বসন্ত কন্যা পর্ব -২৫+২৬+২৭+২৮

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৫
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

পড়ার টেবিলে বসে আছে ফয়সাল। রাত জেগে পড়ার অভ্যাস তার। কিন্তু এই কয়দিন পড়ায়ও মন বসছে না ঠিকভাবে। বসবে কিভাবে, মনটা যে মোটেও ভালো নেই তার। হঠাৎ খেয়াল করলো ওর দরজার ওপাশে একটা ছায়ামূর্তি ঘুরঘুর করছে।

ফয়সাল মৃদু স্বরে বলল – কে ওখানে?

প্রথমবার ডাকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো – কে ওখানে?

ফারিয়া গুটি গুটি পায়ে ফয়সালের সামনে এসে দাঁড়ালো। ফয়সালের দরজাটা খোলাই ছিল, লক করেনি শুধু চাপিয়ে রেখেছিল।

ফয়সাল ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো – তুই এখানে ,এত রাতে? কিছু বলবি?

ফারিয়া অস্ফুট স্বরে জবাব দিল – হুম।

– কি বলবি?

ফারিয়া আমতা আমতা করে বলল – সেদিন তোমাকে ঐ চিঠিটা নিশা আপু লিখেনি, আমি লিখেছিলাম।

ফয়সাল ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল – জানি আমি।

ফারিয়া বেশ অবাক হলো, জিজ্ঞেস করলো – তবে যে নিশা আপুকে তুমি ভীষণ অপমান করলে, আর আমাকে কিছুই বললে না।

ফয়সাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল – এটাই তো ভুল আমার। তখন টাকায় আর রাগে আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। তুই এখান থেকে যা, এত রাতে তোকে কেউ আমার রুমে দেখলে খারাপ মনে করবে।

– আমায় কেন ভালোবাসো না ফয়সাল ভাই?

মুচকি হাসি দিল ফয়সাল, উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল – ভালোবাসা? কি বুঝিস তুই ভালোবাসার? বয়স কত তোর? এই বয়সে তোর ভিতরে আমাকে নিয়ে যেটা চলছে ওটা ভালোবাসা না শুধুই মোহ। সময়ের সাথে সাথে যেটা কেটে যাবে।

– আর যদি না কাটে তবে কি তুমি আমায় ভালোবাসবে ফয়সাল ভাই?

– এইটুকু বয়সে তোর মাথায় এসব চিন্তা আসে কোথা থেকে ফারু? কেবল এসএসসি দিয়েছিস। তোর না স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া, মাথা থেকে এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা কর।

– তুমিই যদি আমার না থাকো ফয়সাল ভাই তাহলে আমি ডাক্তার হয়ে কি করবো বলতে পারো? আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও যে তোমারই জন্য।

– স্বপ্ন কখনও অন্য কারো জন্য দেখতে হয়না ফারু, স্বপ্ন দেখতে হয় নিজের জন্য।

– কিন্তু আমার গোটা স্বপ্নজুড়েই যে তুমি।

– এসব কেমন কথা ফারু, বয়স দেখেছিস তোর আর আমার। তুই পুচকি আর আমি কত বড়।

তেতে উঠল ফারিয়া, রাগী কন্ঠে বলল – একদম পুচকি বলবে না। শুনেছি নিশা আপু আর তার হাজবেন্ডের বয়সের ডিফারেন্স ১০ বছর সেখানে তোমার আর আমার বয়সের ডিফারেন্স মাত্র ৬ থেকে ৭ বছর।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফয়সাল, এই মেয়েকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। মেয়েটা বড্ড একগুঁয়ে। গম্ভীর কন্ঠে বলল – এখান থেকে যা এখন ,না হয় তোর গালে দুই একটা চড় থাপ্পর বসিয়ে দিলে আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবি।

ফারিয়া মুখ বাঁকালো, বলল – না আমি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদি আর না আমি তোমার চড় থাপ্পরকে ভয় পাই।

ফয়সাল দাঁতে দাঁত চেপে বলল – যাবি তুই এখান থেকে?

– যাচ্ছি বাবা, কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই এখন যেহেতু নিশা আপু নেই আমি কিন্তু তোমার পিছু ছাড়ছি না।

ফয়সাল কিছু বলবে তার আগেই দৌড়ে পালালো ফারিয়া। ফয়সাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো।

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল – দুনিয়াটা বড্ড অদ্ভুত তাই না? আমি যাকে চাই সে আমায় চায় না, আর যে আমায় চায় তাকে আমি চাই না।

________________________

সকাল সকাল উঠেই দৌড়াদৌড়ি শুরু নিশার। বিয়ের বাকি আর মাত্র কয়টা দিন এখনও আবসারের এই অত্যাচার। বিয়ের পর কি করবে আল্লাহ মালুম। নিশা এখন নিজের উপর নিজেরই বেশ বিরক্ত , দুনিয়ায় এত ছেলে থাকতে এই ভয়ংকর মানুষটাকেই কেন তার ভালোবাসতে হলো, সেদিন যদি বিয়ের সময় বিয়ে করবে না বলে একটু ঝামেলা করতো তাহলেই হয়তো আজ এই ডায়াবেটিস রোগীর মতো সকাল সকাল দৌড়া দৌড়ি থেকে রক্ষা পেত। পার্কে যত মানুষ রোজ সকালে দৌড়াতে আসে তাদের অধিকাংশই ডায়াবেটিস রোগী। নিশার নিজেকেও এই মুহূর্তে ডায়াবেটিস রোগীই মনে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে আফসোসের বিষয় হলো এই আবসার নামক ভয়ংকর প্রানীর হাত থেকে আয়ানের বউ মিষ্টি সেও রেহাই পায়নি। সেও সকাল সকাল কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। নাহ এভাবে আর পারা যায় না। এবার এর একটা প্রতিবাদ করা অবশ্যই প্রয়োজন। খাওয়ার টেবিলে শুধু মনে থাকে নিশা রোগা পটকা দূর্বল তখন ঠেসে ঠুসে খাওয়ানো হয়, আর দৌড়াদৌড়ির সময় মনে হয় নিশা বেশ সবল, এই সময় নিশা দূর্বল ওকে দৌড়াদৌড়ি করিয়ে লাভ নেই বলে ছেড়ে দেওয়া হয় না। নাহ এর একটা বিহিত করা দরকার ‌।

নিশা দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে কাকতাড়ুয়ার মতো আবসারের পথ আটকে দাঁড়ালো। আবসার ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল – কি সমস্যা?

– সমস্যা তো অনেক এখানে বলা যাবে না একটু আড়ালে আসুন।

আবসার দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল – বাহ আমার বউ দেখি বেশ রোমান্টিক হয়ে গেছে, এখন যখন তখন আড়ালে আবডালে ডাকছে‌।

– দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না‌। ঐ পাশটায় আসুন বলে ধপধপ পা ফেলে নিশা চলে গেল।

আবসারও নিশার পিছু পিছু গিয়ে নিশার পাশে দাঁড়ালো।

– কি বলবে বলো।

নিশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল – প্রতিদিন এইভাবে ডায়াবেটিস রোগীর মতো দৌড়াদৌড়ি, এগুলো কি ধরনের অত্যাচার?

– ক্যাপ্টেনের বউ হলে এমন একটু আধটু অত্যাচার তো সইতেই হবে বউ।

– এই এর জন্যই আমি এই বিয়েটা করবো না বলেছিলাম কিন্তু কি হলো ? পোড়া কপাল আমার ( এক হাত দিয়ে কপাল চাপড়ে )

– এখন তো আর কিছু করার নেই বউ , বিয়েটা যখন একবার করে নিয়েছো তখন তোমার বরের সব অত্যাচার যে মুখ বুজে সহ্য করে নিতে হবে।

– পারবো না আমি ,রোজ সকাল সকাল এত অত্যাচার আর ভালো লাগে না। এত দিন তো তাও একটু ভালো ছিলাম এখন তো আবার পার্লামেন্টভাবে এই বাড়িতে থাকতে হবে, তাও আপনার মতো একজন ভয়ংকর মানুষের সাথে।

আবসার আর একটু এগিয়ে গেল , নিশার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মুখটা নিশার কানের কাছে নিল। তারপর ঘোর লাগা কন্ঠে বলল – আর তো কিছু দিন, তুমি একবার আমার রুমে শিফট হলে আর এই অত্যাচার করবো না। তখন তো রাত দিন ২৪ ঘন্টা শুধু তোমাকে আদর করতে ব্যস্ত থাকবো এইসব দৌড়াদৌড়ির আর সময় কোথায় জান।

নিশা বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে আবসারের দিকে তাকালো। আবসার ভাবলেশহীন ভাবে দৌড়াতে চলে গেল। নিশা এখনও ভ্যাবলার মতো আবসারের দিকেই তাকিয়ে আছে।

________________________

জগিং শেষে সবাই বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হতে চলে গেল। যাওয়ার আগে আবসার আবিদা বেগমকে বলে গেল – মা আমার জন্য এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও।

আবিদা বেগম গতকালের মতো আবার নিশাকে দিয়েই কফিটা পাঠালো । ঐ বজ্জাত লোকের রুমে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে না থাকলেও নিশাকে যেতেই হলো। দরজাটা চাপানো ছিল। নিশা চুপচাপ গিয়ে কফির মগটা টেবিলে রেখে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই দরজাটা আটকে দিল আবসার। কেবলই ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেড়িয়েছিল আবসার। চোখে মুখে পানির ছিটা। চোখের ঘন কালো পাপড়ির উপর শিশির বিন্দুর মতো ফোটা ফোটা পানি। নিশা এক দৃষ্টিতে আবসারের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন ঘোর লেগে গেছে ওর। হঠাৎ আবসারের দুষ্ট কথায় ঘোর কাটলো নিশার।

আবসার বলল – বাসরটা কি এখন চোখ দিয়ে আমাকে দেখে দেখেই সেড়ে ফেলবে বউ?

থতমত খেয়ে গেল নিশা। লজ্জায় গাল দুটো রক্তিম বর্ন ধারন করলো। ইসসসস এই লোকটাও না বড্ড ঠোঁট কাটা। এই ভাবে কেউ লজ্জা দেয় নাকি?

– হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না এখন কাছে এসো।

আবসারের কথায় প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো নিশা। নিশার এমন দৃষ্টিতে হেসে ফেলল আবসার। একদম ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসি তবে এই হাসির কোনো শব্দ নেই , কি সুন্দর সেই হাসি। নিশা আবার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে।
#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৬
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আবসারের গায়ের রংটা নিশার থেকে হালকা একটু চাপা। নিশা তো শ্যামবর্না তাহলে এই পুরুষটি কি কালো? নাহ কালোর মধ্যেও তো পড়ে না, তাহলে এই পুরুষটির গায়ের রংটাকে ঠিক কোন বর্নের মধ্যে ফেলা যায় ভেবে পাচ্ছে না নিশা। তবে এই হালকা শ্যাম কৃষ্ণ মিশ্রিত পুরুষটিকে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ মনে হচ্ছে নিশার কাছে। নিশা আবার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে।

আবসার বলল – দেখো আমার কিন্তু এভাবে চোখে চোখে বাসর সারলে চলবে না সরাসরি বাসর করতে হবে।

আবার থতমত খেয়ে গেল নিশা। এই লোকের সামনে আর থাকা যাবে না তাহলে মিনিটে মিনিটে লজ্জায় পড়তে হবে। রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াতেই আবসার নিশার হাতটা ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে নিল।

– যেতে বলেছি তোমাকে?

– থাকতেও তো বলেননি।

– কাছে আসতে তো বলেছি।

– যাবো না আমি আপনার কাছে।

– কেন আসবে না?

– কেন আসবো?

– এখন আর ভয় পাও না আমাকে?

– না

– কেন?

– আগে আপনি আমার বান্ধবীর ভাই ছিলেন আর এখন আমার বর। আর বরকে ভয় পেতে হয় না ভালোবাসতে হয় বলেই দাঁত দিয়ে জিহ্বা কাটলো নিশা। আবার সে বেফাঁস মন্তব্য করেছে। এবার নির্ঘাত ফেঁসে যাবে। এমনি লোকটা যে পরিমানে লুচু। নিশা আড় চোখে আবসারের দিকে তাকালো আবসারের ঠোঁটে ঝুলছে দুষ্ট হাসি।

আবসার বলল – কি বললে আবার বলো।

নিশা আমতা আমতা করে বলল – কই কিছু না তো।

আবসার বলল – একদম ঠিক বলেছো বরকে ভালোবাসতে হয় কিন্তু তুমি তো আমায় মোটেও ভালোবাসো না শুধু দূরে দূরে থাকো বলে নিশাকে আরেকটু টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল আবসার। নিশার সাথের মধ্যকার দূরত্বটা ঘুচিয়ে নিল। নিশা থমকালো , চমকালো। আবসার আলতোভাবে নিশাকে জড়িয়ে ধরলো। কেঁপে উঠলো নিশা।

– এই সামান্য স্পর্শে যদি এত কাঁপাকাঁপি করো তাহলে একটু গভীরভাবে ছুঁয়ে দিলে কি করবে তুমি?

নিশা লজ্জায় আবসারের বুকে মুখ লুকালো। লোকটার মুখে কিছু আটকায় না ‌।

– আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছো বসন্ত কন্যা?

নিশা অবাক চোখে আবসারের মুখের দিকে তাকালো। আবসার ঠোঁট কামড়ে নিশার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।

– কিছু শুনতে পাচ্ছো তুমি? আমার প্রতিটি স্পন্দন শুধু তোমাকেই চাইছে বসন্ত কন্যা। আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন শুধু তোমারই নামে বউ।

এক টুকরো প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল নিশার মনে। একটা শীতল রক্তস্রোত বয়ে গেল নিশার শিড়দাড়া বেয়ে।
দুই হাত বাড়িয়ে নিজেও আবসারকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। আবসারের ঠোঁটে ফুটে উঠল প্রশান্তির হাসি।

_________________________

ফয়সাল রুমেই ছিল রেডি হচ্ছে একটু পর মেডিকেলের উদ্দেশ্য বের হবে। ফারিয়া এসে দাঁড়ালো দরজার সামনে। ফয়সাল আড় চোখে একবার দেখে নিল ফারিয়াকে। হাতঘড়িটা পড়তে পড়তে প্রশ্ন করলো – ওখানে ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কিছু বলার থাকলে দ্রুত বলে বিদায় হ।

– তাড়িয়ে দিচ্ছো ফয়সাল ভাই, দেও দেও এখন তো তোমারই সময় বলে ফয়সালের রুমে ঢুকে পড়লো।

ফয়সাল ভ্রু কুঁচকে ফারিয়ার দিকে তাকালো, বলল – ফাইজলামি না করে কি বলতে এসেছিস বলে সামনে থেকে দূর হ।

ফারিয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো – এমনি এমনি আসিনি কাজেই এসেছি।

ফয়সাল ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো – তোর আবার কি কাজ?

ফারিয়া বই খাতা মেলে ফয়সালের সামনে ধরলো , বলল – এই অংকটা বুঝিয়ে দেও অনেকক্ষন চেষ্টা করলাম পারছি না কিছুতেই।

অংকের কথা শুনে ফয়সাল আর কিছু বলল না। নিজেও টেবিলে বসে ফারিয়াকেও বসতে বলল। ফারিয়া খুশি মনে ফয়সালের পাশের চেয়ারটা নিয়ে বসে পড়লো। ফয়সাল হাত ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে অংক বোঝাচ্ছে আর ফারিয়া এক দৃষ্টিতে ফয়সালের দিকে তাকিয়ে আছে। এই অংক বোঝা তো বাহানা মাত্র ও তো মন ভরে ফয়সালকে একটু দেখতে এসেছে।

ফারিয়া ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো – এত সুন্দর কেন তুমি ফয়সাল ভাই?

ফয়সাল বিরক্ত হলো, ভ্রু কুঁচকালো, ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে জোরে এক ধমক দিল।

দাঁতে দাঁত চেপে বলল – ফারুর বাচ্চা

– এসব কি কথা ফয়সাল ভাই, আমি ফারিয়া আমার তো এখনও কোনো বাচ্চা হয়নি। তবে তুমি চাইলে হবে তোমার আর আমার বিয়ের পর।

ফয়সালের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এইটুকু মেয়ের মুখে এইসব কি ধরনের কথা। মুখ দেখেও মনে হচ্ছে না কোনো লজ্জার আভাস আছে। মেয়েটা লাজ লজ্জা কি সব গুলিয়ে খেয়ে ফেললো। এই মেয়ে তো নিজেই বাচ্চা সবে এসএসসি দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে এর মধ্যে সে নিজের বাচ্চার কথাও চিন্তা করছে? ফয়সাল হতবম্ব, নাহ এই মেয়ের সামনে এই মুহূর্তে থাকা যাবে না থাকলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবে। ফয়সাল উঠে দাঁড়ালো, দ্রুত পায়ে বাড়ি ত্যাগ করলো। আর যাওয়ার আগে ফারজানা বেগমকে বলে গেল ” মা আমি কলেজে যাচ্ছি। ”

____________________________

বিকেলে বাড়ির সবাই মিলে গেল শপিং করতে। তিন তিনটা বিয়ের কেনাকাটা চারটি খানে কথা নাকি। রিশাও এসেছে, শপিং এর কথা শুনেই তো নিশা ভয় পেয়েছিল আবসার না আবার গিয়ে বিয়ের জন্যও ঐ ল্যাহেঙ্গা, শাড়ি বাদ দিয়ে ফর্মাল ড্রেস খোঁজে, উনার তো আবার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। নাহ নিশার চিন্তা ভাবনাকে মিথ্যা প্রমান করে ল্যাহেঙ্গা আর শাড়িই কিনেছে আবসার। নিশা, আয়না আর কাজল একই জিজাইনের একই কালারের ল্যাহেঙ্গা কিনেছে। আর আবসার, ইয়াসিন আর শাহরিয়ার একই রকমের, একই কালারের শেরওয়ানি কিনেছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আবসার এসে নিশাকে হাত ধরে টেনে একটু আড়ালে নিয়ে গেল।

– আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ওরা সবাই তো ওখানে।

আবসার কোনো কথার উত্তর দিলো না। টেনে এনে একটা চেয়ারে বসিয়ে নিশার পায়ের কাছে বসে পড়লো। পায়ে হাত দিতেই নিশা লাফিয়ে উঠলো।

– একি করছেন পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?

আবসার গম্ভীর কন্ঠে শুধালো – চুপচাপ বসো আমাকে আমার কাজ করতে দেও।

নিশা বলল – পায়ে হাত দিবেন না প্লিজ। পাপ লাগবে আমার।

আবসার ধমকে উঠলো নিশাকে, বলল – চুপ করে বসতে বলেছি না এত কথা বলছো কেন?

চুপসে গেল নিশা। আবসারের মুখের উপর আর কিছু বলার সাহস হলো না। আবসার নিশার পায়ের জুতা জোড়া খুলে ডাস্টবিনে ফেলে হনহন করে কোথাও একটা চলে গেল। আর যাওয়ার আগে নিশাকে কড়া গলায় বলে গেছে – এখান থেকে এক পাও এগোবে না। যেভাবে বসিয়ে রেখে গেছি এসে যেন সেভাবেই পাই। না হয় পা দুটো কেটে ঐ চার রাস্তার মোড়ে ভিক্ষা করতে বসিয়ে দেব।

নিশার আর নড়াচড়ার সাহস হলো না। সে সটান হয়ে ঐ একই জায়গায়ই বসে আছে। মিনিট দশেক পর এক জোড়া স্লিপার এনে পরম যত্মে নিশার পায়ে পড়িয়ে দিল। শান্ত কন্ঠে বলল – যেগুলো পড়ে তোমার কষ্ট হবে সেগুলো তুমি পড়ো কেন? ফের যেন এমনটা আর না দেখি।

নিশা চুপচাপ বসে আছে। বাসা থেকে আসার সময় একটু হিল পড়ে এসেছিল। এমনি ওর হিল পড়ার অভ্যাস নেই তবে আবসারের সাথে লম্বার একটু সামঞ্জস্যতা রাখার জন্যই হিল পড়ে এসেছিল। হাঁটতে যদিও একটু কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু কাউকে তো বুঝতে দেয়নি। সবার সাথে যথেষ্ট স্বাভাবিকভাবেই হেঁটেছে তাহলে আবসারের চোখে পড়লো কিভাবে ভেবে পাচ্ছে না নিশা।

শপিং শেষে প্রায় রাত ১০ টায় বাড়ি ফিরেছে সবাই। আজ আর নিশাকে রাতে ছাদে ডাকেনি, খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে বলেছে। সারাদিন শপিং করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে মেয়েটা। শপিং মলে নিশার মলিন, ঘর্মাক্ত মুখটা দেখে বড্ড মায়া লেগেছিল আবসারের। ইচ্ছে করছিলো তখনই মেয়েটাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসতে কিন্তু পারেনি।
#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৭
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েকটি দিন। আজ নিশা, আবসার, আয়না, ইয়াসিন, কাজল , শাহরিয়ার গায়ে হলুদ। এই কয়দিন বিয়ের কাজে কর্মের ধকলে দেখা মেলেনি নিশা আর আবসারের, যখনই দেখা হয়েছে তখনই ব্যস্ত তারা। একে অপরের সাথে সময় কাটানোর মতো ফুসরত মিলেনি। তবে রোজ সকালে আবসারের রুমে কফি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল নিশার। সে নিয়ম করে রোজই আবসারের রুমে কফি নিয়ে যেত আর আবসার রোজই এই ফাঁকে নিশার সাথে দুষ্টুমি শুরু করে দিতো।

এক সাথেই স্টেজ সাজানো হয়েছে। নিশা সেজেগুজে বসে আছে, আর পাশেই বিরস মুখে বসে আছি আবসার । হলুদে যেন তার এলার্জি আছে। একটু পরপর একেকজন এসে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে আবার মিষ্টি খাইয়ে যাচ্ছে , কি বিরক্তিকর পরিস্থিতি। নিজেকে যেন এখন একটা হলুদের কারখানা মনে হচ্ছে আবসারের। নিশাও বেশ ক্লান্ত কিন্তু মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। করার কিছু নেই, আবসার একটু পর পর নিশার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটার মুখটা ভীষণ শুকনো লাগছে। আয়না উঠে চলে গেছে, সে এবাড়ির মেয়ে মুখের উপর একটা কথা বলতে পারে কিন্তু নিশা , সে তো এ বাড়ির বউ, নতুন বউ , ওর যে ভীষণ অসস্থি হচ্ছে ক্লান্ত লাগছে সেটাও বলতে পারছে না লজ্জায়। কে আবার কি মনে করেন? পরে বদনাম রটে যাবে বউ বাড়িতে আসার আগেই অধিক চালাকি শুরু করে দিয়েছে। কাজলও বাসায় চলে গেছে। কাজল আবার একটু উড়নচন্ডী টাইপের মুখে কোনো কথায় আটকায় না, ক্লান্ত লেগেছে উঠে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। আর নিশা এখনও ভ্যাবলার মতো বসে আছে। আর ও বসে আছে বলে আবসারও বসে আছে না হয় এই অনুষ্ঠানে আবসারকে কেউ মেরেও বসিয়ে রাখতে পারতো না। মনে মনে খুব বিরক্ত আবসার। নাহ এভাবে আর বসে থাকা যায় না। এই মেয়ে তো উঠার নাম গন্ধই নিচ্ছে না। আবসার উঠে দাঁড়ালো। নিশাকে মৃদু স্বরে ধমকে বলল – ওঠো

নিশা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আবসারের দিকে তাকালো। আবসার আবার ধমক দিয়ে বলল – কি বলছি শোনোনি? ওঠো তাড়াতাড়ি আর আমার সাথে এসো বলে গটগট করে হাঁটা ধরলো।

নিশাও উঠে দাঁড়ালো, মুখ ভর্তি হলুদ। আবসারের পিছু পিছু পা চালালো। আবসারের আদেশ অমান্য করার মতো বুকের পাটা ওর এখনও হয়নি। যাওয়ার পথে দুই একজন মহিলা জিজ্ঞেস করেছে অবশ্য যে কোথায় যাচ্ছো, নিশা উত্তর দিয়েছে ওয়াশ রুমে যাচ্ছি।

আবসারের রুমের কাছে যেতেই নিশার হাত ধরে রুমের ভিতরে নিয়ে গেল আবসার। দরজাটা লক করে দিয়ে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করলো। পানি দিয়ে হালকা ভিজিয়ে নিল রুমালটা। নিশার কাছে এসে নিশার গাল থেকে হলুদগুলো মুছে দিতে শুরু করলো।

অস্থির কন্ঠে নিশাকে শুধালো – অসহ্য লাগছে তোমার? ইসসসস গালে কত হলুদ দিয়েছে, যেন গালের উপর হলুদের আর একটা আবরন বানিয়ে দিয়েছে।

নিশা এক দৃষ্টিতে আবসারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে ওর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ইসসসস ওর ভাগ্যটা বুঝি সত্যিই এত ভালো যে আবসারের মতো এমন একজন কেয়ারিং হাজবেন্ড পেয়েছে, যে ওকে এতটা ভালোবাসে।

আবসার আবার অস্থির কন্ঠে বলল – তোমার কি ক্ষুধা পেয়েছে? তোমার মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন?

নিশার ভ্রু কুঁচকে এলো। ক্ষুধা পেয়েছে মানে কি? উনার সামনেই যে এতক্ষন এত এত মিষ্টি গিললাম এর মধ্যে আবার ক্ষুধা পাবে কিভাবে? ও কি রাক্ষস নাকি?

আবসার নিশার গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল – কি হলো কথা বলছো না কেন? এমন শুকনো লাগছে কেন তোমার মুখটা? শরীর খারাপ লাগছে?

নিশা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল – এত উতলা হবেন না ক্যাপ্টেন সাহেব আমি একদম ঠিক আছি, আমার একটু ক্লান্ত লাগছে।

আবসার নিশাকে আদেশের সুরে বলল – এতক্ষন ওখানে এভাবে তোমাকে বসে থাকতে বলেছে কে? যাও এখনই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

– কিন্তু……

আবসার বুঝতে পারলো নিশার মনের কথা। নিশাকে ভরসা দিয়ে বলল –
– কোনো কিন্তু না। এদিকটা আমি সামলে নেব তুমি এখন গিয়ে বিশ্রাম করো।

__________________________

তিন বান্ধবীর বিয়ে আজ এক সাথে। তিনজনই হুবহু একই রকমভাবে সেজেছে। কাউকে কারো থেকে কম লাগছে না। কত স্বপ্ন ছিল তিন বান্ধবীর যে এক সাথে, একই রকম সেজে বিয়ে করবে। সেই স্বপ্ন যে এভাবে সত্যি হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি কেউই। তিনজনই পাশাপাশি বসে আছে। ক্যামেরা ম্যানকে দিয়ে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে। এদের তিনজনের জন্য স্টেজে যেন আর কেউ জায়গাই পাচ্ছে না। আবসার, ইয়াসিন আর শাহরিয়ার স্টেজের এক কোনে এতিমের মতো পড়ে আছে। এই তিন বান্ধবীকে দেখে মনে হচ্ছে এখানে বর ছাড়া বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের দিনও যদি বউয়ের পাত্তা না পেয়ে ঘুরতে হয় এর চেয়ে নির্মম আর কি হতে পারে। আবসার তাও গম্ভীর মুখভঙ্গি নিয়ে বসে আছে, তাকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে সে বিয়ে করতে এসেছে নাকি যুদ্ধ, ইয়াসিন অসহায়ের মতো মুখ করে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে, আর শাহরিয়ার মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে দিবে, এমনি সে যে পরিমাণ ছিঁচকাদুনে তার ভিতরে আবার বিয়ের দিনও বউয়ের পাত্তা পাচ্ছে না। প্রায় হাজারখানেক ছবি তুলল তিন বান্ধবী কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই ছবিগুলর কোথাও তাদের বরের কোনো অস্তিত্ব নেই।

_________________________

বিয়ে শেষে এখন বিদায়ের পালা। তিন বান্ধবী গলাগলি বেঁধে কান্না করতে করতে প্রায় বেহুঁশ। অন্য কেউ সুযোগই পাচ্ছে না। আবিদা বেগম, নদী বেগম হতবম্ব হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে, এরা যে হারে গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদছে মনে হচ্ছে কেউ মরে টরে গিয়েছে। তাদের মেয়ের বিদায়ে তারা একটু মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবে কিন্তু এখানে তাদের কান্নার কোনো সুযোগই নেই এরা তিন বান্ধবীকে শান্তনা দিতে ব্যস্ত।কান্নাকাটি করতে করতে তিনজনই নাকের জলে , চোখের জলে একসাথ করে সাজ নষ্ট করে ফেলেছে। এত কান্নাকাটির পরও এদের কান্না শেষ হয়নি, টানা টানি করেও এদের গাড়িতে ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। টেনে গাড়িতে উঠালে আবার নেমে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেয়। আত্মীয় স্বজন যারা এসেছিল তারাও সবাই হতবম্ব। বোনের বিদায়ে কোথায় একটু মন খারাপ হবে আবসারের সেখানে সে এখন প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে। আর উপায় না পেয়ে কোলে তুলে নিল নিশাকে, আর ইয়াসিন আর শাহরিয়ারকেও আদেশ দিল আয়না আর কাজলকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসতে। এ ছাড়া আর এদের কান্না থামানোর কোনো উপায় নেই।

আকর্ষিক ঘটনায় হকচকিয়ে গেল তিনজনই। তিনজনের কান্নাই থেমে গেছে। হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে যে যার বরের দিকে। এই সুযোগে তিনটাকেই গাড়িতে বসিয়ে গাড়ির দরজা লক করে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। নিশার যেন এখনো চমকানোর ঘোর কাটেনি, গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে। আবসার একটু ঝুঁকে নিশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল – এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই দেখছে।

সত্যিই তো, এতক্ষন খেয়ালই ছিল না। নিশা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরালো। এতগুলো মানুষের মধ্যে এতক্ষন কিনা ও ভ্যাবলার মতো আবসার দিকে তাকিয়ে ছিল। গাড়িতে বসা আয়ান, মিষ্টি আর আবসারের দুজন কাজিন মিটিমিটি হাসছে। এদের হাসি যেন নিশার লজ্জা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

_________________________

আবসারের বাসর ঘরের সামনে আয়ান আর ওর কাজিনরা দাঁড়িয়ে আছে , উদ্দেশ্য টাকা না দিলে আবসারকে বাসর ঘরে ঢুকতে দিবে না। ওদের সাথে রাকিব আর নিলয়ও আছে। যদিও এই সাহসটা করে উঠতে ওদের অনেকটা সময় লেগেছে, আবসার নামক এক ভয়ংকর প্রানীর বাসর ধরবে বলে কথা। তবুও অনেক সাহস সঞ্চয় করে আজ ওরা এখানে এসেছে , আবসার যদি ধমক দেয় দুটো ধমক খাবে তবুও এখান থেকে নড়চড় নেই। রাকিব তো মনস্থির করেই এসেছে আজ আবসারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছাড়বে ,এই লোকটার জন্য ওরা আয়ানের বাসরের টাকা পায়নি ওরা। তাতে যদি আজ যুদ্ধ করতে হয় করবে তবুও টাকা নিয়েই ছাড়বে।
রাকিব সবাইকে উস্কে দিতে বলল –

” এবারের সংগ্রাম বাসরের টাকা আদায়ের সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম আমাদের অধিকারের সংগ্রাম।
সাহস যখন করেছি সাহস আরও করবো,
তবুও বাসরের টাকা আদায় করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। ”

রাকিবের সাথে সবগুলো যেন আজ কোমড় বেঁধে নেমেছে। বাসরের টাকা হাতিয়ে ছাড়বেই ছাড়বে। কিন্তু আবসার সামনে আসতেই যেন সবগুলো চুপসে গেল, এখন আর কেউ কথা বলছে না। এমনকি রাকিবের মুখ থেকেও কথা বের হচ্ছে না। এই মানুষটা সামনে আসলেই ওর বুক ধরফর করা শুরু করে। রাকিব শুধু ভয়ে এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।

আবসার ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল – কি হয়েছে?

আয়ান আমতা আমতা করে উত্তর দিল – ওরা আসলে…..

আবসার আয়ানকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে বলল – টাকা চাই , না হলে আমাকে বাসর ঘরে ঢুকতে দিবে না? কত টাকা চাই?

এবার যেন রাকিব একটু সাহস পেল। মিনমিনিয়ে বলল- বিশ হাজার।

আবসার এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল – আয়ানের কাছে পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিলে আমার কাছে এত কম কেন?

রাকিব আমতা আমতা করছে কিছু বলছে না। আবসার সবাইকে অবাক করে পুরো পঞ্চাশ হাজারই দিয়ে দিল, তাও ক্যাশ। সবাই হতবাক, নড়তে চড়তে যেন ভুলে গেছে‌। অতিরিক্ত শকডে যা হয় আর কি। ওরা তো আয়ানের বাসরে এত টাকা চেয়েছিল মজার ছলে, সবাই জানতো এত টাকা কোনোদিনই দিবে না। চাওয়ার সময় সবাই একটু বেশি চায় তারপর দর দাম করতে করতে কম দেয়। কিন্তু আবসারের কাছে কম চাইতেও আবসার এতগুলো টাকা দিয়ে দিলো সবার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সবাইকে এভাবে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবসার বিরস কন্ঠে বলল – টাকা দেওয়ার পরও কি তোমরা আমাকে এখানে আটকে রাখার প্ল্যান করেছো? আরও চাই টাকা?

আয়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল – না না ভাই তুমি রুমে যাও। এই তোরা এখান থেকে ফোট এখন সব। আয়ানের কথা শেষ হতেই সবগুলো দ্রুত ওখান থেকে কেটে পড়লো।

_______________________

বাসরঘরে বসে আছে নিশা, মাথায় এক হাত ঘোমটা। রেবেকা বানু দিয়ে গেছে এই ঘোমটা আর বলে গিয়েছে আবসার এসে এই ঘোমটা উঠাবে তার আগে যেন এই ঘোমটা না উঠায়। সেই থেকে একইভাবে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে নিশা। এখন রীতিমতো মাজা কোমড় ধরে গেছে তাও আবসারের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। নিশার হাজার বিরক্তির মধ্যে খট করে দরজা খুলে রুমে ঢুকলো কেউ। নিশার বুঝতে বাকি নেই লোকটা কে? বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। অদ্ভূত একটা অনুভুতি হচ্ছে , কেমন লজ্জা, ভয়, ভালোলাগা, খারাপ লাগা, অস্থিরতার সংমিশ্রনে এই অনুভুতিটা। বিবাহিত বান্ধবীদের মুখে আগে শুনেছিল এই রাতে নাকি এমন অনুভূতি হয়। তারই সাক্ষী আজ ও নিজেই।

আবসার দরজাটা আটকে দিয়ে ধীর পায়ে নিশার পাশে এসে বসলো। আলতো হাতে নিশার ঘোমাটাটা তুলে বলল – ফ্রেশ হওনি এখনও? সারাদিন এই পোশাক পড়ে থেকেছো এখনও এটা পড়েই আছো, নিশ্চই এই ভারী পোশাকে তোমার অসস্তি লাগছে।

এই মানুষটা এত বোঝে কেন? সবসময় নিশার এত খেয়াল রাখে, বলার আগেই সব বুঝে যায় লোকটা। নিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবসারের দিকে।আবসার শান্ত কন্ঠে বলল – যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।

নিশা একটু অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো – আজ আমাকে কেমন লাগছে আপনি কিন্তু একবারও বললেন না।
#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২৮
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

নিশা একটু অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো – আজ আমাকে কেমন লাগছে আপনি কিন্তু একবারও বললেন না।

আবসার হাসলো, নিশার মাথা থেকে আলাদা ওরনাটা খুলতে খুলতে বলল- আমার চোখে তুমি সর্বদাই সুন্দর নতুন করে আর বলার কিছু নেই। তবে এই ভারী মেকআপ আর সাজের নিচে যে তোমার নিজের সৌন্দর্যটা ঢাকা পড়ে গেছে তাই আমি তোমার সৌন্দর্যটা আজ খুঁজে পাইনি। আমার চোখে তোমার ঐ মেকাআপহীন ত্বকটাই যে বড্ড সুন্দর লাগে বউ।

অবাক হয়ে আবসারের কথা শুনছে নিশা। লোকটা কি সুন্দর করে কথা বলে। আচ্ছা লোকটা আর্মির ক্যাপ্টেন না হয়ে কবি হলে কেমন হতো? হয়তো ভালো হতো, তবে শুধু কবি না এই লোকটার মাঝে যেন সব গুন আছে তবে ঐ মাঝে মাঝে একটু ক্ষেপে যায় , নাকের ডগায় রাগ আর কি।

আবসার নিশার দিকে একটা টি – শার্ট, একটা প্লাজো আর একটা ওরনা এগিয়ে দিয়ে বলল – যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।

নিশা অবাক চোখে আবসারের দিকে তাকালো। আবসার বুঝলো নিশার দৃষ্টির মানে। সে উত্তর দিল – আমি জানি তোমার এগুলো পড়েই ঘুমানোর অভ্যাস। শুধু শুধু আমাকে দেখাতে শাড়ি বা থ্রি পিস পড়তে হবে না। তুমি ঠিক যেগুলো পড়তে কমফোর্টেবল সেগুলোই পড়বে।

নিশা এখনও আবসারের দিকে তাকিয়ে আছে। এই লোকটাকে ও যতটা দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। একটা মানুষ এত কেয়ারিং কিভাবে হয়। এত ভালোবাসা, সুখও ওর কপালে ছিল? না ও কোনো ভুল মানুষকে বিয়ে করেনি। এমন একটা মানুষের সাথে নির্দিধায় সারাটা জীবন কাটানো যাবে। নিশার চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। এটা দুঃখের কান্না নয় এটা সুখের কান্না। এমন একটা মানুষকে নিজের করে পাওয়ার খুশির কান্না এটা। আবসারের সামনে আর দাঁড়ালো না নিশা। হাতের জামা কাপড়গুলো নিয়েই দ্রুত ওয়াশ রুমে চলে গেল। এখন ওর চোখে পানি দেখলে আবার আবসার হাজারটা প্রশ্ন করবে, দিশেহারা হয়ে পড়বে , এটা যে ওর আনন্দের কান্না সেটা তাকে বোঝাতে আবার কয়েকযুগ সময় খরচ করতে হবে।

ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই দেখলো আবসার একটা প্লেটে ভাত আর মাংস নিয়ে বসে আছে। নিশাকে দেখেই আবসার ইশারায় ওকে বসতে বলল। নিজ হাতে ভাত মাখাতে মাখাতে বলল – আমি দেখেছি সারাদিন তোমার তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি। তখন খেতে বসেও অসস্তিতে কিছুই মুখে দেওনি। নিশ্চই খুব ক্ষুধার্ত তুমি। এত রাতে বাসায় শুধু এইগুলোই পেয়েছি। কষ্ট করে একটু খেয়ে নেও প্লিজ। তুমি হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

লোকটা এত দৌড় ঝাপের মধ্যে এটাও খেয়াল করেছে? নিশা আবসারের দিকে দৃষ্টি রেখেই হা করলো। আবসার নিজ হাতে নিশার মুখে ভাত পুরে দিল। এবার আর নিশা নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না । গাল চুইয়ে টপটপ পানি পড়ছে নিশার। নিশার চোখে পানি দেখেই আবসার অস্থির হয়ে উঠলো। ভাতের প্লেটটা পাশে রেখে বাঁহাত দিয়ে নিশার চোখের পানি মুছে দিয়ে অস্থির কন্ঠে শুধালো – কি হয়েছে তোমার ? কাঁদছো কেন? ঝাল লেগেছে? পানি খাবে?

নিশা আর নিজেকে সংযত করতে পারলো না। ঝাপিয়ে পড়ল আবসারের বুকে। নাক টেনে টেনে বলল – আপনি এত ভালো কেন? আমাকে এত ভালোবাসেন কেন?

আবসার হতবাক, এর জন্য কাঁদছিল মেয়েটা? আবসার আলতোভাবে নিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল – ভালোবাসা বুঝি অপরাধ?

– মোটেই না।

– তবে তুমি কাঁদছো কেন?

– এ যে আমার আনন্দের কান্না।

– পাগলী মেয়ে,ওঠো ভাতগুলো শেষ করো। পেটে তো মনে হয় অনেক ক্ষুধা পুষে রেখেছো।

– আপনি খেয়েছেন?

– আমাকে কি তোমার মতো মনে হয় যে পেটে ক্ষুধা পুষে রেখে দেব। আমি আগে ভাগেই খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে আছি বউকে আদর করতে হবে না।

লজ্জায় যেন মিইয়ে গেল নিশা। এভাবে বলে কেউ, অসভ্য লোক।

খাওয়া শেষে ওযু করে দুজনেই দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিল। নিশাকে বিছানায় বসিয়ে আলমারির কাছে গেল আবসার। হাতে একটা ছোট্ট বক্স নিয়ে নিশার পাশে বসলো। আলতো হাতে এ বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য দেওয়া বড় নাকফুলটা খুলে ছোট্ট একটা স্বর্নের নাকফুল পড়িয়ে দিল, দু হাতে সরু দুটো স্বর্নের চুড়ি, আর কানে দুটো ছোট ছোট স্বর্নের কানের দুল পড়িয়ে দিল। আবসারের প্রতিটি স্পর্শে নিশা যেন কেঁপে উঠছে। শ্যামবর্না শরীরে সোনালী রঙের ছোট ছোট গহনাগুলো যেন ফুটে উঠেছে। আবসার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিশার দিকে। নিশার দুই গাল নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল – খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। কখনও খুলবে না এগুলো, সব সময় পড়ে থাকবে।

নিশা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল। হঠাৎ চোখে পড়লো বিছানার উপরে গিফট পেপারে মোড়া একটা বক্সের উপর। ভ্রু উঁচিয়ে নিশাকে জিজ্ঞেস করলো – কি এটা?

– জানি না আমি, দাদি দিয়ে গেল আর বলে গেছে এটা নাকি তার তরফ থেকে আমাদের দুজনের জন্য উপহার। একমাত্র আপনার সামনেই যেন খুলি।

– তাহলে খুলে ফেল।

নিশা খুশি মনে গিফটটা হাতে নিল। এতক্ষন এই গিফটটা খোলার জন্য হাতটা বড্ড নিসপিস করছিল। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে রেখেছিল। গিফট বক্সটা খুলেই হতবম্ব আবসার নিশা দুজনেই। কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছে না। বুড়ির বয়স কি দিন দিন বাড়ছে না কমছে। এসব কি ছিঃ ছিঃ। রেবেকা বানু এমন কিছু করবে কল্পনাতেও আসেনি নিশার। শেষ পর্যন্ত এই গুলো। রেবেকা বানুর গিফট বক্সটা খুলেই বক্স থেকে বেড়িয়ে এলো জন্ম*নিরো*ধক পি*ল, আর একটা লাল টুকটুকে পাতলা একটা নাইটি। ওটা পড়া আর কিছু না পড়া সমান মনে হয় নিশার কাছে।

নিশার এখন ইচ্ছে করছে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে। আবসারও কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আর রেবেকা বানু আজ ওর হাতে হাড়ি ভেঙ্গে দিল। ঐ বুড়িটার পেটে পেটে কিনা শেষ পর্ষন্ত এই ছিল। লজ্জায় আবসারের সামনে আর বসে থাকা যাচ্ছে না। উঠে দৌড়ে চলে গেল বারান্দায়। একটু পরই ঘাড়ে কারো উত্তপ্ত নিঃশ্বাস পড়তেই জমে গেল নিশা। শরীরের লোমকূপগুলো সব সজাগ হয়ে গিয়েছে। আলতো হাতে পিঠের উপরে ছড়ানো চুলগুলো সরিয়ে দিল আবসার। ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো –

– দাদীও আমার মনের কথাগুলো বুঝে গেছে, তুমিই শুধু বুঝলে না।

নিশা কেঁপে উঠলো, বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হচ্ছে। লজ্জায় গাল দুটো রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। আবসার আবার মাতাল করা কন্ঠে বলে উঠলো – আজ যদি তোমাকে খুব গভীরভাবে ছুঁয়ে দেই তবে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে বসন্ত কন্যা? আমি যে আর পারছি না, অনেক তো অপেক্ষা হলো। আর কত অপেক্ষা করাবে আমাকে?

নিশা পিছন ঘুরেই আবসারের বুকে মুখ লুকালো। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে, দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারছে না আবসারের দিকে। ও কি মেয়ে হয়ে এখন লজ্জা শরম ভুলে বলবে ” আমিও আর পারছি না, আপনাকে আমার নিজের করে চাই, ছুঁয়ে দিন আমাকে।” লোকটা এতকিছু বোঝে আর এইটুকু বোঝে না। আবসার তার উত্তর পেয়ে গেছে। কোলে তুলে নিল নিশাকে। বিছানায় শুইয়ে নিজেও নিশার উপর ভর করে শুয়ে পড়লো। নিশার ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে, ঘোর লেগে যাচ্ছে আবসারের। নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুলি দিয়ে নিশার ঠোঁট দুটো আলতো করে ছুঁইয়ে দিল, কেঁপে উঠলো নিশা, পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে দুজনেরই , দুজনের নিঃশ্বাসই আঁচড়ে পড়ছে একে অপরের মুখে। নিজেকে আর সংযত করতে পারছে না আবসার। ঠোঁট ছোয়ালো নিশার ঠোঁটে। নিশা দুহাতে খামচে ধরলো বিছানার চাদর। আবসার আবার ঠোঁট ছোয়ালো নিশার ঠোঁটে তবে এবার বেশ গভীরভাবে। নিশার ঠোঁট দুটো থেকে যেন মধু শুষে নিচ্ছে আবসার। নিশা পরম আবেশে আবসারের পিঠ খামচে ধরলো। নিজেও সাড়া দিতে শুরু করলো নিশা। ধীরে ধীরে আবসারের ছোঁয়াগুলো আরও বেশামাল হতে শুরু করেছে, গভীর থেকে গভীরে ছুঁয়ে দিচ্ছে, উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে নিশা। দুজনের ভারী নিঃশ্বাসের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দেয়ালে। একে অপরের মধ্যে স্বর্গ সুখ খুঁজে চলেছে দুজনেই। পূর্নতা দিয়েছে নিজেদের ভালোবাসার।

___________________________

কলেজের প্রথম দিনই কলেজে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল আয়নার। সেদিন প্রথম ক্লাসটাই ছিল ইয়াসিনের। আয়না তড়িঘরি করে ক্লাসে ঢুকতে গেলে তাকে থামিয়ে দেয় গম্ভীর, কর্কশ এক পুরুষালী এক কন্ঠস্বর, বলেছিল –

– ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন। প্রথম দিন ক্লাসেই দেরী বেশ ভালো ছাত্রী তো আপনি। আপনার আর আজ ক্লাস করতে হবে না ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন।

আয়না হতবম্ব হয়ে ক্লাসের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। প্রথম দিন ক্লাসেই এসেই কিনা এভাবে অপমানিত হতে হলো। প্রথম দিন ক্লাসে তো স্যাররা দয়া করেও মাফ করে আর ইনি কিনা এই প্রথম দিনও ছাড় দিলেন না। ক্লাসের সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ অসস্থি হচ্ছিল ওর।

এরপর বেশ কিছুদিন ভালোভাবেই কেটেছিল কিন্তু একটু অল্প কারনেই প্রায়ই ইয়াসিনের ধমকের মুখোমুখি হতে হতো আয়নাকে যেটা অন্যকারো বেলায় খুঁজে পায়নি ও। সে কারনেই আয়না সব সময়ই চেষ্টা করতো ইয়াসিনকে এড়িয়ে চলার কিন্তু যতই ইয়াসিনকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো ততই ইয়াসিনের কাছাকাছি চলে আসতো। আর ওর আর ইয়াসিনের দেখা হলেই একটা না একটা অঘটন ঘটতোই। আর ফলস্বরূপ ইয়াসিনের দেওয়া শাস্তির মুখোমুখি হতে হতো। ঘন্টার পর ঘণ্টা ইয়াসিনের কেবিনে কান ধরেও দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, অনার্সে পড়ুয়া একটা মেয়েকে কিনা কান ধরে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগে। লজ্জায় কারো কাছে বলতেও পারতো না আয়না। ধীরে ধীরে ইয়াসিনের প্রতি একটা ভয়, রাগ, বিরক্তি জমে গিয়েছিল আয়নার। তবে এই ভয়, রাগ , বিরক্তির পাশাপাশি কোথাও ইয়াসিনের প্রতি একটা টানও অনুভব করতো আয়না, তবে সেই টানকে সব সময়ই উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করতো আয়না। আর আজ সেই ইয়াসিন কিনা ওরই স্বামী। হঠাৎ খট করে দরজা খোলার শব্দে অতীত থেকে বেড়িয়ে এলো আয়না।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here