বড্ড ভালোবাসি পর্ব ৪০+৪১

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৪০ এবং ৪১
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
একটু পর এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান শুরু হবে।যতো সময় যাচ্ছে তত নিজেকে আরো অসহায় লাগছে।যেই হাতে একদিন উনি নিজ হাতে উনার নামের আংটি পরিয়ে ছিলেন আজ সেই হাতে কি করে অন্য কারো নামের আংটি পরবো আমি।উনার এমন বিহেভিয়ারেরর কারণ কেউই বুঝতে পারছে না।ব্যাপারটায় তিশাও খুব আপসেট।সোফায় বসে আছি আমি হঠাৎ এসে আমার সামনে বসলেন উনি।উনাকে বসতে দেখে কিছুটা হলেও খুশি হলাম হয়তো এক্ষুণি বলবেন রোজ আমি এই বিয়ে হতে দেব না তুমি শুধু আমার আর কারোর নও।কিন্তু না উনি তা করলেন না।আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন….
.
তোমাকে এই কালারটায় খুব মানিয়েছে।তোমার হবু বর তোমাকে দেখে চোঁখ ফিরাতে পারবে না।আচ্ছা কনের সাজে কি তোমায় এমন দেখাবে না এর থেকে আরো হাজার গুণ ভালো দেখাবে।
.
উনার কথায় চোঁখের পানি লুকিয়ে মৃদু হাসলাম আমি।হুম তা হয়তো হবে।আপনি এখনও এত স্বাভাবিক আছেন কি করে?
.
কেন?(ভ্রু কুঁচকে)স্বাভাবিক না থাকার মতো কি কিছু হয়েছে।
.
উনার কথাগুলো শোনে কেমন একটা ঘোরে মধ্যে আছি আমি।কে উনি?উনি কি সেই আমার রিহান না এ আমার রিহান হতে পারে না।আমার রিহান কখনও এসবব মেনে নিতো না।আজকে আপনি খুব খুশী তাইনা।
.
অভিয়াসলি!তুমি জানো আজকের মতো এত খুশী আর কখনও কোনো কিছুতে হইনি আমি।কেন আজ তুমি খুশী নও?
.
গাড় থেকে নামাতে পারছেন আমায় তাইতো।আমি এতটা বিরক্তিকর হয়ে উঠেছি আপনার কাছে।আপনি জানেন না আমি আজ খুশী কিনা।হুম আজ আমি খুব খুশী।(মলিন হাসি দিয়ে)
.
হুম গুড আমি তো তোমাকে সবসময় হাসি খুশি দেখতে চাই।
.
আপনি চলে যান আমার সামনে থেকে পারছিনা সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে আমার যান চলে যান আপনি।
.
নো আমি এখন যাবো না।তুমি কুকুরের মতে তাড়িয়ে দিলেও যাবো না।
.
কেন করলেন আমার সাথে এমন কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার।আপনার লজ্জা করলো না আমাকে এভাবে ঠকাতে ধোকা দিতে।ছিঃ নিজের উপর আজ ঘৃণা হচ্ছে।আমি আপনার মতে কাউকে ছিঃ বলেই দৌড়ে রুমের দিকে চলে গেলাম।পেছনে উনি ডেকে চলেছেন ক্রমাগত কিন্তু আমার কোনো রেসপন্স নেই।রুমে এসেই ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসে কান্নায় ব্যস্ত আমি।রিহানের সামনে থাকতে পারছিলাম না আমি।কষ্ট হচ্ছিলো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।এখন যে আমার নিশ্বাসের বড় প্রয়োজন।কন্টিনিউয়াসলি দরজায় ডেকে চলেছেন উনি কিন্তু আমার কোনো সাড়া নেই।
.
রোজ দরজা খুলো একটা বার আমার কথাটা তো শোন।প্লিজ রোজ।ওহহ শীট(দরজায় ঘুষি দিয়ে)
.
আবিরঃকেন এমন করলি যদি রাগে খারাপ কিছু করে বসে।
.
না না ও কিছু করতে পারে না।আমাকে ছেড়ে কি করে থাকবে পারবে না ও।তুই ভুল বলছিস।
.
হুম শান্ত হ।দেখ কি হয়
.
আমার রুমে আসার সবরকম পথ বন্ধ করে দিয়েছি আমি।তাই কেউ রুমে ঢুকতে পারেনি।কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে হাসি মুখে বের হলাম আমি।আমাকে দেখে তিশা আবির ভাইয়া সবাই অবাক হলো।।কি হলো তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?ওখানে না আজ অনুষ্ঠান তাহলে এখানে কি করছো।তাড়াতাড়ি চলো আমার আর তর সইছে না।
.
তিশাঃতুই দরজা বন্ধ করে কি করছিলি।
.
দেখনা তিশা আমার সব মেকআপ নষ্ট হয়ে গেছে তাই আবার দিয়ে আসলাম।ভালো করিনি।
.
হুম চল।বলে সবাই চলে গেলো আর রিহান এখনও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।আমি একটু পিছিয়ে উনার কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম….
.
.
কি ভেবেছিলেন আপনি আপনার শোকে পাথর হয়ে গেছি আমি মরে যাচ্ছি নো মিঃ রিহান আজকের পর থেকে আপনার জন্য এক ফোটা চোখের জলও ফেলবো না আমি।
.
আমার কথায় মুচকি হেসে থ্যাংকস বলে চলে গেলেন উনি।উনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না আমি।
.
স্টেজে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছি।এক্ষুণি আংটি পরানো হবে আমাকে।হাত পা কাঁপছে আমার।হঠাৎ কেউ একজন আংটি পরানোর জন্য হাত ধরলো কিন্তু তাকে দেখার এতটুকু ইচ্ছা নেই আমার। আমি তো রিহানকে খুঁজছি।কিন্তু কোথাও নেই হয়তো চলে গেছে ভালোই হয়েছে।
.
আংটি পরানো শেষ আমি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছি।এখনও লোকটা আমার হাত ধরে আছে।কানে পরিচিত কারো গলা পেয়ে সামনে তাকালাম। রিহান উনাকে দেখে আমি শকড উনি আমাকে আংটি পরিয়েছেন।উনি ফিসফিস করে বললেন……
.
আর কতক্ষণ মুখ গোমরা করে থাকবে পিচ্চি এবার একটু হাসো।তুমি তো আমারই হচ্ছ পার্লামেন্টলি তাহলে এত দুঃখ কিসের তোমার।আর কাঁদবে না বলে দিলাম এভাবে কাঁদলে কিন্তু তোমাকে খুব বকবো।
.
উনার বলা কথাগুলো বার বার কানে বারি খাচ্ছে আমার।কি বললেন উনি তাহলে উনার সাথেই এনগেইজমেন্ট হচ্ছে আমার।পাশ থেকে ভাবি এসে মুচকি হেসে আমার হাতে একটা আংটি ধরিয়ে দিলেন।কাঁপা কাঁপা হাতে আংটি পরিয়ে দিলাম উনার হাতে উনি তাতে একটা চুমু খেলেন।কারো কোনো কথা কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না।মাথা ঘুরছে চারপাশ কেমন ঝাপসা লাগছে।চোঁখ খুলে তাকাতে পারছিনা চোখ খুলতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।উনি আমার হাত ধরে হয়তো জিজ্ঞেস করছেন কি হয়েছে কিন্তু কথা বলতে পারছিনা আমি।নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলাম উনার উপরে।আস্তে আস্তে চোঁখ দুটো বুজে নিলাম সবাই ডাকাডাকি করছে তারপর কিছু মনে নেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি সেখানেই।
.
জ্ঞান ফিরে আধো আধো চোঁখে তাকিয়ে নিজেকে আমার রুমে আবিষ্কার করি।রুমে কেউ নেই আমি উঠতে যাব তখনই উনি এসে শুইয়ে দিলেন আমায়।কি হলো ম্যাডাম ঘুম ভেঙ্গেছে আপনার?খুব ভয় পাইলে দিয়েছিলে।তুমি খাওয়া দাওয়া ছেড়েছো কেন হুম।আমি উনার কোনো প্রশ্নের উওর না দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। তখনই এক এক করে সবাই রুমে প্রবেশ করলো।
.
আম্মু আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আম্মু কেঁদে কেঁদে অস্তির তাই আব্বু আম্মুকে নুয়ে বাইরে গেলো। ভাইয়া এসে আমার পাশে বসে বললো….. এখন কেমন লাগছে পরী?
.
ভালো লাগছে ভাইয়া।কি হয়েছিলো আমার?
.
তুই দুই ঘন্টা যাবত ঘুমে ছিলো।প্রথমে জ্ঞান হারিয়ে ছিলিস ডক্টর আঙ্কেল এসে কিছু মেডিসিন দিয়ে গেছেন আর ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়েছেন।রিহান ডক্টর কি বললো….
.
উনি বলেছেন ভয়ের কোনো কারণ নেই।অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো না করায় শরীর অনেক উইক হয়ে গেছে আর হঠাৎ ঘটে যাওয়া শকড নিতে পারেনি তাই জ্ঞান হারিয়ে।
.
ওহহ!পরী তুই কি ভেবেছিলি আমরা তোর মতামত না নিয়ে তোকে নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছি।নারে পাগলী আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম রিহান তোকে ভালোবাসে।
.
ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম আমি কি করে?
.
যেদিন তোদের ভার্সিটিতে রিহানকে প্রথম দেখি সেদিনই বুঝে গেছিলাম ও তোকে কতটা ভালোবাসে।তোকে যখন পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন প্রতিটি মুহূর্তে ওর চোখে তোকে হারানোর ভয় ছিলো।হাসপিটালের কলিডোরে ওর কপালে তোর জন্য চিন্তার ভাঁজ দেখেছি আমি।সেদিন যখন ছাদে রিহান ওর ভালোবাসার কথা বলছিলো আমি একবারের জন্য নাম জিজ্ঞেস করিনি কেন জানিস কারণ আমি জানি সে তুই। তাই নাম জিজ্ঞেস করে তোদের অপ্রস্তুত করিনি।এ ব্যাপারে সিওর হওয়ার জন্য সেদিনই রাহাকে জিজ্ঞেস করি আর ও সব বলে দেয়।তারপর মা বাবার সাথে কথা বলে দিনক্ষণ ঠিক করি আমি তোকে জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু রিহানের তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার খুব ইচ্ছা হলো।আর আজ তোকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে ও নিজেই সারপ্রাইজড।
.
কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও একটা জিনিস বুঝে গেছি তুই বড় হয়ে গেছিস সকলের মুখে হাসি ফুঁটানোর জন্য কষ্ট ভুলে হাসতে শিখে গেছিস।জানিস আমি ভেবেছিলাম তুই আর কাউকে না হোক আমাকে বলবি কিন্তু না বললি না।
.
ভাইয়া রাগ করো না।আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।কি বলতাম আমি ও তো এখন আমাকে আর ভালোবাসে না।শুধু শুধু ঝামেলা বাড়বে তাই চুপ ছিলাম।
.
নারে পাগলী আমি রাগ করিনি।ঠিক আছে তুই রেস্ট নে। চলো সবাই আমরা যাই।এখন ওদের একটু একা থাকা খুব জরুরি।ভাইয়া সবাইকে নিয়ে চলে গেলো।
:
:
#Part :- 41
:
:
:- ভাইয়া সবাইকে নিয়ে যাওয়ার পর উনি এসে আমার পাশে বসলেন।আমি একটু নড়েচড়ে অন্যদিক ফিরে শুয়ে আছি।উনি হঠাৎ আমার হাত শক্ত করে ধরলেন।আমি এখনও একইভাবে শুয়ে আছি কোনো সাড়াশব্দ নেই।আমার নীরবতা দেখে উনি বললেন….
.
রোজ….
.
……..
.
কথা বলবে না আমার সাথে।
.
নিশ্চুপ
.
কি হলো কথা বলছো না কেন।প্লিজ রোজ কথা বলো আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।বিশ্বাস করো আমি ভাবিনি তুই এতটা কষ্ট পাবে আমি জাস্ট সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তার জন্য যে তুমি এতটা কষ্ট পাবে আমি সেটা কখনও ভেবে দেখিনি।হুম খুব বড় ভুল করে ফেলেছি।এই রোজ আমাকে ক্ষমা করা যায় না।
.
কথাগুলো বলার সময় বার বার জড়িয়ে যাচ্ছিলো বুঝতে পারছি উনি কাঁদছেন।আমিও কাঁদছি কিন্তু উনার চোঁখের আড়ালে।
.
ঠিক আছে তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি এখন তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন আর আমি এখানে থাকলে তোমার খুব সমস্যা হবে।উনি চলে যেতে নিলেই উনার হাত ধরে ফেলি আমি।একটু ঘুরে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।ধুম করে উঠে উনাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম আমি।মাথায় টুপ টুপ ঠান্ডা পানির স্পর্শে বুঝতে পারলাম উনিও কাঁদছেন।
.
কেন করলেন এমন?আমার তো খুব কষ্ট হচ্ছিলো।ইচ্ছা করছিলো নিজেকে শেষ করে দেই কিন্তু ভাইয়া আব্বু আম্মুকে ছেড়ে যাওয়ার সাহস আমার নেই তাই পারিনি।তবে এটাও ঠিক আজকে শুধু এনগেইজমেন্ট ছিলো পরে কি করতাম জানি না হয়তো মরে…..
.
চুপ একদম চুপ আর কখনো মরার কথা তোমার মুখে যেন না শুনি।এটা জেনে রেখো রোজ তুমি না থাকলে আমিও থাকবো না শেষ করে দেবো নিজেকে।তুমি ছাড়া বাঁচতে পারবো না আমি।(শক্ত করে ধরে)
.
এহহ!এত কষ্ট দিয়ে এখন এসেছে আমাকে ধমকাতে।কষ্ট দেওয়ার সময় মনে ছিলো না যদি আমি কিছু করে বসি।এখন এসেছে ভালোবাসা দেখাতে।ভালোবাসাগুলো এখন টুপ টুপ করে পরছে হুহ।
.
আমার কথায় হাসলেন উনি।আচ্ছানা আমি না হয় তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এসব করেছি কিন্তু তুমি!তুমি তখন আমায় কি বললে আমি তোমাকে ঠকিয়েছি ধোঁকা দিয়েছি এই তোমার বিশ্বাস।তোমাকে আগেই বলেছিলাম রোজ ভালোবাসার প্রথম এবং প্রধান ভিওি হলো বিশ্বাস কিন্তু তুমি আমার উপর সেই বিশ্বাসই রাখতে পারলে না।তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমাকে ঠকাতে পারি?জানো তোমার বলা প্রতিটি কথা তীরের মতো বাঁধছিলো।
.
আমি কি করে ভাববো না সেটা বলুন।আপনি আমার সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন।আমি কল দিলেই আপনি বিজি।আমার এনগেইজমেন্ট সেটা পর্যন্ত জানাতে পারিনি।তারপর আজকে আমার দিকে একবার ফিরেও তাকালেন না বরং আরো সবার সাথে কি হাসিখুশী হয়ে কথা বললেন।যেন আমার বিয়ে হচ্ছে শুনে আপনি মহাখুশী।আপনার খুশী যেন ধরছে না তাই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি।আর তখন আমার জায়গায় আপনি থাকলেও সেই একি কাজ করতেন।
.
তারজন্য তুমি না জেনে আমাকে ধোঁকাবাজ ঠক এসব বলবে?
.
হুম তখন জানতাম না তাই বলে দিয়েছি।এখন জেনে গেছি তাই সরি বলছি।আই’এম সরি!সরি ফর এভরিথিং।
.
ওকে এমন ভুল যেন আর না হয়।তুমি বসো আমি এক্ষুণি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
.
না আমি এখন খাবো না।আমি এখন আপনার সাথে অনেক গল্প করবো।
.
আর তো মাএ কিছুদিন পিচ্চি তারপর আমরা একসাথে থাকবো কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।জানো এই একমাস পর বিয়েটা না আমার মানতে বড় কষ্ট হচ্ছে।এক সপ্তাহ পর হলে কি হতো।(মুখ গোমরা করে)
.
উনার কথায় হেসে উঠলাম আমি।আপনার দেখছি আর তর সইছে না।আমার কিন্তু খুব ভালো লাগছে।
.
তাই নাকি খুব ভালো।আচ্ছা এবার ছাড়ো তোমাকে খাইয়ে আমায় বাসায় যেতে হবে তো নাকি।
.
হুমম।না খেলে হয় না।
.
না হয় না বলেলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।কিছুক্ষণ পর খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকলেন।আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন আর উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি।
.
কি এতো ভাবছো রোজ।
.
হুম!জানেন আজকের দিনটাকে কেমন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে আমার।আমি কখনও ভাবিনি এত ইজিলি এই দিনটা আমার কাছে ধরা দেবে।এতদিন এই একটা দিনের অপেক্ষায় ছিলাম আমি।আর আজ এতদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজকে আমার স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলো।আচ্ছা আপনি আমায় একটা চিমটি কাটবে?না মানে আমি স্বপ্নে দেখছি নাকি ঘুম ভাঙ্গলেই সব শেষ।
.
খাবারের প্লেট রেখে আমায় দু বাহু জড়িয়ে বললেন উনি…..স্বপ্ন নয় রে পিচ্চি এগুলো সব সত্যি।আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমরা এক হতে চলেছি।বলেই কপালে ভালোবাসার পরস একে দিলেন উনি।
.
.
.
.
আজকে আমি এখন খুশী।খুশীগুলো যেন ধরছেই না।উনাকে ফোন করে দেখা করতে বললাম আমি।উনিও আমার কথা মতো তাড়াতাড়ি চলে এলেন।
.
কি হলো রোজ কি হয়েছে এত তাড়াতাড়ি আসতে বললে?দৌড়ে উনাকে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলাম আমি।আমার এমন আচরণে কিছুটা চমকে উঠলেন উনি।
.
আজকে আমার পিচ্চির কি হলো বরের প্রতি এত ভালোবাসা দেখাচ্ছে যে।কি ব্যাপার হুম!
.
অনেক কিছু হয়েছে আপনি জানেন না।আর আমার বরের প্রতি ভালোবাসা সবসময়ই থাকে কিন্তু পাঁজি বর বুঝে না।খুব শয়তান কিনা।খালি কষ্ট দেয়।আর আমি তাকে এত ভালোবাসি অথচ সে আমাকে একটু!না একটুও ভালোবাসে না।
.
ওমা তাই এমন রসগোল্লার মতো মিষ্টি একটা মেয়েকে বর ভালোবাসেনা। তাহলে তো তোমার খুব কষ্ট।
.
হুম!কিন্তু সে বুঝে না।
.
ঠিক আছে রিহানকে যখন একবার বলেই দিয়েছো তাহলে ওই ছেলেটাকে আমি খুব করে বকে দেব।কি চলবে তো।
.
চলবে মানে দৌড়াবে বলেই দুজনে হাসতে লাগলাম।
.
পার্কে পাশাপাশি বসে আছি দুজনে।আচ্ছা এবার বলো তোমার এত খুশীর কারণ কি?
.
আমাদের বাড়িতে একটা পিচ্চি আসছে।
.
কোথা থেকে আসছে?আর এতদিন কোথায় ছিলো?
.
মানে!কি বলছেন আপনি সত্যি বুঝতে পারছেন না।
.
না!কি বুঝবো
.
ধুর ভাবি প্রেগন্যান্ট!
.
কি বলছো তুমি হোয়াট এ্যা নিউজ।তুমি সত্যি বলছো রোজ।
.
হুম!জানেন আমি যখন ছোট ছিলাম তখন পাশের বাসার ছোট বাচ্চাকে দেখে আম্মুর কাছে বায়না করতাম আমাকেও একটা ভাই বা বোন এনে দেওয়ার জন্য কিন্তু মা বলতো আমিই নাকি বাচ্চা তাহলে এ বাড়িতে আর বাচ্চা দিয়ে কি হবে।তাই এনে দিতো না।এখন আমার ভাবতেই ভালো লাগছে এইটুকু একটা ছোট্র সোনামণি আসবে।ওর হাত ধরে আমি খেলবো ওই পাতলা পাতলা ঠোঁটে আধো আধো গলায় আমাকে ফুপ্পি ফুপ্পি ডাকবে উফ ভাবতেই কেমন খুশী লাগছে।কিন্তু আমার মনও খারাপ হচ্ছে।
.
কেন মন খারাপ হচ্ছে কেন?
.
আমি তো ওই বাসায় থাকবো না।কয়েকদিন পর চলে যাবো।তখন কি হবে আমি তো যখন তখন ওকে আদর করতে পারবো না।খেলতে পারবো না।
.
অহহ এই ব্যাপার!মন খারাপ করো না।তোমার যখন ইচ্ছা ওই বাড়িতে চলে যেতে পারবে আর এতদিনে আমরাও…..
.
থামুন!আপনাকে আর বলতে হবে না।আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলি।
.
হুম বলো! পারমিশন চাইছো কেন?
.
কারণ কথাটা শুনে আপনি রাগ করতে পারবেন না।আগে প্রমিস করুন।
.
কি এমন বলবে যার জন্য প্রমিস করতে হবে।
.
আগে করুন তারপর বলছি।
.
ওকে প্রমিস!এবার বলো
.
একদিন আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে আপনাকে একটা মেয়ের সাথে দেখেছিলাম সেদিন আপনার হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল ছিলো।আমি ভেবেছিলাম এটা আমার জন্য কিন্তু পরে দেখি এটা আপনি আপনার সাথে থাকা ওই মেয়েটাকে দিচ্ছেন।এটা দেখে বাড়িতে চলে আসি ভেবেছিলাম ওটা আপনার গার্লফ্রেন্ড।তারপর যখন আপনাদের বাড়িতে যাই তখন আমি অবাক হই কারণ সেই মেয়েটা আর কেউ নয় আমার ভাবি।
.
কিহহহ!
.
আপনি কিন্তু আপনার প্রমিস ভাঙ্গছেন। এই দেখুন আপনি রেগে যাচ্ছেন।
.
জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে কিছুটা শান্ত হয়ে! এসব ফাউল কথা একমাত্র তোমার মাথায়ই আসে তাই না।এই জন্য তুমি কলেজ আসা বন্ধ করেছিলে।আরে বোকা ওইদিন আপুর বার্থডে ছিলো তাই ফুল দিয়ে উইস করেছিলাম।আর কলেজে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো তোমাকে দেখা কিন্তু তুমি তো তার আগেই ফুরুৎ।
.
হুম তখন কি আমি জানতাম।আর এজন্য আমি দায়ী নই দায়ী আমাদের সমাজ।আমাদের সমাজে যে কেউ সবসময়ী ছেলে মেয়েকে একসাথে দেখলেই এসব ভাবে।
.
হুম তুমি ঠিকই বলেছো।আচ্ছা বাদ দাও চলো যাওয়া যাক।
.
.
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here