বড্ড ভালোবাসি পর্ব ৪২+৪৩

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ৪২ এবং ৪৩
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
-: ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছি সবাই সাথে রিহান আঙ্কেল আন্টিও আছেন।এত খুশির খবর পেয়ে ভাবির সাথে দেখা করতে এসেছেন তারা।ভাইয়াও অনেক খুশি।প্রথমবার বাবা হওয়ার অনুভূতিই হয়তো অন্যরকম।ভাইয়ার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই সংবাদে ভাইয়া কতটা খুশি।আড্ডার মধ্যখানে আমি বললাম…. আমি ফুপ্পি হবো আই এম সো এক্সাইটেড।কিন্তু আমি ফুপ্পি হবো এই কথাটা রিহানের ঠিক হজম হলো না।
.
রোজ তোমার মাথাটা কি একেবারে গেছে নাকি।
.
কিহ!আমার মাথা যাবে কেন?আমার মাথা তো ঠিকই আছে।আপনার মাথা ঠিক আছো তো।
.
তোমার মাথা যদি ঠিকই থাকে তাহলে তুমি ফুপ্পি হবে বলছো কোন আক্কেলে।
.
কেন?আমার একমাএ ভাইয়ের বাচ্চারা আমায় ফুপ্পি ডাকবে না তো কি আপ্পি ডাকবে নাকি আজব।(মুখ ভেংচি দিয়ে)
.
ঢেড়স কি তোমায় স্বাদে ডাকি কারণেই ডাকি।আমার একমাএ আপুর বাচ্চারা তার মামুর বউকে ফুপ্পি ডাকতে যাবে কোন দুঃখে? ওরা মামনি ডাকবে এই সোজা কথাটাও বুঝছো না।
.
এ্যাহহ!আমার ভাইয়ার বাচ্চা আমায় মামনি ডাকবে।মামার বাড়ির আবদার।আমাকে ফুপ্পি ডাকবে আর আপনাকে আঙ্কেল হুম।
.
নো নেভার।তোমাকে মামনি আর আমাকে মামাই ডাকবে ইট’স ফাইনাল।
.
ইট’স ফাইনাল(ভেংচি কেটে)আমাকে ফুপ্পি ডাকবে নো মামনি।
.
নো আমি যা বলেছি……
.
ভাই থামবি তোরা।বাবারে বাবা এই একটা ছোট খাটো বিষয় নিয়ে এত ঝগড়া উফফ।কিছু একটা ডাকলেই তো হলো।
.
না ভাবি কিছু একটা ডাকলে কি করে হবে আমার তো আর দশটা ভাই নাই যে এক ভাইয়ের বাচ্চা কিছু একটা ডাকলো আর আমি খুশি হয়ে গেলাম।কারণ অন্য ভাইয়ের বাচ্চারা আমায় ফুপ্পি ডেকে সেইটা ফিল আপ করে দেবে।কিন্তু তা তো নয়।আমার তো একটাই ভাই নাকি!তাই বেবি আমায় ফুপ্পিই ডাকবে।(এক নিশ্বাসে বললাম)
.
উনার দশটা ভাই নেই আর আমার যেনো আরো দশটা বোন আছে।আমারও একটাই আপু আর তার ছেলে মেয়ে আমাকে মামাই আর তোমাকে মামনি ডাকবে।
.
আরে আপনি বার বার আমাকে টানছেন কেন?আপনাকে মামু ডাকতে আমি কি না করেছি নাকি।আমি শুধু আমার কথা বলছি।
.
না তোমাকে ফুপ্পি ডাকতে পারবে না ব্যস।
.
ভাইয়া দেখো না উনি এসব পাগলের মতো কি বলছেন।আমি মানবো না মানবো মানবো না।
.
আচ্ছা তোমরা থামো আমি ভেবে একটা উপায় বার করছি।
.
ভাবিঃহুম তাই করতে হবে নাহলে এ নিয়ে প্রতিদিন ঝগড়া চলতেই থাকবে।
.
আমাদের কান্ড দেখে আব্বু আম্মু আন্টি আঙ্কেল মিটিমিটি হাসছেন।আঙ্কেল তো বলেই দিলেন যে এলোই না এখনও তোমরা তাকে নিয়ে ঝগড়া শুরু করেছো সো ফানি বলেই হাসতে লাগলো সবাই।
.
আচ্ছা পরী শোন তুই যখন রিহানদের বাসায় থাকবি তখন বেবি তোকে মামনি ডাকবে আর যখন এখানে আসবি তখন ফুপ্পি ডাকবে রিহানের বেলায়ও সেইম।কি আইডিয়াটা ভালো না।
.
ভাবিঃহুম এটা খুব ভালো হবে।তাহলে দুজনকে দুভাবেই ডাকতে পারবে।
.
না একদম ভালো না।আমাকে সবসময়ই ফুপ্পি ডাকবে।
.
ভাইয়া আমি তোমার প্রপোজালে রাজি!এখন পেত্নী রাজি নাহলেও কিছু করার নাই এটাই ফাইনাল।
.
আমি থাকবো না আর এখানে বলেই গাল ফুলিয়ে চলে গেলাম রুমে।ভাইয়ার বেবি আমাকে ফুপ্পি বলে ডেকে সারাবাড়ি ঘুরবে তা না এখন এই রিহানের বাচ্চা রিহানের জন্য সেটাও হবে না ধুর ভাল্লাগেনা।
.
.
একগাধা খারাপ লাগা নিয়ে রুমে পা দুলিয়ে বিছানায় বসে আছি আমি।কেন জানি কিছুই ভালো লাগছে না।উনি সবসময় আমাকে এই ঢেরস কেনো বলেন সেটাও আমি জানিনা।সত্যি কি আমার মাথায় বুদ্ধি নেই।কিন্তু উনি ছাড়া তো সবাই বলে আমি খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে তাহলে।আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে উনি রুমে প্রবেশ করলেন।এসেই ধুম করে বিছানায় শুয়ে পরলেন উনি।উনাকে এভাবে শুতে দেখে অবাক হলাম আমি।আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাচ্ছি।উনি তার ধারই ধারছেন না যেভাবে শুয়েছিলেন এখনও সেভাবেই আছেন।আমি বসা থেকে উঠে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি সেটা যেন উনার চোঁখেই পরছে না অদ্ভদ।
.
কি হলো আপনি আমার রুমে কেন?যান বের হন এখান থেকে?(ঝাঁঝালো কন্ঠে)
.
কুল বেবি কুল!এত হাইপার হচ্ছ কেন?এমন ভাব করছো যেন আমি তোমার কেউই না।অপরিচিত কেউ এটা কি ঠিক বলো।
.
তেমন পরিচিতও নন।আপনি আমার ভাবির ভাই ব্যস এবার য…….কথাগুলো শেষ হতে না হতেই হাত ধরে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন উনি। নিজেকে সামলাতে না পেরে উনার বুকের উপর হুমরি খেয়ে পরলাম আমি।আচমকা এমন হওয়ায় আমার চুলগুলো উনার মুখের উপর পরে আছে।আলতো করে চুল সরিয়ে দিচ্ছেন উনি।এই তুমি চুলে কি দাও বলোতো এত লম্বা আর কি সুগন্ধ।এটা কিন্তু খুব ভালো হয়েছে আমার আবারর ছোট চুল পছন্দ নয়।
.
সেটা আপনাকে না জানলেও চলবে ছাড়ুন আমাকে(দাঁতে দাঁত চেপে)।আমার কথাগুলো যেনো কানেই যাচ্ছে না উনার।উনি খুব শক্ত করে জড়িয়ে আছেন আমায়।মাথা তুলতে গেলেই আরো চেপে ধরছেন।
.
উফফ রেড রোজ এত নড়াছড়া করছো কেন?তুমি কি একটুও শান্ত থাকতে পারো না।জানো তোমার এই চটফটানি আমার খুব ভালো লাগে।যখন তুমি ছটফট করো তখন তোমাকে খুব মিষ্টি লাগে।আর রাগলে সে তো আরো মিষ্টি দেখায়।মাঝে মাঝে ভাবি তোমার এইটুকু শরীরে এত রাগ কোথা থেকে আসে।(চিন্তিত হয়ে)
.
ফালতু কথা বাদ দিন আর আমাকে ছাড়ুন আমি যাবো।
.
তুমি তো এখন কিছুতেই যেতে পারবে না বেবি।তোমার সাথে যে আমার অনেক হিসাব নিকাশ বাকী আছে আগে সেগুলো মিটিয়ে নেই তারপর তোমার ছুটি।(গালে স্লাইড করতে করতে)
.
আপনার সাথে আমার কিসের হিসাব?কোনো হিসাব নেই।
.
তুমি না বললে তো হবে না বেবি।একটু আগে কি যেন বলেছিলে এরই মধ্যে ভুলে গেলে। আমি তোমার কেউ হই না। শুধু তোমার ভাবির ভাই তাই না।
.
হুম ঠিকই তো বলেছি।(দাঁত কটমট করে)
.
এক্ষুণি বুঝাচ্ছি ঠিক নাকি ভুল।নিজের উডবি হাজবেন্ডকে যা ইচ্ছা তাই বলা।এই তোমার ভাবির ভাই থেকে তোমার জামাই হওয়ার জন্য আমাকে কিছু একটা করতে হবে।যাতে আর কখনো এমন মনে না হয়।(দুষ্টু হাসি দিয়ে)
.
কি করবেন আপনি।(ঢোক গিলে)
.
সেটা তো বুঝতেই পারবে বলেই ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন উনি।এমন ঘটনায় চোখ খিঁচে উনার শার্ট খামছে ধরে আছি আমি।কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।লজ্জায় উনার বুকে মুখ লুকালাম আমি।
.
কি হলো এখনও আমাকে তোমার ভাবির ভাই মনে হয় নাকি!
.
আমি কোনো কথা না বলে গুটিশুটি মেরে উনার বুকেই শুয়ে আছি।নড়াচড়া নেই একইভাবে এখনও আছি।মুখ থেকে শুধু একটাই কথা বের হলো আপনি একটা অসভ্য লুচু।
.
সব মেয়ের কাছেই তার বর লুচু অসভ্য হয় এতে সবার মতো আমারও কোনো আপওি নেই।আর আমি যখন অসভ্যই তাহলে আরেকটু অসভ্যতামি তো করা যেতেই পারে কি বলো(ভ্রু নাচিয়ে)।
.
না একদম না। এবার কিন্তু খুব খারাপ হবে।
.
আমাকে লুচু বলার সময় মনে ছিলো না।এখন বললে তো আর শুনবো না বেবি।
.
দেখুন আমি কিন্তু….
.
ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে হুশশশ!একদম চুপ কোনো কথথা নয়।ওরে রোজ কেন যে এই রাক্ষস টাকে লুচু বলতে গেছিলিস এবার বুঝ মজা।আল্লাহ বাঁচাও আমারে।উনি আমার দিকে এগুতেই দরজার ওপাশ থেকে আবির ভাইয়া বলে উঠলেন…..
.
এতক্ষণ ধরে ভিতরে কি চলে।
.
আবির ভাইয়ার গলা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে ছেড়ে দিলেন আমায়। শালা আমার রোমাঞ্চের বারোটা বাজিয়ে এখন জিজ্ঞেসস করছিস কি চলে। রোমাঞ্চ চলে রোমাঞ্চ।
.
উনার কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ আমি ঠিক হয়েছে।
.
তোমার খুব হাসি পাচ্ছে তাই না। হাসি থামিয়ে আবারও হেসে উঠলাম আমি।উনি রাগী ফেইস নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনার রাগকে পাওা না দিয়ে হেসে চলেছি অনবরত।আবির ভাইয়া আবারও বললেন…..
.
শালা সেই কখন থেকে ড্রয়িংরুমে বসে আছি কিন্তু তোর দেখাই নাই।সেই যে বউকে নিয়ে দররজা বন্ধ করেছিস এখনও খোলার নাম নাই।এবার বাইরে আয় বস।বাসার সবাই কি ভাববে।তোর জন্য মান সম্মান গেলো।
.
আমাকে ছেড়ে দরজার দিকে এগিয়ে আবারও পিছিয়ে এলেন উনি।শুনো এটা কিন্তু তোলা রইলো পরে সুদে আসলে মিটিয়ে নেব ওকে বেবি(চোখ টিপে)বলেই চলে গেলেন উনি।দরজার ওপাশে দুজনের বেফাঁস কথা শোনা যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর মিলিয়ে গেলো হয়তো নিচে চলে গেছেন।
.
এই দুই বন্ধুর লাগামহীন কথাশুনে আমি বাকরুদ্ধ।কি করে পারে এরা।আমি তো শুনেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি।এখন থেকে আবির ভাইয়ার সামনেই যেতে পারবোনা আমি।আর ওরা কেমন স্বাভাবিক।আমি আর তিশাও কথা বলি কিন্তু এদের মতো বেফাঁস কথাবার্তা বলিনা।সত্যি এই দুই বন্ধু আজব দুই প্রাণী।এরা পারবেনা এমন কিছু নেই নির্লজ্জ ঠোঁটকাটা।কথাগুলো ভেবেই আপন মনে হেসে উঠলাম আমি।
:
:
#Part :- 43
:
:
:- আজ তিশাকে দেখতে আসছে বরপক্ষ।সে কারণে আমাকে আজ ওদের বাসায় যেতেই হবে না গেলে আন্টি আমার বিয়েতে আসবেন না আর তিশাকেও পাঠাবেন না।উনার এমন ব্ল্যাকমেইলে না গিয়ে থাকতে পারছিনা আমি।তাই বাধ্য হয়েই যাচ্ছি।কিন্তু একটা জিনিস আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে আঙ্কেল আন্টি হঠাৎ করে তিশার বিয়ে নিয়ে পরলেন কেন?এ নিয়ে তিশার সাথে কথা বলার সুযোগ পাইনি আমি।বর কে সেটাও জানিনা।তবে এতটুকু জেনেছি বর তার বাবার বিজনেস দেখাশোনা করে।আমার যতদূর মনে হয় আবির ভাইয়া তিশাকে ভালোবাসেন তাই উনাকে কল দিলাম।উনি কল তুলে উনার হাজার রাজ্যের ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দিলেন।আমি ব্যাপারটায় বেশ অবাক হলাম।তিশার বিয়ে শুনেও কিচ্ছু বললেন না অদ্ভুত!
.
তিশাকে সাজাচ্ছি আর একের একের এক প্রশ্ন ছুড়ছি ওর দিকে কিন্তু ও কোনোটারই ঠিকঠাক কোনো উওর আমায় দিতে পারছে না।ছেলে কে সেটা তিশাও জানে।আর ওর কথা মতো আবির ভাইয়াকেও ভালোবাসে না।অথচ মুখ রাম গরুর ছানার মতো।সেটা দেখে বুঝতে সমস্যা হয়নি আমার দোস্ত ও ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে শুধু স্বীকার করতে পারছেনা।বরপক্ষ এসেছে কিছুক্ষণ আগে আন্টির এত ব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছে আজই তার মেয়ের বিয়ে।আর মেয়ে এখন পারছেনা শুধু কেঁদে দিতে।যদি পারতো তাহলে আন্টিকে মুখের উপর না করে দিতো কিন্তু তা পারবে না।
.
তিশাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্টি তাড়া দিচ্ছেন কিন্তু সে বাইরে যাবে না।কেন যাবে না সেটাও বলবেও না।তাই সামনে দাঁড়িয়ে বেশ জোরেশোরেই ধমক দিয়েই বললাম…..
.
ওই তোর সমস্যা কি?কাউকে যদি ভালোই না বাসিস তাহলে বিয়ে করতে আপওি কোথায়।চল বাইরে চল পারলে আজকেই তোকে বরপক্ষেরর সাথে বিদেয় করবো চল।
.
আমার কথায় কেঁদে দিলো তিশা।কিন্তু মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না।ওর এই অবস্থা দেখে রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।হাত ধরে টেনে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি।আমাকে এমন করতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।দরজা ঠেলে ওকে বাইরে বের করে দিলাম আমি।
.
যা এবার বাইরে যা বরকে দেখার তো আর তর সইছে না।যা এবার গিয়ে দেখে প্রাণ জুরা।এমন ব্যবহারে আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ওই একদম এতিমের মতে তাকাবিনা আমার দিকে।
.
রোজ শোন না।
.
একটাও কথা বলবি না যা ভাগ।
.
আমার ধমকে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো তিশা।রোজ তুই এ বিয়েটা ভেঙ্গে দেনা প্লিজ।
.
কেন? এত ভালো ঘর বর সবই যখন ভালো তখন আমি বিয়ে ভাঙ্গতে যাবো কোন দুঃখে।তাছাড়া তোর যদি কাউকে পছন্দ থাকতো তাহলে ভেবে দেখতাম কিন্তু তা তো নয়….
.
রোজ আমি আবিরকে ভালোবাসি।এই বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।ও যেমনই হোক আমি ওকে চাই।প্লিজ রোজ এতটুকু হেল্প কর না আমায়।(এক নিশ্বাসে বললো কথাগুলো)
.
এতক্ষণে পথে এসেছো তিশা ডার্লিং।আবির ভাইয়াকে তোমার চাই বাহ কি ডায়ালগ দিলি রে বইন।এই কথাটা বলতে তোর এত টাইম লাগলো।ভাইয়া জানে এটা?
.
আমি কি করবো তুই বুঝি কিছুই বুঝিস না।না জানে না।
.
তাহলে যদি তোকে ভালো না বাসে তখন কি এই বিয়েটা ভাঙ্গা উচিৎ হবে।
.
হুম এটাও ঠিক।রোজ তুই আমায় ভয় দেখাচ্ছিস না তো।
.
ধুর ভয় দেখাতে যাবো কেন?যা সত্যি তাই বললাম।
.
তবুও রোজ প্লিজ এই বিয়েটা আটকে দেনা(হাত ধরে)।আমি জানি উনিও আমাকে ভালোবাসেন।
.
ওকে বাইরে চল।
.
মানে!
.
মানে খুব সহজ।দেখ এখন যদি আন্টিকে আমি বলি তুই বিয়েতে রাজি না তাহলে আন্টি কিছুতেই মানবে না।তাই পাএপক্ষের সামনে যাবি তারপর পাএের সাথে একা কথা বলে সবটা বলে দিবো ব্যস পাএ নিজে থেকে বিয়ে ভেঙ্গে দেবে।
.
সত্যি তাই হবে তো রোজ।(করুণ মুখ করে)
.
হুম!আচ্ছা চল এবার কিন্তু না গেলে তোর জন্য আন্টি আমায় বকাঝকা করবে।তিশাকে নিয়ে পাএপক্ষের সামনে গিয়ে আমার চোখ চড়কগাছ এ আমি কি দেখছি।আবির ভাইয়া আর রিহান সাথে আবির ভাইয়ার মা বাবা। তার মানে আবির ভাইয়াই তিশার বর ওয়াও এ তো মেঘ না চাইতেই জল।যেহেতু তিশাকে আমাদের এনগেইজমেন্ট অনুষ্ঠানে দেখেছে সেহেতু মেয়ে উনাদের আগে থেকেই পছন্দ ছিলো।আর আঙ্কেল আন্টির আবির ভাইয়াকে নিয়ে কোনো প্রবলেম নেই।তাই আমাদের বিয়ের এক সপ্তাহ পর তিশার বিয়ের ডেট ফিক্সড হলো।আমার তো খুশিতে নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছা করছে।তিশার বিয়ে ওয়াও তাও আবার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে এক সপ্তাহ পর।
.
.
বিয়ের শপিং এ এসে আরেক জ্বালায় পরতে হলো আমাকে।আমার পছন্দ আমি খয়েরি রঙের লেহেঙ্গা পরবো আর রিহান গোলাপি।এইটা নিয়ে আমাদের ঝগড়া শুরু কেউ কাউকে একটুও ছাড় দিতে রাজি নই।তবুও সবার রিকুয়েস্টে আমার ইচ্ছাকে প্রায় জলাঞ্জলি দিয়ে উনার পছন্দের কালারটাই নিলাম আমি।যদিও উপরে এর জন্য মন খারাপ দেখালেও ভিতরে ভিতরে অনেক খুশি।
.
আজ সন্ধ্যায় আমাদের গায়ে হলুদ তার জন্য একটা হল বুক করা হয়েছে।সেখান থেকে পুরো অনুষ্ঠান কম্পিলিট হবে।সকালেই আমরা কনভেনশন হলে পৌছে গেলাম সাথে সকল গেস্টও।মুখ ভার করে বসে আছি নিজের রুমে।তখনই পার্লারের লোক নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো তিশা আর ভাবি।এভাবে ঢুকতে দেখে কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি।
.
দোস্ত বসে পরো এখানে এবার তোকে সঙ সাজানো হবে।ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি।না মানে দোস্ত বলছিলাম তুই তো আগে বলতিস যে অতিরিক্ত সাজগোছ করলে নাকি সঙের মতো দেখায়।আর আজ তো তুই অতিরিক্ত সাজবি তাই বললাম আরকি।ওর কথার পিঠে কোনো কথা বলতে ইচ্ছে হলোনা আমার।
.
কচু পাতা আর অরেঞ্জ রঙের কম্বিনেশনে শাড়ি।সাথে ফুলের জুয়েলারি।কানে বড় বড় ফুলের গহনা,মাথায় টিকলি,গলায় ফুলের মালা হাতে ম্যাচিংকাচের চুড়ি।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ব্যস এই সাজ।পুরো শরীরে ফুলের গহনা নিজেকে কেমন ফুল কুমারি মনে হচ্ছে।আমার বরের আবার আমার মতো ভারী মেকআপে এলার্জি আছে।তাই হালকা সাজ।

.
স্টেজে বসে আছি আমি কিন্তু রিহানকে কোথাও দেখতে পেলাম না।এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কিন্তু কোথাও দেখা পাচ্ছি না।অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্টেজে এসে বসলেন উনি।আমার শাড়ির সাথে ম্যাচিং কচু পাতা রঙের পাঞ্জাবী সাথে কোর্ট।হাতে চেইনের ঘড়ি চুলগুলো ব্রাশ করা।এই সাজই হিরোদের থেকে কম নয়।
.
আম্মু যখন আমাকে হলুদ ছোঁয়ালো তখন কেন যেনো আম্মুর হাসির আড়ালে চোখের কোণে পানি দেখেছি আমি।কিছুক্ষণ পর ভাইয়া এলো আমার গায়ে হলুদ দিতে।ভাইয়ার মুখে কোনো হাসি নেই।কেমন প্রাণহীন দেখাচ্ছে।ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়েই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আমি।কিছুক্ষণ পর রিহান আর ভাবির সহায়তায় আমাকে ছেড়ে নিমিষেই চোখ মুচতে মুচতে কোথায় যেন চলে গেলো ভাইয়া।পেছন পেছন ক্রমাগত ভাবি ডেকে চলেছে কিন্তু ভাইয়া ফিরেও তাকাচ্ছে না।আমি সেখানে দাঁড়িয়েই তখনও কেঁদে চলেছি আর রিহান আমাকে সামলাচ্ছে।এরপর একে একে আবির ভাইয়া তিশা সবাই হলুদ দিলো আমায়।সবার
.
হলুদ অনুষ্ঠান শেষে ফ্রেশ হয়ে রুমে বসে আছি আমি।আজকেই আমার বাড়ির লোকের সাথে আমার শেষ রাত।ছোট থেকে ওই বাড়িটাকেই নিজের বাড়ি বলে জেনেছি।কিন্তু রাত পেরুলেই কেমন বদলে যাবে সবকিছু।রুম থেকে বেরিয়ে ভাইয়াকে খুঁজতে ব্যস্ত আমি।কিন্তু এদিক ওদিক কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।হলুদের পর ভাইয়াকে আর কোথাও দেখিনি আমি।হঠাৎ দেখলাম ডেকোরেশনের কাজে ব্যস্ত তাই আর সামনে যাইনি।দূর থেকে দেখেই চলে এসেছি।সবাই উপরে উপরে অনেক খুশি কিন্তু ভিতরে ভিতরে সবাই কষ্ট পাচ্ছে।আমারও বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু চারিদিকে লোকজন থাকায় মন খুলে কাঁদতেও পারছিনা আজ।কালকে যেমন রিহানকে সারাজীবনের মতো আমার করে পাবার সুখ আমায় ঘিরে ধরবে তখন সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্টও চেপে ধরবে আমায়।
.
.
চলবে………..
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here