#বুকভরা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা মনি
মুগ্ধ মেহুলের কাছে এসে বলে,
‘তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।’
মেহুল রেগে বলে,
‘আমার কোন কিছু শোনার সময় নেই সরে যাও সামনে থেকে।’
মুগ্ধ বাধ্য হয়ে মেহুলকে জোর করে টেনে নিয়ে যায়।স্নিগ্ধ পুরো ঘটনাটা দেখে কিছুটা রেগে যায়।
মেহুলকে টেনে স্টেজের পেছনে নিয়ে আসে মুগ্ধ।মেহুল নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,
‘কি করলে তুমি এটা?’
মুগ্ধঃআমার তোমাকে একটা কথা বলতেই হবে।নাহলে আমি শান্তি পাচ্ছিনা।
মেহুলঃযা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
মুগ্ধঃআমি তোমাকে ভালোবাসি মেহুল।
মুগ্ধর কথাটা শুনে মেহুলের মাথায় যেন পাহাড় ভে’ঙ্গে পড়ে।মেহুল নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘তুমি জানোনা আমি তোমার ভাইয়ের সাথে রিলেশনে আছি? সেখানে এসব কথা বলার মানে কি?’
মুগ্ধ মৃদু হেসে বলে,
‘আমি জানি সেটা।আমি এটাও জানি তুমি আমার ভাইয়াকে ভালোবাসো।আমি শুধু হালকা হওয়ার জন্য কথাটা বললাম।তোমাকে কথাটা না বলা পর্যন্ত যে আমি শান্তিতে ম’রতেও পারতাম না।
মেহুলঃএসব বাজে কথা বলা বন্ধ করো।কোন খারাপ চিন্তা মাথাতেও এনো না।
মুগ্ধঃআমি কোন খারাপ চিন্তা করছি না।আমি চাই আমার ভাইয়ার সাথে তুমি সুখে থাকো।তোমাদের সুখের জন্য আমি নিজের জীবনও দিতে পারি।
কথাটা বলা শেষ করে মুগ্ধ সেই স্থান থেকে চলে আসতে থাকে।আজ যেন তার বুকের উপর থেকে একটা বোঝা সরে গেল।
এদিকে মেহুলও কিছুটা স্বস্তি পায়।সে তো আগে মুগ্ধকেই পছন্দ করত।এই ঘটনাটা আগে ঘটলে হয়তোবা আজ তার আর মুগ্ধর মধ্যে কিছু হতে পারত।কিন্তু এখন যে মেহুল শুধু আর শুধু স্নিগ্ধকেই ভালোবাসে।
১৯.
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেল।মেহুল টেনশন করতে করতে ঘরের মধ্যে পায়চারি করছিল।কারণ আজ স্নিগ্ধর তার পরিবারকে নিয়ে আসার কথা।
মা-বাবাকে এই ব্যাপারে তেমন কিছু বলেনি মেহুল।শুধু বলেছে একজন বন্ধু আসবে তার পরিবারকে নিয়ে।
মেহেজাবিন মেহুলকে এভাবে দেখে হেসেই ফেলে।
মেহেজাবিনঃতোমার গেস্টরা এসে গেছে।এসো নিচে এসো।
মেহুল মনের মধ্যে সব খারাপ চিন্তা বাদ দিয়ে তাদের ড্রইংরুমে আসে।
মেহুলকে দেখে স্নিগ্ধ স্মাইল করে।স্নিগ্ধর বাবা তো এতদিন পর নিজের বন্ধু মনির চৌধুরীকে দেখে খুব খুশি।তারা খোশগল্পে মেতে ওঠে।
মেহেজাবিনের সাথেও ফরিদা কথা বলছিল।ফরিদা মেহেজাবিনকে বলে,
‘তানজিন এমন একটা কাজ করল যে তারপর থেকে আর তোর কাছে মুখ দেখাতে পারিনি।আমি ভাবতেও পারিনি আমার বোন এত পাগলামি করবে।ওর মনে এত হিংসা যে তোর স্বামীকেও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
মেহেজাবিনঃআমি ওর দোষ দেবোনা।আমিই তো তৃতীয় ব্যক্তি ছিলাম।মনিরের সাথে তো তানজিনের একটা সম্পর্ক ছিল বিয়ের আগে।মনিরের বাবা-মাই জোর করে আমার সাথে ওর বিয়ে দেয় কারণ তাদের তানজিনকে পছন্দ ছিলনা।
ফরিদাঃআচ্ছা বাদ দে এসব কথা।তোরা যে এখন সুখে সংসার করছিস এটাই বড় কথা।তোর ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার ইচ্ছাটাও তো পূরণ হয়েছে।
মেহেজাবিনঃআচ্ছা তোরা কি কোন স্পেশাল কারণে এসেছিস?
ফরিদাঃকেন তুই জানিস না? মেহুল কিছু বলে নি?
মেহেজাবিনঃনা মেহুল তো আমাদের কিছু বলেনি।কিন্তু ওর ব্যবহার দেখে আমরা কিছুটা অনুমান করতে পেরেছি।
ফরিদাঃতাহলে আমি তোর অনুমানকে সত্যি প্রমাণ করি।হ্যা আমরা এখানে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতেই এসেছি।আমার বড় ছেলে স্নিগ্ধ আর তোর মেয়ে মেহুল একে অপরকে ভালোবাসে।
মেহেজাবিনঃআমি এমনটাই ধারণা করেছিলাম।
ফরিদাঃতোর কোন আপত্তি নেই তো?
মেহেজাবিনঃআমার মেয়ের উপজেলা আমার ভরসা আছে।আর স্নিগ্ধ ছেলেটাকেও বেশ ভালো মনে হচ্ছে।আর শাশুড়ী হিসেবে যখন তুই আছিস তখন আমার কোন সমস্যাই নেই।এখন দেখি মেহুলের বাবা কি বলে।
কথায় কথায় স্নিগ্ধর বাবা মনির চৌধুরীকে বলে দেন,
‘যেই ব্যাপারে কথা বলতে আসা এবার সেই কথা বলি।আমার বড় ছেলে স্নিগ্ধর সাথে তোর একমাত্র মেয়ে মেহুলের বিয়ে দিতে চাই।তোর কোন আপত্তি নেই তো?’
মনির চৌধুরী কিছুটা বিব্রত বোধ করেন।মেহুলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
‘তোমার কি স্নিগ্ধকে পছন্দ?’
মেহুল মাথা নেড়ে হ্যা বলে।
মনির চৌধুরী বলেন,
‘আমার মেয়ে যদি রাজি থাকে তাহলে আমারও কোন প্রব্লেম নেই।আমার কাছে আমার মেয়ের ডিশিসনটাই সবার আগে।তাছাড়া স্নিগ্ধর সাথে আমার আগেও কথা হয়েছে।ছেলেটাকে ভালোই মনে হয়েছে।অবশ্য তোর ছেলে তোর মতো ভালোই হবে।আমি তাহলে আর অমত করব কেন?’
মেহুল তার বাবাকে বলে,
‘থ্যাংকস ড্যাডি।’
ফরিদাঃতাহলে আমরা এখন এনগেজমেন্টের দিন তারিখ ঠিক করি।স্নিগ্ধর বাবা তো কিছুদিন পর ফিরে যাবে তারপর একবারে ৬ মাস প্র দেশে ফিরবে।এখন এনগেজমেন্ট করে রাখি ৬ মাস পরে নাহয় বিয়ে হবে।
মেহেজাবিনঃপ্রস্তাবটা ভালোই।তুমি কি বলো মনির?
মনিরঃহ্যা আমারও কোন সমস্যা নেই।
স্নিগ্ধর বাবাঃতাহলে আগামী শনিবার এনগেজমেন্ট হোক।কারণ রবিবার আমাকে ফিরতে হবে।
মনিরঃওকে।তাহলে আমরা সব প্রস্তুতি নিচ্ছি।
২০.
‘মেহুল তুই এত রাত জেগে পড়ছিস কেন? সামনে না তোর এনগেজমেন্ট।’
মেহেজাবিনের কথাটা শুনে মেহুল মৃদু হেসে বলে,
‘কাল আমাদের ক্লাসে একটা এক্সাম হবে।তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
মেহেজাবিনঃআচ্ছা বেশি রাত জেগে পড়িস না আবার।নাহলে শরীর খারাপ হবে।
মেহুলঃওকে মম।
বাইরে থেকে এসব শুনছিল মোহনা।মোহনা একটা শয়’তানী হাসি দিয়ে বলে,
‘এত পড়ে কি হবে আমার থেকে ভালো রেজাল্ট তো করতে পারবে না।হু ভালো রেজাল্ট তো দূরে কাল তুমি পরিক্ষাই দিতে পারবে না।’
পরেরদিন,
মোহনা সকাল সকাল ভার্সিটিতে আসে।তারপর মেহুলের ডেস্কের নিচে একটা কাগজ ফেলে দেয়।মনে মনে বলতে থাকে,
‘এবার দেখি কিভাবে তুমি পরীক্ষা দাও মেহুল।তোমাকে ভার্সিটি থেকেই আউট করানোর ব্যবস্থা করে দিলাম।’
বাইরে থেকে এইসব দেখে নেয় মুগ্ধ।তার ইচ্ছা করছিল সোজা গিয়ে মোহনাকে ধরে ফেলতে।কিন্তু তারপর ভাবল মোহনার খোড়া গর্তেই মোহনাকে ফে’লবে।
পরীক্ষার সময় চলে আসে।সবাই এসে নিজের সিটে বসে।তারপর পরীক্ষা শুরু হয়।মেহুল খুব মনযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল।
একজন টিচার পরীক্ষা পরিদর্শন করছিল।মোহনা টিচারকে বারবার মেহুলের দিকে ইশারা করছিল।মোহনা যেহেতু ভালো স্টুডেন্ট ছিল তাই টিচাররাও তাকে অনেক বিশ্বাস করতো।তাই মোহনার ইশারা দেখে টিচার এসে মেহুলকে বলে,
‘আমার তোমাকে সন্দেহ হচ্ছে।আমার মনে হয় তুমি নকল করছ।আমি তোমাকে চেক করতে চাই।’
মেহুল আপত্তি জানিয়ে বলে,
‘কেন স্যার? আমি নকল করবো এটা আপনার কিভাবে মনে হলো? আমি তো অনেক দিন থেকেই এই ভার্সিটিতে আছি।কখনো কি এরকম কাজ করেছি?’
টিচার রেগে বলেন,
‘তোমার রেজাল্ট যে বেশি ভালো নয় সেটা আমি জানি।তাই করতেই পারো।তাছাড়া মোহনা আমায় তোমার ডেস্ক চেক করতে বলেছে।ওর মতো ভালো স্টুডেন্ট নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা বলবে না।’
মেহুলঃটিচারদের এই একমুখো নীতি আমার ভালো লাগে না।আপনারা সবসময় ভালো স্টুডেন্টদের বেশি মূল্য দেন।তাদেরকে বেশি বিশ্বাস ভরসা করেন।আর আমরা যারা ভালো স্টুডেন্ট নই সবসময় আমাদেরকেই সন্দেহ করেন।ভালো স্টুডেন্ট নই বলেই কি আমরা নকল করবো? এসবের কি মানে?
টিচারঃআমি বেশি কথা শুনতে চাইনা।যা বলছি তাই করো।
মেহুলঃওকে ফাইন।আমার চেক করুন কিন্তু আমার ডেস্কে কিছু না পাওয়া গেলে কিন্তু আমি আপনার নামে উপাচার্যের কাছে কমপ্লেইন করবো।
টিচারঃএকদম মুখে মুখে কথা বলবে না।
টিচার মেহুলের ডেস্ক চেক করে কিছুই খুঁজে পায়না।মেহুল তখন বাকা হেসে বলে,
‘দেখলেন তো স্যার কিছুই পেলেন না।শুধু শুধু আমায় অপদস্ত করলেন।’
অন্যান্য স্টুডেন্টরাও এবার মেহুলের হয়ে কথা বলতে থাকে।ইতি বলে,
‘আপনি এবার মোহনার ডেস্কও চেক করুন।আমার তো ওকেই সন্দেহ হয়।’
অবস্থা বেগতিক দেখে টিচার বলেন,
‘আচ্ছা আমি মোহনার ডেস্ক চেক করছি।’
মোহনার ডেস্ক চেক করে সেখানে একটি কাগজ পান টিচার।তিনি রেগে গিয়ে বলেন,
‘তোমাকে আমি ভালো স্টুডেন্ট ভেবেছিলাম।কিন্তু তুমি এটা কি করলে।নিজে নকল করে অন্য একজনের উপর দোষ দিচ্ছ।তোমাকে কিন্তু এর ফল ভোগ করতেই হবে।’
মোহনা কেদে কেদে বলে,
‘বিশ্বাস করুন স্যার আমি কিছু করিনি।আমাকে ফাসানো হচ্ছে।’
টিচার মোহনার কোন কথা শোনেন না।তিনি বলেন,
‘তুমি যা অন্যায় করেছ এর একটাই শাস্তি তোমাকে ভার্সিটি থেকে বের করে দেওয়া হবে।আমাদের ভার্সিটিতে এরকম স্টুডেন্টের কোন প্রয়োজন নেই।’
মোহনা টিচারকে অনেক অনুরোধ করে কিন্তু কোন লাভ হয়না।
বাইরে আসার পর মুগ্ধ মোহনাকে বলে,
‘কেমন লাগল? আরো অন্যের ক্ষ’তি করতে চাইবে কখনো? আমি মনে করি তোমার উচিৎ শিক্ষা হয়েছে।’
মোহনা রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
‘তোমাদের সবাইকে আমি দে’খে নেব।’
চলবে কি?
>>>> আসসালামু আলাইকুম। আগামী পর্বেই নায়ক কে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।এখন আজকের পর্ব সম্পর্কে কিছু সুন্দর মন্তব্য করুন।