বসন্ত কন্যা পর্ব – ১৭+১৮

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১৭
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

কেটে গেল প্রায় তিন মাস। এই তিন মাসে নিশার সাথে ফয়সালের সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে, ফয়সাল তার অতীতে করা কর্মের জন্য মাফ চেয়েছে। নিশাও মাফ করে দিয়েছে কিন্তু ফয়সালের জন্য এখন আর আগের মতো নিজের মনের গহীনের অনুভূতিগুলো কাজ করে না। আবসারের সাথেও নিশার সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে প্রায়ই কথা হয় ফোনে কিন্তু বেশিরভাগ সময় ডিউটিতে থাকা, পাহাড়ে নেটওয়ার্ক শূন্যতার কারনে তেমন একটা যোগাযোগ করতে পারে না নিশার সাথে। কাজল আর শাহরিয়ারও এখন বেশ সহজ হয়েছে। শাহরিয়ার সেই রাত থেকেই কাজলের পিছনে পড়ে আছে, তার এক কথা তার সবকিছু যখন কাজল দেখে নিয়েছে তখন কাজলকে তাকে বিয়ে করতেই হবে। কাজলের পিছু ছুটতে ছুটতে কাজলকেও তার প্রতি দুর্বল করে তুলেছে শাহরিয়ার।

( রাত ১২ টা )

আজ প্রায় ১ সপ্তাহ পর আবসার কল করেছে নিশাকে। কিন্তু ওপাশ থেকে এক মহিলা মিষ্টি কন্ঠে বলল নাম্বারটি ওয়েটিং। ধক করে উঠল আবসারের বুকটা, কলটা কেটে আবার কল করলো নিশার নাম্বারে। এবারও একই কথা বলছে। এই মহিলার মিষ্টি কন্ঠটা এই মুহূর্তে আবসারের কানে যেন সুচ ফুটিয়ে দিচ্ছে। এত রাতে নিশা কার সাথে কথা বলছে? তবে কি ও নিশাকে হারিয়ে ফেলবে? নিশা আবার অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেনি তো? হাত কাঁপছে আবসারে, ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর তীব্র ভয় জেঁকে ধরেছে ওকে। কোনো রকম জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে আবার কল লাগালো নিশাকে। এবার আর ঐ মহিলা তার মিষ্টি কন্ঠে ব্যথার বান ছুঁড়ছে না আবসারের দিকে, রিং হচ্ছে। কিন্তু তবুও যেন আবসারের অস্থিরতা কাটছে না উল্টো সেকেন্ডে সেকেন্ডে অস্থিরতাটা বেড়েই যাচ্ছে। কল রিসিভ করলো নিশা। ছোট্ট মিষ্টি করে বলল –

– আসসালামুয়ালাইকুম

চট করেই আবসার প্রশ্ন করে বসলো – কার সাথে কথা বলেছো এতক্ষন?

আবসারের বুকে যে তাকে নিয়ে ঝড় শুরু হয়েছে তা কি তার বসন্ত কন্যা বুঝতে পারছে? তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে যে সে অস্থির হয়ে উঠেছে। চুপ করে আছে নিশা। নিশার এই মৌনতা যে আবসারের সহ্য হচ্ছে না। সে বারবার চাইছে নিশা মৌনতা ভেঙে আশানুরূপ কিছু বলুক, যা এই শুষ্ক বুকে এই মুহূর্তে বৃষ্টি হয়ে নামবে। নাহ তাকে আশাহত করেছে নিশা। তার বুকে দহনের সৃষ্টি করেছে নিশার জবাব। ভিতরটা যে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। কাউকে বোঝানো যাচ্ছে না ব্যথাটা।
নিশা তার মৌনতা ভেঙে জবাব দিয়েছে – ফয়সাল ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম।

– এত রাতে কিসের কথা তার সাথে?

– মেডিকেলের স্টুডেন্ট তো ফয়সাল ভাই, রাত জেগে পড়াশোনা করে। পড়া শেষে মাঝে মাঝেই কল করে।

আবসার অস্ফুট স্বরে বলল – মাঝে মাঝেই বলে?

– হুম।

– এত রাতে কেন রিসিভ করো ওর কল?

– ভদ্রতার খাতিরে।

– শুধুই কি ভদ্রতার খাতিরে?

– হুম

– কিন্তু তোমার চোখ তো অন্য কিছু বলে।

– আপনি একটু বেশিই দেখছি আমার চোখের ভাষা পড়তে শুরু করেছেন।

– না চাইলেও যে পড়তে হয়।

– তা আমার চোখে কি কি দেখেছেন?

– ঐ ছেলেটার প্রতি চাপা অভিমান‌।

মুচকি হাসি দিল নিশা। হাসির রেশ টেনেই বলল – আপনি তো দেখছি অভিমান আর ক্ষোভ বা রাগের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না ক্যাপ্টেন সাহব। সারাদিন নিয়ম কানুন, ডিউটি আর মানুষদের গাধার মতো খাটালেই হবে? মাঝে মাঝে কিছু জিনিসের পার্থক্যটাও বুঝতে হবে, অন্তত কারো ভালোবাসা বুঝতে হলে।

– তুমি দেখছি বড্ড শক্ত কথা বলছো বসন্ত কন্যা।

– আপনার থেকেও বেশি নাকি?

– আমি কখনও শক্ত কথা বলি না।

– হয়তো বা।

– ঘুমাবে এখন?

– আপনি কলটা কাটলে ঘুমাবো।

– আচ্ছা রাখছি তাহলে ঘুমাও তুমি।

– আচ্ছা, নিজের যত্ম নিবেন।

আবসার ছোট্ট করে হুম জবাব দিয়ে কলটা কেটে দিল। কিন্তু তার হৃদয়ের অস্থিরতাটা কমছে না আবসারের। আবসার নিজে একজন ছেলে অন্য একটা ছেলের চোখের ভাষা বুঝতে সময় লাগে না আবসারের। সে যে ফয়সালের চোখে নিশার জন্য ভালোবাসা দেখেছে, নিশাকে পাওয়ার আকুলতা দেখেছে। নিশা এখন ফয়সালকে ভালো না বাসলেও তার মনের মধ্যে যে কখনও ফয়সালের প্রতি অনুভূতি ছিল বুঝতে বাকি নেই আবসারের। নিশাও যদি আবার ফয়সালকে ভালোবেসে ফেলে? নিশা কি হারিয়ে যাবে আবসারের জীবন থেকে? আবসারের বুকের মধ্যে তীব্র জ্বালা করছে। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয়ে জর্জরিত সে।

_________________________

পরের দিন সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলেই নিশাকে ডেকে পাঠালো রাজন সাহেব ( নিশার বাবা ) । নিশা গুটি গুটি পায়ে বাবার পাশে গিয়ে বসলো। বড্ড ভালোবাসে সে তার বাবাকে। বাবাই যেন তার দুনিয়া। অবশ্য মেয়েরা একটু বেশিই বাবার নেওটা হয়ে থাকে। রাজন সাহেব হাত রাখলেন নিশার মাথার উপর।

– কিছু বলবে বাবা?

– কত বড় হয়ে গেছিস, এই তো সেদিন এই টুকু পুঁচকি ছিলি।

– কই বড় হলাম তোমার কাছে তো আমি সারাজীবনই ছোটোই আছি বাবা।

– আমি ছোট মনে করলেই তো আর সমাজ ছোট মনে করবে না রে মা, বিয়ের বয়স হয়েছে তোর।

– সমাজ দিয়ে কি আসে যায়, সমাজের খাই নাকি পড়ি?

– কিন্তু আমরা যে সমাজে বাস করি মা। বলছি কি মা একটা ভালো প্রস্তাব এসেছে, উনারা কালকে বিকেলে তোকে দেখতে আসতে চাইছে।

ধক করে উঠল নিশার বুক। চোখের সামনে হঠাৎই কেন যেন আবসারের চেহারাটা ভেসে উঠলো। কেন এমন হয়েছে জানা নেই, জানার এখন সময়ও নেই। আগে বিয়েটা আটকাতে হবে। দ্রুত বলল –

– বাবা এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করতে চাইছি না। আমি আরও পড়াশুনা করতে চাই বাবা, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।

– পড়াশুনা বন্ধ করতে বলেছে কে তোকে? উনারা খুব ভালো মানুষ মা, উনারা তোর পড়াশুনা মোটেই বন্ধ করবে না।

– কিন্তু বাবা……

– বয়স হয়েছে আমার, কখন কি হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। এই তো সেদিন আমার কলিগ সাহের ভাই হঠাৎ স্টোক করে মারা গেলেন। এখন মেয়ে দুটো আর তার বউয়ের কষ্টের শেষ নেই। বেঁচে থাকতে যদি তোদের একটা গতি করে না দিয়ে যেতে পারি আমি মরেও যে শান্তি পাবো না মা।

নিশার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল- একদম বাজে কথা বলবে না বাবা, তোমার কিচ্ছু হবে না। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা বন্ধ করো।

– দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। তোর পছন্দ না হলে আমি সেখানে কখনওই তোকে বিয়ে দেব না। বিকেলে আসুক ছেলেকে দেখে পছন্দ হলেও হতে পারে।

উঠে দাঁড়ালো নিশা। ছোট করে উত্তর দিল আচ্ছা ঠিক আছে।

অস্থির লাগছে নিশার। কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? বিয়ের কথা শুনে? হয়তো তাই। ভালো লাগছে না কিছুই।
#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১৮
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে বসে পাত্রের স্থানে নিজের জমকে দেখে আঁতকে উঠলো নিশা। আবসার ওর সামনে সোজাসুজি বসে আছে। চোখ ঘুরিয়ে আবসারের বাম দিকে তাকাতে দেখে আবিদা বেগম হাসিহাসি মুখ করে বসে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে সে আজ ভীষণ খুশি, যে ছেলেকে এত দিন বিয়ের কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠে ছোট ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিল সেই ছেলে আজ নিজে থেকে বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখতে এসেছে।

🌸 ( ফ্লাশব্যাক ) 🌸

গতকাল রাতে নিশার সাথে কথা বলে কিছুতেই ঘুম আসছিল না আবসারের। অস্থিরতাটা কমার বদলে বেড়েই যাচ্ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল ও হয়তো নিশাকে হারিয়ে ফেলবে, বড্ড ভয় করছিল ওর। আর্মির ক্যাপ্টেন হওয়ার সুবাদে এত এত কাজ করেছে নিজের সাহসিকতার সাথে কিন্তু মুহূর্তে যেন নিজের সাহসিকতাটা সম্পূর্ন হারিয়ে ফেলছে আবসার। ভালোবাসলে বুঝি এমনি হয় , একটা শক্ত কঠোর মানুষকে সহজেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। এই মুহূর্তে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে আবসারের।

( রাত ২ টা )

বিছানায় উঠে বসলো আবসার । এত রাতেই কল লাগালো মায়ের কাছে।

মোবাইলের রিংটোন শুনে এত রাতে ধরফরিয়ে উঠে বসলো আবিদা বেগম। পাশেই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে স্বামী আনসার সাহেব। একপলক স্বামীর দিকে তাকিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার ছেলে কল করেছে। স্ক্রীনে আবসারের নাম দেখে কলিজাটা শুকিয়ে আসছে। কোনো বিপদ হলো না তো না হলে আবসার তো কখনও এত রাতে কল করে না। কাঁপা কাঁপা হাতে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো আবসারের অস্থির কন্ঠস্বর।

– মা আমি বিয়ে করবো।

কথাটা শুনে আবিদা বেগম যেন তাজ্জব বনে গেল। কানের কাছ থেকে মোবাইলটা নামিয়ে একবার চেক করে নিল সত্যিই আবসারের নাম্বার তো নাকি অন্য কেউ। নাহ আবসারের নাম্বারই তো। তাহলে স্বপ্ন দেখছে না তো, নিজের হাতে নিজে চিমটি কেটে দেখলো স্বপ্ন দেখলো কিনা, নাহ ব্যথা পাচ্ছে না। পাশ থেকে আনসার সাহেব চিৎকার করে উঠে বসলো।

– এই কে ? কে রে আমার পেটে চিমটি কাটলো?

আবিদা বেগম গোল গোল চোখে আনসার সাহেবের দিকে তাকালো। এর মানে একটু আগে আবিদা বেগম নিজের হাতে চিমটি দেওয়ার বদলে স্বামীর পেটে চিমটি দিয়েছে। এর মধ্যে আবরও মোবাইলে ভেসে এলো আবসারের অস্থির কন্ঠস্বর।

– মা তুমি চুপ করে আছো কেন? আমি বিয়ে করবো।

আনসার সাহেব এত রাতে আবসারের এহেনো কথা শুনে বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে আবিদা বেগমের দিকে তাকালো। আবিদা বেগম আবসারকে শান্তনা দিয়ে বলল –

– বিয়ে করবি ঠিক আছে। এতটা অস্থির হচ্ছিস কেন? সকাল হোক ঘটককে খবর দেই , মেয়ে দেখি একটু সময় দে।

– না না মেয়ে আমার পছন্দ করা আছে, তোমরা কালকেই দেখতে যাবে।

কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আবিদা বেগম আর আনসার সাহেব বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। যে ছেলেকে বিয়ের কথা বলতে বলতে মুখে রক্ত উঠে যাওয়ার উপক্রম তবুও সে বিয়ে করবে না সেই ছেলে আজ বলছে তার পছন্দ করা মেয়ে আছে।

আবিদা বেগম উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল – মেয়েটা কে বাবা?

– ঐ যে আয়নার বান্ধবী আছে না নিশা ও।

আবসারের সহজ সরল স্বীকারোক্তিতেই যেন অবাকের চড়ম সীমায় পৌছে গেল আবিদা বেগম আর আনসার সাহেব। নিশাকে বেশ ভালোভাবেই চেনেন উনারা। প্রায়ই তো এ বাড়িতে আসে, কিন্তু আবসারের মনে যে এই ছিল ক্ষুনাক্ষরেও টের পাননি উনারা। তবে নিশার নাম শুনে আবিদা বেগম বেশ খুশিই হয়েছে। নিশা মেয়েটাকে তার ভারী পছন্দ। তবুও আমতা আমতা করে বলল –

– আমরা একরা পাত্রী দেখতে যাবো , পাত্রের ছাড়া?

কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো আবসার, কিঞ্চিৎ চিন্তা ভাবনা করে বলল – আচ্ছা পরশু যেও আমি কালকেই ছুটি নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

সকালে সবাই আবসার আর নিশার কথাটা জানতে যেন খুশির জোয়ার এলো বাড়িতে। আয়না আর রেবেকা বানু তো মহাখুশি। আয়না তো ভাবতেই পারেনি এত সহজেই এভাবে সবটা হবে। আবসার সেইদিনই অনেক কষ্টে মাত্র দুই দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছে।

______________________

( বর্তমানে )

নিশা চোখ ঘুরিয়ে ডান দিকে তাকিয়ে দেখে রেবেকা বানু আর আয়না বসে আছে। আয়না মিটিমিটি হাসছে। নিশা কটমট করে আয়নার দিকে তাকালো, আয়নার যেন নিশার এই দৃষ্টি গায়েই লাগলো না সে হেসেই চলেছে। আয়নার হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে নিশার। না না এই আবসার নামক প্রানীকে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না, তাহলে উঠতে বসতে খেতে ঘুমাতে সবসময় শুধু আবসারের ধমক। জীবনটাই ধমকময় হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে আবসারের ঐ ভয়ংকর রাগের কারনে গালে দুই একটা চড় থাপ্পড়ও পরতে পারে ভাবতেই নিজের অজান্তেই গালে হাত চলে গেল নিশার। না না জেনে শুনে সিংহের গুহায় এভাবে পা দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। আবসারের চোখের দিকে তাকালেই তো ওর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। আর সেখানে সারাটা জীবন সেই লোকের সাথে কাঁটাতে হবে। যে করেই হোক এই বিয়ে আটকাতেই হবে নিশাকে। ওর এই আকাশ পাতাল ভাবনার মধ্যেই সবাই নিশাকে আর আবসারকে আলাদা করে কথা বলার জন্য অন্য রুমে পাঠালো। এই সুযোগ, একেই কাজে লাগাতে হবে নিশাকে।

🌸

আলাদা রুমে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে নিশা আর আবসার। নিশা আড় চোখে আবসারকে দেখেই যাচ্ছে আর আবসারও কোনো কথা বলছে না। নিশার যেন আবসারকে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করছে, দীর্ঘ তিন মাস পর লোকটাকে দেখেছে ও । কতদিনের তৃষ্ণার্ত চোখ জোড়ার তৃষ্ণা যেন মিটছেই না। তবুও নিশা নিজের আবেগ অনুভূতিগুলোকে যেন বুঝতেই চাইছে না। সে নিজের অনুভূতিগুলোকে চাপা দিয়ে বলে উঠলো – এই বিয়ে ভেঙে দিন আপনি, কিছুতেই আমি এই বিয়ে করবো না।

আবসার এতক্ষনের মতো এখনও শান্ত, নির্বিকার ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে, এই কথার কোনো প্রভাবই যেন পড়েনি তার উপর। নিশা আবার কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে উঠলো –

– কি হলো শুনছেন না এই বিয়ে আমি করবো না।

আবসার শন্ত কন্ঠেই জিজ্ঞেস করল – কেন করবে না?

– জানি না শুধু এই টুকু জানি এই বিয়ে আমি করবো না।

– না জানলে আমি বিয়েও ভাঙবো না। বিয়ে ভাঙার জন্য সঠিক কারন না বললে আমি কেন বিয়ে ভাঙবো?

একটু সময় চুপ থেকে চোখ বন্ধ করে গড়গড় করে বলতে শুরু করল – আমার আপনাকে ভয় লাগে, আপনাকে দেখলেই আমার হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়, কলিজা শুকিয়ে যায়। মোট কথা আমি আপনাকে ভীষন ভয় পাই। আপনার সামনে গেলেই সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি এই বুঝি চড় থাপ্পর মেরে দিলেন। আর যেই লোককে এত ভয় পাই তার সাথে সারাজীবন কাটাবো কিভাবে? না এই বিয়ে আমি করবো না। মাফ করবেন আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

কথাগুলো বলে পিটপিট করে চোখ খুলল নিশা। আবসার এখনও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটু সময় দাঁড়িয়ে থেকে গটগট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল আবসার। একটা টু টা শব্দ পর্যন্ত করলো না। নিশা বেশ অবাক হয়েছে বটে, আবসারের মতো একজন রাগচটা ব্যক্তি তাকে নাকি নিশার মতো একটা মেয়ে রিজেক্ট করলো সেখানে আবসার কিছু না বলেই চলে গেল। নিশার যেন কেমন খারাপ লাগতে শুরু করেছে। বিয়েটা ভেঙবে বলে কি এই খারাপ লাগা? কিন্তু এমন একটা রাগচটা মানুষের সাথে সারা জীবন কাটাবে কিভাবে ও। আর কিছু ভাবতে চাইছে না নিশা, কেন যেন খুব খারাপ লাগছে, হঠাৎ কান্না পাচ্ছে খুব। এই কান্না কি আবসারের জন্য? তবে কি ও ভালোবাসে আবসারকে? নিজের মনের ভাষা আজ নিশা বুঝতে পারছে না। মনটা বলছে ” তুই আবসারকে ভালোবাসিস আর আবসারও তোকে ভালোবাসে। এমনি ছেলেটা রাগচটা হলেও খুব ভালো, দায়িত্ববান। ” অন্যদিকে বিবেক বলছে ” ভুলেও ঐ ছেলেকে তুই বিয়ে করিস না নিশা, ঐ ছেলেকে বিয়ে করা আর বিষধর সাপের সামনে গিয়ে বলা আয় ছোবল মার, ছোবল মার সমান কথা। এই ছেলেকে বিয়ে করার থেকে সারাজীবন আইবুড়ো থাকা শ্রেয় ।” কি করবে নিশা? বড্ড অস্থির লাগছে নিশার। এই দোটানায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here