বসন্ত কন্যা পর্ব – ১৯+২০

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১৯
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আবসার রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রুমে এলেন নদী বেগম‌।‌ মুখটা বেশ মলিন দেখাচ্ছে। হয়তো ছেলেপক্ষ বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে তাই। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কলিজাটা ধক করে উঠল নিশার। নদী বেগম পাশে বসলেন মেয়ের। হাত রাখলেন নিশির মাথায় । ধীর কন্ঠে কথা বলা শুরু করলো।

– কত বড় হয়ে গেছিস মা, আজ আমার কাছে কাল এক হিসেবে আমাদের ছেড়ে চলে অন্যের বাড়ি।

– এভাবে বলছো কেন মা, আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।

– তা বললে হয় কি করে মা, পাগলী মেয়ে। একদম না একদিন শ্বশুর বাড়ি তো সব মেয়েকেই যেতে হয়।

– আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না।

– আচ্ছা তা দেখা যাবে, এখন বল ছেলেকে পছন্দ হয়েছে? এই বিয়েতে তোর মতামত আছে?

তবে কি আবসার বিয়েটা এখনও ভাঙেনি, হয়তো ভাঙেনি কিন্তু যেভাবে হনহন করে বেড়িয়ে গেল তাতে মনে হয় না এই বিয়ে উনি করবেন । এমনি যে ইগো তাতে নিশার মতো একটা মেয়ে তাকে রিজেক্ট করেছে দুনিয়া পাল্টে গেলেও এই বিয়ে সে করবে না। রাজন সাহেব আর নদী বেগমকে দেখে তো মনে হচ্ছে তারা এই বিয়েটায় রাজি। বিয়েটা যখন ভেঙেই যাবে তাহলে এই বিয়েতে অমত করে লাভ কি? চুপচাপ বিয়েতে রাজি হওয়াটাই শ্রেয় অন্তত বাবার মায়ের বাধ্য মেয়ে হওয়া যাবে , তারা মনে করবে তাদের কথার বাহিরে তাদের মেয়ে যায় না। নিশা অনেকটা ভালো মেয়ে সাজার জন্যই মাথা নিচু করে লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল –

– তোমাদের যা ইচ্ছে মা, তোমাদের মতামতই আমার মতামত।

– আলহামদুলিল্লাহ, আমিও জানতাম আমার কখনও আমার কথার বাইরে যাবে না। তোর বাবার আমার ছেলেকে ছেলের পরিবারকে খুব পছন্দ হয়েছে। উনারা খুব ভালো মনের মানুষ। দেখবি তুই খুব সুখে থাকবি। আর আয়না তো আছেই, মেয়েটাকে দেখে আগেই বুঝেছিলাম ওর পরিবারও ওর মতোই ভালো হবে। একটু পর তোর আকদ, উনারা দেরি করতে চাইছে না, ছেলের নাকি ছুটি নেই। বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিশা চকিত, হতবম্ব । একটু পর আকদ মানে কি? আবসার কি তাহলে বিয়ে ভাঙেনি? সবার কাছে ভালো সাজাটা যে নিশার কাছে বাঁশ হয়ে ধরা দিবে বুঝতে পারেনি নিশা। এখন না ও বলতে পারছে না। মাকে তো বলে দিয়েছে তাদের মতামতই ওর মতামত। নিশা স্ট্যাচুর মতো বসে আছে।

_______________________

দেখতে দেখতে ঘন্টা দুইয়ের মধ্যে নিশা এখন আবসারের বিবাহিত স্ত্রী হয়ে গেল। মাত্র তিন অক্ষরের একটা শব্দ ” কবুল ” নিমেষেই নিশার জীবন পাল্টে দিল। সে এখন মিস থেকে মিসেস হয়ে গেছে। আর তার স্বামী হলো ঐ আবসার নামক ভয়ংকর ব্যক্তি। ইস জীবনটাই বেদনার, আজ থেকে নিশা পরাধীন। ঐ আবসার নামক ভয়ংকর প্রানীর রাগের অগ্নীকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছে সে। নিশার এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার আগে আবসারের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। সে কেন এমন করলো ? বিয়ে ভাঙতে বলার পরও কেন বিয়েটা করলো ।

আবসারকে অনেকক্ষন ধরে খুঁজে যাচ্ছে নিশা । কিন্তু কোথাও আবসারের দেখা নেই। গেল কোথায়? কারো কাছে জিজ্ঞেসও করা যাচ্ছে না। নতুন বউ হয়ে স্বামীর খোজ করলে সবাই কি ভাববে। অবশেষে আয়নার দিকে এগিয়ে গেল নিশা। আর কোনো উপায় নেই । বিয়েটার পর পরই উধাও হয়ে গেছে আবসার। লাজ লজ্জা ভুলে জিজ্ঞেস করল-

– তোর ভাই কই রে?

– বিয়ে হতে না হতেই আমার ভাইকে খোঁজা শুরু ভাবী? একটু তো আমাদেরও খুঁজতে পারো ।

– একদম ভাবী বলবি না , তোর ঐ বজ্জাত ভাইটা কোথায়?

– ছিঃ ছিঃ ভাবী নিজের স্বামীকে এসব কি বলছো?

নিশা কটমট করে আয়নার দিকে তাকালো, চুপসে গেল আয়না, বলল – ভাইয়া চলে গেছে।

নিশা ভ্রু কুঁচকে বলল – চলে গেছে মানে?

– ভাইয়া আকদের পর পরই চলে গেছে। ছুটি নেই, কাল সকালে আবার ডিউটি ।

ফুসে করে উঠলো নিশা। রাগ এবার আকাশ ছুঁই ছুঁই। চলে গেছে মানে , এত বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে ওর সাথে কথা না বলেই চলে গেছে। ইচ্ছে তো করছে আবসারের সব চুলগুলো এক এক করে টেনে টেনে ছিঁড়তে কিন্তু তাও পারবে না আবসারের চুল জে জিরো সাইজ হাতের মধ্যেই আসবে না। রাগে গিজগিজ করতে করতে নিজের রুমে গেল নিশা। ফোনটা হাতে নিয়ে কল লাগালো আবসারকে। দুই বার রিং হতেই কলটা রিসিভ করলো আবসার। সে কিছু বলার আগেই নিশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল –

– সমস্যাটা কি আপনার? বিয়ে কেন করলেন?

আবসার শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো – উত্তরটা সময় হলেই পেয়ে যাবে।

– সময় কখন হবে এখন বলুন।

– ভয় পাচ্ছ না আমাকে?

– না

– তখন তো বলেছিলে আমাকে ভীষণ ভয় পাও তুমি।

– এখন পাচ্ছি না।

– কেন পাচ্ছো না?

– জানি না।

– কেন জানো না?

– জানি না মানে জানি না এত কথা বাড়াচ্ছেন কেন?

– শূনতে ভালো লাগছে তাই। আচ্ছা একটা জিনিস ভেবে দেখেছো?

– কি?

– এই যে সন্ধ্যার দিকেও আমি সিঙ্গেল ছিলাম আর এখন একজনের বিবাহিত স্বামী।

– আপনি না বড্ড কথা পেচাচ্ছেন। আপনি আমার সাথে দেখা না করে , কথা না বলে চলে গেলেন কেন?

– আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে বুঝি?

– ভীষণ রেগে আছি কিন্তু আমি। আরও রাগ উঠাবেন না।

– কাছে এসো রাগ কমিয়ে দেব।

হতভম্ব নিশা, কি বলল আবসার। এই মুহূর্তে কি ওর রেগে থাকাটা কি ঠিক? নাকি ও লজ্জা পাবে? নিজেকে সংযত করে বলল –

– আপনি তো ভারী অসভ্য। বিয়ে হতে না হতেই শুরু হয়ে গেল।

– আমার দোষ কি সব দোষ তো তোমার।

– আমার দোষ মানে?

– আমার ভিতরে এত বছর লুকিয়ে থাকা অসভ্য পুরুষ মানুষটাকে তুমিই তো টেনে হিচড়ে বের করে আনছো।

নিশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো – আমি কখন করলাম, আজব?

– এই যে আজ তোমার সাথে যখন আলাদা রুমে কথা বলতে গেলাম তখন শাড়িটা সরিয়ে পেট বের করে রাখলে তখন বড্ড অসভ্য হতে ইচ্ছে করছিল, বেশামাল লাগছিল। ভাবলাম বিয়েটা করেই ফেলি না হয় শত্রুর তো আবার অভাব নেই চারপাশে।

লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে নিশা। বার বার পেটের দিকে তাকাচ্ছে। ইসস আবসার নাকি তখন ওর পেট দেখেছে ‌। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে, ধাপ করে কলটা কেটে দিল নিশা। ঠোঁট টিপে হাসছে আবসার, সে জানতো এখন নিশা কলটা কেটে দিবে‌। মেয়েটাকে লজ্জা দেওয়ার জন্যই তো সে এতগুলো কথা বলেছে? আচ্ছা লজ্জা পেয়ে নিশার এখন কি অবস্থা? লজ্জা পেয়ে তার গাল দুটো কি লাল হয়ে গেছে ? ইসস এখন কাছে থাকলে নিশার ঐ লজ্জায় রক্তিম গাল দুটো একটু ছুঁয়ে দিতে পারতো ভাবতে ভাবতে ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকলো আবসার। বেশ সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজ আকাশে, গোল থালার মতো। চাঁদের আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে পথের ধারের ছোট বড় গাছ গাছালি।

________________________

( রাত ৩ টা )

বেঘোরে ঘুমাচ্ছে নিশা। হঠাৎ বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা কর্কশ ধ্বনিতে বেজে উঠল। ধরফরিয়ে উঠে বসলো নিশা, মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। কাঁচা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলে যা হয় আর কি? আশে পাশে তাকিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা উঠিয়ে স্ক্রীনে ” ধমকরাজ ” নামটা দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো। কলটা রিসিভ করে কানের উপরে রেখে আবার শুয়ে পড়লো।

– ঘুমিয়েছিলে?

নিশা ঘুমু ঘুমু কন্ঠে জবাব দিলো – ঘুম থেকে তুলে জিজ্ঞেস করছেন ঘুমিয়েছিলাম কিনা?

কিঞ্চিৎ চুপ থেকে ওপাশ থেকে আবসার উত্তর দিল – আর কত যন্ত্রনা দিবে আমায়?
#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_২০
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

কিঞ্চিৎ চুপ থেকে ওপাশ থেকে আবসার উত্তর দিল – আর কত যন্ত্রনা দিবে আমায়?

নিশা অবাক হয়ে বলল – আমি আবার আপনাকে কিসের যন্ত্রনা দিলাম?

– তুমিই তো দিলে, এই যে তোমার ঘুমু ঘুমু কন্ঠের মাদকতা ছড়িয়ে দিলে আমার মধ্যে। এই মুহূর্তে কি দারুন যন্ত্রনা অনুভব করছি তুমি বুঝবে না বসন্ত কন্যা।

আবসারের কথাগুলো নিশার মধ্যে লজ্জার সৃষ্টি করছে। এই মানুষটা যে ভীষণ লজ্জা দিতে এক্সপার্ট তা আর বুঝতে বাকি নেই নিশার। চুপ করে আছে নিশা। আবসার বলল –

– শোনো……

– হুম

– ফেসবুকে ঢুকে এখনই আমার সাথে ম্যারিড স্টাটাস দেও।

নিশা ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিল – আপনি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই।

– মোবাইল এখানে সেখানে রেখে দিলে জানবে কিভাবে ফ্রেন্ডলিস্টে আছি নাকি, যা বলেছি তাই করো।

ঘুম ছুটে গেল নিশার , অবাক হয়ে বলল – তার মানে আপনি আমার মোবাইল এখানে সেখানে রাখার সুযোগ নিয়েছেন?

– এত কথা বাড়াচ্ছো কেন ? যা বলেছি তাই করো।

– পারবো না এখন আমার সিঙ্গেল স্টাটাস বাদ দিয়ে ম্যারিড দিলে আমার ফলোয়ার কমে যাবে, লাইক – কমেন্ট কমে যাবে।

চোয়াল শক্ত হয়ে গেল আবসারের। ধমক দিয়ে বলল – এক থাপ্পরে দাঁত ফেলে দেব, ফ্যান ফলোয়ার একদম বের করে দেব ফাজিল মেয়ে।

নিশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল – এই তো এর জন্যই আমি এই বিয়ে করতে চাইনি, সব সময় শুধু ধমক আর থাপ্রা থাপ্রি।

আবসার জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। মেয়েটা এমনি ওকে ভয় পায়, এমন ব্যবহারে আরও ভয় পাবে, সম্পর্কটা সহজ হবে না। কোনো রকম নিজের রাগটা সামলে বলল – তোমার ফ্রেন্ড লিস্টে ফয়সাল আছে না?

– হুম আছে তো, আপনি কি জেলাস ক্যাপ্টেন সাহেব?

আবসার দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল – শুধু জেলাস না , জ্বলে পুড়ে রাখ হয়ে যাচ্ছি আমি।

আবসারের সহজ সরল স্বীকারোক্তি, হতবাক নিশা। নিজের জেলাসি এভাবে সহজ সরলভাবে স্বীকার করতে এই প্রথমই বোধহয় দেখেছে সে। উপায় নেই আর , ফেসবুকে ম্যারিড স্টাটাসটা দিয়েই দিল।

_______________________

কলেজ ক্যাম্পাসে মুখ লটকিয়ে বসে আছে নিশা। আর ওকে ঘিরে বসে হাসাহাসি করছে আয়না, রাকিব, কাজল , নিলয়। ওদের হাসাহাসি মূলত আবসারকে নিয়েই।

রাকিব বলল – নিশা তোর ভবিষ্যত অন্ধকার। এখনও সময় আছে হারবালের ঔষধটা নে।

নিলয় বলল – আমি আবার একটা বিষয় খেতে পারবো। নিশা তোর বিয়েতে কিন্তু আমি একটা রোস্ট বেশি পাবো।

কাজল বলল – শেষ পর্যন্ত কিনা ঐ আবসার নামক একটা ভয়ংকর প্রাণীর সাথে তোর বিয়েটা হলো , তুই শেষ নিশা। উঠতে বসতে তিন বেলা খাওয়ার বদলে শুধু ধমক খাবি।

আয়না বিরক্ত হয়ে বলল – থামবি তোরা? আমার ভাইকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবি না।

– সত্যি কথা বললে সবার গায়েই ফোস্কা পড়ে।

রাকিবের কথার উত্তরে নিশা বলল – এত সত্যি কথা বলতে হবে না তোদের এমনি আমার মন মেজাজ খারাপ কিন্তু।

কাজল বলল – যা সাথে বিয়ে হয়েছে তাতে এই জীবনে আর তোর মন মেজাজ ভালো হওয়ার উপায় দেখছি না আমি।

নিশা বিরক্তি নিয়ে কিছু বলবে এর মধ্যে ফয়সাল কোথা থেকে ঝড়ের গতিতে কোথা থেকে এসে নিশার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দিল। আকর্ষিক ঘটনায় হকচকিয়ে গেল সকলে। ফয়সালকে দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেলো আয়নার।

নিশা স্বাভাবিক ভাবেই বলল – কি সমস্যা ফয়সাল ভাই? হঠাৎ এখানে কি করছেন ?

– কি সমস্যা বুঝিস না তুই? বিয়ে করেছিস নাকি?

– হুম করেছি বড় মামা ছিল তো কাল, বলেনি আপনাদের?

– কেন করলি তুই আমার সাথে এমনটা?

– কি করেছি আমি আপনার সাথে?

ফয়সাল নিশার দুই বাহু ঝাঁকিয়ে – বুঝিস না কি করেছিস তুই? ভালোবাসি আমি তোকে, ভীষণ ভালোবাসি। কিভাবে পারলি তুই এমনটা আমার সাথে? বলতে বলতে কেঁদে ফেলল ফয়সাল।

ফয়সালের কথাগুলো যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো উপস্থিত সকলের মাথায় আঘাত করলো শুধু নিশা ভাবলেশহীন। সে যেন আগে থেকেই জানতো এমন কিছুই হবে।

নিশা ভাবলেশহীনভাবেই উত্তর দিল – আপনি বড্ড দেরী করে ফেলেছেন ফয়সাল ভাই। এর জন্যই হয়তো সময়ের কাজ সময়ে করতে বলা হয়েছে। লাল সাহ – এর একটা লোকসংগীত আছে ” সময় গেলে সাধন হবে না । ” তেমনি আজ আপনি আমাকে যত চিৎকার করেই বলুন না কেন আর যে কিছু করার নেই ফয়সাল ভাই।

ফয়সাল চোখ মুছে চোখ মুখ শক্ত করে চিৎকার করে বলল – কেন হবে না? কেন হবে না? কেবল আকদ হয়েছে আর তো কিছু হয়নি তাই না তুই বিয়েটা ভেঙে দে , আমি তোকে বিয়ে করবো, ভালোবাসি আমি তোকে।

নিশা সজোরে ফয়সালের গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল। চিৎকার করে বলল – কি পেয়েছেন আপনারা আমাকে যখন ইচ্ছা অপমান করবেন , আমার মাকে তুলে পর্যন্ত অপমান করবেন। যখন ইচ্ছা ছুড়ে ফেলে দিবেন আবার যখন ইচ্ছা ভালোবাসার দাবি নিয়ে আমার সামনে আসবেন। আমি কি খেলার পুতুল নাকি? আর আপনার সাহস কি করে হয় আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন? একজন বিবাহিত মেয়েকে তার স্বামীকে ছেড়ে আপনার কাছে চলে যেতে বলছেন লজ্জা করে না আপনার? এতটা নিচে নেমে গেছেন আপনি?

গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফয়সাল। ইতমধ্যে কলেজের ক্যাম্পাসে ছাত্র – ছাত্রীরা জড় হয়ে গেছে। সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে যেন তারা বিনা পয়সায় সিনেমা দেখছে। কেউ কেউ মজা লুটছে। জনগনের আর কাজ কি কোথাও কোনো ঝামেলা দেখলেই মজা লুটতে চলে আসে।

ফয়সাল গালে হাত দিয়েই বলল – এমন কেন করছিস নিশা? আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস তাহলে কেন অন্য কাউকে বিয়ে করলি?

নিশা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল – কে বলেছে আমি আপনাকে ভালোবাসি?

ফয়সাল বলল – আমি তোর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।

নিশা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল – বাহ সবাই দেখছি আমার চোখের উপর পিএইচডি করে রেখেছে। কিন্তু আপনি আমার চোখে ভুল দেখেছেন ফয়সাল ভাই। হ্যা আমি ভালোবাসি আমার স্বামীকে ভালোবাসি আমি অন্য কাউকে নয় বুঝতে পেরেছেন আপনি আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি।

একটু থেমে নিশা বলল – একটা কথা কি জানের ফয়সাল ভাই আমি আগে থেকেই আপনার ভালোবাসাও বুঝেছিলাম আর আবসার ভাইয়েরও। মেয়েদের নাকি আলাদা একটা ক্ষমতা থাকে, তার দিকে কেউ খারাপ নজরে তাকালে বা ভালোবাসা নজরে তাকালে নাকি সে বুঝতে পারে। আমিও হয়তো সেই ক্ষমতা গুনেই বুঝে গিয়েছিলাম। যতই আমি কিছু না বোঝার অভিনয় করি না কেন আমি অনেক আগেই সবটা বুঝে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার অপমানগুলো আমার হৃদয়ে এতটাই ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল যে সেখানে আপনার ভালোবাসাটা দাগ কাটতে পারেনি। আর সেখানে আবসার ভাই আমার হৃদয়ে অনায়াসে দাগ কেটে ফেলেছিল। মানুষটা রাগচটা কিন্তু বড্ড ভালো আপনাদের মতো নয়। তার ছোট ছোট কেয়ারগুলোই আমার হৃদয়ে প্রশান্তির সৃষ্টি করে। সে আমাকে এক পলক দেখার জন্য সুযোগ পেলেই সেই চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসে। আমি মানুষটাকে খুব কাছ থেকে দেখছি। আমি তাকে কতটা বুঝতে পারি তা হয়তো সে নিজেও জানে না। আমি তাকে বলেছিলাম বিয়েটা ভেঙে দিতে কারন আমি জানতাম সে দরকার হলে আমাকে টেনে হিচড়ে বিয়ে করে নিয়ে যাবে। আর ভয় সেটা আবসার ভাইকে আমি আগে পেতাম এখন আর পাই না, এখন আমার মধ্যে যতটুকু আছে সেটা হলো শ্রদ্ধা, ভালোবাসাও আছে বটে। আমি ঐ মানুষটাকে শ্রদ্ধা করি, তার কাজকে শ্রদ্ধা করি। হ্যা উনার কাছে ধরা দেই না । শুনেছি মেয়েরা নাকি একটু বেশিই ভালোবাসা লোভী। আমিও হয়তো সেরকমই, তাই তো ধরা দেই না। ভয় হয় তাকে ধরা দিলে যদি তার কেয়ার গুলো কমতে থাকে, সে আমাকে আগের মতো ভালো না বাসে। মানুষ বলে বিপরীত পক্ষের মানুষটাকে নাকি নিজের ভালোবাসা বুঝতে দিতে নেই তাহলে নাকি অবহেলা বাড়ে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিশা । একটু চুপ থেকে আবার বলল – একজন বিবাহিত মেয়ের পিছনে ঘুরে নিজের লজ্জাহীনতার পরিচয় দিবেন না ফয়সাল ভাই। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকতে চাই। দয়া করে আমাদের দুজনের মাঝখানে আসবেন না। আমি তাকে বিয়ে করে যথেষ্ঠ খুশি……..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here