বিষাক্ত বাঁধন পর্ব -৩২+৩৩

#বিষাক্ত_বাঁধন
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন।
#পর্ব_৩২

সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যায়। ধরেন আপনার কারো ওপর রাগ কিংবা গভীর ভালোলাগা আছে এই মহূর্তে তবে কিছু সময়, মাস,বা বছর পর দেখবেন সেই একই ফিলিংস না নেই। বদলে যায় সেই অনুভূতি। এটাই হয়তো প্রকৃতির নিয়ম। তবে ভালোবাসা ব্যতীত।ভালোবাসা এমন একটা অনভূতি যেটা কখনো বদলায় না।যাকে আপনি ভালোবাসবেন আপনার চোখে তাকে ছাড়া আর কাওকে ভালো লাগবে না।
এই জন্য কবিরা বলেন,
“ভালোবাসা পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর অনুভূতি”।

তুসির মনেও আরিয়ান এর জন্য রাগ ঘৃনা থাকলেও এখন সময়ের সাথে সাথে সেটা পরিবর্তন হয়ে ভালোবাসা যোগ হয়েছে ।অবশ্য আগেও ছিল তবে তুসি সেটা মানতে নারাজ ছিল ।
ইদানিং ও খুব ভালো করে বুঝেছে এই ব্যাপার।

এই আরিয়ান আর আগের আরিয়ান নেই।এই আরিয়ান কে তুসি নতুন করে দেখছে।ও যত দেখছে ততই প্রেমে পরছে।ও খুব করে চায় আরিয়ান এমনই থাকুক।এমন আদুরে মিষ্টি ভাষী।
তুসি কত জেদ করে কত রাগ দেখায় তবু ও আরিয়ান খুবই সুন্দর ভাবে সব সামলায়।

যেমন সেদিন,,,

রাতে তুসির ভিষণ ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছিল আরিয়ান ওকে বারণ করেছে। এত রাতে পুচকা খেলে পেট খারপ করবে। তা ছাড়া এখন বাইরের স্টল গুলো খোলা থাকবেনা।
তুসির আবার আরেক শর্ত হোটেল এর গুলো খাবে না ও।
আরিয়ান অনেক কষ্টে ও যখন পারছিল না ম্যানেজ করতে তখন রাজ খবর লাগালো।রাজ ও ব্যর্থ
কারণ এতো রাতে ওসব পাওয়া যায় না।সাধারণত বিকাল আর সন্ধ্যার দিকে পাওয়া যায়।
তারপর আর কি আরিয়ান নিজেই ফুচকাওয়ালা হয়ে গেলো আর রাজ হলো তার সহকারী। একটা ভ্যান এনে আর সব কিছু ম্যনেজ করে তুসির সামনে হাজির। তুসি তো মহা খুশি হয়ে বলল,নিন শুরু করুন বানানো জলদি দিতে হবে আমায়। পারেন তো আপনারা ??

রাজ বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ পারি। আমরা ইউটিউব দেখে শিখে নিয়েছি আপনারা জন্য ।তাই না ভাই?

আরিয়ান জবাবে মাথা দুলিয়ে সায় দিল।

সেদিন রাতে ফুচকা খেয়েই ঘুমিয়েছে তুসি।

আজ তাহিয়া কল করে তুসিকে এই সুখবর টা জানালো।তুসি তো ভীষণ খুশি। বাচ্চা খুব পছন্দ করে।
ওর মনে ইচ্ছে জাগলো মা হওয়ার। আচ্ছা ওর তো তাহিয়ার আগে বিয়ে হয়েছিল তাহলে তো আগে ওর বাবু হওয়ার কথা কেন হয়নি।আজ আসুক আরিয়ান ওকে বলবে তুসিকে ও একটা বাবু দিতে।

আরিয়ান যথারিতী রাত দশটায় আসলো।খাওয়ার পর্ব শেষ হতে আরিয়ান রুমে আসলো তখন তুসি বলল,শুনুন না।
হ্যাঁ বলো
তাহিয়ার বেবি হবে।আজ আমায় কল করেছিল।

আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো কথা।তুমি খালা মনি হবে।
কিন্তু আমি তো মা হতে চাই।আর আমাদের বিয়ে তো তাহিয়া আর তাসিন ভাইয়ার আগে হয়েছে তাহলে আমার বেবি হলো না কেন?বলে মন খারাপ করলো ।

আরিয়ান চমকে তাকিয়ে বলল,আগে বিয়ে হলেই যে আগে বেবি হবে তার তো কোনো মানে নেই।

মানে নেই কেন?তুসি জেদ ধরে বলল।

আরিয়ান একটু বিরক্ত হয়ে বলল, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠতে হয় তার জন্য। আমাদের মধ্যে এমন কিছুই হয়নি। শুধু শুধু কেন কথা বাড়াচ্ছো বলোতো আসো ঘুমাবে।

তুসি অবাক হয়ে বলল, আপনি মিথ্যা কথা কেন বলছেন কেন?নাকি ভুলে গেছেন।আমার মনে আছে আমাদের মধ্যে ও সেই সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে।

আরিয়ান তুসির দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে বলল, পাগল হয়ে গেছো কখন আমাদের মধ্যে এই সম্পর্ক হলো আমি নিজেই বুঝতে পারিনি ।

তুসি ওর কথায় অনড় রেগে ও কি বলল নিজেও জানে না। ও বললো,সেদিন বাথরুম ওই ঘটনার পর আমার জ্ঞান ফিরে আসলে আমি সব বুঝতে পেরেছিলাম আর বিছানায় ও রক্ত দেখেছি আপনি একদম মিথ্যে বলবেন না।
তুসি রেগে এই কথা বলল অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় লজ্জায় ও এসব বলা তো দূরে থাক মুখে ও আনতোনা।

আরিয়ান এবার পুরো বিষয়টা বুঝতে পেরেছে।ও মিটমিট করে হেসে বলল,ইউ আর রং বেবি। সেদিন কিস এর বেশি কিছুই হয়নি আমাদের মধ্যে তার আগেতো তুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে অর বিছানায় সেই রক্ত আমার হাত থেকে পড়েছে।তবে তুমি চাইলে অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ করে ফেলবো আমার কোনো প্রবলেম নেই। কি বল?

তুসি এবার খানিকটা না অনেক খানিই লজ্জা ফেলো কথায় কথায় প্রমাণ করার জন্য ও কি সব বলল আর ভালোই হলো এক দিক দিয়ে তা না হলে ও তো ভুল ধারণা নিয়ে পড়ে থাকতো।সাথে খারাপ ও লাগলো এতদিন আরিয়ান কে ভুল বুঝে এসেছে যে এই জন্য। তবে এখন আপাদত লজ্জা রাঙা মুখটা লুকাতে জলদি করে শুয়ে পড়লো গায়ে কম্বল একদম মাথা পর্যন্ত টেনে নিল।যাতে আরিয়ান ওকে না দেখতে পায়।

ওর এসব কার্যকলাপ দেখে আরিয়ান হাসলো প্রথমে আস্তে তারপর খুব জোরে।পুরো রুম কাঁপিয়ে হাসলো ।
হাসির শব্দ শুনে তুসি আরো লজ্জা পেলো তবে আরিয়ান এর হাসি মাখা মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছা করলো।কেমন লাগছে আরিয়ান কে মন খুলে হাসাতে।যদি তুসি দেখতে পারতো ।তবে ও তো এখন লজ্জা লুকাতে ব্যস্ত কীভাবে দেখবে তবে কল্পনায় ও আরিয়ান এর হাসি মাখা মুখ টা আঁকার চেষ্টা করলো।

🌸🌸🌸

তাহিয়াকে সব কিছু বুঝিয়ে ভেঙ্গে বলেছিল তাসিন।তাহিয়ার তখন নিজেরই লজ্জা লাগছিলো কি বলতে কি বলে ফেলেছে।

তাসিন আর কোনো দূরত্ব রাখতে চাইনি নিজেদের মাঝে।সেদিনি তাদের দূরত্বের অবসান ঘটিয়েছিল ও।তাহিয়াকে আর ও ওকে ভুল বুঝার সুযোগই দেবে না।

তাহিয়ার সকাল থেকে উত্তেজনায়হাত পা কাঁপছে।
একমাস মিস । তাই কৌতুহল বসত ফার্মেসি থেকে প্রেগনেন্সি কিট নিয়ে এসেছ।এখনো পরীক্ষা করা হয় নি।তাসিন যাওয়ার পর করবে ভেবেছিলো।তো তাসিন যাওয়ার পর ও টেস্ট করে দেখলো ও যা সন্দেহ করেছিল সেটাই ঠিক।
তাহিয়ার খুব খুশি লাগছে। অবশ্য এই খুশির সংবাদ দুই প্রানপ্রিয় বান্ধবীকে বলতে ভুলেনি। একজন তুসি অন্যজন জবা।ওরাতো অনেক খুশি। তাহিয়াকে নিজের খেয়াল রাখতে বললো ভালো করে।আর ওরা এসে দেখে যাবে ওকে।আজ ওর নিজেকে পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে। ওর পেটে একটা ছোট্ট বাবু আসবে।আধো আধো বুলিতে ওকে মা ডাকবে। আচ্ছা এই খবরটা তাসিন জানলে কি রকম হবে তাসিন এর রিয়েকশন!

রাতে তাসিন এর সাথে বারান্দায় বসে গল্প করার সময় তাহিয়ার খুব শরীর খারাপ করলো ওর হঠাৎ মাথা প্রচন্ড ঘুরতে লাগলো।তাসিন তো তা দেখে বিচলিত হয়ে গেলো অনেক। ওর এক মেয়ে ক্লাস মিট ডাক্তার আছৃ দ্রুত তাকে কল করে আসতে বললো।

কিছুক্ষণ পর সে অসলো তাহিয়াকে চেকাপ করলো কিছু টেস্ট আর ঔষধ লিখে দিলো আর তাসিন কে ওকে এগিয়ে দিয়ে আসার জন্য বলল।
তাসিন তাই করলো ।
যেতে যেতে ডাক্তার বলল,তুই এত আক্কেলহীন! মেয়েটা এখনো বেবি কেরি করার জন্য উপযুক্ত নয়। ওর রিস্ক আছে।তোর আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।

তাসিন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ত,,তার মানে ও প্র্যাগনেন্ট ?
ও বলল, হ্যাঁ আমিতো সিউর।তবে তাও কিছু টেস্ট দিয়েছি সেটা করিয়ে আনিস কাল ।আসি বাই।ওর যত্ন নাস আর খেয়াল রাখিস।

তাসিন রুমে ঢুকে তাহিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, বৌ আমরা তো মা বাপ হইয়া যাইতাছি।আমাদের একটা ছোট্ট বাবু থাকবে আমার তো ভাবতেই কি আনন্দ লাগতাছে।ওরে কিন্তু আমি আমার মতোই আঞ্চলিক ভাষা প্রেমি বানামু।

তাহিয়া মৃদ্যু হেসে বলল,হ্যাঁ আপনার ভাষার এই নমুনা দেখে ও ভেতর থেকেই ভয় পাচ্ছে। ভাবছে আমার বাবা কিসব কথা বলছে “অঞ্চলিক ভাষা প্রেমি” ।
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।#বিষাক্ত_বাঁধন
#অনামিকা_জাহান_জাফরিন ।
#পর্ব_৩৩

নিজের ভাইকে হত্যা ও ভাইয়ের বৌকে হত্যার চেষ্টা করার অপরাধে পুলিশ তাহির কে গ্রেফতার করলো।তাছাড়া আরো অভিযোগ আছে যেমন সম্পদ আত্মসাধ করার অভিযোগ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ।

আর এই অভিযোগ গুলো আর কেও না তারই ভাইপো আরিয়ান করেছে।

আরিয়ান এর বাবাকে কৌশলে অন্য ভাড়া করা লোক লাগিয়ে হত্যা করেছে।মাকে ও করার চেষ্টা করেছে কিন্তু যখন সে সিড়ি থেকে পড়ে গেলো লোকগুলো ভাবলো সে এমনিতেই মারা যাবে তাই আর আলাদা ভাবে মারেনি আর বাইরে শব্দ হওয়ায় ভাবলো পুলিশ বা কেও এসেছে তাই আর আরিয়ান খোঁজেনি সেই গুন্ডাগুলো।

গোপন সূত্রে আরিয়ান এর মা বেঁচে আছে শুনে তাহির অস্থির হয়ে যায়। যে কোনো প্রকারে ওকে মারতে হবে।
তাই ওর কেবিনে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভাগ্য ভালো রাইসাকে তার আগে আশরাফ সরিয়ে পেলেছিলেন।গোটা কেবিন টা পরে যাওয়ার পর আগুন নিভাতে সক্ষম হয় কর্মীরা।

আরিয়ান সেদিন অনেক কেঁদেছে।নিজের মা বাবার মর্মান্তিক মৃত্যু নিজের চোখের সামনে হতে দেখেছে কষ্ট পাওয়াই স্বাভাবিক। ওর এই অবস্থা দেখে আরিফ ওকে তার সাথে বাইরে নিয়ে চলে যায়। মূলত আরিফই ওই দিন আতিফ আর রাইমা কে সাহায্য করেছিল।সে এসে এসব দেখে তো একেবারে থভকে গিয়েছিল। সদ্য পড়ালেখা শেষ করে দেশে অসলো ।আরিয়ান এর অবস্থা খারাপ দেখে ওকে নিয়ে আবার বিদেশে পাড়ি জমালো কিওকে না জানিয়ে। এমনকি সবার উদ্দেশ্যে বলল,যে কেবিনে আগুন লেগেছিল তখন আরিয়ান ও মারা গেছে সেই আগনে।ও তখন কেবিনেই ছিল।

আশরাফ পরবর্তীতে এই খবর শুনতে পায় যে আরিয়ান মারা গেছে সেই আগুনে।তবে সে রাইমা কে বাঁচাতে সক্ষম হয় এবং সে এই খবর গোপন রাখে মানুষের কাছে।

আরিয়ান যে বেঁচে গিয়েছিল সে খবর তাহির মাস দুয়েক পরে জানতে পারে।আসলে আরিয়ান এর চাচা কথার খুব মনে পড়েছিল তাই সে ওর কাছে কল দিয়ে কথা বলে।
তাহির তো মনে মনে ভিষণ চিন্তিত হয়ে গেলো কেননা তাদের বংশের কেও বেঁচে থাকলে সে সম্পদ সে পুরোপুরি ভোগ করতে পারবে না।তবে তা করার ও কিছু ছিলনা।আরিয়ান তার মামাতো ভাইয়ের কাছে সেফ ছিল।বছর তিনেক পরে আরিফ বিয়ে করে ঘরে বৌ আনে।নাম তার রিমা।

আরিফ এর পরে রিমা আরিয়ান কে ভিষণ স্নেহ করত। রিমা আর আরিফ এর সান্নিধ্য পেয়ে ও ধীরে ধীরে বাবা মা হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলেও প্রতিশোধের আগুন ওর ভেতরে জ্বলছিল ।ও সবকিছুর জন্য আশরাফ খান কে দায়ী করত।।ও ভাবতো সব আশরাফ সম্পত্তি পাবার জন্য করেছে। তবে ওর সেই ভুল কিছু দিন হলো ভেঙ্গেছে।

যেই লোকগুলো ওর বাবার খুনী অনেক কষ্টে তাদের কে খুঁজে বের করে সব সত্যি জানতে পেরেছে। এর পর আরিয়ান নিজেই অনেক অনুতপ্ত হয়েছে ।
আশরাফ কে ভুল বুঝার কারণে বিশেষ করে তুসির সাথে করা আচরণের জন্য বেশি অনুতপ্ত ও।

তাহির কে পুলিশ কে ধরে নিয়ে যেতে নিলে তাহির প্রতিবাদ করলো।সে বলল,কি যা তা বলছেন আপনারা আমি আমার ভাইকে কেন মারব?

পুলিশ অফিসার বলল,ও আপনার সৎ ভাই ছিলো।তা ছাড়া টাকা -সম্পত্তির লোভে মানুষ কি না করতে পারে?

তাসিন বাবা কে এই অবস্থায় দেখে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো অনবরত ।কেউই ওকে থামাতে পারছিলোনা।শেষে আরিয়ান সেখানে উপস্থিত হয়।
ও একে একে তাহির এর ঘটানো সমস্ত ঘটনা খুলে বলতে লাগলো।কি করে দুজন বন্ধুর মধ্যে ফাটল ধরালো আর একটা গোটা সংসার কীভাবে ধ্বংস করল সেব কিছু বলল।

তাহির এর আর কেছুই বলার রইল না।

সব শুনে তাসিন পাথরের মতো বসে রইল।এই তো সেদিন কত মজা করেছিল সে আর তাহির তা অনাগত সন্তান নিয়ে। তাহির কতো খুশি হয়ে ছিল।ওর সাথে খেলবে বলে বায়না ও ধরেছিল।
অনাগত নাতি/নাতনির জন্য পোশাক,খেলনা সহ আরো অনেক কিছু কিনে আরো কত পাগলামো করেছিল।
এই সন্তান আসার সংবাদ শুনে সবার চেয়ে বেশি তাহির খুশি হয়েছে।

কিছুক্ষণ আগে ও সোফায় বসে তাসিন কে বলছিল,বুঝলি এইবার বোধ হয় আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। নাতি/নানির সাথে খেলা আমার বহু দিনের শখ।এবার তা পূরণ হবে।

অথচ কিছু সময়ের ব্যবধানে সে এখন জেলখানার অন্ধ কারাগারে থাকবে।সেখানে না থাকবে আত্মীয় আর না থাকবে স্বজন।

আরিয়ান এসে তাসিন কে সান্তনা দিয়ে বলল,আমি আমার বাবা মার পরে চাচাজান কে এর পরের আসন দিয়েছিলাম কখনো ভাবিনি উনি এমন করতে পারে।আমি ওনাকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা।তবে তাকে পুলিশ এ দিতাম না যদি না আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতাম। ছোটবেলা থেকে অমি নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমি আমার বাবা মা খুনি কে অবশ্যই শাস্তি দেবো।আমি জানি ওপর ওয়ালা বিচার করবেন। তবে আমার কিছু করার নেই প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছিলাম। আর এই দায়ে অভিযোগ ভেবে নিরপরাধ মানুষদেরকেও শাস্তি দিয়েছি।

তাসিন কাঁদছে। সব সময় হাসিতে মেতে থাকা ছেলেটাও অজ আপনজন হারানোর দুঃখে কাঁদছে।

আরিয়ান এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,তুই আমার ভাই ,ভাই ই থাকবি। আমি আছি তোর জন্য তুই একা নস।
তাসিন কিছু বলে না শুধু নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে ।তার বাবা কেন লোভ করলো।যদি লোভ না করতো তাহলে তারা কত সুন্দর মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতে পারতো!!!

জবা আর তুসি এসেছিল তাহিয়াকে দেখার জন্য। ওর বাবু হবে খবর পাওয়ার পর তারা বলেছিল ওকে দেখতে আসবে। তাই এসেছিল আকস্মিক এমন ঘটনায় সবাই অবাক এর সাথে বিস্ময় ও হয়েছিল।তুসি তাহিয়াকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায় না তাই ওকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।রিমা ও বাড়ি নেই।ও আরিফ এর কাছে গিয়েছে বিদেশে।সাথে রিসাদ ও গেছে।এবার অনেক দিন থাকবে ওরা।এমনকি রিসাদ কে ওখানে পড়ালেখা করাবে তারা।তাই বাড়ি টা খালি আর তাহিয়াকে ও দেখার কেও নেই তাই নিয়ে এসেছে।

এর মধ্যে রাজ জবা নামক মেয়ে কে দেখে ওর খুব ভালো লাগে।আগে কখনো দেখেনি।তাও যেন কোথায় যেন দেখেছে এমন মনে হয় ওর।

🌸🌸🌸

বাড়ি ফিরে তুসি বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে সব কিছু ভাবে। আরিয়ান ওখানে তুসিকে যে বিয়ে করেছিল সেটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এসব বলেছিল।সেটা শুনে তুসি অনেক কষ্ট পায়। ও মানতে পারছেনা এসব। আরিয়ান শুধুমাত্র ওকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ে করেছিল ভাবতেই ওর কান্না পাচ্ছে। তার মানে কি ওকে আরিয়ান এর পছন্দ নয়।

তুসির মন আরো ভেঙ্গে গেলো যখন আজ আরিয়ান এসে ওর কোনো খবর নেই নি আর খাইয়ে ও দেয় নি তখন। একটাবার তুসিকে ডাকেও নি।আচ্ছা ওকি বিরক্ত?বাধ্য হয়ে তুসিকে মেনে নিচ্ছে।
তাই যদি হয় তুসি থাকবেনা এই বাড়ি চলে যাবে ও । তাহিয়া কে নিয়ে কালই চলে যাবে।

চলবে ,,,,,,,,
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here