বিষাক্ত প্রেম পর্ব ৩১+৩২

পর্ব ৩১+৩২
#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-৩১

হঠাৎ বুড়ো কাজী এসে উপস্থিত। একটু বাদেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।সবাই খাওয়া দাওয়া করতে ব্যস্ত।রাত ভাইয়া বাসর ঘরের ফাইনাল টাচ দিচ্ছেন বন্ধুদের সাথে।বিয়েতো শেষ। এবার পালা বাসর ঘরের,,,,।

সিয়াম ভাইয়া বেশি উৎসাহী বাসর ঘর নিয়ে। বাকিরা ও কম যায় না।এক একজনের উদ্দীপনার শেষ নেই।প্লেনিং প্লটিংয়ের ও অভাব নেই।কেউ বলছে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকবে,তো কেউ বলছে ওয়াশরুমে লুকাবে।এক একজনার এক এক ধারনা। আমি ঠিক কোন দিকে যাব বুঝতে পারছি না। একদিকে বান্ধবীর বাসর অন্যদিকে ভাইয়ার ।রাত গভীর হচ্ছে।আর রাত ভাইয়া ও সলিট প্লেন বানিয়েছেন।

গোলাপ আর অন্যান্য ফুলের সংমিশ্রণে খাট সাজানো হয়েছে।সাদা বিছানার চাদরের উপর গোলাপের পাপড়ির হার্ট শেপ বানানো। ফুলের ঘ্রাণে ম ম করছে রুমটা।সাড়া ঘরে ভালোবাসার সুগন্ধে সুগন্ধিত। ছোট বড় হরেক রকমের ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে ঘরের প্রতিটি কোনা। সিয়াম ভাইয়া বড় উৎকন্ঠা নিয়ে বললেন,,

,,”রাত ,, প্লিজ এতো সাসপেন্স আর হজম হচ্ছে না,এই মোটা পেটে। আমার উপর দয়া কর ভাই।আর এই সাসপেন্স ডিসমিস কর।”

রাত ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললেন,,

,,”এখানে বসে বসে আমার মাথা হ্যাং করিস না তো। রিল্যাক্স হো।আর আমাদের ও শান্তিতে কাজ করতে দে।”

সিয়াম ভাইয়া হতাশায় ডুবে গেছে।মুখ কালো করে বললেন,,

,,”বুঝেছি তোরা আমায় বাঁচাতে দিবি না।হে জীবন,,, তুমি বিদায় হলো।(দু হাত উপরে তুলে)।

সবাই মুখ টিপে হাসছে। কারণ সিয়াম ভাইয়া বাদে সবাই জানে প্লেন কি। সিয়াম ভাইয়া কথা হজম করতে পারে না হয়তো দেখা যাবে অপূর্ব ভাইয়ার সামনে এমন রিএক্ট করবে যে সব প্লেন ভেস্তে যাবে। আকাশ ভাইয়া দরজার সামনে থেকে ফুলের ঝুড়ি হাতে দৌড়ে এলেন।আর শান্ত গলায় বললেন,,

,,,”হায় হায়,,ব্যাটা কয় কি?? আরে ভাই তুই মরলে আমাদের বিয়েতে কব্জি ডুবিয়ে খাবে কে??(জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকালো) আমরা তো তোর উপর ভরসা করেই আছি। দেখ দোস্ত,, যৌতুকের যুগ তো আর নেই।তাই ভাবলাম কেউ তো আছে যে ঠিক মতো খেয়ে সেটা উসুল করবে। (চোখ বড়বড় করে)তুই তো সে রাস্তায় ও কাটা বুনে দিচ্ছিস।(বলেই সবাই হাসিতে মেতে উঠল)

সিয়াম ভাইয়া চুপসে যাওয়া মুখ নিয়ে ভারাক্রান্ত গলায় বললেন,,

,,”লও লও মজা লও। তোমাদের সময়।”

সবাই এবার জোরপূর্বক হাসি থামিয়ে মুখে হাত দিল।কুহু আপু আর বৃষ্টি আপু (রাত ভাইয়ার ফ্রেন্ড) সিয়াম ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখলেন। বৃষ্টি আপু চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল,,

,,”তোরা থামবি??কাজে তো লবো ডঙ্কা ,,!!খালি ফুলের ঝুড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি করে আর আসছে সিয়ামের পিছনে লাগতে।”

নিমিষেই আকাশ ভাইয়ার মুখটা নেতিয়ে গেল।রাত ভাইয়া জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কি জেনো করছে। সেই মুহূর্তে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো,,

,,”ডান!!”আচ্ছা গাইস ,, সবাই আয় শেষ বারের মতো একবার প্লেনটা বাতলে নেই।দেন নিউ কাপলকে এখানে আনা হবে।”(মাথা ঝুঁলিয়ে বললেন) কেমন??”

সবাই সম্মতি জানালো। একত্রিত হয়ে গোল হয়ে দাঁড়ালো।সব কিছু বিরবির করে বলে ,,”ডান” বলে চেঁচিয়ে উঠলো।

১১টা বাজে।বর-কনেকে বাসর ঘরে আনা হলো। ওদের রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে সবাই বাইরে বেরিয়ে এলো। দোতলার একদম কোনার প্রথম রুমটায় বাসর সাজানো হয়েছে। আমরা আছি দ্বিতীয় রুমে।এই রুমের ব্যালকনির সাথেই প্রথম রুমের জানলা।রাত ভাইয়া ঘরর সাজানোর সময় জানালাটা খুলে রেখে ছিল। আর লক টাও নষ্ট করে দিয়েছে যাতে জানলা বন্ধ না করা যায়। সেই সময় একটা চোর এসে হাজির।খালি গাঁয়ে বেশি করে সরষের তেল মাখা,রোগা ছিপছিপে চোর নয়।এ হচ্ছে ছাই রঙের পাঞ্জাবি পড়ুয়া, ফর্সা, ডেসিং চোর। গামছা দিয়ে যার নাক,কান, মুখ সব ঢাকা। বৃষ্টি আপু,রাত ভাইয়া, আমি, কুহু আপু সবাই হো হো করে হাসছে।সিয়াম ভাইয়া ভাইয়ার তো পেট ব্যাথা উঠে গেছে। কারণ চোর টা আসলে চোর না।ওটা হচ্ছে আকাশ ভাইয়া।

পাঁচ মিনিট বাদে জেরিন আর অপূর্ব ভাইয়া কাঁশতে কাঁশতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আমি আর বৃষ্টি আপু ব্যালকনির চেয়ারে বসে হাসছি। কুহু আপু আর সিয়াম ভাইয়া সোফায় বসে পা দোলাচ্ছে আর হাসছে।রাত ভাই কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ‌। মাঝেমধ্যে ঠিক করে হেসে দিচ্ছেন।এই হাসির পেছনের আসল ঘটনা হচ্ছে,, আকাশ ভাইয়া শুকনো মরিচ পুড়ে জানলার ধারে ঝুলাচ্ছে আর হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে মরিচের গ্যাস রুমের ভেতর ঢুকিয়ে দিচ্ছে।আর সেই গ্যাসে দুজন কাঁশছে। অতিরিক্ত গ্যাসে রুম থেকে বেরিয়ে আসছে ‌।যেই আবার গ্যাসের মাত্রা কমতেই আবার ঘরে ঢুকছে।সবাই খুব হাসছে, ওদের কান্ড দেখে।বেচারাদের বাসর রাতের কাশি ভরা রাত্রি যাপন।আহা,,কি মধুর।ভাইয়া বোধ হয় বুঝতে পেরেছে এটা কাদের কান্ড।তাই দরজা জানলা দিয়ে দু একবার উকি ও দিয়েছে। কিন্তু আমরা ওদের হাতের নাগালের বাইরে ।তাই আমাদের ওরা দেখতে পায় নি। কিন্তু একটু পর পর কাশতে কাশতে রুম থেকে বের হচ্ছে আর ঢুকছে।

১.০৫ বাজে।সবাই বিরতিহীন হাউসি তুলছে। তবুও চোখে লাঠি গুঁজে বসে আছে। হঠাৎ মধ্যমনি রাত ভাইয়া হালকা গলায় বললেন,,

,,”দোস্ত এখন চল সবাই। ওদের আর ডিস্টার্ব করব না। আমাদের নিজেদেরি ব্যাটারি লো হয়ে গেছে।সবারই কম বেশি ঘুম পেয়েছে। তাই চল ,,!!যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।”

আমার পাশ থেকে আপু হাউশি তুলতে তুলতে বলল,,

,,”হ্যাঁ হ্যাঁ ভাই চল আমার ও ভয়াবহ ঘুম পেয়েছে।”

উৎসাহী জনতা আমাদের সিয়াম ভাইয়া আরো আধঘন্টা আগে ঘুমিয়ে পড়েছে। কুহু আপু কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বলছেন,,

,,”সিয়াম ওঠ । রুমে যা।ওই সিয়াম ওঠ।(গুঁতোতে কাজ হয়নি বলে দু হাত দিয়ে মাথা ধরে ঝাকুনি দিয়ে চড়া গলায় বলছেন)এই সিয়াম ওঠ,,,,।”

সিয়াম ভাইয়া লাফিয়ে উঠলো ।চোখ টিপ টিপ করে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ঘুম চোখে। কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। আকাশ ভাইয়া হাসতে হাসতে বলছেন,,

,,”মাম্মা,,খেল খতম,প্যায়সা হজম। এখন চলো কুম্ভকর্ণ ঘুমাতে চলে।”

সিয়াম ভাইয়া কিছু বললেন না। উঠে রুমের দিকে হাঁটলেন। আমি রাত ভাইয়াকে ইশারায় বাই বলে রুমে রওনা দিলাম। ঘুম ঘুম চলনে আধখোলা চোখ নিয়ে যে যার রুমে ঢুকলো। আমি ও একটু ফ্রেশ হয়েই বিছানায় শুয়ে পরলাম।শুতে না শুতেই হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

পরদিনের রিসেপশনে পার্টি ও আরো সুন্দর হয়েছিল। বিয়ের থেকে ও রিসেপশনে মজা বেশী হয়েছে।সবাই খুব নাচানাচি আর খুব আনন্দ করেছে।রাত ভাইয়াকে সবাই প্রশংসার সাগরে ডুবিয়ে মেরেছে, এতো ভালো আয়োজন করার জন্য ‌।

পরদিন সকালে। এবার বাড়ি ফেরার পালা।রাত ভাইয়া বাইক নিয়ে এসেছেন।তাই উনি বাইকে ফিরবেন। বাকিরা সবাই গাড়িতে। আমার গছোগাছ করতে একটু দেরি হয়ে গেল।ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে দেখি সবাই গাড়িতে উঠে গেছেআর ভালো আঙ্কেল গাড়িতে উঠছে। গাড়িতে আর সিটি ও নেই। ভালো আঙ্কেল আমাকে দেখে বলল,,

,, মিষ্টি মা গাড়িতে তো আর সিটি নেই তুই কি রাতের সঙ্গে বাইকে আস্তে পারবি? নাহলে এই শরীর নিয়ে আমাকেই বাইকে চড়ে বাড়ি ফিরতে হবে।”

রাত ভাইয়া বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি তো মহাখুশি। বাইকে যাব তাও আবার রাত ভাইয়ার সাথে এর থেকে আর মজার বা খুশির কি আছে। কিন্তু এখানে খুশি প্রকাশ করা যাবে না।এর উল্টো পাল্টা মানে বের করতে পারে।তাই মুখ কালো করে হতাশ বললাম,,

,,”ওকে ভালো আঙ্কেল । কি আর করা যাবে ?? বাইকেই না হয় যাই। ”

ভালো আঙ্কেল করুন গলায় বলছেন,,

,,”তুই এভাবে বলছিস কেন মা??(গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে) আচ্ছা তোর যেতে হবে না বাইকে আমিই বরং,,,,”

আর কিছু বলার আগেই আমি উত্তেজিত গলায় চেঁচিয়ে উঠলাম,,

,,”না না,, ভালো আঙ্কেল (গাড়ির দরজা লাগাতে লাগাতে) তোমাকে এই শরীর নিয়ে বাইকে যেতে হবে না। আমি যাচ্ছি।”

ভালো আঙ্কেল রাজি হলেন ওনাদের গাড়ি ছেড়ে দিল। আমি তো অনেক খুশি।রাত ভাইয়ার বাইকে চড়ে বাসায় যাব।আহা,,কি আনন্দ , আকাশে বাতাসে। আমার তো নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে।

#পর্ব-৩২

ভালো আঙ্কেল রাজি হলেন ওনাদের গাড়ি ছেড়ে দিল। আমি তো অনেক খুশি।রাত ভাইয়ার বাইকে চড়ে বাসায় যাব।আহা,, কি আনন্দ , আকাশে বাতাসে। আমার তো নাচতে ইচ্ছে হচ্ছে।

❤️
রাত ভাইয়া আকাশী রঙের একটা শার্টের সাথে সাদা রঙের জিন্স পরে শার্টের হাতা কনুই অব্দি ভাঁজ করে রেখেছে। দুই হাত ভাঁজ করে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‌। অসাধারণ লাগছে।মনে হচ্ছে নীল আকাশের মাঝে এক অপূর্ব মানব। তার সাথে ঠোঁটের কোনে লেগে আছে সেই অপূর্ব হাঁসি।গলা ছেড়ে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,,

চোখে চোখে আমি রেখেছি তোমায়
আরো কাছে পেতে চাই
স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন আমার
তুমি ছাড়া কিছু নাই,,,,

আমি তাকিয়ে আছি অপলকে ওই মুগ্ধ নয়নের দিকে। মনে হচ্ছে সময় যেন এখানেই স্থির হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ কোলাহলহীন,, শুধু সে আর আমি,,। সেই সময় রাত ভাইয়া মুষ্টিবদ্ধ হাত মুখের কাছে নিয়ে কাশির ভঙ্গিতে বলছেন,,

,,,”উহুম,,উহুম,, ম্যাডাম। আমাকে দেখা হয়ে গেলে এবার দয়া করে বাইকে উঠে আমাকে কৃতজ্ঞ করুন।”

কথাটা শুনে আমি লজ্জার কূয়োয় লাফ দিলাম। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু মনে হচ্ছে লজ্জা আমার গলায় ঢুকে কন্ঠনালী বন্ধ করে দিয়েছে।তাইতো গলায় দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। তবু ও আমতা আমতা করে বললাম,,

,,”আ আ আমি আপপপনাকে কেনন দেখততে যযযাব?হুমমমম,,,??(কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে) নিজেকে কি বিশ্ব সুন্দরী ভাবেন??(দাঁত দিয়ে জিভ কেটে),,ও সরি বিশ্ব সুন্দর।”(এক শ্বাসে সব গটগট করে বলে দিলাম)

রাত ভাইয়া আমার অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে শরীরে ঝড় তুলে হাসছেন। আমার রাগ লাগছে। কারণ আমি অন্য কাউকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখতে পছন্দ করি,নিজে অপ্রস্তুত হয়ে না।উনি হাঁসি থামিয়ে বললেন,,

,,”বুঝলে সোনা,, আগে নিজেকে একটু কম সুন্দর ভাবতাম। কিন্তু তোমার অমন চাহনি দেখে নির্দ্বিধায় নিজেকে সুপার হ্যান্ডসাম বলতে ইচ্ছে হচ্ছে (বলেই ঠিক করে হেসে দিলেন)।যে ভাবে তাকিয়ে ছিলে তাতে তো মনে হচ্ছিল,,,,,,(উনি বলতে গিয়ে থেমে গেলেন)।

আমি রাগে কটকট করছি। রেগে মেগে ফায়ার হয়ে ওনার মুখের কাছে ঝুঁকে বললাম,,

,,,”কি ,,,??কি মনে হচ্ছিল..??,, হ্যাঁ??যাব না আপনার বাইকে,যান আপনি। আমি অন্য গাড়িতে যাব।”(আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত ভাঁজ করে মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলাম)

উনি মুখে হাত চেপে হাসি থামালেন। আমার কাছে এসে শান্ত গলায় বললেন,,

,,”সোনা,, প্লিজ রাগ কর না। আমি তো তোমার সাথে মজা করছিলাম।(এক হাতে কান ধরে করুন মুখে বলছেন) প্লিজ সোনাই ,, ডোন্ট ডোন্ট মাইন্ড।”

আমি খিলখিল করে হেসে দিলাম। ওনার এমন বাচ্চামো দেখলে রাগ করে থাকাই যায় না। হাসিটা আলোর গতিতে দৌড়ে আসে মুখের কাছে।রাত ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললেন,,

,,,”হয়েছে আর হাসতে হবে না এবার উঠুন বাইকে।”

রাত ভাইয়া বাইকে উঠে পড়লেন। আমি ও পিছনে উঠে বসলাম। উনি বাইক স্টার্ট দিলেন। আমি কাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে রাত ভাইয়ার কাঁধ চেপে ধরলাম। আমি বুঝতে পারছি রাত ভাইয়া মুখ চেপে হাসছে। আমি ও লজ্জায় লজ্জিত! হয়ে মুচকি মুচকি হাসছি।আগেও ওনার বাইকে চড়েছি। কিন্তু আজ অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। ফুরফুরে হাওয়ায় আমার এলোমেলো চুল উড়ছে।রাত ভাইয়া লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে আমাকে বলছেন,,

,,”সোনালি ,,বাইক থামাবো?? চুল আটকে,,,,,,

আর কিছু বলার আগেই আমাদের বাইক এক্সিডেন্ট করলো। আমি ছিটকে পড়লাম রাস্তার উপর।রাত ভাইয়া নিজের উপর থেকে বাইক সরিয়ে আমার দিকে ছুটে আসছেন। আমি এখনো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। সামনে থেকে একটা বাইক দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে।বাইকার একটি মধ্য বয়সী ছেলে।এই বাইকটাই আমাদের বাইকটা কে ধাক্কা দিয়েছে। আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।পা আসার হয়ে গেছে। শরীরের বিন্দুমাত্র জোর নেই।রাত ভাইয়া আমার রক্ত মাখা মাথাটা কোলের উপর রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলছেন,,

,,,”সোনাই,,এই সোনাই। শুনতে পাচ্ছো তুমি??(বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন আমায়। ওনার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আমার গালের উপর।গালে হাত রেখে এক কথাই আওড়ে যাচ্ছেন,,

,,”এই সোনাই,,সোনাই,,কি হলো তোমার ??ওঠো সোনা। তোমার কিছু হবে না সোনা। তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে।”

রাত ভাইয়ার হাত কাঁপছে। রাস্তার সব লোক এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। একজন বললেন,,

,,”ভাই ওনারে হাসপাতালে নিয়া যান।”

আর একজন বলছেন,,

,,”হ্যাঁ,ভাই এক্ষুনি নিয়ে যান।”

রাত ভাইয়া দিক হাড়া পথিকের মতো করছেন। আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।মাথা ভনভন করে ঘুরছে।রাত ভাইয়া আমার রক্তাক্ত দেহটিকে কোলে তুলে নিলেন। ওনার চোখ বিরামহীন অশ্রু জড়িয়ে যাচ্ছে। আমার ও খুব কান্না পাচ্ছে। ওনার চোখের জল আমি সইতে পারছি না। কিন্তু শরীরে কোনো জোড় নেই। চোখের জল ও তার কাছে হার মেনেছে।রাত ভাইয়া এক কথাই বলে যাচ্ছেন,,

,,”সোনালী প্লিজ তুমি চোখ খোল।দেখো তোমার কিছু হবে না। আমারা এক্ষুনি হাসপাতালে পৌঁছে যাব। তুমি ঠিক ড
হয়ে যাবে। তোমার,,

আর কিছু শোনা হলো না।চোখ বন্ধ হয়ে গেল।শত চেষ্টা করেও মেলে রাখতে পারলাম না। আমার মস্তিষ্ক ও হার মানলো। হারিয়ে গেলাম অতলে,,,,,

,,, চলছে,,??❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here