বিবর্ণ সিঁদুর পর্ব ৩

বিবর্ণ সিঁদুর
পর্ব- ০৩
Writer -Taniya Sheikh

লাল,সোনালি রঙের পৈঠানি শাড়ি, গায়ে জড়ানো অলংকার, কপালে জ্বলজ্বল করা টকটকে লাল সিঁদুরে মোহনীয় এবং স্নিগ্ধ লাগছে ষোড়শী বধূ রজনীকে। মুখের ক্ষত প্রায় ঢেকে গেছে প্রসাধনীর কারিশমায়। প্রত্যুষের আগে আগে চাঁদটার উজ্জ্বলতায় যেমন ভাটা পড়ে, তেমনি রজনীর এই উজ্জ্বল সাজও কিছুটা মলিন মনে হলো। তার নিস্প্রভ চোখের অনুজ্জ্বলতা দায়ী সেজন্য। এতোসুন্দর বধূ, এমন হৃদয়হরা যার আয়তলোচন অথচ তাতে নেই কোনো চঞ্চলতা। স্থির,বিষন্ন। চোখের কাজল পাছে লেপ্টে যায়,সেই ভয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে না। জল জমে জমে বুক ভারী হচ্ছে।

দুপুরে ওর ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। ভাত কাপড়! কী বলে সেখানে? খাবার সমেত থালাটা পরম ভালোবাসায় স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে স্বামী বলে,” আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম।” সৌমিত্রও বলেছে তাকে এ’কথা। রজনী ভীরু চোখে একপলক দেখেছিল মানুষটার মুখচ্ছবি। কী নিদারুণ অনিচ্ছা তাতে মাখা! যেন ঠেলে পাঠিয়েছে এখানে কেউ। গায়ের কাপড়ে তো তাই বলে। একটা ধূসর রঙের টাওজার আর নীল টিশার্ট পরনে ছিল। এটা যে একটা আচার তা যেন সে মানতে ইচ্ছুক নয়। পায়ের তলে আগুন জ্বলছিল রজনীর। কুল কাঠের আগুনে জ্বলছিল সমস্ত দেহমন, তথাপি তার মুখ অনুভূতিশূন্য। রজনী খেলো সামান্য পরিমাণে। ঐটুকুও তার গলা দিয়ে নামছিল না। শুধুমাত্র লোকলজ্জার বশে গলধঃকরণ করেছিল। বিয়ের প্রতিটা আচারই তার কাছে ছিল প্রিয় এবং আকাঙ্ক্ষার। তবে আজ বড্ড অপ্রিয় ঠেকছে। দেহের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিচ্ছে, এই মিথ্যে সম্পর্কের খোলসে ঢাকা আচার অনুষ্ঠান। একটু পর তার ফুলসজ্জা। ফুল নয়! কাটা বিছানো ঐ বিছানায়। রজনীর জীবনের অর্থ বিলিন হবে সেই কাটার আঘাতে আঘাতে। একটু পর সে মরে যাবে! হ্যাঁ! যেটুকু আছে, থাকবে না আর অবশিষ্ট। ফুলসজ্জার আদলে ঐ বহ্নিসজ্জায় তার মন, আত্মসম্মানের চিতা উঠবে আজ। পুড়বে দাউ দাউ করে আজীবন। কতোটা অসহায় সে৷ কখনো ভেবেছিল জীবনে এমন দিন আসবে?

” তুমি তী ভাবো?”

আড়াই বছরের ছোট্ট অনিয়’র কথায় তন্ময় ভঙ্গ হয় রজনীর। ছোট জা অনুপমার ছেলে অনিয়। ভারী মিষ্টি আর চঞ্চল। বন্ধুত্বসুলভ বটেও। এই অল্প সময়ের মধ্যে, এ’বাড়িতে সেই প্রথম রজনীর মনে জায়গা করে নিয়েছে। রজনী এক চিলতে হাসি উপহার দিতেই অনিয়ের মুখ থেকে কৌতূহলের মেঘ সরে যায়। এক প্রস্থ হেঁসে ঘাড় ঘুরিয়ে রজনীকে দেখতে লাগল সে। রজনী অনিয়’র গালে গাল লাগিয়ে বললো,

” কী দেখছ বাবু?”

” তোমাতে?”

” আমাকে?”

অনিয় মাথা নাড়িয়ে কোল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রজনীর সামনে। বসার কারনে ভাঁজ পড়ে যাওয়া পরনের ধুতি পাঞ্জাবি দু’হাতে বিন্যস্ত করে এক গাল হেঁসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

” দেতো তো কেমল লাগছে?”

রজনী চোখে বিস্ময় ভাব এনে বললো,

” ভারী সুন্দর। একেবারে ছোট্ট গোপাল।”

দু’হাতে টেনে অনিয়র গালে চুমু দিয়ে কোলে বসায়। অনিয় কাকিমনিকে চুমু দিয়ে গলা ঝুলে রইল। এই শিশু বালকটিকে পেয়ে মনের ক্লেশ মুহূর্তের জন্যে ভুল গেল রজনী। ভাইপো ছোটনের অভাবটাও যেন অনেকাংশে পূরণ হলো অনিয়কে পেয়ে। অনিয়র নানা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে রজনী ভুলেই ছিল তার বর্তমান। অনুপমা দ্বারে এসে দাঁড়াতেই সম্বিত ফিরে আসে। হাসির লেশ তৎক্ষণাৎ কালো মেঘে থেকে যায়। অনুপমা কিছুটা আন্দাজ করেও হাসল। এগিয়ে এসে ছেলের গাল আলত টেনে বললো,

” খুব জ্বালানো হচ্ছে কাকিমনিকে,তাই না?”

” না! আমি তো আদল কত্তিলাম।” রজনীর বুকে মাথা রেখে হেঁসে জবাব দিল। অনুপমা বললো,

” অনেক আদর করেছ। এবার নামো। আসো।”

অনিয় নামতে না চাইলেও অনুপমা জোর করে নামিয়ে দিল। মায়ের এমন নিষ্ঠুর আচরণে অনিয়র চোখের কোন জলে ভরে ওঠে। রজনীর বেজায় খারাপ লাগে তা দেখে। অনিয়র সাথে যেভাবে সাচ্ছন্দ্যে কথা বলা যায়,এ বাড়ির আর কারো সাথে তা বলা যায় না। নচেৎ ঠিক বলে কয়ে অনিয়কে কোলে তুলত রজনী। তার সব আশার মতো এ আশাও ব্যর্থ হলো এই ক্ষণে। ওমন বেদনা ভরা চোখে অনিয়র দিকে রজনীকে তাকাতে দেখে অনুপমা বললো,

” কাল সারাদিন কোলে রেখো, দিদি। আজ আমায় ক্ষমা করো।” রজনীর শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে করতে হাঁটু ভাঁজ করে বসল অনুপমা। রজনী লজ্জিত অনুপমার কথা শুনে। অনুপমার দিকে তাকিয়ে গলায় বললো,

” আমি তো আপনার বয়সে ছোট। ছোট’র কাছে কী ক্ষমা চাইতে আছে?”

” দোষ করলে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সে ছোট হোক আর বড়। তাছাড়া, তুমি তো আমার সম্পর্কে বড় হও। তোমার মনে কষ্ট দিয়েছি এ তো দোষই, তাই না?”

দাঁড়িয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে রজনীর সাজসজ্জা পরখ করে নিল। রজনীর মলিন মুখটা অনুপমার নজর এড়ালো না। হাসিমুখে রজনীর গালে হাত রেখে বললো,

” শোনো দিদিভাই, ধৈর্য ধরো। আজ যা অপমান আর কষ্টের মনে হচ্ছে কাল তাই মান আর সুখের হবে। আমাদের সোম দা খারাপ লোক নয়। একটু রাগী তবে মনটা খুব ভালো। আঘাত পেলে মানুষ বদলে যায়। তিনিও গেছেন। তার আঘাতে ভালোবাসার দাওয়া লাগাতে হবে তোমাকে। নিজেদের মধ্যে দেয়াল তৈরি করো না। যতো কথা, অভিমান,অভিযোগ বলে দিও আজ তাকে। দেখি কী করে দূরে ঠেলে তোমাকে। বুঝেছ তো কী বলতে চাইছি?”

” জি!” আধো মুখে মৃদু স্বরে রজনী জবাব দিল।যদিও এসব কথার কোনোটাই তার মগজে স্থায়ী হলো না। সে কলের পুতুলের মতো হ্যাঁ তে হ্যাঁ! না তে না করছে। অনুপমা সহজ হতে চাচ্ছিল রজনীর সাথে। কিন্তু রজনী এমন করে গুটিয়ে রেখেছে নিজেকে যে অনুপমা আশাহত হলো।তবে চেষ্টা ছাড়ল না। রজনীর কাঁধে হাত রেখে অনুপমা বললো,

” তোমার যদি আমার নাম নিতে সংকোচ হয়, তবে অনু দি বলো,কেমন!”

জবাবে সামান্য মাথা নাড়াল রজনী। অনুপমা রজনীর এক হাতে জড়িয়ে ছেলেকে উদ্দেশ্যে করে বললো,

” চলো বাবায়, আমরা কাকিমনিকে ঘরে দিয়ে আসি।”

নেমে কাকিমনির হাতটা ধরল অনিয়। মুখ তুলে হাসতেই রজনীর বিষন্ন মুখখানা দেখে চুপসে গেল। ছেলে অনুপমার দিকে তাকাতেই হাসল অনুপমা। ইশারায় কাছে ডাকতেই অনিয় মায়ের কাছে চলে এলো। ওরা রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল পূজার ঘরে। সেখানে জপ করছিলেন সারদা দেবী। অনুপমা ইশারায় রজনীকে প্রণাম করতে বললে, রজনী শাশুড়ির পা ছুঁয়ে প্রণাম করল।

সারদা আনমনা হয়ে পড়ে। শাশুড়ির উদ্বিগ্ন চাহনী স্পষ্ট বুঝল অনু। ইশারায় আশ্বস্ত করতেই মুচকি হাসার চেষ্টা করলেন রজনীর দিকে চেয়ে তিনি। মাথায় হাত রেখে রজনীকে মন ভরে দেখলেন। তার চোখ ছলছল। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,

” ভগবান তোমাকে সুখী করুক। ভালো থাকো আজীবন।” এর বেশি তার গলা দিয়ে বের হলো না। আজকে তার মনটা ভীষণ চঞ্চল। যা ভেবে এই অনাথ মেয়েটিকে ঘরে তুলেছেন, তা সফল হবে কী? যদি তার ছেলে কথায় অটুট থাকে? না! আর কিছু ভাবতে পারছেন না তিনি। মাথাটা ভার ভার বোধ করছেন। শাশুড়ির মানসিক অবস্থা বুঝে রজনীকে নিয়ে বের হয়ে এলো অনু৷ অনিয় রয়ে গেল দিদুনের কাছে। রজনী নিজের চিন্তায় এতোটাই চিন্তিত যে, আশেপাশের মানুষগুলোর চিন্তা তার নজরে পড়ল না। দোতলার কড়িডোর ধরে ওরা এলো একদম শেষের রুমটায়। সৌমিত্রের রুমে। রুমে ঢোকামাত্রই গাঁয়ে কাটা দিয়ে ওঠে রজনীর। রুমের এককোনের বড় খাটটা বাহারী ফুলে সাজানো। ভারী পর্দা টানানো জানালায়। রজনীকে খাটের মাঝ বরাবর সুন্দর করে বসিয়ে অনু বললো,

” এবার আমার যাবার পালা। যা বলেছি মনে আছে তো?”

রজনী শুনেও সে কথা শুনল না। তার চোখ বিছানায় ছড়ানো ফুলের দিকে। বুকটা দুরুদুরু করছে। অনুপমা ওর গা ছুঁতেই রজনী আতঙ্কিত চোখে তাকাল। বড্ড মায়া হলো অনুপমার। স্নেহভরা হাতটা মাথায় রেখে বললো,

” ভয় পেয়ো না। সোম দা বাঘ নয়, তোমার স্বামী। স্বামীকে এতো ভয় করতে আছে? আমি যা বলেছি স্মরণ রেখো। চলি।”

অনুপমা হাত সরাতে গেলেই রজনী চেপে ধরল। ওর বলতে ইচ্ছা করছে,

” যাবেন না দোহায়। আমাকে এভাবে মরতে রেখে যাবে না। আমাকে নিয়ে চলুন। ঐ খোলা আকাশের নিচে। যেখানে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। আমার যে এখানে দমবন্ধ হয়ে আসছে।”

রজনীর কন্ঠরোধ হয়ে গেল কী এক আতঙ্কে! কিছুই বলতে পারল না অনুপমাকে সে৷ অনুপমা বেশ বুঝল মেয়েটার মনের আতঙ্ক। কিন্তু কী’ইবা করার আছে তার! একদিকে শাশুড়িকে দেওয়া আশ্বাস, অন্যদিকে এই মেয়েটির প্রতি মায়া। অনুপমার মন দিশাহারা হয়ে গেল। শেষমেশ শাশুড়ির কষ্ট উপলব্ধি করে মেয়েটার মায়া কাটাতেই হলো তাকে। আজ কী হবে সে জানে! কতোটা কষ্ট মেয়েটা পাবে তাও জানে। তবুও কিছু করার নেই তার। ভেবেছিল মেয়েটা এ যুগের অন্য মেয়েদের মতো সাহসী। কিন্তু ভুল! অনুপমা এক চিলতে আশা নিয়ে রজনীকে বুঝিয়ে দিল সৌমিত্রে মন গলানোর টেকনিক। এখন মনে হচ্ছে সে আশা পূরণ হবার নয়। এই মেয়ের কথা এখনই বন্ধ হয়ে গেছে। সৌমিত্রকে দেখলে তো আর কথায় নেই। অনুপমা নিজেও যথেষ্ট ভয় পায় সৌমিত্রের রাশভারী স্বভাবকে। সেখানে এই মেয়ে তো! অনুপমার মাইগ্রেনের ব্যথাটা বাড়ল ফের। সারাদিনে এক হাতে সব কাজ সামলেছে। এখন আবার এসব চিন্তায় সে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ল। দরজা বন্ধ করে চলে এলো নিচে। কাজের লোক দিয়ে সব গোছগাছ করে ঘরে এসে ওষুধ খেলো। মনকে বোঝাল সব ঠিক হয়ে যাবে। মনে মনে শুধু আশঙ্কা একটায়। অর্থ লেনদেনের বিষয়টা দেয়াল হয়ে না দাঁড়ায় ওদের দাম্পত্যের মাঝে আবার।

অনুজ্জ্বল আলোয় গুটিশুটি মেরে ফুলসজ্জার খাটে বসে আছে রজনী। রুমের কোনোদিকে তার নজর নেই। সবকিছু আত্মকেন্দ্রিক হয়ে আছে৷ বারোটা বাজতেই ঢং, ঢং শব্দে সামনের দেয়ালের ঘড়িটি বেজে ওঠে। রজনীর আতঙ্ক কিছুটা কমলো সময়ের স্রোতে। উন্মীলিত চোখে পাশে তাকাতেই বড় করে টানানো ছবিটা দেখল। রাগে, ঘৃণায় রি রি করে উঠল মন। বিরবির করে বললো,

” পাষণ্ড, পিশাচ!”

তখনি খুট করে খুলে গেল দরজা। সচকিত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকাতেই সৌমিত্রকে দেখল।তাদের শুভদৃষ্টি হলো আরেকবার। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। সোনালি, লাল ধুতি পাঞ্জাবি পরনে গম্ভীরমুখে এগিয়ে এলো সৌমিত্র। রজনীর অবনত মুখটা দেখল দাঁড়িয়ে। একটা পুতুল সেজেগুজে বসে আছে৷ সৌমিত্রকে মোহিত করল কিছুটা রজনীর এই সাজ। রজনীর দিকে পিঠ করে বসল সৌমিত্র। থমথমে গলায় বললো,

” টাকা নেওয়ার বিষয়ে তুমি জানতে?”

রজনী চকিতে তাকিয়ে ভ্রুকুটি করে। সৌমিত্র জবাব না পেয়ে ঘুরে বসল। সৌমিত্রকে ঘুরতে দেখে চোখ নামিয়ে নেয় রজনী। সৌমিত্র এগিয়ে রজনীর দিকে ঝুঁকে চাপাস্বরে বললো,

” আমি সত্যিটা জানতে চাচ্ছি। এ বিয়েতে রাজি কেন হয়েছ? তুমি জানতে না আমার শর্ত?”

রজনীর পেট গুলিয়ে গেল সৌমিত্রের মুখ থেকে আসা মদের গন্ধে। দাঁত কামড়ে চুপ করে আছে সে। কপাল কুঁচকে ভাবছে সৌমিত্রের কথা। এসব কেন বলছে? সে কী জানে না রজনী অনাথ! টাকা নেওয়া না নেওয়াতে তার হাত নেই। যতো জ্ঞানই মানুষ ঝাড়ুক। বেলাশেষে মেয়েদের মতামতের দাম কেউ দেয় না। রজনীকে নিরব দেখে মৃদু ধমক দিল সৌমিত্র। রজনী কেঁপে ওঠে। কাঁপা গলায় বলে,

” জি জানতাম।”

” তবুও রাজি হয়েছ?” সৌমিত্র বললো।

রজনী নিচু গলায় জবাব দিল,

” জি।”

রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো সৌমিত্রের। উঁচু গলায় বললো
” কেন?”

রজনী চুপ রইল। সে কী বলবে এখন? তার মা সমান মাসির ঋণ শোধ করতে রাজি হয়েছে সেটা বলবে? নাকি মিথ্যা বলবে। সত্যিটা বললে তার মাসির যদি ক্ষতি হয়। কতো কষ্ট ওর মাসির। একটা চায়ের দোকানে সংসার চলে। বড় দা, ছোট দা রোজ অভাবের কারণে বিবাদে জড়ায়। কনক দি’র বয়স বাড়ছে বিয়ে হচ্ছে না পণের অভাবে। লোকের নিন্দে শুনে প্রায় মরতে যায় দি। রজনীর এখন মনে হলো ওর মাসি ইচ্ছা করে এমন করে নি। তাই ই হবে। সবার চেয়ে বেশি ভালো তো রজনীকেই বাসত মাসি। আর রজনী কী’না বুঝল না মাসির কষ্ট! মাসি নিশ্চয়ই কাঁদছে এখনও। তাই তো বিদায় বেলায় এলো না সামনে।

রজনীকে একমনে ভাবতে দেখে সৌমিত্র আরও কাছে সরে এলো। রজনীর ভাবনা গুলিয়ে গেল মদের উৎকট গন্ধ নাকে লাগতে। সৌমিত্রকে এতোকাছে দেখে ভয়ে ঢোক গিললো। সরে বসবে বলে নড়তেই ওর দু’বাহু সজোরে চেপে ধরে সৌমিত্র। ব্যথা হাতটা সৌমিত্রের হাতের চাপে টনটন করে ওঠে ব্যথায়। রজনীর যন্ত্রণা ভরা মুখ সৌমিত্রের চোখে পড়েও পড়ল না। তার গলার স্বর চড়া হয়ে গেল,

” জবাব দাও।”

রজনীর মৌনতা ভাঙল না। রাগে সৌমিত্র দাঁত পিষে পুনরায় বললো,

” তাহলে তুমি স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছ। শুধুমাত্র টাকার জন্য? ”

কষ্টের জলে নিজেকে বিসর্জন দিল রজনী। তার সাথে যা হয়েছে,হবে বিধির বিধান বলে মেনে নিল, তবুও সত্যিটা বলতে পারল না। অবনত মুখে মাথা নাড়িয়ে রজনী বললো,

” হ্যাঁ!”

সেই ক্ষণে কী হলো বলার অপেক্ষা রাখে না আর। রজনীর মনে হলো পুরো পৃথিবী ভেঙে পড়েছে ওর উপর। দৈহিক যন্ত্রণার ভার সে বেশিক্ষণ নিতে পারল না। অচেতন হবার পূর্বে তার কানে এলো,

” তুমিও মায়া, তুমিও মায়া।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here