বড্ড ভালোবাসি পর্ব ১৭+১৮

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ১৭ এবং ১৮
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
আরে এই তো সেই শাঁকচুন্নিটা। যাকে সেদিন রাক্ষসেরর সাথে দেখেছিলাম।হায় আল্লাহ!শেষে কিনা রাক্ষসের এক্স আমার ভাইয়ের বউ হবে।না কিছুতেই না কিন্তু কাহিনীটা কি? এই তো সেদিন দুজনের কত ভাব দেখলাম তাহলে হঠাৎ হলোটা কি!কি এমন ঘটলো যে মাএ কদিনের ব্যবধানে বিয়ের পিঁড়িতেও বসে যাচ্ছে।আর এ মেয়ের মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে না এর সদ্য ব্রেকাপ বা জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।রোজ কিছু ভাব তোর ভাইয়ের জিবনটা এভাবে শেষ হতে দিস না।যে করেই হোক তোকে এ বিয়ে আটকাতেই হবে…..!!
.
আব্বু আর আম্মু মেয়েকে দেখে খুশিতে গদগদ।ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ মনোযোগ দিয়েই দেখছে আর পছন্দও হয়েছে। অবশ্য পছন্দ না করার মতও না।গায়ের রং ফর্সা হাইট পাঁচ সাড়ে পাঁচ ফুট হবে।পিংক কালারের শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।নাম রুবাইআত রাহা।আমাদের মতই এক ভাই এক বোন।ভাই ছোট আর বোন বড়।যেমন মিষ্টি নাম তেমনি তার চেহারাও।এই মেয়েকে আমার ভাবি বানাতে কোনো অসুবিধা নাই কিন্তু সমস্যা একটাই রাক্ষসের এক্স।
.
মেয়েটার বাবা মা খুব মিশুকে আর খুব ভালো।কিছুক্ষণের আলাপেই আপন করে নিয়েছেন। পুরো পরিবারটাকেই আমার ভালো লেগেছে বিশেষ করে আন্টিকে।কিন্তু এ বিয়ে কি করে ভাঙ্গা যায় সেই চিন্তায় বিভোর।তখন আব্বু বলে উঠলেন ভাইয়া আর ভাবি কে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে।তাদের ভাবির রুমে পাঠানো হলো।আর আমি বেচারি বসে বসে বোর হচ্ছি।তখনই আন্টি বললেন আপনারা বাড়িটা ঘুরে দেখতে পারেন।আমি তো এক পায়ে রাজি মায়ের সাথে কথা বলা যাবে।কিন্তু মা যাবেন না। তাই আমি একা একাই ঘুরে দেখছি বাড়িটাকে।
.
.
উপরের তলায় একটা রুম দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম।রুমটা অসম্ভব সাজানো গুছানো।হোয়াইট আর পিংক কালারের কম্বিনেশনে পুরো রুমটা।বেলকনিতে অনেক গোলাপ ফুলের গাছ আর সব গুলোই লাল।আচ্ছা সাদা গোলাপ নেই কেন থাকলে আরো তো ভালো লাগতো।রজনীগন্ধা আর বেলি ফুলও আছে।কিন্তু রুমটা কার?যাক গে যারই হোক লোকটা বেশ সৌখিন।হাঁটছি আর রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছি।হঠাৎ পেছন ফিরে তাকাতেই আমি অবাকের চরম সীমায় পৌছো গেলাম।আমি ভুল দেখছি না।ভালো করে চোঁখ ডলে আবার তাকালাম না আমি ভুল না সত্যি….. রাক্ষস!রাক্ষস এখানে কি করছে।
.
রাক্ষসকে দেখতে সত্যি আজ রাক্ষসের মত লাগছে।এলোমেলো চুল,হাতে ব্যান্ডেজ ভীষণ অগোছালো,চোঁখগুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন হয়তো ঘুমায়নি।কিন্তু কেন ওহহ গার্লফ্রেন্ডের প্যারায় হবে হয়তো।রাক্ষস আমার দিকে তৃষ্ণার্ত চোঁখে তাকিয়ে আছে?নিজের দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে দেখলাম না সব ঠিকই আছে।চুপচাপ মাথানিচু করে চলে যাচ্ছিলাম তখনই উনি বলে উঠলেন____
.
রোজ! তুমি এখানে?(নিজের চোঁখকে বিশ্বাস করতে পারছি না)
.
উনার কথায় দাঁড়িয়ে গেলাম….কেন আপনাকে বলব কেন?আর আপনি এই বাড়িতে কি করছেন।
.
আমি কি করছি মানে আমার বাড়িতে আমি থাকবো না তো কি পেত্নী থাকবে।
.
কিহহ এটা আপনার বাড়ি।ইম্পসিবল এটা হতেই পারে না।তখনই আন্টি এসে বললেন রিহান এখন তোর আসার সময় হলো উনারা কখন চলে এসেছেন।ওমা রোজও দেখি এখানে রোজ এ হচ্ছে আমাদের ছেলে রিহান মানে রাহার ছোট ভাই।আর রিহান ও….
.
রিহানঃআর বলতে হবে না মা ও হচ্ছে রাহাত ভাইয়ার বোন পেত্নী।
.
রোজঃওহহ মাই গড ছিহ(জিব্বায় কামড় দিয়ে)আমি এসব কি ভাবছিলাম।ভাই বোনকে জিএফ বিএফ বানিয়ে দিলাম নাউযুবিল্লাহ!ভাগ্যেস কাউকে বলিনি অবশ্য আমারই বা দোষ কি আমাদের দেশের যেকোনো জায়গায় সমবয়সী কাউকে দেখলে সবাই এই কথাই বলবে।
.
তোরা দুজন দুজনকে আগে থেকে চিনিস?শয়তান ছেলে এমন চাঁদের মত মেয়েকে তুই পেত্নী বলছিস!
.
রিহানঃশুধু চিনি বললে ভুল হবে মা আমি ওকে হারে হারে চিনি।হুহ চাঁদ না ছাই অমাবশ্যা।
.
তুই থাম এবার! রোজ তুমি ওর কথায় কিছু মনে করনা মা ও এরকমই।নিচে চলো তোমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে রিহান তুইও চল।
.
মা তুমি যাও আমি রোজকে নিয়ে আসছি।
.
ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস।
.
হুম আন্টির পেছন পেছন আমিও চলে যাচ্ছিলাম তখনই আমার হাতে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন উনি।আমি ছোটাছুটি করছি কিন্তু এক বিন্দুও নড়াতে পারছি না।
.
যেতে দিন আমায় আমি নিচে যাব।কথাটা যেন তার কানেই গেল না
.
সাত সাতটা দিন তুমি কলেজ আসোনি আমার কীভাবে কেটেছে জানো তুমি(দাঁত কড়মড় করে)।এত জেদ তোমার।।আমি জানি রোজ আমি তোমার সাথে সেদিন খুব খারাপ ব্যবহার করেছি তার জন্য আমি দুঃখীত। তোমার গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছি। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি প্লিজ রোজ আমাকে ক্ষমা করে দাও (মাথা নিচু করে)
.
ক্ষমা (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)সেদিন কলেজে সবার সামনে গায়ে হাত তুলে কতগুলো খারাপ কথা বলে অপমান করলেন আর এখন ফাঁকা ঘরে এনে ক্ষমা চাইছেন বাহ অসাধারন।এই না হলে আপনি রিহান চৌধুরী।যখন তখন গায়ে হাত তুলবেন বকবেন আবার সামান্য সরি বলে সাতত খুন মাফ।না মিঃরিহান ক্ষমা সবাইকে করা যায় না।আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না।
.
আমাকে রাগিও না রোজ। তুমি ক্ষমা না করলে আমি শান্তি পাব না।তুমি বল আমি কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে।
.
আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না।(রিহানের চোঁখ দেখে ভয়ে আন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো)আপনি অনেক করে….কিছু বুঝে উঠার আগেই রোজের ঠোঁটগুলো নিজের আয়ওে নিয়ে নিল রিহান। নিজের রাগকে রোজের ঠোঁটের উপর ঝারতে ব্যস্ত সে নিদারুণ যন্ত্রনায় নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে চোঁখ বন্ধ করে পাথরের মত দাঁড়িয়ে চোঁখের পানি ফেলছে রোজ।রিহানে কামড়গুলো এখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।রিহান যেন রোজের ভালোবাসায় ডুব দিচ্ছে।হাত দিয়ে কোমড়ে স্লাইড করছে। তার ভালোবাসায় রোজ কেঁপে কেঁপে উঠছে।আর সহ্য করতে না পেরে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয় ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে দুপা পিছিয়ে যায়।নিজেকে ছাড়িয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিল রিহানের গালে।আর রোজ দুহাত দিয়ে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
.
রোজের থাপ্পড়ে হুশ ফিরে রিহানের….পরক্ষণেই বুঝতে পারে কি জঘন্য কাজ করেছে সে।নিজের উপর নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে।আর কিছু না ভেবে রোজের কাছে ছুটে গেল সে।রোজ দেখ আই’এম সরি আমি বুঝতে পারিনি।রোজ এখনও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে কোনো রেসপন্স নেই।যেই রোজকে ধরতে যাব তখনই রোজ কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।রিহানও রোজের পিছন পিছন ডাকতে ডাকতে বেড়িয়ে যায়।
.
রোজদের এবার যেতে হবে তাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে।সকলেরই মেয়েকে পছন্দ হয়েছে তাই রোজের বাবা আর দেরি করতে চান না। রোজও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।একবারও রিহানের দিকে তাকাচ্ছে না। রিহান অপলক দৃষ্টিতে রোজকে দেখছে আর নিজের উপর রাগ হচ্ছে।মন বলছে নিজেকে খুন করে ফেলতে।ঠোঁট দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে খানিকটা ফুলেও গেছে।
.
.
ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে বসে আছি।মাথাটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। রিহানের এরকম আচরন কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।যাকে তিল তিল করে ভালোবেসে ছিলাম সে কিনা এমন একটা ব্যবহার করল।কেন করল সে এর কোন উওর পাচ্ছি না।
.
.
রিহানও শান্তি পাচ্ছে না।রোজের সাথে সেদিন একটা এত বড় অন্যায় করল আর এখন আরেকটা।রোজের মায়ামাখা মুখটা বার বার মনে পরছে।আমি তো রোজের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ওকে আটকে ছিলাম।তাহলে এমন কেন করলাম।ওকে দেখলে আমার মাথা কাজ করে না। কি করব আমি রোজকে আমার মানাতেই হবে।আমাদের মধ্যে সব ঠিক করে নেব।এখন শুধু সকালের অপেক্ষা আরো একটা নির্ঘুম রাত কেটে গেল রিহানের।
.
.
পরেরদিন
.
তিশা চোরের মত রোজের বাসায় ঢুকে জোর করে রোজকে কলেজ নিয়ে গেল।রোজ কলেজ কারও সাথে একটা কথাও বলছে না।কলেজ ছুটির পর বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে তখন আবির এসে সামনে দাঁড়ালো।
.
হেই রোজ এতদিন কোথায় ছিলো?ভালো আছ তো।
.
জ্বি ভালো আছি ভাইয়া।
.
আমার কথা জিজ্ঞেস করলে না তো।ওকে লাগবে না তোমাকে আমার একটা কাজ করতে হবে না বলা চলবে না।
.
ক.কাজ(আমতা আমতা করে)
.
হুম ওই পুকুর পাড়ে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওকে এই চিরকুট টা দিয়ে আসতে হবে।আমিই দিতাম বাট বুঝতেই তো পারছ (লজ্জা পেয়ে)
.
আবির ভাইয়াও লজ্জা পায়।আমার হাসি পাচ্ছে হাসিটাকে আটকিয়ে তিশাকে বললাম যা তিশা চিরকুট টা দিয়ে আয় আমি এখানে আছি।
.
নো রোজ এটা তিশা দিবে না তোমাকেই দিতে হবে।আমি ওকে ভরসা করি না।বাধ্য হয়েই আমাকে যেতে হচ্ছে।
.
পুকুর সাইডে গিয়ে আমি অবাক চারিদিক সুন্দর করে সাজানো আর পুরো রাস্তায় ছোট ছোট সরি লিখা।কিন্তু কোথাও কোনো মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি না।তাই সামনে এগোচ্ছি।যত সামনে যাচ্ছি ততই অবাকের চরম সীমায় পৌছাচ্ছি।কি হচ্ছে এখানে এত সরি কেন?সামনে কাউকে দেখতে পাচ্ছি প্লে কার্ডে বড় বড় অক্ষরে সরি রোজ লিখা।মুখটা দেখা যাচ্ছে না তবে এবার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না মানুষটা কে?তাহলে আবির ভাইয়া আমাকে মিথ্যা বলে এখানে পাঠিয়েছে।আগ্রহের সাথে চিরকুট টা খুলে দেখলাম সর সর অক্ষরে সরি লিখা।
.
হাটুগেড়ে কান ধরে সামনে বসে আছে রিহান ভাইয়া। ব্যাপারটায় আমার খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু সিরিয়াস মুহূর্তে হাসা চলবে না …..তাই চুপচাপ মুখ কাঁচুমাচু করে দাড়িয়ে আছি…..
:
:
#Part_18
:
:
আমি জানি তোমার সাথে যা করেছি সত্যি ক্ষমার অযোগ্য।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি জেনে বুঝে কিছু করিনি কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল নিজেও জানিনা।সেদিন রাগে আমার মাথা কাজ করছিল না তাই তোমার সাথে তখন কি করেছি বুঝতে পারিনি।তারপর নিজের ভুল বুঝতে পেরে তোমাকে অনেক ডেকেছি ইভেন সরিও বলেছি কিন্তু শুনোনি।আর কালকে তুমি আবারও আমাকে ওভাবে রাগিয়ে দিলে তার জন্যই তো……বিশ্বাস কর আমি ইনটেনশনালি কিছু করিনি প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আর দেখ কত কষ্ট করে পুরোটা তোমার জন্য করেছি আর এতক্ষণ কান ধরে আছি।প্লিজ রোজ ক্ষমা করে দাও।
.
.
এত বড় ডাঙ্গর ছেলে আমার সামনে কান ধরে বসে আছে ভাবতে পারছি না।এখন খিল খিল করে হাসতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কিছুতেই হাসবো না।এখন রেগে থাকার অভিনয় করতে হবে তাই চোঁখ মুখ শক্ত করে বললাম……
.
হাসালেন আমায় মিঃরিহান চৌধুরী আমাকে সরি বলার জন্য এত কিছু করেছে হা হা।এটাকেই বোধহয় বলে বড়লোকদের বড় বড় ব্যাপার বলে। কে বলতে পারে আমার মত আর কত মেয়ের সাথে……
.
স্টপ ননসেন্স স্টপ (চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে)তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার সম্পর্কে এমন ভাবো।আরে আমি যদি এমন হতাম তাহলে এই কলেজেই কত মেয়ে ছিল যারা আমার জন্য পাগল তোমার সাথে কালকে যা করেছি তা করলে ওরা নিজেকে ভাগ্যবান মনে করত তোমার মত মাইন্ড করত না।কিন্তু কখনও কারও দিকে তাকাইনি পর্যন্ত আর তুমি আমাকে ক্যারেক্টারলেস বানিয়ে দিলে।হ্যাঁ তোমার সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে আর তার জন্য সেদিন থেকে তোমাকে হাজার বার সরি বলেছি কিন্তু তোমার কোনো হেলদোলই নেই।বলনা রোজ কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তুমি যা বলবে আমি তাই করব বল রোজ প্লিজ বল(করুন কন্ঠে)
.
কেন তোকে আমি ক্ষমা করব।করব না ক্ষমা তুই আমাকে কম কষ্ট দিয়েছিস সবার সামনে আমার নরম গালটা ফাটাইয়া লাল কইরা দিছিস আর কালকে ছিহ ক্ষমা করব না।এ কদিন আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি ততটা কষ্ট তুই ভোগ কর।কষ্ট পেতে পেতে মরে যা(জিব্বায় কামড় দিয়ে) না না আধমরা হয়ে যা তারপর ভেবে দেখব।আমাকে কষ্ট দেওয়া এবার বার করব চান্দু হুহ…..
.
আমার লেইট হচ্ছে আমি বাড়ি যাব।আসছি কিছু একটার শব্দে পেছনে তাকালাম একি রক্ত……রাক্ষস মাটিতে বসে আছে আর হাত দিয়ে রক্ত পরছে।।দৌড়ে রাক্ষসের কাছে গেলাম।কি করব হুম আবির ভাইয়া।ছুটে আবির ভাইয়ার কাছে গেলাম সাথে তিশাও আছে কি নিয়ে যেন হাসাহাসি কররছে।ভাইয়া সব বলে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসতে বললাম।আমি আর তিশা আবার পুকুর সাইডে গেলাম।
.
এখনও একইভাবে বসে আছে।আমি বসে যেই হাতটা ধরতে যাব তখনই সরিয়ে নিলো।কি হলো হাতটা সরালেন কেন?রক্ত ঝরছে ব্যান্ডেজ করতে হবে তো….
.
না লাগবে না ঝরতে দাও।তোমার দেরি হচ্ছে আসতে পারো।
.
আবির ভাইয়াও এসে গেছে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে।আমার দেরি হচ্ছে কি না সেটা আমি বুঝবো আপনি হাতটা দিন(কাঁদো কাঁদো গলায়)
.
না ব্যান্ডেজ লাগবে না।তুমি যখন আমাকে ক্ষমা করবে না তখন আমার ব্যান্ডেজ লাগবে না।ঝরতে দাও তাতে যদি একটু শান্তি পাই।
.
বাজে কথা বাদ দিন আর ব্যান্ডেজ টা করে নিন।
.
এই তুমি এত প্যাঁচাল কর কেন?আমার হাত আমি ইচ্ছে করলে ব্যান্ডেজ করব না হলে করব না তাতে তোমার কি!তুমি যেমন ক্ষমা করবে না তখন আমার কি হল না হল সেটা ভেবে তোমার কাজ নেই।আগে বল ক্ষমা করেছ। তাহলে আমি লক্ষ্মী ছেলের মত ব্যান্ডেজ করে নেব।না পারলে কেটে পর।
.
দিন না হাতটা(কান্না করে)প্রচুর রক্ত ঝরছে।
.
দিব না…. তুমি যাও এখান থেকে। হাত কেটেছে আমার আর কাঁদছো তুমি আশ্চর্য ?
.
ধুর বাবা ভাল্লাগেনা আমার রক্ত দেখলে ভয় লাগে।তাই এতবার বলছি।ব্যান্ডেজ করে নিন না।(করুন কন্ঠে)
.
আগে বলো ক্ষমা করেছ…..
.

.
এই রাক্ষসটাকে ভেবে ছিলাম জব্দ করব কিন্তু কপাল হল না!উল্টে আমিই জব্দ হয়ে গেলাম।অনিচ্ছা সও্বেও তিশা আর আবির ভাইয়ার রিকুয়েস্টে ক্ষমা করতেই হলো।
.
ক্ষমা মন থেকে করেছো তো?মন থেকে না করলে দরকার নেই।
.
উফফ হ্যাঁ মন থেকেই করেছি।(রাক্ষস জোর করে ক্ষমা নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করছে মন থেকে করেছো তো)
.
এইতো গুড গার্ল না পেত্নী হবে হা হা…..নাও এবার হাতটা ব্যান্ডেজ করে দাও।
.
ওরে রাক্ষস এমন করে হাসিস না। তোর এই হাসিই আমাকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।
.
ম্যাডাম আমার হাত ব্যান্ডেজ করছে আর আনমনে দেখছি ওকে।কেউ একজন বলেছিল “মন খারাপেও যে নারীকে সুন্দর দেখায় সেই প্রকৃত সুন্দরী”।আচ্ছা কাঁদলে সব মেয়েকেই কি এমন মায়াবী দেখায় নাকি শুধু আমার মায়াবতীকেই এমন দেখাচ্ছে।কান্নায় চোঁখ মুখ লাল হয়ে গেছে একদম স্ট্রবেরির মতো লাগছে ইচ্ছা করছে এক্ষুণি টুপ খেয়ে ফেলি।
.
ব্যান্ডেজ কমপ্লিট বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিন। চল তিশা আমরা যাই।
.
আমিও এখন বাসায় যাব তোমাদের যদি আপওি না থাকে তাহলে আমি তোমাদের পৌছে দেই।
.
নাহ প্রয়োজন নেই আমরা একাই যেতে পারব।আপনি যান।
.
ওকে তাহলে যাও আমি আসছি বাই দ্যা ওয়ে থ্যাংক ইউ রোজ।(ফিসফিস করে)
.
থ্যাংস ক……যা চলে গেল।হনুমান রাক্ষস হিটলার জোর করে ক্ষমা আদায় করতে পারলো অথচ জোর করে বাড়ি পৌছে দিতে পারল না কি অদ্ভুদ!
.
আধ ঘন্টা ধরে কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আজকে কোনো রিকশা পাচ্ছি না।আর পাব বলেও মনে হচ্ছে না।সব রিকশাওয়ালা জোট বেধে আমার সাথে আড়ি দিয়েছে।তা না হলে এতক্ষণে একটা রিকশাও পেলাম নাহ কেন?এসব ভাবছি সে সময় একটা কালো রঙের গাড়ি এসে আমাদের সামনে থামলো।আমি আর তিশা একজন অন্যজনের দিকে তাকাচ্ছি। তখনই গাড়ি থেকে নেমে ৩২ দাঁত কেলিয়ে রিহান ভাইয়া বললেন…..
.
দেখলে তো পেত্নী বড়দের কথা না শুনলে কি হয়।তখন যদি আমার অফারটা নিতে তাহলে এই রোদের মধ্যে দাড়িয়ে নিজের এই পেত্নী মার্কা চেহারাটাকে আরও বিভৎস করতে হত না।
.
এমনি তে এই কাক ফাঁটা রোদ তার উপর এই রাক্ষসের কথা মোটেও সহ্য হচ্ছে না।চুপপ একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না।আপনি ভূত জ্বীন আত্মা। নিজে একটা কুম্ভুভূত হয়ে আমাকে পেত্নী বলছেন।আচ্ছা আমাকে আপনার ভয় লাগে না।যদি রেগে ঘাড় মটকে দেই।
.
নাহ লাগে না কারন আমি যে সে ছেলে নই খুব সাহসী এন্ড ইনট্রিলিজেন্ড(কলার উঁচু করে) রেগে গেলে তোমার মত পেত্নীকে কিভাবে টাইট দিতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।এসব বাদ দিয়ে চল তোমাকে ড্রপ দেই।
.
এহহ এসেছেন আমার সাহসী ভীতুর ডিম একটা হুহহ(মুখ ভেংচি দিয়ে)না লাগবে না।
.
তিশাঃতিশা এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলো।রোজ চল আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না হয়ত এরকম আর পাঁচ মিনিট থাকলে আমি সেন্সলেস হয়ে যাব বলেই গাড়িতে বসে পরলো।এই মেয়েটা সব সময় আমাকে ফলস পজিশনে ফেলে মন চাইছে এক্ষুণি গিলে খাই।বাধ্য হয়েই রাক্ষসের সাথে যেতে হবে।যেই আমি পেছনে বসতে যাব এমনি রাক্ষস চেঁচিয়ে উঠল।
.
এই তোমাদের কি আমাকে ড্রাইভার মনে হয় দুজনেই পিছনে বসছো।
.
হুম যারা গাড়ি চালায় তাদের আমি কেন সবাই ড্রাইভারই বলে।কাউকে তো পাইলট বলতে শুনিনি।(চিন্তিত হয়ে)
.
ফাইল কথা বাদ দাও আর সামনে বস।
.
তিশা তুই সামনে বস আমি পেছনে বসব।
.
না দোস্ত আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আর শরীরও খারাপ লাগছে আমাকে একটু হাত পা ছড়িয়ে বসতে দে।কথাটা শুনে আর ওর অবস্থা দেখে মায়া হল তাই সামনে বসে পরলাম।রাক্ষসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাক্ষস মিটিমিটি হাসছে কিন্তু কেন?
.
.
চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here