বর্ষার_এক_রাতে পর্ব ৩

#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া


আমার এখন সমস্তটাই স্মৃতিসৌধ,
হৃৎপিন্ডে পিন ফোটানো
কালো ব্যাজের মৌন বিষাদ,
একুশে ভোর, নগ্ন পায়ে শহীদ মিনার,
আমার এখন সমস্তটুক্ এক মিনিটের নীরবতা।

দু’চোখ বেয়ে রাত্রি ঝরে, পাংশুটে রাত,
রক্তমাখা চাঁদের দেহে জোৎস্না উধাও,
উল্টে পড়ে রোদের বাটি,
আমার এখন আকাশ জুড়ে দুঃস্বপ্নের দালানকোঠা।

উঠোনে সাপ
অবিশ্বাসের ভীষণ কালো রক্তজবা,
লকলকে জিভ,
এখন আমার সমস্তটাই লখিন্দরের লোহার বাসর।

আঙুলগুলো ঝ’রে পড়ছে হাত থেকে ফুল,
ঘরের পাশে লক্ষ্মীপ্যাঁচার ধাতব গলা,
আমার এখন শঙ্খচিলের কান্নাভেজা দুপুরবেলা,
শূন্য খা-খা একাকী মাঠ,
ঘাসের ডগায় নীল ফড়িং-এর নিমগ্নতা।

আমার এখন হৃদয় শুধু হৃদয় বোলে
দু’হাত মেলে চাতক পাখি…
আমার এখন বুকের ভেতর
কবর শুধু কবর খোঁড়ার ভারি শব্দ।
দু’চোখ বেয়ে সকাল ঝরে, উল্টে পড়ে স্বপ্নবাটি।
আমার এখন নিজের মধ্যে নিজের কফিন,
সমস্ত রাত করাতকলের কষ্টধ্বনি-
এখন আমার সমস্তটাই পিরামিডের মগ্ন মমি

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর এই কবিতাটা তূবার মনে পড়ছে খুব। আজ জীবিত থেকেও সে মৃত। ভাবতে ভাবতে তূবা আনমনে হেটে চলছিল। তখন একজন লোক বলে উঠলেন, “গাড়িতে উঠে বসুন। আপনাকে স্যার নিয়ে যেতে বলেছেন।”
তূবা লোকটা কে ২ সেকেন্ড সময় নিয়ে দেখল। আর কিছু না বলে সে গাড়িতে উঠে পড়ল। আরেকটা কালো রাত চলে এলো জীবনে। আবার আঁধার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। না জানি এই রাতের ভিড়ে কবে সে বিলুপ্ত হয়ে যায়!

আহফিন ড্রয়িংরুমে বসে ড্রিংক করছে। চোখের পাতা গুলি পড়ছে না তার। ফেলে আসা দিন গুলি নিয়ে সে চিন্তা করল। রাগে শরীর টা কেমন করছে। এক টানে গ্লাসের ড্রিংক শেষ করে জোরে নিশ্বাস ফেলল কয়েকটা। সোফার মাথায় এক হাত ছড়িয়ে দিয়ে হেলান দিল। আজকাল ভেতরটা বড্ড জ্বলে। রাগে না কষ্টে তা বুঝতে পারে না।

তূবা কলিংবেল বাজালে আহফিন এসে দরজা খুলে দিল। একনজর দেখল তাকে। পথ ছেড়ে দাঁড়ালে তূবা ধীরগতিতে ভেতরে ঢুকল। আহফিন দরজা লাগিয়ে দিয়ে তূবা কে সোফায় বসতে বলল। তারপর কিচেনে গিয়ে কিসব করতে লাগল। তূবা আড়চোখে কয়েকবার দেখলও। অল্প সময় যাওয়ার পর আহফিন দুইটা মগ নিয়ে এলো। একটা নিজের হাতে রেখে অপর টা তূবার দিকে এগিয়ে দিল। মাথা খানিক নিচু করে তূবা বড়বড় চোখ নিয়ে মানুষটা কে দেখে নিল। আহফিন মগে দুই চুমুক দিয়েও তূবাকে ওভাবেই বসে থাকতে দেখে বলল

“কফিটা নিশ্চয় আমি তোমাকে ঠান্ডা করতে দেই নি। খাও।”
“….
“কি হলো?”
“আমার লাগবে না।”
“তূবা মুখের উপর কথা আমার ভালো লাগে না। তাই যা বললাম করে নাও।”

এতবার না করতেও তূবার কেমন লাগছে। তাই টেবিল থেকে মগটা তুলে নিল সে। কিন্তু মুখে দিতেও ইতস্তত বোধ করছে। কারণ যতবার সে চা কফি খায় প্রথমবারই ঠোঁট বা জিহ্বা পুড়ে ফেলে। পরে দেখা যায় ভাত খেলে জ্বলে। তাই তূবা কফির মগে দুই তিনবার ফু দিয়ে চুমুক দিল। আহফিনের এই বিষয়টা বড্ড হাস্যকর লাগল। আনমনেই সে হেসে উঠল মুখ ঘুরিয়ে।

“তূবা। নাম টা বেশ সুন্দর।”
“….
“তো তূবা তুমি এমন পথ কেনো বাছলে?”
তূবা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। সাফসাফ বলল
“আমি এখানে যে কারণে এসেছি সেটার বিনিময়ে আপনি শুধু আমায় টাকা দিতে পারেন। এর বেশি কিছুই না।”

আহফিন তখনো শান্ত ছিল। একটু পর তূবার উদ্দেশ্যে বলল,
“বসো।”
“….
হঠাৎ সে ধমক সুরে বলে উঠল “বসতে বলছি।” তূবা ভয়ে কেঁপে উঠল। এমন করে ধমক তার বাবা দিতে পারতেন। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে তূবা বসে পড়ল।

“তোমার সাথে আমার নতুন পরিচয় তাই আবারও বলছি। এক কথা বারবার বলতে আমার মুটেও ভালো লাগে না। মুখের উপর না শব্দ টা শুনতে একদমি রাজি নই। আর এমন করবেও না। হ্যাঁ তোমাকে যেটা বলা দরকার, এখন থেকে আমি যখন তোমাকে আসতে বলব তখনি তুমি আসবে। আর লিলা নামের মেয়েটা কে আমি বলে দিয়েছি ও তোমাকে আর কারো কাছে যেতে বলবে না। কারো খুঁজ তোমার কাছে আসবে না। তুমি আমার জন্যে পার্মানেন্ট। বুঝাতে পেরেছি?”
“….
তূবা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে। লোকটার কথা গুলি অস্বাভাবিক লাগলেও নীরব রইল সে।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তূবা বিছানার উপর বসল। হাল্কা গোল্ডেন কালারের একটা নাইট ড্রেস পরনে তার। গায়ে কিছু আছে কি না বুঝারই কায়দা নেই। লোকটা তাকে একটা শপিংব্যাগ দিয়ে বলল চেঞ্জ হয়ে নিতে। সেও তাই করল। নিজেকে লোকটার হাতের পুতুল মনে হয় তূবার।

আহফিন হাল্কা ড্রিংক করে এসেছে। তূবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখল।
“তূবা তুমি দেখতে খুব আকর্ষণীয়।”
তূবা পিছন ফিরে তাকাল। আহফিন এসে তূবার গালে চুমু দিল। তূবা দাঁত খিঁচে আনল তখনি।

আহফিন তূবার ঠোঁটের কাছে যেতে তূবা বলেই ফেলল
“আমি মদের বাজে গন্ধ নিতে পারি না। বমি আসে আমার।”
আহফিন কোনো উত্তর দিল না। তূবার ঠোঁটে খানিক স্পর্শ করল মাত্র। তারপর তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিল। তূবা পাথরের মতো বসে রইল। “আহ রে আঁধার রাত!”

আহফিন তূবা কে চাদর সহ মুড়িয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। বাথটাবে কিছুক্ষণ বসে রইল একসাথে। আজ আহফিন তূবার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল। মনের কৌতূহলের বাসাটা আরো বড় হয়ে গেল তার। মেয়েটা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি কৌতূহল উদ্দীপনায় ভরপুর।

তূবা একটা সুতির থ্রীপিজ পরে বাহিরে এলো। লোকটা ঘরে নেই। তূবা ভিজে চুল নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে যায়। আকাশে ধ্বনি হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। বর্ষার সময় টা তূবা মন্দ লাগে না। তার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল। কিন্তু গরম উত্তপ্ত মনটা এই বাতাসে ঠান্ডা হওয়ার নয়।

“ভেজা চুলে তুমি,
অপরূপা নারী।
মনের পিঞ্জরে রাখিব বাঁধি,
কবু উড়িতে দিবো নাহি।

টুপটুপে চুলের পানি
যেন গভীর সমুদ্রের মুক্তমনি।
ভেজা চুলের সুভাসে
মরিব আমি বারেবারে।

নিজেকে খুঁজে চলিব তোমার ওই ভেজা চুলে।”

কয়েক মিনিট হয়েছে আহফিন তূবার পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেয়েটা হয়তো কিছু নিয়ে ভাবছে তাই তার উপস্থিতি টের পায় নি। আহফিন তূবার এক বাহুতে হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে গেল। কালকের মতো আজও তূবা কে কোলবালিশের ন্যায় জড়িয়ে ধরে চোখ বুজল। তূবা মুখ ফিরে নিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইল। আহফিন কি যেন মনে করে তূবার গালে একটা চুমু দিয়ে আবার মুখ গুঁজে শুয়ে পরল। তূবা তখনো চুপ। টাকা তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই লোকটার এমন স্বাভাবিক ব্যবহার তার একদম ভালো লাগছে না। তূবার ভেতরে নিবুনিবু একটা রাগ জন্মায় লোকটার প্রতি। এক ব্যর্থ রাগ!

চলবে♥

(আসসালামু আলাইকুম। গল্পের সুবিধার্থে একাধারে তিন পর্ব দেওয়া হয়েছে। আপনারা তো জানেনই আমি একদিন পরপর গল্প দিব আশা করি ধৈর্যধরে পড়বেন। ভালোবাসা নিবেন♥)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here