ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ২৯+৩০

পর্ব ২৯+৩০
#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-২৯

রাত ভাইয়া অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।করুন চোখের চাহনি,,। তাতে ও অদ্ভুত মায়া,,

❤️
ভালোবাসা বোধহয় এমনই হয়,, মানুষ যাকে ভালোবাসে তার সবকিছুই ভালো লাগে তার ভালোটাও আবার তার মন্দটাও । তার মন্দের ভীড়েও কি নিদারুন সৃজনশীলতা ভেসে ওঠে। আমি যদি কবি বা সাহিত্যিক হতাম তাহলে হয়তো বলতাম ,,,”বাহ্,,কি অপরূপ সৌন্দর্যের সাথে সে মেয়ে পটাতে পারে,,!!”কিন্তু তাতো আর নই।তবে রাত ভাইয়ার অপরাধবোধে ও আমি অদৃশ্য ভালোবাসার আবেশ খুজে পাই। ওনার এই বড় বড় পাপড়ি ওয়ালা চোখ দুটো মুহূর্তেই নিচু করে ফেলা। গোলাপি ঠোঁটজোড়ায় দাঁত চেপে রাগের বহিঃপ্রকাশ,, সবকিছুই অদ্ভুত মায়ার সৃষ্টি করে। ওনার এই ছোট ছোট অন্তরঙ্গ গভীর ভাবে আহত করে। কিন্তু উনি কি বোঝে না??,,ওই চিপকুর সাথে ওনাকে দেখলে আমার কলিজা দুটুকরো হয়ে যায়।(এসব ভাবতে ভাবতে আমার দুচোখে জল ছলছল করছে শুধু একটা পলকের অপেক্ষা,, বহমান নদী হতে।চোখ জ্বালা করছে কিন্তু ওনার দিকে থেকে চোখ সরানোর ক্ষমতা বিলিন হয়ে গেছে।)

রাত ভাইয়া অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কোঁচকালেন,,দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

,,,”তখন তো লেডি ডনের মতো আমাকে ফেলে দিয়ে চলে আসলে। এখন কি হলো??(ভ্রু নাচিয়ে) ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল হচ্ছে??( গালের কাছে মুখটা এনে ঘোর লাগা কন্ঠে),, তবে তোমার এই রাগী রাগী মুখটা দেখতে না অপূর্ব লাগে(দাঁতে দাঁত কেটে) ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি। একদম নাকের ডগায় রাগ ,, চোখের কার্নিশে স্রোতের ধারা।(চোখ টিপে ) তুমি চাও কি বলোতো?? (ওনার ঠোঁট একদম আমার ঠোঁটের কাছে,, মাঝে এক ইঞ্চি ও ফাঁকা নেই),,একদিকে রাগের আগুনে পুড়িয়ে মারবে,, অন্যদিকে স্রোতের ধারায় ডুবিয়ে মারবে।বেঁচে থাকতে আমাকে কতভাবে মারতে চাও??

আমি এই ঘোরে ডুবে যাচ্ছি না ,,কারন আমার এখন বড্ড অবাক লাগছে,, আসলেই উনি কি চান সেটা বোঝার চেষ্টা করছি,,।রাত ভাইয়ার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাত পা নাড়ছি। রাত ভাইয়ার ঠোঁটে বিচরণ উপেক্ষা করে শক্ত গলায় বলছি ,,

,,,”ছাড়ুন,,!! ছাড়ুন আমায়,,!! আমার কাজ আছে।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম)যান আপনার সো কল্ড ফ্রেন্ড ,,”প্রিয়তির”কাছে।আর শোনান আপনার প্রেমের কবিতা,,হমমমম,,,”

রাত ভাইয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ও অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। এধরনের কথা বলার পড়েও বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকাটা শোভা দেয় না।তাহলে হয়তো আমি বেহায়াপনার শেষ সীমান্তে পৌঁছে যাব। হঠাৎ অনুভব করলাম রাত ভাইয়া হাতের বাঁধন আলগা করে দিয়েছেন। ভারাক্রান্ত নজরে ওনার দিকে তাকালাম,, উনি একপাশে সরে আমার জন্য জায়গা করে দিয়েছেন। তীক্ষ্ণ নজরে রাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ওনার কোন হেলদোল নেই আগের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। তাহলে কি উনি সত্যিই চান আমি এখান থেকে চলে যাই??বেজায় রাগ হচ্ছে রাত ভাইয়ার উপড়।,, কষ্ট ও হচ্ছে।রাত ভাইয়ার দিকে আর তাকানোর ইচ্ছে হলো না হাত ছাড়িয়ে পা বাড়ালাম,, অস্বাভাবিক ভাবে রাত ভাইয়া পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরেছেন।মনে হচ্ছে এক্ষুনি হাত খুলে চলে যাবে ওনার কাছে। আমি বিরক্ত গলায় মৃদু স্বরে বললাম,,

,,”আবার কি হলো??লাগছে আমার ,,ছাড়ুন হাতটা,,!!”

রাত ভাইয়া আলতো করে একটা চুমু একে দিলেন হাত তারপর আমার গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে মিষ্টি গলায় বললেন,,

লক্ষী সোনা রাগ করে না
একটু হাসলো প্লিজ (কানে হাত দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে)
ভাল্লাগে না আর হবে না
করছি যে প্রমিজ,,(আমার পানে দু হাত বাড়িয়ে)

ওনার কান্ড দেখে আমি ফ্যালফ্যাল করে হেসে দিলাম।এই পর্যায়ে রাগটা আর পুষে রাখতে পারলাম না। সোজা গিয়ে ওনার বুকের মুখ লুকালাম। উনি ও আমায় ওনার বুকে জড়িয়ে নিলেন। হালকা হাতে ওনার বুকে কিল মেরে বলছি,,

,,”খালি আমার জ্বালানোর ধান্দা,, এবার তো চেয়ার থেকে ফেলে দিয়েছি পাড়ের বার ছাদের টেরেস থেকে ফেলে দেব।”

রাত ভাইয়া আমায় শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরলেন আর সরল গলায় বললেন,,

,,”আসলে সোনাই,, দোষটা আমার ছিল না। আমি তো গেস্টদের লিস্ট বানাচ্ছিলাম।আর প্রিতিকে তো চেনই?? পারে তো আমার কলিজার উপর উঠে ওয়েস্টার্ন ডান্স করে। আমি কিছু বলতাম,, তার আগেই মহারানী এসে আমার মতো প্রজার হাল বেহাল করে দিলেন।(উনি মুচকি মুচকি হাসছে)

ওনার কথা শুনে এইটুকু বুঝতে পারলাম রাত ভাইয়ার কোনো দোষ ছিলো না,,”শুধু শুধু লোকটা বালিকা বাখরা বানায়া,,”!! ভাবছি আর মুখ টিপে টিপে হাসছি।রাত ভাইয়া পিছন থেকে গলা ছেড়ে সামনে আসলেন। কাঁধে দুই হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকালেন। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।রাত ভাইয়া চাপা গলায় বললেন,,

,,”খুব হাসি পাচ্ছে না?? একবার বিয়েটা করে‌নি না,,,!!সুদে-আসলে সব উসুল করব।”

আমি লজ্জায় গুটিসুটি মেরে গেলাম। বুকের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব করছি‌।”বিয়ে”কি সাংঘাতিক একটা শব্দ। ওনার সাথে তাও আবার। ওনার কথাগুলো ও না একদম লাগাম ছাড়া। লজ্জায় মুখের রং রংধনু হয়ে গেছে। হঠাৎ কানে একটি গলা। পরিচিত একটি গলা।গ্লাসটি আমার আম্মুর।,, সোনালী,, সোনালী ,,বলে চেঁচাচ্ছে। আমি রাত ভাইয়ার দিকে তাকাতেই রাত ভাইয়া হাত সরিয়ে নিলেন। আমি ও এক লাফে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

স্টোর রুম থেকে পর্দা এনে আম্মুকে দিলাম।

জেরিনকে সাজাচ্ছে পার্লারের দুটি মেয়ে। হলুদ শাড়ি ,, ফুলের গহনা ,,হালকা সাজে অপরূপা লাগছে। হলুদ বরন গায়ের রং তাতে হলুদ শাড়িতে একদম সদ্য ফোঁটা হলুদ গোলাপের থেকে কোনো অংশে কম লাগছে না। ভাইয়ার আজ চোখ উল্টে তাকিয়ে থাকতে হবে। ছোট বেলা থেকে কত আশা করে বসে আছি,, বান্ধবীর বিয়েতে বরের ভাইদের সাথে কতো দুষ্টুমি করবো??দু একজনের সাথে চুটিয়ে প্রেম করব কিন্তু আমার কপালে আর হলো কই,,?জেরির বর তো আমার ভাইয়া‌।আর ভাইয়ার ভাইতো আমার ও ভাই,, ভাইয়ের সাথে প্রেম ,,!!কি সাংঘাতিক কান্ড,,,!!

আমি ও একটা হলুদ শাড়ি জড়িয়ে নিলাম। খোলা চুলে ফুলের ক্লিপ,,দু হাত ভর্তি করে সবুজ হলুদের কম্বিনেশনে রেশমি চুড়ি।রাত ভাইয়ার কড়া নিষেধ আছে বেশি সাজা যাবে না। মুখে আটা ময়দা মাখলে ,, আমাকে ও আঁটা ময়দা বানিয়ে দেবে বলেছে।”তাই রিক্স নেয়ার চিন্তা ও করিনি। লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে রেডি হলাম। গুটি গুটি পায়ে জেরিনকে নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ।সবাই খুব খুশি।খুব হইহুল্লোড় হচ্ছে। কিন্তু রাত ভাইয়া কোথায় ,,?? ওনার দেখা নাই।

ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। অসাধারণ ডেকরেশন।সবাই খুব প্রশংসা করেছে। পুরোটাই রাত ভাইয়ার আইডিয়া। জেরিন সোফায় বসে আছে ।একটু বাদেই অপূর্ব ভাইয়া আসবে। তারপর একসাথে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আমি শাড়ির আঁচল হাতে মোচড়াতে মোচড়াতে রাত ভাইয়ার অপেক্ষা করছি‌।সবাই জেরিনের সাথে পিক তুলছে। জেরিনের মুখ দেখে খুব বিরক্ত লাগছে। আমি তাকাতেই জেরিন ইশারায় আমাকে ডাকছে। আমি ও জেরিনের পাশে গিয়ে বসলাম।মুখ চেপে বললাম,,

,,”কিরে তোর বিয়ের ফাংশানে তুই মুখ গোমড়া করে আছিস কেন??”

হাসি হাসি মুখ করে ,, দাঁতে দাঁত চেপে বলছে,,

,,”দেখ না সোনু,,, একজন বাদে একজন এসে বলছে,,স্মাইল প্লিজ!! আর আমি সোপিসের মতো মতো সঙ সেজে স্মাইল করছি।তুই একটু থাক না আমার কাছে তাহলে আমি একটু ভরসা পাই।”

আমি চোখ দিয়ে ইশারা করে বললাম,,

,,”তুই চিল মার,,আমি আছি ।কিপ স্মাইল ওকে??”

হঠাৎ জোরে মিউজিক বেজে উঠল। সাথে চিৎকার ও বেলে গেল।কিছু ছেলে মেয়ে ও নাচছে। একজোট মানুষ এগিয়ে আসছে ছেলের দিকে। তাদের মধ্যে থেকে একজন আমার নজর কেড়েছে,,সে হচ্ছে রাত ভাইয়া। হলুদ পাঞ্জাবী তাতে হোয়াইট রেশমি সুতার কাজ। হাতাগুলো কনুই ওবদি ফোল্ড করা। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। একটুও নড়ছে না। কাঁচা হলুদ গায়ের রং তার উপর হলুদ পাঞ্জাবী একদম খেলে উঠেছে।কার জে বিয়ে তাই বুঝতে পারছি না‌।বিয়ে বাড়িতে এমন কোনো মেয়ে বাকি নেই যে নজর দেয় নি রাত ভাইয়া উপর শ্ আমাকে কম কম সাজতে বলে নিজে হিরো সেজে এসেছে। কোথায় কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবো তা না হলুদ হেড লাইট লাগিয়ে ঘুরছে। অপূর্ব ভাইয়াকে ও খুব সুন্দর লাগছে।সাদা পাঞ্জাবি সাথে হলুদ কটি।কটির বাম পাশে সোনালী রঙের ব্রোঞ্চ। চুড়িদার সাথে লোফার,, অসম্ভব সুন্দর লাগছে।রাত ভাইয়া জেরিনের পাশে অপূর্ব ভাইয়াকে বসিয়ে দিলেন।উনি এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন,, মৃদু স্বরে কানে কানে বললেন,,

,,”দেখ সোনালি,,দুই চশমিশকে কি সুন্দর মানিয়েছে।”(বলেই ছোট করে একটা হাসি দিলেন। আমি ও হেসে দিলাম। হ্যাঁ ,,ভাইয়া আর জেরিন দুজনই চশমা পড়ে।ইভেন এখন ও পরে আছে।তাই যথেষ্ট অদ্ভুত লাগছে।

এতো শব্দের মধ্যে ও একটা গলার আওয়াজ বারবার আমার আকর্ষণ করছে। গলাটা রাত,,রাত,,বলে চেঁচামেচি করছে। আমি ভালো করে শোনার চেষ্টা করলাম । আসলেই কি কেউ ডাকছে??,,হ্যাঁ ।স্টেজে থেকে একটু দূরে নেটের শাড়ির সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে একটি মেয়ে রাত ,,রাত বলে চেঁচাচ্ছে। আমার বাঁকা চোখে রাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম।

রাত ভাইয়ার মুখে ও বিরক্তর ছাপ। আমি মুখ মলিন করে রাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কারন মেয়েটি ছিল চিপকু ওরফে প্রিতি আ,,,, পু,,!!

প্রিতি আপু স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে।রাত ভাইয়া কোনো কথা বলছেন না শুধু দাঁড়িয়ে আছেন।প্রিতি আপু রাত ভাইয়ার পাশে এসে দাড়াতেই রাত ভাইয়া প্রিতি আপুকে দেখে ও না দেখার ভান করে অন্যদিকে চলে গেলেন। আমি ও চাইছিলাম না এখানে কোন তামাশা হোক।বরং কনে দুজনেই চলে এসেছে । অনুষ্ঠান ও শুরু হয়ে গেছে।রাত ভাইয়া সবকিছুর তদারকি করছেন।প্রিতি আপু মশার মতো রাত ভাইয়ার পিছে পিছে ভনভন করলেও রাত ভাইয়া পাত্তা দিচ্ছেন না।এক পর্যায়ে রাত ভাইয়া প্রিতি আপুকে টেনে একপাশে নিয়ে গেলেন,, আমি পুরোটা দেখতে পেলেও প্রচুর শব্দে কিছুই শুনতে পাইনি।রাত ভাইয়া একদম রাগী রাগী লুক নিয়ে কিছু বলছেন প্রিতি আপুকে।প্রিতি আপু ও বেশ আপসেট মনে হচ্ছে।রাত ভাইঢয়া কথা শেষে ওখান থেকে চলে গেলেন।রাত ভাইয়া চলে গেলে প্রিতি আপু কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলেন। আমার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। তবে আমার একটু খারাপ লাগলো। যদিও চিপকুর সাথে আমার সাপে নেউলে সম্পর্ক কিন্তু এভাবে চোখে জল নিয়ে উনি চলে যাওয়াতে আমার খুব খারাপ লাগল।

কিন্তু মন খারাপ বেশিক্ষণের না। জমজমাট আসর । প্রচুর মজা করছে সবাই।

#পর্ব-৩০

কিন্তু মন খারাপ বেশিক্ষণের না। জমজমাট আসর । প্রচুর মজা করছে সবাই।

হলুদের অনুষ্ঠান বেশ জমকালো আয়োজনে শেষ হলো। খুব নাচানাচি, খুব হইহুল্লোড়। অনেক মজায় কাটলো প্রতিটা মুহূর্ত।রাত ১২টা বাজে,, জেরিন আর আমি বিছানায় কুজো হয়ে শুয়ে আছি।কাল কোনো কাজ নেই। সকালে উঠে সোজা কমিউনিটি সেন্টারের রাস্তা ধরব। সেখানে সবার জন্য রুম বুক করা হয়েছে একবারে রিসেপশন শেষ করে ,বউ নিয়ে বাড়ি ফিরব।তাই সব দায়িত্ব সেখানের ।ঝাড়া হাত পা দিয়ে বেঘোরে ঘুম দিলাম।

সকালে উঠে সবাইকে নিয়ে গাড়ি চেপে কমিউনিটি হলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।হলটা কাঁকড়াইলে। তবে সকাল সকাল কোনো জ্যাম নেই রাস্তায়। জেরিন আমার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমুচ্ছে। বিয়ের দিন ও যে বউয়ের এতো ঘুম কোত্থেকে আসে কে জানে?? তবে জেরিনের কথা হচ্ছে,,ওর নাকি টেনসনে বেশি বেশি ঘুম পায়। আমার এতে দ্বিমত করার কোনো স্কোপ নাই। কারণ আমার নিজের ও তাই মনে হয়। তবে গাড়িতে আমার ঘুম পায় না।তাই গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি,, আর দেখছি ছুটে চলা বিল্ডিংগুলো।

ঘন্টাখানেকের মধ্যে হলে উপস্থিত হলাম।সবাই স্কুলের রোল এন্ট্রি করানোর মতো,,হাত তুলে,,”ইয়েস”বলে চাবি নিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হচ্ছে ‌।‌‍এখন আর ওয়াশরুম নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না।কার প্রতিটা রুমেই এটাস্ট বাথরুম।তাই যে যার নিজের বাথরুম ব্যাবহার করছে।

রুম গুলো দোতলায়।নিচ তলায় প্রশস্ত হল,পুরো এড়িয়া জুড়ে। আমি ফ্রেশ হয়ে বাইরে একটু হাঁটাহাঁটি করছি। সাথে একটু ঘুরে দেখছি।রাত ভাইয়া ম্যানেজারের সাথে কথা বলছেন। মনে হয় মেনু নিয়ে কিছু গড়বড় হয়েছে। সেই বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।রাত ভাইয়া খুব চাপে আছেন। পুরো একটা বিয়ের ফাংশান এরেঞ্জ করা তো আর চারটে খানে ব্যাপার না। এই চাপাচাপিতে বেচারা আমার রাত ভাইয়াটা আবার চেপ্টা না হয়ে যায়।হঠাৎ কোত্থেকে রিয়াদ ভাইয়ের উদয় হলো। সূক্ষ্ম গলায় বললেন,,

,,”ভাবী ,, এখানে কি করছেন? আর এরেঞ্জমেন্ট কেমন লাগছে?”

আমি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রিয়াদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,,

,,”ভাইয়া আপনি আমাকে ভাবী ডাকছেন কেন?আর এই আপনি আপনি করছেন কার সাথে??

রিয়াদ ভাইয়া স্বাভাবিক গলায় বললেন,

,,”আপনি বুঝতে পারছেন না?? আপনি তো আমাদের ভাবীই হোন।আর ভাবীকে তো আপনিই বলতে হয়।”

আমি ক্ষীপ্ত গলায় রিয়াদ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়লাম,,

,, আপনি আবার আমাকে ভাবী ডাকছেন?? সমস্যা কোথায় একটু বলুন তো??

উনি মুচকি হেসে বললেন,,

,,”আপনি চোটছেন কেন??রাত স্যার তো আমাদের সবাইকে বলেছেন ভাবী ডাকতে।এই বিয়েটা চুকে গেলেই সোজা আপনাদের বিয়ে।”

চোখ বড়বড় করে তাকালাম রিয়াদ ভাইয়ার দিকে আর মুখ হা করে এটুকুই বললাম,,

,,”এএএএএ,,,”!!

আমার চোখ কপালে উঠে গেল। মাথায় কথাটা ভালো করে সেট হতেই বুঝতে পারলাম রাত ভাই ঠিক কি বলেছে।”বিয়ে”কথাটা মাথায় ভনভন করছে। আমি আর বিয়ে,তাও রাত ভাইয়ার সাথে।উফ,,,কি লজ্জার ব্যাপার!!ধবলকুমার(রাত ভাইয়া) সবাইকে এটা বলে বেরাচ্ছে।রিয়াদ ভাইয়ার দিকে তাকাতেও লজ্জাবোধ হচ্ছে। তবু ও এক ঝলক রিয়াদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কারেন্টের গতিতে বললাম,,

,”আমি আপনার রাত স্যারকে বিয়ে করলে তো??”(কারেন্টের গতিতে বলে , বিদ্যুতের গতিতে দিলাম এক ছুট।রিয়াদ ভাইয়া ভ্যাবলা কান্তের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন)



চলছে আজকের সব থেকে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ।আর তা হলো কনের সাজ। পার্লার থেকে দুজন বিউটিশিয়ান আনা হয়েছে।দুজনই গারো সম্প্রদায়ের। ভালোই সাজাচ্ছে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই নিজেদের মধ্যেই নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন।যাক কথা বলছেন তাতেও আমার মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু তারা কথা বলার জন্য কি ভাষা যে ব্যবহার করছেন সেটাই কেউ বুঝতে পারছেন না।যেই কথা বলছেন সেই সবাই বড় আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে কথা গিলছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। উল্টো আমরা যেই বাঁকা চোখে তাকাচ্ছি , তখনই আমাদের দিকে তাকিয়ে ,,হেহেহেহেহে ,, করে হেসে দিচ্ছেন।সবাই বিভ্রান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

সন্ধ্যা সাতটা কুড়ি বাজে,,

আমি রেডি। মিষ্টি রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়েছি। সাথে হালকা জুয়েলারি, খোলা চুল , কপালের মাঝখানে ছোট একটা টিকলি।আর সাথে তো আছেই কমন লিপস্টিক আর কাজল।সাজ সমাপ্ত। জেরিন ও সেজেগুজে বসে আছে। পাক্কা তিন ঘণ্টা ধরে সাজানো হয়েছে জেরিনকে। বেসম্ভব সুন্দর লাগছে জেরিনকে। জেরিনের রুপের মহিমায় আমার অবহেলিত ভাইটা না আবার জ্ঞান হারায়। উত্তেজিত গলায় জেরিনের হাত দুটো ধরে বলছি,,

,,”দোস্ত তোকে আজ মারাত্মক লাগছে।মনে হচ্ছে স্বর্গের অপ্সরা নেমে এসেছে। তুই আমার ভাইটাকে প্যানে রক্ষা দে,,মা গো।”(বলেই ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলাম)।

জেরিনকে হলে নিয়ে যাওয়া হলো। ভাইয়া ও উপস্থিত হলে। দুজনকে বেশ মানিয়েছে ‌। তার থেকেও বড় কথা ওরা দুজনেই খুব হ্যাপি।রাত ভাইয়া তাদের বন্ধুদের নিয়ে ভাইয়াকে লেকপুল করছে।যত ভাইয়াকে অসাধারণ লাগছে।নীল রঙের সেরওয়ানীতে অপূর্ব লাগছে। তিনি হচ্ছে কর্তাধর্তা। এদের মধ্যে উৎসাহী জনতা হচ্ছে সিয়াম ভাইয়া(রাত আর অপূর্ব ভাইয়ার বন্ধু)।এনাকে আমি আগেও দেখেছি,, ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার‌।উনি হেলে দুলে হাসতে হাসতে বলছেন,,

,,”মাম্মা,,বিয়া কইরা লও। তারপর বুধবার মজা। শার্টের বোতাম থেকে প্যান্টের জিপার পর্যন্ত বন্ধ করতে যখন বউয়ের অনুমতি লাগবে, তখন বুঝবা ঠেলা।(সঙ্গে সঙ্গে উৎসাহি জনতা হেসে দিল)

রাত ভাইয়া সরল ভঙ্গিতে সিয়াম ভাইয়াকে বললেন,,

,,ও,,তাই বুঝি তোর পেন্টের জিপার খোলা?? বউ অনুমতি দেয়নি বুঝি??(হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে পড়ছে)

সিয়াম ভাইয়া অবাক হয়ে প্যান্টের দিকে তাকালো তারপর লজ্জিত গলায় বললো,,

,,”এই দেখ আমি নিজেই অনুমতি নিতে ভুলে গেছি।দেখ,,দেখ,, আমাকে দেখে তোরা কিছু শেখ।”(হাসতে হাসতে সবার পেট ব্যাথা হওয়ার জোগাড়)

মধ্যে থেকে আকাশ ভাইয়া টপ করে বলেন,,

,,”দোস্ত অপূর্ব দিল্লির লাড্ডু টেস্ট করছে। ওকে শুভকামনা দে।তা না করে বাচ্চাটাকে ভয় দেখাচ্ছিস।”

সবাই এক সাথে চিৎকার করে বলে উঠলো,,

,,,,যাহ্ বৎস ,,জিলে আপনি জিন্দেগী।(আর হো হো করে হেসে দিলেন)

হঠাৎ বুড়ো কাজী এসে উপস্থিত। একটু বাদেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।সবাই খাওয়া দাওয়া করতে ব্যস্ত।রাত ভাইয়া বাসর ঘরের ফাইনাল টাচ দিচ্ছেন বন্ধুদের সাথে।বিয়েতো শেষ। এবার পালা বাসর ঘরের,,,,।

,, চলবে,,??❤️

**কেউ নাইস/নেক্সট কমেন্ট করবেন না**

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here