা ওনার হার্ট এর এক দম কাছে সেহেতু হয়তো আমারা সাকসেস হতে পারি নাহলে ওনাকে চিরজীবনের মতো হারাতে হবে আপনাকে।
আর এই অপারেশন না করেও কোন উপায় নেই।
প্রেয়ন ডক্টর এর কথা শুনে চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকলো ডক্টর এর দিকে।
–মি.খান আমি বুঝতে পারছি আপনি ওনাকে অনেক ভালোবাসেন কিন্তু এ ছাড়া কোন উপায় নেই।
–কতো শতাংশ সম্ভবনা।
–এই ৪০% বেঁচে থাকা ৬০% মৃত্যু।
–ও পুরো সুস্থ হয়ে যাবে তো?
–জি আমরা সাকসেসফুলি অপারেশন কম্পিলিট করতে পারলে অবশ্যই সুস্থ হবে।
–কোন ফর্মালিটি আছে।
–জি বন পেপার সাইন করে দিন।
–ঠিক আছে।
প্রেয়ন পেপার সাইন করে দেয়।
এ ছাড়া আর কোন উপায় যে নেই৷

–পৃথু তুই আমাকে একা রেখে কেন ওখানে শুয়ে আছিস আমার কষ্ট হচ্ছে যে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস কর।



–মি.চৌধুরী আমার একটা ফোন লাগবে। (রাইমা)
–আমারটা নেও। (নীল)
–আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।আপনার মতো একজন মানুষের ফোন আমার ভাইয়া ধরবে না।
–তোমার ভাইয়া আমার এই নাম্বার চিনে না এখন ফোন কিনে সেটা সেট করতে তো সময় লাগবে এটা দিয়ে কথা বলো রাতে এনে দিবো
রাইমা নীলের থেকে ফোনটা নিয়ে প্রেয়ন কে ফোন করে,
–আসসালামু আলাইকুম।
–আলাইকুম আসলাম। ভাইয়া আমি রাইমা৷
–রাইমা তুই চিন্তা করিস না আপু আমি তোর আপুকে সুস্থ করেই আগে তোকে নিয়ে আসবো ওখান থেকে।
–না ভাইয়া আমি সে জন্য ফোন করি নি তুমি আমার কথা ভেবো না আমি যেভাবে থাকি থাকবো তুমি বলো আপু কেমন আছে?
–ডক্টর বলেছে,
(সবটা খুলে বললো)
–ইস এতো সোজা নাকি হুম আমাকে রেখে যাওয়া এতো সোজা নয়।
তুমি চিন্তা করো না এক দম ভেঙে পরবে না আমি ভালো রেজাল্ট করলে ওকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে নিজ হাতে আমাকে।
তুমি চিন্তা করো না ওর কিছু হবে না।
এতে সোজা নাকি হুম।
(ভাঙা গলায় কথা গুলো বললো রাইমা)
–নামাজ পড় তুই চিন্তা করিস না আমি তোকে ওই জল্লাদ এর কাছে রাখবো না।। –
–আমাকে নিতে তুমি আর আপু না আসলে আমি যাবো না।
–আসবে আমাকে এক করে দিয়ে ও কেথাও যেতে পারবে না।
–হুম।
–আল্লাহ হাফেজ।
–আল্লাহ হাফেজ।

রাইমা ফোনটা কেটে নীলকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
নীল তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার দিকে।
নীলও নামাজ পড়তে গেল।
নিজের ২২ বছর বয়সে এই আল্লাহর কাছে সে কিছু চাইবে নীল।
নীল কখনে আল্লাহর কাছে কিছু চাই নি।
কিন্তু আজ চাইবে।
প্রেয়ন ও নমাজে বসে সাথে রাইমা ও।
এতো মানুষের দোয়া কি লাগবে পৃথুলার নাকি সবাইলে কাঁদিয়ে সে চলে যাবে না ফেরার দেশে।
চলবে,#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো💖
#পর্ব_২৩
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
,
–খাওয়া দাওয়া কেন ছেড়ে দিছো? (কড়াগলায় কথাটা বললো নীল)
–উত্তর দিতে বাদ্ধ নই।
–মানুষের সহ্যের একটা সিমা থাকে রাইমা।
–……..(নিশ্চুপ)
–খাবার খেয়ে নেও।
–খাবো না।
–আমাকে জোর করতে বাদ্ধ করো না।
অন্য দিকে মুখ ফিরে উত্তর দিচ্ছিলো নীলের কথার রাইমা৷
নীলের এ কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে উত্তর দিলো,
–যা ইচ্ছে করেন।
–ওকে যা ইচ্ছে তাই করছি ভেবেছিলাম তুমি ছোট তাই তোমায় ছোড়ে দিছিলাম।
কিন্তু আমি কেন আমার এতো সুন্দর বৌ কে ছেড়ে দিবো আমারও অধিকার আছে। আফটার আল আমি তো তোমার স্বামী রাইট।
কথাগুলো বলে শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে এগোচ্ছে নীল।
–দ দেখুন কি করতে চাইছেন? (ঘাবড়ে গিয়ে)
–কি আবার বাসর।
–আমি খাচ্ছি খাবার দিন।
–কেন তোমার খওয়ার দরকার নেই আমি খাই।
–না….. (চিল্লিয়ে)
–পুরোটা শেষ করবে।
–এতো কিছু কিভাবে।
–যেভাবে আজ ২ দিন না খেয়ে আছো সেভাবে।
–২ দিনার খাবার এক সাথে খাওয়া সম্ভব।
–হুম। সম্ভব। খাও।
রাইমা খেতে বসে।
খুদা পেয়েছিলো তাই অনেকটাই খেয়ে নেয়।



হসপিটালে,
–প্রেয়ন বাবা আমার মেয়ের কি অবস্থা?
–জানি না মা দোয়া করো।
–(দোয়া তো করি যাতে মারা যায় আপদ বিদায় হয় মনে মনে)
তুই চিন্তা করিস না ও ঠিক হয়ে যাবে।
–মা তুমি পাশে থাকলে শক্তি পাই।
–হুম বাবা সব সময় পাশে থাকবো।
কথার মাঝে ডক্টর বেরিয়ে এলেন,
–ডক্টর।
–রিলাক্স মি.খান সি ইজ আল রাইট।
–সত্যি।
–এক দম।
–দেখা করতে পারবো।
–হুম পারবেন। কিন্তু কেবিনে সিফট করানোর পরে,
–ওকে।
মা।
–আমি বলেছিলাম না বাবা কিছু হবে না।



–স্যার আমরা খুজে পেয়েছি সেই সুটার কে।
–কই তার বাসা (নীল)
–স্যার আপনি চলে আসুন অপজিটে।
–ওকে।
নীল গাড়ি ঘোরায়।
–আমি নিজের ভাবি যে কিনা মা সমান তার অপরাধী হয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না।
আমি বের করেই ছাড়বো এর পেছনে কে আছে।

নীল প্রায় অনেকটা সময় ড্রাইভ করে গন্তব্যে পৌঁছে যায়৷
–স্যার আসুন ওকে ধরছি৷
–ওকে।
নীল ভেতরে গিয়ে দেখে একটা লোকের হাত আর পা বাঁধা।
–কিরে তোর নাম কি?
–আসাদ।
–আমার বাসায় ডুকে আমারি ভাবিকে গুলি করার সাহস তোকে কে দিছে?
–আমার কোন দোষ নেই কিন্তু ক্ষমা করবেন যে বলেছে তার কথা বলতে পারবো না আমি।
–তুই বলবি না তোর বাপ এসে বলবে।
তোর সাথে ভালো ব্যাবহার হচ্ছে না।
ওকে মার ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না ও শিকার করে সব কিছু৷



প্রেয়ন পৃথুর কেবিনে গিয়ে পৃথুলার পাশে বসলো,
পৃথুলার চোখ দুটো এখনো বন্ধ।
এতো মায়া যে মেয়েটা কই রাখে তা জানা নেই প্রেয়নের।
প্রেয়ন পৃথুলার মাথায় হাত রাখলো।
–পৃথু।
টিপ টিপ করে চোখ দুটো খুললো পৃথুলা।
চোখ খুলে অবাক পানে তাকিয়ে আছে প্রেয়নের দিকে।
এক দু ফোটা পানি পৃথুলার চোখ দিয়ে পরতে প্রেয়ন উত্তেজিত হয়ে পড়ে,
–কি হইছে কোন সমস্যা কষ্ট হচ্ছে।
–না। (মাথা নাড়িয়ে)
–তাহলে কাঁদছিস কেন?
–আমার মনে হয়েছিলো এটাই হয়তো শেষ তেমার কোলে মাথা রাখা।
প্রেয়ন নিচু হয়ে পৃথুলাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
–কে বলেছে পাগলি।
এই দেখ তোকে আবার আল্লাহ আমার কাছে ফিরিয়ে দিছে।।
আমি আছি কখনো মন খারাপ করবি না।
তুই আমার দুনিয়া।
প্রেয়ন উঠে পৃথুলার কপালে চুমু দিয়ে তার হাত ধরে বসে রইলো।



৫দিন পর,
পৃথুলাকে আজ রিলিজ দেওয়া হবে।
সুস্থ নয় পুরোপুরি কিন্তু সে এখন বাসায় যাবে।
একটা দিন প্রেয়ন বাসায় একটা ঘন্টার জন্য যায় নি।
অফিস করে পর্যন্ত এখানে এসেছে।
এতো ভালোবাসা কয় জনের কপালে থাকে।
প্রেয়ন পৃথুলাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে তার পাশে বসলো।
ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
কিছু সময় পর তারা বাসায় পৌঁছে যায়।
–আমার মেয়ে এসেছে (আয়লা)
মিথ্যা খুশির ভান ধরে।
–হুম এসেছে তো। বরন করবে না। (প্রেয়ন)
–অবশ্যই।
–হুম সাথে আমাদেরও,
সবাই পেছনে তাকিয়ে অবাক।
আয়লা যেন ৪২০ ভোল্টের সক্ট খেলো।
চলবে,
(পরের পর্বে ধামাকা আছে।
আমি একটু অসুস্থ তাই পর্ব ছোট হলো।
আমাকে তার জন্য ক্ষমা করবেন।
বানান গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রিচেক দিতে পারি নি ভুল হতে পারে)#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতো💖
#পর্ব_২৪[ধামাকা]
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
,
–আমাদের কেও জায়গা দেও মা।
কথাটা বলেই এক জন মহিলার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো নীল।
প্রেয়ন আর পৃথুলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কারন মহিলাটা পুরোই তাদের মায়ের মতো দেখতে।
–প্রেয়ন উনি কে?
পৃথুলা নয়লার দিকে হাত দিয়ে প্রশ্ন করলো।
–নীল তুমি কাকে নিয়ে এসেছো আমার বাড়ি ডোকার সাহস তোমায় কে দিয়েছে।
–আব স সেটাই ক কে দ দিয়েছে (তুতলে)
–মা তুমি ভয় পাচ্ছো কেন ওদের দেখে?
এটা নিশ্চিত নীলের কোন চাল। (প্রেয়ন)
–হ্যাঁ আ আমি ত তো তাই ব বলছি।
এই শীতেও ঘেমে গেছে আয়লা।
–মা তুমি ঘামছো কেন আমার জানা মতে এটা তখন হয় যখন মানুষ কোন ভুল করে তুমি তো কোন ভুল করো নি তবে এই শীতে ঘামছো কেন?
–কি যে বলিস বাবা ভ ভুল কি।
এদের বাড়ি থেকে বের কর।
–কেন মা তুমিই তো আমাকে বলেছিলে নীলকে এই বাড়ি নিয়ে আসতে তাহলে আজ কেন এ কথা বলছো?
–হ্যাঁ মা তুমি তো চাইতে আমি তোমার আদর পাই সবাই মিলে এক সাথে এ বাড়িতে থাকি (নীল)
–প্রেয়ন, নীল কি বলছো তোমরা এগুলা আমাকে পরিষ্কার করে বলো(নীল,প্রেয়নের বাবা)
–বাবা পরিষ্কার কথা হলো এই মহিলা আমাদের মা নয় এই মহিলা হলো আমাদের মায়ের জমজ বোন আয়লা। (প্রেয়ন)
–কি বলছিস কি এগুলা।
–হ্যাঁ প্রেয়ন কি বলছো এগুলা।
–ভাই ঠিক বলছে ভাবি আমাদের জীবনের প্রতিটি কষ্ট প্রতিটি খারাপ সময়ের জন্য এক মাত্র দায়ি এই মহিলা।
এই মহিলা আমার মাকে আটকে রেখেছিলো এতো দিন এক অন্ধকার পুরিতে।
এই মহিলা আমাকে ফেলে দিয়ে এসেছিলো।
ওনার প্লান ছিলো আমাকে মাফিয়া বানিয়ে প্রেয়ন ভাই এর জীবন নিবে।। কিন্তু আমার জীবনে আমার পালিত বাবা চলে আসায় সে কাজে সফল হতে পারে নি।
তার জন্য প্রতিনিয়ত আমাকে ভুল বুঝাতো ভাই আর বাবার নামে।
আমি বিষাক্ত হয়ে গেছিলাম।
এই মহিলার বিষে।
–শুধু তাই নয় তোমায় গুলিও এই মহিলা করেছে।
আমাদের জীবনের প্রতিটি খারাপ সময় এর জন্য এসেছে। আমার ভাইকে আমার থেকে দুরে রেখেছে তোমায় মারার চেষ্টা করেছে। আমার আসল মাকে প্রতিদিন কষ্ট দিছে।
জীবনের সমস্ত ঝড় এই মহিলার জন্য এসেছে।
–বাবা।
নীল আর প্রেয়ন নয়লা রহমানের মুখে বাবা ডাক শুনে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
–তুমি চিন্তা করো না মা আমরা সবাই আজ তোমার সাথে আছি।
–আয়লা তুই আমার স্ত্রী এর জায়গায় এতো দিন ছিলি।
কিন্তু কেন আমার সংসার টাকে এভাবে ভেঙে তোর কি লাভ হলো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি করেছি সব আমি এই আয়লা করেছি সব।
কেন জানো ভালোবাসতাম তোমায়।
কখনো আমার ভালোবাসার মূল্য দেও নি তুমি কখনো না সব সময় আমাকে বোনের চোখে দেখতে আমি তো আমার বোনের মতো দেখতে ছিলাম কিন্তু তাও তুমি আমাকে দুরে সরিয়ে দিতে।
সর্বদা এতো অবহেলা সহ্য করে তাও ছিলাম কিন্তু নয়লার কোলে প্রেয়ন আসার পর তুমি যখন আমাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিলে তখন আমি পন করেছিলাম এই ছেলে আর তোমাদের সংসার কখনো আমি ভালো থাকতে দিবো না।
–তুই আমার বাচ্চাদের মারতে চেয়েছিলি বলেই তোকে বের করে দিয়েছিলাম।
–হ্যাঁ চেয়েছিলাম মারতে আমার সহ্য হতো না তাই মারতে চেয়েছিলাম।
বিশ্বাস করো আমি তোমায় ভালোবাসি আবির।
–নীল প্রেয়ন এই মহিলার জন্য কি ব্যাবস্থা করেছিস।। —
–মেন্টাল হসপিটাল।
উনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। (প্রেয়ন)
–না আমি অসুস্থ নয় আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি।
–নার্স
নার্স এসে আয়লা কে নিয়ে যায়।
–আল্লাহ এতো কিছু কি করে?
কথাটা বলেই আমি বসে পরলাম।
–খারাপ লাগছে তোমার।
প্রেয়ন উত্তেজিত হয়ে বললো,
–না আমি ঠিক আছি। রাইমা।
–আমি এখানে।
রাইমা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
–আপু আই মিস উ।
–আই মিস উ টু৷।
–আমি এতে বছর পর নিজের পরিবার কে আবার এক সাথে দেখতে পাবো তা কখনো ভাবি নি। (নায়লা)
–তোমার ছেলেরা থাকতে তোমার কোন ভয় নেই মা।
সবাই নায়লা কে জড়িয়ে ধরে।
,
রাতে,
খাবার শেষ করে সবাই এক জায়গায় বসেছে,
–আমরা আজ থেকে সবাই এক জায়গায় থাকবো (নীল)
–হ্যাঁ পৃথু বাবাকেও আনার ব্যাবস্থা চলছে সাথে নীলের বাবাকেও।
–আল্লাহ আমাদের এতো বড়ো পরিবার হবে ভেবেই খুশিতে নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে (রাইমা)
–হ্যাঁ তুমিতো সুন্দর নাচতে পারো (পৃথুলা)
— ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট দ্যি পাওয়ার অফ মাই ড্যান্স। (ভাব নিয়ে)
–ওরে বাবা কে তুমি?
–তোর বোন(দাত বের করে)
–হ্যাঁ হইছে নেও।
–তোমারা দু বোন থামো ও দিকে দেখো কারা এসেছে।
সবাই মেইন ডোরের দিকে তাকিয়ে দেখে,
আজিজ রায়হান আর বাবর চৌধুরী (নীলেী পালিত বাবা)
আসছেন।
সবাই খুশিতে উঠে দাঁড়ায়।
আজিজ রায়হান হাঁটতে পারেন না হুইলচেয়ারে বসে আছেন।
–বাবা কেমন আছো?
বাবার কাছে গেলাম আমি আর রাইমা।
বাবার চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।
নিজের হাতটা আমাদের মাথায় রাখলেন।
কতো দিন পর বাবাকে দেখছি।।
ভিশন মিস করছিলাম।
আজ আমাদের পরিবার কানায় কানায় পূর্ণ।
–এই খুশির সময় আমি একটা খুশির খবর শোনাতে চাই (নয়লা)
–কি খবর। (নীল)
–নীল💖রাইমা এবং প্রেয়ন💖পৃথুলার পুনোরায় বিবাহো হইবে।
–বাহ বেশ বলেছেন আপনি (বাবর চৌধুরী)
–হ্যাঁ পুনোরায় খুশিতে মেতে উঠবে খান বাড়ি।
আমার ছেলে আর ছেলে বৌ দের খুশিতে আমরাও খুশি হবো।
আমার মৃত্যুর আগে এ টুকুই যথেষ্ট।
–মা মৃত্যুর কথা বলবেন না আমরা সবাই আপনাকে অনেক ভালোবাসি। (রাইমা)
কিছু সময় আমরা গল্প করে রুমে চলে এলাম।

প্রেয়ন, পৃথুলার রুমে,
–প্রেয়ন জি কি করছেন?
–বিছনা গুছাই।
–আমি গুছিয়ে দি।
–না কোন দরকার নেই তুমি রেস্ট নেও।

–উফ সব সময় তো রেস্ট নিচ্ছি।
–কেন কাজের দরকার নাকি তোমার বৌ (বাকা হেসে)
–দেখুন আপনি না উল্টো পাল্টা বলবেন না এক দম। একটা কথা বলুন?

–আমি উল্টো পাল্টা কই বললাম।কি বলো।
–আমাকে এক মাসের জন্য কেন বিয়ে করেছিলেন,?
–ওটা সারা জীবনের সাইন ছিলো কিন্তু তোমায় বলেছিলাম ১ মাস করান নীল জানতে পারলে তোমায় আমি ভালোবাসি তাহলে তোমায় মেরে দিতো।
–এতো ভালোবাসেন?
–প্রচুর।
প্রেয়ন কথাটা বলেই আমার হাত টেনে তার বুকের উপর ফেলে।
–তো এতো দিন তো কিছুই হলো না আজ হয়ে যাক (দাঁত বের করে)
–যতোদিন না দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে ততদিন আমি আপনার আসল বৌ না সো ততদিন অপেক্ষা করুন।
–আচ্ছা ঠিক আছে তবে সেদিন কিন্তু ছেড়ে দিবো না।
–পাজি লোক কোথাকার।
–হুম তোমার পাজি।
প্রেয়ন আমার গালয় মুখ ডুবিয়ে ঘুম দিলো।
–আর একটা প্রশ্ন?
–কি?
–এতো কিছু জানলেন কি ভাবে।
–এটা কাল বলবো।
বলেই আমার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দিলেন,
–আউ কি করছেন পাগল নাকি।
–হুম।
ছেলেটা সত্যি পাগল।

এদিকে,
–মহারানী আজ কি আমাকে মাফ করেছেন.
(করুন শুরে নীল)
–না (ভাব নিয়ে)
–কেন?
–কারন আপনি পঁচা।
–এ্যা বললে হলো কি পঁচা কাজ করেছি হুম পঁচা হলে না সব হয়ে যেত এতো দিন।
–ইয়ে মানে আপনিও না সরুন৷
–কেন সরবো
কাছে এগোতে এগোতে,
–এই দেখুন,
–বলো মাফ করেছো?
–হ্যাঁ করেছি দুরে সরুন এবার।
–মাফ যখন করেছো দুরে থেকে কি লাভ।
–এই ছেলে।
–কি হুম।।
নীল কথাটা বলে রাইমাকে নিয়ে শুয়ে পরে।
–ছাড়ুন৷
–বেশি নড়াচড়া করলে ২য় বিয়ের অপেক্ষা করবো না কিন্তু মেয়ে.
–ও মা শুধু ভয় দেয়।
–হাহা তুমি তো আমার কলিজা।
কথাটা বলে নীল রাইমাকে জড়িয়ে শুয়ে পরে।



আজ চন্দ্র যেন খুশি পরিবারের এই শুখ দেখে।
সত্যি বড়ে কঠিন পরিস্থিতি পার করে পুরো পরিবার আজ এক জায়গায়৷
এতো বাঁধা এতো বিপত্তি সব কিছু কাটিয়ে আজ সবাই এক জায়গায়।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here