ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -১৭

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ১৭ #আসল_মুখ
লেখিকা – Zaira Insaan

ক্যাফে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শুভয়ের অপেক্ষা করছে মিহি। কিছুটা ইতস্তত বোধ হচ্ছে নিজের মধ্যে। আসাটা কী ঠিক হলো? আনমনে নিজেকে একবার প্রশ্ন করল। তার উপর ঘরের কাউকে তো জানাইনি! দম বন্ধ হয়ে হয়ে শ্বাস নিচ্ছে ও। একটু পর শুভয় আসলো হাতে লাল গোলাপ নিয়ে। মিহি ভ্রু কুঁচকালো ওর হাতের দিকে দেখে।
ফুল আনার দরকার কী?
অদ্ভুত তো!

শুভয় ওর সামনে দাঁড়িয়ে ফুল এগিয়ে দিয়ে বলে,,‌

“থ্যাংক্স মিহি।”

মিহি চোখ বাকিয়ে সরালো। শুভয় বলল,,

“আসো।”
“এখানেই বলো যা বলার।” আটস্থ ভঙ্গিতে বলল মিহি। শুভয় অবাক হয়ে বলে,,

“এখানে কেমনে? আমি ক্যাফের উপরে রুম বুকিং করে রেখেছি।”

মিহিও অদ্ভুতভাবে চমকে উঠে। বলে,,

“রুমে মানে!‌ এখানেই কথা হবে।”

শুভয় তাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,,

“পাবলিক প্লেসে কথা বলা ঠিক হবে না। তাই রুম ঠিক করে রেখেছি, বিশ্বাস করো মিহি আমি আগের মত না।”

শুভয় একের পর এক বিভিন্ন ভাবে মিহি কে বিশ্বাস দিতে লাগল। মিহি ভাবল তখনি মোবাইল টুং শব্দ করে মেসেজ আসে “কোথায় তুই?” নীলয় মেসেজ দিল। মিহি রিপ্লাই এ “শুভয়ে…..” লেখতে না লেখতে শুভয় ওর মোবাইল সহ হাত ধরল। ও চমকে উঠে। শুভয় মুচকি হেসে আস্তে করে ওর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নেয় বলে,,

“তোমাকে এতক্ষণ কী বলেছি আমি? বললাম না আমি আগের মত একদমও না, তাও আমাকে ট্রাস্ট করছো না কেন তুমি? হুঁ!”

মিহি ওর হাত থেকে টান মেরে নিজ মোবাইল টা নিয়ে নিল ততক্ষণে নীলয়ের আরো একটা মেসেজ আসল, “স্নিগ্ধ স্যার তোকে আসতে বলছে… তাড়াতাড়ি ভার্সিটি আয়।” মিহি ওর মেসেজের ‌উত্তর দিতে পারল না হঠাৎই অফ হয়ে গেল ফোনটা। চরম বিরক্ত হয়ে ‘ধ্যাৎ’ শব্দ করে উঠে। শুভয় ‘মিহি’ বলতেই মিহি চোখ তুলে তাকালো। শুভয় রুমের দিকে যেতে লাগল। মিহির বুকে চলছে তুমুল অস্বস্তি, অতিষ্ঠতা। যাওয়া ঠিক হচ্ছে? নিজেকে প্রশ্ন করতে করতে এক পর্যায়ে রুমের ঠিক সামনে এসেছে দাঁড়ালো। শুভয় চাবি ঘুরিয়ে দরজা ধাক্কিয়ে খুলল। ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে চারপাশ চোখ বুলালো। অতটা গভীর যায়নি রুমে দরজার একটু পাশেই দাঁড়িয়ে মিহি বলে,,

“বলো এবার।”

“এখানে?”

“হ…হ্যা।” কাঁপা কন্ঠে বলে মিহি।

শুভয় ওর কাছে অগ্ৰসর হতেই চোখ দু’টো ড্যাব ড্যাব করে ফেলল মিহি। এসে দরজায় খিল এঁটে দিল তাচ্ছিল্য ভাবে বলল,,

“কি ভাবছিস তুই? তোর মতো অসুন্দর মেয়ের জন্য আমি পাগল! হাহ্, হাজার হাজার মেয়ে ঘুরে আমার আশেপাশে আর তুই কীসের কাবিল যে আমারে ঠাট দেখাস।”

বলে মিহির হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে নিল শুভয়। চরম অবাক হয় মিহি তার ব্যবহারে! কিছুক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেল মিহির। অপলক বিস্মিত নয়নে শুভয়ের তুচ্ছতাচ্ছিল্যর ভাব দেখছে। মুখ ফুটে আওয়াজ বের হচ্ছে না। হ্যা নিজের ত্বক একটু চাপা বর্ণের তাই বলে এই না যে সে অসুন্দর বা বিচ্ছিরি। শ্যাম বর্ণের লম্বা মুখ, বাম চোখের নীচে নাকের একটু পাশেই লাল রঙের ছোট্ট তিল। সেই তিলের কারণে তার রূপ সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে। ছোট থেকেই এই রঙের কারণে বহু কথা শুনেছে সবার কাছ থেকে। তাই সেকেন্ডের মধ্যে চট করে নিজেকে পুরোপুরি গুছিয়ে নিয়ে বলে,,

“তো এই অসুন্দর মেয়ের কাছে আসছিস কীসের জন্য আবার? যাহ্ সেইসব মেয়ের কাছে যারা তোর পেছনে ঘুরফের করে থাকে।”

“তোর কী মনে হয় তোকে আমি এমনিতে ছেড়ে দিব! নিজের তৃপ্তি মেটাতে এনেছি তোকে।” বাঁকা হেঁসে অতি তুচ্ছ করে বলে শুভয়।

বুক মোচড় দিয়ে ওঠে মিহির। সূক্ষ্ম হয়ে তাকালো। হাত মুচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে,,

“হাত ছাড় শুভয়। তুই জানোয়ার জানোয়ারিই রয়ে গেছিস।” দাঁত চেপে চিবিয়ে বলে শেষক্ত কথা।

শুভয় ওর হাত চেপে টেনে টেনে অন্য রুমে নিয়ে যেতে যেতে বলে,,

“বড়ো বোকা তুমি মিহি! কী হিসেবে আবারো আমাকে বিশ্বাস করলে?! ঢ্যাং ঢ্যাং করে এক্সের কাছে এসে তো গেলে কিন্তু যেতে পারবে না।” হাসতে হাসতে বলল শুভয়।

মিহির রন্দ্র শিউরে কাঁপছে। নিজেকে সামলানোর জন্য দেওয়ালে এক হাত রেখে থামলো ও। কিন্তু শুভয়ের শক্তির কাছে নিজের শক্তিকে অতি দুর্বল ও তুচ্ছ মনে হলো মিহির, যার কারণে শুভয় এক টান দিতেই তার কাছে ছিটকে চলে গেল। অন্য রুমে এনে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় মিহি কে। তাল সামলাতে না পেরে স্লিপ খেয়ে বিছানায় আধপড়া হয়ে যায় ও। মিহি উঠে আশেপাশে তাকালো দ্রুত, কোথাও লাঠি বা বাশ জাতীয় কিছুই নেই! শুধুমাত্র নোংরা ব্যাড আছে পুরো রুম জুড়ে। মিহি ফাঁক খুঁজে পালাতে নিলে শুভয় এসে তার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। রুহ কেঁপে উঠলো মিহির। শুভয় অশুভ কিছু করার আগে মিহি হাঁটুতে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করলো শুভয়ের বিশেষ অঙ্গতে। যার দরুন ব্যাথায় আর্তনাদ তুলে মাটিতে গড়ে পড়লো শুভয়। মিহি উঠে দৌড়ে যেতে নিলে পা ধরে নীচে ফেলে দেয় শুভয়। মাটিতে পড়ে কনুইয়ের অর্ধেক অংশ ছিঁড়ে গেল মিহির। নিজের পা কোনতেই ছাড়াতে পারছেনা ও। ধস্তাধস্তি চলতে লাগল। এক পর্যায়ে শুভয় ওর ওড়না এক টান মেরে খুলে নেয়। খোলার সময় নখের আঁচড়ের ব্যাথা পেল মিহি। সেফটিপিন টাও হুট করে খুলে সেই আঁচড়ে গেথে গেল। গড়গড় করে কাঁধ থেকে রক্ত বের হতে লাগল। চিনচিন ব্যাথায় মাথায় ঘুরতে লাগলো। শুভয় ওর এক বাহুর কাপড় অংশ টেনে ছিঁড়ে ফেলল। বলল,,

“কোথাও যাওয়ার রাহা রাখব না তোর।”

ওর উপর উঠে হানাহানি শুরু করতেই মিহি বাধ্য হয়ে কাঁধে গেথে যাওয়া পিন আঙুল দিয়ে টেনে শুভয়ের হাতের রগে জোরে ঢুকিয়ে দিল। শুভয় জোরে চিৎকার মেরে সরে পড়লো। মিহি তড়িগড়ি করে উঠে দাঁড়াল আবারো শুভয়ের একই জায়গায় হিল দিয়ে জোরে আঘাত করে দৌড়ে রুম বেরিয়ে গিয়ে বাহির থেকে খিল এঁটে দিল। শুভয়ের চিৎকার বাহির থেকে স্পষ্ট শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। মিহি হস্তদস্ত করতে করতে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে দরজার উপর খিল সরিয়ে দরজা খুলল। রক্তে আকাশী থ্রী-পিস টা ভিজে গেল। ডান কাঁধটা ব্যাথায় ককিয়ে ককিয়ে কাঁপছে। ক্যাফের উপস্থিত সবাই ভূত দেখার মত ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল। মিহি কারোর দিকে না দেখে ডান কাঁধটা চেপে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে গেল। মিহি যেখান থেকে বেরিয়েছে সবাই সন্দেহতে উপরে পৌঁছালো।
___________

হেঁটে হেঁটে ফাঁকা রাস্তার মাঝখানে আসলো মিহি। হুট করেই বুক মুচড়ে কান্না করতে লাগল ও। নীলয়, স্নিগ্ধ পড়া বিষয়ক জরুরী কথা বলতে বলতে গাড়ি করে যাচ্ছিল। রাস্তার এক পাশে এক মেয়েকে অসহায়ের মত ও পোশাক আশাকে করুণ অবস্থায় দেখে গাড়ির ব্রেক ধরলো স্নিগ্ধ। স্নিগ্ধকে ডান পাশে তাকাতে দেখে সেও তাকালো। মিহি কে চিনতে পেরে ভড়কে উঠল দুজনে।‌ একে অপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে দেখে গাড়ি হতে বেরিয়ে গেল। মিহির সামনে দাড়াতেই মিহি ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেল। সে এখনো হাপাচ্ছে দরুন ব্যাথায় ককিয়ে। স্নিগ্ধ শানিত কন্ঠে বলল,,

“তোমার এমন অবস্থা কেন? কী হয়েছে তোমার?”

অত্যন্ত ভয়ে জিজ্ঞেস করলো স্নিগ্ধ। প্রশ্ন শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সামনে এসে হুট করে জড়িয়ে ধরল স্নিগ্ধ কে। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল স্নিগ্ধ। মিহির রক্তের দাগ লেগে যায় স্নিগ্ধের সাদা শার্টে। তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে নিজেকে প্রশান্তি করছে। এ মুহূর্তে ওর একজন কাছের মানুষকে বড্ড প্রয়োজন। স্নিগ্ধ ওর হাবভাব দেখে সব বুঝে গেল। নিম্নকন্ঠে বলে,,

“ছেলেটার নামটা বলো।”

মিহি কাঁপতে কাঁপতে কম্পিত অধর যুগল নাড়িয়ে বলে,,

“শু..শুভ….শুভয়।”

চোয়াল শক্ত হয়ে চোখ দু’টো অগ্নিতে ধারণ করল স্নিগ্ধের।

(চলবে…)

[‌ রেসপন্স করে কেমন হয়েছে জানাবেন।‌ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here