বসন্ত কন্যা পর্ব – ৫+৬

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_৫
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

– বয়স ২০, উচ্চতা ৫ ফুট , কিন্তু ওজন একটা বাচ্চার মতো। তারপরও খাওয়া দাওয়াতে এত অনীহা। আম্মু ওকে আরও খাবার দেও ।

ছেলের কথা শুনে আবিদা বেগমও নিশার প্লেট ভর্তি করে খাবার দিল। নিশা অসহায়ের মতো কতক্ষন খাবারের দিকে আর কতক্ষন আবসারের দিকে তাকাচ্ছে। এর মধ্যেই আবসার আবার ধমক দিয়ে উঠলো।

– কি হলো খাচ্ছো না কেন? ১০ মিনিট টাইম এর মধ্যে যেন খাবার শেষ হয়‌‌ ।

এমনিতেই এই লোককে জমের মতো ভয় পায় নিশা। তার উপর এই লোকের আবার কথায় কথায় ধমক। নিশা তো মনে মনে এই আবসার নামক জীবের নামও ঠিক করে ফেলেছে। এই লোকের সাথে আবসার নামটা একদম যায় না, কি সুন্দর আবসার নামটা। এই বজ্জাতটার নাম তো হওয়া উঠিত ছিল ধমকরাজ। ২৪ ঘন্টা সবাইকে শুধু ধমকের উপর রাখে। নিশার এই আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনার মধ্যে আবসার আবার ধমক দিয়ে উঠলো।

– ২ মিনিট চলে গেছে। খাবার শেষ করতে ১০ মিনিটের এক সেকেন্ড বেশি লাগলেও এমন আরও এই প্লেট খাবার শেষ করতে হবে তোমাকে।

আঁতকে উঠলো নিশা। এই লোক কি ওকে খাইয়ে খাইয়ে পেট ফাটিয়ে মারার প্ল্যান করছে নাকি‌। সব ভাবনা চিন্তা ফেলে নাকে মুখে গিলতে শুরু করলো নিশা। যেভাবেই হোক ১০ মিনিটের আগে খাবার শেষ করতে হবে নিশাকে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় ওর পুরো খাবারটা শেষ করতে ১১ মিনিট লেগেছিল। তাই অবসারের কথা অনুযায়ী ওকে আবার এক প্লেট খেতে হয়েছে। ও খেতে চায়নি আবসার ওকে ধমকিয়ে ধমকিয়ে খাইয়েছে। এত ভাত ও এক সাথে এই ২০ বছরের জীবনে কোনো দিন খায়নি। এত দিন নিলয়কে কুমড়ো পটাস বলতো আজ নিজেকে নিজের কাছে কুমড়ো পটাস মনে হচ্ছে। এই পেট নিয়ে হাঁটতে ওর জান বেড়িয়ে যাচ্ছে। হায় কপাল কেন ও এই বাড়িতে আসতে গেল।

___________________

রাত প্রায় ১০ টার কাছাকাছি, আয়না বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইল স্ক্রল করছে। নিশা পুরো রুমে পায়চারি করছে আর আবসারের পিন্ডি চটকাচ্ছে।

– এটা তোর ভাই? এটা মানুষ নাকি জম? আমাকে কতগুলো ভাত খাওয়ালো দেখেছিস ? আর তোরা কেউ কিছু বললি না।

আয়না অসহায়ের মতো বলে উঠলো : বললে আমাকে আস্ত রাখতো বলে মনে হয় তোর?

– ভাই আমি কিছুতেই তোদের বাড়ি থাকবো না। এই বাড়িতে থাকলে তোর ঐ ধমকরাজ ভাই আমাকে বাঁচতে দিবে না, আমি শিওর।

দুই জনের কথপোকথনের মধ্যেই দরজায় টোকা পড়লো। আয়না উঠে দরজা খুলতেই বরাবরের মতো আবসারের গম্ভীর , কঠোর মুখশ্রীটা ভেসে উঠলো। নিশাও গুটি গুটি পায়ে আয়নার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো কে এসেছে দেখতে। আবসারকে চোখে পড়তেই যেন ভয়ে হৃদয়যন্ত্র লাফালাফি শুরু করেছে। আবসার তার চিরচেনা গম্ভীর কন্ঠে বলল – ১০ টা ২ বেজেছে এখনও রুমের লাইট জ্বলছে কেন? ঘুমাসনি কেন?

আয়না আমতা আমতা করে উত্তর দিল – এই তো ভাইয়া এখনই লাইট অফ করে ঘুমাতাম আর কি

আয়নার কথার মাঝখানেই নিশা আয়নাকে এক খোঁচা মারলো। এই খোঁচার মানে হলো ” কি হয়েছে ? ”

আয়না নিশার কানে ফিসফিস করে বলল – আমাদের বাড়িতে সবাইকে রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমাতে হবে। এটাই ভাইয়ার নিয়ম, রাত ১০ টার পর এক সেকেন্ডও কেউ জেগে থাকা ভাইয়া পছন্দ করে না।

এরই মধ্যে নিশা এক ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে । শুধু ভয়ংকর নয় লজ্জাজনক কান্ডও বটে। সে হঠাৎ করেই বলে উঠলো – তোর ভাই বিয়ের পরও কি বউকে ১০ টার মধ্যে ঘুমাতে বলতে। তাহলে ইহ জনমে আর বাচ্চার মুখ……

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আয়না নিশার মুখটা দ্রুত চেপে ধরলো। কথাটা একটু জোরেই বলা হয়ে গেছে। সামনে যে আবসার ছিল সেই দিকে খেয়ালই ছিল না নিশার‌। নিশা ভীত দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকালো। আবসার কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইসস কি বলে ফেললো আবসারের সামনে‌। মানুষটা তো এমনি ভীষণ রাগী তার সামনে এমন বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছে নিশা। ওকে এখন আবার মারবে না তো, লজ্জা ভয়ে দুটোতেই প্রান যায় যায় নিশার। আয়নাও ঘামতে শুরু করেছে। তার ভাইয়ের রাগ সম্পর্কে সে অনেক আগে থেকেই অবগত। আর সবচেয়ে বড় কথা তার ভাই এই সব কথা একদম পছন্দ করে না। উনি এক প্রকার রসকষহীন, রাগচটা একজন মানুষ। এবার বোধ হয় ভাইয়ের হাতে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য নিজের প্রান প্রিয় বান্ধবী প্রানটাই হারাবে। কিন্তু আয়না আর নিশাকে অবাক করে দিয়ে একদম নিশ্চুপভাবে বড় বড় পা ফেলে দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করেছে আবসার। বিষ্ময়ে দুইজনই মুর্তি বনে গেছে। এই লোক তো ছাড়ার পাত্র নয় হঠাৎ কি হলো একদম কিছু না বলেই চলে গেল?

কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়েছে আবসারের। আসলে নিশার বেফাঁস মন্তব্যে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল আবসার। নিজের অপ্রস্তত ভাবটাকে ঢাকতেই দ্রুত চলে এসেছিল সে।

________________

ফজরের নামাজ আদায় করে বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিয়েছে নিশা। ফজরের নামাজ আদায় করে রোজই ও আবার ঘুমিয়ে যায়, এটা ওর অভ্যাস।

আয়না নিশাকে ধাক্কিয়ে – এই নিশা ওঠ, বাইরে হাঁটতে যেতে হবে, এটা ভাইয়ের আদেশ।

– তোর ভাই তুই যা, আমাকে ডাকছিস কেন? ঘুমাতে দে আমাকে।

চোখ বন্ধ করেই ঘুমু ঘুমু কন্ঠে কথাগুলো বলল নিশা। হঠাৎ করেই গায়ে পানি পড়তেই ধরফরিয়ে উঠে বসলো সে। বৃষ্টি নেমেছে? ছাদ কি ফুটো হয়ে গিয়েছে? ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখে না ছাদ তো ঠিকই আছে তাহলে ওর গায়ে পানি এলো কোথা থেকে? আশে পাশে পানির উৎস খুঁজতে গিয়েই চোখে পড়লো আবসারকে । বিছানার এক পাশে বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে সে। ওহ তাহলে এই কাজটা এই ধমকরাজের? মুহুর্তে যেন নিশা তার পুরোনো ভয় ডরকে ভুলে বসেছিল, রেগে আবসারকে কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে আবসার দিল তার অস্কারজয়ী সেই বিখ্যাত ধমক।

– এই বাড়িতে এত বেলা অব্দি কেউ ঘুমায় না। দ্রুত চেঞ্জ করে এসো জগিং – এ যাবো সবাই।

মুহুর্তেই চুপসে গেল নিশা। অস্পষ্ট সুরে বলল – আসছি।

_____________________

পার্কের মধ্যে হাঁটছে আর দিমু ঝিমুচ্ছে নিশা। ঘুমে চোখ দুটো জুড়িয়ে আসছে। একটু হাঁটছে আর দাঁড়িয়ে একটু ঘুমাচ্ছে। কোথা থেকে আবসার এসে দিল এক ধমক, সাথে সাথে নিশার ঘুম হাওয়া। নিশা মনে মনে যত দোয়া , সূরা জানতো সব পাঠ করতে করতে দিল এক দৌড়। সে যেন দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তবে একটা বিষয় ভালো যে আবসারকে দেখলেই নিশার সব দোয়া সূরা মনে পড়ে যায়। এই উউছিলায় অন্তত একটু সওয়াব তো হয় ওর। সব দোয়া পড়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বুকে একটু ফুঁ দেওয়ার জন্য মাথা নিচু করতেই একটা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে চিৎ পটাং নিশা। নিশাকে পড়তে দেখে আবসারও দৌড়ে ওর কাছে এলো। হায়রে মান সম্মান, নিশার এখন লজ্জা, অসস্থিতে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। পড়েছে ঠিক আছে, পড়ার একটা সৌন্দর্য আছে। ও বসে পড়তে পারতো, শুয়ে পড়তে পারতো তা না করে ও চি*ৎ হয়ে পড়েছে তাও আবার যেই সেই চি*ৎ না , একটা ব্যাঙকে উল্টো করে রাখলে যেমন চি*ৎ হয়ে থাকে তেমন চি*ৎ। লজ্জা অসস্তি ভয় তিনটাই নিশাকে ঘিরে ধরেছে। নিজে চেয়েও উঠতে পারছে না, কোমড়টায় ভীষণ লেগেছে।

আবসার হাত বাড়িয়ে দিল তার হাত ধরে ওঠার জন্য। নিশা কেমন ইতস্তত করছে, এভাবে একটা ছেলের হাত ধরতে কেমন যেন লাগছে। নিশাকে হাত ধরতে না দেখে আবসার আবার দিল এক ধমক।

– এই মেয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখছো? হাত ধরে ওঠো, একে তো বাচ্চাদের মতো বোয়াল মাছ ধরেছো তার উপর না উঠে এখনও ব্যাঙের মতো শুয়ে আছো।

নিশা তড়িৎবেগে আবসারের হাতে হাত রাখলো। আবসার যেন থমকে গেল। প্রেয়শীর প্রথম স্পর্শে সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। যদিও এই ধরনের কোনো অনুভূতিই নিশার মধ্যে পরিলক্ষিত নয়। সে এখন কোমড় ব্যথা আর ভয়ে নাজেহাল। এর মধ্যে আবসারও ওর হাতটা শুধু চেপে ধরেই দাঁড়িয়ে আছে উঠাচ্ছে না, নিশার ভয় আরও বাড়ছে। এমনি এই লোককে সামনে দেখলেই ওর ভয় লাগে ‌। নিশা কোনো রকম অবসারের হাতটা বেয়েবুয়ে উঠে দাঁড়ালো। কোমড়টা কোনো রকম এক হাত দিয়ে চেপে ধরে খোড়াতে খোয়াতে দিল দৌড়। আবসার হতবম্ব হয়ে কতক্ষন ওর হাতের দিকে তাকাচ্ছে কতক্ষন নিশার দিকে। তারপর হাতের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে একটা মুচকি হাসি দিল।

চলবে….#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_৬
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

সকালের নাস্তা করতে এসে টেবিলে আবসারকে না দেখে একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল নিশা। মনে মনে শয়তান তাড়ানোর দোয়া পড়তে পড়তে একটু খানি পরোটা ছিড়ে মুখে দিল।

– ‘আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বিওয়াঝহিল কারিম ওয়া সুলত্বানিহিল কাদিমি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’

এমা শয়তান তাড়ানোর দোয়া শেষ করতে না করতেই শয়তান এসে হাজির। আজকাল শয়তান গুলোও বেহায়া হয়ে গেছে। ওদের তাড়ানোর জন্য নিশা দোয়া পড়ছে কিন্তু ওরা নিশার সামনে এসেই চেয়ার টেনে বসলো। আবসারকে দেখেই খাবার যেন গলায় আটকে গেল নিশা। হেঁচকি উঠতেই পাশের চেয়ারে বসা আয়না পানি এগিয়ে দিল নিশার দিকে। নিশা হাতের কাছে পানি পেয়ে ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি খেয়ে ফেলল। সাথে সাথেই আবসার ধমকে উঠলো –

– শুধু পানি খেয়েই পেট ভরাবে নাকি? খাবার খাও।

এবার পানিও যেন নিশার গলায় আটকে যাওয়ার উপক্রম। গলায় কিছু আটকে গেলে মানুষ পানি খায় গলা ঠিক করার জন্য এখন সেই পানিই যদি গলায় আটকে যায় তাহলে কি খাওয়া উচিৎ ভেবে পাচ্ছে না নিশা। হঠাৎ করেই কাশি উঠে গেল , মুখের পানি গিয়ে পড়লো সামনে থাকা আবসারের মুখে। আঁতকে উঠলো নিশা আর আয়না। এই বুঝি শেষ সব, এখন না মেরে বালিচাপা দিয়ে দেয়। কিন্তু নাহ, আবসার মুখে পানির ফোঁটাগুলো নিয়ে বেশ শান্ত দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে নিশার দিকে। তারপর হঠাৎ করেই শান্ত স্বরে বলে উঠলো –

– ঠিক আছো তুমি? এত তাড়াহুড়ো করছো কেন?

আবসারের এমন শান্ত কথা বার্তা যেন ঠিক হজম হচ্ছে না নিশার। এ বাড়িতে আসার পর এই ধমকরাজকে শুধু ধমকাতেই দেখেছে হঠাৎ সে শান্ত ব্যবহার করছে কেন? নিশার যেন ভয় আরও বেড়ে যাচ্ছে। ও আগেও শুনেছে ” শান্ত পরিবেশ নাকি ঝড় আসার পূর্বাভাস। ” ওর জীবনে আবার কোনো ঝড় আসতে যাচ্ছে না তো? এই লোক তো এভাবে শান্ত থাকার মানুষ নয়। এই লোক এইভাবে শান্ত থেকে ওকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে না তো? শেষে কিনা বান্ধবীর বাড়িতে তার এক ভাইয়ের বিয়ে খেতে এসে আরেক ভাইয়ের হাতে প্রানটা দিতে হবে? চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলো নিশা। দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই আবসার আবার নিজের প্রিয় রূপে ফিরে গেল। ধমকে উঠলো আবসার।

– কি সমস্যা খাবার শেষ না করে কোথায় যাচ্ছো তুমি? একটু ভালোভাবে কথা বলেছি বলে কি মনে করেছো আমি ভালো হয়ে গেছি?

নিশা মনে মনে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে বুকে একটা ফুঁ দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই যে হাজার দোয়া পাঠ করেও এই আবসার নামক শয়তানের হাত থেকে নিস্তার নেই। আবসার ধমকে ধমকে নিশাকে খাওয়াচ্ছে। যেখানে জীবনেও নিশা ২ টা পরোটার বেশি খায়নি, সেখানে আবসার নামক ভয়ানক প্রানীর ধমকে আজ পাঁচটা পরোটা খেয়েছে। আর আয়না পাশের চেয়ারে বসে নিশার অবস্থা দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে।

____________________

– না না এই বাড়িতে আমি কিছুতেই থাকব না। এই একদিনেই তোর ভাই আমার জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছে। আমি আজই এই বাড়ি থেকে চলে যাব।

– যাই বলিস আয়না তোর ভাইটা কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম। আমি এসেই ক্রাশ খেয়েছি। একদম চকলেট বয়।

কাজলের কথা শুনে তেতে উঠল নিশা। এমনি আবসারের অত্যাচারে ওর জীবন নাজেহাল। আর সেখানে ওরই বান্ধবী ওর সামনেই ওর প্রধান শত্রুর প্রশংসা করছে।

– ওটা চকলেট বয় না কফি বয় হবে, দেখেছিস কেমন কফি কালারের। আর তা ছাড়া তুই তো যাকে দেখিস তার উপরই ক্রাশ খাস। এ আর নতুন কি? ঐ কলেজের সাইডে পানের দোকানে পান খাওয়া কুদ্দুস মিয়াকে দেখলে তার উপরও তো তুই ক্রাশ খাবি।

নিশার কথা শুনে আয়না বলল – একদম বাজে কথা বলবি না। আমার ভাই এমনিতেই যেমনই হোক অনেক হ্যান্ডসাম। কত মেয়ে আমার ভাইয়ের জন্য পাগল জানিস?

– রাখ তো তোর চাপাবাজি। হ্যান্ডসাম, মাথায় চুল তো নেই। একদম জিরো সাইজ। আর যা ব্যবহার দেখছিস তোর ভাইয়ের কোনোদিন বিয়েই হবে না, সারা জীবন আইবুড়ো থাকতে হবে। মিলিয়ে নিস এই নিশার কথা।

নিশার ছোট বেলা থেকেই ছেলেদের চুলের প্রতি অন্যরকম একটা আকর্ষন। ফয়সালের প্রেমেও পড়েছিল এক প্রকার তার চুল দেখেই আর সেখানে আবসারের আর্মিতে থাকার সুবাদে মাথার চুল একদম ছোট ছোট, দাঁড়িও নেই।

নিশা এক সপ্তাহ আগেই আয়নাদের বাড়িতে চলে আসলেও এতদিন তো আর টিউশনিগুলো বাদ দেওয়া যাবে না। তাই সকালের নাস্তা করেই কাজলের সাথেই বেড়িয়ে পড়েছিল। কাজল আর আয়নার বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় কাজল সকাল সকালই আয়নাদের বাড়ি চলে গিয়েছিল। টিউশনি শেষে এক প্রকার কাজলের জোড়াজুড়িতেই আজ রাতটা ওদের বাড়িতেই থেকে যায় নিশা। কাজলের একটাই কথা আয়না কি একাই ওর বান্ধবী আয়নার বাড়িতে থাকতে পারলে ওর বাড়িতে কেন থাকতে পারবে না। কেমন বাচ্চাদের মতো আবদার। নিশাও আবসারের ভয়েই কাজলের বাড়িতে থাকতে রাজি হয়ে গেল। ঐ বাড়িতে গেলেই তো আবার আবসার নামক একটা বদ প্রানীর সামনা সামনি হতে হবে। এক দিনেই নিশা কেমন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আবসারের অত্যাচারে‌।

__________________

রাতে খাবার টেবিলে নিশাকে না দেখে আবসার ভ্রু কুঁচকে আয়নার দিকে তাকালো। আবসারকে এভাবে তাকাতে দেখে ভরকে গেল আয়না। এমনি ও আবসারকে ভীষণ ভয় পায়। তার মধ্যে এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল –

– ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন ভাইয়া? কিছু বলবে?

– তোর সাথের মেয়েটা কোথায়? ওকে খেতে ডাক ‌‌।

– ওহ নিশার কথা বলছো, নিশা তো নেই।

কেবলই ভাতের প্লেটে হাত দিয়েছিলো আবসার। নিশা নেই কথাটা শুনেই হাতটা থমকে গেল আবসারের ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো আয়নার দিকে অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো –

– নেই মানে কোথায় গেছে?

– ও কাজল মানে আমার আরেক বান্ধবীদের বাসায় গেছে‌ । আজ ও সেখানেই থাকবে‌‌ ।

– অন্যের বাড়িতে গেছে মানে? কার কাছে জিজ্ঞেস করে ও এ বাড়ির বাইরে গেছে? বান্ধবীদের বাড়িতে রাত কাটাবে এটা কি ধরনের শিক্ষা?

– আমিও তো ওর বান্ধবীই ভাইয়া। আমার বাড়িতে থাকতে পারলে কাজল কি দোষ করেছে? আর তাছাড়া ও থাকতে চায়নি ইনফ্যাক্ট আমাদের বাড়িতেও ও আসতে চায়নি আমি জোড় করে এনেছি। আর তুমিই বা এতে এভাবে রিয়েক্ট করছো কেন?

আয়নার কথায় থতমত খেয়ে গেল আবসার। কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। কিন্তু নিজের অপ্রস্তত ভাবটা কারো কাছে প্রকাশ করতে একদম ইচ্ছুক নয় সে। কোনোভাবে নিজেকে ঠিক করে ভাত রেখে উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল –

– তাকে কল করে বাসার সামনে দাঁড়াতে বল আমি তাকে আনতে যাচ্ছি।

আয়না কেমন হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে। ভাইয়ের কোনো কথাই তার মাথায় ঢুকছে না । আবসার একটু সময় কিছু একটা চিন্তা করে আবার বলল-

– না থাক ওকে এত রাতে বাইরে বেড়িয়ে দাঁড়াতে হবে না। ওর মোবাইল নাম্বারটা দে আমি ওই বাসার সামনে গিয়ে নিজেই কল করবো ওকে।

আয়নার থেকে নিশার মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল আবসার। আবসার সদর দরজা পেড়োতেই আয়না তাড়াহুড়ো করে ফোন লাগালো নিশাকে। দুই বার রিং হতেই নিশা কলটা রিসিভ করল।

– কি রে চুন্নি হঠাৎ কল করলি যে।

আয়না ভীত কন্ঠে বলে উঠলো – নিশারে তুই আজ শেষ।

– কেন কি হয়েছে?

– ভাইয়া তোকে আনতে গেছে।

আঁতকে উঠলো নিশা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। যার ভয়ে এই বাড়িতে এসে উঠেছে সেই নাকি ওকে আনতে গেছে। না না ভয় পেলে চলবে না। ইচ্ছে তো করছে ঐ আবসার নামক শয়তানকে দুই চার কথা শোনাতে কিন্তু সে সাহস তো আর নিশার নেই। কিন্তু তাতে কি আবসারকে কিছু না বলতে পারলে কি হয়েছে আয়না তো আছে তার বোন। নিশা তেতে উঠে বলল-

– সমস্যা কি তোর ভাইয়ের এক দিনেই আমার জীবনটা তেজপাতা করে শান্তি হয়নি এখন আবার নিতে আসছে। শোন আমি তোর বান্ধবী, উনার বোনের বান্ধবী এটা উনাকে বুঝতে হবে। উনি আমার মতো একটা মাসুম বাচ্চার উপর এভাবে অত্যাচার করতে পারে না। নিহাত আমি ভালো মানুষ বলে কিছু বলছি না তোর ভাইকে বলে দিবি আমাকে যেন কিছু বলতে বাধ্য না করে।

– হ্যা হ্যা সবই বুঝতে পারছি কিন্তু এখন ভাইয়া তোকে আনতে গেছে, এখন কি করবি?

– মগের মুল্লুক নাকি? আমাকে নিতে আসলেই আমাকে উনার সাথে যেতে হবে নাকি। আমি যাব না কিছুতেই যাব না। পারলে তোর ভাই যেন যেন আমাকে নিয়ে দেখায়।

– এইসব ভাষন পারলে ভাইয়ের সামনে ছাড়িস। ভাইয়া তোকে মাথায় তুলে একটা আছাড় মারবে।

– এই তুই কি বলতে চাইছিস তোর ভাইকে আমি ভয় পাই নাকি।

– আমার কাজ আমি তোকে সাবধান করলাম। হাজার হলেও তুই আমার বান্ধবী। আমি চাই না আমার বান্ধবীটা অকালে আমার ভাইয়ের হাতে প্রান হারাক তাই আর কি

– রাখ তো ভাইয়ের চামচী বলে খট করে কলটা কেটে দিল নিশা‌ ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here