বিষাক্ত বাঁধন পর্ব -২৮+২৯

#বিষাক্ত_বাঁধন
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন
#পর্ব-২৮

সে দিনের পর কেটে গেছে অনেক দিন ।আশরাফ সিপাত এর সাথে তুসির বিয়ে ঠিক করেছে।

এর পেছনে একটা বড় কারণ আছে।নাহলে এত তাড়াতাড়ি কোনোভাবেই মেয়ে কে দূরে করতেন না নিজের থেকে।

কিন্তু ওই যে ভাগ্য।উপর ওয়ালা তা যেভাবে রেখেছেন ঠিক সেভাবেই হবে।জীবনে এমন অনেক মহূর্ত আসে যেটা আমরা আমাদের মতো করে ঘটাতে চাই কিন্তু সেটা আমাদের মনের মতো বা ইচ্ছার মতো হবে এমন ভাবা বোকামি।

তুসি প্রায় দুইমাসের মতো যে ঘরের বাইরে ছিল সেটা যদিও আশরাফ খান আর রুকসানা বলেছেন যে তুসি নানা বাড়িতে ছিল তারপরও সবাই জেনে যায়। জেনে যায় যে তুসি ওর নানার বাড়ি নয় বরং অন্যকোথাও ছিল আর এটা কে নিয়ে নিজেদের মতো মন গড়া গল্প ও বানিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে।

আশরাফ আসা যাওয়ার পথে অনেক কিছুই শুনতে পায়। রুকসানা ও ব্যতিক্রম নয়। তবে এ কিছুই জানেনা তুসি। জানবে কি করে সেই যে বেরিয়ে ছিল সিপাত এর সাথে আর বের হয় নি।
কিন্তু আশরাফ ভিষণভাবে দুশ্চিন্তায় আছে এ নিয়ে।
এই ঘটনা জানার পেছনে অনেকটাই দায়ি আছে এক মহিলা। উনি তসিদের বাড়ির পাশে থাকেন কিন্তু তার মেয়ের শশুড় বাড়ি তুসার নানার বাড়ির পাশে। রুকসানা আর আশরাফ মেয়ে নানার বাড়ি আছে বললে তিনি তা বিশ্বাস করেন না।করবে কি করে যাকে একদিনের জন্য কোথাও থাকতে দেয় না সে এতদিন নানার বাড়িতে থাকবে বিষয় টা মহিলা মানতে পারেননা।তাই মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে সে তুসির নানার বাড়িতে গিয়ে তুসির খোঁজ খবর নিয়ে জানতেপারে তুসি এইখানে আসেইনি।

ব্যাস তার পর আরকি এলাকায় এসে সবাই কে সব জানিয়ে দেয়। আর এইসব খবর বাতাসের আগে ছড়ায়।

সব মানুষ নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে আশরাফ খান এর মেয়ে প্রেমিক এর হাত ধরে পালিয়েছে।

পুরো মহল্লায় এখন চর্চার বিষয় এখন যেন এটাই।

আশরাফ কি করবেন না করবেন বুঝতে পারছেন না।শেষে সিদ্ধান্ত নিল বিয়ে দেবে তুসির। আর এরই মধ্যে সিপাত এর ফ্যামিলি আসলো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ।সব কিছু বিবেচনা করে আশরাফ হ্যাঁ বলে দিল ।
এইদিকে তার ব্যাবসার অবস্থা ও ভালো চলছে না।এই সময় চৌধুরি গ্রুফ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ওদের সাথে কাজ করতে রাজি হয়েছে।অনেকগুলো প্রজেক্ট ও ইতোমধ্যে কমপ্লিট করে ফেলেছে তারা।

ভাগ্যিস ওরা কাজ করতে রাজি হয়েছে নাহয় কোনো পার্টনার খুঁজে পাওয়াএই মুহুর্তে তার জন্য মুশকিল।ওই কোম্পানিরমালিক ছেলেটাকে আশরাফ এর ভিষণ ভালো লাগে।অবশ্য তাকে তুসির বিয়ের দাওয়াত করতে ভুলেনি আশরাফ।

🌸🌸🌸

একটা মানুষের সাথে অনেকদিন যাবত থাকবে আর তার প্রতি মায়া অনুভব হবে না এটা একেবারেই অসম্ভব।
তাহিয়ারও তাসিন এর সাথে থাকতে থাকতে ওর প্রতি মায়া জন্ম নিয়েছে।ওকে ভালো লাগতে শুরু করেছে। তাসিন এর প্রতি কি কিছু ফিলিংস আছে সেটা বুঝতে পারে না তাহিয়া।তবে ওর মনে নানা সংশয় আছে এ নিয়ে। ওকে ওর সৎ মায়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাসিন বিয়ে করেছে।ও কি তাকে ভালোবাসে?

আজ তাসিন ওকে কলেজে দিয়ে আসার সময় একটা মেয়ের সাথে দেখা হয় ওদের।তাসিন ওর সাথে খুব ভালোভাবে হাসিমুখে বলছে।এটা তাহিয়ার সহ্য হচ্ছে না।

ব্যাপারটা ওখানেই শেষ হয়নি রাতে তাসিন বাড়ি ফিরলে ওই মেয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলে।আর কথোপকথনে তাহিয়া বুঝতে পারে এটা তাসিন এর এক্স গার্লফ্রেন্ড।আর তারা বিদেশে থাকতে একসাথে পড়ালেখা করেছে।কোনো একটা কারণে হয়তো ব্রেকআপ হয়ে গেছে। তবে দুজনের মধ্যে এখনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।

সেই রাত থেকে তাহিয়ার মন ভিষণভাবে খারাপ।ওই বাড়িতে থাকলে অবশ্য তুসির সাথে কথা বলা যেত। এইখানে তাসিন ওর বাবা আর কয়েক জন কর্মচারী ছাড়া আর কেও নেই। ওই বাড়ি থেকে তাসিন আর তাহিয়া এসেছে তাসিনদের বাড়ি।ওইখানে পাঁচ দিন থেকেই পরের দিন চলে আসে।। মূলত তাহিরই নিয়ে এসেছে তাদের।লোকটাকে ভিষণ ভালো মনে হয় তাহিয়ার। ছেলে যেমন পরোপকারী বাবা কোনো ঝামেলা না করেই ওদের বিয়ে মেনে নিয়েছে।

সেদিন থেকে তাসিন দের বাসায় থাকতে শুরু করেছে ও আর তাসিন। আর কয়েকদিন পর তাহিয়া কলেজে যাওয়া ও শুরু করেছে।

ওর ভাবনার মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল। নিশ্চয়ই তাসিন এসেছে। আজ দেরি কেন করলো তাহিয়ার জানা নেই।সব সময় তো তাসিন রাত আটটার দিকে চলে আসে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দশটা পঞ্চাশ মিনিট।

গিয়ে দরজা খুলে দিল তাহিয়া এতো রাতে সার্ভেন্ট রা কেও জেগে থাকেনা।তাই তাকেই খুলতে হলো।

তাসিন তাহিয়াকে দেখে হাসি দিলো প্রত্যুত্তরে তাহিয়াও জোর পূর্বক হাসলো।তাসিন বলল,

খেয়েছো?

আমি খাবার রেডি করছি আসুন।

তাসিন অবাক হয়ে বলল, কি ব্যাপার তুমি কথা এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?আর আমি আজকে বাইরে ডিনার করে এসেছি ।তাই লেটা হলো।

খেয়ে এসেছেন?মন খারাপ নিয়ে বলল, তাহিয়া।

তাসিন বলল ,আব্ হ,হ্যাঁ।আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।ঘামের বাজে গন্ধ বের হচ্ছে গা থেকে।
এই বলে অফিস ব্যাগ তাহিয়াকে দিয়ে ঘরে গেলো তাসিন। মোবাইল আর ওয়ালেট ড্রেসিংটেবিলে রেখে টাওয়াল আর কাপড়চোপড় নিয়ে ওয়াশরুম এ গেল।

এইদাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাহিয়াও ওর পিছু পিছু আসলো রুমে।একসাথে খাবে বলে ও না খেয়ে আছে।আর লোকটা বাইরে থেকে খেয়ে আসলো!

ব্যাগ রেখে বিছানায় বসলো তাহিয়া।হঠাৎ মোবাইল এর নটিফিকেশন আওয়াজ আসলো।সেটা অনুসরণ করে দেখলো তাসিন এর মোবাইল এ বাজছে ।
কৌতুহলবসত ও গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ম্যাসেজ রিটা নামে কারো।মাথায় চাপ প্রয়োগ করে মনে করলো এটাতো সেই মেয়ে টা তাসিন এর এক্স গার্লেফ্রন্ড। ও দেখলো লেখা আছে,,,,,
jan!thank you so much to forgive me.আজকের ডিনারটা দারুণ ছিল।আর আমাকে কবে তোমার বৌ…….

এরপর আর দেখতে পেলনা।মোবাইল লক করা ছিল তাসিন এর।স্ক্রিনে শুধু এটুকু লেখা ভেসে উঠেছিল।

তাহিয়ার মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ও ভেবে নিল নিজের মতো করে যে তাসিন ওই মেয়েটার সাথে ডিনার করছে আর ওকে ক্ষমা ও করে দিয়েছে।নিশ্চয় ওই অন্যায় এর জন্য ক্ষমা চাইছে ওই মেয়েটা যার জন্য ওদের ব্রেক আপ হয়েছিল।

জান ডাকা হচ্ছে। বাহ! এই প্রেম নিয়ে এতদিন কই ছিল ।আবার,আমাকে কবে তোমার বৌ,,, এ,,এখানে কি হবে ,”আমাকে কবে তোমার বৌ বানাবে”?নিশ্চয় এটা হবে।তা নয়তো কি।জান -প্রাণ কি আর যাকে তাকে ডাকা যায় নাকি।
রাগে গজগজ করতে করতে আর এসব বলতে বলতে তাহিয়া শুয়ে পড়ল। খাবে না আর ও।খিদে চলে গেছে। একসময় নিরবে অশ্রু ঝরে বালিশ ভিজিয়ে দিলো।

তাসিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বহুবার ডাকলেও তাহিয়া সাড়া দেয় নি।তাসিন মনে মনে চিন্তা করলো?ও কি খেয়েছে?সেটা তো বলল না।ঘুমিয়ে গিয়েছে নাকি।তাসিন হালকা স্বরে ওকে ডাকছে।তাহিয়া,তাহিয়া,,এই তাহি তুমি খেয়েছো?

তাহিয়া না শোনার ভান করে এইদিকে ফিরেই রইল।তবে তাহি ডাকটা শুনে ওর বুকের ভেতর কেমন যেন একটা অনুভব হচ্ছে। আচ্ছা আমি কি ওদের সম্পর্কে বাধা হয়ে গেলাম।আর আমাকে তো উনি ইচ্ছা করে বিয়ে করেননি।নিশ্চয় আমার জন্য দুজনের বিয়ে করতে প্রবলেম হবে।নিজেদের মধ্যে সব কিছু ঠিকঠাক করে নিয়েছে হয়তো বিয়ে ও করে নিবে।তা আমার জন্য পারছেনা। আমার কি চলে যাওয়া উচিত তাসিন এর জীবন থেকে??????
#বিষাক্ত_বাঁধন
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন ।
#পর্ব_২৯

বিবাহিত হওয়ার পরে ও পুনরায় নিজের বিয়ের কথা শুনতে হচ্ছে আর কাওকে বলতেও পারছেনা যে সে বিবাহিত কি রকম লাগা উচিত তখন একটা মানুষের কাছে জানা নেই তুসির।

তবে তুসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও আর নিজে বাধা
দেবে না কোনোকিছুতেই ।ভাগ্য ওকে যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকে যাবে।

সিপাত এর সাথে তুসির বিয়ে দুদিন পর।এর মধ্যে শপিং করতে যাওয়ার জন্য সিপাত তুসিকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছে কিন্তু তুসি সুকৌশলে সেটা এড়িয়ে গেছে।

ও জানেনা ওর ভবিষ্যত কি।এমন কিওকে বিয়ে করতে যাচ্ছে যাকে ও মন থেকে সম্মানই দিতে পারে না।আর আরিয়ান এত কিছু করার পরও বেহায়া মন ওর কথা ভাবে।ও কি তুসিকে মিস করছে কিনা জানতে ইচ্ছা করে।

তুসি এখন ভাবে খুব করে ভাবে ওদের যদি স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে হতো একটা সুন্দর সম্পর্ক হতো তাহলে কি খুব খারাপ হতো?এসব ভাবা এখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই না।

সেদিনের সে চিরকুট টা কে পাঠিয়েছে সেটা নিয়ে অনেক ভেবে বুঝলোনা তুসি।তবে সর্ব প্রথম সেটা হাতে নিয়ে পড়ার পর আরিয়ান এর কথা মাথায় আসলো তুসির। পরমুহূর্তে আবার আরিয়ান এর বলা সেই বিষাক্ত বাণী গুলো মনে পড়লো।সেদিন আরিয়ান বলেছিল,

“এত দিন যা যা হয়েছে সব ভুলে যাবে।আমি কখনো এই বিয়েটার জের ধরে তোমার সামনে স্বামী হিসেবে দাড়াবোনা।তুমি মুক্ত আজ থেকে।তবে শর্ত একটাই ।এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?কার কাছে ছিল সেটা কখনো কাউকে বলতে পারবেনা এমনকি তোমার বাবা মাকে ও না ।বিয়েটা আমি করতে চাইনি সেটা অপ্রত্যাশিত ভাবে হয়েছে।”

এখনো এসব মনে আছে তুসির খুব ভালো করে মনে আছে।কে হতে পারে এই পারসেল দাতা?ভেবে ও কুল পেলো না তুসি।আর কিছু ভাবতে চায় না ও।ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়েছে।

🌸🌸🌸

নিজের মায়ের সাথে দেখা করে এসেছে আরিয়ান । অবশ্য এই কয়দিন রেগুলারই দেখা করে তার মায়ের সাথে। ডাক্তার ও দেখিয়েছে কয়েক বার।আর আস্তে আস্তে তার মায়ের ও শরীর ইমপ্রুভ হচ্ছে।
এসব কিছু আশরাফ এর অজান্তে হচ্ছে। যে লোক কে আরিয়ান তুলে নিয়ে গিয়েছিল সব জানার জন্য সে সব ব্যবস্থা করে দেয়।

আরিয়ান এখন অনেক রিল্যাক্স মুডে আছে।একদভ শান্ত।
রাজ ওর কেবিনে এসে বলল,স্যার ভাব,,,না মানে ম্যাডাম এর তো বিয়ে ঠিক করেছেন আশরাফ খান। আর ওনার এলাকায় ও ম্যাডাম কে নিয়ে অনেক অনেক বাজে কথা বলছেন। এস,,,

জানি।

আরিয়ান এর শান্ত শ্বরের বাণী শুনে রাজ অনেকটাই অবাক হলো।
রাজ আবার মনে সাহস সঞ্চয় করে বলল, স্যার আপনি কিছু করবেননা?

আরিয়ান রাজ কে বলল ,তোমাকে আমি মানা করি না স্যার না ডাকতে। ছোট ভাই এর মতো তুমি আমার।ভাই ডাকবে।

রাজ নাছোড় বান্দা সে বার বার আরিয়ান কাছে একই প্রশ্ন করে যে ম্যাডাম এর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আপনি কিছু করবেননা?

আরিয়ান খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,রাজ তুমি থামবে ।যাও।

রাজ ফের বলে আপনাদের তো ডিভোর্সে হয় নি ।আপনি সবাইকে সবটা জানিয়ে দিচ্ছেন না কেন ভাই।ম্যাডাম কে প্লিজ আপনি আপনার জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দিবেননা।এই বলে রাজ আর এক মহূর্ত ও অপেক্ষা না করে চলে যায় সেখান থেকে।

আরিয়ান বলল,ওর কাছে স্বামী অধিকার নিয়ে দাঁড়িনোর রাস্তা আমি নিজেই বন্ধ করেছি।আরিয়ান এসব ভেবে দীর্ঘ শ্বাস নেয়।

তাহিয়ার ভীষণ মন খারাপ থাকে আজকাল। সেই দিনের ঘটনা থেকে একদম চুপচাপ হয়ে গেছে ও।তাসিন বহুবার চেষ্টা করে ও এর কারণ জানতে অসফল হয়েছে। আর ইদানিং কোম্পানির অনেক দায়িত্ব সব তাসিন আর রাজ সামলায়। এর জন্য ও তাহিয়াকে বেশি সময় ও দিতে পারছেনা।

আজ তাহিয়া কলেজ থেকে ফেরার পথে বাড়ি না গিয়ে তাসিন দের অফিসে যায়।তাসিন এর সাথে একবার এখানে এসেছিল ও একদিন। তাই অফিস চিনতে অসুবিধা হয় নি।ওর খুব ইচ্ছে করছে তাসিন কে দেখতে। দুজন একসাথে খাবার খেতে।আগে তো তাসিন এমন ছিল না।ইদানিং ওকে পাওয়াই যায় না। সকালে তাহিয়া ঘুম থেকে ওঠার আগেই তাসিন চলে গেছে আজ।তাই ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে ওর এখন।

ও বুঝে না এত ছেলে মানুষি কেন করে ও তাসিন এর জন্য। এত টান, এত আবেগ,অধিকার বোধ সবই কি বৈধ সম্পর্কের জোরে।একজন স্বামী স্ত্রী মধ্যে বিধাতা যে অলৌকিক বন্ধন স্থাপন করেছে তার কারণেই কি এমন লাগে?আচ্ছা তাসিন এর কি এমন অনুভূতি হয় না। দুজনেরই তো একে অন্যের প্রতি মায়া, ভালোবাসা,যত্ন সব কিছু নিতে হয় ।

বর্তমানে তাহিয়া তাসিন দের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ভেতরে ঢুকে এক মহিলা কর্মকর্তা কে জিজ্ঞাস করলো তাসিন এর কেবিনের কথা।ওনি বলল, সাথে এটাও জিজ্ঞাস করলো আপনি কে হন ওনার ?তাহিয়া বললো ওনার স্ত্রী।

তাসিন এর কেবিনে গিয়ে দেখলো সেখানে কেও নেই।তাহিয়া ভাবতে থাকে তাসিন কোথায় গেলো?

অফিস থেকে বের হওয়ার পর ও দারোয়ান চাচা কে জিজ্ঞাস করলে ওনি বলল ওনি তাসিন ফোনে কথা বলার সময় শুনেছেন যে ও একটা রেস্টুরেন্ট এ যাবে।তার ঠিকানা ও বলল তাহিয়াকে।দারোয়ান চাচা তাসিন মোবাইল এ ঠিকানা বলেছে যে শুনেছে।

তাহিয়া ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেই ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।সেখানে গিয়ে অনেক গুলো টেবিলের মাঝে একটা টেবিলে তার কাঙ্খিত মানুষ কে দেখতে পেয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল কিন্তু পাশে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল ,এই মহিলার সাথে কি করছে উনি।
রিটা মানে তাসিন এর এক্স গার্লেফ্রন্ড। খোলামেলা পোশাক পরিহিত তাসিন এর সাথে খুবই হাসিমুখে কথা বলছে।আর তাসিন এর ও যেন হাসি মুখ থেকে সরছেইনা।

তাহিয়া মোবাইল টা নিয়ে কল করলো তাসিন এর নম্বরে। তাসিন দুবার কল কেটে দিয়েছে।তাহিয়া রাগে ঠোটে ঠোট চেপে আবার কল দিল দেখি কতক্ষণ কল না ধরে থাকতে পারে। চারবারের সময় তাসিন কে রিটা বলল, ধরো দরকারি হলে।
তাসিন বলল,তোমার থেকে দরকারি আর কিছু নেই বেবি।

বলেই দুজনে হাসল। তাহিয়া সব কিছু স্পষ্ট দেখতে আর শুনতে পারছিল। রিং শেষ হওয়ার আগেই কল ধরল তাসিন।

তাহিয়া নিজেকে কিছুটা সামলে বলে উঠল, আপনি কোথায় আজ আমাকে কলেজে নামিয়ে দেননি যে?

তাসিন বলল ,একটা কাজ ছিল আজ তাই তাড়াতাড়ি চলে আসতে হলো।

তাহিয়া বলল, ওহহ ।আচ্ছা আপনি খেয়েছেন?আর কি করছেন এখন?

তাসিন বলল, নাহ খাইনি আমি মিটিং এ আছি ফোন রাখছি।বাড়ি চলে যেও তুমি ক্লাস শেষে।বলেই তাসিন মোবাইল কেটে দিল।

এইদিকে তাহিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর অনুভব করল ওর চোখ দিয়ে গরগর করে পানি পড়ছে।

মনে মনে ভাবছে তাসিন ওকে মিথ্যে বলেছে ওই মেয়েটার জন্য। ও তো কোনো মিটিং এ নেই।ওই মেয়েটার সাথে সময় কাটানোর জন্য আমার মোবাইল ধরছে না।নাহ ও বোধ হয় আমি বোঝা হয়ে গেছি। কারো জীবনে আমি বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।থাকবোনা আমি। এসব বিরবির করতে করতে তাহিয়া দৌড়ে চলে গেলো ।

কোথায় যাবে সে বাবার বাড়ি তে ফিরলে ত হাজারটা কথা শুনতে হবে।ও সিদ্ধান্ত নিল তুসিদের বাসায় যাবে।কারো বোঝা হয়ে আর ও বাঁচতে চায় না। কারো না।আশরাফ খান আর রুকসানা ওকে নিজের মেয়ের মতোই আদর করে তাই সেখানে যাবার সিদ্ধান্ত নিল।কিছু দিন সেখানে থেকে এরপর নিজের ব্যাবস্থা নিজে করবে।টিউশন খুঁজবে। তারপরও আর তার বাবার বাড়ি যাবে না।

তাহিয়া খান বাড়িতে আসলো চোখের জল মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল।
ঘরে ঢুকতেই আশরাফ খান আর রুকসানা বেগম কে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখল।
ওকে দেখে তারা নেক খুশি হলো আর রুকসানা বেগম ওকে জড়িয়ে ধরে বললেন, কিরে এই মা টাকে বিয়ের দাওয়াত দিস নি যে?

তাহিয়া বলল, আহলে নেক তাড়াতাড়ি হয়ে গেলোতো তাই কাওকে তেমন বলতে পারিনি। আপনারা কেমন আছেন আন্টি?

আল্লহর রহমতে ভালো আছি ।তোমাকে নিশ্চয় তুসি দাওয়াত দিয়েছে যাক ভালোই হয়েছে তাড়াতাড়ি চলে এসেছো যাও ওপরে যাও তুসি আছে।

আশরাফ মুচকি হেসে বলল হ্যাঁ যাও তুসি ঋকা বসে আছে।

তাহিয়া অবাক হলো কিসের দাওয়াত আর তুসি এখানে কেন ?ওনারা এতো জোরাজুরি করায় সে আর কথা না বাড়িয়ে তুসির কাছে গেল।

তুসির কাছে গিয়ে দেখলো যে তুসি মন মরা হয়ে বসে আছে।তাহিয়া ওকে ডাকতে তুসি ওকে দেখে জড়িয়ে ধরল। আর কাঁদতে লাগলো।

তাহিয়াতো কিছুই বুঝতেছে না ।পরে তুসি ওর বিয়ের কথা সব বিস্তারিত জানালো।

সব শুনে তাহিয়া অবাক হয়ে বলল, তুই রাজি হয়ে গেছিস?

তুসি বলল আর কোনো উপায় নেই।কার জন্য আমি রাজি হবো না ।সে তো আমাকে প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দিতে ও ভাবেনি।

তুসি এবার ওকে বলল ,তুই কী করে জানলি কে বলল?আর কলেজ ড্রেস পরে আছিস যে?

তাহিয়া জবাব দিল, আমি কলেজ থেকে এসেছি।
তুসি এবার জানতে চাইল তাসিন ভাইয়া জানে উনি আসেনি যে?

তাহিয়া ওর কথা শুনে কঠিন মুখে বলল,জানিনা ।আমাকে ড্রেস দে চেঞ্জ করবো।

তুসি ড্রেস দিতেই তাহিয়া চলে গেলো।
তাহিয়া অবাক হয়ে বলল, এর আবার কী হলো?
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here