বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি পর্ব ৫৩+৫৪+৫৫

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৫৩

গতরাতের কথা ভাবতেই সেহের লজ্জায় চোখ মুখ খিঁচে নেয়।নিজের উপর রাগ হচ্ছে ভীষণ আবার অভিমানও! আশুর জেদ মেনে শহরের বাহিরে ঘুরতে বেরিয়েছিল ।ক্রিসমাসের মাস,সামনে নিউ ইয়ার! নিউইয়র্কের রাস্তাঘাট এখন ভীষণ ব্যস্ত, অন্য সময়ের দ্বিগুণ! বিকালের পর বের হবে বললেও বাড়ি থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়েছে ।মিহিকে সাথে চলতে বললে মিহি কাজের বাহানা দেখিয়ে না করে । সেহেরও আর কথা বাড়ায় নি ।
রাস্তাঘাট বাহারি আলোয় সজ্জিত । সন্ধ্যা হলেও বুঝবার কায়দা নেই। এখানে দিনরাত সমান। রাস্তাঘাট সবসময় ব্যস্ত জাঁকজমকপূর্ণ! সেহের আরহাম পাশাপাশি বসে আশু তার বাবাইয়ের কোলে মাথা হেলিয়ে আছে। সামনে ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে ।সেহের আড়চোখে আরহামের দিকে তাকাতে দেখে সে আগে থেকেই সেহেরের দিকে তাকিয়ে । আরহামের স্পষ্ট চাহনি কিছু একটা বলতে চাইছে । সেহেরের বুঝেও না বুঝার মত বসে থাকে।গাড়ি তার নিজ গতিতে চলছে । গাড়ির কাচ বন্ধ থাকার পরও হিমেল হাওয়া থেকে নিস্তার নেই। ভারী গরম কাপড়ের ফাঁকে ফাঁকে কিভাবে জানো ঢুকে পড়ে।আসার সময় হাত মোজা পরতে ভুলে গেছে সেহের। যার মাশুল এখন বেশ ভালো ভাবে পাচ্ছে।হাত ঠান্ডা হয়ে আছে ।হাতে হাত ঘষে ও খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না। আঁধারের সাথে সাথে রাত ঠান্ডা দুটাই গভীর হচ্ছে।
গাড়ি থামল কোন এক ফার্ম হাউজে। আহামরি তেমন কিছু নয় । শহরের বাহিরে ছোট এক গ্রামে লেকের পাড়ে ছোট এক কাঠের ঘর।ঘরের সামনে ছোট এক আঙ্গিনা।যেখানে আপাতত সাদা বরফ জমে। লেকের পানি বরফ হয়ে স্বচ্ছ কাচের রূপ নিয়েছে।বাড়ির চারদিকে চিকন চিকন কাঠের বেড়া । হয়তো সীমানা স্থির রাখতে দেওয়া।আজ রাতটা তারা এখানেই থাকবে।সেহের নাকচ করতে চেয়েও পারল না। মেয়ের জিদের সামনে তার চলে কই? এতো বছর পর বাবাইকে পেয়েছে পুরোটা সময় বাবা মায়ের সাথে কাটাতে চায়। প্রতি ছুটিতে যখন আশুর বন্ধুরা পরিবারের সাথে বেড়াতে যেতো আশু খুব আফসোস করে মন খারাপের স্বরে বলতো ,”ওরা কত লাকি তাদের পাপা আছে! ঘুরতে যেতে পারে খেলতে পারে ।
মাম্মাম আমার পাপা কই? পাপার কি আমাদের কথা মনে পড়ে না! ”
সেহের তখন শান্ত চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকত । কি উত্তর দিবে? বলার মত কিছু আছে কি? আজ যখন আশু তার বাবাইকে পেয়ে এতোটা খুশি ,সেহের তা নিয়ে বাঁধা দেয়নি ।সব অপূর্ণতা গুলো পূর্ণতা পাক!
পার্ক ঘুরে ডিনার করে বাড়ি ফিরতে ভীষণ রাত হয়।বাড়ি ফিরে সেহেরের কান্ত ভারী শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। একটা হট শাওয়ার নিলে মন্দ হয় না! সেহের শাওয়ার নিয়ে রুমে ফিরে দেখে আরহাম আশনূহা ঘরে নেই ।পুরো বাড়ি খালি । তবে কি তারা বাহিরে গেছে? সেহের গেটের সামনে আসতে আরহামকে একা বাড়ি ফিরতে দেখল।আতংকিত স্বরে বলল,
“আশু কোথায়? ”
“কেন ,তোমার সাথে ! ”
“আশু বাড়িতে নেই ”
“হোয়াট? মাত্র বাড়ির দিকে এসেছে ! ”
“আশু বাড়ি ফিরে নি! ”
দুজন ঘাবড়ে যায়। ছুটাছুটি করে আশেপাশে খুঁজতে লাগে। আশনূহা কোথাও নেই! দুজন দুদিক দিয়ে খুঁজছে সেহের বাড়ির পাশে লেকের দিকে যেতেই আশনূহার মাফলার পেল ।আশনূহা কি লেকের পাড়ে? সেহের দ্রুত সেইদিকে ছুটে যায়। লেকের পানি বরফ হয়ে আছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার । কোথাও আলোর ছোঁয়া নেই। দূর বাড়ি থেকে আবছা আলো দেখা যাচ্ছে।সেহের জোরে জোরে আশনূহা আশনূহা বলে ডাকছে! কোন সাড়া নেই।তবে কি আশনূহা লেকে পড়েছে? সেহের অস্থির হয়ে পড়ে। আরো একটু কাছে যেতেই বরফে স্লিপ কেটে লেকের বরফের উপর পরে । সাথে সাথে আয়নার ন্যায় স্বচ্ছ বরফের উপর বক্ররেখার মত ভাঙ্গন ধরে।বরফ ভেঙে সেহের পানিতে তলিয়ে যায়।সাঁতার জানা না থাকায় সেহের হাবুডুবু খাচ্ছে । হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করছে। আশেপাশে সাহায্যের কেউ নেই! আশনূহা সামান্য দূরে বরফ নিয়ে খেলছিল। মায়ের আওয়াজ পেয়ে দূর থেকে আশনূহা ছুটে আসে । পাড়ে দাঁড়িয়ে মাম্মাম মাম্মাম বলে কাঁদতে লাগে। এদিকের চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে আরহাম ছুটে আসে সেহেরকে লেকে ডুবতে দেখে নিজেও পানিতে ঝাঁপ দেয়। কোনরকম সেহেরকে পাড়ে তুলে আনে। হাত পা প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে আছে।আশনূহা মাম্মাম মাম্মাম বলে কাঁদছে । সেহের নিভু নিভু চোখে আরহামের দিকে একবার তাকিয়ে পুরোপুরি জ্ঞান হারায়!
জ্ঞান ফিরে পরের দিন ভোরে।গায়ে ভারী কিছু অনুভব করে।ঘুমঘুম চোখ খুলে দেখে আশনূহা ডানপাশে শুয়ে সেহেরকে জড়িয়ে ধরে আছে। বাম পাশ থেকে আরহাম। মাঝবরাবর সেহের সটান হয়ে শুয়ে । বাপ বেটি একই ভঙ্গিতে শুয়ে দুজনের মাথা সেহেরের ঘাড়ের বেশ কাছে ।আরহামকে একই বিছানায় দেখে সেহের ভীষণ চমকায়। আশনূহাকে সরিয়ে মাঝ থেকে যেই উঠতে যাবে অমনি আরহাম কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। দুজনের মাঝে খুব একটা দূরত্ব নেই। নাকে নাক ঠেকে । আরহামের ভারী ভারী নিশ্বাস সেহেরের মুখের উপর পড়ছে । আরহাম থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আরহাম আরো শক্ত করে চেপে ধরে । সেহের অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে । নিজের দিকে খেয়াল করতে দেখে গায়ে আরহামের শার্ট। সেহের থতমত খেয়ে যায় । কাপড় পাল্টেছে কে? আরহাম? আশু তো নয় ,সে বাচ্চা মানুষ । তবে কি আরহাম চেঞ্জ করে দিয়েছে? লজ্জায় কান থেকে গরম ধোঁয়া বেরচ্ছে । আরহামকে ধাক্কা দিয়ে সরতে নিলে আরহামের ঘুম ভাঙে । ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ,”ঘুম ভাঙতে না ভাঙতে শুরু? দেখি জ্বর কমেছে কি না! ”
আরহাম কপালে হাত ছোঁয়ায়। সেহের কাঁচুমাচু দৃষ্টিতে তাকিয়ে।আরহাম আগের মত ভারী গলায় বলল ,” জ্বর ছেড়েছে! ”
সেহের উঠতে নিলে আরহাম ধমকের স্বরে বলে ,”ভোর সকালে উঠছ কেন? শরীর এখনো দুর্বল ,রেস্ট করো! ”
সেহের ধমক শুনে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইল। আরহামও বিছানা ছেড়ে উঠল না, অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়ল ।

সেই সকাল থেকে সেহেরের মন খচখচ করছে।ভীষণরকম অপরাধবোধ কাজ করছে।আরহামের সাথে ডিভোর্স না হলেও সম্পর্ক ভেঙেছে পাঁচ বছর । মিহি তার বর্তমান! আরহামের উপর সম্পূর্ণ অধিকার মিহির ।গতরাতে যা হয়েছে তা ঠিক হয়নি,এতোটা কাছাকাছি একই সাথে থাকা মোটেও উচিত হয়নি। আরহামের সাথে একবার কথা বলে দেখবে কি? কি বলে শুরু করবে?
আরহাম সোজাসুজি বসে কোলে আশনূহা ঘুমিয়ে।সেহের গলা ঝেড়ে বলল, ” ধন্যবাদ , গতরাতে বাঁচানোর জন্য! ”
আরহাম একবার সেহেরের দিকে ফিরল কোনপ্রকার প্রত্যুত্তর না করে মুখ ফিরিয়ে নিলো ।সেহের ভয়ে ভয়ে বলল ,” গত রাতে আমাদের ভেতর কিছু হয়নি তাই না ? মানে সকালে ড্রেস চেঞ্জ……! ”
সেহেরকে থামিয়ে আরহাম ক্ষিপ্ত স্বরে বলল, ” এমন ভাবে বলছো যেন এই প্রথম আমার সাথে রাত কাটালে ! এর আগেও বহুবার এক সাথে ছিলাম , যেমন হোটেলে তুমি ড্রাংক ছিলে তখন কিছু হয়েছে? ”
“তখনকার কথা আলাদা ,এখন আপনার জীবনে কেউ আছে! আমি চাইনা আমার জন্য আপনাদের সম্পর্ক নষ্ট হোক! ”
আরহাম ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,”মাথা ধরছে ,আর একটা কথা বললে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবো! ”
সেহের কথা বাড়াল না চুপ করে থাকল ।এই লোকের বিশ্বাস নেই ,দেখা যাবে সত্যি সত্যি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে!

কাউকে কিছু না জানিয়ে বিকাল দিকে আরহাম বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যায় এয়ার টিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরে ।ক্লান্ত ভঙ্গি তে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। সেহের আশনূহা পাশেই ছিল। আরহাম মিহিকে বলল, ” পরশু আমরা দেশে ফিরছি ”
মিহি মন খারাপের স্বর টেনে বলল, ” এখনো কোথাও যাওয়া হয়নি! আর কয়েকটা দিন থাকলে কি এমন ক্ষতি হবে? ”
“আবার কোন ছুটিতে আসবো , দেশে ফিরতে হবে সামনে নির্বাচন। অনেক কাজ পড়ে আছে! অনেক কষ্টে টিকেট করেছি নিউ ইয়ারের সময় সব আগে থেকেই বুকড! ”
“তবুও ”
মিহি মন খারাপের স্বর টেনে বলল । সেহের পাশ থেকে সবটা শুনল।আরহামের হাতে তিনটা এয়ার টিকেট। সেহের গুনে গুনে দেখল আরহাম , আশু ,মিহির ।তাহলে সেহেরেরটা কই? আরহাম কি চাইছে ।সেহেরকে কি সাথে নিবে না? সে আশুকে ছাড়া কি করে থাকবে ? সেহের তড়াক করে দাঁড়িয়ে যায়। আওয়াজ করে বলে , “আমার টিকেট কই ? আমি যাচ্ছি না? ”
আরহাম কয়েক সেকেন্ড সেহেরের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল ,” না, তুমি যাচ্ছ না ! ”
সেহের ফুলঝুরির মত ফুটে উঠে চেঁচিয়ে বলে , “আমিও দেখবো আপনি আমার মেয়েকে আমার থেকে কি করে আলাদা করেন! ”
মিহি সেহেরের রাগ দেখে মিটমিটে হাসছে।আশুকে কোলে তুলে সেহের রুমে চলে যায় । আরহাম সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস স্বরে বলে , ” ইডিয়ট! ইমম্যাচিউর বাচ্চা! ওঁর থেকে আমার চারবছরের নূহা অধিক বুদ্ধিমতী ”
আরহামের কথা শুনে মিহি কিটকিটে হাসতে লাগে ।
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৫৪

সকাল সকাল আরহাম আশনূহার শোরগোলে বাড়ি মেতে ।বাপ বেটি ভীষণ খুশি আগামীকাল দেশে ফিরবে।আশনূহা খুঁটে খুঁটে বাড়ির সবার কথা জিজ্ঞেস করছে। বাপ বেটির আলাপে বাড়ির দারোয়ান চাচাও বাদ যায় নি!
সেহের রুম থেকে কানখাড়া করে রেখেছে ।আশু আরহামের কথা শুনে সেহেরের ভীষণ হিংসা হচ্ছে। মন ভার হয়ে আছে।কোন ভাবেই বইয়ে মন দিতে পারছে না।আগামীকাল তারা দেশে ফিরবে ,তাতে কি সেহেরকে তো আর সাথে নিচ্ছে নাহ!
সেহের একবার ভেবেছে আশনূহাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবে! কিন্তু তাতে লাভ কি ? আরহাম তো ঠিক খুঁজে বের করে ফেলবে।যে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা পৌঁছে গেছে,তার কাছে অসাধ্য কি!
মেয়েটার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।এতো বছর মায়ের সাথে থেকে বাপকে পেয়ে মাকে ভুলে গেছে। সারাদিন বাবাইকে নিয়ে পড়ে থাকে।শুধু রাত হলে মায়ের কথা মনে পড়ে।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে আরহামের মুখোমুখি সেহের বসে।ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে আরহামকে দেখছে ।সেহেরের মুখের ভঙ্গিমা দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে ‘সেহের এই মুহূর্তে ভীষণ রেগে । চোখ দিয়ে যদি ভস্ম করা যেত এতোক্ষণে আরহাম নিশ্চিত ভস্ম হয়ে যেত!
আরহাম বেশ মনযোগ দিয়ে নাস্তা করছিল।সেহেরের ক্রুদ্ধ দৃষ্টি দেখে থামল।ভারী শব্দ করে বলল, “কিছু বলবে? ”
সেহের অশ্রুভারাক্রান্ত চোখ নিয়ে মাথা তুলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। আরহাম হাতের কাঁটাচামচটা প্লেটের সাইডে রেখে।সিধা হয়ে বসে বলল , “কি বলবে বলো! শুনছি। ”
সেহেরের নিচু অস্পষ্ট স্বরে বলল, “আমিও আপনাদের সঙ্গে দেশে ফিরবো! ”
আরহাম শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।সেহের মুখ তুলে আরহামের দিকে একবার তাকাল।মুখের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে চাইল।কিন্তু ব্যর্থ।আরহাম চোয়াল শক্ত করে বসে। চোখ মুখ ভাষাহীন! সেহের আরো কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষায় রইল। কিন্তু আরহাম বরাবরই আগের মত চোয়াল শক্ত করে বসে। আরহামের চোয়াল শক্ত রাগী মুখভঙ্গি দেখে সেহের ধরে নিলো আরহাম তাকে সাথে নিবে না।
এবার সেহেরের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কান্না গুলো গলায় দলা বেঁধে আছে। বুকে ভারী এক চাপ অনুভব করছে। সেহের না হয় অপরাধ করেছেই তাই বলে এভাবে তাকে শাস্তি দেবে।মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে নিবে? এক বারের জন্যও সেহেরের কথা ভাবল না! এক সময় কিছু না বলে যে সব বুঝে যেত আজ তার এতো পরিবর্তন।পাঁচ বছর কি খুব দীর্ঘ সময়? সেহেরের চোখের জল কি এখন আর আরহামের মন ছোঁয় না?
চেয়ার ছেড়ে সেহের উঠে যায়।আরহাম ফিসফিস আওয়াজে বলে , ” হে আল্লাহ , আমাকে ধৈর্য দিন! ”
মিহি পাশ থেকে আরহামের উদ্দেশ্যে বলল, “মানছি তোমার রাগ করাটা ঠিক! একবার মেয়েটার কথা ভাবো।ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।সত্যিটা বলে দাও! ”
আরহাম মিহির কথা চুপ করে শুনল।কোন প্রত্যুত্তর করল না।
রুমে এসে সেহের মুখ চেপে কাঁদছে। নিজেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করছে স্বাভাবিক রাখতে কিন্তু চোখের জল কি সেই বাঁধা মানে?
সকাল পেরিয়ে দুপুর মাড়িয়ে বিকালে পৌঁছাল। সেহের তার রুমে দরজা বন্ধ করে বসে। এর মাঝে আশু ছাড়া কেউ আসেনি । সেহেরও রুম থেকে বের হয়নি । সন্ধ্যার দিকে বাহির থেকে কথার আওয়াজ ভেসে আসলো । সেহের গায়ে উড়না জড়িয়ে রুমের বাহিরে এসে দাঁড়াল । মিহি এক ব্যক্তিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে শতবছর পর বিচ্ছিন্ন প্রেমিক যুগল এক হয়েছে।সেহের চোখ ফিরিয়ে পাশে তাকাল আরহাম পাশে আশুকে কোলে করে খুব স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে । মুখে কোনপ্রকার রাগ জেদের চিহ্ন নেই।আগে সেহেরের সাথে কাউকে দেখলে তো ভীষণ ক্ষেপত ।বিপরীত পাশের মানুষের নাজেহাল মরণ দশা করে ছাড়ত। তবে মিহির বেলায় ছাড় কেন? সব অত্যাচার শুধু সেহেরের উপর – ই?
সেহের গাল ভারী করে আবার মিহির দিকে তাকাল। মিহি তখনো সেই ব্যক্তির গলা ঝুলছে! কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সেহেরের বিস্ময় আকাশ চুম্বী! সেই ব্যক্তি মিহির কপালে চুমু খাচ্ছে।তাও ভীষণ গাঢ় করে । সেহের হতভম্ব চোখে তাকিয়ে ।মিনিট দুই একের ব্যবধানে সেহের আকাশ পাতাল ভেবে উদ্ধার! সেহেরের ভাবনায় টোকা পড়ল সেই বিদেশি অপরিচিত ব্যক্তির ডাকে।সুগঠন সুঠাম দীর্ঘকায় শরীর , সুশ্রী মুখমণ্ডলে এক গাল হাসি নিয়ে সেহেরের সামনে দাঁড়িয়ে।বলল , “ইউ মাস্ট বি সেহের! আরহাম’স ওয়াইফ ,রাইট? ”
সেহের গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।বিদেশী লোকটা হাত বাড়িয়ে বলল, “আ’ম রবার্ট ,মিহি’স হাসবেন্ড! ”
রবার্টের কথা শুনে সেহের এবার হাজার ভোল্ডের শক খেল।থমথম চোখে একবার মিহির দিকে আরেকবার আরহামের দিকে তাকাল।আরহাম তখনো ভীষণ স্বাভাবিক । মিহি মিটমিট করে হাসছে।মিহি বুঝতে পারছে সেহের ঠিক কোন জায়গাটায় চমকেছে! সেহেরের মাথা চক্কর দিচ্ছে।সাপোর্টের জন্য পাশের চেয়ার ধরে দাঁড়াল । মাথা ঘুরে আবার পরে না যায়!

খানিক আগেই আরহামের সাথে জোরদার ঝামেলা করে এসেছে।আরহামের রুমে যেয়ে বেশ শক্ত গলায় জিগ্যেস করেছে , ” আপনি মিথ্যা বললেন কেন? ”
আরহামের শান্ত উত্তর ,” কি মিথ্যা বললাম? ”
“মিহি আপনার ওয়াইফ! ”
“আমি কখন বললাম? তুমিই তো ধরে নিলে! ”
“আপনি আমার ভুল ভাঙাবেন না? ”
“লাভ কি? কেন ভাঙবো? আর তাছাড়া তোমার মত ইমম্যাচিউর বাচ্চার ভুল ভাঙানো আমার পক্ষে অসম্ভব ! তুমি যা দেখো তারচেয়ে কয়েক গুন দূরের কথা ভেবে নেও।”
“আমি ইমম্যাচিউর বাচ্চা? ”
“হ্যাঁ , তাতে নতুন কি? সেই প্রথম থেকে! ”
“আচ্ছা? আমি এমন কি করেছি? ”
“গোনা শুরু করলে রাত পাড় হয়ে ভোর নামবে তবুও শেষ হবে না। এই যে তুমি কিছু না জেনে না শুনে আমাকে আগুনে ফেলে এখানে চলে আসলে! এটা বড্ড ম্যাচিউরিটির কাজ ছিল তাই না? ”
সেহের বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো ,”আপনাকে খুন করতে দেখেছি? ”
“এর পেছনের কারণ খুঁজেছ? ”
সেহের চুপ । আরহাম প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না করে বলল, ” যাও প্যাকিং করো ,কাল সকাল এগারোটায় ফ্লাইট! ”
সেহের খুশিতে লাফিয়ে উঠে,বলল, ” আমিও যাচ্ছি? ”
আরহাম উত্তর দিলো না। নিজের প্যাকিং এ মন দিলো!

রাত সাড়ে আটটা। সেহের বিছানায় গুটিসুটি মেরে থুতনিতে হাঁটু ঠেকিয়ে বসে।ঘটনা ঘেটে দেখা গেছে রবার্ট মিহির বিয়ে হয়েছে তিনবছর।রবার্ট আমেরিকার বাসিন্দা । মিহির নানাবাড়ির যোগসূত্র ধরে রবার্টের সাথে মিহির পরিচয়।পরিচয় থেকে প্রেম তারপর বিয়ে । এই বাড়িটা রবার্টের। মিহি এখানেই থাকে। আরহাম- ই পোনের বিশদিন পূর্বে সেহেরের খোঁজে এখানে এসেছে । সবকিছু শুনে সেহের এখনো ভীষণরকম হতভম্ব।এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে সেহের চোখ তুলে দেখল।মিহি ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে ল্যাপটপ হাতে দাঁড়িয়ে বেশ মিষ্টি স্বরে বলল, ” আসবো? ”
সেহের বিছানা ছেড়ে হেসে বলল,” অনুমতি নিচ্ছ কেন? আসো! ”
মিহি বিছানায় বসল। সেহের মিহি মুখোমুখি ।সেহের আমতা আমতা স্বরে বলল, ” সরি , আমি আবারো তোমাকে ভুল বুঝেছি! ”
“তুমি সরি বলছ কেন? আ’ম সরি আমার আগে তোমাকে সত্যিটা জানান উচিত ছিল তাহলে হয়তো তুমি আর আরহাম এক সাথে থাকতে ,আজ এসব হতো না।”
“মানে ?”
“সেহের আমি এখন যা দেখাবো যা বলবো সবটা মন দিয়ে শুনবে দেখবে । তারপর তুমি নিজে সবটা ডিসাইড করবে। আমার এটা তোমাকে আরো পাঁচবছর আগে জানান উচিত ছিল, যার জন্য তোমাদের এই বিচ্ছেদ! আরহামের অতীত সম্পর্কে তোমার অনেককিছু অজানা। যা তোমার জানা প্রয়োজন! ”
সেহের মিহির কথার আগাগোড়া বুঝছে না। ভাবুক দৃষ্টিতে মিহির দিকে তাকিয়ে । মিহি হাতের ল্যাপটপ অন করে একটা ফাইলে ঢুকল যেখানে আরো তিনটা ফাইল। তারিখ দিয়ে সেভ করা দুইটা পাঁচ বছর আগের ডিসেম্বরের, আর একটা দুবছর আগের! পাঁচ বছর আগের ডিসেম্বরের কথা মনে করে সেহের চমকাল । এটা তো তখন কার যখন মিহি কানাডা থেকে বাংলাদেশ এসেছিল ।তখন কি সেহেরের আড়ালে কিছু ঘটেছিল যা সেহেরের অজানা?
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৫৫

পাঁচ বছর আগে ডিসেম্বর…….

কানাডা……..

বিশাল বড় বিল্ডিং এর সেভেন ফ্লোরে আরহাম মিহি বসে । মিটমিট আলো। জ্বলছে । আবছা অন্ধকার রুমটায় আরহাম মিহি মুখোমুখি। মিহি সামান্য নার্ভাস । এর আগে বহুবার বাবার সাথে এমন কেস হেন্ডেল করলেও এই প্রথম একা সাহস করে কাউন্সিলিং করছে ,বেশ নার্ভাস।মিহির প্রফেশনাল ভাবভঙ্গি নিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলে,” আরহাম আপনার সমস্যা কোথায়? ”
আরহাম নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ছিলো ,মিহির আওয়াজে মাথা তুলে তাকাল বলল, “রাগের বসে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাই।কিছুসময়ের জন্য পুরো মাথা খালি হয়ে যায়। প্রচণ্ড মাথা ধরে।চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে অন্যকোথাও অন্য কোন বেশভূষায় পাই! ”
“এই সমস্যা কত যাবত আঁচ করতে পারছেন? ”
“দীর্ঘদিন! ছয় সাত বছর বা তারচেয়ে বেশি! প্রায়শই নিজেকে চিটাগাং পাই। অদ্ভুত কালো পোশাকে রক্তাক্ত অবস্থায় কখনো বা কোন লাশের পাশে! ”
“আপনার রাগটা ঠিক কখন বাড়ে?”
“যখন আমার প্রিয় জিনিসের উপর অন্যকারো নজর পড়ে।স্পেশালি সেহেরকে অন্যকারো সাথে দেখলে! ”
মিহি এর আগেও এমন আরো অনেক কেস দেখেছে । কিছু একটা ভেবে আরহামকে নিজের সাথে চলতে বলল। পাশেই ভারী অন্ধকারে ডাকা এক রুমে নিয়ে আসলো। বিভিন্ন ডিভাইসে ভরপুর! আরহামকে একটা চেয়ারে বসানো হলো। সামনে একটা ডিস্ক । মিহি আরহামকে ডিস্কের দিকে তাকাতে বলল। আরহাম তাকাল ডিস্কে বিচিত্র কিছু রঙ ভেসে উঠল। রং গুলো স্থির নয় কুণ্ডলী পাকিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ধীরেধীরে নড়ছে।আরহাম বড় বড় করে রাখা চোখ গুলো ধীরেধীরে ছোট হয়ে আসছে। শরীর কেমন জানো হালকা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। চোখের পাতায় ঘুম নেমে আসছে। আরহাম ধীরে ধীরে চোখ বুজে নেয়। পুরো শরীর নেতিয়ে যায়।মিহি প্রশ্ন করে ,
“আপনার নাম? ”
“আরহাম খাঁন ”
মিহি তার বাবার দিকে ভীতু মুখ করে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করল। বাবা আশ্বস্ত সূচক ইশারা করে পরের প্রসেস শুরু করতে বলল।মিহি আবার বলল,
“ধীরে ধীরে আপনার অতীত থেকে সামনের দিকে আসবো , আপনার পরিচয়? শৈশব কৈশোর যৌবন সবটা বলুন ”
“নাম আরহাম খাঁন।বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান।পিতৃ সূত্রে বাংলাদেশি মাতৃ সূত্রে থাইল্যান্ডের হলেও জন্ম কানাডা। বাবা স্টাডির জন্য কানাডায় আসে এখানেই মায়ের সাথে পরিচয়।এখানে অধ্যায়নরত দুজনের বন্ধুত্ব হয় তারপর গভীর প্রেম।প্রেম থেকে বিয়ে।মা বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতো তাই নিজের পরিবারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে, বাবাকে বিয়ে করেন। মায়ের এমন কাজে পুরো পরিবার তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে।এদিকে বাংলাদেশ থেকে দাদাবাড়ির সবাই মাকে মেনে নেয়না। বাবার সাথে সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে।উনাদের একটাই কথা “আর যাই হোক অন্যজাতের কোন মেয়েকে বাড়ির বউ করবে না। ” বাবাও আর যোগাযোগ রাখেনি । মাকে নিয়ে কানাডায় সেটেল হয়। কানাডার গ্রাম সাইডে দুজনকে ঘিরে দুজনার দুনিয়া সাজায়।এই ছোট দুনিয়ার আমার আগমন ঘটে। বাবা মায়ের বিয়ের দুবছরের মাথায় আমার জন্ম হয়। সময়ের সাথে পাল্লা ধরে আমার বেড়ে উঠা। বাবা মাকে ঘিরে আমার ছোট দুনিয়া । মাকে ভীষণ ভালোবাসতাম।মায়ের সাথেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটতো।প্রায় বাবা মাকে চিন্তিত দেখতাম ,আমি তখন খানিক বুঝতে শুরু করেছি।কিছু জিজ্ঞেস করলে বাবা মা প্রতিবার এড়িয়ে যেত।আমিও মাথা ঘামায় নি। তারপর অনেক দিন । আমার জন্মদিনের আগেরদিন বাবাকে অফিসের কাজে শহরে যেতে হলো।বাবাকে সকাল সকাল বেরোতে হলো । জানিয়ে গেল আজ নাও ফিরতে পারে। এতোদিনের সব প্ল্যান ভেস্তে গেল। আমার মন খারাপ হলো ,তা দেখে মা ছোট করে জন্মদিনের আয়োজন করতে শুরু করল। মা তখন পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট । ভারী পেট নিয়ে টুকটাক সাজসজ্জা করছে ।কেক বানাচ্ছে ।আমিও মায়ের সাথে সাহায্য করছি। এমন সময় ডোর বেল বাজল।তখন রাত দশটা পাড় হয়েছে।মা প্রথমে এতো রাতে কে হতে পারে ভেবে ভীষণ ঘাবড়ে গেল।আমাদের বাড়িটা গ্রামের থেকে সামান্য দূর ফরেস্ট এরিয়াতে। আশেপাশে তেমন কোন বাড়িঘর নেই।খুলবে না খুলবেনা বলেও বাবা এসেছে ভেবে আমাকে কিচেনের লুকাতে বলে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।দরজা খুলতে- ই মাস্ক পরিধানরত কয়েকজন দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে। মা ভীষণ ঘাবড়ে যায়। মা কিছু বলার পূর্বে- ই একজন মাস্ক খুলে মায়ের মুখ বরাবর দাড়িয়ে বলে , ” কি প্যাম ,চিনতে পেরেছ? ”
মা ভীতু স্বরে বলল ,” আমি এখন প্যাম নাহ , নির্জরা! ”
“ওকে বিয়ে করে ধর্ম চেঞ্জ করে নাম পেল্টে ফেললেই কি সব বদলে যাবে? তুমি এখনো আমার প্যাম! ”
“কেন এসেছ?ক….কি চাই? ”
“আর যাই হোক তোমাকে চাই না , তোমার আর তোমার ছেলে প্রাণ নিতে এসেছি ।”
“দিপক ভুলে যেওনা আমি তোমার বন্ধুর বউ , চলে যাও! ”
“তুমি যেই হও তাতে কি? তোমাদের খুনের আদেশ উপর থেকে এসেছে! ”
“কে দিয়েছে? ”
“তোমাদের আপন কেউ, তোমার ছেলে কই? সবার আগে ওকে খুন করে তোমাকে ছটফট করতে দেখবো ”
বলেই দিপক বিশ্রী ভাবে হাসল, ছুরি বের করল । মা দিপকের পায়ে পরে প্রাণ ভিক্ষা চাইল দিপক শুনল না।ভয়ে জড়সড় আমি কিচেনের কাবার্ডের ফাঁক থেকে সবটা দেখছি ।বের হবার সাহস হয়নি । মায়ের চুল টেনে সোফায় ফেলল।ক্ষুধার্ত জানোয়ারের মত মায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ।সবার সামনে মাকে টেনে হিচঁড়ে ছিঁড়ছে । মা পেট ধরে জোরে জোরে কান্না করছে।পা রক্তে মাখা। আমি মায়ের সাহায্যের জন্য আসতে চাইলে মা চোখের ইশারায় না করল।দিপক মাকে নানা ভাবে টর্চার করছে।মা চিৎকার করে কাঁদছে। পাশের লোকরা গুলো শব্দ করে হাসছে। আমি বেরিয়ে আসতে চেয়েও সাহস পেলাম না তখন অনেক ছোট ভয়ে কাবার্ডের ভেতর বসে কাঁপছি। কিছুক্ষণ পর মায়ের কান্নার আওয়াজ পেলাম না।দিপক মায়ের উপর থেকে উঠে দাঁড়াল। বলল, ” মরে গেছে । এবার ওর ছেলেকে মারার পালা। ”
আমি নিজেকে আড়াল করে কিচেনে লুকিয়ে রইলাম। দিপক কাউকে ফোন দিয়ে বলল, “সব প্লান মত হয়েছে। অমিদ বাড়ি নেই! প্যাম মারা গেছে। এবার আরহামকে মেরে পুরো বাড়িতে আগুন দিবো যেন এটা জাস্ট এক্সিডেন্ট মনে হয়! টাকা রেডি রাখুন ”
আমার কান্নার আওয়াজে তারা আমাকে ধরে ফেলল । তাদের একজন কাবার্ড থেকে টেনে হিঁচড়ে মায়ের কাছে আনল। মৃত্যু কি তখনো আমার জানা নেই।মাকে বার বার ডাকছি ,কিন্তু কোন সাড়া নেই। মায়ের নিথর দেহ চোখের সামনে। জড়িয়ে ধরে কাঁদছি ।এমন সময়ই দিপক শক্ত হাতে আমার গলা চেপে ধরে।শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ।ছটফট করছি কিন্তু দিপক আমার যন্ত্রণায় পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।আমার চোখ নিভু নিভু এমন সময় জানালায় আলো পড়ল।দূর থেকে বাড়ির দিকে গাড়ি আসছে। তা দেখে দিপক আমাকে ছেড়ে দেয়। বাকিদের বলে ,”তাড়াতাড়ি কেরাসিন ছিটা অমিদ আসছে। এখনি আগুন দিতে হবে! ”
সহ বাকি সবাই তার কথা মত পুরো ঘরে কেরাসিন ছিঁটাল আগুন ধরিয়ে দিলো মুহূর্তে পুরো বাড়ি আগুন ধরল। কাঠের বাড়ি হওয়ায় দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।ততক্ষণে তারা পালিয়েছে । আমার নিশ্বাস তখন একটু একটু চলছে। ঘোলা চোখে বাবাকে বাড়িতে ডুকতে দেখলাম। বাবার চোখে মুখে আতংক ভয়। চোখে পানি । আমাকে কোলে তুলে মায়ের কাছে এসে মাকে জোরে জোরে ডাকছে । মায়ের কোন সাড়াশব্দ নেই। নিথর দেহ ফ্লোরে পরে আছে। আগুনের প্রতাপ তখন অনেক। বাবা কাঁশছে সাথে আমিও।আমাকে বাঁচাতে বাবা আমাকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলল ।কিছুর সাথে মাথায় জোরে আঘাত লাগল । চোখের সামনে সব অস্পষ্ট । ঝাপসা চোখে বাবাকে মায়ের মৃতদেহ বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে বিলাপ করতে দেখলাম।বাড়ির চাল ভেঙে পড়ল। মায়ের সাথে বাবাও সেখানে নিজের জীবন দিলো । ”

হ্ঠাৎ আরহাম হাইপার হয়ে গেল।জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।মিহি দ্রুত একটা ইঞ্জেকশন পুশ করল আরহাম ধীরে ধীরে শান্ত হলো….

চলবে ….❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here