#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ১৬
লেখিকা – Zaira Insaan
নাম শুনার সাথে সাথে বুক ধ্বক করে উঠলো মিহির। দ্রুত ফোন কাটতে নিলে শুভয় বলে উঠে,,
“মিহু প্লিজ ফোন কাটিও না। ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে তোমার সাথে।”
“পাতালে যাক তোমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা।”
বলে দ্রুত ফোন কেটে দিল। ওখানে শুভয়ের মোবাইলে টুং টুং শব্দ করাতে বুঝতে পারলো মিহি ইতিমধ্যে ফোন দিয়েছে। অনেক কষ্টে সে নিজের রাগ দমন করল। ওদিকে মিহির শ্বাসরুদ্ধ হতে শুরু করল। পাঁচ মাস হতে চলল এখন আবার কেন ফোন করলো শুভয়! ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিল। চোখ বুজে রাখল তবুও ঘুম আসে না। সকাল থেকে এতো ঝামেলা ছিল, ক্লান্ত হয়েছে তবুও কেন ঘুম হচ্ছে না? বারবার বারবার শুভয়ের কথা মনে পড়ছে। মিহি একবারে ভেবে নিল সকালে উঠে তার মা প্রণিমা কে জানাবে।
___________
ফ্রেশ হয়ে নীচে নামলো মিহি। পুরো রাত মিলে মাত্র তিন ঘন্টা ঘুম হয়েছে। মাথা টা ঘুরপাক খাচ্ছে। বুঝলো এখন চা না খেলে নির্ঘাত মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে। রান্নাঘরে এসে দেখল প্রণিমা মিলির উপর চিল্লাচিল্লি করছে। বকাঝকা করে রাখছে না মিলিকে। মিহির মাথা আরো ঘুরতে শুরু করল। ওদের দিকে না তাকিয়ে নিজের জন্য চা বানাতে শুরু করল ও। প্রণিমা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,,
“মিহি দেখছিস তোর বোনের কর্মকান্ড!”
মিহি হয়রানি সুরে বলে,,
“দেখার আবার কী আছে? ও তো সবসময় এক না এক কান্ড করতে থাকে।”
“তোর বোন মোবাইল দেখে দেখে নিজের চোখ খারাপ করে ফেলছে!”
মিহি পেছনে ফিরলো। মিলির দিকে তাকিয়ে দেখে সে বারবার পলক ঝপকাচ্ছে আর হাত দিয়ে চোখ ঘষে চলছে। মিহির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এ বয়সে চোখ খারাপ করে ফেলল! সদ্য অষ্টম শ্রেণীতে উঠেছে। মিহি ওর উপর শাসানো স্বরে কিছু বলতে নিলে মিলি মুচকি একটা হাসি দিল। মিহি থামলো কিছু বলতে পারলো না ওর ভোলা ভোলা হাসির কারণে কেউ শাসন করতে পারে না। তার হাসিতে বেশ মায়া হয় সবার মিহিরও হলো। মা’কে বলে,,
“বাবা কই?”
“শহরের বাইরে গেছে। নাহলে তো ওকেও বলতাম।”
মিহি বলল,,
“কেমনে বুঝছো যে সে চোখে কম দেখে?”
“টিভি দেখার সময় চোখ একদম কুঁচকে দেখতেছে এই মেয়েটা।”
বলে রাগে মিলির গাল টেনে দিলো প্রণিমা। মিহি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,,
“এমনেও আমি আজকে বাহিরে যাচ্ছি। ওকে নাহয় ডাক্তারের কাছে গিয়ে চোখের চেকআপ করিয়ে আসি।”
“নিয়ে যাহ, দেখিস ডাক্তার এরে চশমা দিবে।”
___________
মিহি মিলি কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চোখের চেকআপ করাতে নিয়ে গেল। সত্যি সত্যিই মিলির চোখ বেশি খারাপ হয়েছে। পাউআরফুল চশমা দিল ওকে। মিলি পরতে না চাইলে ডাক্তার ওকে আরো ভয় দেখিয়ে চশমা পরতে বলল। মিলি বাধ্য মেয়ের মত পরলো। চেম্বার থেকে বেরিয়ে খুচরা বাজার করে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো দুজনেই। মিহি মিলির উদ্দেশ্যে বলল,,
“এখন থেকে তোমার মোবাইল দেখা অফ।”
“আমার চোখ ঠিকই আছে তোমরা অণর্থক করছো।”
“হ্যা, মনে শখ জেগেছে যে তোমাকে অন্ধ করার।”
মিলি আর কিছু বলল না মুখ কালো করে রইল। মিহি পাশে চোখ ফেরাতে দেখে শুভয় ওর ঘরের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চমকে ভয় করে উঠলো। মিলির হাঁটা থেমে গেল শুভয়কে দেখে। মিহি ওর পাশ কেটে যেতে নিলে শুভয় ওর বাজারের ব্যাগ টেনে ধরল। মিহি চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরলো। শুভয় মলিন চেহেরা করে বলল,,
“মিহি!”
মিহি একপলক মিলির দিকে নজর দিল। মিলি ভ্রু কুঁচকে শুভয়ের কান্ড দেখে আছে। মিহি মিলিকে বলল,,
“মিলি! তুমি বাসায় যাও, আম্মু আমি কোথায় জিজ্ঞেস করলে বলিও আমি একটু পর আসছি।”
মিলি দু’জনের দিকে একপলক দেখে সোজা বাসায় চলে গেল। মিলি চলে যেতেই শুভয় বলল,,
“মিহু আ’ম স্যরি ফর অল মাই মিস্টেক্স। একটু কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি।”
“কেন আসছো আবার?”
“একটু কথা বলতে।”
“আমি তোমার সাথে কোন কথা বলতে চাই না। ছাড়ো ব্যাগটা!”
শুভয় আরো চেপে ধরল ব্যাগটা। বলল,,
“২ মিনিটের জন্য হলেও প্লিজ….।”
“শুভয় ছাড়ো ব্যাগটা!”
“তোমাকে আমি কী বলছি! কথা বলতে চাই আমি তোমার সাথে।”
মিহি ব্যাগটা টানতে লাগল। শুভয় ওর অবস্থা দেখে অবাক হচ্ছে। মিহি প্রচন্ড হয়ে বলে,,
“ছাড়ছো না কেন তুমি? বিরক্ত করিও একদমও ছাড়ো।”
“বারবার বলে আমি হয়রান হচ্ছি মিহি! ২মিনিটের জন্য হলেও তো সময় দাও।”
“যা বলার বলো।”
বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বলে মিহি। শুভয় যেন শান্তি হলো বলল,,
“একলা দেখা করতে পারি?”
পিলক চমকালো মিহি। ও কেন আবার একলা দেখা করতে চাচ্ছে!? আনমনে নিজেকে প্রশ্ন করল মিহি। শুভয় ওকে পুরোপুরি বুঝতে পেরে বলল,,
“ক্যাফে?”
মিহি ওর দিকে স্বাভাবিক চোখে তাকাতেই শুভয় আন্দাজ করলো যাক মিহি রাজি হয়েছে।
(চলবে…)