বউ পর্ব ২

গল্পঃ বউ ( ২য় পর্ব )

–‘তোর মতো লাপারঝান্ডেস মার্কা স্বামী আমার দরকার নাই, তোর সাথে না গিয়ে আজীবন কুমারী থাকবো তা-ও ভালো।’

মীরার কথা শুনে টাশকি খাইলাম, “ লাপারঝান্ডেস ” এই শব্দটা মীরার ডিকশনারিতে কবে, কীভাবে যুক্ত হলো! মীরার মাথা ঠান্ডা হলে জেনে নেবো পরে। আর মীরার মুখে কুমারী থাকার কথা শুনে মীরার বড়ো বোন ইরা মুখ চেপে হাসছে। আসলে মীরার হিসেবে ও ঠিকই বলেছে, আমাদের বিয়ে হয়েছে কিন্তু ঐ বিষয়ে কোনো হেস্তনেস্ত হয়নি আজও।

আমি হাসতে হাসতে মীরাকে বললাম, ‘ তোমার চিরকুমারী থাকার কথা সত্য, কিন্তু যথেষ্ট সাক্ষীর অভাবে প্রমাণ করতে পারবা না।’

আমার কথায় মীরা ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বললো, ‘ সাক্ষী পিঠের ওপর দেবার আগে এখান থেকে পালা।’

আমি বললাম, ‘ তুই কিকরে বুঝবি তুই ছাড়া জীবনে কতো জ্বালা।’

মীরা কিল মারতে আসতেই ইরা আপু এগিয়ে এসে মীরাকে বাধা দিয়ে বললো, ‘ তুই ঘরে যা মীরা।’

তারপর আমাকে বললো, ‘ আসছো অনেকক্ষণ হইছে, চলো নাস্তা খাবে।’

আমি বললাম, ‘ না আপা, মীরার হাতে কিল না খাওয়া পর্যন্ত আমি একফোঁটা পানি পর্যন্ত খাবোনা। নিত্য দিনের অভ্যাস, ওর কিল না খেলে অন্য খাবার হজম হবেনা পেটে।’

আমার কথা শুনে ইরা আপু হাসতে হাসতে শেষ।

বাড়ি থেকে উধাও হয়ে মীরা তার বড়বোন ইরা আপুর বাড়িতে এসেছে, অনেক খুঁজে বউকে পেলেও, বউয়ের ভাব দেখে মনে হচ্ছে এ জন্মে আর বউয়ের মন পাওয়া হবেনা। জীবনডা’ই বেদনা।

পিচ্চি বউটা নিয়ে আছি মহা বিপদে, যে কইছিল,– বিয়া যে কত্তো মজা,খালি খাওন আর খাওন।’ তারে পাইলে হইতো একবার। হালার আমি জীবনে বিয়া কইরা কিল ছাড়া কিছু খাইলাম না।

ইরা আপুর বাসায় আছি, কিন্তু বউ এমন ভাব নিয়ে চলে যেন আমি তার সাথে প্রেম করার জন্য লাইন মারছি। কাছে ডাকলে ভেংচি কাটে, আমি পাশে গেলে সে দৌড়ে যায় পুকুর ঘাটে; এসব দেখে সত্যি আমার বুকটা ফাটে।

সেদিন ইরা আপু তার বড়ো ননদীর বাসায় চলে গেল সম্ভবত ইচ্ছে করেই, আমাদের দু’জনকে রেখে বাড়িতে। সারাদিন চোখে চোখে রাখলাম মীরাকে, সে এমন ভাবে এড়িয়ে চলছে যেন আমি শিকারী সে শিকার।

সন্ধ্যায় ঘুঘু ধরার ফাঁদ পাতলাম। সন্ধ্যা হতে মীরা ইরা আপুর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আছে, আমিও জলদি করে খেয়ে অন্য রুমে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছি। অনেক রাতে মীরা রুমের দরজা খুললো টের পেলাম। বেরিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে অনেকক্ষণ পরে ফিরে এসে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করবে এমন সময় বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে গিয়ে রুমে ঢুকে পড়লাম। চেহারার একটা ভিলেন ভিলেন ভাব নিয়ে মীরাকে বললাম, ‘ আজকে আমার হাত থেকে কেউ তোমাকে বাচাতে পারবেনা সুন্দরী।’

মীরা কেমন একটা রহস্য মাখা হাসি হাসলো, তাই দেখে আমার পেটের নাড়িভুড়ি কেমন মোচড় খেয়ে উঠলো। তবুও বেশি করে হাওয়া নিয়ে বুক ফুলিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম। জোর করে মীরাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেলাম, আজকে আর কিল দিতে পারবে না, কারণ সামনাসামনি জড়িয়ে ধরে আছি। আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে মীরা তলপেটে দুম করে এক ঘুসি মেরে দিতেই দুচোখে জোনাকিপোকার উদয় হলো, সাথে সরিষা ফুলের বাগান।

মীরা বিদ্যুৎ গতিতে গিয়ে শোকেসের ওপর থেকে একটা চাকু এনে আমার সামনে দাড়ালো। নিজের বউকে চুমু খাবার অপরাধে আজ প্রাণটা যাবে! তবুও দুঃখ ছিলনা যদি এই কাহিনি ইতিহাসের পাতায় কেউ তুলতো; সেটা যখন সম্ভব নয় তখন যেভাবেই হোক জীবন বাঁচাতে হবে।

আমি কি বলতে কি বললাম মীরাকে, ‘ ঠিক আছে মীরা, আমার চুমু আমাকে ফেরত দিয়ে দাও, তবুও প্রাণে মেরোনা প্লিজ।’ কথা শেষ হতে দেরি, পিঠের ওপর মীরার কিল পড়তে দেরি নাই।’ স্প্রিং এর মতো ছিটকে রুম থেকে বেরিয়ে মীরার হাত থেকে জীবন বাঁচালাম।

বিছানায় শুয়ে মনির খানের, “ জোর করে ভালোবাসা হয়না, আমি জেনে গেছি,” গানটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলাম, “ বউহীন এ জীবন, মৃত্যুর চেয়ে আরও যন্ত্রণাময়, আমার মরণ হলেই,” এই পর্যন্ত গেয়ে গানে ব্রেক মেরে থেমে গেলাম, না মরণ হবে কেন। তারচেয়ে বউয়ের হাতে কিল খেয়ে জীবন কাটানো অনেক ভালো।

রাতের গাওয়া স্যাড সঙ্গীত সকালে রোমান্টিক সঙ্গীতে পরিনত হইলো ইরা আপুর ছোট ননদী মিমের আগমনে। জীবনটা কতো রহস্যময়, আহারে!

মিমের বয়স বিশ বছর হবে, দেখতে সে-ও কম সুন্দরী নয়। এবার মীরাকে সায়েস্তা করার জন্য ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করার পরিকল্পনা শুরু করলাম।

মিম ঘরে ঢুকতেই গলা ছেড়ে গান ধরলাম,– “ তোমায় দেখলে মনে হয়, হাজার বছর আগে বুঝি ছিল পরিচয়।” গান শেষ হইতে না হইতেই খটাস্ করে দরজা খুলে মীরা বললো, ‘ এইসব সঙ্গীত বাগানে গিয়ে পরিবেশন করো যাও, শুনে অন্তত মশা গুলো কানের পর্দা ফেটে মরে যাক।’

এতক্ষণ মীরা মিমকে খেয়াল করেনি, এবার মিমের দিকে চোখ পড়তেই, একবার আমার দিকে, একবার মিমের দিকে তাকাচ্ছে মীরা, রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।

আমি মীরাকে মিমের সামনে আদেশ দিলাম, ‘ যাও, আমার আর বেয়াইন’র জন্য একটু চা করে নিয়ে আসো।’

মনে মনে এতক্ষণে হয়তো কিলিয়ে আমার পিঠ ভর্তা করে দিয়েছে, মিম সামনে থাকায় ডাইরেক্ট একশান নিতে না পেরে রাগে ফুলছে মীরা।

মীরার সামনে মিমের উদ্দেশ্যে গান ধরলাম, ‘ এতদিন কোথায় ছিলে, ও আমার ভালোবাসা, তুমি একা আমি একা, আগে কেন হয়নি দেখা।’

রাগে গজগজ করে মীরা বললো, ‘ এহ! যে গলা, তাতে আবার গান, গলা তো নয় ফাটা বাঁশ।’

আমি জ্বলন্ত আগুনে পেট্রল ছিটানোর জন্য বললাম, ‘ আমার গানের গলা নিয়ে উপহাস! তুমি গানের কি বোঝো মূর্খ, এই গান যার উদ্দেশ্যে গাওয়া হইছে তাকে জিজ্ঞেস করো, তার কানে এই গান সুখের বান হইয়া প্রবেশ করে মনের নদীতে ঢেউ তুলিয়া এতক্ষণে চারপাশ তছনছ করে দিয়েছে স্বর্গ সুখের দোলায়। কি মিম কথা ঠিক বলছিনা?’

মীরার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যে পরিমাণ মেজাজ গরম হইছে, সেই গরম দিয়ে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প করে একটা গ্রামের এক সপ্তাহের বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব।

কথা আর বেশি বাড়ালাম না। মীরা কী মনে করে মিমের হাত ধরে টেনে রুমের ভেতর নিয়ে গেল।

মিম খুবই আন্তরিক, মীরার অপছন্দ যতো কাজ, সব সে আমার জন্য করে।

মিম আমাকে ডিম সেদ্ধ করে খাওয়ায়, চা বানিয়ে খাওয়ায়, আমার সাথে গল্প করে। আর মীরার দূরে থেকে আমাদের দিকে নজর রাখে আজকাল।

মিমের সাথে সখ্যতা যতই বাড়তে থাকে, মীরার পাহারাদারীও ততই বাড়তে থাকে। যেভাবে হোক ভুলিয়ে-ভালিয়ে মীরা মিমকে তার সাথে রাখতে চায়, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ।

আজকে হঠাৎ সামনে এসে মীরা বললো, ‘ মিমের সাথে এত ঘুটুর-মুটুর কিসের হা?’

: কিসের ঘুটুর-মুটুর, আর তাতে তোমার কী, তুমি তো বলেই দিয়েছো আমার মতো লাপারঝান্ডেস মার্কা স্বামী তোমার লাগবে না। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতেছি। আর এই লাপারঝান্ডেস শব্দের অর্থ কী?

: বেয়াইন পেয়ে সঙ্গীতের প্রতিভা, কবি-কবি ভাব উতলে উঠেছে তাইনা? উল্টাপাল্টা কিছু দেখলে বুঝবা মজা, খুন করে ফেলবো একেবারে।

কথা শেষ করে মীরা হনহন করে হেটে চলে গেল।

একদিন ইরা আপু মীরাকে নিয়ে বাইরে কোথাও যাবার পরে, মিম এসে আমার রুমে ঢুকলো। আমি খাটের ওপর শোয়া, মিম আমরা পাশে বসা। অনেক কথা বলার পরে মিম হঠাৎ আমার হাত ধরে মুখের ওপর ঝুকে পড়ে বললো, ‘ আপনাকে একটা কথা বলবো বলবো করে বলা হয়নি আজও, আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে, আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।’ এই অবস্থায় হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তেই আমার বুকের ভেতরটা ধড়াম করে উঠলো, দরজায় দাড়িয়ে আছে মীরা…

চলবে…

লেখাঃ আবীর হোসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here