বিষন্ন_রাত💖 পর্ব ৩

#বিষন্ন_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৩

– ছি ছি এই নির্জন রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে কোথায় গেলো কে জানে। এতো রাতে একটা ছেলেকে নিয়ে কোথাও যাওায়া মেয়ে আর যাই হোক কখনো ভালো হতে পারেনা। আজ আমার নিজের চোখে না দেখলে তো বিশ্বাসই হতোনা রাত কতোটা নিচে নেমে গেছে। দাও আরো আস্কারা দাও ছেলেকে। নিজের চোখেই দোখে কতোটা নিচে নেমে গেছে তোমার ছেলে। মাঝ রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে,,,, ছি ছি।

পলির অভিযোগ গুলো শুনে রুদ্র চৌধুরি ঠান্ডা মাথায় টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি পান করলো। রুদ্র চৌধুরির নিরবতা দেখে রাগ আরো বেড়ে গেলো পলির।

– আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাই তো? যেদিন এগুলো লোক জানাজানি হবে তখন কিন্তু মান সম্মানটা তোমারই যাবো। তখন কপাল থাপরানো ছারা আর কিছুই করার থাকবে না।
ঠান্ডা মাথায় রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– তোমার অভিযোগ দেওয়া শেষ? অনেক রাত হয়েছে ঘুমুতে চলো।

আধা ঘন্টা আগে,
বৃষ্টিকে নিচে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তড়িঘরি করে নিচে চলে যায় রাত। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় রাতকে দেখে তার বাবা রুদ্র। ছেলেকে নিয়ে ইদানিং অনেক টেনশন হয় তার। এতো রাতে কোথায় যাচ্ছে। মাথায় দুঃশ্চিনার ভার। ফলো করতে করতে রাতের পেছন পেছন বেরিয়ে পরে সে ও।

রাত বৃষ্টিকে বাড়ি পৌছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। পলি চৌধুরি তা উপর থেকে দেখে রুমে চলে যায়। রুদ্র চৌধুরিকে খবরটা দিতে যে তার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। রুমে গিয়ে রুদ্রকে দেখতে পেলো না সে।

বৃষ্টিকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিলো রাত। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে ফাইফ বেয়ে নিজের রুমে চলে যায় বৃষ্টি। বারান্দায় দাড়িয়ে কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে সে। রুমটা খুটখুটে অন্ধকার হয়ে আছে। বৃষ্টি উকি দেয়ে দেখে খাটের উপর কে যেনো বসে আছে। অন্ধকারে কে তা বুঝা না গেলেও কেও একজন আছে তা ভালোই বুঝতে পারছে সে। বুকটা টিপ টিপ করতে থাকে তার। মনে হয় এক্ষুনি পরান পাখি উড়াল দিবে। মা বসে নেই তো আবার? নিশ্চই জিজ্ঞেস করবে কোথায় গিয়েছিলি এতো রাতে?
তখনি ভেতর থেকে আওয়াজ এলো।
– ভয় পাস না আপু, ভিতরে চলে আয়।
বুকে হাত দিয়ে একটা সস্থির নিশ্বাস ফেললো বৃষ্টি। তার মানে এটা মা নয় তার ছোট ভাই রিদ। ক্লাস টেনে পড়ে সে।
বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে,
– এখানে কি করছিস তুই? যানিস কতো ভয় পেয়েছিলাম?
– তোর উপকার করলাম থ্যাংস দে আমায়।
– আচ্ছা। আগে বল কি এমন উপকার করলি যার জন্য থ্যাংস দিতে হবে?
– তুইযে বের হচ্ছিলি তা আমি দেখেছি। আর তুই জানিস বাবা তখন ছাদে হাটাহাটি করছে? তোকে দেকেও ফেলেছে রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে যাওয়ার সময়, ভাগ্গিস চিনতে পারেনি। তখনই আমি তোর রুমে এসে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে থাকি। কিছুক্ষন পর বাবা এসে রুমে চেক করে গেলো। আমাকে দেখেই ভেবেছিলো তুই শুয়ে আছিস। তাই রুমে চলে গেলো। এখন হয়তো নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। আচ্ছা বাদ দে আগে বল কাকে উইশ করেছিস?
– আমি যে কাওকে উইশ করতে গিয়েছি তুই কি করে জানলি?
– হুহ্, ওইসব আমি আরো আগে পার করে এসেছি। আগে বল কে সে যাকে এতো রাতে উইশ করতে গেলি?
– সময় হলে জানবি এখন যা ঘুমাতে যা।
– কিন্তু আমার হেল্প করার ক্রেডিট দিবি না?
– এতোদিনে একটা কাজের মতো কাজ করেছিস। পেয়ে যাবি।
,
,
বাড়ি ফিরে ফাইফ বেয়ে উঠে নিজের রুমে গিয়ে সুয়ে পরে রাত। পলি নিচে ড্রায়নিং রুমে পায়চারি করছে। রুদ্রকে ঘরে ঢুকতে দেখেই। অভিযোগ দিতে থাকে তার কাছে।

ঠান্ডা মাথায় নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো রুদ্র চৌধুরি।
পেছন থেকে পলি বলে উঠে,
– ভালোর জন্যই বলছি তোমায় বিশ্বাস হচ্ছেনা তাইতো? রুমে গিয়ে দেখে আসো তোমার ছেলে কোথায়?
রুদ্র এবার থেমে বলে উঠে,
– আমি ভাবতেও পারছি না রাতকে নিয়ে তোমার চিন্তা ভাবনা এতো নিচে নেমে গেছে। দেখি চলো তো।
পলি রুদ্রকে নিয়ে রাতের রুমের সামনে চলে গেলো। ভেতরে গিয়ে দেখে রাত সুয়ে আছে বিছানায়।
পলি চৌধুরি অবাক হলেও ভালোই বুঝতে পারছে এবার রুদ্র তার কোনো কথাই বিশ্বাস করবে না।
,
,
,
নতুন কলেজ, সাথে কিছু নতুন বন্ধু সব মিলিয়ে দিন ভালোই কাটছে রাতের। মাজে মাঝে একা একা বিষন্ন মনে গিটার বাজানোটা তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাড়িয়েছে।
বৃষ্টি, নেহা, স্নিদ্ধা, মিলি সকলে বসে আছে দল বেধে। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে নেহা বলে উঠে,
– কিরে এতো কি ভাবছিস কিছুতো বলবি নাকি?
পাশ থেকে স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– নিশ্চই রাতের আকাশে অনুভুতির তারা ছরাচ্ছে।
– আরে ধুর ছরাতে যাবে কেনো, ও তো এখন জোট বানাতে ব্যস্ত।
বিরক্তিশুর নিয়ে বৃষ্টি বলে উঠে,
– ধুর কি শুরু করেছিস তোরা?
– আচ্ছা দোস্ত রাতকে যেহেতু তুই পছন্দই করে নিয়েছিস তাহলে তোর মনের কথা বলে দে তাকে।
– তোদেরকে আমি কখনো বলেছি যে রাতকে আমি পছন্দ করি।
– দোস্ত তুই না বললেও তোর চোখের ভাষায় তা স্পষ্ট।
– সত্যি কি তা বুঝা যায়?
– কোনো সন্দেহ নেই।
– তাহলে রাতও কি সেই ভাষা বুঝতে পারে?
– সেটা তুই তাকেই জিজ্ঞেস কর। আর আমার মনে হয় রাতও তোকে পছন্দ করে। নাহলে সে কোনো মেয়ের সাথেই তেমন ঘনিষ্ট নয়।
– যদি ও ফিরিয়ে দেয় তাহলে ভালো সম্পর্কটাও নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের। আমি তো রাতকে হারাতে চাই না?
– আরু ধুর পাগল, এতো ভয় পেলে কি হবে?আমার বিশ্বাস রাত তোকে ফিরিয়ে দিবে না।
পাশ থেকে মিলি বলে উঠে,
– আই হ্যাব এ আইডিয়া। আমরা সকল ফ্রেন্ডরা মিলে দু,একদিনের জন্য কোথাও ঘুরতে চল। আর এই ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো রাতকে বৃষ্টির প্রপোজ করা।
স্নিদ্ধা বলে উঠে,
– আইডিয়াটা খারাপ না। কিন্তু টুরের ফিপটি পার্সেন্ট খরচ কিন্তু বৃষ্টির। বন্ধুত্বের খাতিরে ফুল খরচ থেকে ফিপটি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দিলাম। অন্য কেও হলে যার জন্য যাচ্ছি ফুরো খরচ তার কাছ থেকেই আদায় করা হতো।
পাশ থেকে নেহা বলে উঠে,
– আমার মনে হয় যাওয়া হবেনা রে। বাসা থেকে কোথাও একা যেতে দেয়না আমাকে।
– আরে আমরা বুঝিয়ে বলবো আঙ্কেলকে। দেখবি না করবে না। এখন রাতের বন্ধুদের সাথে আলাপ করতে হবে এই নিয়ে।
,
,
ছুটি শেষে পাশাপাশি হাটছে রাত ও বৃষ্টি। ড্রাইবারকে কিছু বকশিস দিয়ে একটু সাইডে তাকতে বলেছে সে।
হাটার সময় রাতের দিকে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে বৃষ্টি। এভাবে যে সে অসমাপ্ত পথ পারি দিতে চায় রাতের সাথে।
কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাথার উপর সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পরছে ধিয়ে ধিরে। তবুও প্রখর তাপ ছরাতে ব্যস্ত সে। সুর্যের তাপ বরাবরই গায়ে এসে পরছে দুজনের। ঘামে হালকা লাল গোলাপি আকার ধারন করেছে বৃষ্টির মুখটা। কপালে জমে তাকা বিন্দু বিন্দি ঘাম গুলো বার বার মুছে নিচ্ছ বৃষ্টি। রাত বৃষ্টির দিকে তাকালেও সেই দৃষ্টি দির্ঘ নয়। চোখ ফিরিয়ে একটা হাসির আভাস ফুটিয়ে তুলতে চেয়েও থেমে গেল। রাতের চোখের হাসি কখনো তার মুখ অব্দি পৌছায়না।
নিরবতা ভেঙে রাত বলে উঠে,
– অভ্যেস না থাকলে এমন উত্তপ্ত রোদে হাটার কারণ?
– ভালো লাগছে তাই।
– ভালো লাগার কারণ?
– তোমার কি অসস্থি বোধ হচ্ছে?
তার যে কেনো অসস্থি বোধ হচ্ছেনা আজ, তা বলতে গিয়েও থেমে গেলো রাত। আবার কিছুক্ষন নিরবতায় কাটলো।
নিরবতা ভেঙে বৃষ্টি বলে উঠে,
– সেদিন বুঝলাম তুমি তোমার মাকে খুব ঘৃনা করো। কারণ টা জানতে পারি?
প্রশ্নটা করেই পিট পিট করে তাকায় রাতের দিকে। প্রশ্নটা করার পর বুঝলো, রাতের দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন করা উচিৎ হয়নি তার।
রাত শান্তভাবে বলে উঠে,
– পুরানা ক্ষত জাগিয়ে তুলতে চাইনা। ওই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করোনা প্লিজ।
– সরি,,,,
আবার কিছুক্ষন নিরব। আবার বৃষ্টি বলে উঠে,
– কখনো কারো প্রেমে পরেছিলে?
– এসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসি নই আমি। এগুলো সব হলো অভিনয় আর দিন শেষে সবাই অভিনেতা।
– আচ্ছা তুমি কখনো হাসোনা কেনো? একটু হাসলে কি হয়? এতো গম্ভির কেনো তুমি? কাতুকুতু দিলে হাসবে? আরে হাসতে কোনো টেক্স লাগেনা। একটু হাসো প্লিজ,,,,,,
বৃষ্টির বাচ্চামোতে মুখ চাপা রেখে একটু হেসে দিলো সে। তা বৃষ্টির চোখ এড়ালো না।
– এই হাসিটাই তোমার মুখে সারা জীবন দেখতে চাই।
,
,
,
বিকেলে স্কুল ছুটি দিলো রিদের। সারাদিন স্কুলে ক্লাস করলেও তার হৃদপিন্ডটা বেধে ছিলো ওই গার্লস্ স্কুলে। টিফিনের টাইমে ফাকি দিয়ে ঠিকই চলে গিয়েছিলো তার গার্লফ্রেন্ড শুভ্রতার কাছে। ছুটি শেষে ব্যাগটা তার বন্ধু সামি নিয়ে এসেছে। শুভ্রতার সাথে দেখা করে ফিরতে ফিরতে বেলা ঘনিয়ে এলো। রিদ আার সামি মিলে হাটা ধরলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ওদিকে বৃষ্টি রাতের সাথেই ছিলো এতোক্ষন। দুজন মিলে লান্স করে কিছুক্ষন ঘুরলো কাছে সুন্দর সুন্দর জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলো রাত। আগে এসব জায়গায় ঘুরাফিরা করলেও আজ ছিলো এক ভিন্ন অনুভুতি।
বৃষ্টি বাসায় ফিরতে রাস্তায় দেখা হলো রিদ ও সামির সাথে। গাড়ি থামিয়ে রিদকে বলে উঠলো বৃষ্টি,
– কি রে রিদ কখন স্কুল ছুটি হলো আর তুই এখন বাড়ি ফিরছিস? আর হেটে হেটেই বা কেনো যাচ্ছিস। কোথায় ছিলি এতোক্ষন?
পাস থেকে সামি বলে উঠে,
– আর বলবেন না আপু, প্রতিদিন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যায় সাথে আমাকেও নিয়ে যায়। আজতো স্কুল ফাকি দিয়েই চলে এসেছে। রিদের সাথে থাকতে থাকতে দেখেন কতো লেট হয়ে গেলো দেখলে? এখন নির্ঘাত মা বাড়িতে গেলে বকবে।
বৃষ্টি রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে রিদের দিকে,
– বিশ্বাস কর আপু ও সব মিথ্যা বলছে। আর আমি স্কুল ও ফাকি দিই নি।
– গাড়িতে উঠ।
– তুই যা আপু এইতো আর একটু। আমি সামির সাথেই আসছি।
– বাসায় আয় আজকে।

বৃষ্টি চলে যাওয়ার সামির গলা চেপে ধরে রিদ।
– হারামজাদা, তোরে বলছি আপুকে এইসব বলতে? তোরা কি বন্ধু নাকি বুকে ধরে থাকা বন্দুকের নল?
– আরে ছার কি করছিস, তোর প্রতি অতি ভালোবাসার টানে সত্যিটা বেড়িয়ে গেছে মুখ দিয়ে। ভালোবাসা থেকে আসছে এগুলো।
– তোমার এতো ভালোবাসা আমার দরকার নেই। একটু কম করে বাসো। এখন বাড়িতে কথাগুলো জানাজানি হলো বাশ রেডি করেই রাখবে আমার জন্য।

তখনই সামির পকেটে ফোনটা বেজে উঠলো।
– হ্যালো আম্মু।
– কোথায়রে তুই?
– এইতো আম্মু চলে আসছি। গ্রুপ স্টাডি করছিলাম তো তাই।
রিদের মাথায় চাপলো দুস্ট বুদ্ধি। এটাই সামির ভালোবাসা তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার উত্তম সময়।
ফোনের কাছে মুখ নিয়ে রিদ বলতে শুরু করে,
– ওফ বেবি কে ফোন দিলো ফোনটা রাখোতো। কে এমন ডিস্টার্ব করছে যত্তসব।
ওপাস তেকে সামির মা বলে উঠে,
– এটাই তোর গ্রুপ স্টাডি?
রিদ এবার জোরে জোরে বলতে শুরু করে,
– এই সামি, সিগারেটের পেকেট টা দে তো সিগারেটের পেকেট টা দে। আরে সামি দে না। পেকেটের অর্ধেক তো তুই ই শেষ করে ফেললি।

সামি প্রায় কাদু কাদু অবস্থা তার মায়ের কাছে। ওপাস থেকে তার মা রাগি গলায় অনেক গুলো কথা বলতে তাকে সামি কে,
– তুই আজ বাসায় আয়।
ফোন কেটে দিলো তার মা।
সামি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে,
– হারামজাদা এটা কি করলি তুই?
– কিচ্ছু করার নেই দোস্ত তোর মতো আমারও অতি ভালোবাসার কারণে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভালোবাসা থেকে আসছে এগুলো।

To be continue………..

~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টতে দেখার অনুরুধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here