বড্ড ভালোবাসি পর্ব ২১+২২

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ২১ এবং ২২
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
একনাগারে কথাগুলো বলে চলে গেল রোজ।আর রিহান এখনও গালে হাত দিয়ে “থ” হয়ে আছে।একটু আগে তার সাথে কি হয়েছে সে যেন বুঝতেই পারছে না।শুধু অবাক হয়ে ভাবছে মেয়েটার হয়েছেটা কি কেন মাঝে মাঝে এমন অদ্ভুদ ব্যবহার করে।আচ্ছা সত্যি সত্যি ওকে পেত্নী ভর করে নি তো!
.
.
রিহানের সাথে এমন বিহেভ করে মোটেও মেনে নিতে পারছে না রোজ।কিই বা করেছে তার সাথে…..শুধু হাতটাই ধরেছিল তাও আবার ইচ্ছাকৃত নয় অনেকটা বাধ্য হয়েই আর তো কিছু নয়।তাহলে এমন রাগ দেখানোর তো কিছু ছিল না। তাহলে শুধু শুধু তার উপর এত রাগ দেখানো…. না একদম উচিৎ হয়নি।
.
.
পরেরদিন
.
রোজ আর তিশা কথা বলছে তার মধ্যেও শাওন এসে যোগ দিলো।শাওন রোজের ঘা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে অন্য নজরে দেখছে সেটা রোজ বুঝতে না পারলেও আড়াল থেকে একজন ঠিকই বুঝতে পারছে। রোজও হেসে হেসে কথা বলছে এদিকে যে রিহান রাগে ফুসছে এতে তার কোনো হুশই নেই।শাওন কথা বলতে বলতে রোজের আরো কাছে যাচ্ছে পারছে না শুধু রোজের সাথে মিশে যেতে।রোজ কিছুটা অস্বস্তিবোধ করছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
.
এসব দেখে রিহান আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছে না তাই দৌড়ে রোজের কাছে ছুটে গেল।কোনো কথা না বলে হাত ধরে টানতে টানতে রোজকে নিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেল।রোজ কিছু বলছে কিন্তু তার কানেই ঢুকছে না।গাড়ির দরজা খুলে রোজকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে বসায় আর নিজেও উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।রোজ বেরিয়ে আসতে চাইলে দেখে গাড়ি লক করা।রিহানের দিকে তাকিয়ে ওর চোঁখ মুখ দেখে ভয়ে চুপসে যায়।
.
চোঁখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে চোঁখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।যেন যেই তাকাবে সেই জলসে যাবে।কি ভয়ংকর চোঁখ দুটি।।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।আর আমি এর কারন হিসেবে কালকের থাপ্পড়কেই চিন্তা করছি।কেন এটা করতে গেলাম এখন মনে হচ্ছে আমাকে মেরেই দেবে।বলা যায় না হতেও পারে।একে কোনো বিশ্বাস নেই কি সাংঘাতিক ছেলে! রাক্ষস আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ভয়ে সেটাও জিজ্ঞেস করতে পারছি না।তবুও জানতে হবে….. ববলছিলাম যযে আআমরা ককোথায় যযাচ্ছি।উনি আমার দিকে সেই ভয়ংকর চোঁখ দিয়ে তাকালেন এই চাহনি দেখে আমি ভয়ে কাঁপছি।কোনো কথা না বলে চুপচাপ গুটিশুটি মেরে বসে আছি।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়িটা একটা নদীর ধারে থামলো।চারদিক নির্জন সবুজ অরন্যে ঘেরা জায়গাটা খুব সুন্দর এই ইট পাথরের শহরেও যে এমন জায়গা আছে তা আমার জানা ছিল না।গাড়ি ধার করিয়ে চোঁখ বন্ধ করে উনি সিটের সাথে গা এঁলিয়ে দিলেন।
.
এবার ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এখানে আমাকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবে দিলে দিলেও পারে… আর এটা ঘটলে কেউ জানতেও পারবে না।ঢোক গিয়ে বললাম আআচ্ছা আআমাকে এএখানে এনেছেন কেন?
.
উনি চোঁখ বন্ধ করেই বললেন…..এত ভয় পাচ্ছ কেন রোজ? এত ভয় পেও না আমি বেঁচে থাকতে তোমার কিছু হবে না।আজ তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।আমি ভেবেছিলাম তোমাকে আমার বলতে হবে না তুমি নিজেই আমাকে বুঝে নেবে কিন্তু তা আর হলো না।অবশ্য আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল তোমার মতো বোকা ঢেড়শ আমায় ভুল ছাড়া আর কিছু বুঝতে পারবে না।
.
ককি বলবেন….আর আমাকে এখানে এনেছেন কেন?কালকের জন্য ক্ষমা করে দিন না আমি ভুল করে ফেলেছি।উনি একবার চোঁখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবারও বন্ধ করে নিলেন।
.
.
চোঁখ বন্ধ করেই বললেন…..আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কথা বলবে না চুপচাপ শুনে যাবে ইজ ইট ক্লিয়ার।আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
.
আজ থেকে দুবছর আগে……
.
ফ্ল্যাশব্যাক
.
আমার বন্ধুর বোনের বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিলাম আমি আর আবির।সেখানে অনেক বাচ্চাও ছিল সবাই হৈ হুল্লোলে মেতে ছিল। তখন মেয়েলি কন্ঠের হাসির শব্দ আমার কানে আসে।আশেপাশে তাকিয়ে সেই মানুষকে খুঁজছিলাম আর তাকে দেখে আমার চোঁখ থমকে গেল।
.
কয়েকটা বাচ্চার সাথে চকলেট খাচ্ছিলো মেয়েটা।চকলেট খেয়ে বাচ্চাদের মতো মুখে মাখামাখি অবস্থা।চোঁখে মুখে বাচ্চামো স্পষ্ট। বিহেভিয়ার ও বাচ্চাদের মতো চকলেট খাচ্ছিলো আর খিল খিল করে হাসছিলো।মেয়েরা যে এমন খুন করা হাসি হাসতে জানে এই পিচ্চিকে না দেখলে হয়তো জানতামই না।ওর হাসিতে যাদু ছিল চেহারায় অদ্ভুদ এক মায়া ছিল যা খুন করেছে আমায় প্রতিনিয়ত।
.
দুধে আলতা গায়ের রং চোঁখে হালকা কাঁজল লম্বা চুলোগুলো কমড় পর্যন্ত পরেছে চকলেট কালারের একটা ড্রেস হাত ভর্তি চুড়ি আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ব্যস এতেই পুরো চকলেট গার্ল লাগছিলো।
.
যে ছেলে কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না সে ছেলে আধ ঘন্টা এক নাগারে মেয়েটাকে মুগ্ধ নয়নে দেখে গেল সেদিন ব্যাপারটা অদ্ভুদ লেগেছিলো।
.
পার্টি শেষে বাসায় চলে আসি কিন্তু আমি সেদিন ঘুমাতে পারিনি শুধু তাকেই চোঁখে ভাসছিলো!কিন্তু চিনি না জানিনা তাকে কোথায় পাব।তখন ওই বন্ধুর কথা মনে পরে পরেরদিন ওদের বাড়িতে যাই সেখান থেকে ওর সমন্ধে সব জানতে পারি।
.
.
তারপর থেকে ওকে এক নজর দেখার জন্য কখনও কলেজের সামনে আবার কখনও বাড়ির পাশের দোকানটায় থাকতাম।কলেজের কোনো ছেলেকে ওর আশেপাশে দেখলে আড়াল থেকেই তাকে সরিয়ে দিতাম।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি তাকে প্রতিদিন দেখলেও সে কখনো আমাকে দেখেছে বলে আমার মনে হয়না।এভাবে কেটে যাচ্ছিলো আমার দিনগুলি।
.
একবার কিছুদিন ওর দেখা পাচ্ছিলাম না তখন আমার প্রায় পাগল পাগল অবস্থা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ও খুব অসুস্থ জ্বর এসেছে।আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি ব্যালকোনি দিয়ে ওর রুমে গিয়ে ওর মায়াবি মুখটা দেখে আসি।গুটুশুটি মেরে একদম বাচ্চাদের মতো ঘুমাত।ঘুমন্ত মুখটা আরো মায়াবী লাগতো যা আমাকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট।মাঝেমধ্যে নিজেকে আটকাতে পারতাম না আনমনেই ওর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতাম।কিন্তু এই মেয়ে এত ঘুম কাতুরে যে তাকে কেউ তুলে নিয়ে গেলেও তার ঘুম ভাংবে বলে আমার মনে হয়না।
.
অথচ এই পাগলামিগুলো আমি কেন কররতাম নিজেই বুঝতে পারতাম না।শুধু জানতাম ওর হাসিমুখ না দেখে থাকতে পারব না। আবির একদিন বলল….আমি নাকি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।প্রথমে কথাটা বিশ্বাস হয়নি পরে ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারি সত্যি “আই’এম ইন লাভ ইউথ হার”।এই কদিনে #বড্ড_ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।
.
তারপর থেকে যখনই ওকে দেখতে মন চাইত আবিরকে নিয়ে চলে যেতাম ওর বাসায় সেখান থেকেই দেখতাম ওকে আর আবির পাহাড়া দিতো।দুচোঁখভরে দেখতাম আমার মায়াবিনীকে।

.
যখন শুনলাম ও আমাদের কলেজে এডমিট হচ্ছে আমার খুশি দেখে কে?কিন্তু অনাকাঙ্কিতভাবে ঝগড়া দিয়েই শুরু হয় আমাদের প্রথম দিন।তারপর থেকে ইচ্ছা করেই ওকে রাগাতাম কারন রাগলে ওকে জোশ লাগে তাই।
.
.
যেদিন ওকে পুরো কলেজ খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন আমার হৃদস্পন্দন থেমে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো কেউ আমার হৃদপিন্ডটা নিয়ে গেছে। আমার দেহ থেকে প্রাণটা কেউ আলাদা করে দিচ্ছে।যখন তাকে খুঁজে পেলাম আমি আর আমার মাঝে ছিলাম না ওর সামনেই নিজের সব অনুভূতি প্রকাশ করছিলাম যদি সেদিন তার জ্ঞান থাকতো তাহলে সেদিনই সবটা জানতে পারতো।কিন্তু সেদিনও সে কিছু বুঝতে পারেনি।
.
.
ওইদিন যখন ওকে থাপ্পড় মেরেছিলাম তখন আমার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিলো কিন্তু কিছু করার ছিল না।ও এতটাই কেয়ারলেস যে নিজের শরীরের ভাঁজগুলো দেখা যাচ্ছিলো আর ছেলেগুলো লোভাবেতুর ভাবে তাকাচ্ছিল অথচ সে টেরই পাচ্ছিল না।তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি কারন যা আমার তা আমি আর কারো সাথে শেয়ার করতে পারব না।।
.
ওইদিন রাতে ঘুমাতে পারছিলাম না তাই ছুটে যাই ওর কাছে….. অনেক্ষণ ওর কাছে থাকি আদর করি কিন্তু এই পাগলি মেয়ে বুঝতে পারেনি তবে শেষের দিকে যখন বুঝতে যাবে তখনই ওখান থেকে সরে আসি যাতে ও বুঝতে পারে এটা ওর চোঁখের ভুল ছিল।
.
ওকে কষ্ট দেব আর নিজেকে দেব না তা হতে পারে না। তাই সেদিন নিজেকে কষ্ট দিয়েছিলাম।ওকে যেই হাত দিয়ে আঘাত করেছিলাম সেই হাত দিয়ে লুকিং গ্লাসে ঘুষি দিয়ে রক্ত ঝরিয়েছি।যাতে আমার কলিজা যতটা কষ্ট পেয়েছে ততটা যেন আমিও ফিল করতে পারি।
:
:
#Part :- 22
:
:
কিছুটা থেমে আবারও বলতে শুরু করলেন…..
.
যেদিন তোমাকে আমাদের বাড়িতে দেখি নিজের চোঁখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। প্রথমে ভেবে ছিলাম এটা আমার ভ্রম কিন্তু পরে বুঝতে পারি এটা আমার ভ্রম নয় বাস্তব।এক সপ্তাহ পর তোমার সাথে দেখা।এই এক সপ্তাহ আমি কিছুতেই ঘুমোতে পারিনি।অস্বস্তি আর অশান্তিতে কেটেছে।।প্রতিদিন কলেজ যেতাম তোমাকে এক নজর দেখার জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য কিন্তু আসোনি।আমাকে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হতো।অপেক্ষার প্রহর যে এত দীর্ঘ হয় সেটা আমি তখন বুঝেছি।আর একটা কথাই মনে হতো আমার এই একটা ভুলের জন্য তোমাকে হারিয়ে ফেলবো। যদিও আমার মতে আমি কোনো ভুল করিনি তবুও তুমি তো আমায় ভুল বুঝেছো ।বড্ড ভয় হতো তুমি যদি কোনো দিন আমাকে ভালো না বাসো তাহলে আমি কি করে বাচঁবো। বাঁচতে পারবো না আমি মরে যাব।
.
কিন্তু সেদিনও তুমি আমাকে রাগিয়ে দিলে এতবার ক্ষমা চাওয়ার পরও ক্ষমা করলে না তার উপর সাতদিন কলেজ না আসার শাস্তি স্বরূপ রাগে ওরকম একটা কাজ করে ফেললাম।
.
বর্তমানে…..
.
.
কিন্তু ও আমাকে বার বার ইগনোর করে কেন আমি জানিনা।যখন ও আমাকে ইগনোর করে তখন এখানে (বুকের বা পাশটা দেখিয়ে) বড্ড ব্যাথা হয়।আর যখন ও আমার সাথে থাকে তখন নিজেকে পৃথিবর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হয়।আমি জানিনা ও আমাকে এতটা কষ্টে রেখে কি সুখ পায়। সে কি বুঝে না তার এই অবহেলা গুলো আমাকে প্রতিনিয়ত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়।
.
.
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি…চোঁখ থেকে পানি পরছে…উনি এখনও চোঁখ বন্ধ করে আছেন…সিল্কি চুলগুলো কপালের এসে পরছে…ইচ্ছে করছে নিজ হাতে চুলগুলো সরিয়ে দেই।কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিই…. ছিঃ কি বিচ্চিরি ভাবনা আচ্ছা আমি কি নির্লজ্জ হয়ে গেলাম…
.
একটা মানুষ দুইটা বছর ধরে আমাকে ভালোবাসে আর আমি কিনা কিছুই বুঝতে পারিনি শুধু ভুল বুঝে কষ্টই দিয়ে গেলাম।উনি ঠিকই বলেছেন আমি একটা বোকা ঢেড়শ।নাহলে এতদিন ধরে উনার ভালোবাসা কেন বুঝলাম না।আজ নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে।
.
.
তাহলে সেদিন রাতে উনি এসেছিলেন আমি ভুল দেখিনি।আচ্ছা আমি এমন মরার মত ঘুমাই কেন।ইসস!এভাবে যদি না ঘুমাতাম তাহলে তো উনার উপস্থিতি টের পেতাম।
.
উনি এখনও চোঁখ বুজে আছেন….চোঁখ বুজা অবস্থায় বললেন আমাকে দেখা শেষ হয়েছে রোজ নাকি আরো বাকি আছে!যদি দেখা শেষ হয়ে থাকে তাহলে কিছু তো বলো।আর আমি কার কথা বলছি সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারছো নাকি সেটাও বলে দিতে হবে!বলতে হতেও পারে অবশ্য বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরছি এইটুকু তো আমাকে অ্যাডজাস্ট করতেই হবে…(মুচকি হেসে)
.
.
উনার কথায় আমি চমকে উঠলাম…. উনার তো এখনও চোঁখ বন্ধ তাহলে বুঝলেন কি করে আমি উনাকে দেখছি আসলেই আমি নির্লজ্জ হয়ে গেছি নাহলে এতক্ষণ ধরে উনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলাম কি করে!ছিঃকি লজ্জা!কি লজ্জা!
.
উফফ রোজ এভাবে লজ্জা পাচ্ছ কেন?লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।তুমি কি জানো লজ্জা পেলে তোমাকে কত্ত কিউট লাগে।
.
জানার প্রয়োজন নাই।আচ্ছা আপনি এতদিন মেয়েটাকে বলেন নি কেন আপনি তাকে ভালোবাসেন?
.
এবার উনি চোঁখ খুলে আমার দিকে তাকালেন আর বলতে শুরু করলেন….
.
রোজ তুমি এখনও সেই পিচ্চি রয়ে গেলে কিচ্ছু বুঝো না।এত অবুঝ কেন তুমি হুম(ভ্রু নাচিয়ে)।আমি যখন মেয়েটার প্রেমে পরেছিলাম তখন সবেমাএ সে কলেজে পা দিয়েছে কতই বা বয়স ওর।ভালো মন্দের বুঝেই বা কি।।ওই বয়সটা খুব খারাপ রোজ মানুষ বুঝতেও পারে না কখন সে কি করে বসে।ওই সময়ের একটা ভুল তার জিবনকে উলট পালট করে দিতে পারে।হ্যাঁ তখন যদি আমি তাকে আমার মনের কথা বলতাম তাহলে মে বি সে আমাকে একসেপ্ট করতো।এতে ওর লেখাপড়ার ক্ষতি হতো।আর তখন হয়তো আমি বা ও যে কেউ নিজেকে আটকাতে না পেরে নিজেদের চাহিদা মেটাতে খারাপ কিছু করে বসতাম।কিন্তু তারপর….তারপর সাফার করতো কে জানো?
.
আমি জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
.
আমার রোজকেই সাফার করতে হতো।কারণ আমি ছেলে বলে সমাজ আমাকে ছেড়ে দিতো কিন্তু রোজকে ছাড়তো না।ওর জিবনটাকে নরকে পরিণত করে ছাড়তো।আর আমার সেই ফুটন্ত গোলাপ ফুঁটে উঠার আগেই ঝরে যেত। সেটা আমি চাইনি আমি আমার রেড রোজকে কখনও ঝরতে নয় সবসময় ফুটন্ত সতেজ দেখতে চেয়েছি।আজও বলতে চাইনি কিন্তু শাওনের সাথে তোমাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই বলছি।
.
.
উনার কথাগুলে শুনে চোঁখের পানি আপনাআপনি গড়িয়ে পরছে একটা মানুষ এত ভালো কি করে হয়। আমার কষ্ট আমার অপমান হবে বলে নিজে এতগুলো দিন কষ্ট পেয়ে গেছেন।এমন মানুষ এখনও পৃথিবীতে আছে।হুম আছে সেই মানুষটা আর কাউকে নয় আমাকেই ভালোবাসে। আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে দেখ পৃথিবী দেখ আমি উনাকে ভালোবেসে ভুল করিনি করিনি ভুল।
.
আমার কান্নার শব্দে উনি আমার দিকে ফিরে তাকালেন…. দুহাতে গাল চেপে বললেন এই পাগলি কাঁদছো কেন?আমাকে বল
.
কাঁদতে কাঁদতে হেচঁকি উঠে গেছে কোনো কিছু না ভেবেই উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমি।উনিও আষ্টে পৃষ্টে জড়ালেন আমায়।হয়তো উনিও কাঁদছেন।মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।আমি বুঝতে পারছি এই জায়গাটাই আমার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।এখানেই আমার সব ক্লান্তি অবসাদের অবসান।
.
ওকে জরিয়ে ধরে আজ খুব শান্তি লাগছে।কতদিন ওর থেকে দূরে ছিলাম।আজ একটু হালকা লাগছে।এই পিচ্চি আর কেঁদো না।তুমি কাঁদলে আমার কি হয় তোমাকে বুঝাতে পারব না।প্লিজ আর কেঁদো না।
.
উনার বুকে মাথা রেখেই বললাম হুমম সেজন্যই তো আপনি সবসময় আমাকে কাঁদান।(গাল ফুলিয়ে)রাগ দেখান মারেন বকেন!যত রাগ সব আমার বেলায়।আপনি খুব পঁচা একটা লোক একটুও ভালোবাসেন না আমাকে।
.
ওরে বাবা আমি আমার পিচ্চিটাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি বুঝি।শুধু কি আমার রাগ অভিমান দেখলে আর আমার ভালোবাসা সবটাই তোমার বেলায়।তোমাকে বকলে আমিই বকবো আর আদর করলে আমিই করবো অন্য কেউ নয় বুঝতে পারছো।।খুব অভিমান হয়েছে বুঝি আমার উপর।এই অভিমান ভাংগাতে কি করা যায় বলতো। হুম দাঁড়াও (ফিসফিস করে)তাহলে একটু আদর করে দেই হুম।আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিব না এখন থেকে শুধু ভালোবাসবো।
.
উনার কথায় আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি।আপনি একটা লুচু।একটা কথাও কি আপনার মুখে আটকায় না।
.
যাক বাবা আমি আবার কি করলাম যা করার তো তুমিই করলে।
.
আমি আমি কি করলাম।
.
এই তো আমাকে এতক্ষণ ধরে জড়িয়ে আমার বুকে শুয়ে আছো কই আমি কিছু বলেছি।এবার লুচু বলতে হলে তোমাকে বলতে হবে ওহহ সরি লুচু নয় লুচ্চি হবে।(হেসে হেসে)
.
উনার কথাটা শুনে হুশ ফিরলো(সোঁজা হয়ে বসে) সত্যি তো আমি এতক্ষণ ধরে উনার এত কাছে ছিলাম।মরমে মরে যাচ্ছি। ধুর এত কথারই বা কি আছে উনার বুকে মাথা রেখে ছিলাম এইটুকুই তো তাতে কি এমন এলো গেলো।আমাকে এমন লজ্জা দেয়ারই বা কি আছে ফাজিল কোথাকার।
.
ঠিক আছে ঠিক আছে এত লজ্জা পেতে হবে না।রোজ একটা কথার উওর দেবে….
.
মাথা নিচু করেই বললাম হুম
.
কলেজে যেদিন আমার হাত থেকে রক্ত ঝরেছিলো সেদিন তোমার চোঁখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখে ছিলাম।আমার হাত থেকে রক্ত ঝরায় আমার থেকে বেশি কষ্ট তুমি পাচ্ছিলে। তাহলে হঠাৎ কি হলো যে তুমি আমাকে ইগনোর করা শুরু করলে?কি করেছি আমি যে তুমি আমার সাথে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছো।
.
আআসলে (কি বলবো আর কি করেই বলবো)
.
হুম বলো।
.
আসলে তিশা আমাকে বলেছিলেো আপনি একটা মেয়েকে নিজের জিবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসেন আর সেদিন আপনিও বলেছিলেন আপনি কাউকে ভালোবাসেন কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি।তবে তিশার কথায় বিশ্বাস হলো কারন ও আর যাই করুক আমাকে মিথ্যা বলবে না।যাকে ভালোবাসি হঠাৎ যদি শুনি সে আমাকে নয় অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে তাহলে আমার কেমন লাগবে বলুন তো।(কথাগুলো এক নাগারে বলে গেলাম)।
.
তাহলে এই পিচ্চিটাও আমাকে ভালোবাসে।ওহহ মাই গড বলেই নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন।এতটাই কাছে যে আমি উনার বুকের হার্টবিট স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।
.
খুশিতে উনার চোঁখ দুটো চক চক করছে।জানো রোজ আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে।যেই পিচ্চিটাকে দুই বছর ধরে লুকিয়ে চুরিয়ে ভালোবেসে যাচ্ছি আজ জানতে পারলাম সেই পিচ্চিটাও আমাকে ভালোবাসে এর চাইতে সুখের আর কি হতে পারে বলতো।(শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
.
“এই বুকে শত সহস্র ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছি আমি”
” যার সবটাই পাবে তুমি”
তোকে বড্ড ভালোবাসি রে পাগলি! আমাকে কখনো ছেড়ে যাস না।তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।(মাথায় চুমু খেয়ে)
.
.
উনার কথাগুলো শুনে অঝরে চোঁখের পানি ঝরছে।কোনো শব্দ গলা দিয়ে বের হচ্ছে না।উনি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন যেন একটু ঢিল হলেই হারিয়ে যাবো। একহাতে উনার শার্ট খামছে ধরে কান্না করছি।উনার ছোঁয়ায় বার বার কেঁপে উঠছি।উনি এতো ভালোবাসেন আমায়।আচ্ছা আমি কি পারবো উনার মতো করে উনাকে ভালোবাসতে।
.
.
চলবে…..ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here