বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৪০

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪০
.
ভোর বেলা আদ্রিয়ান এর ঘুম ভাঙতেই ওর চোখ গেলো বেডের ওপর। এটা ওর প্রতিদিনের কাজ ঘুম থেকে ওঠার পরেই বেডের দিকে তাকায় অনিমাকে দেখার জন্যে। ঘুম ভাঙ্গা পিটপিটে চোখে বেডের দিকে তাকালো কিন্তু আজকে বেড ফাঁকা। সেটা দেখে আদ্রিয়ান এর ভ্রু কুচকে গেলো, ও চোখ হালকা কচলে নিয়ে ভালোভাবে চোখ বুলালো সারারুমে কিন্তু অনিমাকে দেখতে পেলো না। ও উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে অনিমা একটা লাল রং এর শাল গায়ে জরিয়ে নিয়ে ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সকালের এই ফুরফুরে হাওয়াটা উপভোগ করছে। বাতাসে হালকা হালকা উড়ছে ওর এলোমেলো চুুলগুলো। অদ্ভুতরকম সুন্দর লাগছে ওকে। আদ্রিয়ান আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো অনিমার দিকে, অনিমা চোখ বন্ধ করে আছে বলে আদ্রিয়ানের উপস্হিতি বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান অনিমার পেছন থেকে ওর দুই হাতের ওপর দিয়ে হাত রাখল। অনিমা চমকে গিয়ে পেছনে ঘুরতে চাইলে আদ্রিয়ান ওকে আটকে দিয়ে বলল,

— ” আরে আমি। এতো নড়াচড়া কেনো করো বলোতো?”

অনিমা পুরো স্হির হয়ে দাড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান ওর দুই হাতের ওপর হাত দিয়ে রেখেছে আর আদ্রিয়ানের গরম নিশ্বাস ওর ঘাড়ে পড়ছে। অনিমা পুরো জমে গেছে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। আদ্রিয়ান অনিমার কাধে থুতনি রেখে বলল,

— ” ম্যাডামের আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেলো যে?”

অনিমা আর কী বলবে? আদ্রিয়ানের এই সামান্য ছোঁয়াতেই ওর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ভীষণভাবে কাঁপছে ও। আদ্রিয়ান অনিমার কাঁপুনি ফিল করে ওর হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরল। কিন্তু তাতে অনিমার কাপুঁনি খুব একটা কমলোনা। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো অনিমা একটু অসস্তি বোধ করছে। তাই আদ্রিয়ান ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

— ” এতো সকালে উঠে পরলে যে?”

— ” এমনিই..”

বলে অনিমা নিজের কপালের চুলগুলো সরাতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে আটকে নিলো তারপর ঐ হাত ধরে কাছে টেনে নিলো। অনিমা চমকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান একহাতে আদ্রিয়ানের কোমর ধরে রেখে ওপর হাতে কাপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলল,

— ” আমি যতক্ষণ তোমার কাছে থাকবো এই কাজটা আমার হুম?”

অনিমা চোখ নামিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান অনিমার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে ধরে বলল,

— ” জানো তোমার এই লজ্জামাখা চোখ নামিয়ে নেওয়া মুখটা কতোটা পছন্দের আমার।”

অনিমা নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে ফেললো। অনিমা এতোটাই লজ্জা পেয়ে আছে যে পেছন দিকে তাকিয়ে অবধি দেখছেনা। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— ” আজ যেহেতু দুজনের ঘুমটাই এতো সকালে ভেঙ্গে গেছে তো দুজনেই একটু সময় তো কাটাতেই পারি নিজেদের মতো করে।”

অনিমা কিছু বললো না। আদ্রিয়ান ওকে ঘুরিয়ে জরিয়ে ধরলো নিজের সাথে। অনিমা চুপ করে চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ানের বুকে মাথা দিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। মন দিয়ে ফিল করার চেষ্টা করছে আদ্রিয়ানের হার্টবিট। আদ্রিয়ান বলল,

— ” আজ একটা জায়গায় নিয়ে যাবো তোমাকে।”

অনিমা অবাক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কোথায়?”

আদ্রিয়ান অনিমার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল,

— ” অনেকদিন ঘরে বন্দি অবস্হায় বোর লাগছে নিশ্চয়ই? তাই বাইরে থেকে একটু ঘুরিয়ে আনবো।”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

— ” কিন্তু রিক?”

আদ্রিয়ান হেসে অনিমার দুই বাহু ধরে রেখে বললো,

—- ” ভয় পেয়োনা আমি আছি তো। ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নেবে হুম?”

অনিমা মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমাকে নিয়ে ব্যালকনির ফ্লোরে বসল। অনিমা আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো। দুজনেই নিরবে উপভোগ করছে এই মিষ্টি সকাল।

_____________________

রিক ওদের ফার্মহাউজে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ফোনে একটার পর একটা ছবি বার করে দেখছে। একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো রিকের। ছবিটাতে অনিমা গালে হাত দিয়ে হাসছে গালের টোল আর তিলটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রিক ছবিটার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হালকা হাসলো। অনিমাকে তো ও নিজের কাছে নিয়ে আসবেই সেটা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে। কিন্তু আদ্রিয়ানের যেই রূপ ইতিমধ্যেই ও দেখেছে তাতে কাজটা সহজ হবেনা এটাও বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। কবির শেখ এসে ওর পাশের চেয়ারে বসে বললেন,

— ” কিছু জানতে পেরেছো বাবাই?”

রিক ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই বলল,

— ” উমহুম। বাট এটুকু আমি সিউর যে আদ্রিয়ান কোনো সাধারণ রকস্টার নয়, হতেই পারেনা। ওর শুটিং স্কিল কতোটা পার্ফেক্ট তুমি ভাবতে পারবেনা মামা।”

কবির শেখ ভ্রু কুচকে রিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তাহলে খোজ লাগাও। ”

রিক বিরক্তির একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” লাগিয়েছি মামা। কিন্তু কোনো ক্লু
পাচ্ছিনা। ওর অন্য কোনো পরিচয়ের কোনো চিন্হও পাচ্ছিনা কোথাও।”

দুই হাত একত্র করে থুতনির নিচে রেখে চিন্তিত কন্ঠে বললেন,

— ” খুব পাকা লেভেলের খেলোয়ার এই আদ্রিয়ান। ওকে প্রথমে যতোটা সহজ সরল ভেবেছিলাম সেরকম ও নয়। খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে।”

রিক সামনের টি-টেবিলে একটা লাথি মেরে উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলল,

— ” আমি অতো কিছু জানিনা। জানতে চাই না। আমি ব্যাস এটুকুই জানি যে আমার ওকে চাই। যে ভাবেই হোক, যা কিছু করে হোক আই জাস্ট ওয়ান্ট হার।”

কবির শেখ রিকের হাত ধরে বসিয়ে বলল,

— ” কাম অন বাবাই শান্ত হও। মাথা গরম করে কিচ্ছু হবেনা যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।”

রিক বিরক্ত হয়ে ওর মামার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কিন্তু করবোটা কী?”

কবির শেখ বাঁকা হেসে বললেন,

— ” সঠিক সময়ের অপেক্ষা।”

রিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ওনার দিকে। উনি রিকের কাধে হাত রেখে বললেন,

— ” আপাদত চুপ থাকো। সঠিক সময় আর সুযোগ বুঝে আসল কাজটা করতে হবে।”

রিক কিছু না বলে চুপ করে রইলো ও বুঝতে পেরেছে ওর মামা কী বলতে চাইছে।

__________________

ফার্মহাউজ থেকে ফিরে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে রিক ঘড়ি পরতে পরতে সিড়ি দিয়ে নেমে বেড়িয়ে যেতে নেবে তখনি মিসেস লিমা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” রিক স্নিগ্ধাকে হসপিটালে ড্রপ করে দিয়ে আয়।”

রিক থেমে গিয়ে বিরক্ত হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো?

— ” আমি কেনো?বাড়িতে গাড়ি আর ড্রাইভার এর অভাব পরেছে নাকি।”

স্নিগ্ধা একটু ঢং করে মিসেস লিমাকে বললেন,

— ” বাদ দাও মামনী। আমি একাই যেতে পারবো। আমার অসুবিধা হবেনা। তাছাড়া তোমার ছেলেও তো নিয়ে যাবেনা আমাকে।”

মিসেস লিমা রাগী গলায় বললেন,

— ” চুপ কর তো। ও বললেই হলো নাকি? রিক ওকে দিয়ে এসো যাও। আজকে মেয়েটা প্রথম এই রোড দিয়ে যাবে তুমি যখন ওদিক দিয়েই যাবে তো ড্রপ করে দাওনা।”

রিক স্নিগ্ধার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর রেগে বলল,

— ” আমার ওতো ফালতু সময় নেই আমি পারবোনা।”

বলে রিক চলে গেলো। স্নিগ্ধা বেশ কষ্ট পেলো। কী এমন হতো ড্রপ করে দিলে? অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি আটকে রেখে বেড়িয়ে গেলো। মিসেস লিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কী আর করবেন? ছেলেতো আর তার হাতে নেই।

বাইরে বেড়িয়ে স্নিগ্ধা দেখলো যে রিক গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই রিক বলল,

— ” ওই ড্রামাকুইন গাড়িতে ওঠ।”

স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে বললো,

— ” আমি এমনিতেই যেতে পারবো। ধন্যবাদ আপনার করুণার জন্যে।”

রিক হাত ভাজ করে বললো,

— ” মমকে বলে এতো ড্রামা তো আমার সাথে যাবি বলেই করলি। এখন আবার নতুন ড্রামা করছিস কেনো?”

স্নিগ্ধা ঘুরে রিকের সামনে গিয়ে হাত জোর করে বললো,

— ” ভূল হয়ে গেছে আমার। এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। আর জীবণেও বলবোনা। ”

বলে স্নিগ্ধা চলে যেতে নিলেই রিক ওর হাত ধরে বললো,

— ” তুই নিজে উঠবি নাকি আমি টেনে তুলবো?”

স্নিগ্ধা জানে যে এখন ও নিজে থেকে না উঠলে সত্যিই রিক টেনেই তুলবে ওকে তাই চুপচাপ ফ্রন্ট সিটে গিয়ে বসে পরলো। রিকও গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। দুজনেই অনেক্ষণ চুপ ছিলো। নিরবতা ভেঙ্গে স্নিগ্ধা বলল,

— ” রিক দা তোমারও তো ডাক্তারি লাইসেন্স আছে অথচ তুমি জয়েন কেনো করোনা?”

রিক রাগী চোখে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” নিজের চরকায় তেল দে আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা।”

স্নিগ্ধা একটা ভেংচি কেটে সামনের দিকে তাকালো তারপর বিড়বিড় করে বললো,

— ” হুহ সাইকো একটা।”

রিক ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” কিছু বললি? ”

স্নিগ্ধা দাঁত কেলিয়ে একটা কেবলাকান্ত হাসি দিয়ে বললো,

— ” ইয়ে বলছিলাম যে তুমি খুব বুদ্ধিমান একজন মানুষ নইলে কেউ ডাক্তারি পড়া কম্প্লিট করে লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও বেকার ঘুরে বেড়ায়?”

রিক চোখ কটমট করে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” আর একটা কথা বললে সোজা ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেবো।”

স্নিগ্ধা হুহ বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো আর রিক ও ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। আর কোনো কথা কেউ বলেনি।

____________________

এভবেই আরো কয়েকটা দিন চলে গেলো। রিক আর অনিমাকে খোজেনি শুধু অপেক্ষা করছে একটা সঠিক সময়ের ঠিক ওর মামা যেভাবে বলেছে। একয়েকদিনে অনেককিছুই বদলে গেছে তীব্র আর স্নেহার সম্পর্কটা আগের মতো হয়ে গেছে। অরু আর আশিস ও টম এন্ড জেরী থেকে মটু পাতলু জোরি হয়ে গেছে। আর স্নিগ্ধা রিক কে সারাক্ষণ নানাভাবে জ্বালিয়ে মারে আর রিক যথাসম্ভব ওকে ইগনোর করার চেষ্টা করে কিন্তু সবসময় পারেনা। ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড এর প্রতি ওর মনে যেই টান আছে সেটা চাইলেও অস্বীকার করতে পারেনা ও। আর অনিমা এখন আদ্রিয়ানকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করেছে। এখন আর আদ্রিয়ানকে এরিয়ে চলার চেষ্টা করেনা। তবে অনিমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার সৌভাগ্য আজও আদ্রিয়ানের হয়নি।

আকাশটা বেশ পরিস্কার এখন যার কারণে পূর্ণিমার রুপের থালার মতো গোল চাঁদটা আকাশে স্পষ্ট দৃশ্যমান। আদ্রিয়ানের বাড়ির ছাদের দোলনাতে আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে ওর বাহু দুইহাতে জরিয়ে বসে আছে অনিমা। দোলনাটা হালকা দুলছে। অনিমা অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছে যে আদ্রিয়ান বেশ চুপচাপ বসে আছে। অনিমা চোখ খুলে কাধ থেকে মাথা তুলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কী হলো আজ এতো চুপচাপ যে?”

আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

— ” কিছুনা এমনিই।”

অনিমা আদ্রিয়ানের মুখের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বললো,

— ” কিছুতো একটা হয়েছে। বলুননা কী হয়েছে?”

আদ্রিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” আজ মায়ের কথা খুব মনে পরছে।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর একটা শ্বাস ফেলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” একটা কথা বলবো?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে বলার সম্মতি দিলো। অনিমা সম্মতি পেয়ে মুখে হাসি এনে বললো,

— ” আপনি তো আপনার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। জানি আঙ্কেল একটা ভূল করে ফেলেছে কিন্তু তার শাস্তিতো এতো বড় হতে পারেনা তাইনা? আমি সিউর আন্টির সাথে আঙ্কেল ও আপনাকে খুব মিস করছে। তাই আপনার উচিত ওনাদের কাছে ফিরে যাওয়া।”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

— ” ড্যাড আমার কথা ভাবেনা অনি ভাবলে…”

আদ্রিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে অনিমা বললো,

— ” ভাবে। আর ভাবে বলেই আপনাকে ওনার চেয়ারে বসাতে চেয়েছিলেন নিজের বিজনেস দেখতে বলেছিলেন। আপনি যেটাকে নিজের প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন সেটাতেতো সবাই দাঁড়িয়ে যেতে পারেনা সেটাতে কোনো সিকিউরিটি নেই। কিন্তু আপনি পেরেছেন নিজের যোগ্যতায় এই প্রফেশনে দাঁড়াতে কিন্তু সেটাতো নাও হতে পারতো তাইনা? উনি তো আপনার ফিউচার সিকিউর করতেই চেয়েছিলেন। তবে হ্যাঁ ওনার ভুল ছিলো এটাই যে আপনাকে চেষ্টা করার একটা সুযোগ দিতে চায়নি উনি। কিন্তু একটা কথা বলুনতো আমরাও তো ছোটবেলাতে অনেক কারণে অনেক ভুল করি আর আমাদের বাবা মা ক্ষমা করে দেয় তাহলে আমরাও তো পারি আমাদের বাবা মায়ের দুই একটা ভুল ক্ষমা করে দিতে রাইট?”

আদ্রিয়ান চুপ করে আছে অনিমা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

— ” যাদের বাবা মা থাকেনা তারাই বুঝতে পারে তারা না থাকার শূণ্যতা কতোটা। আপনার তো আছে তাদের দূরে সরিয়ে রাখবেন না। কারণ অনেকে আছে যারা চেয়েও নিজের বাবা মা কে কাছে পায়না।

কথাটা সময় অনিমার চোখ ছলছল করছিলো গলাটাও ধরে আসছিলো। আদ্রিয়ান আনিমাকে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে মাথায় চুমু দিয়ে বললো,

— ” আচ্ছা ফিরে এসেই ওদের সাথে কথা বলবো আর তোমাকেও নিয়ে যাবো ওদের কাছে। হ্যাপি?”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

— ” ফিরে এসে মানে?”

আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বলল

— ” আসলে একটা রিয়ালিটি শো এর জাজিং এর জন্যে একটা এগ্রিমেন্ট সাইন করে রেখেছিলাম আরো আগেই। মাঝখানে একটা প্রবলেমের জন্যেই শুটিং বন্ধ ছিলো। তো এখন এক সপ্তাহের জন্যে সুইজারল্যান্ড যেতে হবে আমাকে।”

অনিমা কাঁপা গলায় বললো,

— ” কবে ফ্লাইট?”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে তুতলানো আওয়াজে বলল,

— ” কালকে।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

— ” আপনি আমাকে এখন বলছেন?”

আদ্রিয়ান ইতস্তত করে বললো,

— ” সরি বাট কীকরে বলবো বুঝতে পারছিলাম না তাই..”

অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের বাহু জরিয়ে ধরলো। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো যে অনিমা কাঁদছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমাকে বুকে নিয়ে বললো,

— ” আরে পাগলি কাঁদছো কেনো? এক সপ্তাহের ব্যাপার। দেখতে দেখতে কেটে যাবে।”

অনিমা কিছু বলছেনা আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

— ” আর রিকের ভয় পেয়োনা। এই বাড়িতে এসে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ওর নেই। কিন্তু হ্যাঁ যাই হয়ে যাক তুমি এই বাড়ি থেকে বেরোবেনা মনে থাকবে?”

অনিমা নিচু কন্ঠে বললো,

— ” হুম।”

আদ্রিয়ান হেসে অনিমার চোখ মুছে দিয়ে বলল,

— ” একটা জিনিস আছে তোমার জন্যে।”

অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আদ্রিয়ান পকেট থেকে একটা ফোন বের অনিমার হাতে দিয়ে বললো,

— ” এই ফোন দিয়েই কথা বলবো আমরা দুজন দুজনের সাথে ওকে? আর এখানে মাদার অরু তীব্র ওদের নাম্বার আছে। ওদের সাথে কথা বলে সময় কাটিও। আর ভয় একদম পাবেনা কারণ এই বাড়িতে রিক ঢুকতে পারবেনা, তাই এখানে তুমি একদম নিরাপদ।”

অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বলল,

— ” যাওয়াটা কী খুব জরুরী?”

আদ্রিয়ান অনিমার হাত মুঠোয় নিয়ে মাথা নাড়লো অর্থাৎ হ্যাঁ। অনিমা মাথা নিচু করতেই অাদ্রিয়ান অনিমার মাথা উঁচু করে ধরে বলল,

— ” সব কিছুরই একটা পরীক্ষা থাকে। ধরে নাও আমাদের এই দূরত্বটাও আমাদের ভালোবাসার একটা পরীক্ষা। যার দ্বারা আমারা আমাদের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারব?”

অনিমা কেঁদেই যাচ্ছে আদ্রিয়ান অনেক কষ্টে নিজেকে শক্ত রাখছে কারণ ওও যদি ইমোশনাল হয়ে পরে তাহলে অনিকে কে সামলাবে? তাই ও অনিমাকে শক্ত করে নিজের বুকে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” আরে পাগলি আমি তো তোমার সাথেই থাকবো সবসময়। আমার শরীর দূরে থাকলেও মনটা তো তোমার কাছেই থাকবে। প্রতি মুহূর্তেই ফিল করতে পারবে তুমি আমাকে। আর মাত্র সাতটা দিনই তো।”

আদ্রিয়ানের কোনো কথাই অনিমার কান্না থামাতে পারছেনা ও নিরবে চোখের জর ফেলেই যাচ্ছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো এই বিচ্ছেদ অনেক বেশিই দীর্ঘ হবে।

#চলবে…
.

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here