#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব - ১৮ #strange_feelings
লেখিকা – Zaira Insaan
নিজের রাগকে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে এনে মিহি কে সরিয়ে নেয়। নাক টেনে টেনে কাঁদছে এখনো। একবার ওর কাঁধের দিকে তাকালো তারপর ওকে আস্তে করে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসালো। এ রাস্তায় অত মানুষের আনাগোনা নেই। নিরিবিলি জায়গা তাই মিহির জন্য খুব একটা সমস্যা হলো না। স্নিগ্ধ গাড়ি চালাচ্ছে সামনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে। মিহি আড়চোখে তার মুখ দেখল বোধহয় রেগে আছে। দৃষ্টি ফিরিয়ে কোলের দিকে তাকিয়ে রইল। একটু পর স্নিগ্ধ হুট করে বলে উঠে,,
“ওর কাছে কীসের জন্য গিয়েছিলে?”
অপ্রস্তুত হয়ে গেল মিহি। এখন কী বলবে? জানালে তো রেগে যাবে এ। ভারী ভারী তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে কথা গোছাতে লাগল। ওর কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে স্নিগ্ধ আবারো গরম হয়ে বলে,,
“কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে।”
তার এমন রাগ সহ্য হচ্ছে না মিহির। বুঝলো না বললে শান্তি দিবে না তার স্নিগ্ধ স্যার। তাই প্রথম থেকে এক এক করে সব বলে দিল। আচমকা গাড়ি টা থামিয়ে দিল স্নিগ্ধ। মিহি বেশ ঝুঁকে পড়লো সামনের দিকে। স্নিগ্ধ তার ফিরল তীর্যক চাহনি দিয়ে কিছু একটা বলতে নিলে মিহি সেই রক্তাক্ত কাঁধ দেখিয়ে বলে,,
“খুব জ্বলছে।”
স্নিগ্ধ আবারো গাড়ি স্ট্রার্ট দিল। ড্রাইভ করতে করতে বলে,,
“আসলেই তুমি একটা বেকুব!”
সট করে বলে দিতেই চমকে উঠে মিহি। তাও মাথা নীচু করেই রাখলো। প্রতিত্তরে কী বলবে? বলার তো মুখ নেই। তাই চুপ করেই থাকা ভালো।
“এতো সমস্যা বাধাও কীসের জন্য? মাথায় কী একটুও বুদ্ধি নেই!”
শরমে কান্না জমতে লাগল ওর। কিন্তু এমন হুটহাট করে তো আর কাঁদা যাবে না, সামনে বাইশে পড়বে তাই হুটহাট কান্না করা তো বেমানান হয়ে যাবে। চুপচাপ হজম করতে লাগল স্নিগ্ধের বকাঝকা গুলো।
হসপিটালে নিয়ে গিয়ে কাঁধে ও কনুইতে বড়ো করে ব্যান্ডেজ করিয়ে দিল ডাক্তার। সাথে অনেকগুলো ঔষুধের নাম লিখে দিল। কাঁধে ইনফেকশন না হওয়ার জন্য ট্রিটমেন্ট করানো হলো তাকে। স্নিগ্ধ ফার্মেসি থেকে লিখে দেওয়া ঔষুধ গুলো নিয়ে আসল। মিহি সাবধানে বসল গাড়িতে। ব্যাথা এখনো করছে। চিনচিন ব্যাথা। জ্বলসে যাচ্ছে সেই জায়গা টা। স্নিগ্ধ চুপচাপ ড্রাইভ করতে লাগল। মিহি তার দিকে দেখে বলে,,
“আপনি নাকি আমাকে ডেকেছিলেন? নীলয় বলেছিল।”
“ওটার চিন্তা আর করতে হবে না আমি আর নীলয় করে নিয়েছি।”
মিহি আর প্রশ্ন করল না। গায়ে আলগা চাদর টেনে বসে আছে যেন উন্মুক্ত অংশগুলো দেখা না যায়। কিছুক্ষণ আগে ঘটনা গুলো এক এক করে মনে পড়ছে তার। স্নিগ্ধকে ওভাবে জড়িয়ে ধরা ঘটনা টা মনে পড়তেই গায়ে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল।
ইশশ্! ওভাবে জড়িয়ে ধরাতে উনি কি ভেবেছেন? আড়চোখে লজ্জাময় মুখে একবার তাকালো স্নিগ্ধের দিকে। সে বেখবর হয়ে ড্রাইভ করছে। মনে এখন একটাই চিন্তা চলছে। স্নিগ্ধও আড়চোখে ওর দিকে দেখতেই দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল। মিহি লজ্জায় দ্রুত চোখ সরালো। স্নিগ্ধ বলল,,
“হোয়াট? ওভাবে কী দেখছিলে আমাকে?”
মিহি মনে বিড়বিড় করলো, ‘দেখলে দেখছি আরকি সেটা আবার প্রশ্ন করতে হয়!’
স্নিগ্ধ প্রশ্নাতুর চোখে দেখে থাকতে দেখে মিহি বিরক্ত হয়ে বলে,,
“কিছু না।”
এটার শুনার অপেক্ষা ছিল বোধহয় স্নিগ্ধ। কেননা সে এটা শোনার সাথে সাথে পুনরায় ড্রাইভ করাতে মনোযোগ দিল।
___________
বেল বেজে উঠতেই দরজা খুলেন প্রণিমা। মিহি কে এমতাবস্থায় দেখে হকচকিয়ে গেলেন তিনি। সোফায় বসে ভিডিও গেম খেলছিল মিলি। দরজায় দিকে তাকাতেই চমকে উঠে। প্রণিমা অস্তির কন্ঠে বলেন,,
“তো..তোর এমন অবস্থা কেন মিহি?”
মিহি মাথা নুয়ালো কিন্তু প্রতিত্তর দিল না। মিলি মোবাইল রেখে এগিয়ে আসল চশমা ঠিক করতে করতে। প্রণিমা আরো কিছু প্রশ্ন করতে নিলে স্নিগ্ধ ইশারা করে থামিয়ে দেন। মিলি মিহি কে নিয়ে রুমে চলে যায়। প্রণিমা স্নিগ্ধের কাছ থেকেই সব জেনে নেয়। অবাক হয়ে গেলেন প্রণিমা। স্নিগ্ধ সব ওষুধ পত্র তাকে দিয়ে বলে,,
“ও একটু রিল্যাক্স হলে তারপরে সব জিজ্ঞেস করিয়েন। নাহলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে চাপ পড়তে পারে।”
প্রণিমা হাতে নিল। স্নিগ্ধ বিদায় নিয়ে চলে যায়।
___________
খাবার প্লেট নিয়ে মিহির রুমে আসেন প্রণিমা। দেখেন মিলি এতক্ষণে হাজারটা প্রশ্ন করে ভরিয়েছে মিহির কাছ থেকে। চশমা ঠিক করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে মিলি। প্রণিমা পেছন থেকে এক ডাক মেরে চুপ করিয়ে দেয় মিলি কে। মিহির সামনে বসে গম্ভীর হয়ে ভাত মাখতে লাগলেন তিনি। ডান কাঁধ ও ডান কুইয়ের ব্যাথার কারণে হাত নাড়তে কষ্ট হচ্ছে। মুখের সামনে খাবার তুলে ধরেন প্রণিমা। মিহি খেয়ে দোষী কন্ঠে বলে,,
“মা!”
“আমাকে তো আর প্রয়োজন নেই তোর। সব তো একা একা করতে পারিস! ভেবে অবাক হচ্ছি, আমার মেয়ে এতো বড় হয়ে গেছে যে মা’কে বলার প্রয়োজন বোধ করে না কিছুই।”
ভাত মাখতে মাখতে ভেজা গলায় কথাগুলো বলেন তিনি। মিহি বলে,,
“ছোট ছোট বিষয় নিয়ে বড় বড় টেনশন নিতে থাকো তুমি, তাই কোন কিছু বলতে ইচ্ছে করে না।”
প্রণিমা চুপ করে থেকে রাগ দেখিয়ে মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলেন। মিহি আবারো বলল,,
“কিছু তো বলো। মা!”
“তোরা আমাকে কবরে ঢুকিয়েই শান্তি হবি।”
মিলি অবাক হয়ে বলে,,
“আমি অবার কি করলাম?”
মিহি বা হাত দিয়ে প্রণিমা হাত চেপে ধরে বলে,,
“বাবা বলিও না প্লিজ।”
“এতো বড় দোষ…।”
“জানি, তবে দয়া করে বাবা কে এসব ব্যাপারে বলিও না প্লিজজ।”
বিরক্ত শ্বাস ফেললেন প্রণিমা উঠে দাঁড়ায় হাত ধুতে চলে গেলেন। খানিকবাদে এসে ঔষুধ দিতে লাগলেন, মিহি বলল,,
“বাবা কবে ফিরবে?”
“আরো চার পাঁচ দিন পর। জায়গা জমিনের কাজে নাকি চট্টগ্ৰামে আঁটকে গেছে, এর জন্য আসতে সময় লাগবে।”
মিহি কে ধীরে ধীরে সাবধানে শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে চলে গেলেন প্রণিমা ও মিলি। ক্লান্তির কারণে চোখে ঘুম নেমে এলো মিহির।
___________
সকালের নাস্তা খাওয়ায় দিয়ে গেল প্রণিমা। মিলি পাশে বসে বকবক করতে লাগল। মিহি ওর চোখের দিকে দেখে বলে,,
“সারাক্ষণ চশমা লাগিয়ে রাখিস কেন? নাকের আশেপাশে ও চোখের নীচে দাগ পড়ে যাচ্ছে। খুলে টেবিলে রাখ।”
“ইয়াহ।” বলে চোখ থেকে চশমা সরালো। সেকেন্ড পেরুতে না পেরুতেই নীচের থেকে কলিং বেল বেজে উঠল। সাথে সাথে প্রণিমা মিলি কে দরজা খুলার জন্য হাক ডাক দিলেন। মিলি আসছি বলে মিহি কে বিড়বিড় করে বলে,,
“চশমা আমার চোখ থেকে সরতে চাই না!”
বলে বিরক্ত হয়ে পুনরায় চশমা পড়ে নীচে দৌড় দিল। মিহি ব্যাডের সাথে মাথা হেলিয়ে দিল। ততক্ষণে দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ শুনতে পায় সে। মাথা উঠিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। মিহি চটজলদি ওড়না ঠিক করল। স্নিগ্ধ ওর ওড়না ঠিক করা দেখে দ্রুত চোখ অন্য দিকে করে নিল যাতে মিহির ইতস্তত বোধ না হয়। একটু পর বলে,,
“May I coming?”
মিহি হালকা মাথা নাড়ল। স্নিগ্ধ ওর ব্যাডের পাশে চেয়ার টেনে বসল, বলল,,
“গতরাতে কী খায়ছো?”
মিহি চমকে ভ্রু কুঁচকালো। এ আবার কেমন প্রশ্ন? অসুস্থ কাউকে দেখলে মানুষ প্রথমে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো? আর সে জিজ্ঞেস করছে গতরাতে কী খায়ছো! মাথা উপরে গেল মিহির। স্নিগ্ধ একই প্রশ্ন আবারো করতেই মিহি বলে,,
“জ্বী!”
“মনে নেই?”
মিহি বিচিত্র হয়ে বলে নিম্নকন্ঠে বলে,,
“জ্বী ভাত খায়ছি, কেন আপনি খান না?”
স্নিগ্ধ হাসলো বললো,,
“এমনেই জিজ্ঞেস করলাম। এতো অবাক হচ্ছো কেন।”
মিহি আর কিছু বলল না। ওকে নীরব দেখে সে বলল,,
“নেক্সট টাইম থেকে দূরে কোথাও যাওয়ার আগে আমাকে ইনফর্ম করবা।”
স্নিগ্ধের গমগমে ভারী কন্ঠ শুনে অবাক হয় সে। চেহারা দেখে গম্ভীরতা প্রকাশ পেল। হাসতে হাসতে হুট করে গম্ভীর হয়ে গেল। মিহি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ল। মিহি বিড়বিড় করে বলল,,
“নাম স্নিগ্ধ হলেও মোটেও স্নিগ্ধ নয় এ ব্যাক্তি।”
স্নিগ্ধ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওর কানের কাছে মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বলে,,
“এ স্নিগ্ধ হুটহাট অনেক বেশি ডেনজ্ঞার্স হয়ে যায় সো বি কেয়ারফুল মিস. মিহি।”
বলে সরে বসল। কর্ণগোচর হওয়ার মাত্রই মৃদু কেঁপে উঠলো মিহি। ভেতরে তোলপাড় শুরু হলো। এ লোকটা এভাবে কথা বলে কেন? শিরদাঁড়া হয়ে শিরশির করতে লাগল। এর মাঝে রুমে ঢুকল প্রণিমা।#ফাল্গুনের_ঢেউ
বোনাস পর্ব #Special_person
লেখিকা – Zaira Insaan
এর মাঝে রুমে ঢুকল প্রণিমা। দু’জনকে অদ্ভুত রকমের হয়ে থাকতে দেখে কপালে সরু রেখার ভাঁজ ফেললেন। স্নিগ্ধকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“আপনি নীচে আসুন নাস্তা খেতে।”
স্নিগ্ধ স্মিত হাসি দিল। অতঃপর উঠে দাঁড়াতে প্রণিমা নীচে গেল। স্নিগ্ধ মিহি কে দেখে বলল,,
“ব্যাথা কমেছে?”
মাথা না সূচক নাড়ল ও। স্নিগ্ধ রাশভারী গলায় বলে,,
“মেডিসিন ঠিক টাইমে নাও তো?”
“হু”
স্নিগ্ধ ঠান্ডা গলায় নম্র স্বরে বলে,,
“কোন সমস্যা হলে কল দিও আমি আছি তোমার সাথে সর্বক্ষণ।”
বলেই সময় অপচয় না করে রুম থেকে বাহিরে অগ্ৰসর হলো। স্নিগ্ধের পূর্বে বলা কথাগুলো কানে একে একে ঝংকার তুলছে মিহির। এ মানুষটা কি দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে?! উনার মনে কি চলে! কে জানে!
___________
বসে বসে বিরক্তিতে রূপ নিচ্ছে মিহি। এমনেতে সময় নদীর স্রোতের মতো দ্রুত চলে যায় আর এখন! যাওয়ার নাম নিচ্ছে না। টেবিল থেকে মোবাইল টা নিল। সামনের অংশ টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে । এখন আবার নতুন মোবাইল নিতে হবে। এটা দ্বারা কোন কাজ করা সম্ভব না। সাতকানি ভাবতে ভাবতে নীচে হলে পরিচিত মানুষদের আওয়াজ শুনতে পেল। চিনে ফেলল মুহূর্তের মধ্যে। এরা বরং আসে শব্দদূষণ করতে।
নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে বসল। ইতিমধ্যে রুমে ঢুকল তনু, বন্নি ও নীলয়। হট্টগট্ট হেসে হেসে বিছানায় লাফিয়ে বসল এরা। এদের দেখে মিহিরও
মুখে হাসি রেখা ফুটে উঠল। ওরা কিছুক্ষণ মিহির ব্যাথার্থ জায়গা দেখে নিল ধীরে। তারপর কথা শুরু করল অন্য বিষয় নিয়ে। এভাবে যেতেই নীলয় হুট করে বলে উঠে,,
“একটা সুখবর আছে আমার কাছে।”
সবাই দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার দিকে। নীলয় এক ভ্রু নাচিয়ে মোবাইল দেখে বলল,,
“শুভয় নামের ছেলেটা এখন হসপিটালে। তাও কাহিল অবস্থা!”
মিহি পুরোপুরি ওর দিকে ফিরিয়ে বসল। মনোযোগ দিল কথাই। বন্নি ও তনুর এমন হাসি যেন খবরটা শুনে সাত আসমানে চলে গেছে। বন্নি বলল,,
“একদম ভালো হয়ছে।”
নীলয় ওকে থামিয়ে বলে,,
“এতটুকুই শেষ না, আরো আছে শোন!”
“মিহি আসার পর ক্যাফের উপস্থিত সবাই সন্দেহজনক ওই রুমে গিয়েছিল। শুভয়ের অবস্থা দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে ওই মুহূর্তে কি ঘটলো। সবার কাছ থেকে মাইর খেয়ে ভর্তা হয়ে গিয়েছিল শুভয়। রাত এগারোটা পর্যন্ত নাকি সে ওই রুমে পড়ে ছিল। এরপরের দিন সকালে ওকে হসপিটালে বিভৎস অবস্থায় পাওয়া যায়।”
অতটুকু বলে শেষ করল নীলয়। তনু অর্ধেক না বুঝে জিজ্ঞেস করে,,
“এগারোটা পর্যন্ত রুমে ছিল, বাট সকালে হসপিটালে বিভৎস অবস্থায় পাওয়া যায় মানে কী ভাই? কিছুই তো বুঝলাম না।”
নীলয় তপ্ত শ্বাস ফেলে আবারো বলল,,
“কোন এক লোক যেন গতরাতে তাকে প্রচুর মেরেছিল ওই রুমে। নাক মুখ ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে ছিল তার। আবার সেই লোকটা নাকি ওকে হসপিটালে ভর্তি ও করেছে, খবর পেয়েছি। এখানে আসার আগে শুভয়ের হসপিটাল থেকে ঘুরে আসছি। বেডে ল্যাঙরার মতো পড়ে আছে পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ করা।”
শয়তানি হাসল তনু, বন্নি। তনু তৃপ্তিসহকারে বলল,,
“যে তার এমন অবস্থা করল দোয়া করলাম, সে যেন ভালো বউ পায়।”
বন্নি চিন্তা সুরে বলে,,
“সব ঠিক আছে কিন্তু লোকটা শুভয় কে মারার কারণ কী হতে পারে?”
সবাই কথা বললেও মিহি কে চুপচাপ হতে দেখে তনু হালকা ধাক্কা মারল। মিহি ‘আউচ’ করে উঠে বলে,,
“পাগল তুই! এমন করছিস কেন।”
তনু ঠিক করে বলল,,
“স্যরি আমি খেয়াল করিনি।”
মিহি আশ্চর্য হয়ে কোলের দিকে দৃষ্টি নেমে আছে। শুভয় কে ওমন করে মারল কে! মাথায় আকাশ সমান ভারী ভারী টেনশন কাজ করতেই মাথা ঘুরতে শুরু করল। চাদর টা খামচে আঁকড়ে ধরল। সবকিছু এমন অস্পষ্ট হয়ে আছে কেন?
আনমনে বিড়বিড় করে বলে মিহি।
___________
বিরস, বিমর্ষ, কালো মুখ করে দেওয়ালে গভীর ন্যায়ে চেয়ে আছে মিহি। মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতেই রাত ভরে ঘুম হলো না। মাথা ও শরীর আপাতত ভীষণ ভারী ভারী লাগছে। গতকাল নীলয়ের দেওয়া নিউজ একদম ঘুম কেড়ে নিয়েছে ওর। বারান্দায় লালচে রেলিং আঁকড়ে ধরে বাইরে নজর পেতে আছে। তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে ভরাট কন্ঠ কর্ণধারে ভেসে আসে। মিহি ফিরার মাত্রই ভড়কে যায়। স্নিগ্ধ ছাইরাঙা শার্ট পড়ে পকেটে দুহাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে আসল স্নিগ্ধ। মিহির পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে একবার নজর দিয়ে বলে,,
“দাঁড়িয়ে কী দেখছো? দেখার মতো তো কিছুই নেই ওখানে।”
মিহি সামনে ফিরে বলে,,
“যা আছে তা দেখছি।”
“দেখার জন্য একজন দাঁড়িয়ে আছে তাকে না দেখে, ওখানে খালি মাঠ দেখার কোন মানে হয়!”
ঠোঁট নাড়িয়ে বিড়বিড় করে কথাটা বললেও কিঞ্চিৎ পরিমাণ শ্রবণ করতে পারলো মিহি। না বুঝে বলল,,
“জ্বী কিছু বললেন?”
স্নিগ্ধ গলা ঝেড়ে নম্র স্বরে বলে,,
“ব্যাথা এখন কেমন? মেডিসিন নিয়েছো?”
“হুঁ”
আবারো নীরবতা। মিহি ভাবছে নীলয়ের দেওয়া নিউজটা স্নিগ্ধ কে বলবে কি না? আড়চোখে দেখে চমকে গেল স্নিগ্ধ ওর দিকেই দৃঢ়, প্রগাঢ় চোখে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে গেল মিহির। হচকচিয়ে গিয়ে রুদ্ধশ্বাস হয়ে গেল। আমতা আমতা করে সাহস জুগিয়ে বলে,,
“শুভয় কে নাকি হসপিটালে বিভৎস অবস্থায় পাওয়া গেছে!”
স্নিগ্ধের অতল চাহনি ভয়ঙ্কর রূপ নিল। শুভয় নামটা শোনার সাথে সাথে মাথার রগ খাড়া হয়ে গেল। কাঠিন্য গলায় বলে,,
“কেন, মিস করছো ওকে? দেখতে যাবা আবারও?”
মুখ টা ফ্যাকাশে হয়ে চুপসে গেল মিহির। এমন হুট করে ভুল বুঝে গরম হয়ে যাচ্ছে কেন উনি? মিহি থমথমে গলায় বলে,,
“না, ওটা আমি বলতে চাই নি?”
স্নিগ্ধ নিজেদের মাঝে দূরত্ব কমালো। একদম ওর কাছে দাড়াতেই সুঘ্রাণ পেয়ে মৃদু কেঁপে উঠলো মিহি। তাও চোখ জোড়া সরিয়ে রেখেছে। এই লোকটার সাথে চোখাচোখি হওয়া বড্ড মুশকিল। স্নিগ্ধ গমগমে ভারী কন্ঠে বলল,,
“দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ হৃদয় টানছে ওর প্রতি।”
শিরশিরে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠলো। বিশ্রী, জঘন্য কথা। আঁতকে ধ্বক করে তুলে বুক। স্নিগ্ধের দিকে ফিরে ভেজা গলায় বলে,,
“কিসব বলছেন আপনি!”
বাঁকা হাসল স্নিগ্ধ। কথা বলার সময় গলা কম্পিত হয়ে গেল মিহির। মিহি আবারো বলল,,
“আপনি কিছু করেছেন শুভয়ের সাথে?”
হাসি প্রসারিত হলো স্নিগ্ধের। মিহির ঘনিষ্ঠে এসে রেলিঙে দুই পাশে হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়ালো। তার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে অস্থির হতে লাগল ওর। কিন্তু প্রয়োজনের সময় মুখ থেকে কথা বের হয় না একদমও। স্নিগ্ধ তার কানের কাছ থেকে চুল সরালো তারপর মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বলে,,
“কেউ আমার স্পেশাল জিনিসে হাত দিয়ে দেখুক, আই সোয়ের অন মাই গড! মাটিচাপা দিয়ে দিব।”
(চলবে…)
। ]