বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব ৩২

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৩২.

সারারুমে পিনপতন নীরবতা। আদ্রিয়ান খাটের কর্ণারে বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে আছে। নাহিদ পেছন দিকে দাঁড়িয়ে আছেন। অপর পাশে অভ্র আর জাবিন প্রায় দুই ফুটের দূরত্বে সারিতে দাঁড়িয়ে আছে। ডক্টর অনিমার পালস রেট করছে। অনিমার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু শরীর খুব দুর্বল। পিটপিট করে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। ডক্টর চেক করে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এখন ঠিক লাগছে?”

অনিমা ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ঝুলিয়ে চোখের ইশারায় বোঝাল ও ঠিক আছে। ডক্টরও হেসে দিয়ে বললেন,

” গুড। রেস্ট কর এখন। একদম দৌড় ঝাঁপ করবেনা।”

অনিমার হাসি পেল। এরকমভাবে বলছে যেন ও একটা বাচ্চা মেয়ে। তবুও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ডক্টর উঠে দাঁড়ালেন। আদ্রিয়ানও উঠে দাঁড়াল। ডক্টর বললেন,

” মিস্টার জুহায়ের একটু এদিকে আসুন।”

আদ্রিয়ান ডক্টরের সাথে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াল। কিছুটা চিন্তিত স্বরে আদ্রিয়ান বলল,

” কিছু কি সিরিয়াস ডক্টর?”

” না। উনি এখন ঠিক আছেন। আসলে হঠাৎ ব্রেইনে মারাত্মকভাবে প্রেশার পরে যাওয়াতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। ঔষধ স্লোলি কাজ করছে। ওনার সবটাই মনে পরেছে ঠিকই। কিন্ত হঠাৎ ওসব নিয়ে ভাবলে মাথায় চাপ পরে। সম্ভবত অতীতের কিছু গভীরভাবে মনে করছিলেন তাই এই অবস্থা। পুরোপুরি সুস্থ হবার আগে ওনার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। এরকম হওয়াটা কিন্তু খুব রিস্কি। চিরকালের মত স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে বা পাগলও হয়ে যেতে পারে। সো বি কেয়ারফুল।”

আদ্রিয়ানের মনে ধাক্কা লাগল শেষ কথাটা শুনে। শুকনো একটা ঢোক গিলে গম্ভীর স্বরে বলল,

” আমি খেয়াল রাখব!”

” হ্যাঁ আপনার বউয়ের খেয়াল তো আপনাকেই রাখতে হবে।”

‘বউ’ কথাটা শুনে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকাল। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হলো ওর। একটা অদ্ভুত শান্তি। ডক্টর বলল,

” আজ তাহলে আসি?”

” জি, ধন্যবাদ।”

অভ্র ডক্টরকে এগিয়ে দিয়ে আসতে গেল। আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখছে অনিমাকে। জাবিন অনিমার পাশে বসল। ওকে ধরে বিছানায় হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে বলল,

” ভাবী, কিছু খাবে এখন?”

অনিমা ভাঙা গলায় বলল,

” না। খেতে ইচ্ছে করছেনা।”

আদ্রিয়ান গম্ভীর স্বরে বলল,

” খেতে ইচ্ছা না করলেও খেতে হবে। শরীরের অবস্থা দেখেছ? কথাও ঠিক করে বলতে পারছেনা। একটু পর আবার মাথা ঘুরে পরে যাবে আমি আবার ডক্টর ডাকব। হসপিটালে দৌড়াবো। এই করব সারাদিন। আমার তো আর কাজ নেই।”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলল,

” আমি কাউকে বলেছি কাজ ফেলে আমায় নিয়ে ভাবতে?”

আদ্রিয়ান নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” দেখ, ঠিক করে কথা বলতে পারেনা অথচ মেজাজ ষোল আনা। দিনরাত ননস্টপ চড় মারলেও এই মেয়ে ঠিক হবেনা। ঠিক গালে হাত দিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় আবার ত্যাড়ামী মার্কা কথা বলবে।”

অনিমা নাহিদের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বলল,

” দেখছেন ভাইয়া, একটা অসুস্থ মেয়েকে কীভাবে বকছে? একটুও দয়া মায়া নেই। নির্দয় লোক একটা।”

জাবিন ঠোঁট চেপে হাসছে। নাহিদও থুতনিতে হাত রেখে মজা নিচ্ছিল। অনিমার কথা শুনে নাহিদ একটু সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বিছানার কোণে বসে বলল,

” ঠিকই তো এডি! মেয়েটা অসুস্থ আর তুই কী প্যাচাল শুরু করে দিয়েছিস। জাবিন যা তো খাবার নিয়ে আয়।”

জাবিন যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে বলল,

” আচ্ছা ভাবি তখন হঠাৎ কী দেখলে বলোতো যে এভাবে ভয় পেয়ে গেলে?”

অনিমার মুখের হাসি সাথেসাথেই মিলিয়ে গেল। তখনকার কথা মনে পরতেই আবার অস্বস্তি হচ্ছে। নাহিদ প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,

” তেমন কিছুনা, উইক ছিল তাই এরকম হয়েছে। ডক্টর বলেছে শুনিস নি? যা খাবারটা নিয়ে আয়।”

” কিন্তু ঐ কাগ..”

আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে বলল,

” তোকে যেতে বলছিতো!”

জাবিন মনে একটু দ্বিধা রেখেই চলে গেল। ও রুম থেকে বেড় হচ্ছিল ঠিক তখনই অভ্র ঢুকছিল। দুজনের আবারও সেই ঐতিহাসিক ধাক্কা লাগল। দুজনেই বিরক্ত হল। কিন্তু এবার আর কিছু না বলে জাবিন চলে গেল, আর অভ্রও ভেতরে ঢুকলো। ওরা তিনজন এমনই টুকিটাকি কিছু কথা বলছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জাবিন খাবার নিয়ে চলে এলো। আদ্রিয়ান ওদের উদ্দেশ্য বলল,

” তোমরা যাও, আমি ওনাকে খাইয়ে আসছি। একা ছেড়ে গেলে একটু খেয়ে বাকি সব ফেলে দেবে।”

ওরা একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে চলে গেল। নাহিদ যেতে নিয়েও পেছন ঘুরে বলল,

” একটু সাবধান হুঁ। খাওয়াতে গিয়ে আবার সারারাত এই রুমেই পার করে দিসনা।”

অনিমা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান একটু তেড়ে যেতেই নাহিদ একপ্রকার দৌড়ে চলে গেল। আদ্রিয়ান হালকা হেসে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। অনিমা হালকা অভিমানী দৃষ্টিতে দেখছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান বিছানাতে বসে প্লেটটা হাতে নিয়ে অনিমার দিকে খাবার এগিয়ে দিল। অনিমা মুখটা ছোট করে বলল,

” আমি নিজে খেয়ে নিতে পারব।”

” চড় খেয়ে খাবে না-কি শুধু খাবারটা খাবে? কোনটা বেটার?”

অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। লোকটা আস্ত একটা বজ্জাত। ওর মতো বাচ্চা মেয়েকে কথায় কথায় এভাবে চড় থাপ্পড়ের ভয় দেখায়। আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

” হা কর।”

অনিমা বাধ্য মেয়ের মত চুপচাপ হা করে ফেলল। কারণ এই ছেলেকে কোন বিশ্বাস নেই। সত্যিই মেরে বসতে পারে। আদ্রিয়ান যত্ন করে অনিমাকে খাওয়াচ্ছে আর অনিমা একদৃষ্টিতে দেখছে আদ্রিয়ানকে। রাগী লুকেও কিউট লাগে ওকে। এইযে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। নাক আর বেবি পিংক পাতলা ঠোঁটটাতে হালকা লালচে ভাব এসছে। অন্যরকম সুন্দর! অনিমার হঠাৎ সেই পেপারের কথা মনে পরল। ওর সবই এখন মনে পরে কিন্তু সবকিছু তলিয়ে জোর খাটাতে হয় মাথায়। আর সেটা করতে গেলেই তীব্র মাথা যন্ত্রণা হয়। ও তাই আপাতত অতীত নিয়ে ভাবেনা। ভেবেও এখন ও কিছু করতে পারবেনা। কিন্তু ছেড়েও দেবেনা। আগে নিজেকে সেভাবে তৈরী করতে হবে। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখনও বাকি আছে। এসব ভাবনা বাদ দিয়ে ও আবার আদ্রিয়ানকে দেখায় মনোযোগ দিল। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিল। মুখ মুছে দিয়ে তাকিয়ে দেখে অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান একটু হেসে অনিমার মুখের ওপর তুরি বাজালো। অনিমা হালকা চমকে উঠল সাথে লজ্জাও পেল তাই চোখ সরিয়ে নিল। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একটু ঝুঁকে বলল,

” আমিতো সম্পূর্ণটাই তোমার মায়াবিনী। আর তোমার জিনিসের দিকে তুমি শুধু তাকিয়ে থাকা কেন যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। এতো লজ্জার কী আছে?”

আদ্রিয়ানের এরকম কথায় অনিমার লজ্জা কমার পরিবর্তে কয়েকগুন বেড়ে গেল। হাতের নখ বারবার চাদরে ঘষছে। ও অন্যদিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,

” আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি যান।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে ধরে শুইয়ে দিয়ে গায়ে চাদর দিয়ে বলল,

” তুমি ঘুমিয়ে পরলে তারপর যাবো।”

” আমি কী বাচ্চা না-কি যে ঘুম পাড়িয়ে তারপর যাবেন?”

” আপাতত তাই। এখন চোখ বন্ধ কর।”

” কিন্তু..”

আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

” চোখ বন্ধ।”

অনিমা অতি অসহায় অবলা বাচ্চার মত চোখ বন্ধ করে ফেলল। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার চুলে আঙ্গুল চালাতে শুরু করল। অনিমা চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। আদ্রিয়ানের স্বাভাবিক স্পর্শও ওর মধ্যে শিহরণ জাগিয়ে দেয়। সেটা আদ্রিয়ানকে বোঝানো অসম্ভব। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিমা ঘুমিয়ে পরল। আদ্রিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে দেখছে ওর মায়াবিনীকে। মনটা অদ্ভুতভাবে অস্হির হয়ে আছে। দিন দিন সবটা জটিল হচ্ছে। ও ওর উদ্দেশ্য অনুযায়ী এগোচ্ছে ঠিকই কিন্তু এখন নতুন চিন্তা মাথায় এসে ভর করল। অনিমার সুস্থ হয়ে ওঠা খুব জরুরি। এই অসুস্থতাকে হাতিয়ার করতে অন্যদের বেশি সময় লাগবেনা। এমনিতেও ও বেশিদিন অনিমাকে আড়াল করে রাখতে পারবেনা। একটা জলজ্যান্ত মেয়েকে এভাবে বেশিদিন আড়ালে রাখা যায়না। তাই তাড়াতাড়ি এগোতে হবে ওকে। অর্ধেক জ্ঞান ভয়ংকর। ওর মনে হচ্ছে ও যেটুকু জানে সেটা অর্ধেক। কিছু একটা আছে যেটা ও জেনেও জানেনা। সেটা আগে জানতে হবে। আদ্রিয়ান অনিমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,

” তোমার কিচ্ছু হবেনা। আদ্রিয়ান নামক বলয় তোমাকে সবসময় সব বিপদ থেকে আড়াল করে রাখবে। আদ্রিয়ান তোমার পিছু কখনও ছাড়বেনা। সেটা তুমি না চাও বা না চাও।”

____________

রিক সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের ওপর পা দিয়ে
একটা রুবিকস কিউব মেলাচ্ছে আর ভাবছে। খুব গভীর ভাবনায় মগ্ন ও। কিছু তো একটা হচ্ছে ওর আশেপাশে কিন্তু ও বুঝতে পারছে না বা বুঝতে চাইছেনা। আজ শুনছিল কোন এক মাদারের বিষয়ে আলোচনা করছে ওর বাবা আর মামা মিলে। ওকে দেখে আলোচনা থামিয়ে দিয়েছে। ইদানিং ওনারা দুজন মিলে খুব ব্যস্ত রাখতে চায় ওকে। কেন সেটাই বুঝতে পারেনা। কিছুই ভালো লাগছেনা ওর। সব অসহ্য লাগছে। আজ কতগুলো দিন হয়ে গেল অনিমার কোন খোঁজই নেই ওর কাছে। ওর পক্ষে আর ধৈর্য্য ধরা সম্ভব নয়। ও ঠিক করে নিয়েছে আদ্রিয়ানের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর ও এসব ছেড়ে শুধু অনিকে খুঁজবে। একটা কোণাও বাকি রাখবেনা। এতে যে যাই বলুক। স্নিগ্ধা এসে দেখে রিক গভীর ভাবনায় মগ্ন। রুবিকস কিউবটাও এখনও মেলাতে পারছেনা। ও কফির মগটা টি-টেবিলে রেখে বলল,

” কী ব্যাপার? সামান্য একটা রুবিকস কিউব মেলাতে তোমার এতো সময় লাগছে?”

” মাথা কাজ করছেনা।”

” ইচ্ছে করে যদি মাথার কাজ বন্ধ করে রাখ তাহলে মাথার আর কী দোষ? তুমি তো বোকা নও রিক দা। কিন্তু কাছের লোকদেরকে অন্ধবিশ্বাস করে বসে থাক। একটা কথা মাথায় রেখ। ইতিহাস সাক্ষী আছে সৎ লোক হোক বা অসৎ লোক তাদের পতনের পেছনে মূল কারণ কিন্তু কাছের লোকই ছিল। পেছন থেকে ছুড়ি কিন্তু ঘনিষ্ঠ লোকেরাই মারে।”

রিক কফির মগটা নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল,

” আজকাল ডক্টরি বাদ দিয়ে ইতিহাস পড়ছিস না-কি?”

স্নিগ্ধা একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করল। কাকে কী বলছে? এই ছেলে সবটা বুঝেও বোঝেনা। ও কী সত্যিই এতোটা অবুঝ না-কি যাদের সবটা দিয়ে বিশ্বাস করে তাদের প্রতি অবিশ্বাস মনে জায়গা দিতে চায়না সেটা বুঝতে পারেনা ও। রিক তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধা একদৃষ্টিতে দেখছে ওকে। রিক ভ্রু কুচকে বলল,

” হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?”

” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”

রিক একটু হেসে কফিতে আবারও চুমুক দিয়ে বলল,

” এতো হ্যাংলা কেন বলতো তুই? নীলপরীও তো তোর বয়সীই ছিল। কৈ ও তো এরকম হ্যাংলা ছিলোনা।”

” একটা কথা কী জানো ভালোবাসলে সব মেয়েই একপর্যায়ে হ্যাংলা টাইপ হয়ে যায়। অনিমা তোমাকে ভালোবাসতো না তাই ওভাবে দেখতো না। কিন্তু যখন কাউকে ভালোবাসবে ঠিক দেখবে।”

রিক রেগে গেল শেষের কথাটা শুনে। শক্ত কন্ঠে বলল,

” না দেখবে না। কাউকে দেখবে না।”

” ভাগ্যকে বদলানো যায়না রিক দা।”

রিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” আচ্ছা তুই তাহলে আমাকে এভাবে কেন দেখছিলি? ভালোটালো বাসিস না-কি?”

স্নিগ্ধা চুপ করে গেল। রিক আবারও কফিতে মনোযোগ দিল। ও অতো গুরুত্ব দিয়ে কথাটা বলেনি। কিন্তু স্নিগ্ধা ভাবছে সত্যিতো! ও কী রিককে ভালোবাসে? এই টান, এই চিন্তা, রিক নীলপরী নীলপরী করলে ওর মাঝেমাঝে হিংসে হওয়া সবকি শুধু বন্ধুত্বের জন্যে? না-কি সত্যিই রিককে ও ভালোবাসে? এটাকে কী সত্যিই ভালোবাসা বলে?

____________

অনিমা সুস্থ হয়ে গেছে তাই কলেজ যাওয়া শুরু করেছে। যদিও এখন আদ্রিয়ানও ড্রপ করে দেয় ওকে মাঝেমাঝে। সেদিনের পর থেকে সবাই জানে যে অনিমা আদ্রিয়ানের পরিচিত কেউ। তাই এতো লুকোচুরির কিছুই নেই। তবে দরকার ছাড়া খুব বেশি আসেনা আদ্রিয়ান। কিন্তু আদ্রিয়ানের এরকম সতর্কতাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। রবিনের সেই ঘটনার পর অনেকেই ব্যাপারটা নিয়ে চর্চা করে চলেছে। কেউ কেউ তো আছেই যারা নয়কে ছয় করতে জানে। আবার কেউ কেউ আছে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কৌতূহলী। সবমিলিয়ে একটা গুঞ্জন তৈরী হয়েছে চারপাশে।

অনিমারা মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে তার বুটভাজা খাচ্ছে। অনিমা বুট চিবুতে চিবুতে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” তোদের প্যাচ আপ কবে হল? এখন এতো গলায় গলায় ভাব?”

অরুমিতা বলল,

” এ আর নতুন কী। এদেরতো চলতেই থাকে।”

স্নেহা হাসতে হাসতে বলল,

” রাত বারোটায় চকলেট, আইসক্রিম নিয়ে হাজির হলে রেগে থাকা যায় তুই বল?”

তীব্র বিরক্তি নিয়ে বলল,

” তাও তো আধঘন্টা মশার কামড় খাইয়েছিস।”

” প্রেম করবি আর এটুকু সহ্য করবিনা? ডাফার প্রেমিক!”

অনিমা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ থাম। দুটো দিন অন্তত যেতে দে? তারপর আবার ঝগড়া করিস।”

অরুমিতা কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে আওয়াজ এলো,

” আজকালকার মেয়েরাও আছে। টাকার জন্যে যা ইচ্ছা করতে পারে। বড়লোক পেলেই ঘাড়ে ঝুলে পরে একদম।”

অনিমা চুপ করে রইল। এরকম বাজে ইঙ্গিত করে কথাবার্তা ওকে প্রায় বলা হচ্ছে এখন। ওর চরিত্র নিয়েও কথা বলে। বিশেষ করে সিনিয়র মেয়েগুলো, সাথে কিছু ছেলেও আছে। যদিও সরাসরি কেউ এখনো বলেনি। অনিমার খুব কান্না পায় তখন কিন্তু পরে সামলে নেয় নিজেকে। আদ্রিয়ানকে কিছু টের পেতে দেয়নি এখনও ও। তীব্র উঠতে নিলেই অনিমা হাত ধরে আটকে নিল। ওরা উঠে চলে যেতে নিলেই ছেলে মেয়েগুলো পথ আটকে ধরল। ফর্সা করে একটা মেয়ে বলল,

” এখন তো যাবেই। সত্যি সবসময়ই তেতো হয়। তা কত দেয় এডি?”

আরেকটা মেয়ে বলল,

” পার ডে দেয় নাকি, পার মান্হ নাও।”

অনিমা বিস্ফোরিত চোখে তাকাল মেয়েটার দিকে। এরকম নোংরা কথা শুনতে হবে সত্যিই ভাবেনি ও। এরআগে ইঙ্গিতে বললেও এভাবে সরাসরি এসে এসব বলবে ও ভাবেনি। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। চোখ দিয়ে ইতিমধ্যে জল গড়িয়ে পরেছে। অরুমিতা আর স্নেহাও শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলার ভাষা পাচ্ছেনা। তীব্র রেগে বলল,

” একদম বাজে কথা বলবেন না। কী জানেন ওর সম্পর্কে? রিডিকিউলাস! পথ ছাড়ুন!”

” এতো বড় বড় কথা মানায় না-কি? আমরা জানি ও আদ্রিয়ানের কেউ হয়না। আর একজন পরপুরুষের বাড়িতে এভাবে ভালো মেয়েরা নিশ্চয়ই থাকেনা।”

তীব্র বলল,

” তাতে আপনাদের কী সমস্যা?”

” সমস্যা তো আছেই! এরকম নোংরা চরিত্রের মেয়েরা আমাদের ভার্সিটিতে থাকবে আর আমরা চুপ থাকব? এডির মতো একজন সেলিব্রিটি নিশ্চয়ই ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্যে ওকে রাখেনি। এরা শুধু একবাড়িতে থাকেনা নিশ্চয়ই একরুমেও থাকে।”

” তাতো অবশ্যই! এসব সেলিব্রিটিদের তো এরকম অহরহ থাকে। ঐযে বাংলায় কি যেন বলেনা? হ্যাঁ রক্ষিতা। এরা ঘরে এরকম দু একটা রক্ষিতা এমনিতেই রেখে দেয়।”

পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা বলল,

” দু একটা রাততো আমাদের সাথেও কাটাতে পারো সুন্দরী। এডির থেকে কম টাকা দেবনা আমরা।”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরল। তীব্রর আর সহ্য হয়নি। ছেলেটার নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিল। অরুমিতা, স্নেহা ওকে আটকাতে চাইছে। অনিমা আর দাঁড়ায়নি ওখানে ছুটে বেড়িয়ে গেল ওখান থেকে। কানে বারবার ‘রক্ষিতা’ শব্দটা বাজছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর। ওরা সবাই ঠিকই তো বলেছে। আদ্রিয়ান আর ওর সম্পর্কের কোন বৈধতা নেই, কোন নামও নেই। তাই লোকেতো এরকম কথা বলবেই। সমাজতো এরকমই।কাঁদতে কাঁদতে গেটের বাইরে এসে আরেকদফা অবাক হল ও। এসব কী? ভেতরে যা হয়েছিল সেটাকি কম ছিল যে এখন এরাও এসে হাজির হল?

#চলবে…

[ রি-চেইক করা হয়নি। টাইপিং মিস্টেকগুলো বুঝে নেবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here