#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ৮ #কবিতা
লেখিকা – Zaira Insaan
মোবাইলে দৃষ্টি পেতে এক নাগাড়ে নিউজফিড স্ক্রোল করে যাচ্ছে মিহি। মন অস্থির। তার উপর মিলি পাশে বকবক করেই যাচ্ছে। পাশের বাসার কোন আন্টির সাথে কোন আন্টির ঝগড়া লাগছে তা স্বচ্ছ বর্ণনা দিচ্ছে এ। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে মিহি। তাও তাকে না থামিয়ে তার বেকার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে থেমে লম্বা শ্বাস ফেলে মিলি। ঠোঁট ভিজিয়ে নড়েচড়ে আরাম করে বসে মিলি বললো,,
“আচ্ছা তুই এতদিন ছিলি কার সাথে?”
“জেনে কি করবি?”
থতমত খেয়ে গেল মিলি বললো,,
“না মানে জানতে চাইছি আরকি, বলনা ওই মহান ব্যাক্তি টা কে?”
মোবাইল রেখে মিলির চোখে তাকালো। কৌতুহল নিয়ে বসে আছে সে। মিহি বলল,,
“এতদিনে তোর পড়ালেখা হয়ছে?”
“ধূর! আমি বলি কি আর এ আমারে বলে কি
পড়ালেখা কোথ থেকে আসলো আবার।”
“হয়নি আমি জানি, যা ম্যাথ নিয়ে বস আমি আসছি।”
মিলি বিরক্ত শব্দ তুলল। মিহি এতো তোয়াক্কা না করে তাকে ম্যাথ বুঝতে সাহায্য করতে লাগল। কিছু ম্যাথ বুঝিয়ে করতে দিল ও। মিলি এক হাত মাথায় রেখে গণিত হিসাবে ব্যস্ত হয়ে গেল। মিহি আরেকটা খাতা নিয়ে উপরের অংশে বেখেয়ালি হয়ে কিছু লিখতে লাগল। মিলি ওর দিকে এক নজর তাকালো। তারপর খাতার সেই অংশে চোখ দিল।
” অপলক তুমি চেয়ে আছো মুখে। কুয়াশায় গড়া অলীক মানব, কুয়াশাবৃত।
ভেঙে ভেঙে যায় কুয়াশার সেতু, উঠেছে হাওয়া।
মুহূর্ত ছিঁড়ে চলে গেল গল্প-কায়া… পাগল হাওয়া।
রক্তের জোয়ার হলো দুর্বার কেবলমাত্র
তোমাকে চাওয়া, তোমাকে চাওয়া~~ ”
(সংগৃহীত)
এমন লেখা দেখে চোখ বড়ো হয়ে গেল মিলির। মিহি এসব কেন লিখছে!? ভ্রু কুটি করল ও। মিহি এখনো অন্যমনস্ক হয়ে আছে। মিলি আগের অবস্থায় ফিরে আসলো। মিহি কে সে বুঝতে দিবে না যে সে দেখে নিয়েছে ওর কবিতা। মিহি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে নিজ খাতা টা বন্ধ করলো। তারপর মিলির তাকিয়ে বলে,,
“হয়ছে তোর?”
মিলি আস্তে করে মাথা নেড়ে খাতাটা সামনে এগিয়ে দিল। মিহি গম্ভীর মুখে খাতাটা নিয়ে তার গণিত হয়েছে কিনা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
____________
অনেক দিন পর ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হলো মিহি। গলায় ওড়না ঝুলিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। রাস্তায় হাঁটছে আর গুন গুন করে গান গাইছে। ভার্সিটি পৌঁছে গেট ক্রোস করতে যাবে এমন সময় ওড়নায় টান অনুভব করলো। থেমে দাঁড়িয়ে পেছনে ফেরলো। গেটের সাথে তার ওড়নার সুতা লেগেছে। মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করে টান মেরে ছাড়িয়ে নিল আর বিড়বিড় করে বলল,,
“ভেবেছিলাম কোন নায়কের ঘড়ির সাথে পেচায়ছে, ধূর মিয়া! ভাবনার উপর পানি ফেলায়ছে এই গেট।”
আপনাআপনি কথা বলতে বলতে হাঁটতে লাগলো। পথে তনু কে দেখে থেমে দাঁড়ায়। তনু দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে বলল,,
“ওই মিয়া কি খবর।”
“ঠিক আছি।” শানিত কন্ঠে বলল মিহির।
“দিন দিন বড্ড নিরামিষ হয়ে যাচ্ছিস রে তুই।”
এমন কথাই মিহি দাঁতে দাঁত চাপলো। বলল,,
“তো আমিষ হওয়ার জন্য তোর মতো সারাক্ষণ বকবক করতে থাকবো নাকি!”
ভ্রু জোড়া উঁচু করলো তনু। শান্ত কন্ঠে বলল,,
“এতো রাগিস ক্যান ভাই।”
প্রত্যুত্তর করলো না মিহি। আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। তনু হাঁটতে হাঁটতে বলল,,
“ঘরে সবকিছু সর্ট আউট হয়ছে?”
“হু।”
তনু খুশি তে লাফিয়ে উঠে গা ঘেঁষে বলল,,
“বললাম না, মিষ্টি খাওয়ালে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
কপাল কুঁচকালো মিহি। বলল,,
“মানে?”
তনু অবাক হলো। বলে,,
“তোকে টাকা দিলাম না? বললাম না মিষ্টি খাওয়ায়ে মুখ মিঠা করলে তোর উপর ঝাড়া মারবে না। ওয়েট এ মিনিট মিষ্টি খাওয়াছোস?”
মিহি আমতা আমতা করলো বলল,,
“না।”
তনু চোখ বড়বড় করে ফেলল বলে,,
“বেয়াদব মাইয়া তোরে টাকা দিলাম মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য আর তুই সেই টাকা পকেটে ঢুকাইয়া চুপ করে বইসা আছোস!”
বাহু কিল মারলো তনু। মিহি আউচ শব্দ করে বলল,,
“তো কি হইছে মাঝে মাঝে এমন টাকা জোর করে ধরিয়ে দিতে হয়। টাকা দিতে শিখ প্রিয়।”
মেজাজ চটে গেল তনুর। হড়বড়িয়ে সামনে হাঁটা ধরলো দ্রুত। মিহি হালকা শব্দ করে হেঁসে তার পিছু ধরে পেছন থেকে একপাশ গলা জড়িয়ে ধরলো।
_____________
এক ক্লাস শেষ করে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে আসলো মিহি। মুখে ছোট হামি তুলে চোখ কচলাতে লাগলো। স্নিগ্ধ অন্য ক্লাস রুমে যাচ্ছিল এমন সময় মিহির সাথে তার দেখা হয়। মিহি প্রসন্ন হাসলো। স্নিগ্ধ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,,
“এখন কেমন আছো?”
“ভালো স্যার, ধন্যবাদ।”
“জ্বর আছে?”
“না নেই।” মুখে হাসি রেখে উত্তর দিল মিহি।
কিছুক্ষণ নিরব থেকে স্নিগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,,
“সব ঠিকঠাক হয়ছে?”
মিহি মুখে চাপা হাসি রেখে মাথা নাড়লো। স্নিগ্ধ ওর চোখের দিকে তাকালো। চোখের কিছুটা নিচে পাপড়ি লেগে আছে হয়ত চোখ ডলতে গিয়ে পাপড়ি ছুটে এসেছে। স্নিগ্ধ ইশারা করে বলল,,
“চোখের নিচে পাপড়ি লেগে আছে।”
নিচে ছেলেদের কোলাহলে কথাটা শ্রবণ করতে পারলো না মিহি। বলল,,
“জ্বী স্যার?”
স্নিগ্ধ দেখিয়ে আবারো বলল,,
“পাপড়ি লেগে আছে।”
মিহি চোখের নিচে হাত দিতেই নিমিষেই চলে আসলো সেই পড়া পাপড়ি। মিহি হেঁসে আবারো বলল,,
“ওহহ, থ্যাংক ইউ স্যার।”
স্নিগ্ধ তার কৃতজ্ঞতার সাড়া দিয়ে পাশ কেটে চলে আসলো। মিহি সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তনুর সাথে নিচে নেমে আসে। পাশে ছেলেদের অজস্র কোলাহল চলছে। কান ফেটে যাবার মতোন। কেউ সামনে এসে তাদের থামাচ্ছে না । মিহি তনুর থেকে জিজ্ঞেস করে,,
“কি হচ্ছে টা কি ওখানে?”
“মনে হয় কেউ র্যাগিং এ শিকার হয়ছে।”
মিহি সেদিকে যেতে নিলে হাত ধরলো তনু। বলল,,
“কয় যাস?”
“হাত ছাড় একটু দেখে আসি।”
বলে চট করে হাত ছাড়িয়ে নিল ও। মিহি আবারো যেতে নিলে তনু সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
“যাওয়ার কোনো দরকার নেই, আয় আমার সাথে।”
মিহি শুনলো না। বরং তাকে সরিয়ে সামনে চলে গেল।
(চলবে…)