বড্ড ভালোবাসি পর্ব ৩৮+৩৯

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৩৮ এবং ৩৯
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
এক সপ্তাহ পর আমি ড্রয়িংরুমে বসে চকলেট খাচ্ছি।কোথা থেকে ভাবি এসে আমার সামনে মুখ ফুলিয়ে বসলো।আমি তার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার চকলেট খাওয়া শুরু করলাম।ভাবি সেই একইভাবে বসে আছে।এবার আমি মুখ না খুলে পারলাম না।
.
কি হয়েছে ভাবি।মন খারাপ ভাইয়ার সাথে কিছু কি হয়েছে।
.
ভাবি ছলছল চোঁখে আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না জানালো।তাহলে কি হয়েছে?
.
এবার ভাবি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।এরমধ্যে ভাইয়া আব্বুও অফিস থেকে ফিরে এসেছে।এমন ঘটনায় সবাই অবাক।আম্মুও রান্নাঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে রে মা!মাকে বল কেন কাঁদছিস।
.
এবার তার কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো আমি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে না জানালো সে কিছু করেনি তাহলে ভাবি এত কাঁদছে কেন?হঠাৎ রিহানের কথা আমার মাথায় এলো রিহানের কিছু…..না আর ভাবতে পারছিনা।
.
ভাবি কি হয়েছে তোমাদের বাসার সবাই ঠিক আছে তো?কথা বলছো না কেন আরে বাবা কি হয়েছে বলবে তো?আমার কথায় কিছুটা কান্না থামিয়ে বললো…বাসায় সবাই ঠিক আছে।
.
এতক্ষণে আমার প্রাণ ফিরে এলো।এবার ধীরে স্বস্তে বললাম তাহলে এত কাঁদছো কেন?
.
আজ বাসার সবার কথা খুব মনে পরছে।সকাল থেকে কিছু ভালো লাগছে না।কোনো কাজেও মন বসাতে পারছিনা।।আম্মু আমাকে একবার ও বাড়িতে যেতে দেবে প্লিজ।
.
ভাবির কথায় সবাই হেসে উঠলো এই ব্যাপার।এভাবে কেন বলছিস রে মা!আমাদের কি তোমার তেমন মানুষ মনে হয় যে যেতে দিবো না।।কালকেই রাহাত তোমাকে নিয়ে ঘুরে আসবে।
.
ভাইয়াঃনা মা কালকে আমাদের খুব সকালে একটা মিটিং আছে সেখানে এটেন্ড করতে হবে খুব আর্জেন্ট কাল হবে না।
.
এই তোদের বাপ ছেলের শুধু কাজ আর কাজ।তাহলে কবে যেতে পারবি?
.
চার পাঁচ দিন পর ফ্রী হবো এতদিন ওয়েট করার প্রয়োজন নেই।রাহা তুমি বরং পরীকে নিয়ে ঘুরে এসো।
.
ভাবি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো আর আমারর তো খুশিতে ড্যান্স করতে ইচ্ছা করছে।উনার সাথে দেখা হবে আহা কি আনন্দ!
.
রিহানদের বাড়িতে বসে বসে আন্টির সাথে আড্ডা দিচ্ছি। ভাবিকে খুব প্রানবন্ত লাগছে। নিজের বাড়িতে আসায় খুব হাসিখুশি এখন।ভাবি রান্নাঘরে বিরিয়ানি বানাতে ব্যস্ত তার ভাই খেতে খুব ভালোবাসে কিনা।রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আমার হাতে এক কাপ কফি ধরিয়ে করুন গলায় বললেন….
.
রোজ তুমি কফিটা প্লিজ ভাইয়াকে দিয়ে আসবে।আমিই দিতাম কিন্তু রান্না রেখে যেতে পারছিনা।দেখালাম একটু আগে বাসায় ডুকছে।প্লিজ দিয়ে আসবে।ভাবিকে আর না করতে পারলাম না।কফির কাপ হাতে নিয়ে উনার রুমে প্রবেশ করলাম।আজ নিয়ে দ্বিতীয়বার উনার রুমে প্রবেশ করলাম আমি।কি গুছালো আর পরিপাটি ছেলেদের রুমও যে এমন গুছানো থাকতে পারে সেটা জানা ছিলো না।। রুমে কাউকে দেখছি না। ফুলের সুবাসে মম করছে পুরো ঘরটায়। তাই কফিটা টেবিলে রেখে ব্যালকোনিতে চলে গেলাম।লাল গোলাপের কাজগুলোতে কি সুন্দর ফুল ফুঠেছে।এমন পরিবেশে যে কারো মন খারাপ থাকলেও নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে।রুমে এসে দেখি উনি শাওয়া নিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছেন।শার্ট পরেন নি শুধু থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আছেন। শরীরে ফোঁটা ফোঁটা পানির কণা এখনও লেপ্টে রয়েছে।আমি হা হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছি।
.
রোজজ!হোয়াট অ্যা সারপ্রাইজ তুমি এখানে কখন এলে?
.
রিহানের কথায় ঘোর কাটলো আমার।একটু আগে… ভাবির মনটা খুব খারাপ ছিলো ভাইয়ারও টাইম নেই তাই নিয়ে এসেছি।টেবিলে আপনার কফি রাখা আছে খেয়ে নেবেন আমি আসছি।
.
কেন তুমি কোথায় যাবে?
.
নিচে সবার সাথে গল্প করবো বলেই পেছন ফিরতে গেলেই রোজকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় রিহান।মাএ শাওয়ার নেওয়ায় শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে।।রোজ রিহানের বুকে সেই শীতলতা অনুভব করছে।নিজেকে রিহানের কাছ থেকে ছাড়াতে অনেক ছোটাছুটি করেছে কিন্তু কিছুতেই ছাড়াতে পারছেনা।ছাড়াতে গেলেই আরো শক্ত করে কোমড় চেপে ধরে আছে রিহান।
.
কি হচ্ছেটা কি ছাড়ুন! আমি নিচে যাবো।
.
কেন নিচে কি আছে।তোমার তো সারাক্ষণ এখানে থাকার কথা তাহলে এত নিচে নিচে করছো কেন?
.
নিচে সবাই আছে সবার সাথে গল্প করবো।আর এখানে শুধু আপনি আছেন তাই সবার কাছে যাবো।
.
আমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে…. আমার কাছে থাকতে প্রবলেম কি তেমার?
.
আপাদত আমার তেমন কোনো প্রবলেম নেই।।তবে যেটা আছে আপনি শার্ট পরে নিলেই সলভ হয়ে যাবে।
.
অহহ সরি বলেই শার্ট গায়ে জরিয়ে নিলেন উনি।এবার ঠিক আছে।(সোফায় বসতে বসতে)
.
হুম ওকে আমি আসছি।এই রইলো আপনার কফি।
.
রোজ শোন কফিটা আমার হাতে দিয়ে যাও।
.
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতো উনার হাতে কফি দিয়ে যেতে নিলেই উনি বলে উঠলেন…..
.
জানো তোমাকে আজ বউ বউ লাগছে।
.
কিহহ বউ! কই আমি তো বউ বউ লাগার মতে কোনো কিছু পরিনি তাহলে।
.
পরনি কিন্তু করেছো।
.
করেছি কি করেছি আমি?
.
এই যে বউয়ের মতো বরের জন্য কফি হাতে রুমে প্রবেশ করলে আবার বর ওয়াশরুমে বলে ওয়েট করে বসে রইলে এখন আবার আমার হাতে কফি ধরিয়ে তারপর যাচ্ছ।এটা বউ ছাড়া আর কেউ করবে। না ম্যাডাম করবে না(গাল টেনে)
.
কি অদ্ভুদ কথা বলছেন আপনি?এতটুকুর জন্য এতকিছু বললেন।
.
হুম এতক্ষণ বলেছি এবার করবো তুমি আমার জন্য এতকিছু করলে আর আমি তার বিনিময়ে তোমাকে কিছু দেব না তা কি হয়।(আমার দিকে এগুতে এগুতে)
.
ককি ককরবেন আআপনি?
.
তেমন কিছুনা।বলেই আমার কাছে আসতে যাবেন তখনই ভাবি এসে ডাক দিলো আর উনি ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘুরে দাঁড়ালেন। বেচারি ভাবি কি বলবে বুঝতে পারছেনা।আর আমার মনে হচ্ছে এক্ষুণি আমি মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে পারলে মন্দ হতো না।তবুও ভাবি মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে বললো আমি বড় অসময়ে চলে এসেছি সরি।টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে তোমরা আসো বলেই দৌড়ে পালালো আর আমি উনার দিকে রেগে তাকিয়ে আছি আর উনি করুন চোঁখে আমর দিকে হ্যাবলা কান্তের মতো চেয়ে আছেন।
.
.
.
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে।উনি উনার এক্সাম নিয়ে খুব বিজি। এতটাই বিজি যে আমার সাথে একাবারও দেখা করার টাইম তার হয় না।এদিকে তাকে দেখার জন্য যে আমি চাতক পাখির মতো চেয়ে আছি সে খবর কি তিনি জানেন!জানেন না নিশ্চয় জানলে তো এতদিনে একবারের জন্য হলেও আমার সাথে দেখা করতেন।একদিনে আমার উনার সাথে শুধু দিনে রুটিন করে দুইবার কথা হয়েছে।তাও আবার তেমন কিছু নয়…রোজ ভালো আছো?আমি কিন্তু ভালো নেই এই পড়া নামক প্যারার জন্য কতই না অশান্তিতে থাকতে হচ্ছে।ঘুম খাওয়া দাওয়া এমনকি তোমার সাথেও দেখা করতে পারছি না।।তুমি কিন্তু আমাকে নিয়ে কোনো টেনশন করবে না।আমি ভালোই আছি।আর শোন কোনো অনিয়ম করবে না।যদি শুনেছি খাওয়া ঘুম ছেড়ে দিয়েছো তাহলে একটা মারও মাটিতে পরবেনা ঠিক আছে রাখছি ব্যস এতটুকুই।আজ উনার এক্সাম শেষ।তার মানে উনার সাথে দেখা হওয়ার চান্স ৯৯% তাই অনেক আশা নিয়ে ভার্সিটি গেলাম।কিন্তু আজকেও আমাকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছিলো।উনার উপর সেই লেভেলের রাগ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আমার হাত ধরে আটকে দিলো।আমি থমকে গেলাম পেছনে তাকিয়ে দেখি রিহান ভাইয়া।উনার চেহারা খুব ফ্যাঁকাশে দেখাচ্ছে এতদিনের এক্সামের দখলে হয়তো শরীরের যত্ন নেওয়া হয় না তাই।এভাবে উনাকে দেখে মুহূর্তেই মুখে হাসিও ফুঁটে উঠলো।এতদিন পরে একলিস্ট উনাকে একবার দেখতে তো পেলাম।উনি আমার দিকে তৃষ্ণার্ত চোঁখে তাকিয়ে আছেন।সামনে তাকিয়ে দেখলাম আবির ভাইয়া আর তিশাও দাঁড়িয়ে আছে।
.
রোজ আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো।এবার চলো খেতে যাবো আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
.
উনার কথা শুনে চোঁখ ফিরিয়ে বললাম….আমার খিদা পায়নি আমি যাব না আমি বাড়ি যাব।
.
কেন রোজ!রাগ করেছে।তুমি তো জানো আমি কত বিজি ছিলাম।তাই তোমার সাথে দেখা করতে পারিনি প্লিজ রাগ করো না।আর আজকের পর থেকে আবারও বিজি হয়ে যাবো।প্লিজ রাগ করে থেকো না।
.
না রাগ করার কি আছে আপনি তো বিজি ছিলেন সেটা আমি জানি।তার জন্য আপনাকে কিছু বলতে হবে না।
.
তাহলে একটু হাসো। দেখ আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা মনে হচ্ছে কতদিন খাইনি আমার এক্ষুণি খাবার চাই ই চাইই।বাড়িতে গিয়েই খেতাম কিন্তু কি করবো বলো বাড়িতে যে বউ নেই তাই খেতে ভালো লাগেনা।
.
উনার কথায় না হেসে থাকতে পারলাম না।তাই হেসেই দিলাম।
.
এইতো এইবার ঠিক আছে।তাহলে চলো যাওয়া যাক।
:
:
#Part :- 39
:
:
:- রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমরা চারজন।এখন খাবারের অত্যাচার চলছে।খাওয়া শেষ হতে না হতেই তিশার কল আসায় তিশা একটু বাইরে গেলো।আবির ভাইয়াও কোথাও একটা চলে গেলো।।বাকী রইলাম আমি আর উনি।আমার খাওয়াও শেষ।দুজনে চুপচাপ বসে আছি।নীরবতা ভেঙে উনি হঠাৎ বলে উঠলেন…..

.
আচ্ছা রোজ হঠাৎ যদি জানতে পারো আমি আর তোমাকে ভালোবাসি না বা আমার লাইফে তোমাকে চাই না তাহলে তুমি কি করবে।
.
এমন কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরলো।কি বলছেন উনি এসব।আমি কোনো কথা না বলে শুধু উনার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।উনি আবারও বললেন…..
.
কি হলো রোজ কথা বলছো না যে।আচ্ছা আরো ইজি করে দিচ্ছি যদি জানতে পারো আমার লাইফে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই তাহলে…..
.
উনার কথা শুনে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম আমি।কিছু বলার মতো মানসিক অবস্থাও আমার নেই।শুধু কেঁদেই যাচ্ছি।
.
কি হলো এভাবে কাঁদছো কেন?আমি তো সিম্পল একটা প্রশ্ন করলাম আর তুমি কাঁদছো।
.
এটাকে আপনার সিম্পল প্রশ্ন মনে হচ্ছে(নাক টেনে)
.
হুম সিম্পলই তো।কারণ আমি তো শুধু তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি ছেড়ে তো আর যাইনি।
.
এটা আপনার কাছে সিম্পল মনে হচ্ছে কিন্তু আমার তো তা মনে হচ্ছে না।আমার কাছে এটা আমার জীবন মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।আপনি জানেন না আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো কিনা।আর হুম ছেড়ে যাননি যেতে কতক্ষণ। আজকে যখন কথাটা তুলতে পেরেছেন তাহলে নিশ্চয় ছেড়ে যাবেন বলেই বলছেন।ঠিক আছে আপনি যদি আমাকে ছেড়ে ভালো থাকতে পারেন তাহলে আমিও নিশ্চয় ভালো থাকতে না পারি কিন্তু থাকতে তো পারবো।
.
এই পিচ্চি এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন?আমি তো ফান করেছি।
.
এটা কোনো ফান হতে পারেনা।আপনার লাইফে নতুন কারো আগমন হয়েছে নিশ্চয়। হবেই তো অফিসে কত সুন্দরি মেয়ে আছে তাদের মধ্যে কাউকে মনে ধরেছে তাই না।(অভিমানী সুরে)
.
না রে পিচ্চি!তোকে ছাড়া এ জীবনে কাউকে মনে ধরবে না।তুই যে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে গেছিস। জানিস পাগলি তোকে ছাড়া থাকবো এটা কখনও আমি কল্পনাও করতে পারি না।আর এভাবে কাঁদিস না তোর কান্না যে আমার সহ্য হয় না।আর কাঁদিস না।(চোঁখ মুছতে মুছতে)
.
হুম তার জন্যই আপনি সবসময় আমাকে কাঁদান।আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।আপনার জন্যই যে আমি বেঁচে আছি।যদি আমাকে ছাড়া কখনও অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে ভালো থাকতে চাইবেন তো পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো হুহ।
.
ওরে বাবা!তাই নাকি তখন লেংড়া বর তোমার ভালো লাগবে।
.
হুম লাগবে কারণ লেংড়া হলেও আমারই থাকবে আর কারো হবে না।
.
আমাদের কথার মাঝেই তিশা এসে হাজির।সে আর এখানে এক মুহূর্তও থাকবেনা।তাকে এক্ষুণি বাড়ি যেতেই হবে কিন্তু কেন জিজ্ঞেস করলে সে বলবে না।তবে ওর মুখ দেখে অন্যকিছু মনে হচ্ছে আমার।খুব রেগে আছে কারো উপর হঠাৎ চোখ গেলো ওর গলার দিকে গলায় আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট। আমি ওকে জিজ্ঞেস করতেই বললো বান্দর খামছি দিছে।তখনই আবির ভাই পাশ থেকে বললো…..
.
হেই তুমি আবার আমাকে বানর বলছো।আজকের পরও তোমার শিক্ষা হয়নি।এই বাদর বাদর শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাফালা হয়ে গেছে।এই কোন এঙ্গেল থেকে আমাকে তোমার বানর মনে হয় তেমার।
.
ওদের কথাশুনে আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি।তলে তলে এতকিছু চলছে আর আমি তার কিছুই জানতে পারলাম না।আর রিহান মুখ চেপে হাসছে।
.
সব এঙ্গেল থেকেই।আপনার ব্যবহার চাল চলন সব।
.
কি বললে আমার চাল চলন বাদরের মতো।তখনই আমি বললাম…..
.
ওয়েট ওয়েট আবির ভাইয়া তুমিই তাহলে সেই বাদর।যে তিশাকে এত জ্বালান জ্বালাচ্ছে। ওহহ গড আর আমি কিছুই জানিনা।আমার কথা শুনে আবির ভাইয়া আর তিশা অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকালো।এতক্ষণ ওদের মনেও ছিলো না ওরা দুজন ছাড়াও আমরা এখানে আছি।আমার কথায় আবির ভাইয়া আর তিশা কি বলবে বুঝতে পারছে না।
.
আবিরঃনা মানে ইয়ে ওই আরকি।আবির ভাইয়ার কথায় আমি আর রিহান হেসে উঠলাম।তারপর আমি বললাম…..
.
ভাইয়া আপনার এটা কিন্তু ঠিক হয়নি।আমার বেস্টু না হয় আপনাকে বাদর বলেই ফেলেছে তার জন্য আপনি এভাবে ওকে খামচি দেবেন। দেখুন তো এমন সুন্দর গলা কেমন লাল হয়ে আছে।
.
আমার কথায় উনি তিশার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন…..বেশ হয়েছে তবুও তো শিক্ষা হয়নি দেখছি।শোন তিশা আর কখনো বানর বললে এর থেকে খারাপ কিছু হবে তোমার সাথে হুহ।
.
তিশা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এই খামচি জিনিসটা শুনেই একদম চুপ হয়ে গেছে।আবির ভাইয়াও যে এমন করবে এটা আমার ভাবনারও বাহিরে ছিলো।তবে আবারও মনে হলো কার দোস্ত দেখতে হবে তো।একজন রাক্ষস তো আরেকজন বানর কি ইন্টারেস্টিং নাম আপনাদের বলেই হাসতে লাগলাম আমরা।রিহান বলে উঠলো….
.
এই তোমরা দুই বান্ধুবীই একমাত্র যারা আমাদের এত সুন্দর সুন্দর নাম উপহার দিলো।এগুলো তোমাদের দ্বারাই পসিবল।আমার পক্ষ থেকেও তোমাদের নাম ঠিক করা আছে একজন পেত্নী তো আরেকজন বান্দরনী বলেই হুহা করে হেসে উঠলেন দুজনে।
.
.
উনি আমাদের বাসায় এসে আমাকে পৌছে দিয়ে ভাবির সাথে দেখা করে গেছেন।এভাবেই কেটে যাচ্ছে আমাদের দিনগুলো।কিন্তু কয়েকদিন ধরে দেখছি রিহান আমার সাথে আগের মতো তেমন কথা বলে না ইগনোর করে কিন্তু কেন আমি তা জানিনা।আমি কথা বলতে গেলে বিজি বলে কাটিয়ে দেয়।আর ভালো লাগছে না।এখন হারে হারে টের পাচ্ছি প্রেম করার কি জ্বালা।না পারছি কথা বলতে আর না পারছি না বলে থাকতে।
.
আজ দুদিন হলো উনার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।অনেকবার ফোনে ট্রাই করার পরও পাচ্ছি না।এখন শুধু সেদিনের উনার বলা কথাগুলো কানে বাজছে।তাহলে কি সত্যি উনি আর আমাকে চান না।হবে হয়তো নাহলে আমার কল না তুলে উনি থাকতে পারতেন না।হ্যাঁ জানি অনেক বিজি থাকেন তাই বলে আমার সাথে কথার জন্য এক মিনিট সময়ও কি তার হয়না।কাউকে পেয়ে কি উনি আমাকে ভুলে গেলেন পাল্টে গেলেন।জানি না জানি না আমি কিচ্ছু জানিনা।আমি যখন এসব ভাবনায় ডুবে আছি তখন আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আব্বু আম্মু ভাইয়া ভাবি সবাই হুড়মুড়িয়ে আমার রুমে ঢুকলো।আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি।সবার মুখেই হাসি কিন্তু কিসের জন্য জানিনা।আম্মু আমার কাছে এসে বসে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো আর বলল…..
.
আমার সেই ছোট্র মেয়েটা কবে এত বড় হয়ে গেলো গো।আজ বাদে কাল শ্বশুর বাড়ি যাবে। আমার মেয়েটা যে অবুজ পারবে তো ওখানে মানিয়ে নিতে।আম্মুর কথার কোনো মানে আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।কি বলছেন এসব। ভাইয়া বলে উঠলো…..
.
আম্মু তুমি চিন্তা করো না আমার পরী সব পারবে।কিরে পরী পারবিনা।আমি তো কারোর কোনো কথা বুঝতেই পারছিনা।ভাইয়া তোমরা কি বলছো কার শ্বশুর বাড়ি কে যাবে কি হয়েছে।
.
সবাই একসাথে বলে উঠলো তোর শ্বশুর বাড়ি।কথাটা শুনা মাএই আমার নিশ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিছু বলতে পারছিনা শুধু এটাই ভাবছি কি করে কি হলো।আমি তো রিহানকে ছাড়া কাউকে তাহলে এখন কি হবে।আজ নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা।যা শুনছি সত্যি তো নাকি ঘুম ভাঙ্গলেই সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।এসব ভাবতে ভাবতে চোঁখ থেকে পানি বেড়িয়ে এলো আমার…..
.
আম্মু আর আব্বু মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলছে….মেয়ে হয়ে জন্মেছিস একদিন তো শ্বশুর বাড়ি যেতেই হবে রে মা কাঁদিস না।আমি আম্মুর বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদছি আম্মুও কাঁদছে।আব্বু বলল….এত কাঁদছিস কেন আমরা তো কালই তোর বিয়ে দিচ্ছি না আগামীকাল এনগেজমেন্ট একমাস পর বিয়ে।ছেলে নিজে তোকে পছন্দ করেছে।আর ওরা সবাই তোকে চেনে তাই কনে দেখার পর্বের দরকার পরেনি।এই নে ছবি দেখে বল তোর পছন্দ হয়েছে কিনা।তবে নাহলে কিছু করার নেই মা আমি কথা দিয়ে ফেলেছি এ বিয়ে তোমাকে করতেই হবে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।ছবি দেখার বিন্দুমাএ ইচ্ছাও আমার নেই তাই ছুড়ে মেঝেতে ফেলে দিলাম।আর আমি জানি আব্বুর কথাই শেষ কথা আর কারো কিছু করার নেই।যাই হয়ে যাক না কেন আব্বু নিজের কথা রাখবেই।এক এক করে সবাই রুম থেকে চলে গেলো শুধু ভাবি রইলো।আমি ভাবিকে জড়িয়ে কাঁদছি কিন্তু তারও কিছু করার নেই…..কি করবে রোজ ভাগ্যে যেটা আছে সেটা মেনে নাও বলে সেও চলে গেলো।
.
আমি মেঝেতে বসে কাঁদছি।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।আজ সবাই থেকেও আমার কষ্ট ফিল করার মতো কেউ নেই।যাকে ভালোবাসি সেও হয়তো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আমার থেকে।এখন কি করবো আমি যাকে ভালোবাসি সেও এখন কথা বলে না তাহলে কি করে আটকাবো এই বিয়ে।আচ্ছা রিহান কি এ ব্যাপারে কিছু জানে। এজন্যই কি তাহলে ও আমাকে ইগনোর করছে কিন্তু তা কি করে সম্ভব আমি যেহেতু জানিনা তাহলে রিহানও জানবে না।কিন্তু এখন আমি কি করবো ভেবে বিছানা থেকে হাতটা হাতে নিয়ে উনাকে আবারও কল দিলাম কিন্তু আজকে ফোন অফ।বারবার কল করেও উনাকে পেলাম না।তাই নিজের ভাগ্যকে মেনে নেওয়া ছাড়া আমার কাছে বর কোনো উপায় রইলো না।
.
.
আজ আমার এনগেজমেন্ট এলাহি আয়োজন করা হয়েছে।সকল আত্মীয় স্বজনদের ইনভাইট করা হয়েছে তিশাও এসেছে। আমাকে একটা গোলাপী রঙের ভারী লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে সাথে হালকা সাজ ছেলের নাকি অতিরিক্ত মেকাপ সুন্দরী ভালো লাগে না।তাই সিম্পল ভাবেই সাজানো হয়েছে।হঠাৎ সামনে দেখলাম আবির ভাইয়া আর রিহানকে।উনার পুরো গেটআপ ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট।কালারটায় বেশ মানিয়েছে উনাকে।হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলছেন কিন্তু আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না।এটা দেখে চোঁখের পানি আটকে রাখতে পারছিনা।যাকে এতটা বিশ্বাস করতাম ভালোবাসতাম সে শেষ পর্যন্ত আমার সাথে এমন করলো।ঠিক আছে আমি আর কাঁদবো না উনি যখন নিজের মতো ভালো আছেন তাহলে আমি কেন পারবো না।চোখের পানি মুছে পারতে হবে আমাকে।আমিও উনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছি।সবাই আমার মুখের হাসিটাই দেখছে কিন্তু আড়ালে থাকা চাপা কষ্ট কেউ বুঝতে পারছে না।এমনকি রিহানও না।ভালো তো সবাই যে আমার ভালো চায় আর সেই ভালোই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো।আমি জানি একমাত্র আমার ভাইয়া ছাড়া আর কেউ আমাকে বুঝবে না কিন্তু ভাইয়াকে কি বলবো আমি।যে আগে রিহান আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু এখন চুপচাপ সব মেনে নিচ্ছে।পারবো না নিজেকে এতটা ছোট করতে।আমার সব আবদার ভাইয়া মিটিয়েছে আজ যদি বলি আমি রিহানকে চাই তাহলে যে করেই হোক রিহানকে এনে দেবে আমায়। কিন্তু উনি!উনি তো আমাকে আর চান না তাহলে কি দরকার ঝামেলা বাড়ানোর থাকনা সবাই ভালো আমি না হয় একটু খারাপই থাকবো।
.
.
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here